ঘড়ি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ০১/০১/২০১১ - ১১:৩০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

- অনন্ত আত্মা

অ্যালার্মের শব্দে সুমনের ঘুম ভাঙে। আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে ও ঘড়ির দিকে তাকায়, সাড়ে আটটা বাজে অথচ জানালা দিয়ে বাইরেটা দেখে সেটা বোঝার কোন উপায় নেই; আকাশ জোড়া মেঘের সারি।
বিছানা থেকে নেমে পায়ে স্যান্ডেলটা গলিয়ে দরজা ঠেলে বারান্দায় আসতেই আসিফের সাথে দেখা।
- কিরে সুমন, উঠলি?
- হুম।
টানা বারান্দার শেষ প্রান্তে বাথরুম। হাঁটতে হাঁটতে সুমন ভাবতে থাকে, আজ ছয় দিন হল সে আর পাভেল ফিরোজের রুমটায় থাকছে। অনির্দিষ্ট কালের জন্য বুয়েট বন্ধ হয়ে যাবার পর দিনই সে পাভেলের সঙ্গে এখানে চলে আসে। আসিফের সাথে ঘনিষ্ঠতাটা পাভেলেরই বেশী; তাই ডাবল সিটের রুমটায় তিনজন থাকার পরেও সুমন আর পাভেলকে আসিফ কিছু বলেনি, কিংবা হয়তো আসিফের মানসিকতাটাই এমন।
ব্রাশে টুথপেষ্ট লাগিয়ে আয়নার দিকে তাকায় ও। দাঁত মাজতে মাজতে সারাদিনের রুটিনের কথা চিন্তা করে। দশটার দিকে সেলিম চাচার নীলক্ষেতের দোকানে যাবার কথা। কিন্তু তার আগে নয়টার দিকে আসিফের বান্ধবী নাঈমাকে একটা বই দিয়ে আসতে ইডেনে যেতে হবে। যে কারণে একটু আগে ওঠা। নাশতাটা সেলিম চাচার ওখানেই সারা যাবে। রুমে ফিরে লুঙ্গি ছেড়ে প্যান্টটা পড়তে পড়তে আসিফের দিকে তাকায়।
- কিরে সারা রাত কোথায় ছিলি, ঘুমাস নাই?
- নারে; পল্টন থেকে ফিরে পাবলিক লাইব্রেরি গেলাম। ভোর পর্যন্ত ওখানেই, তারপর হাঁটতে হাঁটতে মেডিক্যালে এসে নাস্তা করলাম। এরপর রুমে এসে দেখি তোরা সবাই ঘুমচ্ছিস, তাই বারান্দায় হাঁটা-হাটি করছিলাম।
- আমরা দুজন তোদের খুব বিপদে ফেলে দিয়েছি, তাই না?
- আরে না, বাদ দে। তুই কি এখন নাঈমার ওখানে বইটা দিতে যাচ্ছিস?
- হ্যাঁ, এইতো নয়টার সময় গেট খুললেই কল দেব।

সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে সুমন একবার ঘড়ি দেখে নিলো, পৌনে নয়টা বাজে, পনেরো মিনিটের মধ্যে ইডেনে পৌছাতে হবে। মেঘলা আবহাওয়ার কারণে মনে হয় চারপাশ এখনো শুনশান। শহীদুল্লাহ্ হলের পুকুর পাড় দিয়ে হেঁটে যাবার সময়ও তেমন কোন জন-মানব ওর চোখে পড়ে না। 'কি ব্যাপার, আজ কি সবাই রুমে বসে বর্ষা যাপন করছে?' ভাবতে ভাবতে শহীদুল্লাহ্ হলের গেট দিয়ে মেডিক্যালের মোড়ে এসে দাড়ায় ও।
একটা খালি রিকসা দেখে দাম-দস্তুর না করেই উঠে পড়ে। ইডেনের গেটে যখন নামে তখন নয়টা প্রায় বেজে গেছে। একটা সিগারেট ধরিয়ে সুমন গেটের দিকে এগোয়। গেটের আশেপাশে কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। মামুরা সব গেল কোথায়? গেটের পাশের ছোট্ট খুপরিটায় ও উঁকি দেয়। খুপরিতে মশারী খাটানো, কেউ একজন ঘুমাচ্ছে। সুমন মশারীর দড়ি ধরে ঝাঁকি দেয়।
- এই যে, মামা।
মশারীর ভেতরে কেউ একজন একটু নড়ে ওঠে। সুমন আবার মশারী নাড়া দেয়।
- এই মামা, আরে নয়টা বাজে, উঠবেন না? এই মামা।
মশারীর কোনা উঠিয়ে এবার মামা উঁকি দেয়, চোখে মুখে বিরক্তি।
- ওই মিয়া ফাইজলামি করেন।
- আরে ফাজলামি করলাম কই, এই দ্যাখেন ঘড়ি নয়টা বেজে গেছে।
মামু ধর-মর করে উঠে বালিশের নিচ থেকে ঘড়ি বের করে। তারপর মশারীর কোনা ঠিক করতে করতে ক্রদ্ধ স্বরে বলে -
- হুদা মিছা ঘুমডা ভাঙাইলেন, মোডে ছয়ডা বাজে।
সুমন তীক্ষ্ণ চোখে হাতের ঘড়িটার দিকে তাকায়, নাহ ঘড়িতো ঠিক-ঠাকই চলছে। আবার রাস্তায় এসে দাড়ায় ও। রাস্তার উল্টা পাশে এক রিকশাওয়ালার হাতে ঘড়ি দেখে সুমন এগিয়ে যায়।
- ভাই কয়টা বাজে, একটু দ্যাখেন তো?
- ছয়ডা পাঁচ।

ফজলুল হক হলে সুমন যেখানে শুয়ে ছিল, সেখানে এখন আসিফ ঘুমাচ্ছে; ঘুমিয়ে গেলেও ঘুমানোর আগ মুহূর্তের হাসির দাগ এখনও ওর ঠোটে লেগে আছে। আসিফের মাথার কাছে সুমনের অ্যালার্ম ঘড়িটা টিক টিক করে চলছে, ঘড়িটাতে এখন বাজছে ছয়টা পাঁচ।


মন্তব্য

ইশতিয়াক এর ছবি

আসিফ এর বান্ধবী কে বই দিতে সুমন কেন যাবে? আসিফেরই তো যাওয়া উচিত।

অতিথি লেখক এর ছবি

নির্বিষ (হার্মলেস) বন্ধুদের দিয়ে আমরা ভার্সিটিতে অনেক কাজই করিয়ে নিতাম, সুমন তেমনি এক নির্বিষ বন্ধু যাকে দিয়ে আসিফ তার কাজটি করিয়ে নিয়েছে। তাছাড়া আসিফের বান্ধবী সুমনেরও পরিচিত, ব্যাপারটা গল্পে উল্লেখ করা না থাকলেও বুঝে নিতে মনে হয় সমস্যা হয় না। পরিচয় একদম না থাকলে আসিফ নিশ্চয়ই সুমনকে পাঠাত না।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

অনন্ত আত্মা

অতিথি লেখক এর ছবি

কেমন যেন সাসপেন্স অনুভব করতেছি। ইন্সেপশন ইলিউশন নাকি!!!!!!!

দুই ঘড়িতেই ছয়টার সময় নয়টা বাজাইল কেডা???

-অতীত

অতিথি লেখক এর ছবি

ছয়রে নয় বাজানোর কারসাজি যে করছে তার ব্যাপারে গল্পের শেষ প্যারাতে একটা আভাস দেয়া হয়েছে।
ধন্যবাদ অতীত, গল্প পড়ে সাসপেন্স অনুভব করার জন্য।

অনন্ত আত্মা

অতিথি লেখক এর ছবি

জটিল!!! আমার সাসপেন্স তাহলে সার্থক।

তবে হাতঘড়িটার সময় ও যে আসিফ চেঞ্জ করেছে এইটা এক্সপেক্ট করি নাই; সুমন তো তাইলে মড়ার মত ঘুমায়, ব্যাডা কিছুই টের পেল না!!!

আসলেই চমৎকার ছিল আইডিয়াটা; আরও লেখা চাই এমন

-অতীত

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, আমার দিক থেকে চেষ্টা থাকবে ভাল গল্প দেবার। ভাল থাকবেন।

অনন্ত আত্মা

কৌস্তুভ এর ছবি

আঃ, নষ্ট পোলাপান যতসব!

গল্পটা খারাপ না, তবে উপরের প্রশ্নটা ঠিকই।

অতিথি লেখক এর ছবি

ঠিকই বলছেন সব নষ্ট এবং ভ্রষ্ট।
উপরের প্রশ্নের সম্ভাব্য একটা উত্তর উপরেই দিয়েছি যদিও অনেক ধরনের উত্তরই ঐ প্রশ্নের হতে পারে।
সময় নিয়ে পড়ার আর মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা।

অনন্ত আত্মা

সৌরভ দে [অতিথি] এর ছবি

হা হা

অতিথি লেখক এর ছবি

বাহ্ আপনার হাসিটা তো চমৎকার।

অনন্ত আত্মা

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আসিফ পোলাটা তো বড়ই বদ! আমার ডাক নাম সুমন হওয়ায় সুমনের কষ্ট আমারও কষ্ট হয়ে গেলো। হাসি

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অতিথি লেখক এর ছবি

স্যরি মাহবুব, থুক্কু সুমন ভাই। নামটা কি তাইলে বদলায় দিমু?

অনন্ত আত্মা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।