স্মার্টফোন কিভাবে আপনার পৃথিবী বদলে দিতে পারে

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ০৮/০২/২০১৪ - ৯:২৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সচলায়তনে কিছুদিন আগের একটা লিখা পড়লাম "স্মার্টফোন কি আসলেই দরকার"। বেশ চমত্কার একটা লিখা কারণ লেখক নিজের তার নিজের দিকগুলো বিবেচনায় এনে খুব কাঠামোগতভাবে লিখাটি লিখেছেন। তবে উপসংহারে এসে আমার মনে হলো যারা স্মার্টফোন এখনো ব্যবহার করেন নি তাদের মনে হতে পারে এই জিনিসটা তো একদমই বেকাজের। তাই আমি নতুনদের কথা বিবেচনায় রেখে আমার নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে স্মার্টফোন বিষয়ে কিছু বলতে চাই।

আমি জার্মানিতে থাকলেও বাংলাদেশের স্মার্টফোন মার্কেট সম্পর্কে প্রতিনিয়ত ভালই খোঁজখবর নেই। কারণ আমি এই জিনিসটির প্রতি বেশ উত্সাহী একজন মানুষ। স্মার্টফোন আসলে অনেকটা হাতুড়ির মত। আপনি যদি ব্যবহার করতে না জানেন তবে তার কোনো মুল্য নেই। আবার হাতুড়ি ব্যবহার করে যেমন অসাধারণ একটা ভাস্কর্য তৈরী করে ফেলতে পারেন, স্মার্টফোন কাজে লাগিয়ে জীবনকে করে ফেলতে পারেন অনেক সহজ, আরামদায়ক এবং উন্নত। আবার হাতুড়ি ব্যবহার করে ভেঙ্গে ফেলতে পারেন অতি মূল্যবান একটা জিনিস। স্মার্টফোন ব্যবহার করার ফলেও জীবন হয়ে উঠতে পারে দুর্বিষহ। কিভাবে? আসুন যাওয়া যাক খুঁটিনাটিতে।

ক্যামেরা: আপনার স্মার্টফোনে ভালো কোয়ালিটির একটা ক্যামেরা থাকলে মোবাইল ফটোগ্রাফি হতে পারে আপনার নতুন একটা হবি। এছাড়া ভিডিও ক্যামেরা ব্যবহার করে রেকর্ড করতে পারেন যেকোনো চমত্কার একটা ভিডিও। তবে এর জন্য আপনাকে সৃজনশীল হতে হবে অথবা আকর্ষনীয় কোনো কিছুর খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমন করতে হবে। উন্নত বিশ্বে ইউটিউবে ভিডিও আপলোড ও মনেটাইজ করে বা অনলাইন ইমেজ ব্যাঙ্কগুলোতে ছবি বিক্রি করে টিনএজাররা পর্যন্ত খুব সুন্দরভাবে জীবিকা নির্বাহ করছে। আবার অনেকে সৃজনশীল না হওয়ায়, ধৈর্য বা প্রতিভা না থাকায় আঙ্গুর ফল টক বলে হা হুতাশ করছেন।

জিপিএস: আমি নতুন কোনো শহরে বা দেশে গেলে প্রায় ১০০% সময়েই এক রাস্তা থেকে অন্য রাস্তায় গেলে আর ফিরে আসার সঠিক পথ মনে রাখতে পারি না। এমনকি বিগত সাত বছর যাবত বার্লিন শহরে থাকলেও আমি এই শহরের রাস্তায় বের হলে প্রায়ই নিজেকে হারিয়ে ফেলি। আমি ছোটবেলা থেকেই এমন। জিপিএস আমার শত ঘন্টা বাঁচিয়েছে এবং দূর করেছে মাথাব্যথা। এছাড়া জিপিএস ব্যবহার করে সহজেই আশেপাশের রেস্টুরেন্ট, শপিং মল, বিভিন্ন দোকান ইত্যাদি খুঁজে বের করা যায় খুব সহজেই। কিন্তু আপনি যদি জিপিএস এর প্রতি খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন তখন দেখা যাবে একসময় রাস্তা না দেখে মোবাইল স্ক্রীনে জিপিএস এর দিকে তাকিয়ে পথ চলা শুরু করেছেন।

গেমস: অফিসে কাজের মধ্যে প্রায়ই চাপ আসে এবং অনেক সময় আত্মবিশ্বাসের উপরে এই চাপ কিছুটা প্রভাব ফেলতে শুরু করে। তখন আমি টয়লেটে গিয়ে দরজা লাগিয়ে ৫-১০ মিনিট স্টিক ক্রিকেট বা ডুডল জাম্প এর মত গেম খেলি যাতে আমি খুব ভালো স্কোর করতে পারি। এতে মাথা ঠান্ডা হয়ে যায় এবং ঝটপট নিজের উপরে ১০০% আস্থা ফিরে আসে। এই মেথড আমাকে বহুদিন আমার প্রফেশনে সহায়তা করে আসছে। কিন্তু আপনি যদি অফিসে কাজ ফেলে ৮ ঘন্টার মধ্যে চার ঘন্টা গেম খেলে কাটিয়ে দেন তবে অন্য কথা।

অ্যাপ: নাবিক হলে কম্পাস অ্যাপ সহায়তা করতে পারে রাতে দিক নির্ধারণ করার, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারকারী হলে ঢাকা বাস ম্যাপ সহায়তা করবে আপনার রুটের বাস খুঁজে বের করার, স্কাই ম্যাপ আপনাকে লাইভ দেখাবে তারার অবস্থান, ফাস্ট নোটপ্যাড এ লিখে সেভ করে রাখতে পারেন যে কোনো কুইক নোট, ফ্ল্যাশলাইট অ্যাপ দিবে অন্ধকারে অতি উজ্জল আলো, মিরর অ্যাপ দিয়ে মোবাইল স্ক্রীন বানিয়ে নিতে পারেন এইচডি আয়না, বিভিন্ন ভাষা অ্যাপ ব্যবহার করে শিখে নিতে পারেন বিভিন্ন দেশের ভাষা, মুসলমান এবং ধার্মিক হলে বাংলা কুরআন শরিফ অ্যাপ দিয়ে যেকোনো সময়ে যে কোথাও (অজু করে) পড়ে নিতে পারছেন কুরআন শরিফ। এমনি হাজারো রকমভাবে বিভিন্ন অ্যাপ হাজারো রকমভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু যদি মনে করেন ফেসবুক অ্যাপ ব্যবহার করে সবকিছু ফেলে রেখে আপনার নিউজ ফিডে নতুন পোস্ট দেখার জন্য আর লাইক দেবার জন্য তাকিয়ে থাকতে পারেন ঘন্টার পর ঘন্টা তখন কিছুই বলার নেই।

মোবাইল ইন্টারনেট: স্মার্টফোন হাতে থাকলে এবং মোবাইল ডাটা একটিভ থাকলে আপনি বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ জায়গা থেকেই ব্রাউস করতে পারবেন ইন্টারনেট। এতে স্কাইপ, লাইন বা ভাইবার এর মত এপ্লিকেশন ব্যবহার করে করতে পারেন ইন্টারনেট টু ইন্টারনেট ফ্রি কল। বা ওয়াটস অ্যাপ এর মাধ্যমে ফ্রি এসএমএস। এছাড়া যেকোনো সময় গুগল বা উইকিপিডিয়া ব্রাউস করে জেনে নিতে পারছেন অনেক ধরনের তথ্য। কিন্তু এই ইন্টারনেট দিয়েই আবার চ্যাট রুমে ঢুকে ঘন্টার পর ঘন্টা ভার্চুয়াল কলিগদের হাই হালো বলে অপচয় করা যায়। যাদের বেশিরভাগই ফেইক, রেসপন্স করে না বা করলেও পরেরদিন আর দেখা যায় না।

স্মার্টফোনের সকল উপকারিতা সম্পর্কে লিখতে গেলে Augustin Courbé এর Artamène ou le Grand Cyrus নোভেলের মত সাইজ হয়ে যেতে পারে। তাই এই পর্যন্তই। তবে আশা রাখি আমার বক্তব্য আমি বুঝতে সক্ষম হয়েছি। এটা সচলায়তনে আমার প্রথম লেখা তাই ছোটখাটো কোনো কিছু কমিউনিটি গাইডলাইনের বাহিরে হয়ে গেলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি।


মন্তব্য

তানিম এহসান এর ছবি

টাচ স্ক্রিন এর সাথে এখন-ও সহজ হতে পারছি না কেন জানি। পৃথিবী এখন মোবাইল-মুঠোতে বন্দি!

অতিথি লেখক এর ছবি

'স্মার্টফোন কিভাবে আপনার পৃথিবী বদলে দিতে পারে' আর্টিকেলের লেখক - Milonkhan

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রথম লেখায় অভিনন্দন আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
লেখার নিচে লেখকের নামখানি দিবেন পরের বার, যাতে লেখককে পরের বার চেনা যায়। শুভেচ্ছা

মাসুদ সজীব

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। নাম দেবার কথা ভুলে গিয়েছিলাম।

- Milonkhan

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি

- Milonkhan

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি সচলায়তনে টাইপ করে স্বাচ্ছন্দ বোধ করতে পারছি না। তাই গুগল ইনপুট টুলস ব্যবহার করে লিখছি।

আপনার অনুপ্রেরণার জন্য অনেক ধন্যবাদ। হাসি

- Milonkhan

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

সচলায়তনে স্বাগতম।

আপনার লেখার স্টাইলটা ভালো লাগলো। কিন্তু লেখার বিষয়বস্তুর কারণেই কিনা জানি না, এটাকে অনেকটা টেকটিউনসের টিউন বলে মনে হচ্ছে। আর আপনার "খন্ড ৎ" এর বোতামে ঝামেলা হচ্ছে মনে হলো। সচলায়তনের ডিফল্ট স্থানে লিখলে দুবার টি (T) চাপলেই "ৎ" হয়ে যাবে।

আরো লিখতে থাকুন। আপনার কাছ থেকে প্রযুক্তি বিষয়ক আকর্ষনীয় পোস্ট আশা করছি।

ধন্যবাদ।

____________________________

শামীম এর ছবি

প্রথমেই আমার পূর্বের লেখার রেফারেন্স দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। সম্ভবত প্রায় ৪ মাস হতে চললো একটা এন্ট্রি লেভেল স্মার্টফোন নিয়েছি (Samsun Galaxy Young GT-S6312)। এটা থেকে যা উপকার পাচ্ছি সেগুলো নিম্নরূপ:

১। ইমেইল সিনক্রোনাইজেশন। আমার অফিস এবং পার্সোনাল ইমেইল সিনক্রোনাইজ করে রেখেছি। এজন্য অবশ্য মোবাইল ইন্টারনেটে সাবস্ক্রাইব করতে হয়েছে। এর ফলে কোনো একাউন্টে মেইল আসামাত্র নোটিফাইড থাকছি এবং সাথে সাথেই পড়ে নিতে পারছি। আগে জরুরী অফিসিয়াল নোটিশ মিস হয়ে যেত, দেখা যেত মিটিংএর নোটিশ পড়ছি মিটিং মিস করার পর।

২। এড্রেসবুক সিনক্রোনাইজেশন। মোবাইলে কারো নম্বর রাখামাত্র গুগলে সেটা সেভ হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া নাম্বারের সাথে চাইলে ছবি, ইমেইল এড্রেস ইত্যাদিও রাখা যাচ্ছে। লিমিটেড ক্যাপাসিটির এড্রেস বুক + ফোন হারিয়ে গেলে কন্টাক্ট হারানো একটা বিরাট চিন্তার বিষয় ছিল আগে।

৩। ক্যামেরা। যদিও এটার ক্যামেরাটা তেমন পদের কিছু না, তারপরেও রাস্তায় চলার সময়ে হঠাৎ হঠাৎ বিভিন্ন বিষয়ের ছবি তুলতে ইচ্ছা করলে সেটা তুলতে পারছি, ইনস্টান্টলি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারও করতে পারছি -- এটা একটা বিরাট উপকারী সোশালাইজেশন টুল। আগে দেখা যেত, হয় ক্যামেরা নাই, নাইলে ক্যামেরার ছবি নামিয়ে সাইজ করে আপলোড করতে করতে তাওয়া ঠান্ডা হয়ে যেত। এছাড়া অফিসিয়াল মিটিং-এ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আগের তোলা ছবি মোবাইল থেকেই অন্যদের দেখিয়ে দিতে পারছি যা আলোচনার পয়েন্টকে শক্ত করছে।

এখানে বলে রাখা ভাল, আমার বউও প্রায় একই দামের অন্য আরেকটা স্মার্টফোন নিয়েছে (নোকিয়া আশা ৩১১)। কিন্তু এড্রেস বুকের সুবিধা ছাড়া অন্য কোনো সুবিধাই ও পাচ্ছে না, কারণ ও মোবাইল ইন্টারনেটে সাবস্ক্রাইব করেনি। আমারটার মত সেইম ক্যাপাসিটির ক্যামেরাটা ব্যবহারেও ওর আগ্রহ শূণ্যের কোঠায়।

খুব কম ব্যবহার করা সার্ভিস:
ম্যাপ: কারণ আমার নিজের গাড়ি বা মোটরসাইকেল নাই, আর, যাতায়াত পরিচিত জায়গাগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ (অফিস, মা'র বাসা ইত্যাদি)। দুয়েকবার ম্যাপ যে সময় বাঁচিয়েছে সেটা সত্য। তবে এই মোবাইল না থাকলেও ঐ জিনিষ আমি বের হওয়ার আগে কম্পু'র গুগল ম্যাপে দেখে যেতাম -- এটা আমার অনেক পুরাতন অভ্যাস।
ভাইবার: এটা কম ব্যবহার করা হলেও বেশ হ্যান্ডি। স্কাইপের তুলনায় প্রায় শূণ্য ঝামেলায় সেটাপ, অটোমেটিক কন্টাক্ট খুঁজে নেয়া -- দারুন জিনিষ।
CamCard: মানুষের ভিজিটিং কার্ডগুলো এন্ট্রি করে নেয়াতে মানিব্যাগে কার্ডগুলো বহন করতে হয় না + জিনিষটা এড্রেসবুকের সাথে সিনক্রোনাইজড।

আরেকটা অপ্রয়োজনীয় উপকার করেছে স্মার্টফোন। সেটা হল নিয়মানুবর্তীতা। প্রতিদিন নিয়ম করে চার্জ দিতে হয়, অফিস গেলে সাথে করে চার্জার নিয়ে যেতে হয় --- এগুলো মানুষকে আরো অর্গানাইজ হতে সাহায্য করে। শয়তানী হাসি

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

জনাব শামীম, শুনে ভালো লাগলো যে আপনি স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন। আপনার মন্তব্যের জন্য এবং উপকারিতাগুলো শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ! চার্জের বেপারটা আসলেই সত্য দেঁতো হাসি

- Milonkhan

অতিথি লেখক এর ছবি

আমরা আসলে সব কিছুকেই নেতিবাচকতার মধ্যে টানতে পছন্দ করি। এই লিখাটি পড়ে স্মার্টফোন এর উপকারিতা গুলো স্পষ্ট হল। ধন্যবাদ। Shihab169

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।