আমি ও সোনার কেল্লা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ০৩/১২/২০১২ - ৮:৫৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

sonar_kella

সোনার কেল্লার একটি পোস্টার।

"এটা ময়ুর,আমি ময়ুর দেখেছি।এটা উট,আমাদের বাড়িতে উট ছিল।এটা আমার বাড়ী,আমি দাঁড়িয়ে আছি আমার বাড়ীর সামনে।এটা যুদ্ধ হচ্ছে,আমি যুদ্ধ দেখেছি।আর এটা কেল্লা,সোনার কেল্লা।"

ভোররাত্রী।বাড়ীর সকলে গভীর ঘুমে মগ্ন।বাইরে শুধু কুকুরের গলার আওয়াজ।কিন্তু ছয় বছর বয়সী মুকুলের চোখে ঘুম নেই,নিজের মনে কি যেন এঁকে চলেছে সে।বাবা-মা তাঁকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় অস্থির,কি ব্যাড়াম হল ছেলের!মুকুল রাত জেগে জেগে ছবি আঁকে।সোনার কেল্লার ছবি।পাড়ায় রটে গেল,মুকুল জাতিস্মর।সে এমন এক কেল্লা দিব্য চোখে দেখেছে যার ভেতর রয়েছে অগুনতি মূল্যবান পাথর।পত্রিকায় মুকুলের ছবি ওঠে।বিখ্যাত প্যারাসাইকোলজিস্ট ডাক্তার হাজরা যিনি জন্মান্তর নিয়ে গবেষণা করছেন,কৌতুহলবশতঃ মুকুলকে সোনার কেল্লার কাছে নিয়ে যাবার জন্যে তাঁকে নিয়ে রওনা দেন রাজস্থানে।এদিকে পত্রিকায় সোনার কেল্লার খবর পেয়ে দুষ্টু লোক ভবানন্দ ও তার চ্যালা মুকুলের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে।ভুলবশতঃ মুকুল নামক একই পাড়ার আর এক ছেলেকে তাঁরা অপহরণ করে।এ ঘটনার পর মুকুলের অসহায় বাবা ফেলুদার শরনাপন্ন হন ছেলেকে বাঁচানোর জন্যে।এদিকে ট্রেনে মুকুল ও ডাক্তার হাজরার পিছু নিয়ে তাঁদের পেয়ে যায় দুষ্টুলোক।কেল্লা দেখতে গিয়ে ডঃ হাজরাকে পাহাড় থেকে ফেলে দিয়ে ভবানন্দ আসল হাজরা সেজে বসেন।শুরু হয় গোয়েন্দা ফেলুদার নতুন এক অভিযান।পথে লালমোহন গাঙ্গুলি ওরফে জটায়ু সঙ্গী হন তাদের।সোনার কেল্লা বলে সত্যি কি কোন কেল্লা আছে?থাকলে কোথায়?মুকুল কি সন্ধান পাবে তার?আসল ডাক্তার হাজরা কি সত্যিই মারা গেলেন?রাত্রিবেলা টর্চ নিয়ে মুকুলের ঘরে আলো ফেলে কে?দুষ্টু লোকেরা মুকুলকে কাছে পেয়ে কি ক্ষতি করবে তাঁর?ফেলুদা কি পারবেন মুকুলকে দুষ্টু লোকদের কাছ থেকে উদ্ধার করতে?এসব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে কালজয়ী,অবিস্মরণীয় এবং বাংলা সিনেমার সবচাইতে জনপ্রিয় চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে একটি "সোনার কেল্লা"-য়।১৯৭১ সালে সত্যজিৎ রায় প্রথম লিখেছেন সোনার কেল্লা।১৯৭৪ সালে এর চিত্ররূপ দেন তিনি।কাহিনী, চিত্রনাট্য এবংসঙ্গীত সংযোজনও তাঁরই করা।

সোনার কেল্লা প্রথম দেখেছি ভারতীয় হাই কমিশন মিলনায়তন,রাজশাহী-তে।আশির দশকে আমরা যখন কৈশোর অতিক্রম করছি, রাজশাহীর এই বিশেষ জায়গায় অসাধারন কিছু ভারতীয় সিনেমা দেখার সুযোগ হয়েছিলো রাজশাহীবাসীর।বাবার আঙুল ধরে দেখতে গিয়েছি সোনার কেল্লা,আমার তখন সাত,একমাত্র মুকুল ছাড়া আর কিচ্ছু ভাল লাগেনি,কিচ্ছু বুঝিওনি ছাই।কিন্তু মনের কোনায় কোথাও মুকুল রয়ে গিয়েছিল,মুকুলকে দুষ্টু লোকেরা কষ্ট দিচ্ছে,তাতে আমার কিশোরমনও দগ্ধ হয়েছিলো সেই সময়।

দ্বিতীয়বার সোনার কেল্লা দেখি দূরদর্শনে।বারো বছর বয়েসে,১৯৮৭ সাল।মূলত আমার সত্যজিৎ মুগ্ধতা,ফেলুদা-জটায়ু-তোপসে প্রেমের শুরু তখন থেকেই।আর সর্বোপরি সিনেমাকে ভালবেসেছি সোনার কেল্লার ফাঁদে পড়ে।গুনে গুনে অদ্যাবধি চৌদ্দবার দেখেছি এই সিনেমা।টিভিতে দেখেছি,ভিডিও ক্যাসেট প্লেয়ারে দেখেছি,দেখেছি সিডিতে আর সম্প্রতি টরেন্ট থেকে ডাউনলোড করে।১৯৭৪ সালে নির্মিত সিনেমা ১৯৮৭ সালে কিংবা এইতো সেদিন দেখেও একবারের জন্যেও আমার একে পুরণো মনে হয়নি।অনেকটা টাটকা বিস্কিট কামড় দিলে যেমন মচমচে একটা স্বাদ পাওয়া যায়,সোনার কেল্লা প্রত্যেকবার দেখলে আমার এমন অনুভূতি হয়।আমরা জানি থ্রিলার সিনেমায় সাস্পেন্স এবং থ্রিল কন্টেন্টকে সিনেমার পর্দায় উপস্থাপন করা সহজ কাজ নয়,চিত্রনাট্যের একটু এদিক ওদিক হলে,কাহিনী ঝুলে গেলে সিনেমার হাল বেহাল।কিন্তু সোনার কেল্লায় আমরা পাই বুনোট চিত্রনাট্য,টানটান গতি,নিপুন দৃশ্যায়ন,নিখুঁত সংলাপ আর স্মরণীয় সংগীত সংযোজন।

বাংলা সিনেমায় চোখ বন্ধ করলেও সফল গোয়েন্দা চলচ্চিত্রের নাম আমরা মনেই করতে পারিনা।সোনার কেল্লাই হয়তো একমাত্র ব্যাতিক্রম।সোনার কেল্লা উপন্যাস হিসেবে বাজারে আসে ১৯৭১ সালে।চমৎকার উপন্যাস,কিন্তু ১৯৭৪ সালে সিনেমা নির্মানের পূর্বে এরই মাঝে প্রকাশিত হয়ে গেছে বাক্স রহস্য,বাদশাহী আংটি,গ্যাংটকে গন্ডগোল,কৈলাসে কেলেঙ্কারি ও রয়েল বেঙ্গল রহস্য।তাহলে বাকিগুলো রেখে সত্যজিৎ কেন এটাকে ভিত্তি করেই সিনেমা বানাবেন বলে ঠিক করলেন,তার একটি কারণ হতে পারে এই উপন্যাসের সিনেমাটিক ভ্যালু।আমরা এতে দৃশ্যের পর দৃশ্যে,শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে নাটকীয়তা দেখি এবং যে রোমাঞ্চের স্বাদ পাই,তা বোধহয় সত্যজিৎ আগে থেকেই অনুমান করতে পেরেছিলেন।আর এক্ষেত্রে উনি দুজন অসামান্য অভিনেতাকে একদম পিচ পারফেক্ট কাস্ট করেছিলেন।ফেলুদা চরিত্রে সৌমিত্র এবং জটায়ুর চরিত্রে সন্তোষ দত্ত।আর সে কি জমিয়েই না অভিনয় করেছেন দুজন!সৌমিত্র মোটামুটি অমর হয়ে গেছেন ফেলুদা হিসেবে আমাদের অস্তিত্বের সাথে,আর জটায়ু চরিত্রে সন্তোষ ছাড়া আর কাউকে চিন্তাই করা যায়নি,পরের সব জটায়ু মোটামুটি ম্লান হয়ে গেছেন তাঁর সরল অভিব্যাক্তি সম্পন্ন অসামান্য অভিনয়ের কাছে।

সোনার কেল্লার অনেকগুলো দৃশ্য মনের কোণে গেঁথে আছে আমার।মুকুল নামেই পাড়ার আরেকজন কিশোরকে তুলে আনার দৃশ্যটির কথাই ধরা যাক।পুরো সিকুয়েন্স টায় যারা তাকে অপহরন করতে গেল,শুধু তাদের পা দেখানো হল,অপহৃত হবার পর মুকুলের বাবা যখন ফেলুদার কাছে এসে ঘটনার বিবরন দিচ্ছেন তাতে কোথায় মেলোড্রামা নেই কিন্তু দর্শকশ্রোতা হিশেবে আমাদের কিন্তু ঠিকই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে,অজানা বিপদের কথা ভেবে ভয় হয় মুকুলের জন্য।গোটা সিনেমায় এমন সাসপেন্সপূর্ণ এলিমেন্ট আরও পাওয়া যায়।আসল ডাক্তার হাজরাকে পাহাড়ের ওপর থেকে ফেলে দেয়া,মুকুলকে হিপনোসিসের মাধ্যমে করে তার কাছ থেকে তথ্য উদ্ধারের ভয়ংকর প্রচেষ্টা,রাত্রিতে ফেলুদার আগুনের পাশে বসা চ্যালানন্দকে হাতের আংটি দেখে চিনে ফেলা,ফেলুদার হোটেলের খাটে ভয়ংকর বিছে ছড়িয়ে দেয়া- এইসব দৃশ্যের শ্বাসরুদ্ধকর নাটকীয়তা ও বিশ্বস্ত দৃশ্যায়ন অভুতপূর্ব। হাস্যরস গুলি মোটেই ক্যারিক্যাচারধর্মী নয় বরং ড্রাই হিউমারে পরিপূর্ণ। ফেলুদার সাথে জটায়ুর যে কথোপকথন তার ভেতরে এত সূক্ষ রসের ছাপ আছে যা মনে দাগ কেটে যায় চীরস্থায়ীভাবে,এত নিখুঁত পরিমিত সংলাপ,আহা!আমার কেন যেন বেশী ভাল লাগে এই সিনেমার ভেতর যে অন্তর্নিহিত অ্যাডভেঞ্চার আছে সেটি।মুকুলকে ডাক্তার হাজরার সোনার কেল্লা দেখতে নিয়ে যাওয়া,বারবার ভুল কেল্লা পরিদর্শন,ট্রেন ভ্রমনের সময় নকল হাজরাদের মুকুল অপহরন,আসল সোনার কেল্লার সন্ধান লাভের পর তার কাছে পৌঁছুবার তাগিদে ফেলুদাদের উটের পিঠে সওয়ারি-এতসব রোমাঞ্চ কিশোর মনকে উৎসুক করার জন্য যথেষ্ট।

সোনার কেল্লার লিগেসি হল এই যে আজ পর্যন্ত বাংলা ভাষায় নির্মিত আর কোনও গোয়েন্দা চলচ্চিত্র সোনার কেল্লার ফেলুদাকে অতিক্রম করতে পারেনি।এমনকি সত্যজিতেরই নির্মিত জয় বাবা ফেলুনাথের ফেলুদাও সোনার কেল্লার কাছে মলিন।আর কোনও সফল বাংলা গোয়েন্দা চলচ্চিত্র আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত অধরাই থেকে গেল।আর কোন লালমোহন গাঙ্গুলি "হাইলি সাসপিশাস"বলে আমাদের মৃদু ভয় দেখানোর চেষ্টাটিও করলেননা।

লালমোহনবাবুর সাথে ফেলুদার চরম উইটি সংলাপ গুলো ছাড়াও আর যে দুটি সংলাপ বিশেষভাবে মনকে নাড়া দেয় তা হল,সিধু জ্যাঠার অনুকরণীয় ভঙ্গীতে ফেলুদাকে বলা,শুধু মনের জানাগুলো খুলে দিয়ে বসে আছি, যাতে আলো আর বাতাস মনটাকে তাজা রাখে। আর শেষ মুহূর্তে সম্বিত ফিরে পেয়ে মুকুলের আর্তি,আমি বাড়ী যাবো, কলকাতায়।সংলাপগুলি যেন মনের মুকুড়ে গেঁথে আছে,চাইলেও ভুলতে পারিনা।

সোনার কেল্লা শুধুই সিনেমা নয়,এ এক অভিজ্ঞতা।

vcd_sonar_kella
সোনার কেল্লার আরেকটি পোস্টার

42-18533336

সোনার কেল্লার শুটিংরত সত্যজিত

42-18533338

অভিনেতাদের দৃশ্য বুঝিয়ে দিচ্ছেন সত্যজিত

GL09100827

সোনার কেল্লার শুটিং এর আরেকটি দৃশ্য

(ছবিগুলি নেট থেকে সংগৃহিত)

-মনি শামিম


মন্তব্য

সুজন চৌধুরী এর ছবি

শেষ ফটোটা সোনার কেল্লার না, অপরাজিত-এর কাশিতে শুটিং-এর দৃশ‌্য।

মনি শামিম এর ছবি

ছবিটি দেয়ার পর থেকেই একটু সন্দেহ হচ্ছিল।ভেবেছিলাম জয় বাবা ফেলুনাথ বোধহয়। কিন্তু আপনি ভুলটা ধরিয়ে দেয়ায় এখন মনে হচ্ছে,তাইতো।এতো অপরাজিত,এছবির সত্যজিত আর অন্য ছবিগুলিতে তিনি,তফাৎ বিস্তর।ধন্যবাদ ভুলটি ধরিয়ে দেয়ার জন্য।আর দুঃখিত অসাবধানতার জন্য।

-মনি শামিম

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

একটা সিনেমা আছে - 'হীরক রাজার দেশে'। এই সিনেমাটা যে কতোবার দেখেছি গুনে বলতে পারবো না। বেঁচে থাকলে আরো কতোবার যে দেখবো সেটাও মনে হয় গুনে বলা যাবে না।

ভবানন্দের চ্যালার নাম মন্দার বোস না? সোনার কেল্লা'র সংলাপে যে 'পান' আছে সেটা বুঝতে না পারলে সিনেমার চার আনা মজাই মাটি। ইংরেজী সাবটাইটেল পড়লে বোঝা যায় যে 'পান'গুলো অনুবাদ করা যায়নি।

ঠিক ত্রিশ বছর আগে সোনার কেল্লা বইটা পড়েছি। ঠিক বাইশ বছর আগে প্রথম বার সোনার কেল্লা সিনেমাটি দেখেছি। আমার ঠিক ত্রিশ বছর পর আমাদের পুত্র সোনার কেল্লা বইটি পড়েছে। আমার ঠিক বাইশ বছর পর আমাদের পুত্র প্রথম বার সোনার কেল্লা সিনেমাটি দেখেছে। ত্রিশ বছর আগে বইটি পড়ার বা বাইশ বছর আগে সিনেমাটি দেখার অভিজ্ঞতা-রোমাঞ্চকর অনুভূতি-ভালো লাগা সবই আমার কাছে এখনো স্পষ্ট। সেই রোমাঞ্চ-ভালো লাগার হুবহু অনুরণন দেখেছি আমাদের পুত্রের মাঝেও। ঢ্যাঙা এইখানে বাকিদের মাথা ছাড়িয়ে উপরে উঠে যায়। 'কালজয়ী স্রষ্টা' শব্দবন্ধটার মানে খুঁজতে আমাদের আর অভিধান হাতড়াতে হয় না।।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মনি শামিম এর ছবি

মন্দার বোস কি ব্যাটার ছদ্মনাম ছিল?ঠিক মনে পড়ছেনা।

'কালজয়ী স্রষ্টা' শব্দবন্ধটার মানে খুঁজতে আমাদের আর অভিধান হাতড়াতে হয় না।

চলুক,দারুণ লিখেছেন দাদা,মন ভরে গেল,সত্যি।

-মনি শামিম।

পুতুল এর ছবি

খুব বেশি ছবি দেখেনি। খানা-খন্দক-খাল-বিল পেড়িয়ে গৌরীপুর বাজারের অবস্থিত একমাত্র দূরদর্শনে হিরাক রাজার দেশে দেখেছিলাম। সেটাই এখনো মনে আছে। হিরক রাজারদেশে দেখেই মনে হয়েছিল; বাংলা ভাষায় নির্মিত শ্রেষ্ঠ ছবি। সোনার কেল্লা এখনো দেখিনি। দেখতে হবে।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

মনি শামিম এর ছবি

সোনার কেল্লা দেখে ফেলুন সপরিবারে।গ্যারান্টি দিচ্ছি,হতাশ হবেননা।

-মনি শামিম

নিলয় নন্দী এর ছবি

শেষ ছবিটা সোনার কেল্লার নয় !
লেখাটা চমৎকার লাগল। চলুক

এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল, সত্যজিত রায় 'হু ডান ইট' ঘরানার মুভি পছন্দ করতেন না।
গোয়েন্দা উপন্যাসে অপরাধীর পরিচয় শেষ পর্যন্ত লুকিয়ে রাখাটাই নিয়ম।
কিন্তু সিনেমায় তিনি আগেই অপরাধীকে দেখিয়ে দিচ্ছেন।

মনি শামিম এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- ঠিক।সুজন চৌধুরী ধরিয়ে দিলেন।ওটি অপরাজিত-র শুটিং চলাকালীন সময়ে তোলা।অসতর্কতার কারণেই এমনটি হয়েছে।

সত্যজিত রায় 'হু ডান ইট' ঘরানার মুভি পছন্দ করতেন না।সত্যজিত রায় 'হু ডান ইট' ঘরানার মুভি পছন্দ করতেন না।

জানা ছিলনাতো।দারুণ একটি তথ্য দিলেন। চলুক

-মনি শামিম

কৌস্তুভ এর ছবি

জয় বাবা ফেলুনাথ-এ বইয়ের গল্পের সঙ্গে সিনেমার গল্পের অনেকটাই তফাত, সোনার কেল্লায় ততটা নয়। তবে পোস্টটা দেখে মনে পড়ে গেল, আমার রাজস্থান যাওয়া হয়নিকো মন খারাপ

মনি শামিম এর ছবি

আমারও রাজস্থান যেতে ইচ্ছে করে।সোনার কেল্লাটি আমার না দেখলেই নয়!সত্যজিত কি যে এক নেশা ধরিয়ে দিয়েছেন,মুক্তি পাইনি আজও।২০১৩-তে রাজস্থান বেড়াতে যাবার আশা রাখি।সঙ্গী হবেন?

-মনি শামিম

মন মাঝি এর ছবি

অঃটঃ আন্দামান গেছেন নাকি? মরুভূমি অনেক ঘুরছি, এখন আমার নতুন খায়েশ হচ্ছে একটা সী-ক্রুজ। অনেক খুঁজে-পেতে কাছে-পিঠের মধ্যে কোলকাতা টু পোর্ট ব্লেয়ার ৩ দিনের (ওয়ানওয়ে, আপডাউনে মনে হয় ৬ দিন) একটা ট্রিপ পাইছি। আপাতত বেশ রোমান্টিক মনে হচ্ছে। কিন্তু এসম্পর্কে ট্যুর ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য ছাড়া আসল ট্যুরিস্টদের অভিজ্ঞতার বিবরণ বেশ দূর্লভ মনে হয়। আপনি কিছু জানেন?

****************************************

মনি শামিম এর ছবি

কিচ্ছু জানি না।দুঃখিত মন খারাপ অনু তারেকের সাথে যোগাযোগ করে দেখুন না?

-মনি শামিম

Anandamayee এর ছবি

জবর লিখেছিস! কবে তুই শেষ পর্যন্ত নিজের (আমাদের সকলের) এই প্যাশনটা লেখায় নিয়ে আসবি, তাই ভাবছিলাম অবচেতন ভাবে!! হাসি আরো আরো চলচ্চিত্র-অভিজ্ঞতা রসে সচলায়তন সচল ও সরস হয়ে উঠুক!

মনি শামিম এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- শুরু তো হল,এবার চলুক।

-মনি শামিম

স্যাম এর ছবি

'সোনার কেল্লা' টাইপোগ্রাফি টা কি সত্যজিত রায় এর?

মনি শামিম এর ছবি

সত্যজিতের তো হবার কথা,নয়কি?আমি নিশ্চিত নই।

-মনি শামিম

তমসা  এর ছবি

টাইপোগ্রাফী - টা সত্যজিতেরই।সানন্দায় অনেক আগে উনার টাইপোগ্রাফি নিয়ে এক্টা ফিচার পড়েছিলাম।ওখানে সোনার কেল্লা, দেবী, চিড়িয়াখানা, মহানগর এগুলোর আলোচনায় ছিল, উনার টাইপোগ্রাফি গুলো সিনেমার পুরো গল্পটাকে প্রকাশ করে। যেমন, সোনার কেল্লার শিশুতোষ গোটা গোটা জোড়হীন অক্ষর শিশু মুকুলের অতীত স্মৃতির প্রতিচ্ছবি যেখানে কেল্লার অবয়ব আছে কিন্তু কেল্লার সাথে সম্পর্কযুক্ত তার অতীত জীবন পুরোপুরি পরিষ্কার নয় তার কাছে। তেমনিভাবে মন্দিরের আদলে লেখা দেবী, 'মহানগর'-এর জ্যামিতিক অক্ষর গুলোর ভেতরে যুগপৎভাবে কোলকাতা শহরের সড়কম্যাপ আর গোলকধাঁধা, চিড়িয়াখানার পোস্টারে লেখা 'চিড়িয়াখানাদেখুন!" -এ 'খুন' শব্দটা রক্তলাল অক্ষরে প্রকাশ - সবকিছুই শুধুমাত্র নামের ডিজাইন নয়, বরং টাইপোগ্রাফির মধ্য দিয়ে ছবির গল্প তুলে ধরার পরিচয় বহণ করে চলে।

মনি শামিম এর ছবি

গুল্লি

দারুন সব তথ্য দিলেন।মন প্রান জুড়িয়ে গেল একদম।

-মনি শামিম

স্যাম এর ছবি

চলুক চলুক
ধন্যবাদ

মন মাঝি এর ছবি

সত্য হল, ছোটবেলায় 'সোনার কেল্লা' যখন প্রথম দেখি তখন কিন্তু এটা আমার ভাল লাগেনি! ফাস্ট কাট সমৃদ্ধ টান-টান ও দ্রুতগামী আম্রিকান থ্রিলার ও ডিটেক্টিভ ছবিতে অভ্যস্ত চোখে এই ছবি ভীষণ "স্লো" মনে হয়েছিল। এমনকি বইয়ের সোনার কেল্লার কাহিনি আমার কল্পনায় যে লয় পেয়েছিল, সিনেমাটা সেটাও স্পর্শ করতে পারেনি তখন। তাই প্রথমবারে এমনকি ছবির পুরোটাও দেখা হয়ে উঠেনি, অনেক আগেই বোর হয়ে গেছি। অনেক পরে পুরো ছবিটা দেখেছি। আসলে সোনার কেল্লার চেয়ে বরং 'জয় বাবা ফেলুনাথ' আমার অনেক ভাল লেগেছে। তখনও, এখনও মনে হয়।

****************************************

মনি শামিম এর ছবি

আপনার ভালো লাগার প্রতি প্রতি শ্রদ্ধা। হাসি

-মনি শামিম

তমসা  এর ছবি

চলুক চলুক

মনি শামিম এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

-মনি শামিম

অবনীল এর ছবি

মুকুল: বোতলে কি?
মন্দার বোসঃ আকের রস! আগের জন্মে খেয়েছিলে বুঝি?

এইসব দৃশ্যের শ্বাসরুদ্ধকর নাটকীয়তা ও বিশ্বস্ত দৃশ্যায়ন অভুতপূর্ব। হাস্যরস গুলি মোটেই ক্যারিক্যাচারধর্মী নয় বরং ড্রাই হিউমারে পরিপূর্ণ। ফেলুদার সাথে জটায়ুর যে কথোপকথন তার ভেতরে এত সূক্ষ রসের ছাপ আছে যা মনে দাগ কেটে যায় চীরস্থায়ীভাবে,এত নিখুঁত পরিমিত সংলাপ,আহা!আমার কেন যেন বেশী ভাল লাগে এই সিনেমার ভেতর যে অন্তর্নিহিত অ্যাডভেঞ্চার আছে সেটি।

সম্পূর্ণ একমত। বাংলা চলচিত্রে হিচককইয় সাস্পেন্স, নেশা জাগানো আডভেঞ্চার আর সূক্ষ্য রসবোধের এক অসাধারন মিশ্রন দেখতে পাই সত্যজিতের ছবিতে। তাইতো আমরা বারবার ফিরে যাই তার ছবি।

ঢ্যাঙা এইখানে বাকিদের মাথা ছাড়িয়ে উপরে উঠে যায়। 'কালজয়ী স্রষ্টা' শব্দবন্ধটার মানে খুঁজতে আমাদের আর অভিধান হাতড়াতে হয় না।।

মন্তব্যে উত্তম জাঝা! একমত!

এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল, সত্যজিত রায় 'হু ডান ইট' ঘরানার মুভি পছন্দ করতেন না।

গল্পের কাহিনী সিকোয়েন্স ফলো করলে অবশ্য আরেকরকম মজা পেতাম। আমার কাছে তাই তাঁর বইগুলো বেশি প্রিয়।

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

মনি শামিম এর ছবি

মুকুল: বোতলে কি?
মন্দার বোসঃ আকের রস! আগের জন্মে খেয়েছিলে বুঝি?

উত্তম জাঝা!

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

সত্যজিৎ দ্য গ্রেট।
আপনাকে ধন্যবাদ। চলুক

মনি শামিম এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

-মনি শামিম

সুমন এর ছবি

ফেলুদা প্রথম পড়া শুরু করি যখন ক্লাস সিক্স বা সেভেন-এ তখন। এখনো আমি প্রতিটা গল্প সেই প্রথমবারের মত অদ্ভুত ভাললাগা নিয়ে পড়ি। মনে আছে একবার দুর্গাপূজার সময় প্রথম টিভিতে (আলফা টিভি বা ইটিভি) একটানা সাতদিন সত্যজিতের ছবি দেখাচ্ছিল, তার মধ্যে সোনার কেল্লাও ছিল। গল্প আমার আগেই পড়া ছিল তাই অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম সোনার কেল্লা দেখার। কিন্তু কপাল এতই খারাপ যে ঐ সিনেমা দেখানোর সময় টিভির সাউন্ড নষ্ট হয়ে গেছিল মন খারাপ । পরে ইউনিভার্সিটিতে উঠে সোনার কেল্লা দেখি এবং যথারীতি এক বৈঠকে শেষ।

এই ছবির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হল এর সাথে বইয়ের কাহিনীর মোটামুটি পুরোটাই মিলে যায়। মূল কাহিনী পরিবর্তন করলে আমি দেখে খুব হতাশ হই। তাই সন্দ্বীপ রায় যে ফেলুদাগুলো সেলুলয়েডের পর্দায় এনেছেন সেগুলো আমার কাছে অতটা ভাল লাগেনি। অবশ্য এখানে পরিচালকের কাজ অবশ্যই একটি বিষয় এবং সময়ের পরিবর্তনের কারণে হয়ত মূল কাহিনী পুরোপুরি তুলে ধরা সম্ভব নয়।
-সুমন

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মতামতের জন্য।

-মনি শামিম

তারেক অণু এর ছবি

ভাল লাগল, এমন আরও লিখে যান।

তবে জাতিস্মরের ধারণাটা ১০০% ভুয়া বলেই হয়ত বইটা আমার খুব প্রিয় ছিল না কখনোই।

এই সিনেমার শ্যুটিংয়ের সময় ট্রেনের কালো ধোঁয়া এবং দাড়িয়ে যাওয়া নিয়ে কী সব মজার ঘটনা যেন ঘটেছিল বলে পড়েছিলাম।

মনি শামিম এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- জাতিস্মরের ধারণাটিকে কিন্তু এখানে পোক্ত করা হয়নি,বরং এটা যে মুকুলের মনের একটা ভ্রান্তি তাই দেখানো হয়েছে।সোনার কেল্লায় সোনা কস্মিনকালেও ছিলনা,মুকুলের মনের রোগটাকে সারানোর জন্যই এই অভিযানের সূচনা।"একেই বলে শুটিং" বইতে এই সিনেমা নির্মানের সময়ে কিছু মজার ঘটনার কথা উল্লেখ আছে।হাতের কাছে বইটি থাকলে সেখান থেকে কিছু উদ্ধৃতি দেয়া যেত।

-মনি শামিম

নিলয় নন্দী এর ছবি

বইটা হাতের কাছে নেই। তবে ব্যাপারটা ছিল এমন, যে ছবির সিকোয়েন্স অনুযায়ী ফেলুদা-তোপসে-জটায়ু মিলে একটা ট্রেন থামাতে চেষ্টা করবেন কিন্তু ট্রেনটা না থেমে চলে যাবে।
শুটিঙের সময় তিন মূর্তি হইচই করে ট্রেন থামানোর সিগন্যাল দিলেন। ট্রেন গেল থেমে। সবাই বলল, 'ট্রেন থামালে কেন?' চালক অবাক হয়ে বললেন, 'বাবুরা থামাতে বললেন যে !' তাই তো, চালককে কেউ কিছু বলেনি !
দীর্ঘ সময় নিয়ে ট্রেন পিছিয়ে নিয়ে আবার শুটিং শুরু হলো।

মনি শামিম এর ছবি

নিলয়, এইটা জানা ছিল না তো? এই ঘটনা "একেই বলে শুটিং" এ রয়েছে?

-মনি শামিম

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।