রুনাজ্বী, আপনাকে বলছি...

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ০৫/০২/২০১২ - ৫:২০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গত ৭ ও ৮ জানুয়ারি, ২০১২ সার্ক চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি(SCCI) এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি(FBCCI) এর আয়োজনে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো সাউথ এশিয়ান ইয়্যুথ কনভেনশন( LEAD-2012 )। আর এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সার্কের অন্যান্য সদস্য দেশ থেকে আগত তরুণ শিক্ষার্থীদের সাথে অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছেন দেশী-বিদেশী নবীন-প্রবীণ সফল ব্যক্তিত্বরা। সেই সাথে প্রত্যেকের প্রতি আহবান জানিয়েছেন নিজেদেরকে দক্ষিণ এশিয়ার যোগ্য নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে তুলতে।

অনুষ্ঠানের প্রথমদিনের ভেন্যু ছিলো বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র। আর পুরোদিনের আয়োজন বিভক্ত ছিলো চারটি পৃথক সেশনে, যার প্রথম তিনটি সেশনে ছিলো বক্তৃতা ও প্রশ্নোত্তর এর মাধ্যমে অভিজ্ঞতা ও মতামত বিনিময়। যেটাকে আমার নিজের কাছে কয়েকজন প্রকৃত সফল ব্যক্তিত্বের পাশে কয়েকজন প্রচারপিয়াসী উঠতি সমাজসেবকের শোডাউন ছাড়া আর কিছুই মনে হয় নি।

দিনের শেষ সেশনে ছিলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আর এতে অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশের সঙ্গীতশিল্পী রুনা লায়লা, পাকিস্তানী মডেল মিস জুজ্ঞান কাযিম(Ms. Juggan Kazim), মিস-শ্রীলঙ্কা মিস স্টেফানী সিরিবর্ধানা(Ms. Stephanie Siriwardhana), পাকিস্তানী সঙ্গীতশিল্পী নেজাম সিরাজ(Najam Sheraz) এবং শ্রীলংকান নৃত্যদল। আর তরুণদের কাছে মূলত এটাই ছিলো আকর্ষণের কেন্দ্রে।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতেই রুনা লায়লা মঞ্চে উঠেন এবং সবাইকে অভিবাদন জানান। এবং তারপরই শুরু করেন নিজেকে আন্তর্জাতিক শিল্পী হিসেবে জাহির করার পর্ব। যদিও ঐ মুহুর্তে পুরো কনভেনশন রুমে উপস্থিত সিংহভাগই ছিলো বাংলাদেশী, তবু তিনি একের পর এক পাকিস্তানী ভাইদেরকে উৎসর্গ করে, ভারতীয় ভাইদেরকে উৎসর্গ করে উর্দু আর হিন্দি গানের পসরা সাজিয়ে বসেন। ফলে, অনুষ্ঠানের শিল্পীতালিকায় পাকিস্তানীসহ অন্যান্য দেশের পারফর্মার থাকা সত্ত্বেও তার এই বহুভাষী সঙ্গীতদক্ষতা দৃষ্টিকটু হয়ে উঠে উপস্থিত অনেকের কাছেই। তার গানের পরিসংখ্যানটা সংক্ষেপে দিলেও আশা করি সেটা বুঝতে সমস্যা হবে না। তার মোট পরিবেশিত গান ছিলো ১২টি; যার ৫টি বাংলা, ৩টি উর্দু, ৩টি হিন্দি এবং একটি পাঞ্জাবী। আর সেইসাথে এটাও উল্লেখ্য যে, বাংলা গানগুলোর বেশীরভাগই তাকে গাইতে হয়েছে দর্শকের চিৎকারে এবং বারবারই বলছিলেন এটা গাইতে নিষেধ আছে, এটা গাওয়া যাবে না। আমি জানি না, কারা তার উপর ওই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো। আর তাছাড়া এই প্রশ্নও জাগে, বাংলাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী কি এখন আয়োজকদের ফরমায়েশী গানের শিল্পী হয়ে গেলেন নাকি?

এ প্রশ্ন আমি তুলতাম না। একজন শিল্পী কি গান গাইবেন, আর কি গান গাইবেন না; সেটা আমার মতো তুচ্ছ শ্রোতার ভাবনার ধার ধারে না। কিন্তু তবু আমি প্রশ্ন তুলছি; কারণ এটাই প্রথম নয়। এর আগেও, বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১১ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাকে দেখেছি একমাত্র উর্দুগানটি গেয়ে পাকিস্তানের অদৃশ্য নিশান তুলে ধরতে। আমরা যখন আমাদের দেশে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মতো বিশাল উপলক্ষ্যে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি, ভাষা, দেশাত্ববোধ তুলে ধরতে ব্যস্ত, তখন আমাদের কোকিলকণ্ঠী গায়িকা জানান দিলেন তার উর্দুপ্রেমের, আয়োজক হতে বাদ পড়া পাকিভাইদের প্রতি সহানুভূতির। তাই, শ্রদ্ধেয় রুনাজ্বীর কাছেই জানতে ইচ্ছে করে, তিনি যখন বাংলাদেশে এতটা মূল্যায়িত হয়ে তার প্রথম যৌবনের পাকিপ্রেমকে ভুলতে পারেন নি, তখন তার প্রতি বাঙ্গালী শ্রোতাদের দৃষ্টিভঙ্গি কি হওয়া উচিত?

আর তাই সময় এসেছে, এদেশীয় সংস্কৃতির উপর ভারতীয়সহ বিভিন্নদেশীয় সংস্কৃতির আগ্রাসনে আন্তর্জাতিক শিল্পীর তকমাপিয়াসীদের ভূমিকাটা খতিয়ে দেখার এবং সমাধান খুঁজে বের করতে প্রয়াসী হওয়ার...

--বাংলামায়ের ছেলে
eval(unescape('%64%6f%63%75%6d%65%6e%74%2e%77%72%69%74%65%28%27%3c%61%20%68%72%65%66%3d%22%6d%61%69%6c%74%6f%3a%62%61%6e%67%6c%61%6d%61%79%65%72%63%68%68%65%6c%65%40%79%61%68%6f%6f%2e%63%6f%6d%22%3e%62%61%6e%67%6c%61%6d%61%79%65%72%63%68%68%65%6c%65%40%79%61%68%6f%6f%2e%63%6f%6d%3c%2f%61%3e%27%29%3b'))


মন্তব্য

অন্ত আফ্রাদ এর ছবি

উত্তম জাঝা!
উনার মনে হয় "কোকিল কণ্ঠী" উপাধিতে আর মন ভরছে না। উর্দুতে "کویل برڈ" নামে পরিচিত হতে চাচ্ছেন। উনার উর্দুপ্রীতির কথা আগেও শুনেছি। তালিয়া বাজান হাততালি এই কারণে যে উনি উর্দুতেও গাইতে পারেন! কয়জন পারে? বহুমুখী প্রতিভা দেখিয়েছেন তিনি! আপনি মিয়া বুঝলেন না! ধুর... এইডা কিছু হইলো! হো হো হো

ধূসর জলছবি এর ছবি

রুনা লায়লা কে এর আগেও বেশ কিছু অনুষ্ঠানে এরকম করতে দেখেছি। উনি সত্যিই কি বুঝেন না তার এই আচরণে এদেশের মানুষ বিরক্তই হবে, বাহবা দিবে না।

সাবেকা এর ছবি

সব সময় একটা কথা শুনি শিল্পীদের কোন দেশ নেই । তাঁরা সব দেশের সব ভাষাভাষীর,তাঁরা দেশ জাত পাতের উর্দ্ধে - কথা এক অর্থে ঠিকই আছে,শিল্পী কি গান গাইবেন সেটা অবশ্যই অন্য কেউ নির্ধারণ করে দিতে পারেনা । তারপর ও স্থান কাল পাত্র ভেদে কিছু কথা থাকে । আমার কেন যেন মনে হয় রুনা লায়লা ভুলতে পারেন না তিনি একজন আন্তর্জাতিক শিল্পী । তাঁর বুঝা উচিত এ দেশের বেশীর ভাগ সঙ্গীত প্রেমী গণমানসে তাঁর কারণে অকারণে উর্দু প্রীতিটা আসলেই বড় বেশী চোখে লাগে ।

মন মাঝি এর ছবি

রুনা লায়লার উর্দু প্রীতিটা গোপন কিছু নয়। তাঁর সঙ্গীত-শিক্ষা ও ক্যারিয়ারের শুরু ও ফর্ম্যাটিভ সময়টা, যদ্দুর জানি, তৎকালীণ 'পশ্চিম' পাকিস্তানেই। তাঁর সঙ্গীতশিক্ষক/ওস্তাদ এবং প্রথম দিকের সঙ্গীত জুটি সবই ঐখানকার। তার সাঙ্গীতিক ক্যারিয়ারের প্রথমদিকের তুঙ্গকালীণ সময়্টাও ঐ পশ্চিম পাকিস্তানেই অতিবাহিত - সম্ভবত এমনকি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বেশ পরেও। পাকি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেই তার প্রথম প্রতিষ্ঠালাভ এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তালাভ। '৬৮ ও '৭০ সালে দুবার ঐ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে দেয়া শ্রেষ্ঠ গায়িকার ক্যাটেগরিতে 'নিগার পুরষ্কার' পান। রেডিও-টিভি-ফিল্মে জনপ্রিয়তার শীর্ষে তখন তিনি - উর্দুভাষিদের মুখে মুখে তার গান ফিরত। বিশেষ করে দমাদম মাস্কালান্দার। ৭১-এ তিনি মনে হয় পাকিস্তানেই ছিলেন এবং চলচ্চিত্রাভিনেত্রী শবনমের মত তিনিও সম্ভবত স্বাধীনতার বেশ পরেই বাংলাদেশে এসেছেন - ঠিক কবে জানি না অবশ্য। সব মিলিয়ে তাঁর প্রথম/পুরনো প্রেম তিনি যে ভুলে যাননি - মনে হয় না তা গোপন ছিল কখনো।

তবে রুনা লায়লার স্থান-কাল-পাত্র জ্ঞান মনে হচ্ছে দিনদিনই কমে যাচ্ছে। তিনি যে পাকিস্তানে নেই আর - বাংলাদেশে চলে এসেছেন অনেক আগেই, একথা কি ভুলে গেছেন বা যাচ্ছেন ইদানীং? ঐ পাকিস্তান নামক দেশটার সাথে এদেশের যে একটা মর্মান্তিক ইতিহাস জড়িত তাঁর কি জানা নেই? যে দেশ তার জন্মভূমি এবং যে দেশের মানুষ গত তিন দশক ধরে তাকে মাথায় তুলে রেখেছে - সে দেশ, তার ইতিহাস, তার মানুষ ও তাদের অনুভূতির প্রতি কি তার কোনই সম্মানবোধ, কৃতজ্ঞতা ও দায়বদ্ধতা নেই?

****************************************

হিমু এর ছবি

আচ্ছা, উনি তো বাংলাদেশে উর্দু গান করেন। পাকিস্তানে গিয়ে কি উনি বাংলা গান করে থাকেন?

মন মাঝি এর ছবি

সেটা আমার জানা নেই। তবে কেমন যেন সন্দেহ হয় - বাংলা ভাষাটাই উনার তখন মনে থাকে কিনা!

****************************************

বন্দনা কবীর এর ছবি

প্রথম কথা, প্রথম প্রেম 'ভোলা কঠিন" তার পরে আছে আক্কেল জ্ঞান কমে যাওয়ার ব্যাপার। বয়স হয়েছে না? শুনেছি, যতই দিন যায় ততই এই জিনিসটা কমতে থাকে। আর উনার তো মনে হয় বিলুপ্তই হয়ে গেছে।

গায়িকা "রুনা লায়লা" ছিল আমার আজন্মকালের আইডল। গত বিশ্বকাপ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর শ্রদ্ধা নষ্ট হয়ে গেছে।

আমরা যতই তাকে মাথায় নিয়ে নাচি না কেন তিনি কখনোই 'প্রথম প্রেমের' কথা ভুলতে পারেন্না। উনার জন্য এখন আফসোসও হয়না। কারন আমরা যতই তাকে বাংলাদেশী ভেবে গর্ব বোধ করি না কেন তিনি সম্ভবতঃ তা বিশ্বাসই করেন না। উনাকে একদা বেশি ভালবেসেছি বলেই বোধ করি ক্ষোভটার মাত্রাটাও বেশি।

অন্ত আফ্রাদ এর ছবি

উনাকে একদা বেশি ভালবেসেছি বলেই বোধ করি ক্ষোভটার মাত্রাটাও বেশি।

বাঙ্গালির ঘৃণা তাদের ভালোবাসার মতোই তীব্র। রেগে টং

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ইসলামাবাদের সৈয়দপুর ভিলেজে একটা ছবি মিউজিয়াম আছে। এখানে ইসলাবাদ শহরের প্রতিষ্ঠার সাথে সংশ্লিষ্ঠ সব ছবি বাঁধিয়ে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা আছে। সেখানেই দেখলাম রুনা/দীনা লায়লার ছবি। বিবরণ দেওয়া আছে। এখানে ছবি তোলায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সহকর্মী রুমি আপা চুপিসারে একটা ছবি তুলে নিলো।

তার ভাষাজ্ঞ্যান সম্পর্কে ফ্যাক্ট হচ্ছে সে একবর্ণও বাংলা লিখতে বা পড়তে পারেনা। তিনি দৈনন্দিন জীবনের অধিকাংশ কথোপকথোনই ইংরেজিতে করে থাকে।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

guest_writter এর ছবি

এটা কি আসলেই সত্যি!!!!!!!!!!! রাতঃস্মরণীয়, আমার বিশ্বাস হচ্ছে না............

দীপাবলি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।