প্রতিক্রিয়াঃ সৈয়দ আবুল মকসুদের বাঙালি নারীর মুখ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ২৬/০৬/২০১৩ - ৭:২৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সৈয়দ আবুল মকসুদ, স্বনামধন্য গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক। ইদানিং প্রথম আলোয় নিয়মিত কলাম লেখেন, তার স্যাটায়ার ধর্মী লেখাগুলো সত্যিই সুপাঠ্য। কিন্তু আজকের (২৬-০৬-২০১৩) প্রথম আলোয় এক লেখায় তিনি কতিপয় মহিলা সাংসদের কুরুচিপূর্ণ ভাষা ব্যাবহার নিয়ে লিখতে গিয়ে আবহমান বাংলার নারীর কোমল মাতৃরূপের সাথে তুলনা করে বাংলার মায়েদের চূড়ান্ত অপমান করেছেন। অশোভনতা পুরুষ বা নারীর একক কোনো ব্যাপার নয়, কিন্তু তিনি এর লৈঙ্গিক রূপ দিয়ে বর্ণবাদী রূপ দিয়ে ফেলেছেন। লেখার বিষয়টা স্যাটায়ারের জন্য যথাপুযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও আবেগের বশে (!) তিনি এক খানা বিষ্ঠাপূর্ণ রচনা নামিয়েছেন।

তিনি লিখেছেন “দ্বারকানাথ ঠাকুরের নাতি ও দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট ছেলের লেখা যে গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত তাতে বাংলা মায়ের মুখের বাণী—বাংলা ভাষা সম্পর্কে বলা হয়েছে: ওমা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো। আমাদের জনপ্রতিনিধিদের মুখে বাংলা ভাষা এখন এক চরিত্র ধারণ করেছে, যা আর আদৌ সুধার মতো নয়, স্যুয়ারেজের ড্রেনের নোংরার মতো।“

সংসদে দু-একজন নারীর অশোভন, অশ্লীল শব্দের ব্যবহার দেখে সমগ্র বাংলার মায়েদের বাচনিক ভদ্রতা সম্পর্কে ধারণা করা অগবেষকসুলভ ও ধৃষ্টতাপূর্ণ। এমনকি আমি ১০০% গ্যারান্টি সহ বলতে পারি, ওইসব আবর্জনাময় বক্তব্য দানকারিণীদের সন্তানদের কাছেও তাদের মুখের বাণীও সুধার মতো শোনায়। তাদের সন্তানদের কাছেও তারাও মমতাময়ী মা। সংসদের ওইসব আবর্জনা বর্ষণকারিণীগণ চূড়ান্ত অভদ্র শ্রেণীর সাংসদ হতে পারে, কিন্তু তাদের সন্তানদের কাছে তারাও মমতাময়ী মা। ওই অভদ্র মহিলাগণও যখন সংসদ অধিবেশন শেষ করে বাড়ী ফেরে, তাদের সন্তানেরাও এসে কোলে মুখ গুজে আবদার করে।
বাংলার মায়েদের নিয়ে ঢালাও মন্তব্য করে জনাব সৈয়দ আবুল মকসুদ চূড়ান্ত ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছেন।

“গত ১৫ জুন পর্যন্ত আমি বাঙালি নারীকে মনে করেছি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নারী। মনে করতাম ভারতবর্ষীয় নারী ডাইনির প্রতিমূর্তি নয়। বাঙালি নারী স্নেহময়ী ও কল্যাণী, যাকে ‘মা বলিতে প্রাণ করে আনচান’।“
কতিপয় মহিলা সাংসদের অশোভন, অশ্লীল শব্দ বর্ষণের ঘটনায় জনাব সৈয়দ আবুল মকসুদ সাহেব নাকি বাঙালি নারীর স্নেহময়ী ও কল্যাণী রূপ আর খুঁজে পাচ্ছেন না!

তিনি লিখেছেন,
“ জীবনে দু-একবার গ্রাম্য নারীর কাইজা ও চুলাচুলিও দেখেছি। তারা অশিক্ষিত ইতরশ্রেণীর মানুষ। সভ্যতার আলো ওদের পর্যন্ত পৌঁছায়নি। “

সংসদ বাংলা অভিধান অনুসারে ইতর শব্দের অর্থ করা হয়েছে নিম্নরুপ “ইতর (p. 114) [ itara ] বিণ. 1 (মূল অর্থে) অন্য, অপর, ভিন্ন (বামেতর); 2 নীচ, অধম (ইতর লোক); 3 নিম্নশ্রেণীভুক্ত (ইতর প্রাণী)। [সং. √ ই + তর]। বি. ̃ তা। ̃ বিশেষ বি. কিছুমাত্র পার্থক্য, সামান্য তফাত (দুজনের রুচির তেমন ইতরবিশেষ নেই)। ইতর ভাষা বি. অপভাষা, অশিষ্ট ভাষা। ইতরামি, ইতরাম বি. নীচ বা অশিষ্ট আচরণ। ইতরেতর বিণ. পরস্পর, অন্যোন্য।“

দু কলম পড়াশোনা জেনে তিনি কিভাবে ভেবে বসে আছেন, গ্রাম্য নারীরা "অশিক্ষিত ইতরশ্রেণীর" মানুষ? কি নিকৃষ্ট শব্দচয়ন!

গ্রাম্য নারীরা অশিক্ষিত হতে পারে, তাই বলে তাদের ইতর অভিহিত করার ধৃষ্টতা দেখানো কি ধরনের উচ্চশ্রেণিভুক্তির পরিচয়? আমার মা অশিক্ষিত গ্রাম্য নারী ছিলেন, উনার অকাল প্রয়াণের পর পুরো গ্রামের মানুষের অঝোরে কান্না দেখে আমার কখনই মনে হয়নি উনি ইতরশ্রেণীর মানুষ ছিলেন।বরং উনি ছিলেন মহৎপ্রাণ, পরোপকারী। আমার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা, বাংলার আবহমান কালের স্নেহময়ী ও কল্যাণী নারী।

জনাব সৈয়দ আবুল মকসুদ, আপনার লেখা অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ হয়েছে, একজন বাংলা মায়ের সন্তান হিসেবে আমার পক্ষ হতে আপনার উদ্দেশ্যে একদলা থু!
বাংলার মায়েরা আপনাকে ক্ষমা করেও দিতে পারে, কারন আপনিও একজন বাংলা মায়ের সন্তান।

---"মদন"---


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

সৈয়দ সাহেবের মা বাঙালিনী ছিলেন না, উত্তর প্রদেশের উর্দুভাষিণী ছিলেন। এ কারণেই উনি বাঙালি নারী খুঁজতে টিভি খুলে সংসদ অধিবেশন দেখেন।

মতিউর রহমান সাহেব, নতুন কোনো ভাঁড় পালেন। মক্সুদের ভাঁড়ামি পুরোনো হয়ে গেছে।

স্যাম এর ছবি

হাততালি

চরম উদাস এর ছবি

মকসুদ এর লেখার লিঙ্কটা যোগ করে দিলাম

বাঙালি নারীর মুখ

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

দুদি'ন পরে আবার "নীতি ও আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক" লেখাটি "অনলাইন ভার্সন" থেকে প্রত্যাহার করা হবে না তো? চিন্তিত

রাহী এর ছবি

আবুলদের জ্বালায় তো আর বাঁচা গেল না! রেগে টং

জনাব আবুল সাহেব সভ্যতার আলো কি আপনার বেডল্যাম্প, যে আপ্নি জানেন উহার আলো কোন পর্যন্ত গিয়েছে?

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এসবও পত্রিকায় ছাপা হয় হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

চরম উদাস এর ছবি

এসবই পত্রিকায় ছাপা হয় হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

নানান এ কথা সে কথা-র মধ্য দিয়ে ঐ আলোকদানকারী প্রবন্ধে তিনি যেটা প্রকাশ করেছেন সেটা হল - "সংরক্ষিত নারী আসনের ক্ষতিকর দিক"। সেই কোন অতীতে একজন নারী সাংসদের সমালোচনা থাকার কারণে সেই যে ওনার প্রথম সম্পাকদীয়টি আত্মপ্রকাশ করাতে পারলেননা, সেই ব্যথা কি অত সহজে যাবার! তাও তো উনি বলেই এত দীর্ঘদিন সময় নিলেন এক্কেবারে ১৫ই জুন ২০১৩-র অকাট্য সাক্ষ্য প্রমাণ যোগাড় করে অবশেষে ২৬শে জুন ২০১৩-র পুণ্য প্রভাতে উজাড় করে দিলেন পবিত্র ঘৃণা! প্রতিবেশী দেশের নারীরা, যাদের মাতা-মাতামহীরা জন্ম দিয়েছিলেন নানান মহান পুরুষদের তাঁরা তো দলে দলে ডাইনী ছিলেন-ই এবার বাংলাদেশের মহিলা সাংসদরাও তাঁদের-ই মত বর্জ্য হলেন। আর এই সাংসদদের যারা সংসদে আসার ব্যবস্থা করে দ্যায় তাদের যে কি করা যায়! ও: ভাবলেই গা-হাত-পা নিশপিশ করে!

পুরুষ সদস্যরা গালাগালি করলে, তাদের ভাই-বেরাদর-অনুগামী পুরুষেরা শঠ হলে, মিথ্যা বললে, নৃশংস হলে তাদের হাতে শাসন-ভার থাকতে অসুবিধা হবে না। তা বলে মেয়েরা শাসন বৃত্তের কাছে থাকবে আর আকথা কুকথা বলবে? ছি:!

এই সব দাবী করা পুরুষদের-ও নিজের শরীরের রক্তে রসে পুষ্ট করে জন্ম দিতে হয়, দিয়ে যেতে হয় মেয়েদের-ই।

দেশে দেশে, যুগে যুগে এই ধরণের "গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক"-এর মত লোকেরাই জুড়ে থাকেন শিক্ষিত কোন-না-কোন-ভাবে শাসন ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত মানুষদের সিংহভাগ। নিজেও শ্রেণী-অবস্থান-এ এদের বৃত্তেই থাকি। আমার দেওয়া ধিক্কার কি কোন উপকার-এ লাগবে? কে জানে? তবু দিয়ে রাখলাম।

- একলহমা

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

তিনি লিখেছেন,
“ জীবনে দু-একবার গ্রাম্য নারীর কাইজা ও চুলাচুলিও দেখেছি। তারা অশিক্ষিত ইতরশ্রেণীর মানুষ। সভ্যতার আলো ওদের পর্যন্ত পৌঁছায়নি। “

বাহ্‌, এই না হলে বিদগ্ধ বুদ্ধিজীবী? প্রথম আলোর ওয়েব পেইজ গত ক’দিন ধরেই ঝামেলা দিচ্ছে। লিঙ্কটাতেও যেতে পারলাম না।

প্রথম আলো কি নিয়মিত বিরতিতে “ বাংলাদেশের নারী”দেরকে টার্গেট করার ব্রত নিয়েছে?

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

একমত।
এই আবুল যুগ শেষ হবে কবে ??? (কান্নার ইমো)

Asad এর ছবি

গান্ধীবাদী আন্দোলনের প্রবাদ পুরুষ সৈয়দ আবুল মকসুদ ।

তারেক অণু এর ছবি

জনাব মকসুদ, আপনি যতই ডিগ্রীওয়ালা শিক্ষিত হন, মানুষ হিসেবে যে ইতরশ্রেণীর এবং ভাঁড় হিসেবে নিম্নমানের তাতে কোনই সন্দেহ নাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

জনাব মাকসুদ নিজেকে খুব পণ্ডিত ব্যাক্তি মনে করেন তাই এইসব কমেন্ট করতে উনার রুচিতে বাধে না, ছোটলোক ভাঁড় একটা।।।।।।।।।।
ইসরাত

মাম্পী এর ছবি

এঁকেতো বেশ মার্জিত লোক বলেই জানতাম! এসব হচ্ছেটা কী? দেশের মেধাবী লোকগুলোর উপর কি জ্বীনের আছর পড়ল? ফরহাদ মজহার দিয়ে শুরু। এ লাইন প্রলম্বিত হতে হতে কোথায় গিয়ে ঠেকবে কে জানে! ভীষন হতাশ বোধ করছি।

মনি শামিম এর ছবি

স্বনামধন্য নয় ভাই, তিনি একজন ইতর শ্রেণীর গবেষক। একাধিকবার তিনি এর প্রমাণ দিয়েছেন। এই 'তারকা' কলামিস্টের মুখে থুতু আর পশ্চাতদেশে ঝাঁটা মারা দরকার সমানে! তবেই যদি তার অন্নদাতার খানিক হুঁশ হয়!

রিয়াজ এর ছবি

গান্ধী যুগে যুগে কত বিচিত্রকে কত বিচিত্রভাবেই না সফেদ পোষাক, সফেদ টুপি আর ভন্ডামি একাকার করতে শেখালো!!

ফাহিম হাসান এর ছবি

সৈয়দ আবুল মকসুদের চিন্তাভাবনা, লেখা পুরাই আবর্জনা।

নিরীহ মানুষ  এর ছবি

ত্রক কথায় ভন্ড বাবা মকসুদ

রাত-প্রহরী এর ছবি

লেখার আগে বেশী 'পান' হয়ে গিয়েছিলো কি জনাব বুদ্ধিজীবি?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।