বিচ্ছিন্ন ঘটনাবলি [পর্ব দুই] আমার প্রথম ও শেষ তাবলীগ চিল্লা

মাহমুদ.জেনেভা এর ছবি
লিখেছেন মাহমুদ.জেনেভা [অতিথি] (তারিখ: শনি, ৩০/০৭/২০১১ - ১২:২৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথম পর্বের লিংক [এখানে]

কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে আমার প্রথম পরিচয় হয় তৈয়বের সাথে, মুলত তৈয়বের আগেই তার খাটের নিচে লুকিয়ে রাখা ডাবগুলার সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয়ে যায়। প্রতি সপ্তাহের প্রথম দিকে এত ডাব কোথা থেকে আসে প্রশ্ন করলে তৈয়ব ইনায়ে বিনায়ে বলে কোন সপ্তাহে বড় চাচা কোন সপ্তাহে ছোট চাচা-মামা-ফুফা। একদিন ভালো করে জানতে চাইলাম দোস্ত ঘটনা কি? আমি কাউরে কমুনা। তৈয়ব সোজা সরল ভালো মানুষ তাই বৃহস্পতি বার ক্লাস শেষে সবাই নদীর পাড়ে ক্লাশের বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিলেও তৈয়বের এইসব ভালো লাগেনা, তাই সে তার এলাকার বন্ধু হাবিবকে নিয়ে হলের পিছনে সারি সারি নারিকেল গাছের নিচে হাঁটাহাঁটি করতে পছন্দ করে আর সন্ধ্যা শেষে রাত হলে সুযোগ মত বস্তায় ভরে ডাব নিয়ে মিশন পসিবল করে রুমে ফিরে। ঘটনা জানানোর পর আমার অটোম্যাটিক নিয়োগ ওদের দলে, তারপর আমি সহ থ্রি ইডিয়ট গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রি দেঁতো হাসি
গাছে উঠতে পারদর্শী না হবার কারনে আমার পোস্ট দারোয়ান, তবে দারোয়ানের কাজটা যে কত কঠিন সে দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই প্রথম টের পেলাম, তড়িৎ বুদ্ধি না থাকলে এই চাকরি টিকিয়ে রাখা খুব দুস্কর, যেমন ধরেন আমাকে অনেক রকম সিগনাল মনে রাখতে হতো একজন আসতে দেখলে হাত উঁচিয়ে মাথা চুলকানো, দুইজন বা তার অধিক হলে দুই হাত দিয়ে মাথা চুলকানো, আবার আসল দারোয়ান আসতে দেখলে নিজে গিয়ে আগ বাড়িয়ে কথা বলা যেন দারোয়ান আসার আগেই তৈয়ব গাছ থেকে নেমে আসতে পারে । বেশ ভালই চলছিল কয়েক সপ্তাহ, মাঝখানে সপ্তাহে কিংবা অন্তত মাসে একবার ডাব বাণিজ্যকরনের চিন্তা ভাবনাও করেছিল তৈয়ব, তবে বাণিজ্য করনের চিন্তা বড় পরিসরে না হলেও ‘গিভ অ্যান্ড টেক’ রুলে হবে এমন চিন্তাভাবনা ছিল, গিভ অ্যান্ড টেক বলতে আমরা দোকানে ডাব দিব দোকানদার আমাদের সমপরিমান রসদ দিবে [চানাচুর ঝালমুড়ি সহ আরও কিছু নিদৃষ্ট উপকরন] কিন্ত কোন ধরনের ক্যাশ টাকা আদান প্রদান হবেনা[ এটা হবে আমাদের কর্পোরেট পলিছি]
সব কিছু ভালই যাচ্ছিল, মাঝে বাধ সাধে তাবলীগের ভাইয়েরা, কোনএক রাতে তৈয়বকে কি বলে ব্রেন ওয়াশ করানো হয়েছে তৈয়ব আমাদের বাকি দুই জনকে ডেকে বলে ‘দোস্ত আসাদ ভাইয়ের কাছে প্রতিজ্ঞা করছি ৩ দিনের চিল্লায় যাব, তরাও চল’, হাবীব শেষ পর্যন্ত যায়নি তবে আমার না গিয়ে উপায় ছিলনা কারন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার আগে মসজিদের হুযুরের কাছে নিয়ত করেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলে ৪০ দিনের চিল্লা দিব, ৪০ দিন না দেই অন্তত তিনদিনের চিল্লা দিয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য তৈয়বকে সঙ্গ দিলাম। চিল্লায় গিয়ে একেকটা দিন একেকটা বছরের মত লম্বা লাগতে লাগল। সবচেয়ে কঠিন ছিল ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠা ,ফজরের নামাযের পর আর ঘুমানো যাবেনা, হয় খলিফা একেরামদের তেলস্মতির গল্প শুনে “সুবাহানাল্লাহ” “সুবাহানাল্লাহ” বলা, কিংবা বড়জোর ঘুম তাড়ানোর জন্য হাটাহাটি করা যাবে, এদিকে নামায পড়ার সময় তৈয়বের বাম দিকে সালাম ফিরায়ে ডান দিকে ফিরানোর সময় মসজিদের জানালা দিয়ে ডাব গাছে চোখ পড়তেই দৃষ্টি স্থির হয়ে যায়।
এভাবে দুই রাত কাটানোর পর আসাদ ভাইকে বললাম আমি হলে চলে যেতে চাই, আসাদ ভাই নাছোড় বান্দা শেষমেশ ঠিক হল তৃতীয় দিন সারাদিন থাকতে হবেনা জুমার নামাজ পরে হলে চলে যাওয়া যাবে। তৃতীয় দিন ফজরের নামাজ শেষে ঘুম তাড়ানোর জন্য হাটতে বেরিয়েছি আমি আর তৈয়ব, হঠ্যাৎ করে গাছে ডাব দেখে বলে দোস্ত চল।। আমি বললাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাবে আমাদের হক আছে কিন্ত এখানের ডাবে তো হক নাই আর তাছাড়া চিল্লায় এসে এইসব করবি? আরে ডাবই তো, খাবারের জিনিষ আল্লার দান, মালিকানা কোন বিষয় না পুরা দুনিয়াই আল্লার সৃষ্টি আর যে মালিক সে আজ আছে তো কাল নাই, তুই তর কাজ (দারোয়ানি) ঠিক মত করিস বলতে বলতে বিসমিল্লা আল্লা ভরসা বলে উঠতে শুরু করে দিল। কোন পূর্ব প্রস্তুতি না থাকাতে (ছোট খাট ছুরি) ডাব কে মোথা থেকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আলাদা করতে গিয়ে অসাবধানতা বসত হাত থেকে ফসকে গিয়ে মাটিতে পরতেই ঝামেলার শুরু, বিকট শব্দে “ডাব গাছে কেডা রে” বলতে বলতে এক মহিলা আর তার সারস পুত্র লাঠি সহ হাজির। ভয় পেলে একটা দোয়া আছে বাসের ড্রাইভারের সিটের সাথে লেখা থাকে। দোয়াটা আকাশে পৌছার আগেই মারমুখি মহিলা ও তার পুত্র এসে হাজির, ভেবেছিলাম পালিয়ে যাব কিন্তু তৈয়ব তখনও গাছের মাঝাঁমাঝি। নামার পর মহিলার প্রথম প্রশ্ন তোদের ওস্তাদ কে? বললাম ওস্তাদ নাই, গ্রামের চেয়ারম্যানের ভয় দেখানোর কথা বলায় বাধ্য হয়ে স্বীকার করলাম আমরা তাবলীগের চিল্লায় এসেছি। এরই মাঝে আসাদ ভাই আসাতে ঘটনা বেশি দূর আগালো না তবে আসাদ ভাই কিছু না বলে দুই জনের ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বললেন তোমরা হলে চলে যাও বাকি কথা হলে গিয়ে হবে। আহা মুক্তি! জুম্মার নামাজ পর্যন্ত থাকতে হলনা
তবে সব খারাপের একটা ভালো দিক আছে, এই ঘটনার পর তাবলীগের ভাইয়েরা অনেক দিন আমাদের হেদায়েত করতে আসেনি, মাঝে এক দুইবার ‘ফিকির’ করার তাগিদ দিয়েছে কিন্ত চিল্লায় যাবার কথা ভুলেও আর কোনদিন মুখে আনেনি দেঁতো হাসি

মাহমুদ

বি দ্রঃ আগামী পর্বে আমার প্রথম ও শেষ যাত্রা দেখা নিয়ে গল্প থাকবে

সচলায়তনে প্রকাশিত আমার অন্য সব হাবিযাবিঃ
===============================
[একদম অকাজের লেখা]
-------------------------
বড় হয়ে আমি ইতালি যাব এটা আমার “ এইম ইন লাইফ”
[হয়তো কাজে লাগতে পারে]
---------------------------------
পরিবেশ নিয়ে উচ্চ শিক্ষাঃ কোথায় আছে স্কলারশিপ?
ভেকেশনে সুইজারল্যান্ড [পর্ব দুই]
কোথায় যাচ্ছেন ভেকেশনে ? চলেন যাই সুইজারল্যান্ড
-------------------------------------------------------


মন্তব্য

অপছন্দনীয় এর ছবি

দেঁতো হাসি

guest_writer এর ছবি

হাসি

অরুপ এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

guest_writer এর ছবি

দেঁতো হাসি

বন্দনা এর ছবি

ভালো লাগলো খুব। আমি স্কুলের আম গাছ থেকে আম চুরি করতে গেসিলাম দলবল নিয়ে একবার। এক বন্ধুর বোকামিতে ধরা খেলাম, এরপর পালের গোদা হিসেবে কাগজে একশতবার লিখতে হলো আমি আর কখন ও আম চুরি করবোনা:(। আপনারা তো অল্পের উপর দিয়ে গেসেন, আর যদি সাভারের আমিন বাজারে হয়তো তাহলে হয়ত ডাব ডাকাতি করার জন্য গনধোলায় খাইতেন। চোখ টিপি

কালো কাক এর ছবি

সাভারের আমিন বাজারের গনধোলাইএর ঘটনাটা "চোখ টিপি"র মত কোন ব্যপার না। কমেন্টটা খারাপ লাগলো।

guest_writer এর ছবি

আমিন বাজারের ঘটনা পড়ে অনেক ক্ষণ মন খারাপ ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বেশ কবার গাজা খেয়েছি ব্যপক আনন্দ নিয়ে। দেশটা কেমন দিন দিন মৃত্যু পুরি হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে আমার পাশের ফ্লাটের একটা মেয়ে প্রায় প্রতি শুক্রবার রাতে গাজা খায়। ভাবছি খাতির লাগানো যায় কিভাবে, দোয়া রাইখেন চেষ্টা চালাইতাছি............. বাকিটা আল্লা ভরসা দেঁতো হাসি

দিহান এর ছবি

জোশ...

guest_writer এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সুমন_তুরহান এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

guest_writer এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

ডাব


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

guest_writer এর ছবি

??????????

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

হো হো হো
দারুণ।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

guest_writer এর ছবি

যে কয় দারুন তার নাম হারুন দেঁতো হাসি
মাহমুদ

নিটোল ( অতিথি) এর ছবি

হা হা। মজা পেলাম। আরো লিখুন।

guest_writer এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

guest_writer এর ছবি

মোট চারটা প্যরা দিয়েছিলাম কিন্তু কি হতে কি হলো বুজলাম না সব গুলা দেখি একসাথে হয়ে গেছে, আমার তো এডিট করার ক্ষমতা নাই তাই মোডারেটরদের কেউ যদি একটু করে দিতেন

তাসনীম এর ছবি

সুপার্ব।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

guest_writer এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

পাগল মন এর ছবি

আপনারেতো তবুও তিনদিনের জন্য নিতে পেরেছিল আমাকে অনেক বলেকয়ে দেড়বেলার জন্য নিতে পেরেছিল। তারপরে আর পারে নাই, অনেক চেষ্টা করেছিল অবশ্য।

ডাব চুরির কাহিনী ভালো পাইলাম। আমরা একবার বুয়েটে কাঁঠাল চুরি করেছিলাম। সেটা আমাদের ক্লাবের রুমে রাখা হয়েছিল পাকানোর জন্য। কিন্তু আমি খেতে পারিনি, তার আগেই কাঁঠাল পেকে যাওয়ায় সিনিয়র ভাইরা খেয়ে ফেলেছিল। ওঁয়া ওঁয়া

------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ওরে... পুরাটা পড়তে পারলাম না... চোখ ধাঁধায়ে গেলো... একটু স্পেস টেস দেন... প্যারা ট্যারা দেন... এতো ঘন লেখা পড়ি কেম্নে?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

guest_writer এর ছবি

সালামতো জানতাম ডান দিক থেকে বাম দিকে ফেরায়।

কৌস্তুভ এর ছবি

হো হো হো

রাহিল এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি হো হো হো

The Reader এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

guest_writer এর ছবি

লেখক ভাই, তাব্লিগি ভাষায় চিল্লা বলতে ৪০ দিন বুঝায়...আপনি বার বার ৩ দিনের চিল্লা বলেছেন।পারলে edit করে নিবেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।