বাঙালীর শেকড়(ধর্ম-১)

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১২/০৬/২০১৪ - ৩:২৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাঙালীদের নিয়ে গবেষনা খুব একটা হয়নি।আমাদের ইতিহাস লিখেছে বিদেশীরা। আর ঘরের খবর পরের কাছ থেকে জানলে যা হয় আমাদেরও তাই হয়েছে।নিজেদের শেকড়ের সন্ধান না পেয়ে লতাগুল্ম যেভাবে অন্য গাছের উপর ভর করে বেড়ে উঠে আমরাও তেমন অন্যের গর্বে নিজেদের গর্বিত করার চেষ্টা করছি। এই সিরিজে আমি বাঙালীর রাজনৈতিক,সামাজিক,সাংস্কৃতিক,নৃতাত্ত্বিক এবং ধর্মীয় ইতিহাস নিয়ে কিছুটা আলোচনা করার চেষ্টা করব।শুরুটা ধর্ম দিয়েই করাটা উপযুক্ত মনে করছি। নিজের পরিচয় নিয়ে মানুষ যখন সন্দেহে ভোগে তখনই বিজাতিয় সংস্কৃতি আর ধর্মের বেড়াজালে মানুষ নিজেকে নিরাপদ মনে করে। আমরা সম্ভবত সেই সময়টাই অতিক্রম করছি। গোপাল কৃষ্ণ গোখলে বলেছিলেন,

বাঙালী আজ যা চিন্তা করে সমস্ত ভারত আগামীকাল তা করে।

। কিন্তু আজ আমরা হয়ত চিন্তা করতেই ভুলে গিয়েছি। নিজেদের গর্বের ইতিহাস ভুলে আজ ধর্ম আর ভিনদেশী সংস্কৃতিতে মেতে আছি আমরা।

বাঙালীর ধর্ম কি?প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মতত্ত্ব নয়,বিজ্ঞানে যেমন হাইড্রোজেন-অক্সিজেনের ধর্ম পড়ি আমরা, সেই আসল ধর্ম নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছিলাম।অক্সিজেন নিজে জ্বলেনা কিন্তু অপরকে জ্বালায়।বাঙালীর ধর্মও অনেকটা অক্সিজেনের মতো।বাঙালীর ইতিহাসের মতো বাঙালীর ধর্মও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পায়নি। প্রথমেই ভাবা যাক ধর্ম বলতে আমরা কি বুঝতে চাচ্ছি? অনেকগুলো আচার,নানাবিধ বিশ্বাস আর সর্বোপরি প্রাকৃতিক-জাগতিক প্রয়োজনের যোগফলই একটি ধর্ম। "মিথ্যাবাদী পরিসংখ্যান" দিয়ে বাংলাদেশের ৮০ ভাগ মুসলমান,১৫ভাগ হিন্দু... এইভাবে বাঙালীর ধর্ম বের করা ভুল। আমরা কেমন মুসলমান,কেমন হিন্দু সেটি জানতে পারলেই আমরা আমাদের আদিধর্মের ধারনা পাবো। ধর্ম মানুষকে বিবর্তিত করে হয়ত কিন্তু তার চাইতে অনেক বেশি বিবর্তিত করে মানুষ ধর্মকে। আমাদের মূল ধর্ম ইসলাম কিন্তু আমাদের ইসলাম আর ইসলামের উৎপত্তিস্থল সৌদিয়ারবের ইসলামে ব্যাপক ফারাক। শুধু ইসলাম কেনো, বাংলার হিন্দু ধর্ম কি ভারতের মূলধারার হিন্দু ধর্মের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ?তাহলে দূর্গাপূজা নিয়ে এত উৎসব ইন্ডিয়াতে হয়না কেনো? বৌদ্ধধর্মের বজ্রযান-সহযান ত এই বাংলার মানুষেরই অবদান।জন্মান্তরবাদ,বাউলমত কাদের মস্তিষ্ক হতে নির্গত? এই বাংলার মানুষের। বাংলা বেশিরভাগ সময়ই শাসিত হয়েছে বিভিন্ন আঞ্চলিক রাজাদের দ্বারা।আর একচ্ছত্র শাসনে না থাকলে ভাষা-ধর্ম-সংস্কৃতির ঐক্য গড়ে উঠেনা। এটিই আমাদের সবচাইতে বড় দূর্ভাগ্য। মুঘল বাদশাহ আকবর বাংলা দখল করেছিলেন বটে কিন্তু তারপরও বাংলায় মুঘলরা তাদের সেই প্রতাপ নিয়ে হাজির হতে পারেনি।ধরতে গেলে বৃটিশ আমলেই বাংলা এক শাসকের অধিকারে ছিলো। আর সেই বৃটিশ আমল থেকেই শুরু হয়েছে আমাদের ইতিহাস নিয়ে ছেলেখেলা। এই ছেলেখেলা এখনও চলছে। এমনকি নিজেদের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস নিয়েও এমন দ্বিধাবিভক্ত জাতি হয়ত পৃথিবীতেই বিরল। তারপরও আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।ভবিষ্যত প্রজন্মকে আগ্রহী করে তুলতে হবে বাঙালীর ঐতিহাসিক রূপ খুঁজে বের করার জন্য।

ধর্ম আর ইতিহাস জাত ভাই।ধর্মকে একটা জাতির কংকাল বলাটাও ভুল হবেনা। সবচাইতে বড় প্রমান হিন্দু ধর্ম। W.W. Hunter হিন্দু ধর্ম দিয়ে ভারতের সমাজতত্ত্বের বিবর্তন পর্যালোচনা করতে গিয়ে বলেছেন,
“This Specimens are not fossils nor dry bones, but living communities”
ইতিহাসের নামে আমরা যা পড়ে এসেছি তা শাসকের বীরত্বের ইতিহাস,দাপটের ইতিহাস,বাঙালীর অধিকার হরনের ইতিহাস।দুই হাজার বছরের ইতিহাসে আমরা মাত্র একজন বাঙালী রাজা (শশাংক) দেখতে পাই। বাংলার ইতিহাসে নেই বাংলার গতরখাটা মানুষদের কথা।বাংলার কামাড়-কুমাড়,মেথর-জেলে,তাতী-কুঠার অথবা হাড়ি-ডোম-চন্ডাল-শূদ্র যাদের বাস ছিলো গ্রামের শেষমাথায়,যাদের ছোঁয়াও ছিলো হারাম তাদের ইতিহাস কই? বাংলা সর্বকালেই ছিলো ইতিহাসের জারজ পূত্র। এই বাংলাকে বলা হতো "পান্ডব বর্জিত"।বাঙালীকে সর্বদাই ভীরু,চোর,কাপুরুষ,অলস,ঝগড়াটে,অকর্মন্য বলে রায় দিয়েছে বিদেশীরা। এটাই আমাদের ইতিহাস।আমাদের গর্ব করতে বলা হয়েছে আর্য-রক্তের,তুর্কি-মুঘলদের বীরত্বের।সাতশ বছরের মুসলিম শাসনে একজন পীর-দরবেশের উত্থান ঘটাতে পারেনি বাংলা কিন্তু সেই পীর-দরবেশের ইসলাম জয়ে আমরা মুগ্ধ হতে শিখেছি। কিন্তু ভুলে গিয়েছি পূর্বপুরুষদের অবদান যারা এই ইসলামকে “বাংলার ইসলাম” বানিয়েছে। ভুলে গিয়েছি সেইসকল বাঙালীদের যারা বর্নবাদীদের বাধ্য করেছে মাথা ঠুকে বাংলার দেবতাদের মেনে নিতে। আমি এ লেখায় মূলত হিন্দু ধর্মের সাথে বাঙালীর ধর্মের সামঞ্জস্য টানতে চেষ্টা করব। ভবিষ্যতে সুযোগ হলে ইসলাম আর বৌদ্ধ ধর্ম নিয়েও আলোচনা হবে।

হিন্দু বলতে কোনো একক ধর্মীয় জাতিকে বোঝায়না।হিন্দু জাতি অর্থে অভিন্ন হতে পারে কিন্তু ধর্মের দিক দিয়ে এরা বিভক্ত। ব্রাহ্মণ মতে প্রতিমাপূজা অন্তর্গত না হলেও এখন সেটি অবশ্যম্ভাবী। বৈদক বা ব্রাহ্মন ধর্ম আসলে কোনো একক ব্যাক্তি দ্বারা প্রবর্তিত নয় বলেই এমনটি হয়েছে। তাই হিন্দু ধর্মে আমরা আর্য দেব-দেবী পাই,পাই বাঙ্গালার দেবতা-দেবীদের। অসুরদেরও পাই পূজা দেবার জন্য। এরা কেউ কালো,কারো গায়ের রঙ দুধে আলতা। মূল আলোচনাতে আসি।

সাংখ্য,যোগ, তন্ত্রএইসকল দর্শনই বাংলার আদি ধর্ম।নৃতাত্ত্বিকভাবে বাঙালী অস্ট্রিক(অস্ট্রেলিয়ার আদি অধিবাসী) ও মঙ্গোলীয় আদিবাসীদের সংমিশ্রন। সাথে অবশ্য কিছু আর্য রক্ত (ইন্দো-ইরান,নর্ডিক)ও নিগ্রো রক্তও আছে।বাংলা আর্য অধ্যুষিত ছিলোনা কোনকালেই। তাই আর্যপ্রভাব তেমন একটা পরেনি বাংলার ধর্ম বা আচারে।উত্তরাধিকার সূত্রে আমরা দেহসৌষ্ঠবের সাথে অস্ট্রিক-মংগোলীয় ধর্মও গ্রহন করেছি যা সাংখ্য,যোগ। সাংখ্য-যোগ মূলত নাস্তিক্যবাদী ও দেহত্মবাদী মত। সাংখ্য দর্শনে জগত দুই সত্যের উপর নির্মিত “পুরুষ” আর “প্রকৃতি”। সাংখ্য দর্শনে ঈশ্বরই সকল সৃষ্টি আর কারনের মূল না। পরবর্তীকালে ব্রাহ্মনবাদীরা সাংখ্য দর্শনকে গ্রহন করেছেন বটে কিন্তু গোড়ায় একে অসুর মত বলে ধারনা পোষন করতেন তারা। গীতাতে তার উল্লেখও আছে। যাদের মানতে সমস্যা হচ্ছে তাদের জন্য প্রমান হাজির করছি একটু পরে। তবে সামনে লাফ দেবার আগে দুই পা পিছিয়ে নেই।আদিম সমাজে বেঁচে থাকার প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে দুই ধরনের বিশ্বাস প্রচলিত ছিলো। কৃষিজীবীরা ছিলো “মৈথুন তত্ত্ব” এ বিশ্বাসী আর পশুজীবীরা “টটেম বিশ্বাস” ধারন করত।"মৈথুন" শব্দ থেকেই বুদ্ধিমানেরা তত্ত্বটি সম্পর্কে ধারনা করে নিতে পারেন বৈকি। মৈথুন তত্ত্বের সাথে সাংখ্য তত্ত্বের মিল করা যেতে পারে। মৈথুনবাদীরা মনে করত প্রকৃতি হচ্ছে "নারী" আর পুরুষ হচ্ছে "শক্তি" আর এই দুইয়ের মিলনেই বৃষ্টিপাত হয় আর আমরা পাই ফসল।তাই মৈথুন বা দৈহিক মিলন মৈথুনবাদীদের কাছে ছিলো ধর্মীয় আচার। আর টটেমবাদীরা যেহেতু শিকার করেই বাঁচত তাই পশু-পাখিই ছিলো তাদের উপাস্য। পশুপাখির প্রেমে তারা নিজেদের গোত্র,উপগোত্রের নামও রাখত বিভিন্ন পশু-পাখির নামে ।কৃষিকাজে মনোনিবেশ করার আগে আর্যরা টটেম মতেই বিশ্বাসী ছিলো। মহাভারতের হনুমান যে কিনা আস্ত হিমালয় কাঁধে করে নিয়ে এসেছিলো বা যে বাঁদর জাত সাগরের উপর পাথর দিয়ে রাস্তা বানিয়ে ফেলেছিলো লংকা আক্রমনে রামকে সাহায্য করতে সেই "বাঁদর" বা "হনুমান" বলতে আসলে এমনি কোনো এক জাতির কথা বলা হয়েছে বলে অনেক বিদ্যানরা মনে করে থাকেন।কারন দেখতে বানর হলেও কাজে-কর্মে কিন্তু মহাভারতের হনুমান একদম মানুষদের মতই যে কিনা প্রভুর জন্য জান হাজির করতে ব্যাস্ত।কিন্তু বাস্তবে বানর জাত বড়ই ত্যাঁদড় প্রকৃতির। একবার ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে না হয় ঘুরে এসেই দেখুন না। তাই টটেমবিশ্বাসী কোনো জাতির কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে যে মহাভারত রচিত হয়নি তা নিশ্চিত হই কিভাবে। ফিরে আসি বাংলাতে। মার্কেন্ডিয় পুরাণে এক প্রাচীন দেবী “শাকম্ভরী”।তিনি নিজেকে জগত পালনের অধিকর্তি দাবি করেছেন যতদিন না প্রকৃতি আবার বৃষ্টির মাঝ দিয়ে নতুন ফসল ফলায়।এই শাকম্ভরিই হচ্ছে আধুনিক দূর্গা। দূর্গা উৎসব কখন হয়? শরৎকালে? দূর্গা উৎসবে কলা গাছের সাথে কচু,হরিদ্রা,ডালিম,মানকচু,ধান দিয়ে শস্যদেবী তৈরি করা হয়।তার মানে দূর্গাকে পূজা দেয়া হয় যেনো ঠিকমতে শস্য ফলে।এর সাথে পরকালে স্বর্গ-নরক প্রাপ্তির কোনো ইচ্ছা নাই। ধান ফললেই যে পৃথিবীটা স্বর্গ হয়ে যায়। হরপ্পাতে এক প্রাচীন নারীমূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে যার যোনিপথ দিয়ে একটি লতা বের হতে দেখা যায়।যোনীপথ দিয়ে এই লতা আসলে সিম্বলিকভাবে নারী প্রকৃতীর মাঝ দিয়ে শস্য ফলানোর প্রক্রিয়াকেই চিত্রিত করেছে। নারীই কৃষিজীবী সমাজের মূল দেবী। নারীরা সিথিতে সিঁদুর দেয়, দেবতার হাতে থাকে ডালিম। এই সিঁদুর,ডালিম এগুলো আসলে রজপ্রক্রিয়াতে নির্গত রক্তের প্রতীক।আর কে না জানে যে রজঃপ্রক্রিয়ার সাথে সন্তান জন্মের একটি যোগসূত্র আছে। পুজোর পদ্মফুল স্ত্রী-যোনীর প্রতীক ।এসবই কিন্তু প্রকৃতিবাদী ধর্মের দিকেই ইংগিত করে।বাঙালীর আরেক প্রধান দেবতা শিব।শিব সাহেব এখন যদিও প্রমোশন পেয়ে পৌরণিক দেবতা হয়ে গিয়েছেন কিন্তু এখনও সন্তান জন্মদান,বৃষ্টি,সূর্য এগুলো শিবের প্রধান গুন যা কৃষিজীবী সমাজের দেবতা বলেই শিবকে ধারন করতে হয়েছিলো। সেই মহেঞ্জাদারো সভ্যতাতেও আমরা ধ্যানমগ্ন শিবের ছবি পাই যা যোগ ধারনাপ্রসূত।

বাঙালীর ধর্ম আসলে প্রকৃতি আর ভোগবাদী দর্শনে পূর্ণ। কেঁচো বের করতে খুব বেশি মাটি খুড়ার দরকার নাই। ফেসবুক-টুইটার জেনারেশন হয়ত নাম শুনেনি কিন্তু অন্তত আশির দশকেও যাদের জ্ঞান-বুদ্ধি ছিলো তারা সবাই হয়ত "শীতলা","মনসা","ওলা" এইসকল দেবীর নাম শুনে থাকবেন।যখন বসন্ত রোগের একমাত্র উপায় ছিলো "মৃত্যু" তখন সবাই "শীতলা দেবী"কে ডাকত। কলেরাতে গ্রামের মানুষ মারা যাচ্ছে মানে "ওলা দেবী" কে দেখা গিয়েছে।এখনও গ্রামে-গঞ্জে এইসকল দেব-দেবী প্রচন্ডভাবে বিদ্যমান। বাঙালীর দেব-দেবীরা আধ্যাত্মিক নন। তারা একদম যেনো আমাদের আশেপাশেই থাকে। এদের কেউ আমাদের ভীষন আপনজন আবার কেউ কেউ কালনাগিনীর মতো ভয়ংকর। সিদ্ধিলাভ,পরকাল,স্বর্গ-নরক নিয়ে বাঙালীর তেমন একটা আগ্রহ ছিলো বলে মনে হয়না।তাই মুখে বাঙালী গীতা,উপনিষেদ,কুরান মেনে নিলেও পালন করেছে নিজের মতো করে। জীবনবাদী দর্শনের বাইরে যেতে পারেনি তারা। তাই সে প্রতিমাপূজার মাধ্যমে হিন্দু ধর্মকে নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছে। লক্ষী,স্বরস্বতী,বাসুমতিদের কাছে ধন-বিদ্যার আকুতি জানিয়েছে। এরাই বাঙালীর দেবী। ইসলামকে ধারন করেছে সুফিবাদের মাধ্যমে। বৌদ্ধ মন্দিরের আদলে উঁচু স্থানে মাজার স্থাপন তারই একটি সিম্বলিক প্রমান।ক্রুর-ভয়ংকর নিয়মের বেড়াজালের ইসলাম বাংলায় তার আসন বসাতে পারেনি।আমাদের ইসলাম তাই অনেক বেশি মানবিক,অনেক বেশি মুক্ত।

বাঙালীর ধর্মের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় জাদুটোনা-প্রেততত্ত্ব। জাদুবিশ্বাস আমাদের মাঝে এখনও প্রবল।তুকতাক-ফু মন্তরের প্রতি আমাদের এখনও অগাধ আস্থা। এর পেছনকারন সেই কৃষিই। নিজের জ্ঞানের অপ্রতুলতা আর প্রকৃতির খামখেয়ালী আচরন আমাদের জাদুতে ,প্রেতে বিশ্বাসী করেছে। এখনও গ্রামেগঞ্জে ভূতে পাওয়া মানুষের চিকিৎসা করতে ওঝাদের আনাগোনা হয়। ভুত-প্রেত আমাদের বড় আপন।ছোটবেলায় রাক্ষস আর পেত্নির গল্প না শুনে একটি বাঙালীও বড় হয়নি। আমি যে বাসায় থাকি সেখানে আমার নানীকে একটা বিশাল মুখওয়ালা পেত্নী বড্ড ডিস্টার্ব করতো। যদিও আমার দেখার সৌভাগ্য হয়নি কিন্তু নানুর মুখে সেই পেত্নীর গল্প শুনে মনে মনে একটা ছবি ঠিকি দাঁড়িয়ে গিয়েছে।বাসার পাশের তেতুল গাছে ত ভুতরা ফ্ল্যাট বানিয়ে ফেলেছিলো। এখন গাছ কেটে ফেলায় তারা বাস্তুহারা। খোদা-ভগবান মানেনা এমন মানুষ আপনে গ্রামে-গঞ্জে পাবেন কিন্তু ভূত মানেনা বা ভূত দেখেনি এমন মানুষ পুরা গ্রাম চষে একটিও খুঁজে পাবেন না। ফসল ফলার প্রক্রিয়া থেকে বাঙালী 'জন্মান্তরবাদ' দর্শন বের করেছে। যারা আমাদের খালি চুরিবিদ্যায় পারদর্শী আর কর্মকুন্ঠ বলে অবজ্ঞা করে গিয়েছেন তাদের চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার মতো অনেক দার্শনিক আবিষ্কারই আছে আমাদের। কিন্তু তারপরও আমরা পাশ্চাত্য প্রেমে অথবা মুসলিমদের জ্ঞাতি ভেবে তাদের গর্বে নিজেদের রাঙানোর চেষ্টা করি। আমাদের অতীত হারিয়ে যাচ্ছে সেই চিন্তা নেই আর অতীতের ছাড়া ভবিষ্যত কিভাবে উজ্জ্বল হবে? জাদুটোনা করে?

বাঙালীর ধর্ম পাপ-পূন্য কেন্দ্রিক না। বাঙালীর দেব-দেবীরা স্বর্গ-নরকের লোভ-ভয় দেখান না। বাঙালীর দেবী দূর্গা(শাকম্ভরি)আমাদের মা সেজে ফসল ফলার বার্তা নিয়ে আসেন। আমরা আনন্দ করি। আবার শীতলা দেবী মৃত্যুর ঝাপি নিয়ে আসে।আমরা ভয়ে কুঁকড়ে যাই। আমরা সেই দেবীকে খুশি করতে চাই। আর্যদের চাপানো বর্ণ-হিন্দুতত্ববাদী দর্শন বা তুর্কি-আফগানদের ইসলাম অথবা গৌতম বুদ্ধের অতি-মানবিক বৌদ্ধ দর্শন কোনটাই আমাদের আপন ধর্ম থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। কারন বাঙালী বেঁচে থাকতে ভালোবাসে,বাঙালীর ঈশ্বর প্রকৃতি। (চলবে)

সহায়ক গ্রন্থঃ
১।বাংলা,বাঙালীও বাঙালীত্ব (আহমদ শরীফ)
২।দর্শনচিন্তা(আহমদ শরীফ)
৩।লোকায়ত দর্শন
৪।ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিহাস(দর্শনবিভাগ-ঢাবি)
৫।আরজ আলী মাতুব্বর রচনা সমগ্র
৬।উইকিপিডিয়া

[url=http://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AF%E0%A7%8B%E0%A6%97তন্ত্র[/url]
[url=http://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AF%E0%A7%8B%E0%A6%97যোগ[/url]

আশফাক (অধম)

পাদটীকা


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

চমত্কার একটা লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ। সিরিজ চলুক!

-আনন্দময়ী মজুমদার

অতিথি লেখক এর ছবি

আগ্রহ ধরে রাখা বিস্তর কঠিন কাজ। তবে আপাতত ইচ্ছা ধরে রাখছি।
ধন্যবাদ

মেঘলা মানুষ এর ছবি

চলুক!

(পাদটীকার ফরমেটিংটা প্রিভিউ দেখে নেবেন।)

শুভেচ্ছা হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

অবশ্যই বুঝে নিবো। আইচ্ছা,আমি যোগ আর তন্ত্রের লিংক এড করতে গেলে সেটা এমবেড হচ্ছিলোনা কোনো অবস্থাতেই। অনেকবার ট্রাই করে দেখলাম। দুইটা লিংক এড হলো কিন্তু বাকিগুলা হলোনা।অবশেষে নিচে লিংক এড করলাম :(। ব্লগে লেখার টুকটাক অভিজ্ঞতা আছে আগে কিন্তু এইরকম ছ্যারাবেড়া অবস্থা আগে হয় নাই কখনো।

সচল মডুদের একটু দৃষ্টি আকর্ষন করছি। লেখা পোস্ট করে ফেলার পর কি আর এডিট করার কোনো অপশন নাই? আমার আবার "স্লিপ অব কি-বোর্ড" খুব বেশি হয়। পরে সেটা ঠিক করতে না পারলে ত সমস্যা।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক কিছু জানলাম।
"মহাভারতের হনুমান যে কিনা আস্ত হিমালয় কাঁধে করে নিয়ে এসেছিলো বা যে বাঁদর জাত সাগরের উপর পাথর দিয়ে রাস্তা বানিয়ে ফেলেছিলো।.."
রামায়ন হবে (যদিও মহাভারতেও রামায়নের একটা সংক্ষিপ্ত বিবরণ ছিল). কোথায় যেন পড়েছিলাম, রামায়ন ছিল আর্য - অনার্যদের মধ্যে যুদ্ধ নিয়ে, আর মহাভারত ছিল আর্যদের নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ নিয়ে।
সবগুলো অনুচ্ছেদই মনে বেশ জানার আগ্রহ জাগালো। আশা করি পরে আরো বড় করে লিখবেন।
-অভিমন্যু সোহম।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভুল ধরিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু এডিট করার অপশন পাইতেছিনা মন খারাপ

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

নৃতাত্ত্বিকভাবে বাঙালী অস্ট্রিক(অস্ট্রেলিয়ার আদি অধিবাসী) ও মঙ্গোলীয় আদিবাসীদের সংমিশ্রন। সাথে অবশ্য কিছু আর্য রক্ত (ইন্দো-ইরান,নর্ডিক)ও নিগ্রো রক্তও আছে।

গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট, তবে সামগ্রীকভাবে লেখা নিয়ে মন্তব্য করবো পরে, এখন বাঙ্গালীর নৃতত্ত্ব নিয়ে একটু দ্বিমত পোষন করে যাই। প্রথম কথা "অষ্ট্রিক" আর "অষ্ট্রেলিয়ার আদি অধিবাসী" সমার্থক নয়। ফিজিক্যাল নৃতাত্ত্বিক বিভাগ অনুযায়ী টার্মটা হল অষ্ট্রোলয়েড, যা মঙ্গোলয়েডদের মত আর একটি রেস। নেগ্রিটো জনগোষ্ঠীর পর ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম জনগোষ্ঠী হল অষ্ট্রোলয়েড। এখনকার মুন্ডারী ভাষাভাষী আদিবাসী যেমন- সাঁওতাল, মুন্ডা, হো, ওঁরাও ইত্যাদি এবং দ্রাবিড় ভাষাভাষী আদিবাসী যেমন তোডা, গোনড, কোটা, খাড়িয়া ইত্যাদি নৃতাত্ত্বিকভাবে অষ্ট্রোলয়েড গোত্রভুক্ত। আগে অষ্ট্রোলয়েডদের অষ্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের সমগোত্রীয় বলে মনে করা হতো, তাই তাদের নামকরণ করা হয়েছিল অষ্ট্রোলয়েড, কিন্তু আধুনিক জেনেটিক বিশ্লেষনে সে ধারনাটি ভুল বলে প্রমানিত হয়েছে। সুতরাং ভারতীয় উপমহাদেশের কোন জনগোষ্ঠীর সাথে অষ্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের তেমন কোন সম্পর্ক নেই।
অপরপক্ষে "অষ্ট্রিক" হল ভাষা ও সংস্কৃতি ভিত্তিক একটি বৃহৎ গোষ্ঠী। একসময় ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে শুরু করে সুদূর ভিয়েতনাম কম্বোডিয়া পর্যন্ত এক বিশাল জনগোষ্ঠী ছিল "অষ্ট্রিক" ভাষা ও সংস্কৃতির ধারক এবং বাহক, এদের মধ্যে অষ্ট্রোলয়েড এবং মঙ্গোলয়েড দুই ধরনের মানুষই ছিল। অষ্ট্রিক ভাষাগোত্রের দুটি প্রধান উপগোত্র হল মুন্ডারী এবং মন-খেমার। ভারতীয় উপমহাদেশের সাঁওতাল, মুন্ডা, হো, ওঁরাও ইত্যাদি জনগোষ্ঠী কোন একটি মুন্ডারী ভাষায় এবং মেঘালয়ের খাসি জনগোষ্ঠী মন-খেমার ভাষায় কথা বলে। বর্তমান ভিয়েতনামের ভিয়েটিক এবং কম্বোডিয়ার খেমার ভাষাও মন-খেমার উপগোত্রের অষ্ট্রিক ভাষা।

তবে হ্যাঁ, বাঙ্গালীদের পূর্বপুরুষেরা অষ্ট্রিক ভাষাভাষী এবং তাদের সাথে নৃতাত্ত্বিক মঙ্গোলয়েড রেস এর বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের ব্যাপক মিশ্রণের মধ্য দিয়ে বাঙ্গালী জাতির উদ্ভব ঘটেছিল, এ কথা বলা যায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ চমৎকার মন্তব্যের জন্য।আপনার মন্তব্য ঠিক। অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের মিল থাকার কারনেই এদের 'অস্ট্রিক' বা 'প্রোটো-অস্ট্রেলিয়াড' বলা হয়। আমাদের পাহাড়ি আদিবাসীদের (সাওতাল,মুন্ডা ইত্যাদি)দের এদের মিল বেশ প্রবল। বাঙালীরা নৃতাত্ত্বিক ভাবে মূলত নেগ্রিটো আদি অস্ট্রেলিয়ান বা ভেড্ডিড এবং মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠির মিশ্রনের ফল। যতদূর পড়েছি কম বেশি সবাই এর সাথে একমত। তবে পোস্টটি মূলত ধর্ম নিয়ে হওয়াতে নৃতাত্ত্বিক ব্যাপারখানা নিয়ে তেমন আলোকপাত করিনি।

সবার অংশগ্রহনে একটি সুস্থ আলোচনা তৈরি করার জন্যই মূলত এই প্রসংগ নিয়ে লেখা। লেখার সাথে নতুন তত্ত্বও জানা হবে আশা করি। যেমন আপনার দেয়া তত্ত্বগুলো।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার কাছে বাংলা মানে এই গান - কালিদহে ভেসে চলা চাঁদ সওদাগরের সপ্তডিঙ্গা- গায়ের ধুলোমলিন উঠোনে সাঁঝ বিকেলে পদ্মপুরাণ অথবা রামায়ণ পাঠ -শাল্লার আনন্দপুর গ্রামের সোমেশ্বরীর মেলা অথবা হাওরের ক্ষীরবাস - সন্ধারাতের অবাক জ্যোৎস্নায় গায়ের উঠোনে আপন-দুলালের কেচ্ছা শোনার সহজ আনন্দ। বাঙ্গালীর কাছে কালিদাসের স্বর্ণালংকারাবৃতা রাধার চেয়ে চণ্ডীদাসের আভরণহীনা মানবী রাধাই আকর্ষণীয়। বাঙ্গালীর খঞ্জনায় কারবালার কাহিনী এক অন্যরকম বিষাদ করুন অথচ সহজ সুরে বেজে ওঠে । যে বাঙ্গালী ক্ষেতের ধারে খড়ের কুটিরে খুঁজে পায় পরম সুখ, সেই বাঙ্গালী পরিবারের দু-মুঠো শান্তি কিনতে মধ্যপ্রাচ্য যেতে সাগরে প্রাণ দেয় । রাজনৈতিক আশ্রয়ে না-মানুষের জীবন মেনে নেয়। এটাই আত্মত্যাগ।

ইদানীংকালে ব্রাজিল আর্জেন্টিনা নিয়ে এত মাতামাতি , আমার কাছে মনে হয় এই আনন্দ বাঙ্গালীর স্বভাব সুলভ উদ্দীপনার একটা রূপ।

কিছু মীরজাফরের রক্ত অস্বীকার করলে বাঙ্গালীর হাসি , বাঙ্গালীর কান্না, বাঙ্গালীর আনন্দ, বাঙ্গালীর চিন্তাজগত সত্যি অনন্যসাধারণ ।
(জানিনা ,অনেক অপ্রাসঙ্গিক কথা লিখে ফেললাম হয়ত ।)

রাজর্ষি

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

অস্ট্রিক এবং অষ্ট্রোলয়েড বা প্রোটো-অষ্ট্রোলয়েড এক জিনিস নয়। অষ্ট্রিক" হল ভাষা ও সংস্কৃতি ভিত্তিক একটি গোষ্ঠী, যার সাথে অষ্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের কোন সম্পর্ক নেই। আর অষ্ট্রোলয়েড বা প্রোটো-অষ্ট্রোলয়েড হল দৈহিক গঠন সম্পর্কিত একটি বিভাজন।

মন মাঝি এর ছবি

১। "বিজাতিয় সংস্কৃতি"-টা কি চীজ? প্রায়ই এই শব্দ দুটি শুনি, আর শুনলেই মনে হয় যেন তারিয়ে তারিয়ে গালি দেয়া হচ্ছে। এটা যেন দারুন ঘৃণ্য, নিন্দনীয়, লজ্জাষ্কর বা অকাম্য কোন কিছু। এই শব্দবন্ধটির মধ্যে কোথায় যেন একটা প্রচ্ছন্ন গালি আর সুপ্ত বর্ণবাদী মানসিকতা লুকিয়ে আছে। শুনতে ভাল লাগে না। এটা যদি খারাপ বা বর্জনীয়ই হবে, তাহলে তো "বাঙালী"" সংস্কৃতিও খারাপ। কারন পৃথিবীর ৯৫% বা তারও বেশি লোকের কাছে বাঙালীদের সংস্কৃতিই "বিজাতিয় সংস্কৃতি"। তার চেয়েও বড় কথা, দুনিয়ার কোন জাতি সম্পূর্ণ "বিজাতিয় সংস্কৃতি"-মুক্ত বিশুদ্ধ ও অনন্য স্বজাতীয় সংস্কৃতির অনুসারী? মানব সভ্যতার ইতিহাসের অখণ্ড পাঠ কিন্তু উল্টো সাক্ষ্য ও শিক্ষাই দেয়। অন্তত আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধি ও পাঠে সেই শিক্ষাই পেয়েছি। তাই আমি বরং দেখি বিশ্ব-ব্রম্মাণ্ডের তাবৎ সংস্কৃতিই আসলে "বিজাতিয় সংস্কৃতি"। বা অন্যভাবে ঘুরিয়ে বললে, সমস্ত সংস্কৃতিই আসলে আমার সংস্কৃতি। যার সব জায়গা থেকেই বেছে বেছে আমার ও আমাদের পছন্দমত, মনোমত ভালটা গ্রহণ করার আমি ও আমরা পূর্ণ অধিকারী। সবটাই মানুষের সৃষ্টি, সবটাই মানুষের সম্পদ, আর সবার আগে আমি ও আমরাও মানুষ। যাদের প্রায়োরিটি ভিন্ন, তাদের ব্যাপারে আমার আগ্রহ নাই।

২। শেকড়, পরিচয়, ইত্যাদি সম্পর্কে জানা থাকা ভাল, কিন্তু অবসেশন বা ফিক্সেশন ভাল না। 'পরিচয়' জিনিসটা অক্ষয়, অব্যয়, প্রাকৃতিক, চিরস্থির বা চির-অপরিবর্তনীয় কোন ফসিল না, বরং একটা সেমিফ্লুইড, সংকর, বহুমাত্রিক ও বহুকেন্দ্রিক, সতত-নির্মানশীল-ও-পুনর্নির্মানশীল কৃত্রিম সাংস্কৃতিক প্রপঞ্চ।

****************************************

এক লহমা এর ছবি

চলুক চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

লিটারেল্লি নিচ্ছেন কেনো দাদা? সংস্কৃতি কোনো একক জাতিসত্ত্বার পৈত্রিক সম্পদ নয়। সংস্কৃতির আদান-প্রদান হবেই,হতেই হবে। কিন্তু প্রতিটি জাতির কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট থাকে যা তাঁকে অন্য জাতি থেকে আলাদা পরিচয় দেয়। শুধু পরিচয়ের জন্য নয় ,একটি জাতিসত্ত্বা হিসেবে বেড়ে উঠার জন্য তা জরুরীও বটে। উদাহরন দেই। যেমন মাদ্রাসার শিক্ষাব্যবস্থাতে যে ছাত্র/ছাত্রীরা বেড়ে উঠছে তাদের সাংস্কৃতিক চিন্তাধারা কি বাঙালীদের অরিজিনাল (এখানেও তর্ক আছে,আমাদের অরিজিনিও অবশ্যই ধার করা,বিবর্তিত) সংস্কৃতির সাথে মিল খায়? আরবী-উর্দু ভাষার ব্যবহার, ইতিহাসের নামে শুধু ইসলামের অতীত,রবীন্দরনাথকে হিন্দুদের কবি,নজরুল মানে হামদ-নাত, এগুলো কি তাঁকে পরিপূর্ণ বাঙালী করতে পারবে এখন আপনি যদি বলেন যে সমস্যা নাই। সেটাও সংস্কৃতি। পড়ুক না,ক্ষতি কি?তাহলে আমার সমস্যা আছে। একই কথা খাটে ইংলিশ মিডিয়ামের স্টুডেন্টদের বেলায়,আছে হিন্দি-কলকাতার সিরিয়াল এগুলোর ইম্প্যাক্ট । অজস্র উদাহরন টানা যায়। বিজাতিয় সংস্কৃতি বলতে সেগুলোকেই বুঝানো হয়েছে। মাইকেল থেকে রবীন্দ্রনাথ সবাই-ই পশ্চিম থেকে ধার করেছেন-কিন্তু নিজের মতো করে, সেটি আমাদের ভাষা-সাহিত্য-শিল্প কে সমৃদ্ধ করেছে। সেগুলোকে কেউ বিজাতিয় সংস্কৃতি বলছেন কি? হয়ত "অপসংস্কৃতি" শব্দটা বেশি ভালো যায় এখানে। কিন্তু প্রচলিত শব্দটাই ব্যবহার করলাম আর কি।

শেকড় নিয়ে জানার আগ্রহটা থাকা যে জরুরী সেটা ত অবশ্যই মানবেন,নাকি?বাঙালীর ইতিহাস নিয়ে আরো অনেক বেশি কাজ করা কি উচিৎ ছিলোনা? আজ যে মুক্তিযদ্ধ নিয়ে জাতি বিভক্ত এর দায় কি বুদ্ধিজীবী,লেখক,পরিচালক,শিল্পি এদের উপর বর্তায় না? মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে পরিমান কাজ হওয়া উচিৎ ছিলো তা কি হয়েছে? ডিকশেনারি মার্কা বই বের করলে কাজ হবেনা। সেগুলো পড়ার সময় খুব অল্প মানুষেরই আছে। সাধারন মানুষের মস্তিষ্কে প্রবেশ করে এমন ক'টি উপন্যাস লিখা হয়েছে?ক'টি সিনেমাতে আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখতে পেয়েছি?কাজ হলে এই হাসিনা-খালেদা কি তা বিকৃত করতে পারত?

আপনি আপনার দেশকে ভালোবাসবেন,আপনার জাতিকে ভালোবাসবেন,প্রয়োজনেই বাসবেন। কিন্তু তারমানে এই না যে "অতি-জাতিয়তাবাদী" হয়ে নিজেকেই শ্রেষ্ঠ মনে করবেন। সেটি ভুল দর্শন,যেমন ভুল নিজের অরিজিন সম্পর্কে না জেনে ,নিজের ঐতিহ্যকে ধারন না করে অন্ধ অনুকরন করে যাওয়া। চিরস্থির কিছুই না,সবকিছুই পরিবর্তনশীল। কিন্তু সেই পরিবর্তনের মাঝে নিজের আপন ঐতিহ্য যদি বিলীন হয়ে যায় তাহলে সংকর জাতি উৎপাদিত হয়। চারিদিকে তাকিয়ে কি আমরা সেই সংকর জাতির ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছিনা?

অতিথি লেখক এর ছবি

কাজ হলে এই হাসিনা-খালেদা কি তা বিকৃত করতে পারত?

হাসিনা কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির উদাহরণ দিতে পারবেন?

Emran

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।