সাভার ট্র্যাজেডির পর

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৫/০৪/২০১৩ - ৬:১২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজ সকালে খুব অদ্ভুতভাবেই ঘুম ভেঙ্গেছিল, টেক্সটের শব্দে। ঘুম ঘুম চোখে দেখলাম এক ক্লাসমেট বাংলাদেশের খবরটা বিবিসিতে দেখে উৎকণ্ঠা জানিয়েছে, জানতে চেয়েছে দেশে আমার পরিবার নিরাপদে আছে কিনা! প্রথমেই যেটা মনে হয়েছিল, সেটা হল, শক্তিশালী কোন ভূমিকম্প ঢাকায় আঘাত হেনেছে। বিদ্যুৎ গতিতে অনলাইনে গিয়ে দেখলাম একটি গার্মেন্টস কারখানা ধ্বসে পড়েছে, হতাহত শতাধিক মানুষ। এরপর সারাদিন আসন্ন পরীক্ষার রিভিশনের ফাঁকে ফাঁকে চোখ যাচ্ছিল ইন্টারনেটে, অসহায়ের মত দেখেছি লাশের সংখ্যা বেড়ে চলেছে অনবরত। উদ্ধারকাজে সাধারণ মানুষের অসম্ভব সতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ, মেডিকেলের ছাত্র- ছাত্রীসহ সবার নিরলস পরিশ্রম, সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার ফাইটারদের কর্মতৎপরতা, চিরাচরিত রাজনৈতিক ব্লেম গেম, লাশ নিয়ে রামে- বামে- ভামে টানাটানি সব ঘটছে আগেই মত-ই চেনা ছকে!

আমার সহপাঠিনীকে প্রতুত্তরে যেটা বলতে পারি নি সেটা হল এরকম ঘটনা প্রায়-ই ঘটে বাংলাদেশে। এসব ঘটনায় মারা যান গার্মেন্টস কর্মীরা, আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারের এতে বিপদের কোন সম্ভাবনা নেই। যারা মারা যান তাদের একটা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় (কখনো সেটাও পাওয়া যায় না), যেটা হয়তো তাদের প্রত্যেকের একমাসে তৈরি করা পোশাকের রিটেইল প্রাইসের সমান হয় নয়। আদতে তারা মারা গেলে পরিণত হন সংখ্যায়, আমরা কয়েকদিন টক-শোতে ঝড় উঠতে দেখি, কয়েকদিন পর আরেকটা ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি।

ক্লাউড এ্যাটলাস দেখলাম কয়েকদিন আগে, একটা রিভিউ লেখার ইচ্ছা ছিল, সময়ের অভাবে হয়ে উঠেনি। আজ মনে হচ্ছে, এই সিনেমায় ভবিষ্যতে ফাস্ট ফুডের দোকানগুলোতে যেমন জেনেটিকালি ইঞ্জিনিয়ার্ড ক্লোন মানবীরা কাজ করত আমাদের দেশের বস্ত্রকন্যারা ঠিক সেরকম। তাদের কোন নাম নেই, শুধুই সংখ্যাতে পরিচয়, সময়মত এদেরকে ডিসপোজ করে নতুন চালান এনে কারখানা চালু রাখা হয়! আইন- কানুন, সংবিধান হাইকোর্ট এসব আমি তেমন বুঝি না, রাষ্ট্রপক্ষ ও সরকার কি করবেন সেটা আমাদের হাতে নেই, তবে এই মূহূর্তে মাথায় আসা আর ফেসবুকে দ্যাখা কয়েকটা আইডিয়া তুলে ধরতে চাই। সংক্ষিপ্ত এই পোস্টটি যদি এই বিষয়ক আলোচনা শুরু করতে পারে, সেটাই হবে এই পোস্টের সার্থকতা।

সাভার এলাকায় অসংখ্য শিল্পকারখানা রয়েছে। এর আশে- পাশে প্রচুর জনবসতি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বড় বড় মহাসড়ক রয়েছে। কিন্তু ওই এলাকায় তেমন কোন বড় হাসপাতাল নেই। আমার মতে এই এলাকায় একটি স্পেশালাইজ ট্রমা সেন্টার ও সুপরিসর জরুরী বিভাগসহ একটি হাসপাতাল স্থাপন করা খুব জরুরী।

শাহবাগ ও সারাদেশে প্রচুর মানুষ রক্ত দিয়েছেন। ভবিষ্যতে আমরা এই ধরণের জরুরী অবস্থার জন্য তৈরি থাকলে অবস্থাপনা ও সময় অপচয় অনেক কম হবে। ঢাকাসহ সারাদেশে রক্তের গ্রুপ ও জরুরী অবস্থায় যোগাযোগ করার নম্বরসহ একটি ডেটাবেজ গড়ে তোলা যেতে পারে। এলাকাভিত্তিক এই ডাটাবেজ সহজেই প্রয়োজনীয় রক্তের প্রাপতা নিশ্চিত করবে। একই সাথে জরুরী অবস্থায় রক্তের স্ক্রিনিং যাতে ঠিক- ঠাক হয় সেটা নিশ্চিত করার পূর্বপ্রস্তুতি থাকা খুব জরুরী। (যেমনটা সচল অনার্য সঙ্গীত ফেসবুকের স্টাটাসে বলেছিলেন।)

এছাড়াও করণীয়; বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করা, শ্রমিকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া, আলাদা স্পেশালাইজ উদ্ধার দল গঠন করা, ফাস্ট রেসপন্স টিম গঠন করা, পূর্বতন ঘটনাগুলোর সঠিক তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। সেসব আমিও জানি, আপনারাও জানেন, বিশেষজ্ঞরাও জানেন, সরকার-ও জানেন। কিন্তু সেসব কেন হয় না সেসব আমরা জানি না, হয়তো আন্দাজ করতে পারি কিন্তু জেনেও না জানার ভান করি।

এসব কি তাহলে চলতেই থাকবে? এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই। সরকারের কাছে আছে কিনা জানি না। এভাবে চলতে থাকলে কি ঘটবে তাও জানি না। তবে এই প্রসঙ্গে কয়েকদিন আগে দ্যাখা আরেকটা সিনেমার কথা মনে পড়ে গেল।

ভি ফর ভ্যানডেটা।

সারার


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

সাভার দুর্ঘটনায় আমরা শোকাহত!
মানবতার ডাকে এগিয়ে আসুন।
নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।

তুহিন সরকার।

অতিথি লেখক এর ছবি

মন খারাপ

সুবোধ অবোধ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টাগুলো বাঁধবে কে?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।