বিবেক

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ০৫/১১/২০১২ - ৮:৩২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজ কলেজে যেতে একদম ইচ্ছা করছেনা রশিদ সাহেবের। শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছে ঘুম ভাঙার পর থেকেই। শ্যামনগর বিদ্যাময়ী গার্লস কলেজের ইংরেজির শিক্ষক তিনি, সতের বছর যাবত এই কলেজেই শিক্ষকতা করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার দুই বছর পর এখানে জয়েন করেন। বয়স তখন তাঁর আটাশ। তাগড়া যুবক। বছর তিন শিক্ষকতা করার পর, বিয়ে করেন। ছাত্রীর বাবা-মা চেপে ধরেছিল। স্যার কে তাঁদের খুব ভাল
লেগে গিয়েছে। এমন পাত্র হাত-ছাড়া করা যায়না। রশিদ সাহেব দেখলেন, মেয়ে সম্ভ্রান্ত বংশের, দেখতেও বেশ ভালই। তিনি রাজি হয়ে গেলেন। ধুমধাম-হইচই করে স্যারের সাথে ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেলো।।
স্ত্রী হিসেবে আসমা খাতুন অসাধারন। রশিদ সাহেবে তাঁর পারিবারিক জীবনে খুব সুখী ছিলেন। কিন্তু গত দু'বছর যাবত আসমা বেশ অসুস্থ। দিনের বেশির ভাগ সময় তিনি শুয়ে থাকেন। খুব কষ্ট করে একটু আধটু হাঁটতে পারেন।
বিছানা ছেড়ে উঠে রশিদ সাহেব বাসার কাজের মেয়েকে এক কাপ চা দিতে বললেন। আজ কলেজে যেতেই হবে। চলতি ব্যাচের শেষ দিন আজ কলেজে। দু'মাস পরে ওদের পরীক্ষা। অনেক ছাত্রীর সাথে আর হয়তো দেখাই হবেনা।
কেউ কেউ অবশ্য তাঁর কাছে প্রাইভেট পড়ে। তারা আরও কিছুদিন আসবে বাসায় পড়তে। বিকালের দিকে নিজের বাসায় পড়ান রশিদ সাহেব। যে যা পারে দেয়, টাকার জন্যে কখনো চাপ দেন না তিনি। কেউ যদি না দেয় তাও সই।
শিক্ষকতাকে ব্যাবসায় পরিণত করতে কখনোই চান নি। তবে এই পড়ানোর কারণে সব সময় কিছুটা সচ্ছল অবস্থায় থাকার সুযোগ হয়েছে তাঁর। বাসায় সকালের নাস্তা করেন না রশিদ সাহেব। চা খেয়ে তৈরি হয়ে নিলেন। বেশ স্মার্ট তিনি।
সেই ছাত্র জীবন থেকেই। এখনো মাঝে মাঝে টি-শার্ট জিন্স পড়ে কলেজে চলে যান। বয়স হলেও মুটিয়ে যাননি। ইয়াং বয়সে, বিয়ের আগে কত ছাত্রী যে তাঁর প্রেমে পড়েছে ইয়ত্তা নেই। রশিদ সাহেব ব্যাপারটা তখন
উপভোগ করতেন বটে, কিন্তু তাঁর নীতিবোধ খুবই সূক্ষ্ম ছিল। কখনোই তাদের প্রস্রয় দেননি। নিজেও বেশ সাবধানে চলেছেন সবসময় যাতে ব্যক্তিত্বটা বজায় থাকে ষোলোআনা। এখন বয়স হয়ে গিয়েছে; এতোটা সাবধান
থাকার দরকার পরেনা। ইদানিং ছাত্রীদেরকে মা বলেও সম্বোধন করেন। ছাত্রীদের সাথে তাঁর সম্পর্ক অসাধারন, কলেজের অন্যান্য স্যারদের চেয়ে তাঁকে তাঁর ছাত্রীরা বেশ খানিকটাই বেশী পছন্দ করে। তাড়াতাড়ি কলেজে যেতে হবে।
এগারটায় বিদায় অনুষ্ঠান। তার আগে দশটা বিশে রশিদ সাহেবের একটা ক্লাশ আছে। শেষ ইংরেজি ক্লাশ এই ব্যাচের। এখন বাজে নটা। কলেজ যেতে আধ-ঘণ্টার মত সময় লাগবে।
রশিদ সাহেব আসমা যে ঘরে ঘুমোয় সে ঘরে ঢুকলেন। এক বছর যাবত তারা আলাদাই ঘুমান। আসমার নাকি পাশে কেউ থাকলে অস্বস্তিতে ঘুম আসেনা।
আসমা ঘুমুচ্ছে। তাঁকে আর ডাকলেননা রশিদ সাহেব। হেঁটে পাশের ঘরে এলেন। পরিপাটি করে গোছানো ঘরটা সুইটির। রশিদ সাহেবের মেয়ে। সুইটি সকাল বেলাই স্কুলে চলে গেছে, তার বান্ধবী স্বর্ণার সাথে, স্বর্ণাদের গাড়িতে করে।
সুইটি স্কুল থেকে আসতে আসতে দুপুর গড়িয়ে যাবে। সে আসবেও স্বর্ণার সাথে। দশম শ্রেণীতে পড়ছে ওরা। স্বর্ণাও রশিদ সাহেবের কাছে পড়ে। মেয়ের বান্ধবীকে এমনিই পড়া দেখিয়ে দেন তিনি, টাকা নেন না।
সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে বাসা থেকে বেড়িয়ে এলেন রশিদ সাহেব। একটা রিকসা নিয়ে নিলেন তিনি, আজ হাঁটতে ইচ্ছা করছেনা, লোকাল স্কুটার গুলোতেও উঠতে রুচি হচ্ছেনা। কলেজে পৌঁছালেন নটা বেজে পঞ্চাশে।
ক্যান্টিন থেকে কিছু খেয়ে নিলেন। ক্লাশের সময় হয়ে গিয়েছে। বারান্দা দিয়ে হেঁটে ডি-২০৫ নাম্বার রুমের দরজায় চলে এলেন; তাঁকে দেখে ছাত্রীরা কোলাহল থামিয়ে দিল। আগের ক্লাশের স্যার ছুটি দিয়ে দিয়েছেন আজ তাড়াতাড়িই।
রশিদ সাহেব ক্লাশে ঢুকতেই সবাই উঠে দাঁড়ালো। ''গার্লস, সিট ডাওন! হাও আর ইউ অল??'' ''ফাইন স্যার!'' সবার মুখ হাঁসিহাঁসি। রশিদ সাহেব পুরো ক্লাসে চোখ বুলিয়ে নিলেন একবার। তাঁর চোখ কাউকে খুঁজছে।
এক ছাত্রী দুষ্টুমি করে বলল, ''স্যার, সুমাইয়া আসেনি আজ।'' মেয়েটার ভাবভঙ্গী দেখে রশিদ সাহেব হেঁসে ফেললেন, ''আজ আসেনি! আজ না তোমাদের বিদায় অনুষ্ঠান!'' তারপর রোল কল শুরু করলেন। সুমাইয়া তাঁর প্রিয় ছাত্রী, ক্লাসে
এটা সবাই জানে। প্রিয় ছাত্রী কারণ সুমাইয়া খুব ভাল ইংরেজি পারে, মফস্বলের কোন একটা মেয়ে এত ভাল ইংরেজি কিভাবে পারে কে জানে। রশিদ সাহেবের শিক্ষক জীবনে ইংরেজিতে এই মেয়েটার চেয়ে ভাল আর কাউকে পাননি।
আজ আসলোনা কেন মেয়েটা? রশিদ সাহেবের বিরক্ত লাগলো ব্যাপারটা। সুমাইয়া অবশ্য তাঁর কাছে প্রাইভেট পড়ে। যা হোক, সেখানে তো দেখা হচ্ছেই এই ভেবে মনকে বুঝ দিলেন। রোল কল শেষ হল, রশিদ সাহেব মুখ খুলতে
যাবেন, এই সময় হন্ত দন্ত হয়ে দরজায় এসে দাঁড়ালো সুমাইয়া। ''স্যার, আসতে পারি??'' বলে হাঁপাতে লাগলো। ''গেট ইন। দেরী হল কেন? অন্য ক্লাসগুলোও করনি? খালি ফাঁকিবাজি! কয়দিন পর পরীক্ষা। তুমিতো ফেইল করবা!''
এতক্ষণে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে এসেছে সুমাইয়ার, মুচকি হেঁসে সে বলল, ''জী স্যার! ছোট ভাই অসুস্থ, অনেক জ্বর তাই আসতে দেরী হয়ে গেলো।'' রশিদ সাহেবের মনটা খুব ভাল হয়ে গিয়েছে। আজ শেষ ক্লাস, ছাত্রীদের
অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে হবে। তিনি বলতে শুরু করলেন। সবাই গভীর মনোযোগে স্যারের কথা শুনছে।

আজ সুমাইয়া কিছুতেই আসতোনা কলেজে, ছোটভাই অনেক অসুস্থ। কিন্তু রশিদ স্যারের ক্লাস সে কিভাবে মিস করবে! সে এটা কিছুতেই পারবেনা। মায়ের অনেক নিষেধ সত্ত্বেও জোর করেই চলে এসেছে ও। এই একটা ক্লাস করেই
চলে যাবে। বাসায় মা একা, বাবা তো সারাদিন ইলেকশন নিয়ে ব্যাস্ত। বিদায় অনুষ্ঠানের কোন গুরুত্ব নেই সুমাইয়ার কাছে। রশিদ স্যারের কথা চল্লিশ মিনিট শুনতে পাবে, স্যারের সাথে একটু দুষ্টুমি করা যাবে এর দাম যে অনেক ওর কাছে।
সেই ক্লাস শুরুর দিন থেকেই স্যারের সাথে বাক্যালাপ, খুনসুটি, দুষ্টুমি শুরু হয়েছিল সুমাইয়ার। রশিদ স্যার সবসময় ওকে খোঁটা দিয়ে কথা বলতেন। বকাঝকা দিতেন। কিন্তু ওর একটুও অপমান লাগতনা। স্যার বকা দিলে ওর খুব মজা
লাগত। সে ক্লাসে নানানরকম আজব আজব প্রশ্ন করত স্যারকে। রশিদ স্যারও অসাধারণ, এমন কোন বিষয় নেই যে তাঁর অজানা। স্যার এমন একটা ভাব করতেন যেন প্রশ্ন করায় বিরক্ত হয়েছেন, কিন্তু খুব ভাল করে বুঝিয়ে উত্তর দিতেন।
সুমাইয়ার খুব ভাল লাগত। যদিও স্যার সারাক্ষণ ওকে বকা দিয়ে অপমান করে কথা বলতেন, আর ফেইল করবে এক্সামে এমন বলতেন, কলেজের পরীক্ষা গুলোতে সুমাইয়ার চেয়ে ইংরেজিতে কেউ বেশী পেতনা।
সুমাইয়া স্যারের সবগুলো ক্লাস করেছে, একমাত্র রশিদ স্যারের জন্যেই প্রতিদিনই কলেজে আসতো ও। স্যার অনেক স্মার্ট। এত্ত সুন্দর করে কেউ কথা বলে কিভাবে, ভেবে পায়না সুমাইয়া! কি সুন্দর হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলছেন এখন।
আর যেদিন গুলোতে টি শার্ট আর জিন্স পরে আসেন স্যার সেদিন তো মনে হয় স্যারের বয়স পঁচিশ! আজ স্যার নিল জিন্সের সাথে সাদা টি শার্ট পরেছেন। মুগ্ধ হয়ে চেয়ে আছে সুমাইয়া। স্যারের সাথে কিছুক্ষণ পরপর চোখাচোখি
হচ্ছে। স্যার খুব স্বাভাবিক ভাবে অন্যান্য ছাত্রীদের মতই ওর দিকে তাকিয়ে থেকে কথা বলে যাচ্ছেন কিছুক্ষণ তারপর আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছেন। এগুলো খুব খেয়াল করে সুমাইয়া। সে আসলে এখন কথা না শুনে, স্যারকেই দেখছে।
স্যার ব্যাপারটা খেয়াল করলেন, ''কি সুমাইয়া, কি ভাবছ তুমি? যা বলছি লিখে নাও, নাহয় পরীক্ষার হলে তো হাঁ করে তাকিয়ে থাকবে প্রশ্নের দিকে।'' সুমাইয়া ব্যাগ থেকে একটা খাতা বের করে লেখার ভঙ্গী করতে লাগলো। স্যার একটুপর
আবার বললেন, ''তুমি যে লিখছনা এটা আমি জানি, অভিনয় করতে হবেনা, খাতা ব্যাগে রেখে মনোযোগ দিয়ে শুনে নাও কাজে লাগবে।'' সারা ক্লাস হেঁসে ফেলল। সুমাইয়া খাতা ব্যাগে ঢুকিয়ে রেখে বলল, ''স্যার প্রশ্ন আছে একটা!''
''তোমার প্রশ্নতো সব আজগুবি, কিভাবে যে তোমার মাথায় এগুলো আসে, আল্লাহই জানেন। কর প্রশ্ন কর, এমনিতেও ক্লাস টাইম শেষ।'' সবাই তাকিয়ে আছে সুমাইয়ার দিকে।
-আচ্ছা স্যার, ভালবাসা কাকে বলে?
থতমত খেয়ে গেলেন রশিদ স্যার, এই প্রশ্ন আশা করেন নি। তবে খুবই ক্ষণিকের জন্যে। তারপরই একটা হাঁসি দিলেন। অট্টহাঁসি!
-এর জবাবতো একেক জনের জন্যে একেক রকম। তুমি নিজে যখন কাউকে ভালবাসবে তুমি তোমার জবাব পেয়ে যাবে।
-স্যার, আপনার কাছে ভালবাসাটা কিরকম?
-হ্যা, আমার কাছে ভালবাসা বলতে আসলে কিছু নেই, আমার কাছে মনে হয় সবই এক ধরনের মায়া... মায়ার বাঁধনে সবাই আটকা পরে, একসময় মায়া কেটে যায়, ভালবাসাও উধাও হয়ে যায়। এই যে তোমাদের ক্লাস
নিচ্ছি, তোমাদের জন্যে একটা মায়া পরে গিয়েছে, তোমরা চলে গেলে আরেকটা ব্যাচ আসবে, তোমাদের জন্যে যে মায়া ছিল সেটা কেটে যাবে। এটাই আমার কাছে ভালবাসা। ওকে গার্লস, উইশ ইউ অল দা বেষ্ট অফ লাক।
মে আল্লাহ গ্র্যান্ট ইউ অল অ্যা ভেরি ভেরি হ্যাপি লাইফ...
সবাই হই-হুল্লোড় শুরু করলো, তারা অনেকে স্যারের পা ধরে সালাম করতে চায়। রশিদ স্যার মজা পেলেন, ঠিক আছে, সালাম করতে পার। ছাত্রীরা অনেকেই স্যারকে সালাম করল একে একে, সুমাইয়া এগিয়ে এল, স্যার সেটা লক্ষ্য করলেন।
সামনে এসে সুমাইয়া তার হাত বাড়িয়ে দিল হ্যান্ডশেক করার জন্যে। স্যার প্রস্তুত ছিলেন, সুমাইয়া যে অন্যান্যরা যা করছে তা করবেনা বুঝতে পেরেছিলেন আগেই। স্যারও হাত বাড়িয়ে দিলেন। স্যারের হাতটা প্রথম বারের মত ধরল
সুমাইয়া, এক ধরনে উষ্ণতা, আর অনেক ভারী যেন হাতটা। বেশ কিছুক্ষণের জন্যে সুমাইয়ার মনে একটা আবহ তৈরি করে দিল সেই ছোঁয়া। স্যার যেন এখনো ওর হাত ধরে আছেন। কি হচ্ছে এগুলো সুমাইয়ার মনে? এতোটা অন্যরকম লাগছে কেন,
খুব অস্থির লাগছে সুমাইয়ার। আচ্ছা স্যারের মনেও কি কিছু হচ্ছে? তার যেমন দুনিয়াটা উল্টাপাল্টা লাগছে হ্যান্ডশেক করার পর! স্যারেরও কি এমন লাগছে? স্যার হ্যান্ডশেক করার সময় তার দিকে চোখে চোখ রেখে তাকিয়েছিলেন।
সেই কয়েক মুহূর্তের তাকিয়ে থাকা যে তার কয় রাতের ঘুম হারাম করে দিল কে জানে? স্যার কি এই ব্যাপার গুলো বুঝে?

রশিদ সাহেব সুমাইয়ার সাথে হাত মিলানোর সময় ওর দিকে তাকিয়েছিলেন। মেয়েটা এমন ভাবে তাকিয়েছে কেন! রশিদ সাহেব ঠিক বুঝলেন না। সুমাইয়ার চোখে যেই গভীরতা দেখেছিলেন তিনি সেটা অনুভূতির জগতের অনেক গহীন
থেকে আসা। এর আগে কেউ রশিদ সাহেবের দিকে এত গভীর চোখে তাকায়নি। রশিদ সাহেব ক্ষণিকের জন্যে সন্দেহ হল, অন্যরকম কিছু না তো আবার! নাহ, তা কি করে হয়! সুমাইয়া বুদ্ধিমান মেয়ে। অনেক দুষ্ট কিন্তু বুঝদার। হতেই
পারেনা ওরকম কিছু।

অস্থির লাগছে রশিদ সাহেবের। সুমাইয়া পড়তে আসেনি বিকাল বেলা। আর এক সপ্তাহ পড়াবেন বাসায় এই ব্যাচটাকে। এখন খুব গুরুত্ব দিয়ে এদের পড়া দেখিয়ে দাওয়া দরকার। অথচ সুমাইয়া আসেনি দেখে তাঁর মুড বেশ খারাপ
হয়ে গিয়েছিল। ঠিক মত পড়াতেও পারেননি। সুমাইয়া আজ কেন এলনা? ও তো সাধারণত এমন করেনা। ধুর, এত কেন ভাবছেন তিনি এটা নিয়ে। কত রকম সমস্যা থাকতে পারে, ছোটভাইয়ের অসুখ। একদিন না এলে তাঁর কি এসে যায়?
তবুও মনটা লাইনে আসছেনা। সুমাইয়ার বাসার নাম্বার আছে তাঁর কাছে। একটা ফোন দিয়ে দেখবেন নাকি? ভাবতে ভাবতে শেষ পর্যন্ত রশিদ সাহেব কল দিয়ে ফেললেন। ফোন ধরল সুমাইয়ার মা। নিজের পরিচয় দিলেন রশিদ সাহেব।
সুমাইয়া যে আসেনি এই কথা জানিয়ে জিজ্ঞেস করলেন সব কিছু ঠিক আছে কিনা। ভদ্রমহিলা খুব খুশি হলেন স্যার কল করে খোঁজ নিয়েছেন বলে। জানালেন, ছেলের অসুখ, সংসারের অবস্থা খুব অগোছালো, মেয়ে সারাক্ষণ ভাইয়ের সাথে
আছে। সামনের দিন সময়মত পাঠিয়ে দিবেন বলে ফোন রাখলেন সুমাইয়ার মা। যদিও একটু স্বস্তি পেলেন রশিদ সাহেব, তবে মনের মধ্যে খোঁচা দিল একটা ব্যাপার, তিনি ফোন কেন দিলেন? আগেতো কখনো এরকম করেন নি কোন
ছাত্রীর ব্যাপারে। এতো কেয়ার আসছে কোথা থেকে। উচিৎ হয়নি ফোন দেওয়া। সুমাইয়া শুনতে পাবে, আর যদি আসলেই তাঁর প্রতি মেয়েটা দুর্বল হয়ে থাকে, তাহলে সেটা বাড়বে বৈ কমবেনা স্যারের কল দেওয়ার কথা শুনে। বেশ ভুল
হয়ে গেল। আসমার ঘরে ঢুকলেন রশিদ সাহেব, ঢুকে দেখেন মা মেয়ে একসাথে বসে গল্প করছে। তাঁকে দেখে দুজনে একসাথে চুপ মেরে গেল। রশিদ সাহেব হাঁসি মুখে জিজ্ঞেস করলেন, ''আমি কি ডিস্টার্ব করলাম নাকি তোমাদের!?''
''না, বাবা! আসো, তুমিও আসো আমাদের সাথে গল্প কর!'' মেয়ের উত্তর। রশিদ সাহেব আসমার মাথার কাছে বসে পরলেন বিছানায়। কাজের মেয়ে চা নাস্তা দিয়ে গেলো এই ঘরেই। অনেকদিন পর তিন জন এক সাথে আড্ডা মারলেন। মনটা
বেশ ভাল হয়ে গিয়েছে এখন। শুধু সুমাইয়ার কথা মাথায় আসলেই কেমন যেন লাগতে থাকে। সতের বছরের শিক্ষকতা জীবনে আর কখনো এরকম লাগেনি তাঁর, খুব অসহায় লাগছে। কি করবেন এটা মাথায় আসছেইনা। কিন্তু
কি ঘটতে চলেছে না বুঝার মত অবুঝওতো তিনি নন!

স্যারকে কিভাবে বুঝাবে সুমাইয়া যে উনাকে সে ভালবেসে ফেলেছে? সুমাইয়া ভেবে পায়না কি করবে। আজ ব্যাচে গিয়েছিল ও। একটু আগে স্যারের বাসা থেকে ফিরেছে। স্যারকে কি এটা বলা যায় যে, স্যার আমি আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি। কত বিশ্রী শুনায়!
অথচ ওর হাতে মাত্র একদিন সময় আছে আর। আরেকদিন পড়াবেন রশিদ স্যার। লাস্ট ক্লাস ওইদিনই। এরপর স্যারকে আর পাওয়া যাবেনা এভাবে। সেদিনই যেভাবে হোক স্যারকে বলতে হবে। স্যারকে এই জীবনে না পেলে সুমাইয়ার চলবেনা।
হ্যা, ও পাগলপারা হয়ে গিয়েছে, হিতাহিত জ্ঞান শুন্যের মত ভালবেসে ফেলেছে। যে কাজটা সে করবে সামনের দিন স্যারের বাসায় সেটাও হিতাহিত জ্ঞান শুন্যের মতই হবে। তবুও অপূর্ণ থাকতে দিবেনা নিজের ইচ্ছাটা। স্যার বিবাহিত।
তাতে কি হয়েছে? এতসব বুঝেনা সুমাইয়া। ওর চেয়ে বেশী কেউ কোনদিন স্যারকে ভালবাসেনি, বাসতে পারবেওনা। তাই স্যারকে পাওয়ার অধিকার শুধু তারই আছে। আর কারও নেই। অনেক বড় অপরাধ হবে এটা। সমাজ ধিক্কার দিবে।
সব জানে সুমাইয়া। যত খুশী দিক। স্যারকে পেলে ওর আর কিছুই দরকার নেই। সমাজ পরিবার এগুলো কেয়ার করেনা ও। রশিদ স্যারকে ওর পেতেই হবে। আচ্ছা, স্যার যদি ওকে ভাল না বেসে থাকেন? তখন কি হবে? নাহ, স্যার ওকে
অবশ্যই ভালবাসেন। সুমাইয়া খুব ভাল করেই বুঝতে পারে, স্যারও ওকে প্রচণ্ড ভালবাসে। এখন ওর দায়িত্ব শুধু স্যারকে জানিয়ে দাওয়া যে স্যার ওকে নিয়ে যদি জাহান্নামে যেতে চায় তাও সে রাজি, সে শুধু সাথে থাকতে চায় স্যারের।
বাকী দায়িত্ব স্যারের। ওকে নিয়ে যা খুশি করুক স্যার। কবে আসবে বৃহস্পতিবার। ওইদিন দুপুরে স্যার পড়াবেন, তারপর ছোট একটা ফেয়ারওয়েল পার্টি। রশিদ স্যার তাঁর সব ব্যাচেই একটা করে পার্টি দেন। সময় যেতে চাচ্ছেনা। অপেক্ষার প্রহর
বড়ই দীর্ঘ হয়...

রশিদ সাহেবের ভাল লাগছেনা। আজ শেষ দিন সুমাইয়াদের। অন্য কোন ব্যাচকে ফেয়ারওয়েল দিতে কখনোই তাঁর তেমন কষ্ট হয়নি। অথচ আজকের পর মনে হচ্ছে শুন্য হয়ে যাবে সব কিছু। সুমাইয়া চলে যাবে বলে? আর কোনদিন তাঁকে
আজগুবি প্রশ্ন করবেনা বলে? সেই মিষ্টি চেহারাটা আর দেখতে পাবেননা বলে? তিনি হঠাৎ করে বুঝতে পারলেন, তিনি আসলে দীর্ঘ দিনের সংসার জীবনে আসমাকে ভালবাসেননি। একটা ছোট্ট মেয়ে আচমকা তাঁর জীবনে
এসে তাঁকে ভালবাসা শিখিয়ে দিয়েছে। আজ সেই মেয়েটা শেষবারের মত আসবে তাঁর কাছে পড়তে। এরপর আর মেয়েটাকে পাবেননা সারা জীবনেও। অদ্ভুত শুন্যতা এসে ভীর করেছে হৃদয়ের কোণে। রশিদ সাহেব নিজের অনুভূতিগুলো
সামলাতে পারছেননা। অথচ আজ খুব জরুরি তাঁর অনুভূতির উপর মস্তিষ্কের কর্তৃত্ব। খুব দরকার। মন যা চাইছে, সেটাকে মোটেও প্রস্রয় দেওয়া যাবেনা। তিনি অমানুষ নন। তাঁকে বিবেক খাটিয়ে চলতে হবে। সারা জীবন যেই ভালবাসার
খোঁজে মানুষ কাটিয়ে দেয়, সেই ভালবাসা রশিদ সাহেব খুঁজে পেয়ে গিয়েছেন, কিন্তু সেটার উপর দখলদারিত্ব বসাতে তাঁর মন যেই প্রবল আস্কারা দিচ্ছে, সেটাকে পিশাচ হয়ে কবর দিতে হবে আজ।

ফেয়ারওয়েল পার্টি শেষ হল। একে একে ছাত্রীরা বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছে। রশিদ সাহেবের মনে হল, সুমাইয়া চলে গেলেই ভাল হবে। কোন ঝামেলা ছাড়াই ব্যাপারটা মিতে যাবে। আউট অফ সাইট, আউট অফ মাইন্ড। কয়েকদিন
পর সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু না সুমাইয়া যাচ্ছেনা। ভাব-গতিক দেখে মনে হচ্ছে ও অপেক্ষা করছে সবাই চলে যাওয়ার। পড়ানর সময়তো খুব নরমালি বিহেভ করল। কিন্তু বলা যায়না, এই মেয়ে এতটা সহজ না। মনে কি আছে বোঝা যাচ্ছেনা।
রশিদ সাহেব অবাক হয়ে নিজের ভাবনা চিন্তার দিকে লক্ষ্য করলেন। পঁচিশ বছরের ছোট একটা মেয়ের জন্যে তাঁর মনে কি ঝড় উঠেছে। মনে মনে লজ্জিত হয়ে গেলেন আজ। নিজেকে খুব ছোট লাগছে উনার। কিন্তু উনিতো ইচ্ছা করে
এটা করেননি। সত্যি বলতে এখন পর্যন্ত তিনি কিছুই করেননি। এতোটা দুর্বল কবে হলেন এই মেয়ের প্রতি কিছুতেই মাথায় আসছেনা।

শেষ মেয়েটাও চলে গেলো। এখন ঘরে শুধু তিনি আর সুমাইয়া। সেই বহুল প্রতীক্ষিত মুহূর্তটা এসেছে। দুজনেই জানে এই মুহূর্তের গুরুত্ব কতটুক। রশিদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে আছে সুমাইয়া। চোখে চোখ রেখে দিয়েছে স্থির ভাবে।
রশিদ সাহেব অস্বস্তিতে পরে গেলেন। ''কিছু বলবে সুমাইয়া? বাসায় যাবেনা?'' জিজ্ঞেস করলেন তিনি অবশেষে।
-না, স্যার। কথা আছে।
-হ্যা, বল।
চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে সুমাইয়ার। দৃষ্টিতে সে কি এক অনুনয়! রশিদ সাহেব নিজেকে হারাচ্ছেন সেই চোখের মাঝে। সুমাইয়া উঠে দাঁড়ালো। রশিদ সাহেবের একদম সামনে এসে দাঁড়ালো ও।
-স্যার, আপনি কি কিছু বুঝেন না?
-তুমি কি বলতে চাচ্ছ?
এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলনা সুমাইয়া, ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। এইখানে যেই নাটক মঞ্চায়িত হচ্ছে, ভাগ্যিস সেটা দেখার জন্যে তারা দুজন আর উপরওয়ালা ছাড়া কেউ উপস্থিত নেই। আসমা ঘুমুচ্ছিল। আর সুইটি তখনও
বাসায় ফেরেনি। রশিদ সাহেব শক্ত কাঠ হয়ে বসে আছেন। কিছুই বলছেননা। তবে এই দৃশ্য বেশীক্ষণ সহ্য করা সম্ভব হবেনা। তাঁর ইচ্ছা করছে খুব শক্ত করে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে এত্তখানি ভালবাসা দিতে, যা সারাজীবনেও সে ভুলতে পারবেনা।
এই মেয়ের কান্না তিনি সহ্য করতে পারছেননা আর। ওই চোখদুটোতো কাঁদার জন্যে তৈরি হয়নি। রশিদ সাহেব নিজের উপর সামাল হারাতে যাচ্ছেন। সমগ্র দুনিয়া জাহান্নামে যাক, তিনি তাঁর ভালবাসা হারানোর মত শক্তি রাখেননা।
সমাজ,পরিবার কোন বাঁধার ধার ধারার মত অবস্থায় তিনি নেই এখন আর। সুমাইয়া রশিদ সাহেবের একটা হাত খামচে ধরল, খুব শক্তি দিয়ে, ওর যতটুক শক্তি ছিল, যেন স্যারকে হারিয়ে যেতে দিবেনা।
-স্যার, আমি আপনাকে ভালবাসি।
এবার রশিদ সাহেব বললেন, ''আমি জানি সুমাইয়া।''
-স্যার, আপনি আমাকে নিয়ে যা খুশি করেন, যেভাবে খুশি রাখেন, আমি আপনার সাথে থাকব, আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবনা।
করুন ভাবে নিজের আব্দার জানালো মেয়েটা। তারপর রশিদ সাহেবকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, তাঁর বুকে মাথা ঘষতে লাগল। পাগল হয়ে গিয়েছে যেন ও। রশিদ সাহেব তখন মাতাল। সুমাইয়ার চুল থেকে একটা গন্ধ আসছে, সেই
গন্ধটা ভালবাসার। রশিদ সাহেবকে সম্পূর্ণ বেসামাল করে দিয়েছে সুমাইয়া। সম্পূর্ণ বেসামাল। রশিদ সাহেবে সাড়া দিতে গেলেন সেই ভালবাসার আহবানে। পাতলা সেই দেহটা যেটা এখন তাঁর বুকের উপর; সেটাকে বুকে আরও গভীরভাবে
আশ্রয় দিতে গেলেন। ঠিক তখন সতের বছরে গড়ে তোলা বিবেকটা শেষবারের মত দংশন করল। জেগে উঠলেন শিক্ষক রশিদ সাহেব, ঘোরের জগৎ থেকে একটু ছিটকে বেড়িয়ে এলেন। ঘরে অসুস্থ আসমা। দশম শ্রেণীতে পড়া মেয়ে সুইটি।
ওদের নিষ্পাপ চেহারা গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠলো তাঁর। এদের কি হবে? ওরাতো বিনা দোষে শাস্তি পেয়ে যাবে! কি করছেন তিনি এটা? এটাতো হতে পারেনা। বিবেকের দংশনে ভালবাসার মৃত্যু হল।
অনেকটা সময় পেড়িয়ে গিয়েছে। যা করার এখনই করতে হবে। মনের উপর পাথর চাপা দিলেন রশিদ সাহেব। সমস্ত শক্তি একত্র করে ঠেলে বুক থেকে সরিয়ে দিলেন মেয়েটাকে। তারপর সজোরে ওর গালে একটা চড় বসালেন।
-গেট দা হেল আউট অফ হিয়ার! রাইট নাও!!
চিৎকার করে উঠলেন রশিদ সাহেব।

কি কষ্ট! কি কষ্ট! কি অবর্ণনীয় কষ্ট! রশিদ সাহেবের সহ্যের সীমাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে কষ্টটা। এটা তিনি কি করলেন! নিজের হাতে জবাই করেছেন নিজের সুখকে। আর কোনদিন তিনি সুখী হতে পারবেননা। সুমাইয়াকে মারার পর, ও আর
একটা কথাও বলেনি। উঠে দাঁড়িয়ে ব্যাগটা কাধে নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গিয়েছে। ওই সময়টায় রশিদ সাহেব ওর চোখে শুধু ঘৃণা দেখেছেন। ঘৃণা আগুনের মত দাউ দাউ করে জ্বলছিল ওই চোখ দুটোতে। রশিদ সাহেব কাজের মেয়েটাকে ডাকলেন।
বললেন, সুমাইয়ার পিছে পিছে যেতে। বাসা পর্যন্ত যেন যায়। বাসায় ঢুকে গেলে চলে আসতে বললেন। সুমাইয়া পথে কোন উল্টাপাল্টা করতে পারে ভেবে তিনি এই কাজটা করলেন। রশিদ সাহেব শিশুদের মত কাঁদছেন।
কিভাবে হাত তুলতে পারলেন তিনি মেয়েটার উপর? কিন্তু এছাড়া যে উপায় ছিলনা! এই হাত তোলার কারণে সুমাইয়া তাঁকে ভয়াবহ ভাবে ঘৃণা করবে, যেই ঘৃণা ওকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করবে। রশিদ সাহেবের জন্যে ওর আর
একটুও খারাপ লাগবেনা। সুমাইয়া নতুন ভাবে কাউকে ভালবাসতে পারবে। এই একটা উপায়ই ছিল তাঁর হাতে। তিনি কি ভুল কিছু করলেন? কি হতো এই সমাজ পরিবার এসবের তোয়াক্কা না করে, স্বপ্নের পিছে ছুটে চললে? কি হারালেন
তিনি আজ? নিজেকে সামলাতে পারছেননা এখনো। চোখ দিয়ে ক্রমাগত পানি বের হয়ে আসছে। কত বড় ভুল করে ফেলেছেন তিনি! কিভাবে এই ভুল শোধরাবেন? তাঁর বুকের ভেতরটা চৌচির হয়ে যাচ্ছে। হায়রে ভালবাসা।
কি ভয়ানক হতে পারে এই ভালবাসা!
-বাবা!!
চমকে উঠে তাকালেন রশিদ সাহেব। দরজায় সুইটি দাঁড়িয়ে।
-বাবা, তুমি কাঁদছ!! কি হয়েছে বাবা?
-না রে মা, কাঁদছিনা, কাঁদব কেন বোকা মেয়ে। চোখে কি জানি পরেছে।
নিজেকে মুহূর্তের মধ্যে সামলে নিলেন রশিদ সাহেব। নাহ, রশিদ সাহেব ভুল করেননি। রশিদ সাহেব অনুভব করতে পারলেন, তিনি যা করেছেন, সেটার চেয়ে বেশী সঠিক কাজ আর কিছুই ছিলনা ওই মুহূর্তে। এটা আজ হোক কাল হোক
সুমাইয়া বুঝবেই। যখন বয়স বাড়বে তখন তাঁর এই জঘন্য আচরণটাকেই সেই অবুঝ মেয়েটা সম্মান জানাবে। বাচ্চা একটা মেয়ে অবুঝের মত কিছু চাইলেই তো আর তিনি তা করতে পারেন না। তিনি তো শিক্ষক! তাঁর তো অনেক
কিছু বুঝে চলতে হয়। তাঁর ছাত্রীর কিসে ভাল হবে এটাওতো তাঁকেই বুঝতে হবে! নাহ! রশিদ সাহেব ভুল করেননি। বুকের কষ্টটা কমে এসেছে তাঁর অনেকটা। নিজেকে ফিরে পেলেন আবার রশিদ স্যার। অনেকদিন যাবত
যেই পাথরটা বুকে চেপে ছিল, সেটা আজ যেন নেমে গিয়েছে। সুমাইয়া। সুমাইয়ার চিন্তা থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি।

সুমাইয়া কোন উল্টাপাল্টা করেনি সেদিন। আসলে কারও জন্যে কারও জীবন থেমে থাকেনা। প্রচণ্ড ঘৃণা নিয়ে সে বাসায় ফিরেছিল। সেই ঘৃণা ধীরেধীরে কমেছে। ইন্টার পরীক্ষা খুবই খারাপ হবে ভেবেছিল ও। কিন্তু না, রেসাল্ট বেশ
ভাল ছিল। স্যার ফোন দিয়ে রেসাল্ট জেনেছিলেন। ইদানিং স্যারের কথা খুব একটা মনে পরেনা। মাঝে মাঝে হঠাৎ মনে পরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাস্ত জীবন শুরু হয়ে গিয়েছে ওর। স্যারের প্রতি ঘৃণাটা একেবারেই নেই। ভালবাসাও নেই। শুধু বেশ খানিকটা শ্রদ্ধা রয়ে গিয়েছে।
সুমাইয়া এখন বুঝে, সেদিন স্যার কাজটা ভুল করেননি। আর স্যার এটা জানতেন যে একসময় সে সবই বুঝতে পারবে। ভালবাসা একধরনের মায়া, একথাটাও স্যার ঠিকই বলছিলেন। মায়ার কবলে পরে স্যার তাঁর বিবেক হারাননি। স্যার আসলেও অসাধারণ একটা মানুষ।
একবার দেখা করতেই হবে স্যারের সাথে, নিজের নির্বুদ্ধিতার জন্যে ক্ষমা চাবে সুমাইয়া। এছাড়া উপায় নেই। এবার বাড়ি গেলেই স্যারের বাসায় যাবে ও। স্যারের পা ধরে সালাম করবে। সকালে ক্লাস শুরুর আগে এসব সাতপাঁচ ভাবছিল সুমাইয়া।
-এই সুমাইয়া! কি ভাবছ?????
চমকে তুষারের দিকে তাকালো সুমাইয়া... এই কদিনে ভার্সিটিতে এই একটা ভাল বন্ধু জুটেছে ওর। সুমাইয়া একটা হাঁসি দিয়ে বলল, ''গুড মর্নিং! কিচ্ছু ভাবছিনা!''


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখকের নাম, হাসিন টম টম।(অতিথি লেখক হওয়ার ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে,নিজের নাম লিখতে ভুলে গিয়েছি)

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ভালো লাগলো।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ ভাইয়া

স্বপ্নখুঁজি এর ছবি

ভাল লেগেছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

garnet এর ছবি

অসাধারন। চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ ভাইয়া।

অতিথি লেখক এর ছবি

-এই সুমাইয়া! কি ভাবছ?????
চমকে তুষারের দিকে তাকালো সুমাইয়া... এই কদিনে ভার্সিটিতে এই একটা ভাল বন্ধু জুটেছে ওর। সুমাইয়া একটা হাঁসি দিয়ে বলল, ''গুড মর্নিং! কিচ্ছু ভাবছিনা!''

এটুকু বাদে বাকি অংশ চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ ভাই (টম টম) ওই অংশটুক মনের পাতা থেকে ডিলিট করে দিন। কৃতার্থ হব। হাসিন টম টম

অতিথি লেখক এর ছবি

এটাই ভালবাসার বিচিত্র রুপ।
‘‘তোমার এলোচুলের ভেজা পানি
জমাট বাধা এ বুকে
নিরবে অশ্রু বর্ষণ করে।’’

চমৎকার উপস্থাপন।

তুহিন সরকার

tuhin_preeti@yahoo.com

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ ভাইয়া (হাসিন টম টম)

আলোকিতা এর ছবি

যে স্যার পড়া লেখার জন্যে খাতা বের করতে ছাত্রীকে তাগিদ দিচ্ছেন সেই ছাত্রী ওই মুহূর্তে স্যারকে জিজ্ঞাস করল--আচ্ছা স্যার,ভালবাসা কাকে বলে??????.....আমার কাছে স্যার এবং ছাত্রী দুজনকেই বিরক্তকর লাগল কেন জানি।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার কলেজ জীবন বেশ নিরস ছিল বোঝা যাচ্ছে। বিরক্ত লাগলে মনে মনে ওদের
গালি দিন। দেঁতো হাসি

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

আপনার লেখার ভঙ্গিটা সুন্দর, স্বতঃস্ফূর্ত। কিন্তু প্লটটা কেমন খুব চেনা, অনেক গল্প পড়েছি এই ধরনের।
আরও লিখতে থাকুন প্রান খুলে।

অতিথি লেখক এর ছবি

প্লটের অভাবে প্রান আহুতাহু করে ভাই, একটা নতুন প্লট ধার দিবেন?? মন খারাপ বিনীত (টম টম)

সাইদ এর ছবি

লেখনী বেশ ভাল...কিন্তু গল্পটা পছন্দ হয় নাই...
আরও লিখেন
ভাল থাকবেন

অতিথি লেখক এর ছবি

শুভ কামনা এবং মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ (হাসিন টম টম)

ঢাকা-বাসী এর ছবি

লেখার ধরন বেশ সুন্দর, অস্বীকার করার কোন উপায় নেই ।
চোখ টিপি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ (হাসিন টম টম)

রাজীব মাহমুদ এর ছবি

চরিত্রগুলোর মনের ভেতরে খুব একটা উঁকি দেয়া গেলনা। বিবেকের দংশনটাকে আধুনিক মানুষের জটিলতার ভেতর দিয়ে নিয়ে গিয়ে আরেকটু খেলানো যেত; কেন জানি মনে হচ্ছে দংশনটা শিক্ষকের মন থেকে না, লেখকের কলম থেকে এসেছে। চরিত্রগুলো সৃষ্টি হয়ে যাবার পর নিজের মত চলতে চায়। চলতে দিন প্লীজ।

আইলসা এর ছবি

গল্পের ভাষাটা সুন্দর, কিন্তু কিছুটা অবাস্তব মনে হইলো আর ব্যাচের শেষে স্পেশালি লা্স্ট দিনে একটা মেয়ে একা স্যারে রুমে থেকে যাবে- এইটা মনে হয় সাধারনত হয়না। মেয়েরা সাধারনত গ্রুপে থাকে। যাক গিয়া গল্পটা ভালো লাগছে। আরো লিখেন...

অতিথি লেখক এর ছবি

এরকম সিচুএশন কোন কোন ক্ষেত্রে কিন্তু তৈরি হতে পারে ভাই, একদম ইম্পসিবল না। (আত্ম পক্ষ সমর্থন) তবে আপনার মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ(হাসিন টম টম)

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার মন্তব্য ভাল লাগলো... যাচাইটা বেশ ভাল করেছেন... এবং কথা সত্য খাইছে (হাসিন টম টম)

শাব্দিক এর ছবি

"ব্ল্যাক" মুভ্যিটার কথা মনে পড়ল।
লিখতে থাকুন, ভিন্ন ধরনের প্লট নিয়ে।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

অতিথি লেখক এর ছবি

মুভিটি দেখিনি(হাসিন টম টম)

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

এই নাম না দেওয়ার কাজটি আমি প্রায় করতাম

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

অতিথি লেখক এর ছবি

এই ভুল আর করা যাবেনা(হাসিন টম টম)

নীড় সন্ধানী এর ছবি

গল্পের প্লট খারাপ ছিল না। কিন্তু শেষদিকে গোছানো যায়নি। কিছু কিছু জায়গা একটু ছোট করে দেয়া যেতো। সবচেয়ে বড় কথা কয়েকবার রিভিউ করে লিখলে আরেকটু পরিণত হতে পারতো। কিছুটা অসম্পূর্নটা সত্ত্বেও গল্পটা শেষ পর্যন্ত না পড়ে উঠতে পারিনি। লিখতে থাকুন আরো। হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

কিছুটা অসম্পূর্নটা সত্ত্বেও গল্পটা শেষ পর্যন্ত না পড়ে উঠতে পারিনি।

সহমত। চালিয়ে যান। চলুক

- বিক্ষিপ্ত মাত্রা

অতিথি লেখক এর ছবি

পুরোটুকু পড়ার জন্যে ধন্যবাদ (হাসিন টম টম)

অতিথি লেখক এর ছবি

পুরোটুকু পড়ার জন্যে ধন্যবাদ (হাসিন টম টম)

আয়নামতি এর ছবি

অফ লাইনে গল্পটা পড়েছিলাম সেদিন। আপনি পুরো একটা গল্প লিখে ফেলেছেন, এটা কিন্তু চাট্টিখানি
কথা না বাপু! ঘোড়াডিম, আমি তো কোন বিষয়ই পাইনা লেখার জন্য। সব্বাই সব লিখেছে রেগে টং

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আয়নামতি হাসি আমি নতুন কোন প্লট পেলে আপনাকে ধার দিব ।।। খাইছে মিথ্যা কথা (হাসিনটমটম)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।