তাপস নিঃশ্বাস বায়ে..

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ০৫/০৪/২০১১ - ৮:০০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিদেশে আসার পর কিছু কিছু দিন আসে যখন কোন কিছুতে মন বসাতে পারি না। চোখের সামনে উজ্জ্বল মনিটরে খুলে রাখা গবেষনা নিবন্ধ মস্তিষ্কে কোন আলোড়ন সৃষ্টি করে না। শরীর জুড়ে একটু পর পর একটা অস্বস্তিকর অনুভূতি। ফেসবুক খুলে পুরনো ছবিগুলো দেখতে থাকি বারবার। মনের পর্দায় হাজার মাইল দূরের প্রিয় ঢাকা শহর। পহেলা বৈশাখ সেরকমই একটা দিন।

আমার কাছে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটাকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় উৎসব বলে মনে হয়। এই দিনটাতেই মনে হয় আমাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির শক্তিটুকু সবচেয়ে তীব্রভাবে ধরা পরে। ছোটবেলার কথা মনে আছে। বাবা-মার হাত ধরে রমনার বৈশাখী মেলায় ঘুরে বেড়ানো, হাতে বাঁশি আর ডুগডুগি। হৈ চৈ আর চিৎকারে কান ঝালাপালা অবস্থা। নাগরদোলায় চড়ার জন্য ঝুলোঝুলি আর হরেক রকমের পিঠে খাবার লোভ। তখন ঢাকা শহরের লোকসংখ্যা এতটা হয়নি, তবুও মানুষের ভীড়ে চারদিক সরগরম থাকত। মাইকে উচ্চ ভলিউমে ফিডব্যাকের 'মেলায় যাই রে' গান। ঘুমকাতুরে ছিলাম বলে ভোরবেলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানটুকু কখনই 'লাইভ' দেখা হয় নি। একটা আফসোস রয়ে গেছে মনে।

কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুর দিকটাতে আলাদা একটা প্রস্তুতি থাকত নববর্ষের জন্য। নতুন অথবা সদ্য ধোয়া কড়কড়ে পাঞ্জাবি, গায়ে পারফিউম মেখে বন্ধু-বান্ধব সহযোগে মেলা পরিদর্শন। একটু পরপর হাতকে চিরুনি বানিয়ে চুল ঠিক করার চেষ্টা। অন্যান্য আকর্ষনের সাথে লালপাড়-সাদা শাড়ি পরা সুন্দরী ললনারাও আগ্রহের শীর্ষে। রমনার থেকে চারুকলার প্রাঙ্গনটাই তখন আড্ডার জন্য বেশি ভাল লাগত। মুখোশ পরে মঙ্গলযাত্রায় যাওয়ার সময় বৈশাখের প্রখর উত্তাপ বোধ হয় টেরই পেতাম না।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মাঝামাঝিতে যখন ভালবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পরলাম, বৈশাখের রংটা যেন আরেকটু পূর্নতা পেল। দুজনে হাত ধরাধরি করে শাহবাগের রাস্তা দিয়ে হেঁটে বেড়াতাম ভীড়ের পিছু পিছু, হাতে আইসক্রিম কিংবা আমের চাটনি। প্রেমিকার মুখায়বের চিত্রকর্ম বিন্দু বিন্দু ঘাম আর সূর্যের আলোর সম্মিলনে একটা অপার্থিব দৃশ্যর সৃষ্টি করত।

আমরা বাঙালিরাই অবশ্য একমাত্র জাতি না যারা এতটা ঘটা করে নববর্ষ উদযাপন করে। চীনাদেরও সবচেয়ে বড় উৎসব নববর্ষকে ঘিরেই। সম্প্রতি আমার চৈনিক ল্যাবমেটের কাছ থেকে এ সম্পর্কে কিছু ধারনা পেলাম। চীনাদের নববর্ষ উৎযাপন ওদের বসন্ত উৎসবের একটা অংশ। এই উৎসব নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে শুরু করে পনের দিন পর্যন্ত টানা চলে। আরেকটা মজার ব্যাপার হল, প্রতিটি নতুন বছরের একটা নামকরন করে চীনারা। যেমন, এই গত ৩রা ফেব্রুয়ারিতে যে নতুন চৈনিক বর্ষ শুরু হল, এটার নাম দিয়েছে ওরা 'দ্য র‍্যাবিট'।

যাই হোক, যে অনুভূতি থেকে লেখা শুরু করেছিলাম, সেখানেই ফিরে আসি। এবার আর আমার চারুকলা, রমনার লোকারন্যে হারিয়ে যাওয়া হবে না। বন্ধু আর স্বজনদের বর্ষ উদযাপনের ঝলমলে ছবি আর পুরনো স্মৃতি রোমন্থনে
কেটে যাবে সারাবেলা। ল্যাবের হিম শীতল পরিবেশে অযথাই কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকব আর গোপন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ব।
সবাইকে বাংলা নববর্ষের অগ্রিম শুভেচ্ছা।

-নাসাদ আহমেদ সাফা

"আহা পাখি, ডানা ভাঙা তার
দৃষ্টিহীন আঁখি
কন্ঠে নেই গান, দুর্বল প্রাণ
উড়ে যাওয়া তার
শুধুই যে স্মৃতি।"


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়া শেষ করেই তো ফের জুড়ে যেতে পারবেন, তাকডুম তাকডুম বাংলাদেশের ঢোলের বোলে, নাকি বলেন? তো এই ক'টাদিন একটু কষ্ট করে কাটিয়ে দিন, সামনে আসিতেছে শুভদিন হাসি আপনার জন্যেও থাকলো বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা।

- আয়নামতি

একজন পাঠক এর ছবি

এ আর কোনদিন দেশে ফিরবে নারে ভাই। বিলাই নরম মাটি খোজে পায়খানা করার জন্য, একবার নরম মাটির দেখা পেলে, সে ঐটার পিছনেই লেগে থাকে।

দুর্দান্ত এর ছবি

ভাল লেগেছে। নিয়মিত লিখুন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।