বাংলাদেশের জন্ম তারিখ ও ইতিহাস চর্চা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১২/০১/২০১৫ - ১:৩৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

চাষী নজরুল ইসলাম মারা গিয়েছেন। তাঁর জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভংগি আর রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে তিনি অনেকের সমালোচনার যোগ্য হলেও তবে বাংলাদেশের সিনেমা শিল্পের পুরোধা ব্যক্তিদের একজন হিসেবে তিনি অবশ্যই শ্রদ্ধার পাত্র। আবেগের বশে অথবা হুজুগে মাতাল হয়ে অনেকেই চাষী নজরুল ইসলামের 'ওরা ১১ জন' সিনেমাটিকে বাংলাদেশের প্রথম সিনেমা, 'প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা' ইত্যাদি বলেছেন দেখলাম। কথাগুলো পুরোপুরি সঠিক মনে করি না।

এর কারণ আসলে বাংলাদেশের জন্মতারিখ তথা বার্থডে নিয়ে বিভ্রান্তি। তারিখটা কত? ২৬ মার্চ নাকি ১৬ ডিসেম্বর? এইটা ঠিক যে আমরা চূড়ান্ত বিজয় পেয়েছি ১৬ ডিসেম্বরে কিন্তু তার মানে এই না রাষ্ট্রের উদ্ভবও ১৬ তারিখে। মুজিব (২৬), হান্নান (২৬) ও জিয়া (২৭) এই তিনজনের ঘোষণার পরবর্তীতে এপ্রিল ১৭ ১৯৭১ তারিখে মুজিবনগর সরকারের সেই ঐতিহাসিক প্রোক্লেমেশন অফ ইন্ডিপেন্ডেন্সে স্বাধীন বাংলাদেশের শুরু ২৬ মার্চ ১৯৭১ ধরতে বলা হয়েছে। এই ঘোষণায় বলা হয়েছিলোঃ

”বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী প্রজাতন্ত্র ঘোষনা ও সংগঠন করছি এবং এতদ্বারা ইতঃপূর্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত স্বাধীনতার ঘোষনাকে সমর্থন করছি...এই ঘোষনাপত্র ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে কার্যকর বলে গণ্য হবে।” [ড. কামাল হোসেন অনুবাদকৃত]

আমাদের সংবিধান আরও অনেক পরে লেখা হলেও এই প্রোক্লেমেশন অফ ইন্ডিপেন্ডেন্সকেই স্বাধীনতার মূল দলিল বলা হয়েছে এবং সেই কারণেই সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের জন্ম ২৬ মার্চে।

বাংলদেশকে যদি ১৬ ডিসেম্বর থেকে স্বাধীন রাষ্ট্র বিবেচনা করলে অনেকগুলো সমস্যার উদ্ভব হবে। মুজিবনগর সরকার তাহলে অবৈধ হয়ে যাবে কারণ রাষ্ট্র না থাকলে সরকারের অস্তিত্ব থাকে কি? তাজউদ্দীন ও দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী থাকেন না তাহলে আর। বাতিল হয়ে যাবে মুজিবনগর সরকারের সমস্ত অর্ডিন্যান্স, চুক্তি, বাহিনী। ১৬ ডিসেম্বরে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু না ধরার আরেকটা কারণ হচ্ছে এই তারিখের আরও ১০/১২ দিন আগে থেকেই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভভাবে বেশ কয়েকটা দেশ কর্তৃক স্বীকৃত স্বাধীন রাষ্ট্র।

পাক আর্মিকে হানাদার বাহিনী, দখলদার বাহিনী ইত্যাদি বলার তাৎপর্য আছে। সাংবিধানিকভাবে ২৬ মার্চ থেকেই বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বলেই পাক আর্মিকে দখলদার বলা হয়ে থাকে। যাদের ‘স্বাধীন’ শব্দে বিভ্রান্তি দূর হচ্ছে না তাঁরা ইংরেজি সভ্রেনটি (sovereignty) আর ফ্রিডম (freedom) মাথায় রাখবেন। ২৬ মার্চ আমরা ফ্রিডম পাই আর ১৬ ডিসেম্বর পাই সভ্রেনটি। মাঝের ৯ মাস স্বাধীন বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল পাকিস্তানী আর্মির দখলে ছিলো আরকি।

মোট কথা, বই, সিনেমা হোক আর যাই হোক, ২৬ মার্চ ১৯৭১ থেকে বাংলাদেশ শুরুর তারিখ বিবেচনা করে প্রথম-দ্বিতীয় ইত্যাদি নির্ধারণ করা উচিত। তা না হলে ইতিহাস চর্চায় ভুল হবে।

এসব কারণে ওরা ১১ জন সিনেমাটিঃ

১/ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সিনেমা না। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের প্রথম সিনেমাও না। ৭২ সালের অক্টোবরে এই সিনেমা মুক্তি পাবার আগে আরও ১৬ টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছিলো।

২/ প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমাও নয়। সিনেমা শব্দটিকে আমরা যেহেতু বৃহৎ অর্থে গ্রহণ করি সেহেতু প্রামাণ্য চলচ্চিত্র তথা তথ্যচিত্র বা ডকুমেন্টারিও এর অন্তর্ভুক্ত। এই দিক থেকে বিবেচনা করলে যুদ্ধচলাকালীন সময়ে নির্মিত স্টপ জেনোসাইড স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সিনেমা এবং প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা।

৩/ পূর্ণদৈর্ঘ্য বিবেচনা করলে এবং সিনেমা হলে মুক্তির দিক থেকে বিবেচনা করলে ওরা ১১ জন প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা। কারণ স্টপ জেনোসাইড পূর্ণদৈর্ঘ্য না, হলে মুক্তিপ্রাপ্ত ও না।

অতিথি লেখক: আহমদ রনি।

তথ্যসূত্রঃ
১/ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র: আর্থ সামাজিক পটভূমি। আহমেদ আমিনুল ইসলাম। বাংলা একাডেমী (২০০৮)
২/ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প। মির্জা তারেকুল কাদের। বাংলা একাডেমী (১৯৯৩)
৩/ বাংলাদেশ সংবিধান।


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

২০০৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর সকালে প্রথম চোখে পড়ে 'শুভ জন্মদিন' বা 'হ্যাপি বার্থডে বাংলাদেশ'! সম্ভবত তখন থেকেই এই প্রচারণার শুরু। তাৎক্ষণিকভাবে সচলায়তনেই লিখেছিলাম এই পোস্টটি

লেখা ভালো লেগেছে, চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মরুদ্যান এর ছবি

চলুক

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

ধ্রুব আলম এর ছবি

অত্যন্ত প্রয়োজনীয় লেখা। চাষী নজরুল নিয়ে মাতমকারীদের একটু হুশ-জ্ঞান আনার জন্যে পড়ানো উচিত। চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

১।

১৯৭০ সালে ব্যবসায়ী ও চলচ্চিত্র প্রযোজক আবুল খায়ের ‘জয় বাংলা’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রয়াস নেন, যার পটভূমি হবে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফার ওপর ভিত্তি করে। সে মোতাবেক চিত্রপরিচালক ফকরুল আলম চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য তৈরি করেন এবং ছবির গান লেখার দায়িত্ব দেন গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে। এ সময় অন্য গানগুলোর সঙ্গে ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানটি লেখেন মাজহারুল আনোয়ার, সুর করেন আনোয়ার পারভেজ। শাহনাজ বেগম ও আবদুল জব্বার গানটিতে কণ্ঠ দেন। গোলাম আকবর, সুপ্রিয়া দেবী, হাসান ইমাম অভিনীত এ ছবি সে বছর সেন্সরে জমা পড়ে। তত্কালীন পাকিস্তানি সামরিক সরকারের পক্ষে ‘জয় বাংলা’ নামে কোনো চলচ্চিত্র প্রদর্শনের অনুমতি প্রদান করার ভাবনা কল্পনাতীত। অবশেষে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ২৬ জানুয়ারি মুক্তি পেয়েছিল চলচ্চিত্রটি।

২।

জয় বাংলা নামে প্রথম চলচ্চিত্র ঢাকায় তৈরি হলেও তা সময়মতো মুক্তি পায়নি। ফকরুল আলম পরিচালিত ওই ছবি মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র না হলেও এ স্লোগান শিরোনাম করে প্রথম যে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেয়েছিল, তাও ছিল বাঙালির তৈরি। তবে তা বাংলাদেশে নয়, ভারতীয় বাঙালির। উমা প্রসাদ মিত্র পরিচালিত ও ধীরেন দাসগুপ্ত প্রযোজিত ১৩ রিলের সাদা-কালো ভারতীয় চলচ্চিত্র ‘জয় বাংলা’। এতে অভিনয় করেছিলেন আলাউদ্দিন, আবদুল্লাহ হক, লোকমান হোসেন, গোলাম মোস্তফা, অরবিন্দ কুন্ড, সবিতা রায়, সুচরিতা মিত্র প্রমুখ। মিহির সেনের কাহিনী ও চিত্রনাট্য, মিঠু সিংহের চিত্রগ্রহণে, কমল দস্তিদারের শিল্প নির্দেশনায় এবং রমেশ জোসীর সম্পাদনায় নির্মিত এ চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, দীনেন্দ্র চৌধুরী ও সিকান্দার আবু জাফরের লেখা গানগুলোয় কণ্ঠ দিয়েছিলেন সুচিত্রা মিত্র, সুশীল মল্লিক ও অমর রায়। ১৯৭১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মাদ্রাজ সিনে ল্যাবরেটরির পরিবেশনায় জয় বাংলা প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে মুক্তি পেয়েছিল কলকাতার নিউ অ্যাম্পায়ার সিনেমা হলে।

মন মাঝি এর ছবি

আবেগের বশে অথবা হুজুগে মাতাল হয়ে অনেকেই চাষী নজরুল ইসলামের 'ওরা ১১ জন' সিনেমাটিকে বাংলাদেশের প্রথম সিনেমা, 'প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা' ইত্যাদি বলেছেন দেখলাম। কথাগুলো পুরোপুরি সঠিক মনে করি না।

আমি দ্বিমত করছি। এই সিনেমা প্রসঙ্গটা বরং অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে আমার কাছে। একাডেমিক বা বিদেশী মানে যাইই হোক, "সিনেমা" বলতে বাংলাদেশে সবসময়ই 'পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র'-ই বোঝানো হয়েছে। এই শব্দটা বহু আগে থেকেই এই অর্থেই বাংলায় গৃহীত ও আত্নীকৃত হয়ে গেছে। আমি অন্তত সত্তরের দশক থেকেই দেখে আসছি। সম্ভবত আরও অনেক আগে থেকেই এটা আত্নীকৃত। এই অর্থেই এটা এদেশে সংশয়াতীত ভাবে সুপ্রচলিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত। এখন হঠাৎ করে কারও এটাকে অন্য কোন রকম "বৃহৎ অর্থে গ্রহণ" করার সুযোগ আছে বলে মনে করি না। এই শব্দের অন্যকোথাও বা পরিমণ্ডলে ভিন্ন বা বৃহত্তর কোন সর্বস্বীকৃত ও সুনির্দিষ্ট একাডেমিক পারিভাষিক অর্থ বা প্রয়োগ আছে কিনা জানি না। নেইই মনে হয়, তবে থাকলেও আসলে কিছু আসে যায় না। প্রচলিত বা প্রতিষ্ঠিত সাধারণ অর্থ থাকলে একাডেমিক পারিভাষিক অর্থ বা প্রয়োগ শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট বিষয়ের একাডেমিক আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ রাখা দস্তুর - এবং স্বাভাবিক ভাষায় লেখা বা আলোচনায় প্রচলিত ও গৃহীত অর্থটাই সঠিক বলে গণ্য করা হয় এবং প্রায়োরিটি ও প্রিসিডেন্স দেয়া হয়। অন্য কোন অর্থে এটা গ্রহণ করতে যাওটাই বরং আমার কাছে আমাদের কণ্টেক্সটে ভুল মনে হয়। নেট ঘেটে দেখলাম, বিদেশী সাইটগুলিতেও "সিনেমা" বলতে 'সাধারনত টিকেট কেটে সিনেমা হলে দেখতে যেতে হয়' বা 'একক পূর্ণাঙ্গ প্রদর্শনী বা প্রোগ্রাম' এমন পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র-ই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বোঝানো হচ্ছে।

সুতরাং, আপনার এই বক্তব্যটা যদি সঠিক হয় ---

৩/ পূর্ণদৈর্ঘ্য বিবেচনা করলে এবং সিনেমা হলে মুক্তির দিক থেকে বিবেচনা করলে ওরা ১১ জন প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা।

-- তাহলে আর এই অপ্রয়োজনীয় নতুন এবং হয়তো বিভ্রান্ত বিতর্কের কোন প্রয়োজন দেখছি না। "ওরা ১১ জন প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা" - কথাগুলো [বরং] পুরোপুরিই সঠিক -ই মনে হচ্ছে। এখানে আবেগের বশে অথবা হুজুগে মাতাল হওয়ার কিছুই নাই।

...................................................

এই তুচ্ছ বিষয়ে এত বাক্যব্যয়ের কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু লেখাটার টাইমিং ও এর কিছু ভাষা আমার ভাল লাগেনি। চাষী নজরুল ইসলাম আমাদের দেশে অনেকের কাছেই শ্রদ্ধেয় বা প্রিয় একজন কৃতী পরিচালক ছিলেন। তিনি মাত্রই পরলোকগমণ করেছেন। তার বা তার কাজের সমালোচনা থাকতেই পারে। কিন্তু একজন কৃতী মানুষের (বা যে কারও, গোয়াযম-টাযম ছাড়া আরকি) ইহলোকত্যাগের অব্যবহিত পর-পরই তার সমালোচনা বা তার সংশ্লিষ্ট কোন বিষয়ে নেতিবাচক আলোচনায় মেতে উঠাটা ঠিক শোভনাতার পরিসীমায় পড়ে না বলেই মনে করি। এইরকম সময় শোক বা/এবং শ্রদ্ধা প্রকাশ করতে হয়। সেটা একান্তই পারা না গেলে এবং সমালোচনা করতেই হলে, সেই সমালোচনায় একটা সাময়িক শোভন বিরতি দিতে হয়। আমার জানামতে এটাই ন্যুনতম মানবিকতা, সভ্যতা ও সুসংস্কৃতির দস্তুর।

আর হ্যাঁ, একটা ভেগ (vague) এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে লেজিটিমেটলিই দেখা যায় এবং তেমন কোন মহা-ক্ষতিকর নয় এমন বিষয়ে নিজে কংক্লুসিভ যুক্তি-তথ্য-প্রমান হাজির না করে বিশাল সংখ্যক মানুষের প্রতি "হুজুগে মাতাল" জাতীয় বিশেষণ প্রয়োগ করাটাও ভাল লাগল না। বিশেষ করে তারা যদি একজন প্রিয় ব্যক্তির মৃত্যুতে শোক-প্রকাশকারী বা শ্রদ্ধাজ্ঞাপনকারী হয়ে থাকেন!

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

১/ প্রথম কথা হচ্ছে সিনেমা প্রসংগটুকু এই লেখায় প্লট ডিভাইস হিসেবে ব্যবহার করেছি। সে কারণেই এখানে সিনেমা নিয়ে আলোচনাটুকু সংক্ষিপ্ত রেখেছি। তাছাড়া এই ব্লগটির নাম খেয়াল করুন। “বাংলাদেশের জন্ম তারিখ ও ইতিহাস চর্চা” থেকেই ধারণা পাবার কথা মূল ফোকাস কোথায় ছিল আমার।

২/

একাডেমিক বা বিদেশী মানে যাইই হোক, "সিনেমা" বলতে বাংলাদেশে সবসময়ই 'পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র'-ই বোঝানো হয়েছে। এই শব্দটা বহু আগে থেকেই এই অর্থেই বাংলায় গৃহীত ও আত্নীকৃত হয়ে গেছে। আমি অন্তত সত্তরের দশক থেকেই দেখে আসছি। সম্ভবত আরও অনেক আগে থেকেই এটা আত্নীকৃত। এই অর্থেই এটা এদেশে সংশয়াতীত ভাবে সুপ্রচলিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত।

আপনার এই বক্তব্যের সাথে পুরোপুরি দ্বিমত প্রকাশ করছি।
সিনেমা/চলচ্চিত্র বলতে অনেকে বাণিজ্যিক, পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা বোঝে। এই ভুল ধারণাটি আসলে একটি বহুল প্রচলিত ক্লিশে। চলচ্চিত্র শব্দটিকে বৃহৎ অর্থে নেয়ার কথাটা আমার ব্যক্তিগত প্রস্তাবনা নয়। চলচ্চিত্রের অধিকাংশ বোদ্ধাই এরূপ ধারণা পোষণ করেন। আপনি কষ্ট করে গুগলে যেয়ে “definition of cinema” বা “definition of motion picture” লিখে সার্চ করলেই দেখতে পেতেন সবখানেই সিনেমা/চলচ্চিত্র বলতে পূর্ণ, স্বল্প, বাণিজ্যিক, আর্ট, ডকু সবকিছুকে মিলিয়ে ধরা হয়েছে।

আমি সিনেমার সংজ্ঞা দিয়ে এই কমেন্টটা বড় করলাম না। শুধু বাংলাদেশের আইনে সিনেমা/চলচ্চিত্র কাকে বলে সেটুকু উল্লেখ করছিঃ

‘‘চলচ্চিত্র’’ অর্থে সেলুলয়েড, এনালগ, ডিজিটাল বা অন্য যে কোন মাধ্যমে নির্মিত চলচ্চিত্র যেমনঃ পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনী চলচ্চিত্র, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, টেলিফিল্ম, কার্টুন চলচ্চিত্র, প্রামাণ্য চলচ্চিত্র, ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত হইবে;
[চলচ্চিত্র সংসদ (নিবন্ধন) আইন, ২০১১, ধারাঃ ২/১]

http://bdlaws.minlaw.gov.bd/bangla_all_sections.php?id=1081

৩/ আপনি লিখেছেন,

এই তুচ্ছ বিষয়ে এত বাক্যব্যয়ের কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু লেখাটার টাইমিং ও এর কিছু ভাষা আমার ভাল লাগেনি। চাষী নজরুল ইসলাম আমাদের দেশে অনেকের কাছেই শ্রদ্ধেয় বা প্রিয় একজন কৃতী পরিচালক ছিলেন। তিনি মাত্রই পরলোকগমণ করেছেন। তার বা তার কাজের সমালোচনা থাকতেই পারে। কিন্তু একজন কৃতী মানুষের (বা যে কারও, গোয়াযম-টাযম ছাড়া আরকি) ইহলোকত্যাগের অব্যবহিত পর-পরই তার সমালোচনা বা তার সংশ্লিষ্ট কোন বিষয়ে নেতিবাচক আলোচনায় মেতে উঠাটা ঠিক শোভনাতার পরিসীমায় পড়ে না বলেই মনে করি। এইরকম সময় শোক বা/এবং শ্রদ্ধা প্রকাশ করতে হয়। সেটা একান্তই পারা না গেলে এবং সমালোচনা করতেই হলে, সেই সমালোচনায় একটা সাময়িক শোভন বিরতি দিতে হয়। আমার জানামতে এটাই ন্যুনতম মানবিকতা, সভ্যতা ও সুসংস্কৃতির দস্তুর।

আমার লেখায় চাষী নজরুল ইসলাম ও তাঁর কাজের আলোচনা/ সমালোচনা কোনটাই করিনি। সমালোচনা করেছি তাঁর কাজ নিয়ে অন্যদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে।

৪/ ‘হুজুগে মাতাল’ শব্দটা সচেতনভাবেই চয়ন করেছি। যারা ‘প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র’ বলে দাবী করছেন তাঁরা জেনে-শুনে মিথ্যা বলছেন এমনটা আমার মনে হয়নি। বরং সিনেমা/চলচ্চিত্র সম্পর্কে তাদের ধারণা না থাকায় ঢালাও মন্তব্য করেছেন বলেই মনে হয়েছে। সেজন্যই এই শব্দের প্রয়োগ।

বিনীত, আহমদ রনি।

অতিথি লেখক এর ছবি

গুরু গুরু

মন মাঝি এর ছবি

১।
এমন উত্তর আসবে সেটা আগেই আন্দাজ করেছিলাম। খুবই প্রত্যাশিত উত্তর। আপনি আসলে আমার মূল বক্তব্যটি বোঝেননি। ভাবছিলাম আরও বিস্তারিত ব্যখ্যা করব, কিন্তু এখন আর আগ্রহ বোধ করছি না। শুধু এটুকু বলে রাখি --

চলচ্চিত্রের অধিকাংশ বোদ্ধাই এরূপ ধারণা পোষণ করেন।

এটা আমি জানি এবং "বোদ্ধারা" যে এরূপ ধারণা পোষণ করেন সে বিষয়েও আমি একমত।
কিন্তু --

সিনেমা/চলচ্চিত্র বলতে অনেকে বাণিজ্যিক, পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা বোঝে। এই ভুল ধারণাটি আসলে একটি বহুল প্রচলিত ক্লিশে

-- ২য় বাক্যটির সাথে আমি একমত নই। "বোদ্ধারা" কি মনে করেন না মনে করেন সত্বেও, আমার মতে এটা "ভুল"-ও নয়, "ক্লিশে"-ও নয়।

২।

চলচ্চিত্র != "সিনেমা"

৩। কেন?? আমার আগের মন্তব্যে সে সম্পর্কে কিঞ্চিত হলেও ইঙ্গিত আছে। আপনি হয়তো লক্ষ্য করেননি। আরও কিছু বলার ছিল, কিন্তু আপাতত এর চেয়ে বেশি তক্কে যেতে আগ্রহ, সময়, এনার্জি পাচ্ছি না। দুঃখিত।

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার বক্তব্য কোনও রকেট সায়েন্স নয় যে বুঝবো না।:p
কিন্তু এমন আপনার জুভেনাইল বক্তব্য একাডেমিকভাবে গ্রহণযোগ্য না।
আপনি যেহেতু দুনিয়ার সব সিনেমা বোদ্ধাদের মতামত ও বাংলাদেশের আইনের বক্তব্যকে গ্রহণ না করে আপনার নিজস্ব বক্তব্যেই স্ট্রিক্ট থাকতে চাচ্ছেন সেক্ষেত্রে কিছু করার নেই। জোর করে তো আর মতামত পাল্টানো যায় না।
আপনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, ব্যক্তিগত মতামতগুলো নিয়ে আগ্রহ আমাদের নেই।

ধন্যবাদ।

সুবোধ অবোধ এর ছবি

ফেসবুকে এটা নিয়ে আপনার বিতর্কটা দেখেছি। সচলে আপনার লেখা দেখে ভাল্লাগলো। লেখায় হাততালি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। সচলে লিখতে পারি না কারণ আইডি নেই আমার।আর এই বয়সে এসে এতগুলো ধাপ পার হয়ে আইডি বানাতে ধৈর্য্যও পাইনা। মন খারাপ

সুবোধ অবোধ এর ছবি

আর এই বয়সে এসে এতগুলো ধাপ পার হয়ে আইডি বানাতে ধৈর্য্যও পাইনা।

ভুল ধারণা। যাদের লেখা ভাল ও তথ্যসমৃদ্ধ এবং সচলায়তনের নীতিমালার সাথে সাংঘর্ষিক নয়, তাদের কিন্তু অ্যাকাউন্ট পেতে বেশিদিন লাগে না। হাসি লেখা চলুক।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল লিথেছেন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।