প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনি পরিক্ষায় গাঁয়ের শিক্ষার্থীদের সাফল্য

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ০১/০১/২০১১ - ৭:১৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনি পরিক্ষায় গাঁয়ের শিক্ষার্থীদের সাফল্য
মোহাম্মদ এ চৌধুরী

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনি পরিক্ষার পর ডেইলি স্টারের একটি শিরোনাম দেখে খুব ভাল লাগল। "RURAL STUDENTS RULE"- গাঁয়ের শিক্ষার্থীরা রাজত্ব করছে দেখে বেশ উংসাহী হলাম। বেশ আশা জাগানিয়া খবর। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চালুর পর থেকেই গাঁয়ের শিক্ষার্থীদের রাজত্ব।
শীর্ষস্থান দখলকারী ৫৭ জনের ৫১ জনই ঢাকার বাইরের । টাংগাইলের ১৭ জনের নাম আছে শীর্ষদের তালিকায়। গত বছর শীর্ষস্থানীয়দের ১০ জনের মধ্যে ৯ জন ছিল ঢাকার বাইরের। তবে বড় প্রশ্ন হচ্ছে যে প্রান্তীয় জনগোষ্ঠী থেকে আসা শিক্ষার্থীরা কি পরবর্তী শিক্ষাজীবনে এই সাফল্য ধরে রাখতে পারবে?
গাঁয়ের শিক্ষার্থীদের এমনতর সাফল্যের পেছনে রহস্যটা কি? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরীর মতে প্রাথমিক স্তরে কোচিং সেন্টারের বিস্তার না হওয়া। তার মতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষার মত কোচিং সেন্টারের উপর ব্যাপক নির্ভরশীলতা না থাকায় গাঁয়ের শিক্ষার্থীরা শহরের শিক্ষার্থীদের সাথে পাল্লা দিয়ে ভাল ফলাফল করেছে।
প্রাথমিক শিক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী সাফল্যের পেছনে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। সময়মত পাঠ্যবই হাতে পাওয়া, ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা বৃদ্ধি, নির্বাচিত এলাকায় দুপুরে নিয়মিত টিফিন সরবরাহ এবং পরিবীক্ষণ ব্যবস্থায় উপজেলা প্রশাসনের সক্রিয় অংশগ্রহণ সফলতার মূলে রয়েছে বলে মন্ত্রীর বিশ্বাস।
"সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপন" হচ্ছে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম একটি লক্ষ্য। এই লক্ষ্য পুরণে বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘ এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ২০১৫ সালের মধ্যে সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে গাঁয়ের শিক্ষার্থীদের এ ধরণের ফলাফল নিঃসন্দেহে ইতিবাচক।
শুধু কি তাই? আসলে, গাঁয়ের শিক্ষার্থীরাও প্রতিভাবান। কিন্তু, আমরা তাদের সুযোগ দিতে পারিনা বলেই তারা পিছিয়ে পড়ে। এ বছরের ফলাফলে তাই প্রমাণ করে।
কিন্তু, উদ্বেগের জায়গা ভিন্ন। ঝরে পড়ার হার বেড়েই চলেছে। গত বারের চেয়ে ১.২৭ লাখ বেশি শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে এবার। ২.৮১ লাখ শিক্ষার্থী রেজিস্টেশন করা সত্ত্বেও পরীক্ষায় অংশ নেয়নি, পক্ষান্তরে ফেল করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১.৪৮ লাখ। অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই অসচ্ছ্বল পরিবারের।
আতংকের বিষয় হচ্ছ ২৭৮৭ টি স্কুল থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাশ করতে পারেনি। যেসব স্কুলগুলো থেকে কোন শিক্ষার্থী পাশ করতে পারেনি তাদের একটি বড় অংশ আনন্দ স্কুল । আনন্দ স্কুল সরকারের একটি প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত। সরকার কি খুঁজে দেখবে এই প্রকল্পের ব্যর্থতার কারণ কি?
এনজি্ওদের পরিচালিত স্কুলগুলো বেশ ভাল করেছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ঐ স্কুলগুলো প্রান্তজনের শিশুদের জন্য পরিচালিত। তাদের গড় পাশের হার জাতীয় গড়েরও বেশ উপরে। ঐসব স্কুলে অধ্যয়নরত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সাফল্য ঈর্র্ষনীয়। সুযোগ পেলে যে সুবিধাবঞ্চিতদের ছেলে-মেয়েরাও পড়ালেখায় এগোতে পারে তা এই সব শিশুরা দেখিয়ে দিয়েছে।
পরিশেষে, জুনিয়র সার্টিফিকেট পরীক্ষার ফলাফল কিন্তু আশাপ্রদ নয়।পাশের হার ৭০ ভাগের সামান্য উপরে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনকারীরা যদি পরবর্তীকালে সেই ফলাফল ধরে না রাখতে পারে তা হবে সত্যিই হতাশার।
প্রাথমিক শিক্ষা ভব্যিষতের জন্য একটি বড় সোপান হলেও, শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক-পরবর্তী পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত গুরূত্বপূর্ণ। অতীত গবেষণায় দেখা গেছে যে বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনকারীদের অতি ক্ষুদ্র অংশই প্রয়োজনীয় জীবন-দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছে।
কারিগরি দ্ক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে জীবনে কাজে লাগে এমন শিক্ষা অর্জনের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষায় আরো মনোনিবেশের প্রয়োজন রয়েছে । বিশেষ করে, অসচ্ছল পরিবারের শিশুরা যারা প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ভাল করেছে, তাদের বিকাশে সরকারকে সর্বাত্মক উদ্যেগ নিতে হবে ।

মোহাম্মদ এ চৌধুরী


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

---আশফাক আহমেদ

নাশতারান এর ছবি

ভালো বলেছেন। চলুক

[বানানে ঝামেলা আছে কিছু। এখানে দেখুন। ]

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

দেখেছ। আপনাকে ধন্যবাদ। ভবিষ্যতে বানান বিষয়ে সতর্ক হবো।
মোহাম্মদ এ চৌধুরী

অতিথি লেখক এর ছবি

একমত;

আমরা যদি শুধু উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে দিতে পারি তাহলেই দেখা যাবে এসব রত্নের বদৌলতে আমাদের দেশটা জ্বলজ্বল করছে...

-অতীত

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আবার অষ্টম শ্রেণীর ফলাফলে দেখলাম ক্যাডেট কলেজই সেরা

অতিথি লেখক এর ছবি

কারণ, ক্যাডেট কলেজ অনকে বেশী সুবিধা দেয়। শিক্ষায় বিনিয়োগের একটি বড় অংশ যায় সেখানে।
ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ এ চৌধুরী

ভ্রান্ত পথিক [অতিথি] এর ছবি

কত ছেলে-মেয়েকে যে দেখেছি শুধু টাকার জন্য পড়তে পারে নি। যদিও ক্লাসে ভালো করতো।

মাহফুজ খান [অতিথি] এর ছবি

অতিথি লেখক লিখেছেন:
একমত;

আমরা যদি শুধু উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে দিতে পারি তাহলেই দেখা যাবে এসব রত্নের বদৌলতে আমাদের দেশটা জ্বলজ্বল করছে...

আমি ভাই এইকথাটির সাথে একমত হতে পারলাম না। আপনি তাদের শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পারেন কিন্তু দেশটাকে বদলে দেয়ার জন্য যে চেতনার প্রয়োজন সেটা দিতে পারবেন কিনা আমার সন্দেহ আছে।

বোকাবলাকা এর ছবি

হ্যাঁ, পরীক্ষায় পাশের হার আর মেধা তালিকায় স্থান দেখে কিছুটা আশা করা যায় বটে। তবে সমস্যাও একটু আছে। ৫ম শ্রেণীর পরীক্ষায় যেভাবে ইনভিজিলেটরেরা ছাত্র-ছাত্রীদের উত্তরদানে সহায়তা করছে,সেটা খুব ভাল লক্ষণ নয়।আবার ৮ম শ্রেণীর পরীক্ষায় এরকম খুব বেশী হয়নি। সম্ভবতঃ একারণে সেখানে ফলাফলটা সন্তোষজনক হয়নি। এসমস্যাটা কাটাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।