যেভাবে আমরা জানলাম পৃথিবী গোলাকার- আইজ্যাক আসিমভ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ২৩/০৪/২০১৪ - ২:৪৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[আইজ্যাক আসিমভ আমার অন্যতম প্রিয় লেখক। তার 'হাঊ ডিড উই নো' সিরিজের 'যেভাবে আমরা জানলাম পৃথিবী গোলাকার' বইটি অনুবাদের একটি প্রচেষ্টা নিলাম। তিন পর্বে সমাপ্ত করার আশা রাখি]

পৃথিবী কি সমতল?

বহুকাল আগে, মানুষ ভাবত পৃথিবী বুঝি সমতল। কেননা তা দেখতে সমতল সমতলই লাগে।

আপনি যদি একটা নৌকা বা জাহাজে চেপে মাঝসমুদ্রে চলে যান, পানির তলকে তখন সমতলই মনে হবে, এবং তা সমানভাবে সবদিকেই সমতল। আর মনে হবে আকাশ যেন ওলটানো গামলার মত, পানির সাথে জুড়ে আছে। বহুদূরে মনে হবে আকাশ আর সমুদ্র যেন একত্রে মিলিত হয়েছে। যে রেখায় আকাশ আর সমুদ্র মিলিত হয়, তার নাম দিগন্ত। দিগন্ত দেখতে একটা মসৃণ বৃত্তের মত, যার কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে আছেন আপনি।
যদি আপনি ভূমিতে থাকেন, তখনো একটা দিগন্ত দেখতে পাবেন, তবে সেটা সমুদ্রের মত না। বাড়িঘর, গাছপালা, পাহাড়-পর্বতের কারণে সেই দিগন্ত সমুদ্রের মত মসৃণ হবে না, উঁচু-নিচু হবে খানিকটা।

প্রাচীনকালে মানুষ ভাবত পৃথিবী হয়ত অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত আর সমুদ্রেরও নিশ্চয়ই কোন সীমা পরিসীমা নেই।
কিন্তু এটাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে সূর্যের কী হবে? সূর্য প্রতিদিন পুবে উদয় হয়, সারাদিন আকাশে ঘুরে বেরিয়ে সন্ধ্যায় পশ্চিমে অস্ত যায়। পরের দিন আবার নতুন করে পূর্ব দিক থেকে সূর্য উঠে।

প্রাচীনকালে কেউ এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, প্রতি সকালে একটি করে নতুন সূর্য আকাশে তৈরি হয়, এবং সে উঠে। সন্ধ্যায় সে ধ্বংস হয়, এবং অস্ত যায়।
অন্যরা বলে, সন্ধ্যায় সূর্য সমুদ্রে অস্ত গেলে একে বিশালআকৃতির নৌকায় করে পরেরদিন সকালে আবার তাকে পূর্বে নিয়ে আসা হয়।

এছাড়া, কেউ কেউ ভাবত সূর্যদেবতার অগ্নিরথই হল সূর্য, যেই রথে চড়ে দেবতা আকাশে উড়ে বেড়ান। তিনি অগ্নিরথে করে প্রতি সকালে পূর্ব থেকে যাত্রা শুরু করেন, তারপর উড়তে উড়তে দুপুরে মধ্যগগনে চলে আসেন, ঠিক আমাদের মাথার উপর। সন্ধ্যা হতে হতে অগ্নিরথ নিয়ে দেবতা পশ্চিমে চলে আসেন এবং কোন এক অভিনব উপায়ে রাতের বেলা সবার আড়ালে আবার পূর্বে চলে আসেন, অগ্নিরথে চড়েই, কিন্তু তখন অগ্নিরথ কোন আলো ছড়ায় না!

ধ্রুবতারা থেকে অন্যান্য যে তারাগুলো বহু দূরে অবস্থান করে, সেগুলো এত বিশাল কক্ষপথে ঘুরে যে তা দিগন্তের নিচে নেমে যায়। সেই তারকাসমূহেরও উদয় হয় পুবে, অস্ত পশ্চিমে- ঠিক সূর্যের মত। চাঁদও পুবে উঠে, পশ্চিমে অস্ত যায়। এই ব্যাপারগুলোও ব্যাখ্যা করা জরুরী ছিল।

প্রাচীন ব্যাখ্যাগুলো কেমন যেন গোলমেলে ছিল। ধরুন, আমাদের একটা সমতল পৃথিবী আছে যা সবদিকে সমানভাবে ছড়ানো। সেই সমতল পৃথিবীটা কত গভীর? যদি আপনি গর্ত খুঁড়ে ভেতরের দিকে যেতে থাকেন, তবে কতদূর পর্যন্ত যেতে পারবেন? পৃথিবী কি অসীম গভীর? নাকি এটা এক মাইল বা দশ বারো মাইলের মত গভীর? নাকি পঞ্চাশ মাইল? এটা যদি একটা মাটির পাতই হয়ে থাকে, তাহলে এটা নিচের দিকে পড়ে যাচ্ছে না কেন?

ভারতের লোকেরা বলত দানবাকৃতির কতকগুলো হাতি পৃথিবীকে ধরে রেখছে তাদের মাথার উপর, সেই হাতিগুলোকে আবার একটা কচ্ছপ তার পিঠে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

সেই কচ্ছপ তাহলে কার উপর দাঁড়িয়ে আছে? তারা বলত, কচ্ছপটা এক অকল্পনীয় বিশাল সমুদ্রে সাঁতার কাটছে।

আচ্ছা, সেটা না হয় মেনে নিলাম। কিন্তু তাহলে সমুদ্র কি একেবারে নিচ পর্যন্ত বিস্তৃত? এর উত্তর পাওয়া যায়নি কোন।

নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ, যদিও পৃথিবীটা খালি চোখে দেখতে ফ্ল্যাট ফ্ল্যাটই লাগে, কিন্তু এই ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া কঠিন। ফ্ল্যাট হওয়ায় সমস্যা আছে।
গ্রিকরাই প্রথম পৃথিবীর সমতল হওয়ার সমস্যা নিয়ে চিন্তা করেছিল, ২৫০০ বছর আগে। অ্যানাক্সিম্যান্ডার হলেন তাদের মধ্যে একজন যিনি সূর্য দেবতা আর তার অগ্নিরথের গল্পে সন্তুষ্ট ছিলেন না।

কোন এক পরিষ্কার রাতের আকাশে তিনি দেখলেন তারাগুলো। রাতের বেলা সেগুলো যেন আকাশে ঘুরে বেড়ায়, সবগুলোই; শুধু একটি ছাড়া- ধ্রুবতারা। এটি উত্তরের আকাশে সবসময় একই জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। এর আশেপাশের তারাগুলো একে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে, কাছের তারাগুলো ছোট বৃত্তে, আর দূরেরগুলো একটু বড় আকারের বৃত্তে।

সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপার যা অ্যানাক্সিম্যান্ডার পর্যবেক্ষণ করেছেন, তা হল তারাগুলো বিশেষ একটি প্যাটার্নে আকাশে ঘুরে। মৌমাছির ঝাঁকের মত উল্টা পাল্টা যে যার পথে ঘুরে বেড়ায় না। বরং সব তারা একত্রে ঘুরে।

অ্যানাক্সিম্যান্ডার সিদ্ধান্তে আসলেন আকাশ হল একটা বিশাল ফাঁপা গোলক। সেই গোলক একটা কাল্পনিক অক্ষের উপর ঘুরে বেড়াচ্ছে। ধ্রুবতারা উত্তর আকাশের যেখানে অবস্থিত, সেখানে কাল্পনিক অক্ষের এক প্রান্তবিন্দুর অবস্থান (যেহেতু ধ্রুবতারা অন্য সবার সাপেক্ষে স্থির, তার মানে একে কেন্দ্র করেই সবাই ঘুরছে। এটি তাই অক্ষের উপর থাকবে)। অন্য প্রান্তটি গোলকের ঠিক উল্টো প্রান্তে, ফলে আমরা তা দেখতে পাই না।

প্রতিদিন আকাশ-গোলক ঘুরে, ফলে আকাশের গায়ে সেঁটে থাকা তারাগুলোও একসাথে ঘুরে এবং এর ফলেই তারাগুলো একটা প্যাটার্ন মেনে চলে। সূর্য আর চাঁদও আকাশের সাথে লাগানো, তারাও একই কারণে উঠে আর অস্ত যায়।
আকাশ যদিও গোলাকৃতির, তারপরও পৃথিবী সমতল হতে পারে। অ্যানাক্সিম্যান্ডারও তাই ভাবলেন। তিনি চিন্তা করলেন পৃথিবী একটা সমতল পাত, যা আকাশের সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত।

আকাশগোলক যখন ঘুরে, তার সাথে সাথে সূর্য পুবের আকাশে উঠে আর পশ্চিমে অস্ত যায়, যেহেতু আকাশের সাথে এটি লাগানো। এবং যেহেতু আকাশ ঘুরতে থাকে, একসময় সূর্য গোলকের নিচের প্রান্তে চলে যায়। যখন সূর্য পাতের নিচের প্রান্তে চলে যায়, তখন পৃথিবীতে হয় রাত। যখন ঘূর্ণায়মান আকাশ সূর্যকে সাথে নিয়ে আবার পূর্বে উঠে আসে, তখন আবার দিন সৃষ্টি হয়। অ্যানাক্সিম্যান্ডারের ধারণাটি তুলনামূলক গ্রহণযোগ্য মনে হয় আগের ধারণাগুলোর চেয়ে। সূর্যকে এর ফলে প্রতিদিন ধ্বংস হতে হয় না বা নৌকা দিয়ে তাকে পশ্চিম থেকে পূর্বেও আনার দরকার হয় না।
এতকিছুর পরেও অ্যানাক্সিম্যান্ডার সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি চিন্তা করতে লাগলেন।

দূর সীমানার তারাগুলো

যদি পৃথিবী আকাশ গোলকের মধ্যে বসানো একটা সমতল পাত হত, তবে আমরা হেঁটে হেঁটে পৃথিবী আর আকাশ যেখানে মিলিত হয়েছে সেখানে পৌঁছাতে পারতাম। পূর্ব দিকে রওনা হলে একসময় আকাশের যে বিন্দুতে সূর্য উঠে সেখানেও আমরা পৌঁছাতে পারতাম, হয়ত সূর্যকে একবার স্পর্শ করারও সুযোগ পেতাম, যদি না সেটার তাপে আমরা মারা না যাই।

আবার যদি পশ্চিমে যেতে থাকি, সূর্য যেখানে অস্ত যায় সেখানেও পৌঁছাতে পারতাম।

আগে কিছু মানুষ বিশ্বাস করত, হয়ত সত্যিই এরকম সম্ভব। অতি উৎসাহীদের কেউ কেউ এমন ছবিও এঁকেছে যে একজন মানুষ আকাশ ছুঁয়েছে। মানুষটি আকাশের প্রান্তে পৌঁছে নিজের মাথাটি ঝুঁকিয়ে সেই যন্ত্রটিও দেখছে যা আকশকে ঘুরিয়েই চলছে ক্রমাগত।

তবে গ্রিকরা বুঝতে পেরেছিল মানুষ যতই পূর্বে বা পশ্চিমে যাক না কেন, কোনভাবেই সূর্যের কাছাকাছি যাওয়া যায় না। একই সাথে সম্ভব নয় চাঁদ কিংবা তারার কাছাকাছি যাওয়া। তারা এতে সন্দিহান ছিল। হয়ত পৃথিবী আকাশের সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল না। হয়ত আমাদের চোখ আমাদের ভুল দেখাচ্ছিল যখন আমরা দেখছিলাম আকাশ আর পৃথিবী একত্রে মিলিত হয়েছে।

মানুষ ভাবল হয়ত পৃথিবী একটা সমতল পাতই, কিন্তু তা আকাশের গোলকের তুলনায় বেশ ছোট। এবং তখন পৃথিবীর শেষ প্রান্তে পৌঁছানোর পরেও সূর্য-চাঁদ-তারা বহুদূরে থাকবে, এদের ধরা যাবে না।

এখন সমস্যা হল মানুষ তো পৃথিবীর শেষ সীমায়ও পৌঁছাতে পারে না। যদি পৃথিবী আকাশের কেন্দ্রে একটা সমতল পাতই হয়ে থাকে, তবে মানুষ কেন পৃথিবীর শেষ প্রান্তে পৌঁছাতে পারে না?

হয়ত পৃথিবীর স্থলভাগ সমতল পাতের কেন্দ্রে অবস্থিত, যা আবার জল দিয়ে পরিবেষ্টিত। পরিব্রাজক বা ভ্রমণকারী, যাই বলি না কেন তারা সবসময়ই কিছুদুর গেলে সমুদ্র খুঁজে পায়। হয়ত সমুদ্রের শেষ যেখানে, সেটিই পৃথিবীর শেষ প্রান্ত। আমরা যে সময়ের কথা বলছি, তখন মানুষ নিজের বাসভূমি থেকে খুব দূরে যাওয়ার অভ্যাস করে উঠেনি। একারণেই তখন মানুষ পৃথিবীর শেষ প্রান্তে যেতে পারেনি।

কিন্তু শেষ প্রান্তে যদি সমুদ্রই থাকে, তাহলে সমুদ্রের পানি পৃথিবী থেকে পড়ে যায় না কেন?

হয়ত পৃথিবীর প্রান্তভাগ সামান্য উপরে ওঠানো, অনেকটা বাসার ছাদের রেলিঙের মত, তাই পানি উপচে পড়ে না। হয়ত পৃথিবী একটা পাত নয়, বরং একটা ভাতের বোলের মত।

যদি তা হয়ে থাকে, তাহলে সম্পূর্ণ পৃথিবীটাই কেন নিচে পড়ে যাচ্ছে না?

পৃথিবী একটা পাত, এটি মানা খুবই কঠিন ছিল, যদিও আকাশ একটা বিশাল গোলক আর সূর্য উদয় আর অস্ত যাওয়ার সমস্যাটির ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব হয়েছিল।
যদি পৃথিবী সমতল না হয়, তাহলে এটি কোন আকৃতির হতে পারে?

আমরা যদি আরেকবার আকাশের দিকে তাকাই, তাহলে কি কোন সমাধান পাওয়া যায়? আকাশে অনেক উজ্জ্বল বস্তু দেখা যায় যার বেশিরভাগই তারা।
তারা সম্পর্কে সেই সময় মানুষ খুব বেশি কিছু জানত না। মানুষের কাছে তারাগুলো তখনো আকাশে জাজ্বল্যমান কিছু বিন্দু ছাড়া কিছু ছিল না।
এত তারার ভিড়ে দুটি বস্তু ছিল আলাদা- সূর্য আর চাঁদ। সূর্য একটা বৃত্ত, কিন্তু চাঁদ কখনো বৃত্ত, কখনো অর্ধবৃত্ত, আবার কখনো বৃত্ত আর অর্ধবৃত্তের মাঝামাঝি কোন আকার, কখনো কখনো আবার শুধু একটা কাস্তের মত বাঁকা আকৃতির।

গ্রিকদের মধ্যে যারা আকাশ পর্যবেক্ষণ করত, তারা লক্ষ্য করেছিল চাঁদের অবস্থান সূর্যের সাপেক্ষে প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়। অবস্থানের পরিবর্তনের সাথে সাথে এর আকারেরও পরিবর্তন হয়।

যখন পৃথিবীর দুই পাশে সূর্য আর চাঁদ থাকে, তখন চাঁদ একটা বৃত্ত। সূর্য তখন চাঁদের উপর আলো ফেলে। যার ফলে চাঁদের পৃষ্ঠের সম্পূর্ণটাই আলোকিত হয়। আবার যখন চাঁদ আর সূর্য পৃথিবীর একই পাশে থাকে, তখন চাঁদ দেখা যায় না। কারণ তখন সূর্য চাঁদের অন্য পাশ আলোকিত করে, পৃথিবীর পাশে যেই পৃষ্ঠ, সেটিকে নয়। ফলে চাঁদকে সেই সময় দেখা যায় না।

প্রাচীনকালে যারা এই ব্যাপারটি লক্ষ্য করেছেন, তারা সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে সূর্যের নিজের আলো থাকলেও চাঁদের তা নেই। চাঁদ সূর্যের প্রতিফলিত আলো দিয়ে নিজেকে আলোকিত করে।

সেই সময় গ্রিকরা জ্যামিতি নিয়ে কাজ করা শুরু করেছিল। তারা চাঁদের এই বিভিন্ন আকার নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিল। তারা নিশ্চিত হয়েছিল চাঁদের আলোকিত অংশের এই বিভিন্ন রকম আকার ধারণ করতে হলে তাকে অবশ্যই গোলাকার হতে হবে।

তাহলে সূর্যের আকৃতি কী রকম হবে? এটি চাঁদকে আলোকিত করে, এবং তা করে সব অবস্থান থেকেই সমানভাবে। সূর্য আর চাঁদ পৃথিবীর একপাশেই থাকুক বা বিপরীত পাশে, বা এর মাঝামাঝি কোন অবস্থানে, চাঁদ সব সময়ই সমান আলো পায় সূর্য থেকে। এটা সম্ভব শুধুমাত্র তখনই যদি সূর্য গোলাকৃতির হয়।
অ্যানাক্সিম্যান্ডার দেখলেন সূর্য, চাঁদ আর সাথে সাথে আকাশ নিজেও গোলাকার। তাহলে কি পৃথিবী নিজেও গোলাকার? সমতল নয়?

তবে গোলাকার হওয়া জরুরী নয়। হয়ত আকাশ আর পৃথিবীর জন্য একই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। আকাশ আর সূর্য গোলাকার বলে পৃথিবীকেও গোলাকার হতে হবে, এমন কোন কথা নেই। পৃথিবীর তুলনায় সূর্য প্রচণ্ড গরম আর পৃথিবী আকাশকে কেন্দ্র করে ঘুরছেও না চাঁদের মত। আর আকাশের সাথে তুলনা করলে আকাশের মত পৃথিবীর লক্ষ কোটি তারাও নেই।

পৃথিবীর আকার বুঝতে হলে অন্য বস্তুর দিকে না তাকিয়ে পৃথিবীর দিকেই তাকাতে হবে।

তাহলে আবার পৃথিবীতে ফেরত যাই। এবার নিজেকে প্রশ্ন করি, আমরা কি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তারাগুলোকে ভিন্ন ভিন্নভাবে দেখতে পাই? নাকি সব জায়গা থেকে আকাশের তারাগুলো দেখতে একই রকম?

যদি পৃথিবী সমতল হত, তবে সব জায়গা থেকে একইরকমভাবে তারা দেখতে পাওয়ার কথা। কিন্তু ব্যাপারটা কি আসলে সেরকম?
প্রাচীনকালে এমন অনেক মানুষ ছিল যারা ব্যবসা বাণিজ্য বা অন্যান্য কাজে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করত। যারা উত্তরে যেত, তারা দেখত আকাশটা যেন কিছুটা অন্যরকম। দক্ষিণে, নিজের বাড়ির কাছের আকাশে যে তারাগুলো দেখা যেত, উত্তরে আসার পর তার অনেকগুলো উধাও হয়ে যায়। বাড়ি ফেরত এলে তারাগুলো আবার যেন আকাশে ফেরত আসে, ঠিক আগের জায়গাতেই।

আবার যারা দক্ষিণে যেত, তারা উল্টো ঘটনা দেখতে পেত। সেই লোকেরা আকাশে এমন সব তারা দেখত, যেগুলো জীবনে কখনো দেখেনি নিজের ভূমিতে। বাসায় ফেরত এলে নতুন তারাগুলো চলে যেত।

বাসার কাছে যে তারাগুলো উত্তর দিগন্তের একটা নির্দিষ্ট জায়গায় থাকত, বাসা থেকে উত্তরের দিকে রওনা হলে তারাগুলো যেন সামান্য উপরে উঠে যেত, আবার দক্ষিণের দিকে গেলে তারাগুলো যেন সামান্য নিচে নেমে যেত।

মোদ্দা কথা হল, তারাগুলো একেক জায়গা থেকে দেখতে একেক রকম। অতএব, পৃথিবী সমতল নয়। (পৃথিবী অন্তত পক্ষে উত্তর দক্ষিণে বাঁকা, নতুবা তারাগুলো উত্তর দক্ষিণ বরাবর অবস্থান পরিবর্তন করত না-অনুবাদক)

অ্যানাক্সিম্যান্ডার ভাবলেন হয়ত পৃথিবী টিনের কৌটার মত, অর্থাৎ সিলিন্ডার আকারের। তার মাথায় প্রথমে এটাই এসেছিল, পৃথিবী হয়ত বেলনাকার।
তিনি ভেবেছিলেন বেলনাকার পৃথিবীটা আকাশের কেন্দ্রস্থলে বসানো। উত্তরে গেলে আপনি সিলিন্ডারের পৃষ্ঠ বরাবর বক্ররেখায় যাচ্ছেন, ফলে পেছনে তাকালে সিলিন্ডারের বক্রতার কারণে উত্তরের কিছু তারা ঢাকা পড়ে যায়। আবার দক্ষিণে গেলেও একই ঘটনা ঘটে।

এটি পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে আকাশ কেন দেখতে আলাদা আলাদা, তা ব্যাখ্যা করতে পারে।
তবু প্রশ্ন থেকে যায়...

(চলবে)

আহাদুল ইসলাম


মন্তব্য

মেঘলা মানুষ এর ছবি

ভালো লাগলো আপনার অনুবাদ।
শুধু একটাই অনুরোধ, নিয়মিত চালিয়ে যাবেন।

শুভেচ্ছা হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

আশা করি চালিয়ে যাব

আহাদুল ইসলাম

এক লহমা এর ছবি

ভালো লাগল। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

পরের পর্ব আশা করছি কিছুদিনের মধ্যেই প্রকাশ করতে পারব।

ধন্যবাদ আপনাকে

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো হয়েছে, চালিয়ে যান .... ধ্রুব.....

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

চলুক

অনিন্দ্য সুন্দর পাল এর ছবি

বেশ তথ্যবহুল একটা লেখা। পড়ে ভালো লাগলো। পরবর্তি পর্বগুলোর অপেক্ষায় থাকলাম।

অতিথি লেখক এর ছবি

আসিমভের পপুলার সায়েন্স নিয়ে লেখা সবগুলো লেখাই তথ্যবহুল, একইসাথে সুখপাঠ্য।

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক।
পরের পর্ব দিয়ে দিন ভাই।

ভালো থাকবেন।

----------------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

সুন্দর লেখা। তবে কয়েক জায়গায় পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে বাংলায় ডাব করা টেলিভিশনের ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। অনুবাদের সময় এ বিষয়ে আরেকটু যত্নবান হলে ভালো হবে। আসলে, আক্ষরিক অনুবাদ না করে একটু ভাবানুবাদের স্টাইলে লিখলে মনে হ্য় লেখাটা পড়তে অনেক আরাম হবে।

আগ্রহ নিয়ে পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করে থাকলাম।

____________________________

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রথমবারের মত অনুবাদ করার দুঃসাহস দেখালাম।
চেষ্টা করেছি যতটুকু পারি, পড়তে যাতে কষ্ট না হয়, সেদিকে নজর দেয়ার।
কোন অংশগুলো কৃত্রিম লেগেছে, জানালে উপকৃত হতাম। পরবর্তী সময়ে নজর দিব আশা করছি।
ধন্যবাদ
আহাদুল ইসলাম

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

"ধ্রুবতারা থেকে অন্যান্য যে তারাগুলো বহু দূরে অবস্থান করে, সেগুলো এত বিশাল কক্ষপথে ঘুরে যে তা দিগন্তের নিচে নেমে যায়। " একাধিকবার যে ব্যবহার করায় ছন্দপতন ঘটছে।

"অতি উৎসাহীদের কেউ কেউ এমন ছবিও এঁকেছে যে একজন মানুষ আকাশ ছুঁয়েছে। মানুষটি আকাশের প্রান্তে পৌঁছে নিজের মাথাটি ঝুঁকিয়ে সেই যন্ত্রটিও দেখছে যা আকশকে ঘুরিয়েই চলছে ক্রমাগত।"
"এটি চাঁদকে আলোকিত করে, এবং তা করে সব অবস্থান থেকেই সমানভাবে"
"আকাশগোলক যখন ঘুরে, তার সাথে সাথে সূর্য পুবের আকাশে উঠে আর পশ্চিমে অস্ত যায়, যেহেতু আকাশের সাথে এটি লাগানো। "
"হয়ত আমাদের চোখ আমাদের ভুল দেখাচ্ছিল যখন আমরা দেখছিলাম আকাশ আর পৃথিবী একত্রে মিলিত হয়েছে। "
যে এবং যা এর ব্যবহার আর ইংরেজী স্টাইলে বাক্যাংশ জুড়ে দেয়া। এর জন্য আক্ষরিক অনুবাদ মনে হয়েছে।

"নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ, যদিও পৃথিবীটা খালি চোখে দেখতে ফ্ল্যাট ফ্ল্যাটই লাগে, কিন্তু এই ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া কঠিন।" পুরো লেখার সাথে এই বাক্যের প্রথমাংশ একেবারেই অপরিচিত লেগেছে।

ধন্যবাদ আপনাকে।

____________________________

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।
"নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ, যদিও পৃথিবীটা খালি চোখে দেখতে ফ্ল্যাট ফ্ল্যাটই লাগে, কিন্তু এই ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া কঠিন।"
এই লাইনটায় আসলেই বেখাপ্পা হয়েছে।
ধন্যবাদ আপনাকে। আগামীবার আশা করি তুলনামূলক ভালো করতে পারব।

আহাদুল ইসলাম

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

এমনিতেও যে রকম অনুবাদ করেছেন তাতে হাততালি দেয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। অনেক সহজ ভাষায় জিনিসগুলো বোঝানো হয়েছে। এরকম আরো লেখা আসুক বাংলায়, এটা কায়মনোবাক্যে কামনা করি।

বিজ্ঞানের বিষয় নিয়ে লেখার জন্য আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ। (মনে পড়লো আগের মন্তব্যে আপনাকে ধন্যবাদ দেয়া হয়নি। বিজ্ঞান নিয়ে বাংলায় লেখাকে সবসময় উৎসাহ দিতে চাই।)

____________________________

অতিথি লেখক এর ছবি

আসিমভ এত সহজ ভাষায় লিখেন যে অনুবাদ চেষ্টা করেও কঠিন করা সম্ভব হয় না। আবারও ধন্যবাদ আপনাকে।

আহাদুল ইসলাম

হাসিব এর ছবি

বইটা কতো বড়? তিনপর্বের বইয়ের এক পর্ব যদি এতোটুকু হয় তাহলে বইটা ‌বেশ ‌ছোট বলতে হবে।
অনুবাদ ভালোই মনে হয়েছে আমার কাছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

বইটা বেশ ছোট। মূল ইংরেজি বইটা মাত্র ১৫ পৃষ্ঠার।
ধন্যবাদ হাসি

আহাদুল ইসলাম

দীনহিন এর ছবি

আপনার প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই।
ইতিহাস অসম্ভব প্রিয়, আর সে ইতিহাস যদি হয় বিজ্ঞানের, তা হলে গোয়েন্দা কাহিনির মতই পড়ে ফেলি রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনায়।
আপনার এই সিরিজ অনেক তরুনকে বিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট করবে, সন্দেহ নেই!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

অতিথি লেখক এর ছবি

আসিমভের পপুলার সায়েন্সের বইগুলো তার সায়েন্স ফিকশনের মতই আকর্ষণীয়।

আহাদুল ইসলাম

সাফি এর ছবি

অনুবাদ ভাল লেগেছে। তবে হিজিবিজি মাস্টারের সাথে আমিও একমত। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

সুবোধ অবোধ এর ছবি

হিজিবিজি মাস্টার

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

নিকটা আমার দারুন পছন্দ হয়েছে! আমার নিক বদলে হিজিবিজি মাস্টার করতে চাই!! ওঁয়া ওঁয়া

____________________________

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

বাহ, আমারও নিক পালটে পাগলা মাস্টার করতে ইচ্ছে হচ্ছে

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

অনুবাদ ভালো লাগলো। আমার কাছে পৃথিবীটা একটা কমলালেবুর মতো, আমার হাতের মুঠোয় নিয়ে খেলা করি।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

সুবোধ অবোধ এর ছবি

চলুক
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ...

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকে সাধুবাদ জানিয়ে পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।

গোঁসাইবাবু

নির্ঝর অলয় এর ছবি

অনুবাদ চমৎকার ও ঝরঝরে। আসিমভের একটা প্রবন্ধ অনুবাদের ইচ্ছে রাখি।

অতিথি লেখক এর ছবি

কোনটি অনুবাদ করবেন বলে ভেবেছেন?

আহাদুল ইসলাম

তারেক অণু এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।