একটি প্রেজেন্টেশান এবং হঠাৎ কিছু উড়ো ভাবনা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ১৭/১২/২০১৩ - ১০:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজ বাংলাদেশ এর ৪৩ তম বিজয় দিবস ছিল। সকালে নিজের ফেইসবুক প্রোফাইল থেকে ২৭ হাজার এর ও অধিক লোক এর অংশগ্রহণে জাতীয় পতাকার অবয়ব নিয়ে যে বিশ্ব রেকর্ড করা হয় সেটার একটা ছবি শেয়ার করেছিলাম। সন্ধ্যায় সেই ছবিটাই আবার দেখি বড় স্ক্রিনে আট টি দেশের ছাত্র ছাত্রী দের উপস্থিতি তে। আজকে আমাদের একটা কোর্সের প্রেজেন্টেশান ছিল সন্ধ্যাই। আমার একজন বাঙালি সহপাঠিনী ওর স্লাইড প্রেজেন্টেশান শুরু করে ফেইসবুকে শেয়ার দেয়া আমার ছবিটা দিয়ে। একটা শৈবাল এর উদাহরন দিতে গিয়ে বলেছিল ওটার স্ত্রেইন কিছু সময় পর আমাদের পতাকার লাল রং এর মতো হয়। এরপর সে খুব সুন্দর করে ব্যাখ্যা করে আজ আমাদের বিজয় দিবস, ১৯৭১ সালের এই দিনে আমরা পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হয়। এবং এই লাল সবুজ রং এর তাৎপর্য। সবাই মুগ্ধ হয়ে ওর কথা শুনছিল। আমাদের ক্লাসের একজন পাকিস্তানি ছাত্র শেষে বলল " ইউ পিউপল ডিড দ্যা কারেক্ট থিং ইন 71 " আসলেই আমরা ভালো করেছি সেই ৭১ সালে। এই বহু সংস্কৃতি'র দেশে এসে একটা জিনিস বুঝেছি বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মানুষগুলোর চেহারা কিংবা আচার আচরনের কিছুটা মিল থাকলেও নীতিগত একটা বিরাট পার্থক্য আছে। সেই পার্থক্য টা যারা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন ৭১ সালে তারাই স্বাধীন বাংলাদেশ এর স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ এর জন্ম দিয়েছিলেন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর। আর যারা এই নীতির পার্থক্যে বিশ্বাসী ছিলেন না, তারাই স্বাধীনতার শত্রু, স্বাধীনতা বিরোধী যারা স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখা মানুষগুলোকে ইসলামের কাফের বলেছিল। আফসোস সেই মানুষগুলো আজো রয়ে গেছে আর তারাই আজ শান্তিপ্রিয় বাংলাদেশ এ ধর্মের নামে রাজনীতি করে সোনার বাঙলা কে কলঙ্কিত করছে। পাকিস্তান এর জাতীয় পরিষদে কাদের মোল্লার মতো জন্মসুত্রে বাংলাদেশী একজন বিতর্কিত নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নিন্দা জানিয়ে প্রস্তাব পাশ হয়, বাহ কি সুন্দর দেখা গেলো। এই বিশেষ প্রস্তাব এর জন্যে পাকিস্তান সরকার উদাহরন হয়ে থাকলো। হোক না পরাজয় তবুও যে লোকটা ১৯৭১ সালে তাঁদের পক্ষে কথা বলেছিল, মৃত্যু ভয়েই হোক আর ধর্মের দোহাই দিয়েই হোক তাঁদের গোলামি করেছিল সেই পরীক্ষিত মিরজাফর এর এতো বছর পরে স্বাধীন দেশে বিচার শেষে মৃত্যুর পরে শোক প্রস্তাব এনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল। মৃত অবস্থাই যে ব্যক্তি পাকিস্তান সরকার এবং জনগন থেকে যে পরিমান ভালোবাসা,স্নেহ এবং শ্রদ্ধা পাচ্ছে জীবিত অবস্থাই না জানি কত অনুগ্রহ পেয়েছিল। আমি এখন ভাবছি এই লোক কি বাংলাই কথা বলত আদৌ। আমি বিদেশে দেখেছি অনেক বাঙালি ছেলেকে পাকিস্তানি ছেলেদের সাথে হিন্দি তে কথা বলছে। হিন্দি/ উর্দু প্রাই নাকি কাছাকাছি, যদিও ওরা বলে উর্দু থেকেই নাকি হিন্দি ভাষার সৃষ্টি। যাই হোক বিদেশে লোকজন হয়ত নানাবিধ কারনে বলতে পারে, এটা কোনভাবেই কাদের মোল্লার মতো মানুষ যে জায়গা থেকে পাকিস্তান কে বিবেচনা করে সেই অনুভবের মতো নয়। ইমরান খান থেকে হামিদ মীর কিংবা পাকিস্তানের কোন মন্ত্রী কাঁদের মোল্লা কিংবা এই দলের অনুসারীদের নিয়ে অনুপ্রেরণা, কৃতজ্ঞতা, আক্ষেপ সুচক যায় বলুক না কেন তা ওঁদের জায়গা থেকে ঠিক আছে কিন্তু বাঙালি জাতীয়তা বাদ থেকে এইসব মেনে নেওয়া খুব কষ্টের বেদনাদায়ক। ওইসব লোক গুলো নিয়েই তাঁদের আলোচনা, মনজাতনা যারা একসময় ওঁদের পক্ষে ছিল কিংবা এখনও ইসলামের নামে পাকিস্তান জামায়াত ইসলামির রাজনীতি করে বাংলাদেশ এ। হামিদ মীর এর ভাষ্য অনুযায়ী একজন যুদ্ধাপরাধীর বিচারের জন্যে আমাদের ভুল স্বীকার করা উচিৎ। কিসের ভুল? যে নীতি চাই নি আমরা বাংলাই কথা বলি, বাংলাই লিখি আমাদের দেশ বাংলাদেশ হোক, যে নীতি আজ এতো বছর পরেও বাংলাদেশ এ পাকিস্তানি রাজনৈতিক দলের ভাবাদর্শ প্রচার করে ইসলামের আদলে সেই নীতির বিশ্বাসী একজন মানুষের অপরাধের বিচার করার ভুল স্বীকার? আমি দেখেছি পাকিস্তানি রা একটা আত্মতৃপ্তি তে ভুগে বাংলাদেশ কে পূর্ব পাকিস্তান বলে পরিচয় দিতে। বাঙালি শব্দ টা কিছু কিছু পাকিস্তানি এমনভাবে উচ্চারন করে যেন এটা একটা গালি। কে জানে হয়ত একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক পাকিস্তানি নাগরিকের মনে এখনও স্বপ্ন আছে একদিন বাংলাদেশ টা হয়ত পাকিস্তান হবে না কিন্তু পাকিস্তানি আদর্শে চলবে। ধর্মের নামে একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল আমাদের দেশে যে রাজনীতির অনুশীলন করছে সেই দলের মাথা গুলোও মনে হয় এটা বিশ্বাস করে। আর তাই যারা ই বাঙালি জাতীয়তা বাদ এর কথা বলে, ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলে সবাই কাফের হয়ে যায়। আমরা এমন ই আবেগি জাতি যে রাজনৈতিক দলের আদর্শই বাঙালি জাতীয়তা বাদ থেকে সৃষ্টি হয় নি সেই দলকে ত্যাগ করতে পারছি না ধর্মের কারনে। পৃথিবীতে অনেক আরবি দেশ উন্নতির চরম শিখরে উঠেছে শুধু তাঁদের প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য নয়, রাজনৈতিক দূরদর্শিতার জন্যে। এইসব উন্নত আরব দেশ গুলোর সাথে বাংলাদেশ এর প্রেম খুব বেশী চোখে পড়ে না। আমি যতো পাকিস্তানি মানুষজন জানি তাঁদের সিংহ ভাগ ই বলেছে বাংলাদেশ পাকিস্তান এর চেয়ে অনেক ভালো অবস্থাই আছে। আসলেই ঠিক। কিন্তু আফসোস আমাদের দেশে ধর্মের যে রাজনীতি করা হয় তা পুরোপুরি পাকিস্তান এর আদলে। এই পাকিস্তানের মিডিয়া থেকে শুরু করে যারাই বাংলাদেশ এর যুদ্ধাপরাধের বিপক্ষে কথা বলে আমাদের ধরে নিতে হবে সেটা যতটা না মানবাধিকার এর জন্যে ততটা বেশী হল জামায়াত ইসলামি বাংলাদেশ এর জন্যে। যেই দল টা এখনও বহন করে চলেছে পাকিস্তানের স্মৃতিচিন্ম বহাল তবিয়তে। পৃথিবীর সব প্রান্তের যেসব দেশে যুদ্ধ হয়েছে সেসব দেশে আন্তর্জাতিক কিংবা দেশীয় আইনে যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং সর্বোচ্চ শাস্তি হয়েছে। আজ যদি এই যুদ্ধাপরাধের সাথে জামায়াত জড়িত না থাকত কিংবা বাংলাদেশ এ জামায়াত ইসলামি বলে কোন দল না থাকত কি মনে হয় ওরা এতো কাহিল হত হৃদয়ের যাতনায়? যদি বাংলাদেশ এর দুই বড় রাজনৈতিক দল মিলে একটা দল করা যেতো আমার বিশ্বাস বাংলাদেশ পুরো মুসলিম বিশ্বের আদর্শ হত। এমন মুসলিম প্রধান দেশ এর উদাহরন বিরল যেখানে সব ধর্মের মানুষ নিদ্বিধায় তাঁদের নিজ নিজ ধর্ম, জীবন পালন করছে কেউ কারো ক্ষোভ এর কারন না হয়ে। যেখানে দেশের জাতীয়তা বাদ ই অনেক বেশী বড়। এই দুই রাজনৈতিক দলে বিশ্বাসী আমার যতো পরিচিত জন, বন্ধু দেখেছি সবাই ই দেশের উন্নতি এবং ভালো চায় নিজের নিজের মতবাদ অনুযায়ী। উন্নত দেশে দেখছি পৃথিবীর যে প্রান্ত থেকেই যে ধর্মের ই মানুষ আসুক না কেন প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে তার রীতিনীতি মেলে সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং নিরাপদ ভাবে তাঁদের ধর্ম পালন করছে। আশাই আছি বাংলাদেশ এ কখন এমন ধর্মের রাজনীতি না হয়ে সু-শাসনের রাজনীতি হবে।

ছবি: 
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন

মন্তব্য

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

১। লেখকের নাম কোথায়?
২। ‌"য়"এর জায়গায় "ই" চলে এসেছে অনেক স্থানে।
৩। লেখা একসাথে না দিয়ে প্যারাগ্রাফ আকারে দিলে পাঠকের সুবিধা হয়।
এবার লেখা প্রসঙ্গে:
লেখা খুব ভালো লেগেছে। এটা যে মনের টানে লেখা তা পড়েই বোঝা যায়। সম্ভবত লেখাও হয়েছে একটানে। পড়েছিও একটানে। আরো লিখুন।

"পৃথিবীতে অনেক আরবি দেশ উন্নতির চরম শিখরে উঠেছে শুধু তাঁদের প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য নয়, রাজনৈতিক দূরদর্শিতার জন্যে।" - তথ্যটা নতুন আমার জন্য, উদাহরণ দিতে পারেন? ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।

"ইমরান খান থেকে হামিদ মীর কিংবা পাকিস্তানের কোন মন্ত্রী কাঁদের মোল্লা কিংবা এই দলের অনুসারীদের নিয়ে অনুপ্রেরণা, কৃতজ্ঞতা, আক্ষেপ সুচক যায় বলুক না কেন তা ওঁদের জায়গা থেকে ঠিক আছে " - দ্বিমত পোষন করছি। অপরাধ অপরাধই। অপরাধের/অপরাধীর সাফাই গেয়ে কিছু বললে সেটা আরো বড় অপরাধ হয়ে যায়।

ধন্যবাদ।

____________________________

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

"ইমরান খান থেকে হামিদ মীর কিংবা পাকিস্তানের কোন মন্ত্রী কাঁদের মোল্লা কিংবা এই দলের অনুসারীদের নিয়ে অনুপ্রেরণা, কৃতজ্ঞতা, আক্ষেপ সুচক যায় বলুক না কেন তা ওঁদের জায়গা থেকে ঠিক আছে " - দ্বিমত পোষন করছি। অপরাধ অপরাধই। অপরাধের/অপরাধীর সাফাই গেয়ে কিছু বললে সেটা আরো বড় অপরাধ হয়ে যায়।

ইমরান খান নিয়াজী কিংবা হামিদ মীর পাকছাফ ভালোমানুষ-
সেকতা কিডা কইচ্চে গো প্রোফেসর? চোখ টিপি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

সেডাই তো!
ওরা ভালোমানুষ না বলে কাদের মোল্লা কিংবা এই দলের অনুসারীদের নিয়ে বলতে পারে, কিন্তু আমরা কেন বলবো এটা "ওদের জায়গা থেকে ঠিক আছে"? কাদের মোল্লা বা এই জাতীয় জারজদের সম্পর্কে ভালো কথা তো দূরে থাক, ভালোর "ভ" বললেই সেটা বেঠিক, তা যে অবস্থান থেকেই হোক না কেন!

- জাস্ট এইটুকু বোঝাতে চেয়েছি গো সাক্ষী দাদা।

____________________________

তিথীডোর এর ছবি

সবার প্রথমে,
সচলে স্বাগতম জয়দেঁতো হাসি

নিক/ নাম যা ব্যবহার করে লিখতে চাও, সেটা উল্লেখ করোনি কেন? বোঝাই গেল, স্পেল চেকার আর 'সচলে লিখতে হলে' লিঙ্ক সরবরাহ করিয়া যে ওয়াজ-নসিহত করিয়াছিলাম, সেগুলোতে বিশেষ দৃষ্টিপাত করোনি। চোখ টিপি

মৃত্যু ভয়েই হোক আর ধর্মের দোহাই দিয়েই হোক

কসাই কাদেরের মতো নৃশংস রাজাকার পাকিদের পা চেটেছে মরার ভয়ে? ধম্মো শেখায় দু-আড়াই বছরের শিশুকে মেঝেতে আছড়ে মারার কায়দা? বুঝেশুনে পূর্ণ আনুগত্যের সঙ্গে যে নিজের দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে গেছে আজীবন, তাকে কোমল চোখে দেখে বেনিফিট অফ ডাউট দেয়ার লজিক তো নেই।

বাঙালি জাতীয়তাবাদ থেকে হামিদ মীর বা অন্য যেকোন পাকির মতবাদ মেনে নেওয়া খুব কষ্টের বেদনাদায়ক, এখানে এদের মতবাদ মেনে নেওয়ার প্রশ্নই বা উঠবে কেন!

নিয়মিত লেখো।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অনেক ঘন লেখা... দুর্বল চোখের আর ততোধিক দুর্বল মনোযোগের পাঠকের জন্য খুব কঠিন... মন খারাপ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

Emran  এর ছবি

পৃথিবীতে অনেক আরবি দেশ উন্নতির চরম শিখরে উঠেছে শুধু তাঁদের প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য নয়, রাজনৈতিক দূরদর্শিতার জন্যে।

- মাটির নীচে তেল ছাড়া বড়লোক হতে পেরেছে, এমন একটা আরবি দেশের নাম বলতে পারবেন?

যদি বাংলাদেশ এর দুই বড় রাজনৈতিক দল মিলে একটা দল করা যেতো, আমার বিশ্বাস বাংলাদেশ পুরো মুসলিম বিশ্বের আদর্শ হত।

-বাংলাদেশকে কেন মুসলিম বিশ্বের আদর্শ হতে হবে?

এমন মুসলিম প্রধান দেশ এর উদাহরন বিরল যেখানে সব ধর্মের মানুষ নির্দ্বিধায় তাঁদের নিজ নিজ ধর্ম, জীবন পালন করছে, কেউ কারো ক্ষোভের কারন না হয়ে।

-আপনার কি মনে হয় না যে মুসলমানরা তাদের ধর্ম নিয়ে অনেক বেশী obsessed? যে তাদের কাছে সবার চেয়ে ইসলাম বড়?

আশাই আছি বাংলাদেশ এ কখন এমন ধর্মের রাজনীতি না হয়ে সু-শাসনের রাজনীতি হবে।

-যখন বিবর্তনের ধারায় আমাদের কাছে ধর্ম হবে গৌণ এবং জাতীয়তা হবে মুখ্য, তখন।

আয়নামতি এর ছবি

সচলে স্বাগতম জয়(তিথী মারফত জানা গেলু) হাসি
প্রথম পোস্টে ভুলত্রুটি থাকবেই। তবে তথ্যগত ক্ষেত্রে যত্নবান হওয়ার অনুরোধ থাকলো।
লিখুন হাত পা খুলে।

অরণ্য  এর ছবি

ধন্যবাদ সবাই-কে। আমার পথ চলাই চলতে শেখানোর জন্যে এবং ভুল গুলো শুধরে দেওয়ার জন্যে।

" আরবি দেশের ব্যাপারে " এটা সম্পূর্ণ আমার নিজের ধারনা। কিংবা আমার বুঝার ভুল ও হতে পারে। পরিবেশ বিষয়ক কিছু কনফারেন্স এ গিয়ে শক্তিশালী কিছু আরবি দেশের ( সৌদি আরব, দুবাই, কুয়েত, কাতার) কথা বার্তা শুনে মনে হয়েছে। হয়ত তেল এর জন্যেই সব কিছু। আবার হয়ত অঢেল অর্থ আছে বলেই পশ্চিমা দেশ গুলো এই উন্নত আরবি দেশ গুলোকে নিয়ে সমালোচনার বাইরে রাখে কিংবা সমীহ করে চলে। সমীহ'র ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই।

" ওঁদের জায়গা থেকে ঠিক আছে " কুকুর এবং মনিবের সম্পর্কের সাথে মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কের একটা বিশেষ মিল আছে। কুকুর যেমন মনিবের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে তেমনি সেই কুকুরের মৃত্যুতে মানুষ ও শোক করে। এটা বোঝাতেই এই কথাটা বলতে চেয়েছিলাম, যদিও এই শোক প্রকাশ করা মানুষগুলো ও কুকুরের চেয়ে কম ঘেউ ঘেউ করা প্রানি নয়।

" বাংলাদেশ এবং মুসলিম বিশ্ব " প্রথম প্রথম আমি নিজেও মেনে নিতে পারি নাই, বাংলাদেশ এর বাইরে আসার আগ পর্যন্ত জানতাম বাংলাদেশ একটি উদার গনতান্ত্রিক দেশ যেখানে সব ধর্মের মানুষ এক সাথে শান্তিতে বাস করে, কিন্তু বহু সংস্কৃতি'র সাথে মিশে দেখলাম বাংলাদেশ বহির্বিশ্বে একটি মুসলিম দেশ হিসেবে পরিচিত। আমি আইনের ছাত্র নয়, কিন্তু আইনের একটা কোর্সে দেখলাম প্রফেসর পর্যন্ত তাঁর বানানো স্লাইডে বাংলাদেশ কে দেখালেন ইসলামের আইনে চলা একটি দেশ। আমি জানি এটা একশত ভাগ মিথ্যা। আমি সঙ্গে সঙ্গেই কারেক্ট করেছিলাম কিন্তু এখন বুঝি এটা বাইরে প্রচার হয়ে গেছে বাংলাদেশ ইসলামের আইনে চলে। এই যে প্রচার হয়ে একটা ধারনে তৈরি হয়ে গেলো এটার জন্যে কারা দায়ী। আমার এক বড় ভাই ভিসা এক্সটেনড করতে গেলে ফর্মালিটি শেষে অফিসার তথ্য সম্বলিত একটা বই দেই উনাকে পড়তে যেটা আরবি তে লেখা। উনি বলেছিলেন আমি তো আরবি বুঝি না, ইংরেজি থাকলে দেন। ওই অফিসার ও বাংলাদেশী বলতে বুঝে ইসলামি দেশ। আমার এক বন্ধু একবার আমার এক ছবি তুলছিল। পিছনে বসে ড্রিঙ্কস করছিল কিছু আরবি দেশের বখাটে ছেলে। খুব সম্ভবত মরক্কো, তিউনিসিয়া এবং সিরিয়ার। হঠাৎ ওরা আমার বন্ধু টির দিকে তেড়ে আসলো। ওরা ভাবল ওঁদের ছবি তুলছে। ওরা ভয় পেলো যদি এই ছবি পুলিশ কে দেই তবে ওঁদের সমস্যা হবে। আমার বন্ধুটি বুঝাল নাহ, আমার মোবাইল চেক কর আমি তোমাদের ছবি তুলছি না। ওরা কিছুতেই বিশ্বাস করছিল না। শেষে আমার বন্ধুটি তাৎক্ষণিক বলল দেখ আমি মুসলমান, আমি মিথ্যা বলছি না। ওরা বলল তুমি কোন দেশ থেকে আসছ? আমার বন্ধুটি বলল বাংলাদেশ। তখন ওরা শান্ত হয়। আজকে হেলথ ইন্সুরেন্স এর অফিসে এক পশ্চিম আফ্রিকার মানুষ এর সাথে দেশ নিয়ে কথা বলাতে সে বলল তোমার দেশ ইসলামি দেশ কিন্তু কেন ইসলামি নেতা কে ফাঁসি দিল। তখন আমি তারে বুঝাইলাম। কাদের মোল্লা ইসলামি নেতা হয়ে গেলো, ইসলামের রক্ষক এবং সেবক হয়ে গেলো। এইযে বিভিন্ন দেশের মানুষ ইসলামের রক্ষক ের ফাঁসি দিল বলে বাংলাদেশ কে ভাবছে ইরাকের মতো এই দায়িত্ব কে নিবে?

EMRAN, আমি আপনি ভাবলে কিছুই হবে নারে ভাই, বাংলাদেশ এর অনেক শিক্ষিত আমার আপনার বয়সী কিংবা অধিক জ্ঞ্যানী মানুষ বাঙালি জাতীয়তা বাদ কিংবা ধর্ম নিরপেক্ষতার চেয়ে ইসলাম এর আদর্শে বাংলাদেশ গড়াই বেশী প্রত্যয়ী। আমার লেখাটা ছিল মুলত তাঁদের উদ্দেশ্য করে। খুব কাছের জানাশোনা অনেক শিক্ষিত মানুষ ও যখন দেখি এমন পোস্ট দেই, যুদ্ধাপরাধির বিচার ও চান আবার ফাঁসি নিয়ে হামিদ মীর কিংবা ইমরান খান এর লেখা শেয়ার দেই, আর জামায়াত ইসলামি তে বিশ্বাসী মানুষগুলোর কথা বাদ ই দিলাম।

এই সব কিছু দেখেই বাধ্য হয়ে সেই লাইনটা লিখলাম " এমন মুসলিম প্রধান দেশ এর উদাহরন বিরল যেখানে সব ধর্মের মানুষ নির্দ্বিধায় তাঁদের নিজ নিজ ধর্ম, জীবন পালন করছে, কেউ কারো ক্ষোভের কারন না হয়ে। "

সবাইকে আবার ও অনেক কৃতজ্ঞ চিত্তে ধন্যবাদ, আমাকে শেখার সুযোগ দেওয়ার জন্যে।

Emran  এর ছবি

সমীহ'র ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই।

প্রধান পশ্চিমা দেশগুলি এই তেলসমৃদ্ধ আরব দেশগুলিকে (যেগুলি মূলতঃ glorified পেট্রোল পাম্প ছাড়া আর কিছু না) গুরুত্ব দেয় তাদের ভু-রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে। ২য় বিশ্বযুদ্ধের আগে এই দেশগুলি ছিল গ্রেট ব্রিটেনের protectorate; ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরে এখন এগুলি হয়েছে মার্কিন protectorate। নিজের নিরাপত্তার জন্য যে দেশকে বিদেশী শক্তির ওপর নির্ভর করতে হয়, সেই দেশকে আর যাই হোক, সমীহ করা সম্ভব না। আর আশা করি আপনি desert nigger শব্দযুগল এবং এটা কাদের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়, সেটা জানেন।

মিজান এর ছবি

আপনার লেখার ব্যাপারে তো অনেকেই কথা বলল। ভালো খারাপ না বলে অন্য বিষয়ে আপনাকে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে , " ব্লগে লেখনীর সূচনার জন্য সাধুবাদ "। ভালো লিখবেন এবং নিজ নিক এ লিখবেন এই আমার প্রত্যাশা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।