কার ঠেকা?

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ১৯/১২/২০১০ - ১২:০৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কর্মচারী ঝুকে আছে আর স্যার ফাইল না পড়েই একটার পর একটা সই করছেন, এইরকম দৃশ্য দেখানো হয় গড় পড়তা নাটকে সিনেমায়। যদিও বাস্তবে স্যার সই টা ছাড়া সব করেন, হাসেন, ক্রুব্ধ হন, আকার ইকার হ্রস্বউকার দেন, বিগলিত হন, উতি পাতি করেন, নানা কসরতে শরীর মুচড়ান। যখন খুশি হন, তখন-ই শুধু যগৎ উদ্ধার করে নাটকের দৃশের মতো সই করেন। এই হচ্ছে জনসেবা। এই জনসেবা হয় কোনো প্রকার দায়দায়িত্ব না নিয়েই। কেইস মতো লক্ষ বা হাজার টাকা ‘খুশি করে দেন’ দিলে, সই এর সাথে পেতে পারেন বড়জোর ‘দেখা যেতে পারে’ ‘যথাযথ ব্যাবস্থা নেয়া হোক’ ‘বিবেচনা করা হোক’ ‘পুন বিবেচনা করা হোক’ ‘পুন পুন বিবেচনা করা হোক’। আপনার আর্জি একেবারে উপর থেকে পৌনপৌনিক ভাবে পুন পুন করতে করতে একেবারে নীচে নেমে আসবে কিন্তু ভাষার কোন বদল হবেনা। রফিক বরকতরা যেনো শুধু এই কয়েকটা লাইনের জন্য শহীদ হয়েছেন, এর বাইরে বাংলায় আর কোনো লাইন নাই। ‘যেতে পারে’, ‘হতে পারের’ যগত থেকে নেমে এসে কেউ যে বলবে ‘ আনসার সাহেব আপনি হা-মীম গ্রুপের ফায়ার এক্সিট ডোর টা কতোটা প্রশস্থ তা নিজে দেখে এসে আমাকে সোমবারের আগে জানান।‘-এ জাতীয় কথা বাংলা বা ইংরেজীতে আছে বলে কোন কর্মকর্তার জানা আছে কি না জানি না। এ জাতীয় কথায় যে দায়িত্ব দেয়া বা নেয়ার বিষয় আছে। দায়িত্ব কাউকে দেয়া যাবেনা, কারন ক্ষমতা আর টাকার গন্ধ চলে যায়, আবার নিজে দায়িত্ব নেয়া যায় না, কে করবে এ কাজ? অনেক আনসার সাহেব কে দেখেছি, টেবিলের ওপারে স্যুট টাই পরে শরীরটাকে চেয়ারের হেলানে রাখা তোয়ালের উপর ছেড়ে আছেন। নীচে ট্রাউজারের পা গুটানো, বাথরুমে যাওয়ার স্যান্ডাল পরা। অপেক্ষা্ করছেন জোহর বা আসরের ওজু করার জন্য। কে যাবে হামীম গ্রুপের ফায়ার ট্রেনিং কর্মকর্তার যোগ্যতা আর তাদের ফায়ার রিস্ক এসেসমেন্ট যাচাই করতে অথবা বেগুনবাড়ী বা কাঠাল বাগানের বিল্ডিং-এর পাইলিং যাচাই করতে যদি না তাতে থাকে টাকার গন্ধ। কার ঠেকা? বিল্ডিংওয়ালার, হা-মীমের, বসুন্ধরার না আনসার সাহেবের?
একেবারে পশ্চিমা দেশের মতো আমাদের হেল্থ এন্ড সেফটি নিয়ে আইন করতে হবে কোন পাগলও তা মনে করে না। পশ্চিমে এটার বাড়াবাড়ি নিয়ে তারাই বিরক্ত। জানমালের নিরাপত্তায় ঝুকি কমাতে সাধারন জ্ঞ্যান থেকে আমাদের কিছু একটা যে করতে হবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই। লঞ্চ ডুবিতে মানুষ মরলে, ‘আল্লার মাল আল্লায় নিয়ে গেছে’ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সরকারকে। ঈদের সময় ট্রেনে বাসে লঞ্চে মানুষ দেখে, যেনো মনে হয় ময়দা দিয়ে বানানো মায়া বড়ি আর ফুটাওয়ালা রাজা কনডম ব্যাবহার করি আমরা। প্রাগোঐতিহাসিক মহা-মহা সমাবেশগুলাতে, পল্টন ময়দানে, মহাবিক্ষোভ কর্মসূচীতে আর হরতালের রাস্তায় মানুষ গুনা ছাড়া, আমরা মোটেও মানুষ পছন্দ করি না। ক্ষমতায় আর অক্ষমতায় থাকা সব শক্তি সমান। সকাল আটটায় গার্মেন্টস-এর গেটের দিকে পিলপিল করে হাটা মানুষের পালকে দেখে অনেককে বিরক্ত হতে নিজ চোখে দেখেছি। ফুলবাবু দামড়া কুলাঙ্গার ছেলে যেমন বাপকে কাজ করতে দেখে বিরক্ত হয়। ভাবখানা এমন, ‘এরা গার্মেন্টস থেকে বাড়ী যায় কেনো? গার্মেন্টেস-এ ই থাকতো।‘ আমি নিশ্চিত অনেকে আফসোস করেন ‘আহা পেট আর চ্যাট ছাড়া যদি কিছু মানুষ পাওয়া যেতো!!!!!’ অনেক মালিক আবার মানুষের পালকে ফ্যাক্টরীতে ঢুকিয়ে তালা লাগিয়ে দেন। ঝামেলার দরকার কি? মরতে হলে ওখানেই মর। পালটাকে দেখি যন্ত্রের অংশ হিসাবে। কথা বললে ছাটাই করো, পুলিশ ডাকো, ডান্ডা ঘোরাও। পুলিশের পাল কম হলে আলাদা গার্মেন্টস পুলিশ বানাতে সরকারকে বাধ্য করো। ওদের হয়ে কে কথা বলবে? মিশু শিশু যেই হও রিমান্ডে দাও। CEPZ –এর কোরিয়ানটা চলে যাওয়ার হুমকি দিলেও হাসের পেট কেটে ডিম খাওয়া বন্ধ করতে রাজি না আমরা। ওই কোরিয়ান আর মিশুকে কি বলে দিতে হবে আমার ফ্যাক্টরীর পালগুলা ব্যাক্তি মানুষ। দেবপ্রিয় বাবুকে কি বলতে হবে ওই পিলপিল করা পালরা GDP-র সিংহভাগ যোগান দেয়। আর যোগান দেয় মালেশিয়া সৌদিআরবের শ্রমিক পালরা। তাদের টাকায় চলা বাংলা পরিবারের ফুলবাবু কুলাঙ্গাররা হচ্চে আমাদের গার্মেন্টস মালিকরা। গোস্ত পরোটা খাওয়া এই কুলাঙ্গারদের প্রথম দায়িত্ব, এই হাস গুলোকে বাচিয়ে রাখা, রোষ্ট করা না। আসরের আজানের জন্য অপেক্ষায় থাকা আনসার সাহেব, হামীমরা ৪০পিস্ হাস রোষ্ট করেছে, হাসেরা দাবী করছে সংখ্যা আরো বেশী। হামীমরা গুম করে রেখেছে- ক্ষতিপুরন দিতে হবে বলে। এইসব ডলার ফ্রেমের চশমা পরা হামীম শেয়ালরা, আমাদের সোনার হাস রোষ্ট করছে, পেট কাটছে। এসব সোনার ডিম পাড়া হাসের পালের নিরাপত্তা তদারকি করা আপনার দায়িত্ব, শেয়ালদের ডলারের নিরাপত্তা নয়। জুতা পরেন আনসার সাহেব, হামীমদের ফায়ার এক্সিটের দরজার প্রশস্থতা মাপা আপনারই কাজ। দরজায় তালা ছিল কিনা তা যাচাই করুন। আশুলিয়া যান। মনে রাখবেন, ওই হাসের পালের সোনার ডিম বেচা টাকায় আপনার বিবি আপনার ভাত সেদ্ধ করেন। ঠেকা টা আপনারই।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

জি না, জনাব! ঠেকাটা হাঁস মালিকের খাইছে

লেখা ভালো লেগেছে হাসি

কুটুমবাড়ি

পুতুল এর ছবি

লেখা খুব ভাল লাগল। কিন্তু নাম কৈ?

আনসার সাহেবরা হাঁস মালিকদের তেল নাকে দিয়ে ঘুমায়। তাঁদের ঘুম এই জনমে ভাঙ্গবে না। হাঁস রোষ্ট হতেই থাকবে।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অতিথি লেখক এর ছবি

সচলে নতুন, ব্লগেও তাই। নাম এখনো হয়ে উঠেনি বা বুঝে উঠতে পারিনি। অকৃপন মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

লেখা যেখানে শেষ করবেন তার একটু নিচে নিজের নাম বা পছন্দমত নিক্‌ লিখে তার নিচে আপনার ইমেইল অ্যাড্ড্রেসটা লিখে দিন। তাতে পাঠক, মডারেটর সবাই বুঝতে পারবেন লেখাটা কার। একইভাবে যখন মন্তব্য করবেন, নিজের লেখায় বা অন্যের লেখায়, তখনও মন্তব্যের একটু নিচে নিজের নাম বা নিক লিখে দিন, সাথে ইমেইল অ্যাড্ড্রেসটাও দিন। নাম বা নিক্‌ পাল্টাবেন না। কারণ বার বার নাম বা নিক্‌ পাল্টালে পাঠক ও মডারেটর কারো পক্ষেই আপনার লেখা (পোস্ট/মন্তব্য) অনুসরণ করা সম্ভব হবেনা।

আপনার লেখাটি সিরিয়াস বিষয়ে অথচ তাতে বানান ভুল আছে দৃষ্টিকটু রকমের। এটা লেখার গুরুত্বকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। এর পর থেকে লেখা পোস্ট করার আগে একটু সময় নিয়ে বানানগুলো চেক করে নেবেন। আর লেখাকে যথাযথ অনুচ্ছেদে ভাগ করে দেবেন, তাতে পড়তে সুবিধা হয়।

সচলে স্বাগতম। আশা করি হাত খুলে পোস্ট লিখবেন, মন্তব্য লিখবেন।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মুরাদ খান [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ ষষ্ঠ পান্ডব। মনে থাকবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাদের পুর্বপ্রজন্ম দেশের জন্য, ভাষার জন্য জীবন দিয়ে গেল আর আমরা নিজ দেশের জন্য নিজের সামান্য লোভটুকুও সংবরণ করতে পারি না ।আমরা আর কত নিচে নামব ?
মাহমুদুল হাসান শাহিন

অতিথি লেখক এর ছবি

ঝাঁঝালো লেখা। সচলে স্বাগতম, আশা করি নিয়মিত হবেন।

গুরু ভাই

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুন!!!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।