বইমেলা ২০১৫

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ০২/০২/২০১৫ - ১১:২৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সভ্য সমাজে বসবাসের কিছু বাই ডিফল্ট হ্যাপা আছে- সার্টের হাতায় সর্দি মোছা যাবেনা, জায়গামত চুলকানো যাবে নাহ, ফেসবুকে মানুষের আহ্লাদিতে বিরক্ত হয়ে গালি গালাজ করা যাবেনা।
অবশ্য “গালিটাও” কবিতা এখন। যাহোক কবিতা নিয়া আলোচনায় না যাই। কবিতা আগে থেকেই রহস্যময় ছিলো আর এখন তো পুরা “থিয়োরি অফ পার্সোনালিটি”- রিকশাওয়ালার মুখ থেকে যা বের হলে হয় গালি, নিউজপ্রিন্টে ছাপলে হয় “রসময়” সাহিত্য, তাই আবার প্রথমা দামী কাগজে ছেপে দিলে- পুরষ্কারপ্রাপ্ত কবিতা।

যা হোক। বলতেছিলাম, সভ্য সমাজের নানান হ্যাপা, তবে হ্যাপার ভালো দিকও আছে। অনেক পোলাপাইন বিদেশে সাত-আট দিন কাটাইয়াই, দেশরে মিস করি বলে ফেসবুক ভাসায় ফালায়। মনে হয় কানসা বরাবর একটা থাপ্পড় দেই। দেশেতো আছে ফরমালিন, ট্রাফিক জ্যাম আর অন টপ ওফ দ্যাট পেট্টল বোমা- আর এই দেশের জন্য বিদেশ গিয়া কান্দন! আহ্লাদ!এইসব কথা অতি ন্যা্য্য কথা মনে হইলেও, হ্যাপার ভয়ে কোনদিন বলা হয় নাই। রাখে আল্লাহ, মারে কে – কপাল ভালো বলি নাই। বললে এখন নিজের কথা নিজের গিলতে হইতো।

চাকরির জন্য বৈদেশ আসছি প্রায় তিন সপ্তাহ। নানারকম দৌড়-ঝাপে ব্যস্ত থাকলেও, স্কাইপি-ভাইবারের বদৌলতে পরিবার-পরিজনরে মিস করার কোন সুযোগ নাই। তাও মাঝে মাঝে বুকের মইধ্যে একটা হাল্কার উপর ঝাপসা “কেমন জানি” ফীল হয়, কিন্তু “দেশরে মিস করি”- টাইপ আহ্লাদিতে আমি নাই।

মোটামুটি দিন চলে যাইতেছিলো, ভেজাল লাগলো ফেব্রুয়ারী মাসটা আইসা, “কেমন জানি” ফীলটা স্পষ্ট “দুঃখ” লেভেলে চলে গেলো।

যখনই মনে পড়ে, বইমেলা শুরু হইছে আজকে একদিন আর আমি অফিসের পর বইস্যা “নিরাপদে” পিয়াজ কাটি- বুকের মধ্যে একটা হুহু বাতাস বয়।
“হু হু বাতাস”-টারে আগে বইপত্রে পড়লেও ঠিক খাই নাই, ভাবছিলাম বেহুদা আহ্লদীপনা। জিনিষটা সেদিন স্পষ্ট টের পাইছি। সকল প্রকার নিরাপত্তা নিয়ে পিয়াজ কাটা শুরু করছি, হঠাৎ মনে পড়লো, গতকাল বইমেলার প্রথম দিন গেছে। কেমন জানি খারাপ লাগা একটা অনুভূতি, বুকের মধ্যে একটা খালি জায়গা, হঠাৎ করে জায়গাটা কিছুতে পূর্ণ হয়, আবার খালি হয়ে যায়- আজব একটা ব্যাপার।

নব্বই থেকে প্রত্যেকটা বইমেলাতে যাওয়া হইছে। সেই যখন বইমেলাতে গানের ক্যাসেট বিক্রি হইতো তখন আব্বুর হাত ধরে, তারপর বন্ধুদের সাথে, কলিগদের সাথে, এক সময় “হাতে হাতে ধরি ধরি সহচরী”র সাথে- একে একে চব্বিশটা বইমেলা পার করছি।
এইবার আর বইমেলাতে যাওয়া হবেনা। কবে আবার যাবো – কে জানে? ভালো লাগে নাহ, একদম ভালো লাগে নাহ...মনটা বড় খারাপ হয়...
কিন্তু হায় গরীব দেশের মধ্যবিত্ত, তার কাপড় থেকে কোট অনেক বড়। ইচ্ছার বিরুদ্ধে তারে এমবিএ করতে হয়, টাকার জন্য বহুজাতিক কোম্পানীর লাভ বাড়াইতে হয় আর তারপর দুঃখটাও চাপা রাখতে হয় ছদ্মনামের আড়ালে। কী লাভ মন খারাপের কথা চাউর করে পরিবাররে কষ্ট দেওয়ার। তারা জানুক, “পরসমাচার ভালো।”

----------
আইলসা


মন্তব্য

শিশিরকণা এর ছবি

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বইমেলা যাওয়া >খাইরুম মিন> নিরাপদে পিঁয়াজ কাটা।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

অতিথি লেখক এর ছবি

কিন্তু বইমেলাতে ঘুরে ঘুরে বই কেনার যে আনন্দ- তা কই পাবো বলেন?? মনটা বড় পোড়ায়!!!
- আইলসা

তিথীডোর এর ছবি

গতবার, এবার, আগামিবার-- তিনটা মেলা মিস।
...দেশের যে হাল, থাকলেও হয়তো যাওয়া যেতো না। মন খারাপ

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

হা, মন খারাপ করবেন না প্লিজ! আপনি বৈদেশে থাকার কারণে বইমেলায় যেতে পারছেন না। আর আমি ঢাকায় থেকেও যেতে পারছিনা। কারণ? প্রথমত আমি কিঞ্চিৎ অসুস্থ। আর মূল কারণ, গিন্নীর বারণ। তার কথা, অযথা রিস্ক নেবার কোন দরকার নাই। সত্যিই কি!

মেঘলা মানুষ এর ছবি

আহারে, বইমেলাটা না জানি কত মন খারাপ করে বসে আছে মন খারাপ

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাবতে ভালো লাগে বইমেলা ও হয়তো একটু মন খারাপ করছে অথবা কোন দোকানি মনে করছে, আহা অই ছেলেটা/লোকটারে এবার দেখলাম নাহ তো। সবই শেষ পযন্ত আকাশ আর কুসুমের মেয়ে কল্পনা!

অতিথি লেখক এর ছবি

তিথীডোর - একবার বইমেলায় না গিয়ে আমার যে খারাপ লাগতেছে, আপনার খারাপ লাগা নিশ্চয়ই তার থেকে অনেক বেশী। যদিও দেশ ছাড়ার সময় ঘোষনা দিছিলাম, ৫-৭ বছরেও দেশে যাবো নাহ। এখন মনে হচ্ছে নেক্সট ফেব্রুয়ারীতেই দেশে যাবো।

প্রৌঢ় ভাবনা - তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন, তারপর বইমেলায় চলে যান। বোমাবাজদের ভয় পাবেন নাহ। ভয় পেলে তো, ওরাই জিতে গেলো। আমি জানি নাহ, সরকার কেনো তারেক জিয়াকে দেশে এনে বিচার করে নাহ!!

শাহেনশাহ - "বিদেশ" নিয়ে লেখার কিছু এখন ও পাই নাই। উচু উচু বাড়িঘর, সুন্দর সুন্দর মানুষ জন, দামী গাড়ি আর "একই দুখ, একই ব্যথা, জীবনের ক্লান্তি ধূসর"

সুলতানা সাদিয়া - আমি ও আপনার বুদ্ধিমত কুরিয়ারের কথা ভাবছি।

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

এবার দুইদিন গিয়েছি এখন পর্যন্ত। গতবারের চেয়ে বেশি ই যাবো।

যেই "বিদেশে" আছেন, সেটি নিয়ে লিখুন। আশ-পাশ, মানুষ, সেখানের বাংলাদেশি এবং স্থানীয়দের মিথস্ক্রিয়া- আপনার এক্টিভিটি বাড়ার সাথে সাথে হতাশা কমে যাবে বলেই বিশ্বাস করি।

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

ঢাকা থেকে দূরে থাকায় এবার যাওয়া হবে কিনা জানি না। তবে বন্ধুদের মাধ্যমে কিছু নতুন বই কুরিয়ার করে আনবো ভাবছি। আশায় আছি, যদি একদিন যাওয়া যায়।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

মন খারাপ কইরেন না, আমরা গেলে আপডেট দিমুনে হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।