::::পাখির গল্প১-ইষ্টি কুটুম্ব::::

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১৮/০২/২০১৫ - ১২:৪৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


অনেকদিন আগে, সে কতদিন আগে জিজ্ঞেস করে লাভ নেই। রুপকথার তো আর সন তারিখ হিসেব থাকেনা। ওয়ান্স আপন এ টাইম, এদেশে এক বেনে পরিবার থাকতো। বেনেদের তিন ছেলে, তিনজনেই বিয়ে করেছে। তিনজনই অতি দজ্বাল। বৌ বেচারীদের ভীষন মারধোর করতো। এর মাঝে ছোট ছেলে ছিল আরো বদমাশ। সে বৌদের আরেক ডিগ্রি বেশী টর্চার করে। কোন ছুতো না পেলে ছুতো বানিয়ে নেয়, যেমন আজ তরকারীতে লবন বেশী হয়েছে, কাল চায়ে চিনি কম হয়েছে, অজুহাতের কোন সীমা নাই। ছেলে বদ হলেও তার বউটা ছিল ভারি লক্ষী। দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি তার গানের গলা। নিজের মনেই সুর করে গান গাইতো।
একদিন হয়েছে কি এই ছোট বউ রাঁধতে বসেছে, ভুল করে ডাল রান্নায় একগাদা হলুদ দিয়ে দিয়েছে। টের পাওয়ায় সে তো ভয়েই অস্থির। বেনে যেরকম বদ, সবসময় অজুহাত খুঁজে বউ পেটাতে। আজকে তো অজুহাতের দরকার নেই, রেডিমেড অজুহাত তৈরি। মনের দুঃখে বেনে বৌ বসলো দুঃখের গান গাইতে। গান গাইতে গাইতে মনের দুঃখে বেনের বৌ এক আশ্চর্য সুন্দর সুরেলা পাখি হয়ে যায়। আর ডালের সবটুকু হলুদ রঙ শুষে নিয়ে তার রঙ হয়ে গেল আশ্চর্য হলুদ। ডালে ডালে সুরেলা গলায় গান গেয়ে তার দিন কাটে। সেই থেকে বেনের সেই বউকে আমরা চিনি বেনেবৌ পাখি বলে। কেউ বলে ইষ্টিকুটুম্ব, কেউ বলে কৃষ্ণ কথা কও পাখি, আবার বেশীর ভাগ লোকই ডাকে জাস্ট “হলুদ পাখি” বলে। এই দলটা অবশ্য বেশ ভারি। স্বয়ং লালন সাঁইও এই দলে, গান লিখেছিলেন-“হলুদিয়া পাখি, সোনারও বরণ...” । ইংরেজী নামটাও অনেক সুন্দর, ব্ল্যাক হুডেড ওরিওল, মাথায় কালো হুড পড়ানো বলে। কেউ কেউ ভুল করে বলে ব্ল্যাক হেডেড ওরিওল। এই নামে একই প্রজাতীর একটা পাখি আছে, তবে সেটা আমাদের দেশে দ্যাখা যায়না। আফ্রিকার পাখি।

গাছের ফাঁক দিয়ে সন্দহের দৃষ্টিতে বেনেবৌ


ঢাকা শহরে বিরল চেরী গাছ। ফুল ফুটে সম্ভবত এপ্রিলে, চেরী ফুলে আয়েশ করে বসে ভোজন বিলাস


বেনেবৌ উভভোজী, ফুলের মধু যেমন খায়, তেমনি খায় পোকা মাকড়।
বেনেবৌ পাখি গ্রামের দিকে বেশ সমাদরের চোখে দ্যাখা হয়, শুধু সুরেলা গানের গলার জন্যে নয়। গ্রামের দিকে বিশ্বাস, এই পাখি বসত বাড়ির ভেতরে আসা মানে অতিথী আসার পূর্ব লক্ষন, তাই আরেক বাংলা নাম ইষ্টি কুটুম্ব বা অতিথ পাখি।
বেনেবৌ মোটেও বনের পাখি না, শহরে (এই ঢাকা শহরেই বিস্তর) গ্রামে মানুষের আশে পাশেই তার থাকা। বাংলা উপকথা সত্যি হলে এককালে মানুষ ছিল সেটা হয়তো ভুলতে পারেনা। ইষ্টি কুটুম্ব উভভোজী, অর্থাৎ ফুলের মধু যেমন খায়, তেমনি গাছের মধ্যে থাকা পোকা মাকড়ও খায়। সেই হিসাবে আমাদের খুবই উপকারী পাখি। উপকারী অপকারীর কথা যদি বাদও দেই, জাস্ট এর গানের গলাটা শুনলেই মন ভালো হয়ে যায়। নিচে এর কন্ঠের একটা নমুনা দিলাম। সব ছবিই ঢাকা শহরে বসে তোলা। ছবিগুলো আমার তোলা হলেও গানের গলাটা কিন্তু আমার রেকর্ড করা নয়। নেট থেকে সংগৃহীত। সাউন্ড রেকর্ডিস্ট সুদীপ্ত রয়, রেকর্ড করেছেন রবীন্দ্র সরোবর কলকাতা থেকে।
Black-hooded Oriole.mp3

সাঈদ সৌম্য
www.SHOUMMO.com

ফাইল: 

You are missing some Flash content that should appear here! Perhaps your browser cannot display it, or maybe it did not initialize correctly.


মন্তব্য

shimu sirazi এর ছবি

ভালো লাগল

আয়নামতি এর ছবি

মন ভালো করে দেবার মত গল্প শোনালেন ভাই!
বেনে বউ পাখি হয়ে ওর জল্লাদ বরটাকে ঠোক্কর দেয়নি গোটা দশেক? খাইছে
দিলে ভালু হতো। আপনার ছবি তোলার হাত বেশ ভালো।
সাইজটা এট্টু বড় হয়ে গেছে, সময়ে শিখে যাবেন এনশাল্লাহ!
বেনে বউয়ের গলা বেশ মিষ্টি! পরের বারে টাইপোর ব্যাপারে এট্টু যত্নবান হবেন কিন্তু দেঁতো হাসি
সচলে স্বাগতম। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

হা হা হা।
ছোট বেলায় এই পাখি দেখে দাদীর কাছে এই গল্প শুনেছিলাম, বিশাল গল্প, বাকীটা ভুলে গেছি, দাদিও নাই যে বাকিটা শুনে নেব।
আর বানান ভুল দেখলে পড়তে গেলে আমারও মেজাজ খারাপ হয়, লিখতে গেলে খেয়াল থাকে না, এত লজ্বায় পড়ি মন খারাপ
সাঈদ সৌম্য
www.SHOUMMO.com

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

তথ্যগুলো কোনো লেখায় ঢুকে পড়বে আশা করি। অগ্রিম কৃতজ্ঞতা দিয়ে রাখলাম। বলবার ঢঙটি কিন্তু দারুণ আপনার। শুভকামনা রইল।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপু।
সাঈদ সৌম্য
www.SHOUMMO.com

নিরুপম এর ছবি

গাছটা কি চেরী? না নীল গাছ (Indigofera tinctoria; common name true indigo)?

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি সঠিক জানি না, আম কাঠাল কলা নারিকেলের বাইরে গাছ চিনি না। এই গাছটা পেয়েছিলাম বোটানিক্যাল গার্ডেনে। ওখানে গাছের নিচে সাইনবোর্ডে জাপানী চেরী লেখা ছিল। হাসি
সাঈদ সৌম্য
www.SHOUMMO.com

মুক্তমন এর ছবি

একদম ঠিক সময়ে পোষ্টটা দিয়েছেন | আমাদের এদিকে বৃষ্টি হচ্ছে | সকালবেলা বৃষ্টির সাথে পাখির গান খুব জমল৷

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি ইউটিউব থেকে এক গাদা পাখির ভিডিও ডাউনলোড করেছি, চাকরি বাকরির খাতিরে বনে জঙ্গলে ঘোরা হয়না, কিন্তু যখন ভিডিওগুলো দেখি, ক্যামেরার ভিউফাইন্ডারে প্রিয় কোন পাখি দেখে শাটার টেপার আগে যেমন দম বন্ধ হয়ে আসে, ঠিক সেই অনুভুতিটা হয়। আপনার বৃষ্টি ভেজা পরিবেশটা আরো ভালো হবে- ইউটিউবে ব্ল্যাক বাজা, জর্ডান'স বাজা কিংবা এশিয়ান প্যারাডাইস ফ্লাইক্যাচার লেখে সার্চ দেন। দেখেন অন্যরকম লাগবে।
সাঈদ সৌম্য
www.SHOUMMO.com

জিপসি এর ছবি

সচলে স্বাগতম! ঝরঝরে সুন্দর লেখনী আপনার, ছবিগুলিও সুন্দর তুলেছেন!
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

------------------------------------------------------------------------------
জিপসিরা ঘর বাঁধে না,
ভালবাসে নীল আকাশ

অতিথি লেখক এর ছবি

হুম, অতিথী লেখক আইডি থেকে পোস্ট করছি অনেক দিন, সচলের সিস্টেম'টা এখনো ঠিক ধরতে পারি নাই, অথচ আমার বউ ঠিকই লেখার লাইসেন্স পেয়ে গেল। সে যাই হোক, লিখবো ইনশাল্লাহ!
সাঈদ সৌম্য
www.SHOUMMO.com

অতিথি লেখক এর ছবি

অ-নে-ক সুন্দর গল্প আর বলার ঢঙটাও। আপনি এমন আরও অনেক গল্প জানেন বুঝি? জানিয়ে দেবেন একটু একটু করে... শুভকামনা।

দেবদ্যুতি

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি গল্প জানি না ভাই, এই গল্পটা দাদির কাছে শোনা, ছোট বেলায় আমি ছিলাম সীমান্তবর্তী একটা শহরে, কাছেই ভুটান। আমার বড় চাচী ছিলেন ডুয়ার্সের মেয়ে। উনি বানিয়ে বানিয়ে তাজ্বব সব গল্প বলতে পারতেন, তার গল্প শুরুই হতো ভুটিয়া ডাকাত দিয়ে। তার কাছে শুনতাম ভুটানের অজগর নাকি দূর থেকে ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের মত করে আস্ত মানুষ বাতাস দিয়ে টেনে নেয়, ধনেশ (অনেক বড় হয়ে প্রথম দেখেছি) পাখি নাকি আস্ত মানুষ নোখে আটকে নিয়ে উড়ে যায়। সৌভাগ্যক্রমে উনি আজো বেঁচে আছেন। উনার সাথে নেক্সটে দ্যাখা হলে ব্লগের জন্য অনেক টপিক সংগ্রহ করে নিতে হবে।
হো হো হো
সাঈদ সৌম্য
www.SHOUMMO.com

অতিথি লেখক এর ছবি

কী ভালো! এই তো আপনার শোনা গল্প থেকে আবার একটু শুনতে পেলাম-খুশি লাগছে। বড় চাচির সাথে আপনার দেখা হওয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে এবার হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সুদীপ্ত রয়ের রেকর্ডিং শুনে একটু বিভ্রান্ত হলাম। ইস্টিকুটুমের ডাক বহু বার শুনেছি। সেটা কানে অনেকটা 'ঈস্টিকুউটুম্‌' শোনায়।

সচলে স্বাগতম। পোস্ট ভালো লেগেছে। দুহাত খুলে লিখে যান।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

এক লহমা এর ছবি

চলুক পোস্ট ভালো লেগেছে। সচলে স্বাগতম।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

সচলে আমার কোন কমেন্ট ই আজ ৪-৫ দিন ধরে প্রকাশিত হয় না। অথচ আমি প্রত্যেকটা লেখাতে অনেক বারই কমেন্ট করেছি । তাই এখন শুধু পড়ি কমেন্ট করি না।এটা প্রকাশিত হলে আশ্চর্য হবো।

----------------
রাধাকান্ত

অতিথি লেখক এর ছবি

দাদীর কথক নাতির গল্প বলার ঢংটি চমৎকার । ছবিগুলিও সুন্দর।আপনার প্রকৃতি প্রেম অক্ষয় হোক ।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি বেনে-বৌ এর গল্প জেনেছি অন্য রূপে,

বেনে বাড়ির সাত বৌ আর ছোট বউ এর বর বেশি অত্যাচারী। সপ্তাহে সাত দিন সাত বউ কে রান্না করতে হয়। যেদিন ছোট বঊ এর রান্নার পালা সেদিনই ঘটল বিপত্তি। সব রান্না শেষ, ডাল বাকি কিন্তু ডালে হলুদ দিচ্ছে কিন্তু রঙ হচ্ছে না। বউ ডালে হলুদ দেয় আর দেয় কিন্তু কিছুতেই ডালে রঙ ধরে না। তখন সে ডালের হাঁড়ি মাথার উপর তুলে নিজের মাথায় আঘাত করে, ডালের হলুদ পড়ে গায়ে আর হাঁড়ির কালি পড়ে মাথায়, বেনে বৌ পাখি হয়ে উড়ে যায়

অর্হণের মা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।