দ্বৈততা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ০১/০৪/২০১১ - ১২:৪৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রচন্ড ধাক্কা, তারপর হঠাৎ যেন সবকিছু স্থির হয়ে গেল। বীথির চিৎকারে সজীবের হুশ ফিরল। সেই সংঘাত পূর্ণ রাজপথ, চারপাশে ভীত পায়ের ছোটাছুটি, তার মাঝে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে সজীব। আবারও বীথির চিৎকার "সজীব পালা"।

বীথির চিৎকারে যেন কি ছিল, সজীবকে মুহুর্তের মধ্যে সজাগ করে তুলল, তার সমস্ত ইন্দ্রিয় যেন শিড়ঁদাড়া দিয়ে মস্তিষ্কে বিপদ সংকেত পাঠাচ্ছে, শরীরের প্রতিটি কোষের যেন মস্তিষ্কে বলছে “পালা সজীব, পালা”।

সজীব দু হাতে ভর দিয়ে উঠে দাড়াল, ডান চোখে ঝাপসা হয়ে গেছে রক্তের ধারায়, রিডিং গ্লাসটা হাত কয়েক দূরে দুমড়ে মুচড়ে পড়ে থাকতে দেখল সজীব। সেদিকে আর ভ্রুক্ষেপ না করে পিছনে ঘুড়ে তাকাল।

পিছনে এলোতোপাড়ি গুলি ছুড়তে ছুড়তে পিছনে দৌড়ে আসছে সশস্ত্র ক্যাডাররা, সাধারণ ছাত্ররা এখনো যে যেদিকে পারছে ছুটছে। রাস্তায় সজীবের মত কয়েকজন পড়ে আছে বিভিন্নজন বিভিন্ন ভঙ্গিতে, কিন্তু তারা যেন এই নৃশংস কাজের প্রতিবাদে নিরবতা পালন করছে। সজীব দৌড় দেওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু পাশ থেকে ধাক্কা খেয়ে আবার মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ল সজীব। পিঠে কার ছায়া অনুভব করল, অনেক কষ্টে ঘুরে তাকাল। কিন্তু ঘুরে তাকিয়ে মনে হল সময় যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে।

তার চোখের সামনে ধরা অস্ত্রটি মনে হল যেন তাকে সম্মোহিত করে ফেলেছে। সজীব সাহায্যের জন্য চিৎকার করল, কিন্তু সেই শব্দ কেন যেন তার গলা থেকে বের হচ্ছে না। সজীবের শরীরের কোন অংশ কথা শুনছে না। সজীব বাঁচতে চায় কিন্তু তার শরীর এর ওজন যেন কয়েকশ টন হয়ে গেছে। সজীব স্পষ্ট দেখত পেল, বন্দুকের হ্যামারটা বারি খেল যেন তার বুকে সজোরে।

সারা শরীরে ব্যাথা ছড়িয়ে পড়ছে। সজীব এখনও চিৎকার করে চলছে, কিন্তু কোন শব্দ বের হচ্ছে না। সজীব ভাবল "তবে কি এইখানেই আমার ইতি? কিন্তু আমার যে অনেক কিছু করার ছিল, কত স্বপ্ন ছিল, আমার মায়ের কি হবে, তাকে দেখে রাখবে কে? আমার বোন এর বিয়ের সময় তাকে বিদায় দিবে কে? বীথিকে যে আমি ভালবাসি সে কথা কি অব্যক্তই রয়ে যাবে?"। ক্রমশ সজীবের দৃষ্টি ঘোলা হয়ে যাচ্ছে, চেষ্টা করেও চোখ খোলা রাখতে পারছে না। হঠাৎ মনে হলে সজীব যেন বিশাল খাদে পড়ছে, পড়তেই আছে, চিৎকার করছে, ঠায় খুঁজছে কিছু ১ টা ধরবার জন্য, কিন্তু পাচ্ছে না। হঠাৎ করে সজীবের সারা শরীরে কাঁপুনি অনুভব করতে লাগল। সজীব এখনও ঠাঁয় খুঁজছে, চিৎকার করছে, কিন্তু কোথাও ঠাঁয় নেই।

হঠাৎ করেই সঞ্জীব যেন ১ টা আচমকা বারি খেল, ধুড়পড় করে উঠে বসল। চারিপাশ অন্ধকার, শোঁ শোঁ আওয়াজ আর তার সাথে সেই কাঁপুনি, সঞ্জীব কি বেঁচে আছে? তাড়াতাড়ি করে গালে হাত দিল, বুকে হাত দিল, নাহ্‌ গালে কোন কাটা নেই, বুকে কোন ক্ষত নেই। এখনও সঞ্জীব কাঁপুনি টা অনুভব করছে। আশেপাশে হাতড়ালো কাঁপুনির উৎস খোঁজার জন্য। মোবাইলটা পেয়ে গেল, এখনও মোবাইলটা ভাইব্রেট করে চলছে, কলার বীথিকা। সঞ্জীবের মনে হল অশরীর কোন এক জন তার সাথে মজা করছে, শীড় দাঁড়া বেয়ে নেম গেল কেমন এক অসুস্থ অনুভূতি। সঞ্জীব এক লাফে উঠে দাঁড়াল, সকল ইন্দ্রিয় তীব্র সজাগ, সেই অশরীর কে অনুভব করার জন্য প্রস্তুত তারা। সন্তপর্ণে এগিয়ে গিয়ে ঘরের লাইট টা জ্বালাল। বাথরুমের লাইটাও জ্বালাল। আলোর উপস্থিতিতে সঞ্জীব অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। ফোনটা সে রিসিভ করল -

বীথিকাঃ কিরে ঘুম থেকে উঠলি অবশেষে ।

সঞ্জীবঃ উউম

বীথিকাঃ এখনও উঠিস নাই? ৭ টায় কিন্তু ভার্সিটিতে হাজির থাকতে হবে।

সঞ্জীবঃ উউম

বীথিকাঃ উউম কিসের? এখন কিন্তু প্রায় ৬ টা বাজে। তাড়াতারি উঠ, না হলে কিন্তু পৌঁছাতে পারবি না।

সঞ্জীবঃ হুম, উঠসি, রেডি হয়ে আসতেছি তখন কথা হবে। রাখি

সঞ্জীব কোন রকমের প্রতি উত্তর ছাড়াই লাইন কেটে দিল, বীথিকার সাথে কথা বলার সময় বার বার স্বপ্নের ঘটনা মনে পড়ছিল। সঞ্জীবের এখনও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে ওইটি স্বপ্ন ছিল, মনে হচ্ছে এইটাই বরং স্বপ্ন, বাস্তব নয়। এই চিন্তা করতে করতে সঞ্জীব ব্রাশ নিয়ে বাথরুমে ঢুকল, ভার্সিটির জন্য রেডি হতে।

কিম নতুন রিক্রুট পেয়েছে প্রধান টেকনিশিয়ান হিসাবে কয়েকদিন আগে। বয়স মাত্র ১৮ কিন্তু এই বয়সে তার প্রাপ্ত দ্বায়িত্বই ধারণা দেয় তার মেধা সম্পর্কে। কিম অন্যান্য দিন গুলোর মত অলস ভাবে ডায়াল গুলার রিডিং নিচ্ছিল। হঠাৎ নর্থ স্টার এ লাল বাতি জ্বলে উঠল। কিম তাড়াতাড়ি দৌড়ে কন্টোল রুম এ ঢুকল। মাস্টার আইওরি এল তার পর। ঢুকা মাত্রই ভারী গলায় আদেশ জারি করল কিমের উদ্দেশ্যে – “কিম, কি হয়েছে?”

কিম কাচুমাচু হয়ে কোন রকমে উত্তর দিল -

“সায়ার, মহা বিশ্বে আবারও ঝামেলা হয়েছে।”

মাস্টার আইওরি চরম বিরক্ত। লাল সঙ্কেত মানেই সেন্টাল কে রিপোর্ট, আর সে রিপোর্ট এর কথা মনে পড়লেই তার ভার্সিটির রিপোর্ট এর কথা মনে পড়ে যায়, কি বিরক্তিকরই না ছিল জিনিসটা। তাই বিরক্ত লুকানোর কোন চেষ্টা না করে কিমকে বলল– “কি ঝামেলা? রিপোর্ট দাও। আমাকে সেন্টালকে জানাতে হবে।”

কিম রিপোর্টটা মাস্টার আইওরির দিকে এগিয়ে দিল। রিপোর্ট এর দিকে এক নজর তাকিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলা আওরানো শুরু করল -

“আইওনিক চার্টে এক্স, ওয়াই প্লেন এ অবস্থিত একটি গ্রহের ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে এক্স, ওয়াই এর সমান্তরাল এক্স, ওমেগা প্লেন এ অবস্থিত আরেকটি গ্রহতে সঞ্চালিত হয়েছে। তথ্যের পরিমাণ নগন্য। ফারসিয়ার এর বিশ্লেষন মতে এইটি নেহাত দূর্ঘটনা। ওমেগা সেকশনে এর বিশৃখলা পরিমাপ করার পর দেখা যাচ্ছে যে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত লোক জন এর সংখ্যা নগণ্য।”

তারপর যেন সিন্ধান্ত নেবার ছলেই কিমকে বলতে লাগল -

“কিম আমরা ঘটনাটিকে পর্যবেক্ষন করে যাব শুধু। এ নেহাত দূর্ঘটনা।”

আইওনিক চার্টের কথা শুনে কিম খুব কৌতুহল বোধ করল। সে আর প্রশ্ন চাপা রাখতে পারল না -

“সায়ার এই আইওনিক চার্ট অনুযায়ী সদৃশ ও সমান্তরাল গ্রহ গুলা কিভাবে থাকে?”

মাস্টার আইওরি প্রথমে একটু হতভম্ব হয়ে গেলেও পরমূর্হূতে নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন -

“এ অনেক জটিল ব্যাপার। তবে বুঝবার জন্য একটা প্লেন চিন্তা কর। তাতে তুমি দুইটা অক্ষ বসাও। এবার সেখানে তুমি একটি গ্রহ বসাও। যেহেতু এই বিশ্ব সুষম ভাবে প্রসারমান তাই তুমি এইবার দুই অক্ষের ছেদ বিন্দুকে নতুন আরেক অক্ষের দিকে নিয়ে যাও। এভাবে নিয়ে যেতে থাকলে এক সময় ছেদ বিন্দুর দু পাশের অংশ একে অপরের সমান্তরাল হয়ে যাবে। আবার যেহেতু বিশ্বের প্রসার সুষম তাই অবশ্যই দু পাশে আকর্ষণ বল একই হতে হবে। এই জন্যই ঠিক সদৃশ আরেকটি গ্রহের সন্ধান পাওয়া যায়া ওই জায়গায়।”

কিম তার মাথা চুলকাতে লাগল। তা দেখে মাস্টার সায়ার আবারও বিরক্ত হয়ে বলল, “ও এখন বুঝে তোমার লাভ নেই, যাও সেন্টালের রিপোর্টটা তৈরি কর গিয়ে”

কিম তার মাথা চুলকাতে চুলকাতে বের হয়ে গেল, মাস্টার আইওরি তার গমণপথের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের কাজে ফিরে গেল।

---

ধূসর স্বপ্নগুলো

ছবি: 
24/08/2007 - 2:03am

মন্তব্য

মেমনন এর ছবি

চমৎকার বর্ননা, ভাষাও সুন্দর। লেখা চালিয়ে গেলে আরও ভালো ভালো গল্প পাব মনে হচ্ছে। হাসি

ধূসর স্বপ্নগুলো এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

চল যাব তোকে নিয়ে এর ছবি

বর্ননার ভাষাটা খুব ভাল লাগল।

ধূসর স্বপ্নগুলো এর ছবি

ধন্যবাদ "চল যাব তোকে নিয়ে"। আপনাদের ভাল লাগাই আমার প্রেরণা চোখ টিপি

ধূসর স্বপ্নগুলো এর ছবি

বুঝতেছি না লেখাটা কেমন হল, কেউ মতামত দেয় না মন খারাপ
বিজ্ঞ পাঠক আপনাদের মতামত জানায়ে দিয়েন যাতে ভুল ভ্রান্তি গুলো ঠিক করা যায়।

একজন পাঠক এর ছবি

ভালো হইয়েছে পরের পর্বের অপেক্ষায়

ধূসর স্বপ্নগুলো এর ছবি

পড়ের কোন পর্ব নেই, ইহাই সমাপ্তি ...
পড়া এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

সজীব মাহমুদ এর ছবি

আর সে রিপোর্ট এর কথা মনে পড়লেই তার ভার্সিটির রিপোর্ট এর কথা মনে পড়ে যায়, কি বিরক্তিকরই না ছিল জিনিসটা।

হো হো হো
চলুক

ধূসর স্বপ্নগুলো এর ছবি

সহমত দেঁতো হাসি
চলুক

মেসবাহ এর ছবি

“ও এখন বুঝে তোমার লাভ নেই, যাও সেন্টালের রিপোর্টটা তৈরি কর গিয়ে”
খানিকটা আমাদের "স্যাডি" টাইপ ডায়লগ খাইছে

ধূসর স্বপ্নগুলো এর ছবি

হা ভাই হাচা বলেছেন ...
চোখ টিপি

গৌরব  এর ছবি

কিছু কিছু লেখা থাকে খানিকটা পরলে শেষ করতে ইচ্ছা করে।। লিখাটা ওই রকমই

ধূসর স্বপ্নগুলো এর ছবি

আপনাদের ভাল লাগাই আমার প্রেরণা ... ধন্যবাদ ... দেঁতো হাসি

সাদী sadi এর ছবি

চমৎকার...চালায়া যাও... ভালো লাগছে...

সাদী sadi এর ছবি

চমৎকার... ভাল লাগছে...চালায়া যাও... হাসি

ধূসর স্বপ্নগুলো এর ছবি

জ্বি ভাই ধন্যবাদ

তাপস শর্মা এর ছবি

এটা কি গল্প নাকি গল্পগুলি তাই বুঝতে পেলাম না। কারণ প্রথম দুইটা ( ১, ৩) মোটামোটি ভাবে সম্পৃক্ত হলেও ( চরিত্রের নাম পরিবর্তিত ) । ৩য় টার সাথে তো কিছুই মিল পেলাম না ......

তবে একটা কথা - লেখকের বলার ধরন খুবই প্রাণবন্ত। লেখার হাত দুর্দান্ত মনে হয়েছে আমার। গল্পগুলিও ভালো ।

তানিম এহসান এর ছবি

ঝরঝরে লেখা’র হাত। লেখক কি হারিয়ে গেলেন?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।