অন্নপুর্না বেস ক্যাম্প ট্রেক-১

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ০২/০৮/২০১৩ - ১০:১৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শেষ ট্রেকিং এ গিয়েছিলাম বছর দুয়েক আগে, সান্দাকফু, নেপাল-ইন্ডিয়ার বর্ডারে, পশ্চিম বঙ্গের সর্বোচ্চ চূড়া। সচলে লেখাও দিয়েছিলাম দু পর্ব। কিন্তু আলসেমি আর মেরুদন্ডের স্পন্ডালাইসিস রোগে আর লেখা হয়ে উঠেনি। এর পর বেশ কবারই হিমালয়ে যাওয়া হয়েছে কিন্তু ট্রেকিং করে নয়, পরিবার নিয়ে সাইট সিয়িং ধরনের। নিরাপদ দুরত্বে দাঁড়িয়ে পর্বতের দিকে তাকিয়ে আহা উহু করা। তাই অনেকদিন ধরেই প্ল্যান করছিলাম আরেকটি ট্রেকিংয়ের। ইচ্ছে অন্নপুর্না বেস ক্যাম্প যাবার। অফিসের ঝামেলায় বেশ কটি প্রচেষ্টা ব্যার্থ হবার পর গত নভেম্বরে আমি আর আমার ট্রেকিং পাগল দুই বন্ধু আরেকটি প্ল্যান প্রায় গুছিয়ে আনি। ছুটি ও ম্যানেজ হলো সবার। ‘যাচ্ছি’, এই ব্যাপারটা ফাইনাল হবার পর বসলাম রুট প্ল্যান নিয়ে। ওয়েবসাইট ঘেটে আর পরিচিত যারা আগে গিয়েছে তাদের সাথে কথা বলে দুটি রুট নির্বাচন করা হলো। ট্রেকটি দুভাবে শেষ করা যায়। একটি হলো পোখারার অদুরে ফেদি নামক জায়গা থেকে শুরু করে মোটামুটি সরল রেখা ধরে বেস ক্যাম্প পর্যন্ত উঠে যাওয়া, মাঝে ব্যাক্তিগত ফিটনেস লেভেল আনুযায়ী যে কয়টি রাত্রি যাপন প্রয়োজন হয় (পাঁচ থেকে সাত) আর আরেকটি হচ্ছে ফেদি থেকে আরেকটু দূরে নয়াপোল নামক জায়গা থেকে শুরু করে কিছুটা সার্কুলার পথে টিকেধুংগা, ঘোড়েপানি, পুনে হিল, তাদাপানি হয়ে প্রথম রুটটির সরল রৈখিক পথের মাঝামাঝি গিয়ে মিশে তারপর কমন পথ ধরে বেস ক্যাম্প। সময় বাচানোর জন্য ঠিক করলাম সরল রৈখিক ট্রেক রুট ধরেই যাবো তাতে মোটামুটি ১২ দিনে শেষ করা যাবে।

063

রুট ফাইনাল করার পর শুরু হলো লজিষ্টিক পার্ট। অক্টোবর-নভেম্বর ট্রেকার আর পর্বতারোহীদের জন্য আদর্শ সময়। হিমালয় অঞ্চলে হাই আল্টিচ্যুড ট্রেকিং আর পর্বতারোহনের দুটি মওসুম, একটি এপ্রিল-মে-জুন, বসন্তের সময় আর অপরটি অক্টোবর-নভেম্বর-ডিসেম্বর, শীতের শুরু। ব্যাস্ত মওসুম, তাছাড়া অন্নপুর্না সার্কিট আর অন্নপুর্না বেস কেম্প ট্রেক বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেকগুলোর মাঝে অন্যতম, তাই আগে থেকেই গাইড আর পোর্টার বুক করে ফেলতে পরামর্শ দিলো অভিজ্ঞ জনেরা।পরিচিত একজনের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় অন্নপুর্না রিজিয়নের এক গাইডের সঙ্গে। বল বাহাদুর সংক্ষেপে বি.বি. আমাদের গাইড, মাঝারি গড়নের গোলগাল হাসিখুশি ত্রিশোর্ধ ভদ্রলোক আর সহজ সরল ফোকলা দাঁতের পঞ্চাশোর্ধ খাড়কা জি আমাদের পোর্টার। এই দুজনকে দু সপ্তাহের জন্য বুক করে ফেললাম। এরপর প্রয়োজনীয় গরম কাপড় কেনার জন্য বেশ কবার ঢু মারলাম বঙ্গ আর নিউমার্কেট। শেষবার যখন ট্রেকিংয়ে গিয়েছিলাম আমার ঢাউস গরম জ্যাকেটখানি শেরপা গাইডকে দিয়ে এসেছিলাম। তাই আবার আরেকটি ঢাউস জ্যাকেট কেনা হলো। ট্রায়াল দেবার সময় নিজেকে মনে হচ্ছিলো একটি ফোলানো ব্যাঙ। ঘুরে ঘুরে কিনলাম ফ্লিসের জ্যাকেট, উইন্ড চিটার, মাফলার, থারমাল ইনার, থারমাল ট্রাউজার, ট্রেকিং প্যান্ট, উলের টুপি, ভারি উলের মোজা। বছর দেড়েক আগে কাঠমন্ডু থেকে কেনা এক জোড়া চাইনিজ মাউন্টেন বুটই ভরসা এবার। ভালো এক জোড়া ট্রেকিং বুটের (নর্থ ফেস, কলাম্বিয়া, মামুট, মাউন্টেন হার্ডওয়্যার) মেলা দাম, দেড়শ ডলার মিনিমাম কিন্তু এফোর্ড করতে পারলে কিনে ফেলাই ভালো। ওসব জায়গায় জুতো বিগড়ে গেলে বেশ বিপদ। হাটতে হবে দেড়শো থেকে দুশো কিলো। এক ডাক্তার বন্ধুর সাহায্যে ঔষুধের ফর্দ তৈরী করলাম সম্ভাব্য মেডিকেল ইমার্জেন্সির কথা চিন্তা করে। শেষ পর্যন্ত যা দাঁড়ালো তা হলো একটি ভ্রাম্যমান ডিস্পেন্সারী। সব কিছু ঠেসে ঢোকানোর জন্য আছে ৮৫ লিটারের চাইনিজ ক্যামেল মাউন্টেন হ্যাভারসেক, সব চাইনিজ মাল ই খারাপ ন। গত ৬ বছর আমার ছোট বড় সব ট্রেকিংয়ের ভার বহন করেছে এটি, বিগড়ে যায়নি একবারও।

যাত্রার দিন ঠিক হলো কোরবানীর ঈদের দুদিন পর। যথারীতি বাকি কাজ যেমন বিমানের টিকেট, কাঠমন্ডু আর পোখারার হোটেল বুকিং, বাসের টিকেট, এয়ারপোর্ট ট্রান্সফারের সব আয়োজন সম্পন্ন করলাম পরিচিত এক নেপালী ট্রাভেল এজেন্সি আর আমাদের গাইডের সাহায্য। সাথে চললো অফিসের চাপে কাউচ পটেটো হয়ে যাওয়া শরীরকে মিনিমাম ফিট করে তোলার জন্য অল্প বিস্তর জগিং আর হাটাহাটি। এর মাঝে ওয়েবসাইটে নিয়মিত রুটের টেম্পারেচার ফলো করছি। ভয় পাচ্ছিলাম দেখে যে, যতই দিন যাচ্ছে তাপমাত্রা ততই নামার ফোরকাষ্ট দেখাচ্ছে (বেস ক্যাম্পের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দেখাচ্ছিল -১২০ সেন্টিগ্রেড)। সান্দাকফুর ঠান্ডার কথা মনে পড়লে এখনো গা কাঁটা দিয়ে উঠে।যাত্রার দিন সকালে যখন এয়ারপোর্টে যাবার জন্য তৈরী হচ্ছি সহযাত্রী বন্ধুর ফোন। বাসায় কি এক ঝামেলার কারনে যাওয়া ক্যানসেল। খুব মেজাজ খারাপ করে দ্রুত দৌড়ালাম এয়ারপোর্টে, টিকেট ক্যান্সেল করতে নো শো হবার আগেই। বেশ মন খারাপ নিয়েই বাকি দুজন লটবহর বিমানের পেটে চাপিয়ে কাঠমন্ডুগামী বোয়িং ৭৩৭ এ চেপে বসলাম। ৫০ মিনিটের ফ্লাইট দেখতে দেখতেই শেষ হয়ে যায়। আকাশ ভালো থাকলে কাঞ্চেনজঙ্ঘা, এভারেষ্ট হয়ে মানাসলু পর্যন্ত পুরো রেঞ্জ পরিস্কার দেখা যায়। তবে তার জন্য যাওয়ার সময় বিমানের ডান দিকে আর ফেরার সময় বা দিকে বসতে হবে। চারিদিক পাহাড় ঘেরা ত্রিভুবন এয়ারপোর্ট খুব ছোট, আমাদের চেয়েও। এরাইভাল লাউঞ্জে একটি সাইনবোর্ড নজর কাড়লো ‘Things to do in Nepal takes time, so relax and chill out’। কথাটা সত্যি প্রমান করতেই, অন এরাইভাল ভিসা আর ইমিগ্রেশনের ঝামেলা শেষ করে হোটেলে পৌছতে পৌছতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এলো। যেহেতু এক রাতের ব্যাপার এজেন্টকে বলা ছিলো মোটামুটি সস্তা কোন হোটেল বুক করার জন্য। থামেলের গলি ঘুপচির মধ্যে যে হোটেলে উঠলাম তা একটু বেশিই সস্তা মনে হলো, সিঙ্গেল খাট গুলো স্কিন টাইট, বাথরুম ততোধিক স্কিন টাইট। লট বহর রেখেই বের হলাম একটু ঘুরতে। থামেলের অলিগলির এই গোলকধাঁধা বরাবরই বেশ লাগে।

Thamel-1

Thamel-2

ফেলুদার যত কান্ড কাঠমন্ডুর কথা মনে পড়ে যায়। হরেক রকমের দোকানপাট, নানা দেশের নানা বর্নের মানুষের কলকাকলিতে মুখরিত চারিদিক। নানা আকৃতির বর্নিল থাঙ্কা (সিল্কের কাপড়ে বিশেষ এক ধরনের নেপালি আর্ট যাতে ফুটিয়ে তোলা হয় বৌ্দ্ধ ধর্মের নানা নিদর্শন। এই আর্টের সৃষ্টি তিব্বতে আর নেপালে আগমন ঘটে রাজকন্যা ভ্রিকুটির মাধ্যমে) , বিভিন্ন সাইজের নেপালি কুকরি (এক ধরনের বাকানো ছুরি, অত্যন্ত ধারালো), প্রেয়ার হুইল, বিচিত্র সব এন্টিকস্, ইয়াকের উলের গরম কাপড়ের পসরা, লোভনীয় বইয়ে ঠাসা ছোট ছোট দোকান আর পর্বতারোহনের হরেক রকমের ইকুইপমেন্টের দোকান তো আছেই। ঘুরে ঘুরে ট্রেকিংয়ের কিছু জিনিসপত্র কিনলাম। ভোরে পোখারার বাস। ট্রিপ এডভাইজর রেকমেন্ডেড এক ক্যাফেতে গরম গরম স্যুপ আর চাওমিন দিয়ে ডিনার সেরে ঘোরাঘুরি পর্ব শেষ করে হোটেলে ফিরে দ্রুত ঘুম।

166

কাঠমন্ডু থেকে পোখারার সমস্ত বাস সকাল সাত থেকে আটটার মধ্যে ছেড়ে যায়। থামেলের লাগোয়া কান্তিপথ নামক জায়গায় বিভিন্ন ট্যুরিষ্ট কোম্পানির বাসগুলো সকালে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। নানা দেশের ট্যুরিষ্টদের মিলন মেলা জায়গাটি। সাদা চামড়ার আধিক্য লক্ষনীয়। অনেক বাংলাদেশীর ও দেখা মিললো। বাস ছাড়াও রয়েছে ভ্যান গাড়ি (মাইক্রোবাসের মত) কিংবা সেডান ট্যাক্সি। কাঠমন্ডু থেকে পোখারার দুরত্ব ১৭৪ কিলোমিটার, সাত থেকে আট ঘন্টার জার্নি। রাজা পৃথ্বি নারায়ন শাহ্ এর নামে এই হাইওয়ের নামকরন। চীন সরকারের সহায়তার পাহাড়ের পাথুরে গা কেটে ত্রিশুল নদী ঘেষে নয়ন মনোহর এই রাস্তা তৈরী সম্পন্ন হয় ১৯৭৪ সালে। কাঠমন্ডু থেকে প্লেনে করেও পোখারা যাওয়া যায়, কিন্তু প্লেনের সাইজ দেখলে সাহস করে উঠা মুশকিল। বাস গুলো আমাদের দুরপাল্লার লাক্সারী বাসের তুলনায় নস্যি কিন্তু দু পাশের চমৎকার পাহাড়ি পথ পথের ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয় অনায়াসেই। এই পথে রয়েছে নেপালের কিছু গুরুত্বপুর্ন ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান। প্রায় আধাআধি যাওয়ার পর পথের ধারেই পড়ে মনোকামনা, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র তীর্থস্থান, এটি সেন্ট্রাল নেপালের সবচেয়ে পুরনো মন্দির। রাস্তার ধার থেকে কেবল কারে করে পৌছানো যায় পাহাড়ের সুউচ্চ চূড়ায়। আর সেখান থেকে মানাসলু আর অন্নপুর্না রেঞ্জের তুষার ঢাকা চূড়াগুলোর অসাধারন দৃশ্য দেখা যায়, সঙ্গে উপরি পাওনা হিসেবে রয়েছে মনের আশা পুর্ন করার সুযোগ। মনোকামনা থেকে আরেকটু পশ্চিমে পোখারার দিকে এগিয়ে একটু ডিট্যুর নিলেই আছে শাহ্ ডাইনাস্টির প্রাক্তন রাজধানী গোর্খা, আরো আছে ছোট হিল টাউন বান্দিপুর, নেওয়ারি আর্কিটেকচার আর কালচারের জন্য বিখ্যাত। চাইলে অনেক নিচে সগর্জনে বয়ে চলা ফেনিল ত্রিশুল নদীতে র্যা ফটিং করা যায়। আমাদের এবারের উদ্দেশ্য যেহেতু ট্রেকিং, তাই এ সব কোন কিছুই দেখা বা উপভোগের জন্য থামা হলোনা শুধু সকালের নাস্তা আর দুপুরের খাবারের বিরতি ছাড়া। বাসে পরিচয় হলো ধ্বলাগিরি-অন্নপুর্না রিজিয়নের এক গাইডের সাথে, তার ভাষ্যমতে দ্বিতীয় পথটি মানে ঘুরপথের ট্রেইল ধরে বেসক্যাম্প না গেলে এই ট্রেকের কিছুই দেখা হবেনা কিন্তু সময় লাগবে আরো দু তিন দিন বেশি। দেখতেই যেহেতু এসেছি তাই রুট বদলে দ্বিতীয় পথেই যাবো সিদ্ধান্ত নিলাম।

সিউডো লাক্সারী বাসের স্কিন টাইট সিটে বসে যখন প্রায় বিরক্ত হতে শুরু করেছি বাস তখনই পোখারা শহরে প্রবেশ করলো প্রায় দুপুর দুটো নাগাদ। বিবি (গাইড) ট্যাক্সি নিয়ে অপেক্ষা করছিলো আগে থেকেই, প্রাথমিক শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে হোটেলে পৌছানোর আগেই তাকে নিয়ে কিছু প্রয়োজনীয় কাজ সেরে ফেললাম। অন্নপুর্না বেস ক্যাম্প ট্রেকটি অন্নপুর্না কনজার্ভেশন এরিয়া প্রজেক্টের (ACAP) অধীনে বিধায় প্রজেক্ট এরিয়ায় ঢুকতে ACAP পারমিট নিতে হয়, সেই সঙ্গে সকল ট্রেকার আর গাইডকে TIMS (Trekkers’ Informaiton Management System) কার্ড সংগ্রহ করতে হয়। তারপর ইমার্জেন্সী ইভ্যাকুয়েশনের জন্য ইন্সুরেন্স। এসব শেষ করে হোটেলে ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসে। যে হোটেলে উঠলাম তার নাম হোটেল থার্ড পোল। হোটেল দেখে পছন্দ হলো। লেকের একদম এক প্রান্তে, মুল রাস্তা থেকে প্রায় একশ মিটার ভিতরের দিকে খোলামেলা জায়গায়। এক পাশে বিখ্যাত পর্বত ফিশ টেইলের সুচালো চূড়াকে ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে পাহাড় সারির শুরু, রাস্তা পার হয়ে সামনে লেক, লাগোয়া বারান্দার সামনে দৃষ্টি অবারিত চলে যায় পোখারা শহর ছুঁয়ে পাহাড়ের দিকে। বিছানায় শুয়েই সারাংকোট আর ফিশ টেইলের দুর্দান্ত ভিউ পাওয়া যায়। হোটেলের ছাদ খানিও ভারি চমৎকার, পুরো পোখারার প্যানোরেমিক ভিউ পাওয়া যায়। ব্রেকফাষ্ট সহ ডাবল রুমের ভাড়া ২৫০০ রুপি। বেশ রিজনেবলই বলা চলে।

Thirdpole

রুম থেকে তোলা ফিশ টেইলের ছবি
P1080579E

রুম থেকে ফেওয়া লেকের ছবি
P1080558 E

রুম থেকে তোলা

P1080547

সব কিছু রুমে ডাম্প করে রাতে আবার বিবি কে সঙ্গে নিয়ে বের হলাম ট্রেকিংয়ের প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র যেমন ওয়াকিং স্টিক, ডাউন জ্যাকেট, ডাউন স্লিপিং ব্যাগ, হেড ল্যাম্প আর ও কিছু টুকিটাকি জিনিষ ভাড়া করতে। হাজার পাঁচেক টাকার চকলেট বার, মিক্সড নাট, পাওয়ার বার, লজেন্স ইত্যাদি কেনা হলো ট্রেকিংয়ে শক্তি যোগানোর জন্য। গাইড আর পোর্টার আমাদের বড় হ্যাভারসেক বহন করবে আর আমরা ছোট ব্যাকপ্যাক বহন করবো যাতে লাইট জ্যাকেট, ক্যামেরা, পানি, স্ন্যাক্স, আইপড, সানগ্লাস ইত্যাদি টুকিটাকি জিনিসগুলি থাকবে। একজন পোর্টারকে বিশ কেজির বেশী বহন করানোর নিয়ম নেই। আমাদের দুজনেরই ৮৫ লিটারের হ্যাভারসেকের এক একটি প্রায় পঁচিশ কেজির ওপরে হয়ে গেছে। তাই ট্রেকিংয়ের জন্য অপ্রয়োজনীয় সব কিছু হোটেলের লকারে রেখে ব্যাগ হাল্কা করলাম।

সকালের জন্য প্রস্তুতি

P1080573

পরিবর্তিত রুটে আমাদের ট্রেকিং শুরু হবে নয়াপোল থেকে, পোখারা থেকে এক ঘন্টার কিছু বেশী সময়ের পথ। পরদিন সকালে নাস্তা শেষ করে হোটেলের একটি মাইক্রোবাসে করে আমরা যাত্রা শুরু করলাম নয়াপোলের উদ্দেশ্যে। রৌদ্রজ্জল ঝলমলে দিন। চমৎকার নীল আকাশ, এক ফোঁটা মেঘের চিহ্ন নেই। নীলের ব্যাকগ্রাউন্ডে ঝক ঝক করছে ফিশ টেইল। পোখারা শহর পার হয়ে পাহাড়ি রাস্তায় পড়তেই এক সারিতে দৃশ্যমান হলো সুর্যের আলোয় ঝিকিয়ে উঠা ফিশটেইলের সুচালো মাথা, হিমচুলি, গঙ্গাপুর্না, অন্নপুর্না-৩, গ্লেসিয়ার ডোম সহ আর ও অনেক নাম না জানা চুড়া। সে সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা যায়না। শধু তাকিয়েই কাটিয়ে দেয়া যায় ঘন্টার পর ঘন্টা।

রুম থেকে যাত্রা
219

গাড়ী থেকে তোলা অন্নপুর্না রেঞ্জের ছবি
245

শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে করতে নানা চড়াই উতরাই পার হয়ে প্রায় সোয়া একঘন্টা পর পৌছলাম আমাদের ট্রেকিংয়ের স্টার্ট পয়েন্ট নয়াপোল। পৌছে দেখি নানা দেশের নানা বয়সের ট্রেকার, গাইড আর পোর্টারে গিজ গিজ করছে জায়গাখানি। কেউ কেউ ইতিমধ্যেই যাত্রা শুরু করে দিয়েছে আবার কোন কোন গ্রুপ শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বেশ উৎসব মুখর পরিবেশ। এখান থেকেই সব জিনিষপত্রের দাম বাড়া শুরু, যত উপরে তত বেশী দাম। এক লিটার পানির বোতলের দাম ইতিমধ্যেই ২০ রুপি থেকে ৩০ রুপি বেড়ে ৫০ রুপিতে দাড়িয়েছে। চারিদিকের তামশা দেখার জন্য কিছু সময় কাটিয়ে আমরা যে যার যার ব্যাকপ্যাক পিঠে ঝুলিয়ে প্রত্যেকে এক লিটার পানি নিয়ে ধীরলয়ে হাতা শুরু করলাম। শুরু হলো গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙ্গামাটির পথ।

যাত্রা হলো শুরু
P1080610

নয়াপোল থেকে তোলা ফিশ টেইলের ছবি
The sacred mountain 'Fishtail/Macchapucchre' from Nayapul . . .

মোদীখোলা নদী
P1080606

প্রথমদিন গন্তব্য টিকেধুংগা, ১৪৯৫ মিটার উচ্চতায় সবুজে ছাওয়া উপত্যকার ঢালে ছোট একটি পাহাড়ী সেটলমেন্ট। বেশ কয়েকটি ছবির মতো সুন্দর টি-হাউস রয়েছে এখানে। সহযাত্রী হিসেবে আশে পাশে আছে আরো নানা দেশের ট্রেকার। দেখা মিললো কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, সুইডেন, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ড, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, পোলান্ড, রুমানিয়া, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, চীন, জাপান, দক্ষিন আফ্রিকা এমনকি লেবানন থেকে আসা ট্রেকারদের সাথে, পরিচয় এবং হৃদ্যতা ও হলো অনেকের সাথে। লক্ষ্য করার মতো ব্যাপার যে ট্রেকারদের প্রায় চল্লিশ শতাংশ মেয়ে। টোকিও এবং ইয়োকোহামা থেকে আসা সত্তরোর্ধ জাপানী বৃদ্ধদের এক দলকেও পেয়েছি আমরা। ট্রেকিংয়ের প্রথম কয়েক ঘন্টা একটু কষ্টকর, শহুরে আরামখেকো শরীরে শুরুতে উর্ধমুখী এই অবিরাম হন্ঠনের অত্যাচার সইয়ে নিতে একটু কষ্ট হয়, কিন্তু শরীরের নাম মহাশয়, একটু পরেই অটোপাইলট মোডে চলতে থাকে। ছোট বড় পাথর ছড়ানো পাহাড়ী গ্রাম্য পথ, এক পাশে মোদিখোলা নদী (আসলে খরস্রোতা প্রশস্ত ঝর্না) আর অন্য পাশে দিগন্ত বিস্তৃত ঢেউ খেলানো পাহাড়ে ফসলের ক্ষেত, বিক্ষিপ্ত ঘরবাড়ি আর পাইনের ঝাড়। পথে দু জায়গায় নাম নিবন্ধন আর পারমিট চেক করা হলো। আস্তে আস্তে প্রকৃতি বদলাতে শুরু করলো। একে বেঁকে উপরে চলা ট্রেইলের এক পাশে পাথুরে পাহাড় উঠে যাচ্ছে খাড়া আর উলটো দিকে নিচ দিয়ে সগর্জনে বয়ে চলছে খরস্রোতা মোদি খোলা। দূরে পাহাড়ের গায়ে ধাপ কেটে কেটে যবের চাষ করা হয়েছে, এখানকার প্রধান ফসল ও তাই। পাহাড়ের ঢালে ছবির মতো সুন্দর ছোট ছোট গাঁ। যেতে যেতে ছবি তোলা হচ্ছে, সঙ্গে পানি আর ক্যান্ডি ব্রেক, তাই চলার গতি ধীর।

পারমিট চেক হচ্ছে
P1080605

আকা বাকা মোদীখোলা
P1080595

পথ চলে গেছে ধীরে ধীরে উপরে
P1080613

P1080612

ঝুলন্ত ব্রীজ, অনেক পড়বে পথে
P1080629

P1080645

Hanging bridge over Modikhola . . .

We had to cross many such hanging bridge connecting two sides of ravine . .

P1080661

জাপানী দলের সাথে
P1090338

আজকে হাটতে হবে বিবির হিসেবে ৫ ঘন্টা কিন্তু আমার হিসেবে কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা। পুর্ব অভিজ্ঞতা থেকে জানি পাহাড়িদের এস্টিমেটের সাথে সব সময় ৩০-৪০% বাড়তি সময় যোগ করে রাখা ভালো। দুপুর গড়ালে পথিমধ্যে লাঞ্ছিত (উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে জিনিসপত্রের দামের যে হারে বৃদ্ধি ঘটছিলো তাকে লাঞ্ছিত হওয়াই বলা চলে) হলাম নেপালী থালী দিয়ে(ছবি দেখুন)। এটুকু খাবারের দাম ৩৫০ রুপি, এক কাপ চা ৪০ রুপি। লাঞ্চ শেষ করে আবার হন্ঠন। অবশেষে যা এস্টিমেট করেছিলাম, প্রায় ৭ ঘন্টা হাটার পর পৌছলাম আকাংখিত প্রথম গন্তব্যে। অনাভ্যাসের ধাক্কায় শরীর চরম ক্লান্ত। পাহাড়ের ঢালে বাড়তি একটু সমতল জায়গায় কংক্রিট, কাঠ আর টিনের আড়াইতলা বিল্ডিং নিয়ে টি হাউস। আমাদের জায়গা হলো বাথরুমের পাশের রুমটিতে। খুশিই হলাম। রাতের বেলায় এই ঠান্ডায় এত দূর ঠেঙ্গিয়ে টাট্টি করতে যেতে হবেনা। সাড়ে ছয়টায় ডিনার সেরে ৮ টার মধ্যে ঘুম। খাবারের দাম নাই বা বললাম। ডিনারে পরিচয় হলো আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্য থেকে আসা একটি দলের সাথে। পেশায় সবাই একাউটেন্ট। ট্রেকিং শেষে নিজেদের খরচ এবং শ্রমে একটি স্কুল বানানোর পরিকল্পনা আছে দলটির। তাদের ভাষায় এটি উইন উইন ট্রেকিং। আনন্দ ও হলো সেই সঙ্গে সোশ্যাল রেস্পন্সিবিলিটি ও পুর্ন হলো। ভালোই। পরিচয় হলো ভারতীয় বংশদ্ভুত দক্ষিন আফ্রিকার নাগরিক রাজন দার সাথে। চলনে বলনে ভীষন পলিশড্ রাজনদা পেশায় এমিরেটস্ এর পাইলট।এয়ারবাস A380 চালান ইউরোপ আর নর্থ আমেরিকান গন্তব্যে।

টিকেধুংগার পথে (লাঞ্চ ব্রেক)
P1080674

চারশ টাকার লাঞ্চ
P1080682

টিকেধুংগার পথে (স্কুল ঘর)
A school in the green terrace . . .

টিকেধুংগার পথে (পাহাড়ী ঢালে গ্রাম আর ফসলের ক্ষেত)
Small villages perched in the green millet field . .

টিকেধুংগার পথে
Millet field in the slope . . .

P1080762

P1090891

A narrow waterfall perched in the green . . .

দুই গুরুং বালিকা
P1090384

অবশেষে গন্তব্যে
P1080667

পরদিন ৬ ঘন্টার হাটা (আমার হিসেবে কমপক্ষে ৮ ঘন্টা), গন্তব্য ঘোড়েপানি, পুরো ট্রেকের সবচেয়ে কঠিন দিন (পরে বুঝেছি)। উঠতে হবে ১৩০০ মিটারের ও বেশি আর কিছু জায়গায় ট্রেইল একদমই খাড়া। সকালে পরিজ, দুধ, মধু দিয়ে নাস্তা শেষ করে লেমন টি খেয়ে শরীর চাঙ্গা করে রওনা হলাম ঘোড়েপানির উদ্দেশ্য। প্রথম গন্তব্য ৪০০ মিটার খাড়া উপরে উল্লেরী নামক একটি জায়গা। পথের দিকে তাকিয়ে মনটা দমে গেলো। একদম খাড়া পাথুরে এবড়োথেবড়ো সিড়ি বেয়ে উঠে যাওয়া। হাজার হাজার পাথুরে ধাপ হাটুর অবস্থা দফারফা করে দিবে নিশ্চিত। প্রায় দু ঘন্টা লাগলো উল্লেরী পৌছতে। দু হাটু ততক্ষনে প্রায় অবশ। কিন্তু কষ্ট ভুলে গেলাম উল্লেরী থেকে অন্নপুর্না সাউথ আর হিমচুলির অসাধারান দৃশ্য দেখে। চারিদিকে সবুজে ছাওয়া পাহাড় সারি, তা ছাপিয়ে অন্নুপুর্না আর হিমচুলির তুষার শুভ্র চূড়া নীল সবুজের মাঝে ঝিকঝিক করছে।

অন্নপুর্না সাউথ এবং হিমচুলি (উল্লেরী থেকে)
The beautiful 'Annapurna south peak' . . .

উল্লেরীর পথে বিশ্রাম
P1080704

উল্লেরী থেকে তোলা অন্নপুর্না সাউথ পিক
P1080715

কিছুক্ষন বিশ্রাম তারপর আবার নিরবিচ্ছিন্ন উঠে যাওয়া। এবারের গন্তব্য আরও আড়াইশো মিটার উচুতে বানথানটি। চলার গতি ধীর। টিকেধুংগা থেকে ঘোড়েপানি পর্যন্ত পুরো ট্রেইলের কোথাও সমতল হাটা নেই, শুধুই খাড়া উঠে যাওয়া। যখন বানথানটি পৌছলাম ততক্ষনে প্রায় দুপুর গড়িয়ে এসেছে। লাঞ্চ শেষ করে আবারো উঠে যাওয়া, বিবি যখন জানালো এ যাত্রায় প্রায় ছ’শ মিটার উঠতে হবে, আমাদের দুজনেরই উদ্যম নষ্ট হয়ে যাবার মত অবস্থা। যতই রিমোট এরিয়ায় ঢুকছি জিনিসপত্রের দামও মনে হয় জ্যামিতিক হারে বেড়ে চলছে। এক লিটার পানির দাম অলরেডি ৮০ রুপিতে গিয়ে ঠেকেছে। ওক আর রডোড্রেনডন বনের ভিতর দিয়ে একে বেঁকে পথ উঠে গেছে। ভ্য় হচ্ছিলো সন্ধের আগে হয়তো পৌছতে পারবনা। পথে ছোট একটি সেটলমেন্ট পড়লো, নাংগেথানটি। এক কাপ লেমন টি খেয়ে পথের শেষ অংশ হাটা ধরলাম। যা ভয় করছিলাম তাই, সন্ধা নেমে গেছে, ধীর চলার গতির কারনে গন্তব্য তখন ও প্রায় এক ঘন্টার পথ। ঠান্ডা বাড়ছে, পথ ও ভালো ঠাহর করা যাচ্ছেনা। মাথার হেডল্যাম্প জ্বালিয়ে উঠতে থাকলাম। অবশেষে প্রায় ১২ ঘন্টা হেটে ক্লান্তির শেষ সীমায় পৌছে যখন ঘোড়েপানি পৌছলাম তখন সময় প্রায় সাতটা। এখানে আটটা মানেই মাঝরাত। টি হাউসে নিজেদের রুমে মালপত্র রেখে ডাইনিং রুমে ছুটলাম কয়লার রুম হিটারে গা গরম করার জন্য। ঠান্ডায় জমে একাকার। ভাত, ডাল, সবজি, পাপড় এর নেপালি থালি দিয়ে ডিনার শেষ করে এক গ্লাস হট চকলেট নিয়ে আয়েশ করে বসলাম উনুনের ধারে। পরদিন সকালে গন্তব্য প্রায় ৩২০০ মিটার উচ্চতায় পুনেহিল অবজারভেটরি টাওয়ার যেখান থেকে পুরো ধ্বলাগিরি রেঞ্জের অসাধারন ভিউ পাওয়া যায়। কিন্তু সেখানে যেতে হলে উঠতে হবে ভোর সাড়ে তিনটা, চারটার মধ্যে। অন্ধকার থাকতে রওনা দিয়ে সুর্যোদয়ের আগে গিয়ে পৌছতে হবে। অতএব পা থেকে মাথা পর্যন্ত গরম কাপড়ে মুড়ে দু দুটি লেপ গায়ে দিয়ে চমৎকার ঘুম দিলাম। ভোর সাড়ে তিনটায় বিবির ডাকে ঘুম ভাংলো। শরীর আর মনে সাথে অনেক যুদ্ধ করে উঠতে হলো। ভীষন ঠান্ডা, প্রায় শুন্যের কাছাকাছি হবে। ডাউন জ্যাকেট আর ভারী গ্লাভস্ বের করতে হলো। বাইরে বেশ অন্ধকার। পুনে হিল আরো ৪০০ মিটার উপরে। দেড় থেকে দু ঘন্টার পথ। অন্ধকারের মধ্যে ওকে আর রডোড্রেনডন বনের ভিতর দিয়ে পথ চলা। কিছুক্ষন চলার পর চোখের সামনে উন্মোচিত হলো পুরো ধ্বলাগিরি রেঞ্জ আর অন্নপুর্না রেঞ্জের কিছু অংশ। এক অপার্থিব দৃশ্য। এক সারিতে তুষার ঢাকা চুড়াগুলো মায়াবী এক আলোয় ভরিয়ে রেখেছে চারিদিক। বাকরুদ্ধ হয়ে দেখতে দেখতে এগিয়ে চললাম। যখন পুনে হিলের চুড়ায় যখন পৌছলাম তখন সুর্য উঠছে উঠছে। ইতিমধ্যেই পুরো জায়গা ভরে গেছে নানা দেশের ট্রেকারে। ট্রাইপড লাগিয়ে সবাই রেডি সুর্যের প্রথম আলোয় ধ্বলাগিরির ছবি তোলার জন্য। অবজারভেটরি টাওয়ারের একদম উপরে উঠে গেলাম। ঠান্ডা বাতাস সুইয়ের মত বিঁধছে মুখে। গ্লাভস্ খুলতে পারছিলনা ঠান্ডায় তাই ছবি ও তুলতে পারছিনা। চারপাশে অসাধারন দৃশ্য। মনে মনে নিজেকে ধন্যবাদ দিলাম রুট বদলে এই পথে আসবার জন্য। ধ্বলাগিরির দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম এখানেই নিউজিল্যান্ডের তারকা মাউন্টেনিয়ার গ্যারি বল পালমোনারি ইডিমায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন করেন, তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয় দশ বছর পর। ১৯৯৮ সালে এখানেই সেরাক (বরফের চাঙ্গড়) ধসে মারা যান সেলিব্রেটি ফ্রেঞ্চ মহিলা আলপাইনিষ্ট চ্যান্টাল মাউডুইট ও তাঁর শেরপা পার্টনার আং সেরিং। চ্যান্টাল মাউডুইটের নামে নেপালে একটি ফাউন্ডেশন আছে দরিদ্র নেপালী ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য কাজ করে। . . . (চলবে)

ঘোড়েপানির পথে
P1090814

ধ্বলাগিরি রেঞ্জ (পুনে হিল থেকে), ধ্বলাগিরি-১ (৮১৬৭ মিটার, ৭ম সর্বোচ্চ চূড়া) ও থুকুচে পিক (৬৯০০ মিটার)
P1080916

ধ্বলাগিরি-১ (৮১৬৭ মিটার), ১৮০৮ সালে আবিস্কারের পর এটাকেই ভাবা হতো পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া
Dhaulagiri, the great white massif

অন্নপুর্না সাউথ (পুনে হিল থেকে)
P1080913

P1080877

পুনে হিল চুড়ায় সুর্যোদয়ের অপেক্ষায় ট্রেকাররা ক্যামেরা নিয়ে রেডি
P1080860

সহযাত্রী ও বন্ধু মুবীর পুনে হিলে
P1080899

ধ্বলাগিরি রেঞ্জ (ধ্বলাগিরি১-৫, থুকুচে পিক)
Dhaulagiri range in the morning . . .

ঘোড়েপানি (ব্যাকগ্রাউন্ডে ধ্বলাগিরি-৩,৪,৫)
A lodge @ Ghorepani in the backdrop of Dhaulagiri range

ঘোড়েপানি থেকে ধ্বলাগিরি রেঞ্জ
P1080936

P1080942

P1080939

Dhaulagiri range . . .

Ghorepani in the backdrop of Dhaulagiri range . . .

কলকাতার দুই ট্রেকারের সাথে
P1080894

মানাসলু রেঞ্জ (দূর থেকে জুম করে তোলা)
Sunset on Himalaya . .

অচিন পাখি


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চমৎকার ছবি চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অচিন পাখি এর ছবি

ধন্যবাদ। ছবিতে আসলে প্রকৃতির সৌন্দর্যের ব্যাপকতা খুব একটা ধরা পড়েনা। হিমালয়ের বিশালতা সামনে না গেলে বোঝা যায়না।

তারেক অণু এর ছবি

ভ্রমণ জারি থাকুক! আমার প্রথম হিমালয় ভ্রমণ ছিল অন্নপূর্ণাকে ঘিরেই, ঘোড়েপানি , তাতোপানি, কালাপানি কিছু নাম মনে আছে।

কয়েকটা ছবি দারুণ এসেছে, আবার কবে যাচ্ছেন? লেখা জারি থাকুক, আর একটু কাটছাট করলে বেশী প্রাণবন্ত হতে পারে বর্ণনা ( ব্যক্তিগত মতামত)

চলুক

অচিন পাখি এর ছবি

ধন্যবাদ অণু দা। হু, একটু ছোট হলে ভালো হতো। মনে থাকবে। আবার যাচ্ছি এ বছরই। এভারেষ্ট বেস ক্যাম্প। সঙ্গে আইল্যান্ড পিক মাথায় রাখছি। সময় বের করতে পারলে সামিট করার ইচ্ছে আছে।

বিষের বাঁশী এর ছবি

চমৎকার পোস্ট! আপনার সাথে সাথে আমরাও ঘুরে এলাম ধ্বলাগিরি, দেখলাম অন্নপূর্ণা!

অচিন পাখি এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন।

জীবনযুদ্ধ  এর ছবি

এক নিঃশাসে পরে ফেললাম পুরো লেখাটা , কাটছাট এর প্রয়োজন নাই, এমনিতেই ভালো লাগলো

অচিন পাখি এর ছবি

ধন্যবাদ ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য।

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখা আর ছবি দুই-ই উপভোগ করেছি। চলুক
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
- একলহমা

অচিন পাখি এর ছবি

ধন্যবাদ পড়ার জন্য। পরের পর্ব আশা করি তাড়াতাড়ি দিতে পারবো।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

চমৎকার ছবিগুলো দেখলাম। লেখা পড়িনি, সময় নিয়ে পড়ব। ছবিতে পাঁচতারা।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অচিন পাখি এর ছবি

ধন্যবাদ ত্রিমাত্রিক কবি। পরের ছবিগুলো ও আশা করি ভালো লাগবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

উফ! কি সুন্দর! এ যেনো মন খারাপ করা ভালো লাগা!

-এস এম নিয়াজ মাওলা

অচিন পাখি এর ছবি

আসলেই অনেক সুন্দর। সামনে থেকে দেখলে বাকরুদ্ধ হতে হয়। ধন্যবাদ।

মক্কা উদ্দিন লাসভেগাস এর ছবি

কিছু ছবি অসাধারণ।
কাটছাট করার দরকার নেই ।
যেহেতু আমারও যাওয়ার ইচ্ছা আছে তাই খরচের ব্যাপারটা আরেকটু ডিটেলস জানতে চাচ্ছি ।

অচিন পাখি এর ছবি

ধন্যবাদ পড়ার জন্য। আগামী পর্বে খরচের ডিটেইলস্‌ দিয়ে দিবো। আশা করি কাজে লাগবে।

তানিম এহসান এর ছবি

শুভকামনা রইলো আপনার জন্য। যা করতে পারি না তা আর কাউকে করতে দেখলে খুব ভাল লাগে। চলুক! চলুক

পোখারা গিয়েছি, খুবই পছন্দের জায়গা, ছবিগুলো স্মৃতিকাতর করে তুললো।

অচিন পাখি এর ছবি

ধন্যবাদ শুভকামনার জন্য।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

হা হা, আপনার সাথে আমারও ট্রেকিং হল। চলুক

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

ভাই, পারেন ক্যামনে?
বুক জুড়ে একটা হাহাকার জাগিয়ে অচিন পাখিটা উড়ে গেলো একটা পোস্ট দিয়ে!!

____________________________

অচিন পাখি এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ছবি আর বর্ণনা টুকলিফাই করে রীতিমতো একখান নিজস্ব ভ্রমণ (ছবিতে একটু কারিগরি করা লাগবে আরকি) বানিয়ে ফেলা যাবে মনে হচ্ছে

অচিন পাখি এর ছবি

ধন্যবাদ মাহবুব ভাই পড়ার জন্য।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এই যে রাত্তিরবেলা ডিনার সেরে আরাম করে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছি, এরচেয়ে আরাম আর কী আছে? এইসব পসা জায়গায় আমি যাই না চোখ টিপি
(গভীরতর আলসেমির ইমো)

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অচিন পাখি এর ছবি

অফিসে ও আমাকে নিয়ে কিঞ্চিত হাসাহাসি হয় পয়সা খরচ করে হাটতে যাই বলে দেঁতো হাসি ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

সালেহীন এর ছবি

লেখাটা দারুন লাগলো। ছবিগুলো আরও দুর্দান্ত। আমরা কয়েকজন বন্ধু অক্টোবর এর শেষ দিকে nayapul-ghorepani(poon hill)-tadapani-ghangruk-nayapul এই ট্র্যাক এ যাবার প্ল্যান করছি। আপনার কাছে কিছু বিষয় জানার ছিল। আপনার ইমেইল বা ফেবু ID কি পেতে পারি?

অচিন পাখি  এর ছবি

সরি, দেরিতে চোখে পড়লো। ফেবু আইডি হলো razib rahman (razib.iba@gmail.com)। কোন উপকারে লাগতে পারলে খুশি হবো।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার বর্ণনা পড়ে নিজের ছোট ট্রেকিং এর কথা মনে পড়লো।প্রথমবার যখন কেওকারাডং হয়ে জাদিপাই ঝর্ণা গেলাম সেই স্মৃতি ভাসলো চোখে।প্রায় একি রকম গল্প এখানেও।যতোই উপরে উঠবেন জিনিসপত্রের দাম ততোই বাড়তে থাকে।আমরা একদিনেই রুমা বাজার থেকে সরাসরি বগারলেক গিয়ে রেষ্ট না করে শুধু দুপুরের খাওয়া খেয়ে কেওকারাডং রওয়ানা দিলাম,জানতাম ফিরতে হয়তো সন্ধ্যা হবে।হলো তাই ফেরার সময় আধার নামলো আর সাথে বোনাস হিসাবে নামলে বৃষ্টি।বৃষ্টির মাঝে লাল মাটির পাহাড় গুলো কি ভয়ংকর পিচ্ছিল হয়েছিলো ওফ!শুধু পা দিচ্ছি আর পিছলে যাচ্ছে বারবার।আমি যতটুকু ট্রেকিং করেছি তাতে উঠার চেয়ে নামাই আমার কাছে কষ্টকর মনে হয়েছে।চিংড়ি ঝর্ণার কাছাকছি আসার পথে একপাশে খাড়া ঢাল আছে,ওই পথ বেয়ে নামা জীবনের অন্যতম ভয়ের ছিলো বৃষ্টির কারনে।ভীষন ভয় ও পেয়েছিলাম,এরি মাঝে একজন সহযাত্রী একটুর জন্যে ২০০ ফুট নীচু চিংড়ির ঝর্নার পাথর থেকে পড়তে পড়তে বেচে গিয়েছিলো।তবে ভয় আর ক্লান্তি সব কিছুকে মুছে দেয় পাহাড়ের সৌন্দর্য্য।পাহাড়ের নেশা আর সৌন্দর্য্য একবার যার শরীরে ঢুকে সে আর বের হতে পারে না সেই মুগ্ধতা থেকে।

জাদিপাই নামার পথটা দারুন কষ্টকর,কেওকারাডং থেকে শুধু নামতে থাকো,প্রায় আড়াই ঘন্টা নামতে আর সাড়ে ৩ঘন্টা লাগে উঠতে।তবে চারপাশের অপরুপ প্রকৃতি পেরিয়ে যখন জাদিপাই ঝর্ণাটা দেখি সেই অনুভূতি আর ভালোলাগা লিখে প্রকাশ করা যাবে না।আপনার লিখা পড়ে স্বপ্নটাকে আরো বড় করছি,যদি পারি অন্নপুর্ণা বেস ক্যা্ম্প যাবো একদিন।ছবিগুলো দারুন হয়েছে,ছবি দেখে প্রেমে পড়ে যাওয়ার মতো,তবে আপনার লিখায় কিছুটা কমপ্রয়োজনীয় বিষয়ও এসেছে,এগুলো না আসলে লিখার মানটা আরো ভালো হতো।ভালোথাকবেন

মাসুদ সজীব

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।