বে-গুনী সমাচার !

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৮/০৭/২০১৩ - ১:৪৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কবি বলেছেনঃ
আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে,
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।

আমরা জাতি হিসেবে বড় অবিবেচক, কথায় বড় এমন মানুষ কে তোয়াজ করি, কাজে বড় হওয়াদের আমরা কদর দেই না। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে যারা বড় বড় কাজ করেছিল, তাদের অনেককেই আমরা ইতিহাসের পাতায় জায়গা দিয়ে জানে মেরে ফেলেছি। বকি কিছুকে জিন্দা লাশ বানিয়ে রেখেছি। অসীম সাহসী বোমারু মুক্তিযোদ্ধা দাতে গ্রেনেড কামড়ে ধরে যেই খাল সাঁতরে পার হয়ে শত্রুবাহিনীকে আক্রমন করেছিলো, এখন সেই খালের উপরের ব্রীজে রিকশা চালায় ঝাঁ ঝাঁ রোদের তলে ঘামতে ঘামতে। যারা স্বাধীনতার বড় স্বপ্নটা বাস্তবে পরিনত করেছিল, দুঃস্বপ্নের রাতে তাদের মেরে ফেলা হয়েছে এক ঝটকায়। আসল কাজের লোক বলতে গেলে তেমন নেই। এই দেশের জন্য যারাই বড় কাজের চিন্তা করেছেন, তাদের সঙ্গে সব সময় বাজে আচরনই করা হয়েছে।

৪২ বছর পর আমাদের দীর্ঘ দিনের অপবাদ এবার ঘুচিয়ে দিল মাননীয় আদালত। স্বাধীনতার স্বপক্ষের না পেয়ে বিপক্ষের সবচেয়ে বড় বাজে কাজ করা মানুষটার সমস্ত কাজের আলামত প্রমান পাবার পর তাকে রাষ্ট্রের খরচে বাকি জীবন আরাম করে বিছানায় শুয়ে শুয়ে পাকিস্তানী আঙ্গুর খাবার "আরামদন্ড" প্রদান করেছেন। একটা আস্ত দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা, একটা আস্ত জাতিকে তীব্র ঘৃণা নিয়ে নিষ্পেষন করার নীল নকশা করা। ইতিহাসের বৃহত্তম গনহত্যার আয়োজন করা, এগুলা ছোটমোট কাজ না, বিশাল গুর্দা লাগে এমন বড় কাজ করতে। মানব ইতিহাসে এত বড় হারামী খুব একটা বেশী নাই। আমরা দীনহীন জাতি। মেধা আমাদের এম্নেও খুব যে একটা বেশী এই বড়াই করার উপায় ছিলনা।

বিজ্ঞ আদালত আমাদের পুটু দিয়ে রড ভরে মাথা পর্যন্ত পাঠিয়ে আমাদের মাথা সোজা এবং উচু করে রাখার পারমানেন্ট ব্যবস্থা করেছেন। আমরা এখন বলতে পারব, কে বলে আমরা গুনীর কদর করি না? আমাদের সবচে ঘৃণার বস্তুটাকে আমরা নিজেদের ট্যাক্সের টাকায় ৯০ বছর সংরক্ষণ করার দায়িত্ব নিয়েছি। গুনী মানুষগুলা আলতু ফালতু ট্রিট্মেন্ট পেলেও, আমরা হাতের মুঠোয় দেশের সবচে' বড় "বে-গুনী" -টাকে পেয়েও তাকে এক্টুও অমর্যাদা করি নি। বেগুন পোড়া দিয়ে আমরা ৪২ বছরের অবিচারের, রক্তের, জীবন দানের ক্ষুধা মেটাতে পারতাম। আমরা তা করিনি। বেগুনটাকে আমরা ৯০ বছরের জন্য নিজেদের পুটুতে ভরে দিয়েছি। আমরা বিশ্বমানবতার অভূতপূর্ব নজীর স্থাপন করেছি। আমরা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি, একটা মানুষ (হোকনা সে আমার মা কে রেপ করে, আমার বাবাকে চোখ বেধে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলে, আমাকে পা ধরে দেয়ালে আছাড় মেরে ঘিলু বের করে ফেলার মতো) বড় কাজ করে নাইন্টি ক্রস করে ফেললে আমরা তার ক্রাইমটা আর কন্সিডার করিনা, স্কোরটা বিবেচনায় আনি।

আমাদের গৌরবের বিষয় কম, আমরা গৌরবের উসিলা খুজি, আমাদের ক্রিকেটাররা কালে ভদ্রে "সেঞ্চুরী" করে। যখন করে, পুরা দেশ আনন্দে ধেই ধেই করে নাচতে থাকি। তাও আমাদের প্রতিভারা বুঝে না, একজন সেঞ্চুরিয়ানকে আমরা কত মাথায় তুলে রাখতে চাই। এমন কি ধর্ষণে সেঞ্চুরী করা ছাত্রনেতা (!!! ) সেও আমাদের কাছ থেকে তিরষ্কার পায়নি। তার ইতিহাস এখনো কত কত কিশোর - যুবা কে অনুপ্রাণিত করে ৪ - ৪০ বছরের নারী ( মতান্তরে 'তেঁতুল' ) টেনে পাটক্ষেতে ফেলে।। যাক। আমরা এখন গর্ব করার মতো আরেকজন সেঞ্চুরীয়ান পেতে যাচ্ছি। বারডেমের নরম বিছানায় আঙ্গুর খেয়ে পাতলা হেগে হারামী গো-য়া যদি আর ১০ টা বছর টিকে যায়, আমরা বিশ্বকে বলতে পারব, - "দেখ ব্যাটারা, এরে কয় গুনীর কদর করা"।

অদুর ভবিষ্যতে বিদেশী পর্যবেক্ষক দল আসবে দেখতে "প্রমাণিত আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধী" কতটা আন্তর্জাতিক মানের "আরামদন্ড" পাচ্ছেন তা দেখতে। আমরা "জী বস" বলে দৌড় দিয়ে বিমান বন্দরে তাদের রিসিভ করব, পাছার কাপড় তুলে পুটুর মধ্যে সযত্নে ভরে রাখা ইতিহাসের সবচে' বড় "বে-গুনী" টাকে দেখাবো গর্ব ভরে। জাদুঘর পরিদর্শনের মতো এই "তামশা" দেখার জন্য উচ্চমূল্যের টিকেটের ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। এমন হারামী চীজ তো হরহামেশা সব দেশে পয়দা হয়না। বিপুল আগ্রহী বিদেশী দর্শকের ভীড় আশা করা যেতে পারে। আহরিত অর্থ "মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে" যেতে পারে। সেই অর্থে আরও হাজার বছর মুক্তিযুদ্ধের "চেত্না"-র 'তেনা' প্যাচানো যাবে।

বিজ্ঞ আদালত আমাদের সবাইরে "মাননীয় স্পিকার" বানাইয়া দিলেন - আমিন ।

- মুকুল চৌধুরী


মন্তব্য

ফরহাদ হোসেন মাসুম এর ছবি

জাতি এই অপূর্ণতা নিয়ে তার যাত্রা শুরু করলো...... আশা করি, আগামী প্রজন্ম এই ক্ষোভ মনে রাখবে

অতিথি লেখক এর ছবি

রাখতেই হবে, এই লজ্জা মাথায় বয়ে বেড়ানোর জিনিস না। আশা করতেই পারি

মালাকাইটের ঝাপি এর ছবি

হাততালি
হাত তালি ।
আসলে নাচা উচিত ,এমন খুশিতে না নাচলে চলে ।
মন খারাপ
রেগে টং

অতিথি লেখক এর ছবি

আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে
ইসরাত

অতিথি লেখক এর ছবি

হু !! একটু বেশীই হয়ে গেলো আনন্দটা। হজম হচ্ছে না
মুকুল

অতিথি লেখক এর ছবি

বিজ্ঞ আদালত আমাদের সবাইরে মাননীয় স্পিকার বানাইয়ে দিলেন!!! হো হো হো ভাল্লাগসে!!! -- মুগ্ধ অভিযাত্রিক

অতিথি লেখক এর ছবি

এই ভালোলাগা আরো ৯০ বছর থাকবে কইলাম। মন খারাপ
মুকুল

অতিথি লেখক এর ছবি

বিজ্ঞ আদালত কিভাবে এমন অবিজ্ঞের মতো রায় দিলেন । যেখানে অভিযোগগুলো প্রমাণিত এবং এর জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দেয়া যায় , সেখানে তিনি শুধুমাত্র বয়সটাকে ইস্যু করে মৃত্যুদন্ড দিলেন না। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এমন রায় কখনোও আশা করিনি।
কেমন যেন একটা আতাতের গন্ধ পাছি।

মুকুল চৌধুরী এর ছবি

মুকুল চৌধুরী
হুমমম, অনেক গন্ধ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।