কবিকণ্ঠহার বিদ্যাপতি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ০৩/০১/২০১২ - ৫:৫৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পাঁচশ বছর আগে এমনি একদিন, হয়ত বড় আড়ষ্ট ভঙ্গিতে বিদ্যাপতি গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মিথিলার রাজা শিবসিংহের রাজসভায়, হয়ত আড়ালে এককোণে একলাই লুকিয়ে ছিলেন, হয়ত মনে ভাবছিলেন...

"হেসে ভালোবেসে দুটো কথা কয়
রাজসভাগৃহ হেন ঠাঁই নয়,
মন্ত্রী হইতে দ্বারীমহাশয়
সবে গম্ভীর মুখ।
মানুষে কেন যে মানুষের প্রতি
ধরি আছে হেন যমের মুরতি
তাই ভাবি কবি না পায় ফুরতি--
দমি যায় তার বুক"

নানা পার্থিব কাজের ভিড়েও রাজার চোখ হয়ত সেই এককোণেই গিয়ে ঠেকেছিলো, ওইখানটায় যে আলো ছিলো তা বোধ করি রাজকর্মীদের চোখ এড়ালেও শিবসিংহ টের পেয়েছিলেন। তাই হয়ত বলে উঠেছিলেন--
"হোথা বসিয়া কে ওই
এসো তো মন্ত্রী সন্ধান লই"

বিদ্যাপতি হয়ত খুবই সঙ্কোচে বলেছিলেন--
"আমি কেহ নই, আমি শুধু এক কবি"

বড় মুগ্ধ হয়ে সেদিন হয়ত এই তরুনের কবিতা শুনেছিলেন শিবসিংহ, নাম দিয়েছিলেন কবিকণ্ঠহার।

হ্যা, এই আমাদের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি, মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের অমর নাম বিদ্যাপতি।
মধ্যযুগে সাহিত্যের ভরা গাঙে হরেক আলোর যে অনন্য সমাবেশ দেখতে পাই, তার মাঝে বড় আলাদা করে কি এক উজ্জ্বল প্রদীপ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি রাজসভার মহাকবি বিদ্যাপতিকে। লেখেন নি বাংলা ভাষায়, তথাপি কি সাদরে আজ বাংলার কবি বলে সম্মান দেই। কেননা তার কবিতাকে বুকে ধরেই সেকালের বাঙালি কাব্যপ্রেমিকদের তিয়াস মিটেছে, কবিতার ঝাণ্ডা বেগবান হয়েছে। মধ্যযুগের বৈষ্ণব পদাবলির যে অপূর্ব সৌরভ মাতোয়ারা রেখেছে পুরো বাংলা সাহিত্যকে তার আলোকবর্তিকা অগ্রভাগেই বহন করতে দেখি বিদ্যাপতিকে। লিখেছেন ব্রজবুলি ভাষায় যা এই উপমহাদেশীয় নানান ভাষার সংমিশ্রন বলা যায়। তরুণ বয়সে রবীন্দ্রনাথকেও এই ভাষার প্রেমে পড়ে বেশ কিছু ব্রজবুলি কবিতা লিখতে দেখি।

বড় মনোহর একখানা বৈষ্ণব পদ, বিদ্যাপতির অমর কীর্তি আপনাদের শোনাই, এই কথাগুলো রাধা বলছে প্রিয়তম কৃষ্ণকে, কি অসাধারণ উপমায়, রূপকে...............

(পড়ার সময় কোন হসন্ত দিয়ে পড়বেন না, এভাবে পড়তে হবে--
হাথকো দরপনো মাথকো ফুলো)

(কৃষ্ণ তুমি আমার....)
হাথক দরপণ মাথক ফুল।
নয়নক অঞ্জন মুখক তাম্বুল।।
হৃদয়ক মৃগমদ গীমক হার।
দেহক সরবস গেহক সার।।
পাখীক পাখ মীনক পানি।
জীবক জীবন হাম তুহু জানি।।
তুহু কৈসে মাধব কহ তুহু মোয়।
বিদ্যাপতি কহ দুঁহু দোঁহা হোয়।।

হে প্রিয়, তুমি আমার হাতের আয়না-মাথার ফুল, চোখের কাজল-মুখের পান, হৃদয়ের সৌরভ-গলার হার,দেহের সর্বস্ব- গৃহের সার,পাখির যেমন পাখা-মাছের যেমন পানি, তুমি আমার ঠিক তেমনি। এত বলেও যখন রাধা পূর্ণতা পায় না সে কৃষ্ণকেই জিজ্ঞেস করে 'তুমিই বল মাধব তুমি আমার কে?'। সেই সময় এগিয়ে আসেন বিদ্যাপতি, বলেন তোমরা একেই কেবল অন্যের তুলনা।

এর চেয়ে অমিয় বচন, আমি আর কবে, শুনেছি কোথায়.........

---সাজ্জাদ সাজিদ


মন্তব্য

সাজ্জাদ সাজিদ এর ছবি

কবিতাংশগুলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "পুরস্কার" কবিতা থেকে নেয়া।

আশালতা এর ছবি

বাহ্‌, সুন্দর লাগলো। আরও কিছু শুনতে চাই। চলুক

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

সাজ্জাদ সাজিদ এর ছবি

ধন্যবাদ, শুনাব আশা করি।

উচ্ছলা এর ছবি
সাজ্জাদ সাজিদ এর ছবি

ধন্যবাদ, প্রেরণা পাচ্ছি।

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

চলুক

সাজ্জাদ সাজিদ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ফাহিম হাসান এর ছবি

দ্রুত ফুরিয়ে গেল। তবে ভালোই লাগলো।

সাজ্জাদ সাজিদ এর ছবি

বৈষ্ণব পদটি শোনানোই আমার মূল উদ্দেশ্য ছিলো, এইটি শোনাতে গিয়েই খানিক ভুমিকার অবতারণা করতে হয়েছে। তাই হয়ত লেখাটি কিছু ছোট হয়ে গেলো। ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।