আমার দেশপ্রেম

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ০২/০২/২০১২ - ৩:৪৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সম্প্রতি ১ মার্চ ভারতীর পণ্য বর্জন কর্মসুচীর ঘোষণা দেখে একটু হেলেদুলে বসলাম। বাহবা দিলাম দেশের মানুষের দেশপ্রেম দেখে। নিজের দিকটা বিচার করতে হবে। আমি কতটা দেশ প্রেমিক সেটা সবাই কে জানাতে চাই। আপনারাও যদি একটু মনে রাখেন।
আমি ঘুম থেকেই উঠেই ভারতীয় হিন্দুস্থান ইউনিলিভারের কলগেট টুথপেষ্ট দিয়ে দন্ত মাজন করি। নাস্তায় নর সুপ, ভারতীয় কমলা, বাহ বেশ বেশ। সম্প্রতি ভারতীয় এক বন্ধুর দেয়া দার্জিলিং চা না খেলে অফিসে যেতে শরীরটা কেমন যেন ম্যাজ ম্যজ করে। বন্ধুকে আবার পাঠাতে বলবো ভাবছি। অফিসে যেতে যেতে বিলবোর্ডে ভারতীয় তারকাদের কথা বলবো না। দুপুরে খাবারে ভারতীয় সব বাদ কিভাবে দেব। মসলার সবচেয়ে বড় চালান ভারত থেকে আমদানী করা। বাসায় বলবো ভারতীয় মসলা বর্জন করতে। পরের দিন মসলা ছাড়া গোস্ত খেতে কেমন লাগবে ভাবছেন? ব্যপার না বর্জন চলবেই।
রাস্তার দোকানদারদের সচেতন হতে হবে। কি হোটেল, রেস্টুরেন্ট সবখানে খাবার আগে যেন ভারতীয় পণ্য ছাড়া রান্না হয়েছে কিনা তা দেখে নেব। ইউনিভার বাংলাদেশকেও বলতে হবে তারা যেন হিন্দুস্তান ইউনিলিভার থেকে পণ্য না আনে। ঘরে আবার কালা সাবান দিয়ে বাসন পরিস্কার করতে বলবো। বাসার পানি বিশুদ্ধ করার ভারতীয় পণ্যটাকে একটা লাথি দিয়ে বলবো ব্যাটা তুই ভারতীয় দূর হো।
বাসার টিভির চ্যানেলে দাদাদের দাদা গিরি বন্ধ হোক, চলুক মাই টিভির শাকিব খানের নাচ, আপনি যদি ওই টিজির না হন তবে অন্যান্য চ্যানেলের সংলাপে অংশ নিন। লাইভ, ফোন কোন চ্যানেলে কি অভাব আমাদের? ঘর ঘর কি টাইপ নাটক আমাদের দেশেও এখন চলছে তো। সনি টিভির আইডল মাইডল, ড্যান্স ড্যান্স, সিআইডি, আদালত, ক্রাইম পেট্রোল বাদ দিয়া অফিস থেকে এসে প্যাঁচাল দেখবো। শুনবো না দেখবই তো। এইটা দেখা জিনিষ। জানতে হবে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিটা বাংলায় কে করে। ভারতীয় হইলে ওইডার ও খবর আছে। টিভি টাই শেষ ম্যাস না ফালাইয়া দেই।
টিভি বাদ কম্পিউটারে গান শুনি। হিন্দি গান shift delete হল, ব্রাউজ করবো এখানেও আবার ভারতীয় গন্ধ পাই। কোথায় যাই। সব বাদ সব বাদ। ভাইয়ের মেয়ে এসে বলল কাকা কাকা আমি লেইস খাবো। খুকিকে কিভাবে বোঝাই এটা ভারতীয়। কার্টুনে ডোরে মন না থাকলে বাচ্চারা তো আমাকেই ঘরে থাকতে দেয় না। আমি ঘুমাতে যাই। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছি আহা আরাম পেলাম। সব কিছু থেকে দূরে আমি বালিশের কোলে। মার কবিতা মনে পড়ছে; আমার মিষ্টি বালিশ টিরে তুই, কি নরম তুলতুলে ... একি একি বালিশের তুলাও তো ভারত থেকে আমদানি করা।
বিশ্বাস করেন আমি জন্মসুত্রে বাংলাদেশের নাগরিক। ভারতীয় বর্বরতা আমাকেও পিড়া দিচ্ছে। আমাকে উপায় বলেন আমি নিজেও ১ মার্চ ভারতীয় পণ্য বর্জন করবো।
প্রশ্ন - আমাদের দেশের সবকটি স্থল বন্দরে অবাধে ভারতীয় পণ্য বিক্রি হচ্ছে। যখন বাংলাদেশী এক ভাই ভারতীদের হাতে মারা যাচ্ছে তার পরও ভারতীয় পণ্য বিক্রি করছি কেন?
উত্তর - ভাই এটা গ্লোবালাইজেশনের যুগ। মনে রাখবেন প্রতিযোগীতায় আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এসব ফাঁকা কথা না বলে আসুন সবাই মিলে ভারতীয় পণ্য যাতে আর ব্যবহার না করতে হয় তার জন্য কিছু করি। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে হলে প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে হবে।
সবশেষে রেলইঞ্জিন ক্রয়ে ভারতীয় কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
লেখক - গ্রেগরীয়ান বালক


মন্তব্য

guest_writter  এর ছবি

আমার মনে হয় ভারতীয় আর চৈনিক পন্য বাদ দেয়া পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই সম্ভব না ।পন্যের গুনগত মান শুধু না বানিজ্যিক বুদ্ধি সবদিক থেকেই উন্নত দেশ গুলো এগিয়ে।

আমরা রাজাকারদের বিচার ৪০ বছরে করতে পারিনি আর ভারতীয় পন্য ভালো হলে বর্জন নাই বা করলাম ।

নাওয়ারিদ নূর সাবা

গ্রেগরীয়ান বালক এর ছবি

দেশের বেশ কিছু ব্র্যান্ড ভারত সহ প্রথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। আমদানি রপ্তানি ব্যবসা বানিজ্যে থাকবেই। চায়না বা ভারতীয় যা কিছুই হোক না কেন আমাদের দেশে পন্যের মান এবং দাম যদি তাদের থেকে ভালো কিছু হয় এমনিতেই সব ঝরে যাবে।

অন্ত আফ্রাদ   এর ছবি

ভালো বলেছেন আপনি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ভারতীয় পণ্যগুলো অনেকটুকু জায়গা দখল করে আছে। আমাদের এমন কিছু করা উচিত যেন শুধুমাত্র ১ মার্চ নয়, আমাদের আর কখনোই ভারতীয় পণ্য ব্যবহার করতে হবে না। কিন্তু এমন কিছু কি আদৌ করা সম্ভব! চিন্তিত জানি না। বাসায় বলছিলাম ১ মার্চ যেন অন্তত জী-বাংলা,স্টার জলসা বন্ধ রাখে। কি ঝাড়ি টাই না খাইলাম! ওঁয়া ওঁয়া

গ্রেগরীয়ান বালক এর ছবি

আমাদের দেশে যেদিন জী-বাংলা,স্টার জলসা থেকেও ভালো কিছু হবে সেদিন এমনিতেই সব বন্ধ হয়ে যাবে।

তারেক অণু এর ছবি

আমাদের দেশে যেদিন জী-বাংলা,স্টার জলসা থেকেও ভালো কিছু হবে সেদিন এমনিতেই সব বন্ধ হয়ে যাবে।

আশফাক আহমেদ এর ছবি

ভিডিও চ্যানেলগুলোতে প্রায়ই দেখি, টম এ্যান্ড জেরী বাংলায় দেখাচ্ছে।
অনুবাদ একটু হাস্যকর হলেও ওগুলো কী আমাদের মেইন্সট্রিম চ্যানেলগুলোতে দেখাতে পারে না?
তাহলে হয়তো ছেলেপেলেদের ডোরেমন আসক্তি কমতো

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

অরফিয়াস এর ছবি

@ গ্রেগরীয়ান বালক, আপনি কি সেইন্ট গ্রেগরিজ স্কুলের?? তাহলে প্রথমে একই স্কুলের হওয়ার জন্য আসেন কোলাকুলি দেই| দেঁতো হাসি

তারপর আপনার লেখাতে আমার মতামতের মিল পেলাম, ভালো লাগলো, তবে লেখাটা আর একটু গোছানো হলে ভালো হতো, প্রতিযোগীতায় টিকে থাকাটা আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত তা না হলে এই একদিনের সস্তা জাতীয়তাবোধের কোনো মানে নাই, দেশকে এগিয়ে নেওয়ার কথা সবাই বলে কিন্তু কয়জন দেশের জন্য করে?? আমি নিজেই তো করিনা.. আমি নিজেও বাইরের দেশে ভালো সুযোগ-সুবিধে পেলে আরামের জীবন কাটাতে চাইবো, কিন্তু এতে দোষ কি শুধু আমার চাওয়া পাওয়ার?? নাকি স্বাধীন হবার ৪০ বছর পরেও শুধুমাত্র নোংরা রাজনীতি আর ভঙ্গুর সামাজিক অবকাঠামোর জন্য আমাদের দেশের সরকারগুলোর?? দেশের জন্য যারা করছেও তাদেরও হাল দেখুননা, কাওকে মৌলবাদীরা হুমকি দেয় নয়তো কারো কাজ আটকে যায় ফাইলের চাপে, দেশকে তো এগিয়ে নেওয়া দরকার, কিন্তু এতো বিশাল বোঝা বহন করার সামর্থ্য আর জনবল আছে কি??

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

গ্রেগরীয়ান বালক এর ছবি

অরফিয়াস, আমি সেন্ট গ্রেগরীর ছাত্র। আপনার সাথে পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো।
গোছাগোছিতে আমি চিরকালই কুঁড়ে। পত্রিকায়ও সাব এডিটরদের দ্বারা গুছিয়ে চলছি। দেঁতো হাসি আপনাদের মন্তব্য গুলো পড়ে এবার নিজেকে একটু সত্যি গুছিয়ে নিতে চাই। আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।
ভালো সবাই থাকতে চাই। পণ্য বর্জন, সংস্কৃতি বর্জন যাই কিছুই বলেন এসব থেকেই আসলে সত্যিকারের অর্জন হচ্ছে। আমাদের সমস্যা হল আমরা শুধু বর্জনই করতে চাই কিছু অর্জন করতে চাই না।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

১ মার্চ, ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাকটি একটি প্রতীকী কর্মসূচী। স্থায়ী বর্জন নয়। বর্তমান বাস্তবতায় সেটা সম্ভবত সম্ভবও নয়। আমাদের

মূল কথাটি হচ্ছে, ভারতীয় সরকার ও জনগণের কাছে, সীমান্তে বি, এস, এফ, এর নৃশংসতার চিত্রটি তুলে ধরা। তাঁদের কাছে এই বার্তাটি পৌঁছে দেওয়া যে, আমরা এ কারনে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও অপমানিত।

প্রয়োজনে আবারও এ ধরনের কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে এই বক্তব্যটি তুলে ধরার চেষ্টা করা যেতে পারে। ভেবে দেখতে অনুরোধ করছি।

সাবেকা এর ছবি

সহমত ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।