পাকিস্তানের সাম্প্রতিক আচরণ – এটি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না।

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১৮/১২/২০১৩ - ৯:২৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কাদের মোল্লার ফাঁসির মধ্য দিয়ে নাকি পাকিস্তানের পুরনো ক্ষতকে জাগিয়ে তোলা হয়েছে। এই কাদের মোল্লার নাকি অপরাধ ছিল সে অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রতি অনুগত ছিল। আজ ৪২ বছর পর যদি তোদের এমন বধোদয় হয়ে থাকে তাহলে কেন এতগুলো বছর এই পিশাচগুলোকে এদেশে ফেলে রাখলি তোরা? নিয়ে যেতে পারলি না তোদের পাকিস্তানে। উপরন্তু আমাদের ক্ষতের উপর মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে রাজাকারকুলশিরমণি গোলাম আজমকেও পাঠিয়ে দিলি বাংলাদেশে। এখন তো সত্যিই জানতে ইচ্ছে করে এসবের মাঝে কি অন্য কোন মতলব লুকিয়ে ছিল?

সন্দেহ নেই, আমাদের সময়টা এখন অনেক দুর্যোগপূর্ণ। এদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে একটি ক্রান্তিলগ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সবকিছুর আগে তো দেশ, তাই না? ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তাদের দোসরেরা মিলে যে গণহত্যা চালিয়েছিল সেই ক্ষত তো আমাদের বুক থেকে এখনও মিলিয়ে যায় নি। এই মাটিতে কান পাতলে এখনও শোনা যাবে আর্তনাদের ধ্বনি। ১৯৭১ সালের পর ওরা পশ্চিম পাকিস্তানে আমাদের চার লক্ষ মানুষকে জিম্মি করে ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় এই বলে যে পাকিস্তানী সৈন্যদের বিচার করার অধিকার বাংলাদেশের নেই। ওরা ১৯৭৪ সালের ২৪ মার্চ সব বাঙালী পরিবার বাংলাদেশে পাঠানোর কাজ সম্পন্ন করে এবং বাংলাদেশ সরকার এই ১৯৫ জনের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ এবং প্রমাণগুলোও ওদের হাতে দিয়ে দেয় যেন পাকিস্তানে এইসব যুদ্ধাপরাধীর বিচার করা সম্ভব হয়। তাদের সাথে বোঝাপড়া এভাবে হয় যে এইসব পাকিস্তানী সৈন্যদেরকে পাকিস্তান নিজে শাস্তি দেবে। তথ্যসূত্র উল্লেখ করছি আপনাদের জ্ঞ্যাতার্থেঃ

  • Pakistan to Allow 10,000 to Return to Bangladesh, The New York Times, Nov 23, 1972; page. 15
  • India and Bangladesh Offer Plan For End of Deadlock on Prisoners, The New York Times, Apr 18, 1973, page. 97
  • Repatriation Is Completed For Bangladesh Nationals. The New York Times, Mar 25, 1974; page. 8

আশা কিন্তু গত ৪২ বছরেও পাকিস্তানীরা তাদের কথা রাখে নি। ওরা কোন বিচারিক প্রক্রিয়া তো দূরে থাক বরং মুক্তি পাওয়া সৈন্যদের সংবর্ধনা দিয়েছে বলেও শোনা গিয়েছে। এরপর বাংলার একজন বিশিষ্ট জেনারেলের (উনাকে দেয়ার মত কোন উপমা পাচ্ছি না বলে দুঃখিত) শাসনামলে এদেশে বিষবৃক্ষ রোপন করে জামায়াতে ইসলামী। এই ভদ্রলোক নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গোলাম আজমের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণের প্রথম ধাপটি নিজ দায়িত্বে সম্পাদন করে দেন। পবিত্র সংবিধানের মৌলিক অংশে বেয়নেট চার্জ করা হল। ফলশ্রুতিতে এদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে আজ দানবীয় রূপ লাভ করেছে সেই জামায়াতি ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন - ছাত্র শিবির। আজ এই দেশে ওদের কি নেই? আজকে পিয়াস করিম, আসিফ নজরুল, ব্যরিস্টার রফিকের মত বুদ্ধিজীবি যেমন আছে ওদের পাশে একই সাথে ইসলামী ব্যংকের মত বিশাল আকৃতির অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছে। এদেশের তরুন সমাজ - যাদের দিকে তাকিয়ে আছে গোটা দেশ তাদেরই একটি বড় অংশ আজ জামায়াতের সমর্থনে কথা বলে। কখনও প্রকাশ্যে আবার কখনও তথাকথিতি জাতীয়তাবাদী কিংবা ভারত বিদ্বেষের নাম করে জামায়াতের সমর্থন করছে। এমনকি এই দেশে গজিয়ে ওঠা রাজনৈতিক মহাশক্তিগুলোও জামায়াতকে পাশে রাখতে চায় ভোটের রাজনীতির হিসাব কষে। আর জামায়াত হল সেই আগাছা যে নিজে যাকে জড়িয়ে উঠছে একদিন তাকে পূর্ণাঙ্গরূপে ধর্ষণ করে খোলসটা রেখে নিজেই বড় গাছের রূপ নেবে। প্রমাণ আমরা দেখতে পাচ্ছি ২০১৩ সালের জাতীয়তাবাদী শক্তির ধারক বাহক বিএনপির অবস্থা থেকে।

এতগুলো কথা আজ বলা প্রয়োজন ছিল না, শুধু বলছি এই কারনে যে - ১৯৭১ সালে পাকিস্তান এবং তাদের দোসরেরা আমাদের বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করেও এই দেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যহত করতে পারে নি। এই দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা পাকিস্তানের চাইতে অনেক উন্নত। আমরা আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব গৌরবের সাথে গত ৪২ বছর ধরে রেখেছি। আমাদের কোন আমেরিকা কিংবা ভারতের সহায়তা লাগে না সীমান্ত রক্ষা করতে। ভারত-পাকিস্তান দেশ ভাগের পর থেকে কখনই পাকিস্তান আমাদেরকে ভালো চোখে দেখে নি। ওদের চোখে আমরা ছিলাম একটি অধীনস্থ কলোনীর মত। আজ আমাদের এই উন্নতি ওদের চোখ চকচকে করে দিচ্ছে। এই দেশের মেধাস্বত্তাকে ১৯৭১ সালে হত্যাকান্ডের মাধ্যমে ধ্বংস করতে না পেরে এখন নেমেছে মগজ ধোলাই কর্মকান্ডে। ঠিক ১৯৭১ সালের মত করেই এদেশীয় দোসরদের সাথে নিয়ে। শুধু নামেই পরিবর্তন - তখন ছিল রাজাকার, আল বদর এখন আছে জামায়াতে ইসলামী এবং ওদের নানা রকম প্রতিষ্ঠান।

২০১৩ সালে এসে এই জাতি যখন আত্মশুদ্ধিতে নেমেছে রাজাকারগুলোকে ধ্বংস করে দেয়ার প্রত্যয়ে তখন কেন পাকিস্তানের এত শরীর জ্বলছে? এর উত্তর খোঁজার আগে কিছু তুলনামূলক বিশ্লেষণে যাই।

  • ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন পাকিস্তানীরা ধর্মের দোহাই দিয়ে অনেক মানুষকে দ্বিধাবিভক্ত করার চেষ্টা করেছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলগুলো ঠিকমত দেখলে ব্যপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। অনেক মানুষকে ওরা মুক্তিবাহিনীর প্রতি বিরূপ করেছিল শুধু ইসলাম রক্ষার ধুয়া তুলে। আজ ২০১৩ সালের শাহবাগের গনজাগরণ মঞ্চের বিপ্লবকে কিন্তু জামায়াত-হেফাজত-বিএনপি মিলে একই ভাবে ধর্মীয় রূপ দিয়ে বিভাজিত করে দিয়েছে। পার্থক্য শুধু এখানে যে - ১৯৭১ সালে আমাদের তথ্যপ্রযুক্তির এত বিকাশ ঘটে নি, তাই ওরা খুব কমই প্রপাগান্ডা চালিয়ে সুবিধা পেয়েছে। পক্ষান্তরে মানুষ সরেজমিনে সবকিছু দেখে নিজের বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু ২০১৩ সালে আমাদের প্রজন্মের অদক্ষতায় দেশের একটি নির্বোধ ও ধর্মান্ধ জনগোষ্ঠি এই আন্দোলনের ব্যপারে বিরূপ মনোভাব পোষণ করে। অদক্ষতা বলছি এই কারনে যে - আমরা মাঠ পর্যায়ে কেউই এই প্রপাগান্ডার বিরুদ্ধে কাজ করি নি। যা হয়েছে শুধু সামাজিক যোগাযোগ এবং বেসরকারী মিডিয়াগুলোতে যার প্রসার তৃণমূল পর্যায়ে কতটুকু সে ব্যপারে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

  • ১৯৭১ সালের পূর্ববর্তী সময়ে আমাদের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পাকিস্তানী এবং পাকিস্তান তোষণকারী পূর্ব পাকিস্তানীদের(ওদেরকে আমি বাঙ্গালী বলতে নারাজ) বসানো হয়েছিল। ঠিক তার অনুরূপ দৃশ্য বিগত জামায়াত-বিএনপি সরকারের আমলে দেখেছি। প্রশাসনের সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন পদগুলো পর্যন্ত জামায়াতপন্থীদের দৌরাত্ব ছিল। অন্যদিকে আজকের দিনে সমসাময়িক বেসরকারী ব্যংকগুলোর চাইতে ইসলামী ব্যংকের ক্রেডিট রেটিং অনেক ভালো। ওদের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে উন্নতির চরম শিখরে পৌছে যাচ্ছে। শুধু একটা কথাই চিন্তা করে দেখুন - ইসলামী ব্যংকের বিরুদ্ধে জঙ্গী অর্থায়নের প্রমাণ পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা কিন্তু এর পরেও কেউ ওদের একটি চুলও বাঁকা করতে পারছে না কেন?

আজকে বিচারিক বিশ্লেষনে যেতে গেলে আমার মনে স্পষ্টত একটা কথাই আসে - এদেশে জামায়াতে ইসলামীর উত্থানের পেছনে অনেক বড়ো একটা ষড়যন্ত্র আছে। আমি কখনই নিশ্চিতভাবে বলব না যে পাকিস্তান এসে যুদ্ধ করে এদেশ দখল করে ফেলবে। একবিংশ শতকে এসে আমেরিকা আমাদের শিখিয়েছে কিভাবে একটি দেশ পুরোপুরি নিজের দেশের অংশ না করেও ভোগ দখল করা যায়। আজকের আফগানিস্তান, ইরাক কিংবা লিবিয়ার কথাই ভাবুন। পাকিস্তান কিংবা পাকিস্তানের আব্বা হুজুর চীনের অথবা উড়ন্ত ঈগল আমেরিকার কাছে ভৌগলিকভাবেই বাংলাদেশ অনেক আকর্ষনীয় যায়গা। কারন এই ব-দ্বীপ থেকে একদিকে উদীয়মান ভারত, চীন অন্যদিকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দিকে বেশ ভালভাবেই নজর রাখা সম্ভব। সুতরাং এই কৌশলগত সুবিধা কেউ ছাড়তে চাইবে না। এদেশের বাঙালী জাতীয়তাবাদ (বিএনপি জামায়াতের র‍্যম্বো জাতীয়তাবাদ নয়) এর মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়ে একটি রাজনৈতিক অস্থিরতাময় পরিবেশ গড়ে তোলা গেলে ব্যপারটা আরও সহজ হয়ে যায়। আর এই এজেন্ডা যারা আজও নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাচ্ছে সেই জামায়াতের একজন নেতার মৃত্যুদন্ড দেয়ার মানে হল একদিকে জনতার মনোবল বাড়িয়ে দেয়া অন্যদিকে জামায়াতীদের মনোবলের মুখে চপেটাঘাত। পাকিস্তানী বেঈমানেরা নিশ্চই চাইবে না ওদের তল্পিবাহকদের এমন দুর্দিন আসুক।

পাকিস্তানের এই কাদের মোল্লা প্রীতি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর পেছনে অনেক সূদুরপ্রসারী চিন্তাভাবনা রয়েছে। এখনি সময় এই ছাগলপ্রেমী পাকিস্তানকে (ওদের জাতীয় পশু কিন্তু আসলেই ছাগল) বুঝিয়ে দেয়ার যে এই দেশ এখন আর পূর্ব পাকিস্তান নেই। এই দেশ স্বাধীন বাংলাদেশ, আমাদের বাংলাদেশ। এই দেশের মাটিতে আমরা আমাদের মা-বোনদের ইজ্জত লুন্ঠনকারী, বাপ-ভাইদের হত্যাকারী রাজাকার এবং তাদের দোসরদের নিশ্চিহ্ন করে ছাড়ব। কোন পাকিস্তান, মানবাধিকার, জাতিসঙ্ঘ কিংবা ছাতিসঙ্ঘের কথায় এই দেশ চলবে না। দেশ আমাদের, আমরাই এই দেশ থেকে কলংকের কালি মুছব। এজন্য কারও সমর্থন বা সাহায্য পাওয়ার জন্য আর কোন অপেক্ষা আমরা করব না। ১৯৭১ এর চেতনায় উদ্ভাসিত হোক আমাদের তরুণ প্রজন্ম এই আমার প্রার্থনা।

-- দাঙ্গাবাজ


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

১৯৭১ এর চেতনায় উদ্ভাসিত হোক আমাদের তরুণ প্রজন্ম এই আমার প্রার্থনা।

চলুক

শব্দ পথিক

অতিথি লেখক এর ছবি

আজকে পিয়াস করিম, আসিফ নজরুল, ব্যরিস্টার রফিকের মত বুদ্ধিজীবি

আপনি ঠিক আছেন তো দাদা, এইগুলারে বুদ্ধিজীবী বলা হইলে তো বুদ্ধিজীবীদের অপমান করা হবে।

=সৌ রভ

অতিথি লেখক এর ছবি

কি করব বলুন? আজকের দিনে বুদ্ধিজীবি আর দালাল যে এক হয়ে একাকার হয়ে গেছে। বুদ্ধিজীবি শব্দটাই একটা গালিতে পরিণত হয়েছে। এখন বলা লাগে শিক্ষাবিদ, প্রযুক্তিবিদ, অর্থনীতিবিদ....বুদ্ধিজীবি শব্দটা এখন যাকে বলবেন সে এটাকে গালি হিসেবে ধরলে কিন্তু আসলেই আপনি তাকে দোষারোপ করতে পারবেন না খাইছে

-- দাঙ্গাবাজ

আয়নামতি এর ছবি

এরপর বাংলার একজন বিশিষ্ট জেনারেলের (উনাকে দেয়ার মত কোন উপমা পাচ্ছি না বলে দুঃখিত) শাসনামলে এদেশে বিষবৃক্ষ রোপন করে জামায়াতে ইসলামী।

বিশিষ্ট জেনারেলের নামটি বলতে দ্বিধা কেন? স্বাধীন বাংলাদেশে এসে পাকি সন্তান হামিদ মীর যদি টিভির ঠক শো'তে(আমি যদিও দেখিনি ওটা, এই সচলেই কারো মন্তব্য পড়ে জেনেছি) বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে 'ধুয়ে দেবার' সাহস দেখাতে পারে, তবে আপনার কিসের দ্বিধা! প্রাক্তন প্রেসিডেণ্ট জেনারেল জিয়াউর রহমানের এ‌ই ভূমিকা তো বানোয়াট কোনো ব্যাপার না ভাই।

আমরা মাঠ পর্যায়ে কেউই এই প্রপাগান্ডার বিরুদ্ধে কাজ করি নি। যা হয়েছে শুধু সামাজিক যোগাযোগ এবং বেসরকারী মিডিয়াগুলোতে যার প্রসার তৃণমূল পর্যায়ে কতটুকু সে ব্যপারে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

সন্দেহের কিছু নাই আসলে। তৃণমূল পর্যায়ে আমাদের চেয়ে রাজাকার আর তাদের পা'চাটারা অনেক এগিয়ে।
শহরাঞ্চলের বাইরের সাদাসিদে মানুষগুলোর কাছে জামাত ইসলাম পালনকারী 'সেইরাম' একটা দল।
সাঈদী ব্যাটা ধর্মপুত্তুর যুধিষ্ঠির। যে কারণে তার চাঁদমুখ চান্দে দেখার জন্য হুলোহুলি পড়ে যায়।
শুধু তৃণমূল পর্যায়েই না রে ভাই ফেবুতে বাঁশের কেল্লার একনিষ্ঠভাবে প্রোপাগাণ্ডার বিরুদ্ধে আমরা কী ঠিক সেভাবেই সক্রিয়? সে কিন্তু চন্দ্র সূর্যের নিয়ম মেনেই তার মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে যুক্তিযুক্ত সত্যি ঘটনাগুলোকে সেভাবে কী তুলে দিয়ে ঝামা ঘষে দিতে পারছি আমরা?

দেখেন ভারত যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত তাদের ডিপ্লোম্যাটের সাথে করা আচরণের ব্যাপারে সরকারী এবং বিরোধীপক্ষ এক সুরে প্রতিবাদ করেছে সেখানে আমরা কী করছি? কাদের ইস্যুতে পাকিস্তানের দুঃসাহস দেখাবার ক্ষেত্রে টুঁশব্দটি শোনা যাচ্ছে কী বিরোধী বা বামাতি কিংবা সুশীর সমাজের পক্ষ থেকে?
উল্টে ইইউ ডিপ্লোম্যাটেদের স্মৃতিসৌধে না যাওয়া নিয়ে বগল বাজ্জাচ্ছি। এতটা আজব কেন রে ভাই আমরা!

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে যুদ্ধ করতে আসা হারুপাট্টির হিসেব ছাড়া এবং আমাদের কিছু পাওনা আছে সেগুলোর মীমাংসা বাদে পাকিস্তানের নামটা মনে করা আমাদের জন্য দুঃখজনক, লজ্জাস্কর এবং ক্ষোভের।

অতিথি লেখক এর ছবি

দ্বিধা নয় আপা, ব্যপারটা হল এই লোকের নাম নিতে ইচ্ছে হয় না, আবার তাকে দেয়ার মত উপমাও খুঁজে পাই না।

-- দাঙ্গাবাজ

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

কয়দিন আগে ফেসবুকে একজনের জিয়াখোঁচানো স্টেটাসে আরেক সুশীল এসে বলল, ভাই, এইসব আলোচনার মধ্যে বঙ্গবন্ধু আর মেজর জিয়াকে না টানলে হয় না। উনাদেরকে বিতর্কের বাইরে রাখেন।
আমি আলোচনাটা আগের মতো পাশ কাটিয়ে যাই নি। ইদানিং আর পাশ কাটিয়ে যাই না। বললাম, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটা বিখ্যাত উপন্যাস আছে "সেই সময়" নামে, সেখানে কোলকাতার তখনকার কথ্য ভাষার অনেক মজার উদাহরণ আছে। আমরা যেমন বলি, কই লিভারপুল আর কই হাতিরপুল! তখনকার দিনে বলত, কোতায় চাঁদে আর কোতায় গোদা বাঁদরের পোঁদে...
বঙ্গবন্ধুর পাশে যখন দ্বিতীয় নেতা হিসেবে কেউ মেজর জিয়ার নাম তোলে, আমার তখন সেই উপমাটার কথাই মনে পড়ে!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই আমি আপনার সাথে সহমত। কিন্তু কারন বের করতে গেলে সবার আগে দোষটা পড়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপর। যে দলে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, একে ফজলুল হকের পরের প্রজন্মে বঙ্গবন্ধুর সাথে তাজউদ্দীন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যপ্টেন মনসুরের মত বিজ্ঞ এবং মহান নেতারা ছিলেন; যাদের উপর সত্যিকার অর্থেই বঙ্গবন্ধু নির্দ্বিধায় নির্ভর করতেন তাঁদের কারও কথা আওয়ামী লীগ আজ বলে না। আমাদের তরুণ প্রজন্মের কয়জন এই মহান নেতাদের কীর্তি জানে? ঠিক এই শূণ্যস্থানেই তথাকথিত জাতীয়তাবাদীরা জিয়াকে বসিয়ে তার পূজা করে যাচ্ছে। জানি, আমার আপনার বলায় আসলে কিছু হবে না। কারন - বঙ্গবন্ধুর পর একদিন শেখ হাসিনাকে দ্বিতীয় নেতার স্থানে বসানোর চেষ্টা হবে কিন্তু তবুও বাঙ্গালী জাতির মুক্তিসংগ্রামের এই অগ্রদূতেরা চিরদিন নিরবে নিভৃতেই থেকে যাবেন।

-- দাঙ্গাবাজ

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

আপনার লেখা দারুণ লাগল দাঙ্গাবাজ। গোছানো লেখা। প্রতিটি কথাই নিদারুণ সত্য। লিখুন আরো। পড়ার আশায় রইলাম।

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

অতিথি লেখক এর ছবি

এটা খুব সম্ভবত আমার তৃতীয় বা চতুর্থ বাংলায় লেখা ব্লগ। অনেক কষ্ট হয়েছে যদিও ইংরেজি এড়িয়ে বাংলায় লিখতে তবুও আপনাদের কাছে ভাল লেগেছে শুনে সত্যিই অনেক অনুপ্রাণিত বোধ করছি। খুব শীঘ্রই আরও লিখব ইনশাল্লাহ!

-- দাঙ্গাবাজ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।