হুতুম্বা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ২৪/০৩/২০১২ - ১:৩৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

- বাবা, কে বেশী পাওয়ারফুল ছিল, রামচন্দ্র না ফেলুদা?
- তোর কি মনে হয়?
- আমার তো মনে হ্য় ফেলুদা। পিস্তল নিয়ে মগনলালের সঙ্গে লড়াই করছে। ঠাঁঠাঁ ক'রে গুলি ছুড়ছে। কিন্তু বাবা, হুতুম্বার সঙ্গে কিন্তু কেউ পারবে না। তাইনা?
- তুইও না?
- পাগল? তুমি না বলো, হুতুম্বার চোখ থেকে লাল রে বের হ্য়। তারপর বাচ্চারা জেদ করলেই ব্যাস। ওমনি ঐ রে চুল ভুরু সব পুড়িয়ে দেবে। আর যে বাচ্চারা হোমটাস্ক কোরবে না, হুতুম্বা তাদের চোখের দিকে তাকাবে, ব্যাস ওমনি জয় বাংলা। চোখ লাল। বিকেলে বন্ধুরা চোখের সামনে দিয়ে মাঠে খেলতে চলে যাবে। ব্যাস, তোমার সানগ্লাস পরে বসে থাকো বারান্দায়।
-আচ্ছা বাবা, হুতুম্বা কোথায় থাকে? আর আমাদের বাড়ীতে য্যামন তুমি, আমি, মা, ঠাকুন আছি, হুতুম্বার বাড়ীতে আর কেকে থাকে? ওদেরোকি ছোট হুতুম্বা আছে?
- থাকবে না? হুতুম্বা বুড়ো হয়ে গেলে তখন কে দেখবে ওকে?
- দেখবে টা কি? হ্যা? চোখ তো আছে ওদের, তাহলে হুতুম্বারা কেন দেখবেনা বুড়ো হুতুম্বাদের, হ্যা?
হঠাৎ ফোনে কিচিরমিচির। বুড়ো হুতুম্বাকে 'দ্যাখা-না দ্যাখা'র ব্যাপারটা নিয়ে বেশীদূর এগোতে পারলাম না। বদলে কলিগের সংগে মেতে উঠলাম সেই গতানুগতিক আফিসিক কুট-কাচালি নিয়ে। এ বিষয়টা নি যে কেউ ঘন্টা কাবার করে দিতে পারে, বিশেষত যদি আউটগোইং ফ্রি থাকে।
দেখি ছেলে ওর খেলনা বন্দুকটা নিয়ে কাল্পনিক শত্রুর সঙ্গে লড়ে যাচ্ছে। বিপক্ষে যে হুতুম্বা, ওটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
খুব ছেলেবেলায়, যখনকার সব কথা মনে থাকে না, আবার কোনো কোনো কথা, স্মৃতি পৃথিবীর কোনো ইরেজার মুছতে পারে না, মনে আছে, বাবা হুতুম্বার গল্প বলতো। অদ্ভুত সব গল্প। বাড়ীর পেছনের বাঁশবাগান হুতুম্বাদের আঁতুরঘর। চোখ গরতে ঢোকা। লাল লাল। কথা না শুনলে সোজা …
আমার গল্প একই। পুরোনো কাঠামোর ওপর কখোনো নতুন কাদামাটি।

সেদিন অফিস থেকে বেরোবো, দেখি ওর ফোন। ছেলের গলা।
'মনে আছে? প্রমিস কোরেছিলে? আরে কুরকুরে। দু প্যাকেট। না আনলে কিন্তু হুতুম্বা… '
বাবার কথা মনে পড়লো।
কে জানে, হ্য়তো এই গাঁজাখুড়ি গল্পগুলো আমার ছেলেও জমা করে রাখছে ওর সিন্দুকে!
**************

#দীপালোক


মন্তব্য

কাজি_মামুন এর ছবি

অনুগল্পটিতে প্যারা নেই, বাচ্চাটির সংলাপ ক্ষেত্রবিশেষে বিশ্বাসযোগ্য হয়নি (যেমন, ব্যাস ওমনি জয় বাংলা); তবু গল্পটির বার্তা ধরতে পারা গেছে; মানবজীবনের চিরন্তনতার ইংগিত রয়েছে; রয়েছে অভিনবত্বের ছাপ। দীপালোক আরও দীপ্তিময় গল্প নিয়ে আসবেন, সেই প্রত্যাশা থাকল!

দীপালোক এর ছবি

ধন্যবাদ …
ছোটছোট ব্যপারগুলো কেউ ধরিয়ে দিলে বুকে বল পাই। ও, আরেকটা কথা। আমাদের এখানে 'চোখ ওঠা'কে (কনজাংটিভাইটিস) জয় বাংলা বলে।

ব্যঙের ছাতা এর ছবি

আমি এখানে আর একটা তথ্য যোগ করতে চাই। হাসি
১৯৭১ সালে "চোখ ওঠা" রোগটির প্রকোপ অনেক বেশি হয়েছিল, পাক হানাদারেরাও এতে আক্রান্ত হয়েছিল। ওরা তো এর সাথে আগে পরিচিত ছিল না, তাই বেশি বিপদে পড়েছিল হাসি মুক্তিযোদ্ধারা একে নাম দিয়েছিল "জয় বাংলা"

Bunan এর ছবি

এটা তো জানতাম না হাসি

কুমার এর ছবি

হাসি ভাল লাগল।
কনজাংটিভাইটিসের ব্যাপারটা প্রথম শুনলাম, মনগড়া নাতো! চিন্তিত

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

আমি এর বিষয়ে পড়েছিলাম হুমায়ুন আহমেদের বইতে। এই মুহুর্তে উপন্যাসের নামটি মনে করতে পারছিনা তবে কথা দিচ্ছি আমার ইন্টার্নশিপ এর ডিফেন্স এর পরে আপনাকে পৃষ্ঠা নং সহ এইখানে তথ্য সূত্র দিয়ে দিবো। মনগড়া কথা লিখলে সচলে আসতাম না, অন্য কোথাও যেতাম। হাসি

সত্যপীর এর ছবি

আমি ইত্তেফাকে একটা লিঙ্ক পেলাম। ঘটনা ২৪ দ্রষ্টব্য। হুমায়ুনের কোন বইয়ে আমিও পড়েছি স্মরণ হচ্ছে।

..................................................................
#Banshibir.

ব্যঙের ছাতা এর ছবি

ধন্যবাদ। আজ সুপারভাইজারের ঝাড়ি হজম করেছি, মন খারাপ। আপনার বার্তা আর লিঙ্ক পেয়ে মন ভালো হয়ে গেলো। "ছোট ছোট মেঘেই সূর্যেরা লুকোচুরি খেলে" হাসি

কুমার এর ছবি

আপনাকে কোনভাবে যদি আহত করে থাকি তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। পোস্টের লেখকের কাছ থেকে এই কনজাংটিভাইটিসের ব্যাপারটা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছি মাত্র। অন্য কোন অভিপ্রায় আমার ছিল না। হুমায়ুন আহমেদ লিখে থাকবেন, আমি পড়িনি বা পড়লেও ভুলে গেছি। যা হোক একটু গুগলায়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম, ঘটনা সত্যি। সবার সাথে শেয়ার করি।

সচল মেহবুবা জুবায়েরের ব্লগ থেকে

জুন মাসের শুরুতেই সবার চোখ ওঠা শুরু হলো, বলা যায় মহামারী আকারে। কী যে কষ্ট! চোখের মধ্যে অনেকটা বালি দিয়ে দিলে যেমন কড় কড় করে ঠিক তেমনি অনুভূতি (পিংক আইজ)। পাড়াসুদ্ধো একে একে সবার এই চোখের অসুখ শুরু হলো। শুধু আমাদের পাড়াই নয় সারা বাংলাদেশ জুড়ে সবার চোখ উঠেছিলো তখন। এই চোখ ওঠার সুন্দর একটা নাম ছিলো “জয়-বাংলা অসুখ”। বলা হতো, ইন্ডিয়ার শরণার্থী শিবির থেকে এই জয়-বাংলা অসুখটা ছড়িয়েছিলো। রাস্তার মোড়ে মোড়ে হকাররা কালো চশমা বিক্রি করতো। এ থেকে পাক-আর্মিরাও রেহাই পায়নি। ওদেরও কালো চশমা পরে ঘুরে বেড়াতে দেখা যেত। আমরা খুব মজা পেতাম। সবাই বলতো, “আর আসবি আমাদের দেশে? এইটা তো প্রথম মাইর দিলাম।। বাকী শীঘ্রই আসিতেছে।

গুগল থেকে

আমরা ইন্ডিয়া গিয়ে রানাঘাট নামক এক ক্যাম্পে ছিলাম। এখানে এসে সবার চোখ ওঠা রোগ হয়, এই রোগের নাম ছিল জয়-বাংলা রোগ।

উইকির আলোচনা থেকে

প্রশ্নঃ শ্রদ্ধেয় ফয়জুল ভাই, জয় বাংলা শব্দটা পশ্চিম বাংলায় অন্য একটা connotation-এ ব্যবহার হতে শুনেছি, কোন একটা চোখের ছোঁয়াঁচে রোগের দাক নাম হিসাবে। যেমন "মায়ের (বা মা শীতলার) দয়া" মানে বসন্ত, তেমনি কোন একটা infectious conjunctivitis-কে slang-e বোধ হয় জয় বাংলা বলা হয় (Or may be I am confused between "আঞ্জনি", "চোখ ওঠা", এবং "জয় বাংলা" but it is somewhat related to an eye infection in this connotation)। সেক্ষেত্রে দ্ব্যর্থতা নিরসন পাতা তৈরী করা যেতে পারে। --সপ্তর্ষি(আলাপ | অবদান) ১৭:৩৮, ২৯ ডিসেম্বর ২০০৯ (UTC)
উত্তরঃ এখানে দ্ব্যর্থতা নিরসনের মনে হয় দরকার নাই, এই বিষয়ে এই ভুক্তিতে একটা অনুচ্ছেদ রাখলেই চলে। পশ্চিমবঙ্গে এটার এই নামকরণের ইতিহাস হলো ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এক ভয়াবহ কঞ্জাংটিভাইটিস ("চোখ উঠা") রোগ পশ্চিমবঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগকে সে সময় জয়বাংলা নাম দেয়া হয় স্থানীয় ভাবে। বিস্তারিত তথ্য আছে Pramanik, D.D., "Joy Bangla. An epidemic of conjunctivitis in India",Practitioner. 1971 Dec;207(242):805-6,--রাগিব (আলাপ | অবদান) ১৭:৪৮, ২৯ ডিসেম্বর ২০০৯ (UTC)

আর সত্যপীরের লিঙ্ক তো রইল। এখন আপনার মন ভাল জেনে ভাল লাগছে। ভাল থাকবেন। আপনার জন্য অনেক শুভকামনা। কোলাকুলি

ব্যঙের ছাতা এর ছবি

নারে ভাই, আহত হইনি। দেখলেন না হাসি দিলাম। হাসি যেটা মাথায় আসে, সেটাই লিখি; দ্বিতীয় চিন্তা না করে।
ধন্যবাদ। আপনার জন্যও শুভ কামনা রইলো।

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

খুব ভাল লাগল ।

আরও লিখুন ।
ভাল থাকবেন ।
শুভেচ্ছা ।

দীপালোক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

সুরঞ্জনা এর ছবি

বাহ! হাসি

আরো লিখুন। সচলে স্বাগতম। হাসি

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

দীপালোক এর ছবি

ধন্যবাদ...

আশালতা এর ছবি

ভালো লাগলো। চলুক

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

মর্ম এর ছবি

প্রথম লাইনটা টেনে-হিঁচড়ে গল্পের ভেতর এনে ফেলল, বাকি যা করার হুতুম্বা করেছে!!

লেখা ভাল লাগল। আরো লিখুন। শুভেচ্ছা।

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

নিলয় নন্দী এর ছবি

হাততালি হাততালি
আরো লিখুন।

Bunan এর ছবি

লেখাটি ভাল লেগেছে। ছোটদের মজার জগৎ। আমার নিজের তরোয়ালটার কথা মনে পরলো।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

চলুক
লেখা ভাল লাগল। আরো লিখুন।

তারেক অণু এর ছবি

চলুক আরো লিখুন--

এবিএম এর ছবি

হাসি আরো লিখুন।

দীপালোক এর ছবি

ক'দিন পর সচলে এলাম। মন্তব্যের ঝুলি টইটুম্বুর দেখে বেশ লাগছে। ধন্যবাদ সবাইকে।
আর 'জয় বাংলা' নিয়ে তো দেখছি ঠেক জমজমাট। হো হো হো

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।