ডিম্ব (কিংবা অশ্বডিম্ব)

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৮/০৪/২০১১ - ১১:১৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

*
তুমি বাড়ীর পথে ছিলে, যখন তুমি মারা যাও।

গাড়ীতে ছিলে, ভেঙ্গেচূড়ে পড়েছিলো তোমাকে নিয়ে। তোমার স্ত্রী আর দুই সন্তান রয়ে গেলো। মারা গেলে। সাদা এপ্রনের ওরা সব করেছিলো, যা কিছু করা যায়- কিন্তু। খুব করে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিলে তুমি, যেমন তোমার গাড়ীর সব কাঁচ, কিংবা সব স্বপ্ন তোমার। বিশ্বাস করো তোমার চলে যাওয়াই ভালো ছিলো সব থেকে।

তারপর, আমাকে দেখলে তুমি। আমি, তুমি।

কি ... কি হলো? তুমি আমাকে দেখলে। আমি কোথায়?
মারা গেছো তুমি, আমি জানালাম সহজ। কথার খেলায় শুধু মুহূর্ত যায়, কি লাভ।

একটা ট্রাক ... আমি ...
হুম্‌
... আমি ... মারা গেছি?
হ্যাঁ। মন খারাপের কি। সবাই মারা যায়। আমি বললাম। তুমি চারপাশটা দেখলে। কোথাও কিছু নেই, কিংবা কেউ। আমি, তুমি।
এটা কোন জায়গা? তুমি প্রশ্ন করলে। এটা কি পরকাল?
হুম্‌ ... বলতে পারো।
তুমি ঈশ্বর?
হ্যাঁ, আমি বললাম। আমি সে।

আমার বাচ্চারা ... আমার স্ত্রী, তুমি ভাবলে। তাদের কি হবে?
এইতো, আমি বললাম। এটাই দেখতে চেয়েছিলাম, তুমি মাত্র মারা গেছো, আর তোমার সকল চিন্তা তাদের নিয়ে। ভালো, খুব ভালো।
তুমি বিস্ময় নিয়ে আমাকে দেখছিলে। আমাকে ঈশ্বরের মতো দেখাচ্ছিলো না। আরেকজন মানুষ শুধু। মেয়ে মানুষ হয়তো। ঈশ্বরের চে প্রাইমারির মাস্টার বলে চালিয়ে দেওয়া যায়।
চিন্তার নেই, আমি বললাম। তারা ভালো থাকবে। তোমার সন্তানেরা তোমাকে যথেষ্ট ভালো ভেবে মনে রাখবে। তারা তোমাকে ঘৃণা করবার সময় পেয়ে উঠেনি। তোমার স্ত্রীকে অনেক কাঁদতে দেখবে সবাই, কিন্তু ভেতরে সে স্বস্তিতে থাকবে যথেষ্ট। সত্যি কি, তোমাদের সম্পর্কের ব্রিজটা ভেঙ্গেচূড়ে পড়ছিলো। তোমার যদি কোনওরকম সান্ত্বনার প্রয়োজন পড়ে, তবে বলি, সে তার স্বস্তিবোধের জন্য একরকম অপরাধী হবে নিজের কাছে।

ও। তো ... এখন কি? তুমি জানতে চাইলে। স্বর্গ না নরক? কিংবা আর কিছু?
কিছু না। আমি জানালাম। তোমার পুনর্জন্ম হবে।
হিন্দুরাই ঠিক তাহলে? তুমি বললে।
সব ধর্মই তার নিজের মতো করে ঠিকঠাক, আমি বললাম। এসো।
তুমি আমার পিছু পিছু আসলে সেই শূন্যতার মধ্য দিয়ে। কোথায় যাচ্ছি?
বিশেষ কোথাও না। আমি বললাম। হাঁটতে হাঁটতে কথা বলতে ভালই লাগে, এইই।
তো ... এর মানে কি? তুমি জিজ্ঞেস করলে। আমার যখন আবার জন্ম হবে, আমি তো একটা শূন্য পাত্রের মতো হবো, তাই না? একটা শিশু। এই জন্মে আমি যা করেছি, আমার যতো অভিজ্ঞতা, কিছুতে কিছু আসবে যাবে না।
তেমন না! আমি বললাম। তোমার ভেতরে তোমার আগের সকল জন্মের জ্ঞান আর অভিজ্ঞতা এখনও রয়ে গেছে। তোমার শুধু, এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না।
আমি দাড়িয়ে পড়ে তোমাকে কাঁধে ধরলাম। তোমার আত্মা, তুমি যতটা কল্পনা করতে পারো, তার চে অনেক অসাধারণ সুন্দর বিশালাকায়। তোমার মন তোমার সম্পূর্ণতার মাত্র ক্ষুদ্র একটা অংশ ধারণ করতে পারে। ব্যাপারটা, পানি ঠান্ডা কি গরম বুঝবার জন্য পাত্রতে একটা আঙুল ডোবানোর মতো। তুমি নিজের ক্ষুদ্র একটা অংশ পাত্রে দাও, এবং যখন তা ফিরিয়ে নাও তখন পাত্রের পুরোটুকু তোমার জানা হয়ে যায়।
তুমি গত ৪৮ বছর একটা মানুষের ভিতরে ছিলে। তাই এখনো তুমি নিজেকে ছড়িয়ে দিয়ে তোমার সম্পূর্ণতার বাকী অংশটুকু অনুভব করতে পেরে উঠো নি। আমরা যদি এখানে খুব বেশী সময় রয়ে যাই, তোমার সব মনে পড়ে যাবে। কিন্তু প্রতি জন্মের মাঝে এমনটা করবার মানে হয় না।
তাহলে ... আমার কতোবার জন্ম হয়েছে? তুমি জানতে চাইলে।
অনেক। আমি বললাম। অনেক ... অনেকবার ... এবং অনেক ভিন্ন ভিন্ন জীবনে। এবার তুমি হবে এক চৈনিক কিশোরী, ৫৪০ খৃষ্টপূর্ব।
দাড়াও ... কি! তুমি হতচকিত হয়ে পড়লে। তুমি আমাকে আগের কোন সময়ে ফিরিয়ে দিচ্ছো?
সময়, বলতে তোমরা যা বোঝ, তা শুধু তোমাদের দুনিয়ায় আছে। আমি যেখান থেকে এসেছি, সেখানে ঘটনা ভিন্ন।
তুমি যেখান থেকে এসেছো? তুমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলে।
নিশ্চই, আমি ব্যাখ্যা করলাম। আমি কোথাও থেকে এসেছি, অন্য কোথাও থেকে। আমার মতো আরো অনেকে আছে। আমি জানি, তুমি জানতে চাও ওখানটা কেমন, কিন্তু সত্যি কি, তুমি বুঝবে না।
হুম্, তুমি একটু হতাশ হলে। কিন্তু দাড়াও ... আমি যদি বিভিন্ন সময়ে বার বার জন্ম নেই, তাহলে কোন না কোনও সময়ে এক আমার নিশ্চই আরেক আমার সাথে দেখা হয়ে যাবে।
নিশ্চই। সবসময় হয়। দুজনের কেউ তোমরা বুঝতেও পারো না কি হচ্ছে।
তাহলে ... এইসবের মানে কি?
আসলেই? আমি জিজ্ঞেস করলাম। আসলেই জানতে চাইছো তুমি? জীবনের মানে কি? একটু মামুলি হয়ে গেলো না?
একটা ন্যায্য প্রশ্ন। তুমি জোর করলে।
আমি তোমার চোখে দেখলাম। জীবনের মানে, যে কারণে আমি এই দুনিয়াটা সৃষ্টি করেছি তা হলো- তোমাদের বড় করবার জন্য।
মানে ... মানবজাতি? তুমি চাও আমরা বড় হই?
না, শুধু তুমি। আমি এই দুনিয়া বানিয়েছি শুধু তোমার জন্য। প্রতি নতুন জীবনের সাথে সাথে তুমি আরো বড় হও, আরো জ্ঞানী, আরো অভিজ্ঞ। পূর্ণতার আরো কাছে। এই আমার চাওয়া।
শুধু আমি? তাহলে বাকীরা ...
আর কেউ নেই। আমি বললাম। এই দুনিয়ায় শুধু আমি, তুমি।
তুমি শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলে আমার দিকে। কিন্তু পৃথিবীর আর সব মানুষেরা ...
সব তুমি। তোমার বিভিন্ন জন্ম।
আমিই সবাই!?
এইতো বুঝতে পারছো। আমি তোমার পিঠ চাপড়ে দিলাম।
আমিই মানবজাতির সকল মানব?
সবাই। যারা ছিলো, আছে, রবে।
আমি এব্রাহাম লিঙ্কন?
এবং জন উইলকিস বুথ-ও। আমি যোগ করলাম।
আমিই হিটলার? হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করলে তুমি।
এবং সেই লক্ষ মানুষ-ও, যাদের সে মেরেছে।
আমিই যীশু?
এবং তার সকল অনুসারী-ও। তুমি।
তুমি স্তব্ধ হয়ে গেলে।
যতোবার তুমি কাউকে হত্যা করবে, আমি বললাম। তুমি নিজেকে হত্যা করবে। যতোবার কাউকে দয়া দেখাবে, দয়া দেখাবে নিজেকে। মানুষের অভিজ্ঞতায় যতো সুখ এবং দুঃখ, সব তোমার সুখ, তোমার দুঃখ। ছিলো, আছে, রবে।
তুমি দীর্ঘ সময় ভাবলে। শূন্যতায় সময় ইতিউতি গড়িয়ে গেলো।
কেন? তুমি জিজ্ঞেস করলে। এসব কেন করা?
কারণ, কোন একদিন, তুমি আমার মতো হবে। কারণ তুমি তা-ই। তুমি আমাদের একজন। তুমি আমার সন্তান।
তোমার আবেগ আর শব্দে ধারণের উপযুক্ত রইলো না।

তুমি বললে, আমি ঈশ্বর?

না। এখনও নও। তুমি এখনও একটা ভ্রূণ মাত্র। এখনও বড় হচ্ছো তুমি। যখন তুমি সর্ব সময়ে সকল মানুষের জীবন যাপন করে ফেলবে, তখন তুমি জন্ম নেবার মতো যথেষ্ট বড় হয়ে উঠবে।
তাহলে ... এই দুনিয়া, তোমার এই সৃষ্টি ... আসলে ...
একটি ডিম, আমি উত্তর দিলাম। এখন তোমার পরবর্তী জন্মের পালা।

যাও।
*

এই গল্পটা এন্ডি ওয়ের্‌ এর লেখা, তার ওয়েবসাইট গ্যালাক্টানেট এ প্রকাশিত। যতদূর জানা গেলো, ইনি একজন ইন্টারনেটভিত্তিক কার্টুনিস্ট লেখক, যার কেইসি এন্ড এন্ডি নামে একটি জনপ্রিয় ওয়েবকমিক রয়েছে। বন্ধু মোহাইমেন আমার ফেইসবুক প্রফাইলে এই গল্পটা, কিংবা ডিম্বটা শেয়ার করাতে আমি এটা পাই। পড়ে প্রথমে চমক লাগলো। পরবর্তীতে ডিম্বটা অশ্বডিম্ব হয়ে গেলো। আমার বর্তমান কিংবা সার্বিক মানসিক অবস্থা, যে কোনও কারণেই এমনটা হতে পারে। নিজের ভাবনার শেষে সমাপ্তিসূচক চিহ্ণ লাগিয়ে দিয়েছি। হঠাৎ মনে হলো, অন্যে কি ভাবে? তাই শেয়ার করবার কথাটা মাথায় আসলো। একটু খেলতে গিয়ে অনুবাদের ইচ্ছে জাগলো। এখানেও খেলেছি। কথার খেলা। মূল ঠিক রেখে ভাষা নিয়ে একটু এদিক ওদিক। নষ্ট করিনি লেখাটা, আমার বিশ্বাস। মূল এর লিঙ্কটাও শেয়ার করলাম।
পাঠক ... জানাবেন।
*

মূল ডিম্ব
*

মনোজ


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

উদ্ভট!

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

বাহ! ভালো লেগেছে আমার।
অনুবাদ দুয়েক জায়গায় একটু বেধেছে। তাছাড়া সব ঠিক।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি

এমনটা সত্যি সত্যি হলে খারাপ হতো না কিন্তু!

--------------------------------------------------------------------------------

লাবিন রহমান এর ছবি

আমার ভালো লেগেছে।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

দারুণ!
আমার মনে হয় আমরা আসলে কী, কোথা থেকে এসেছি, কেন আসলাম, কোথায় যাবো, এই জিনিসটা সম্পূর্ণরূপে বুঝবার জন্যে আমাদের পর্যাপ্ত ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট এখনো হয়নি। বুঝাতে পারছি না হয়তো, কিন্তু ধরা যাক 'সময়', এইটা আমরা আমাদের ত্রিমাত্রিক জগতে আসলে পরিপূর্ণভাবে ডিফাইন করতে পারছি না, সময়কে চতুর্থ মাত্রা ধরে আমাদের ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি ইত্যাদি যদি আমরা রিডাফাইন করতে পুরাপুরি সক্ষম হইও ভবিষ্যতে, পঞ্চম, ষষ্ঠ এবং আরো মাত্রা যে নাই, এটা কে ঠিক করে বলতে পারবে? আর থাকলে সেগুলো কী হতে পারে তা কি আমরা এখনো আমাদের কল্প-বিজ্ঞানেও কল্পনা করতে পারছি??
পুরা এক্সিস্ট্যান্সই আসলে খুবই রহস্যজনক একটা ব্যাপার, কিন্তু ... কে জানে, হয়তো অন্য কারো কাছে, এইটা খুবই সহজ একটা ক্লাস নাইনের অংক বইয়ের সূত্র!

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

মনোজ এর ছবি

... পর্যাপ্ত ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট ... মাত্রা ... এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা প্রায়ই শুনি পড়ি। আমরা মাঝে মাঝে শুনে থাকি, মানুষ তার মস্তিষ্কের মাত্র কিছু অংশ ব্যবহার করে, পুরোটা করতে পারলে সে পেতো অতিমানবীয় ফল। যদিও এ ধারণাটি ভুল। আমার কথা হলো ...
এই সকল ভাবনা চিন্তার ফায়দা কি? ... বাংলাদেশের কথা ধরি? এ দেশের কতো কোটি কোটি দরিদ্র মানুষ ... কতো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ... রিকশাওয়ালা গার্মেন্টস কর্মী মাটি কাটা শ্রমিক চাষা ঠেলাওয়ালা ঝাড়ুদার সুইপার কাজের বুয়া ... এইসব ভাবনার কাছধার দিয়েও না গিয়ে জন্ম জীবন যাপন হয়ে মৃত্যুতে গিয়ে ঠেকেছে? ... দরিদ্রদের কথা আগে বললাম, কারণ তাদের এসবের সংস্পর্শে আসবার সুযোগ থাকে না ... যাদের সুযোগ সম্ভাবনা থাকে, তাদেরই বা কতোজন ভাবছে? এইসব ভাবনা ছাড়াই কি জীবন চলছে না? গড়িয়েই হোক আর দৌড়ে। ... যেমন ঈশ্বর কিংবা পরকাল ভাবনা ... মানুষ কি এখন আস্তিক? না। তারা কি নাস্তিক? না। তারা ন্যায্য ভাবে কোনটাই না। তারা সহজ কথায়- নির্বিকার। তাদের কাছে এসব ভাবনা নিষ্প্রোয়জনীয়। এইসব ভাবনা ছাড়াই তারা বেঁচে থাকতে পারছে। জীবন চলছে। তাহলে কি প্রয়োজন? নেই।
মানুষ, জীবনের কথা না ভেবেই জীবন যাপন করছে। কারণ তারা দেখছে, এমনটা করা যায়। তারা দেখছে, উন্নত মানসিকতার প্রয়োজন নেই, জ্ঞানের প্রয়োজন নেই, দর্শনের প্রয়োজন নেই, পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে জীবন যাপন, মস্তিষ্কের প্রয়োজন নেই। তাহলে ঝামেলায় যাবার কি দরকার? নেই।
ধরা যাক উপরের গল্পটা সত্য। তাহলে ভাবা যাক, যখন ঈশ্বর দেখবে তার সন্তানের সাম্প্রতিক কোটি কোটি জন্মের ফসল ... প্রায় শূন্য জ্ঞান, প্রায় শূন্য অভিজ্ঞতা ... তখন তার চেহারাটা কেমন হবে?

ভাবা যাক ... (প্রয়োজন নেই, প্লিজ ডোন্ট, গো ওয়াচ শিইলা কি জাওয়ানি)

অয়ন মোহাইমেন এর ছবি

ধরা যাক উপরের গল্পটা সত্য। তাহলে ভাবা যাক, যখন ঈশ্বর দেখবে তার সন্তানের সাম্প্রতিক কোটি কোটি জন্মের ফসল ... প্রায় শূন্য জ্ঞান, প্রায় শূন্য অভিজ্ঞতা ... তখন তার চেহারাটা কেমন হবে?

ক্লাসিক ......... এই প্রশ্নে স্বয়ং ঈশ্বরও বুঝবেন যে মাঝে মাঝে সর্বশক্তিমান হয়েও কাম নাই
তবে আরেক সেন্স এ বাঙালী তো চরম বস, শূণ্য জ্ঞানের জগতে তো আমরা ডন ......... অর্থাৎ ঈশ্বরকে টেক্কা মারাতে তো টেকনিক্যালি আমরাই শীর্ষে দেঁতো হাসি

আদীব এর ছবি

ধরা যাক উপরের গল্পটা সত্য। তাহলে ভাবা যাক, যখন ঈশ্বর দেখবে তার সন্তানের সাম্প্রতিক কোটি কোটি জন্মের ফসল ... প্রায় শূন্য জ্ঞান, প্রায় শূন্য অভিজ্ঞতা ... তখন তার চেহারাটা কেমন হবে?

বরঞ্চ এখানটাতেই খটকা লাগলো......কোটি মানুষের "প্রায় শূন্য জ্ঞান, প্রায় শূন্য অভিজ্ঞতা" নয়...এটা বলা যেতে পারে শূন্য জ্ঞান নিয়ে জীবন কাটানোর অভিজ্ঞতা......এ অভিজ্ঞতাটুকুরও দরকার আছে ভ্রূণ ঈশ্বরের......মানুষ বলতে তো কেবল তারাই নয়...মানুষ তো তুমি, আমি, আমরা, এন্ডি ওয়ে এবং আরো অনেকে......আমাদের ক্ষুদ্র চিন্তা-ভাবনাটাও সে নিচ্ছে......সে তো কেবল দিনমজুরের দিন-আনি-দিন-খাই জীবনের অভিজ্ঞতা,জ্ঞান নিচ্ছে না......সাথে সে নিচ্ছে প্লেটোর দর্শন......দরকার আছে সব জ্ঞানেরই...

অনুবাদ ভালো লেগেছে......মূল গল্পটা আরো বেশি সুন্দর......আসল ধন্যবাদটা Stumble upon এরই প্রাপ্য......stumble করেই তো পাওয়া......

মনোজ এর ছবি

আমি আসলে শেষের কথাটা ব্যবহার করেছিলাম একটা পরিস্থিতি বোঝানোর জন্য। ... গল্পটাতে একটা ঈঙ্গিত আছে- মানুষের ইতিহাস হলো(ছিলো) জ্ঞান সাধনার ইতিহাস। কিন্তু সাম্প্রতিক ইতিহাস হলো(আছে, রবে) ভোগের ইতিহাস। এবং এটা দিনে দিনে আরও প্রকট রূপ নিচ্ছে। এখন জ্ঞানের কার্যকারিতা কমে যাচ্ছে, জ্ঞান সাধনা হয়ে যাচ্ছে কিছু মানুষের মানসিক সন্তুষ্টির উপকরণ মাত্র। সেই কিছু মানুষও একসময় হারিয়ে যাবে। হ্যারি পটার আর টোয়াইলাইটেরা দিনে দিনে বাড়ছে। প্লেটো, দস্তোয়েভস্কি, নিচ্‌ঝে, কামুরা ... কিংবা ইলিয়াস, ছফা, হুমায়ুন আজাদেরা হারিয়ে যাচ্ছে। আমি ভালো মন্দ বিচার করছি না, আমি শুধু প্রকৃত পরিস্থিতিটা বুঝবার চেষ্টা করছি।
ধরা যাক, তুমি ঈশ্বর, তোমার জন্ম নেওয়া একশ সন্তান স্কুলে গেলো। দুজন সব বুঝে পড়ে জ্ঞান আর অভিজ্ঞতা লাভ করে এলো বেশ। বাকী আটানব্বই জন ভালো ডান্ডাগুলি খেলা শিখলো শুধু। এখন বাকী আটানব্বই এর জ্ঞান আর অভিজ্ঞতা প্রায় সমান। শতকরা নিরানব্বই ভাগ। তাহলে সেই আটানব্বইয়ের একজন হলেই তো চলতো। বাকীদের প্রয়োজন পড়ে না। ... তখন তুমি কি ভাববে? ... এখন বেশীরভাগ মানুষের জ্ঞানের পরিধি পরিমাণ প্রায় সমান হবার দিকে ধাবিত হচ্ছে, ... উপরের গল্পটার এঙ্গেল-এ, ভ্রূণটির পূর্ণতা লাভের জন্য এদের সবার জ্ঞান আর অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই, একজনেরটাই যথেষ্ট। বাকীরা ওয়েস্টেজ।

এটাই পরিস্থিতি। গল্পটার ভাষ্য মতে, যদি মানব জন্ম সার্থক করতে হয়, তবে এমন কিছু করতে, উপলব্ধি বা অর্জন করতে হবে, যা আগে কখনও করা হয়নি। বা এর কাছাকাছি যেতে থাকতে হবে। কিন্তু মানুষ ইউটার্ন পেয়েছে, ঘুরে গিয়ে পুরো উল্টো পথে দৌড়, হাসিমুখে।

এটা ভালো নয়, এটা খারাপও নয়। কার জীবন উন্নত, কারটা নয়, তা বিচারের কোন ন্যায্য মাপকাঠি নেই। এটা শুধু আমার প্রকৃত পরিস্থিতি বুঝবার চেষ্টা , আমার মানসিক সন্তুষ্টির উপকরণ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।