হারামজাদা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ২৩/০২/২০১৫ - ৪:৩৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ওভারব্রিজের অন্ধকার একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে আলো দেখছিল পলাশ। অন্ধকার থেকে আলো দেখার আলাদা একটা মজা আছে। এখনো বেশ ভিড় ব্রিজের উপরে। অনেক লোকজন এপাশ ওপাশ দিয়ে খালি নামে আর উঠে, হনহন করে হাঁটে। ‘প্রতিদিন এরা কই যায় এতো?’ পলাশের মনে হয়। পলাশ তার এখনকার নাম। আগে নাম ছিল সয়ফল। তেমন জুতের নাম ছিল না। সয়ফল বা পলাশ, অথবা পলাশ বা সয়ফল আদতে একটা বেজন্মা। তার আলাভোলা মুখ দেখে তা বোঝার উপায় নেই। আগে কেবল জন্মসূত্রেই বেজন্মা ছিল এখন কাজে-কর্মেও বেজন্মা। সাহসের অভাব নাই একটুও। রাস্তায় গাড়ি-টাড়িতে আগুন লাগলে, সবাই যখন দৌড় দেয়, পলাশ তখন কাছে যায় বরং। কিছু দামি জিনিস পাওয়ার লোভে। পায়ও মাঝে মাঝে। ডরপুক লোকজন দৌড়ের সময় কোনো খেয়াল করে না। হয়তো কেউ মানিব্যাগ বার করে ভাড়া দিচ্ছিল, এর মাঝেই আগুন, তো মানিব্যাগ-টানিব্যাগ ফেলে দে দৌড়। কেউ কেউ জুতা-স্যান্ডেল ফেলে দৌড়ায়, কেউ হাতব্যাগ রেখে যায়। এইগুলা যা যা পায় পলাশ কুড়িয়ে নেয়। ‘ইদানিং বেশ ভালো হইছে, নজর সজাগ রাখলেই কামাই মিস নাই, গলি-ঘুপচি বা ব্রিজের চিপায় দাঁড়ায়া মামু খোঁজন লাগে না। রিস্কও কম। একটু সাহস থাকলেই চলে।’ ভাবে পলাশ।

পলাশ এই শহরে এসেছিল কবে ঠিক জানে না। খালি মনে আছে, বৃষ্টির দিন ছিল। আর ওই হোঁদলকুতকুতে চেহারার এক বন্ধু, তার চাইতে বয়সে বড়ই হবে, তারে পলান্তিস খেলার কথা বলে ট্রেনে করে নিয়ে এসেছিল। তার নাম এখন সে মনে করতে পারে না। তবে মনে আছে, একটা স্টেশনে পেশাব করতে নেমে সে আর আসেনি। আর তার খুব ক্ষুধা লেগেছিল। ট্রেনের দরজার পাশে কোনোরকমে আটশাট হয়ে দাঁড়িয়েছিল সে। তার পেছনে সারাক্ষন পান খেতে থাকা লোকটি অনেক্ষণ পর তার হাতে একটি পাউরুটি গুঁজে জানতে চেয়েছিল তার নাম। সে তখন অকুল পাথারে পড়েছিল। এমনকি নিজের নামটাও ভুলে গিয়েছিল সে। তার তখন সেই বন্ধুর কথা বেজায় মনে হয়েছিল। বিড়বিড় কের খালি বলেছিল ‘হারামজাদা’। কিন্তু কী আশ্চর্য লোকটি তা শুনে ফেলে। লোকটি উত্তরে বলেছিল ‘তা আমিওতো হারামজাদা, আসলে সব শালাই হারামজাদা, তাই বইলে একটা নাম থাকতে নাই?’ শুনে চমকে উঠেছিল সে। তাড়াতাড়ি শুধরে নাম মনে করার চেষ্টা বাদ দিয়ে বলে ফেলেছিল ‘সয়ফল, নাম সয়ফল’। ‘তা ভালো, সাইফুলও না, সয়ফুলও না, সয়ফল, বেশ বেশ’। সেই যে তার নাম সয়ফল হলো তা পলাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত আর বদলালো না। এখনো তার রেশ রয়ে গেছে। ভুয়া নামের ধারে খুন হয়ে গেছে আদি নাম।

সেই লোকটার সাথেই তখনকার সয়ফল এসে নেমেছিল কমলাপুর স্টেশনে। পরে জেনেছিল লোকটার নাম মজিদ, সবাই ডাকতো ল্যাঙড়া মজিদ বলে। আগে স্টেশনের কুলি ছিল। কিন্তু মাল টানাটানির সময় একটা ভারি বস্তা পায়ের উপর পড়লে তার নলিতে চিড় ধরে। এখন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে পারলেও মাল বইতে পারে না। তবে কিছুতো একটা বয়। কিছু বহন করা ছাড়া যেহেতু কারো কোনো নিষ্কৃতি নাই তাই মজিদকে কিছু না কিছু বইতে হয়। সেটা কী? তেমন কেউ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারে না। নানান কানাঘুঁষা শোনা যায়। সবাই যা দেখে তা হলো, ল্যাংড়া মজিদ দুইদিন পরপর ট্রেনে চড়ে আর কয়দিনে জন্য উধাও হয়ে যায়। তারপর যখন ফিরে সাথে কোনো না কোনো পোলাপান থাকে। সাথে আসা পোলাপানগুলার মধ্যে মেয়ের সংখ্যাই থাকে বেশি। মজিদকে স্টেশনের উঁচু থেকে নিচুতলার প্রায় সবাই চেনে, সমঝে চলে। আর মিজদ সমঝে চলে মেরিনাকে। মানে চলতো আর কি।

সয়ফল যখন প্রথম এখানে এসেছিল তখন তার বয়স আর কতোই ছিল, বড়জোর ৮ কি ৯ বছর। মজিদের সাথেই থাকতো। পরে মেরিনার সাথে সে থাকা শুরু করে। মজিদও থাকতো মাঝে মাঝে। মেরিনার সাথে থাকার সময়টায় সয়ফল খুব ভালো ছিল। নিয়মিত খাবার জুটতো, অন্তত খাবারের জন্য নিজের চিন্তা করতে হতো না। এই কারণে এখনো পেট খালি থাকলে মেরিনার কথা মনে পড়ে। মেরিনার গায় কেমন একটা মা মা গন্ধ ছিল। যদিও সয়ফল জানতো না মায়ের গন্ধ কেমন। কিন্তু তার এমনই মনে হতো। প্রথম প্রথম লজ্জার কারণে ইশারা, ইঙ্গিতে ডাকলেও পরে মা বলেই ডাকতো।

মেরিনাকে প্রথম দিকে কোনো কাজ করতে সে দেখেনি। কিন্তু একবার মজিদ ট্রেনে চড়ার পর ১০দিন পার হয়ে গেলেও যখন সে আর আসলো না তখন সয়ফল একদিন দেখলো যে রাত হয়ে গেলেও মেরিনা মানে তার মায়ের দেখা নাই। তার পেট তাঁতাচ্ছে তখন। সে এদিক ওদিক খুঁজে না পেয়ে, তাদের শোয়ার জায়গা মানে মালঘরের সামনে এসে বসে থাকলো। অনেকক্ষণ বসে থাকার পর কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল তার মনে নেই। কিন্তু ‘ও সয়ফল ওঠ, এইটুক খাইয়া নে, এর বাদে ঘুমাইস।’ মা’র কণ্ঠে ঘুম ভেঙে উঠে হলবলিয়ে তাকিয়ে ছিল সয়ফল। এই ঘটনা সে জীবনেও ভুলবে না। কারণ আর কিছু না, সেইদিনের ভাতের সেই স্বাদ, ‘আহ, কতদিন হইলো তবু মুখে লাইগা আছে।’

তারপরে মেরিনার এই সান্ধ্যকালীন ব্যস্ততা আরো বেড়ে যায়। প্রথম প্রথম না বুঝলেও পরে সয়ফল বুঝেছিল অচল ট্রেনের বগির ভিতরেই মেরিনার জরুরী কাজ থাকে। বোকার মতো মাঝে মাঝে সেখানে সে চলে যেত। মাঝে মাঝে তাড়াতাড়ি চলে আসতো মেরিনা, মাঝে মাঝে দেরী হতো খুব। যেদিন দেরী হতো সেদিন সে খুব আনমনা থাকতো। আর কেমন একটা মন খারাপ করা গলায় সয়ফলকে ভালো ভালো কথা বলতো। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার বলেছে ‘তুই আমার মতো হবি না, ল্যাংড়ার মতোও না, তুই ভালো হইস’। এই কথা তার কানে এখনো বাজে খুব।

তারপর যেদিন মজিদ ফিরে আসলো, তার পরদিন মেরিনাকে চলে যেতে হলো। সয়ফল তখন ছিল না কাছে-পিঠে। থাকলে যেতে দিত না, এটা সে এখনো দৃঢ়ভাবে ভাবে। দুদিন পর, এসে তার হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে মা বলেছিল তাকে, ‘এইগুলা যেন, ল্যাংড়ায় না দেখে। আর সকালে আমি ব্রিজের উপরে থাকমু, তুই যদি সকালে উঠতে পারস আমার লগে চাইলে দেহা করিস’। সয়ফল মায়ের সাথে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু অসুবিধা আছে জেনে আর যাওয়া হয়নি।

সয়ফল সেসময় নিয়ম করেই ভোরে উঠতো। ব্রিজের উপর গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো, কী রোদ, কী বৃষ্টি। মাঝে মাঝে কাঁদতো মেরিনা চলে যাওয়ার সময় হলে। নানান কিছু বুঝ দিয়ে মেরিনা চলে যেত। তারপর একদিন ভোরে গিয়ে দেখে মেরিনা আসেনি। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে, রাগে ক্ষোভে সে মেরিনাকে, নিজের মাকে অনেক গালি গালাজ করে চলে এসেছিল। পরে তার খারাপ লেগেছে অবশ্য। হোক সে পাতানো মা তার, কিন্তু মা-তো। মায়ের আসল-নকল বলে কিছু থাকে না। কিন্তু কষ্ট প্রকাশের জন্য তার কাছে সদ্য শেখা গালিগুলো ছাড়া আর কোনো সম্বল ছিল না। তারপর এভাবে যখন ১০-১৫দিনেও মা এলো না, তখন সয়ফল নিজের মনেই বুঝে নিয়েছিল যে, সে আসবার নয়। সয়ফল নিজের মতো করে তখন নরক খুঁজে বার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ শহরে অজস্র নরক পায়ের কাছে গোল হয়ে বসে থাকে। চাইলে যে কোনোটিকে যে কেউ তুলে নিতে পারে। সয়ফলও তুলে নিয়েছিল। তখন তার স্বরভাঙা বয়স। বাড়ন্ত শরীরের সাথে লেগে থাকা বেঢপ হাতগুলোও বেশ সবল। সেই সবল হাতেই সে জোগাড় করেছিল তার প্রথম পুঁজি যা দিয়ে সে বহুদিন ধরে স্বপ্নে দেখা চকচকে ছোরাটা কিনে নিয়েছিল। মনে মনে বলেছিল ‘মা আমার আর ভালো হওয়া হইলো না, তয় বড় হইলে আর যাই হই ল্যাংড়া হমু না কনোদিন’।

সয়ফল সেই থেকে ব্রিজের উপর অন্ধকারে বা নিচে সিঁড়ির ঘুপচিতে দাঁড়িয়ে থাকে মামুর খোঁজে। রাত গাঢ় হয়ে এলে লোকেরা ভীতু হয়ে ওঠে। জং ধরা ছুরিতেই কাজ সমাধা হওয়া সম্ভব। ওই মাথার রোকোইন্যা তাই দিয়ে কাজ করে। আর সয়ফলেরটাতো রীতিমতো চকচকে। দারুণ কাজ হয়। মাঝে মাঝে পিটুনি খেতে হয়। টহল পুলিশ ভয় দেখায়। অবশ্য সব দিন না। যেদিন তাদের পেটে টান পড়ে, কামাই খারাপ হয় সেদিনই কেবল তাদের মতো বেজন্মাদের তারা ধরে, কিছু পাওয়ার আশায়। এতে সয়ফল কোনো দোষ দেখে না। দুনিয়াতো এমনই। তার বরং মাঝে মাঝে পুলিশের জন্য মায়া লাগে খুব। ‘কেমন ভ্যবলা এগুলা। এরুম একটা বন্দুক থাকলে সে কতো কী না করতো, আর এরা খালি কান্ধে নিয়া টহল দেয়।’

সয়ফলের পলাশ হয়ে ওঠার গল্পটা আরো অনেক বড়। এতো কথা বলার সময় নেই। কারণ একটু পরেই ঘটবে আসল ঘটনাটা। সয়ফল নেমে যাবে ব্রিজের উপর থেকে। মানে এখন যে ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে সে আলো দেখছে সেখান থেকে। সব ব্রিজতো আর এক না। মানুষও এক না। নামতে হয়, উঠতে হয়, উধাও হতে হয়, ফুরিয়ে যেতে হয়। যা হোক পলাশ হয়ে ওঠার গল্পটা অল্প কথায় সেরে নেয়া যাক।

তখন ১৩ সাল। ফেব্রয়ারি মাস। শহরে মেলা হয় এ সময়। সে আর তার ক’জন সাঙাত মিলে একটা খেপে মেলার দিকে যায়। হাতে বেশ কিছু কৌটা। সুবিধামতো জায়গা পেয়ে এই কৌটাগুলো ছুঁড়ে মারতে হবে। কাজ কিছুই না, ২-৩ মিনিটের। তারপর সোজা, কমলাপুর ব্রিজের নিচে এসে রাত দশটার দিকে দাঁড়াবে। তখন মাদ্রাসার ছোট হুজুর, যে তাদেরকে মাঝে মাঝে এসে নসিয়ত করে, আর যে কিনা কৌটার প্রশিক্ষণ দিয়েছে এসে তাদের পাওনা বুঝিয়ে দেবে। সোজা কাজ, ইনকাম বেশি।

তো সয়ফলরা এসে, সেই মেলার এদিকটাতে ঢুকতেই তাদের চোখ ধাঁধিয়ে গেল। রোকন বুদ্ধি দিল, এহন মারা যা, পরে মারাও তা, ল আগে ঘুইরা দেহি। সয়ফল ভাবলো কথাটা মন্দ না। আর তার এইসব গান-বাজনা, সাজ-পোশাকের মানুষ খুব ভালো লাগে, রঙিন রঙিন বই দেখে তার চোখে ধন্ধ লেগে গেল। একটা ফুচকার দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মানুষের হাসি দেখছিল সে। এক আপা তার হাতে আধ খাওয়া প্লেটটা গুঁজে দিয়ে বলেছিল, খাও বাবু। তার কেমন যেন লেগেছিল। এক মেরিনা ছাড়া তাকে এভাবে কখনো কেউ কিছু দেয়নি। সে না নিয়ে পারেনি। এমনিতে তার স্বভাবে চেয়ে খাওয়ার অভ্যাস নাই। আছে কেড়ে নেয়ার অভ্যাস। প্রথমটা তার মা-ই তাকে শিখিয়েছিল। দ্বিতীয়টা শিখতে কারোর মাস্টারির দরকার হয় না।

তারপর সয়ফলরা নানান মাইকের আওয়াজের সাথে ভাসতে ভাসতে শাহবাগে এসে পৌঁছেছিল। সেখানে সে কী মানুষ। ছোট-বড়, কতো রকম। সবাই স্লোগান দিচ্ছে। সিনেমা দেখাচ্ছে, গান হচ্ছে, সবাই কেমন যেন। এইসব দেখে সয়ফল কেমন হয়ে যায়। তার পাশ দিয়ে তার মতোই একটা ছেলে স্লোগান দিতে দিতে দৌড় দিলে, তার ঘোর ভাঙে। সে তখন তার সাঙাতদের বলে, ল আমরাও দেই। পারবে না বলে দোনোমনা করলে, সে বলে পারুম না কেন, আমার লগে লগে দিবি। এইভাবে বেশ কিছুক্ষণ স্লোগান দিলে পরে তাদের খুব ক্লান্ত লাগে। ক্ষিধাও পায়। তখন তাদের কৌটার কথা মনে পড়ে। তারা আড়ালে যায় এবং অনেকটা দুর্ঘটনাবশতই বা ইচ্ছাকৃতভাবেই তাদের পিশাব লাগে। তারা পিশাব করতে ফাঁকা জায়গায় যায়। তারপর খেলতে খেলতেই সেই কৌটাগুলোর উপর তারা পিশাব করে দেয়। তারা জানে না তাদের হুজুরি খানার সম্ভাবনার উপরই আসলে সেদিন তারা পিশাব করেছিল।

তারপর তারা আবার ভিড়ে মিশে যায়। এবং একের পর এক স্লোগান দিতে থাকে। তো সেখানে এভাবে থাকা শুরু করে। খাবারো জুটে যায়। তাদের ভালোই লাগে। এইসব না বোঝা স্লোগানের সাথে মাতালের মতো দুলতে। তারপর এভাবে থাকতে থাকতেই সয়ফল সেখানে শোনা একটা গানের শব্দ ধার নিয়ে নিজের নাম বদলে নেয়। তার এই নামটা ভালো লেগে যায়।

কিন্তু সুদিন বেশিদিন টিকলো না। তার আবারো ফিরে আসতে হয় সেই স্টেশনে। কিন্তু এবার তাকে হুজুররা তাড়া করে। তারা ভোলেনি। সে কদিন দাঁত-মুখ খিঁচে টিকে ছিল। বেশ কবার মারামারিও করেছে। কিন্তু এইসব ভাল লাগছিল না। তাই সে এখন অন্য একটা ব্রিজে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এখন এখানে দাঁড়িয়েই সে আলো দেখে। এখন আবার সুদিন অবশ্য। এটা অন্যরকম সুদিন। সব সুদিনের রূপ এক না। যেমন সব সুদিন সবার জন্য না। কিন্তু আজ কী হলো এখনো একটা গাড়িও জ্বললো না। তাহলে সে খাবেটা কী? আগের খেপের টাকা শেষ। পকেট ফাঁকা। এভাবে চললেতো না খেয়ে মরতে হবে।

এইসব ভেবে কিছুটা বিরক্ত হয়েই পলাশ নেমে আসে ব্রিজ থেকে। মূলত একটা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ছুটতে দেখে সে ব্রিজ থেকে নামে। সে নিশ্চিত যে, আশেপাশে কোথাও আগুন লেগেছে ঠিক। তাই সে মোটামোটি হনহন করে হাঁটতে থাকে। গিয়ে সত্যি সত্যিই একটা গাড়ি পায়। বাইরে থেকে জ্বলছে। ভেতরেও বেশ খানিকটা ছড়িয়ে পড়েছে। সে সেদিকে আগায়। ডরপুক লোকজন ছুটতে শুরু করেছে। সে এগিয়ে বাসটার ভিতরে ঢুকে। একটা হাতব্যাগ দেখতে পেয়ে যখনই সে তার দিকে হাত বাড়াবে তখনি একটা কণ্ঠ তাকে পাথর করে দেয়। ‘সয়ফলরে তুই নাইমা যা, এইহানে কী করস তুই’। মেরিনার কণ্ঠস্বর। সে উদভ্রান্তের মতো খুঁজতে থাকে। শেষ পর্যন্ত পায়ও। বাসের পিছনের দিকে একটা সিট থেকে কণ্ঠটা আসছে। সে সেদিকে যায়। ‘আইস না বাপ, নাইমা যা, নাইমা যা’ অনেক কষ্টে কথাগুলো বলে মেরিনা। বেজন্মা, সয়ফল বা পলাশ, নামতে পারে না, সে শুধু এগিয়ে যেতে থাকে সেদিকে। তার পক্ষে এই ক্ষুধা নিবারনি আগুনে নিজের মাকে একা একা ঝলসে যেতে দেয়া সম্ভব হয় না। তাই সে এগিয়ে যায়। ঝলসে যাওয়ার জন্য, নিজের মায়ের সাথে মরে যাওয়ার জন্য, যার বা যাদের স্থান বার্ন ইউনিটেও হবে না। সে জানতো এসব কথা। সব হারামজাদাই জানে যেমন।


মন্তব্য

মুক্তমন এর ছবি

শেষটা সুন্দর৷

অতিথি লেখক এর ছবি

বাকিটা? ধন্যবাদ

স্বয়ম

অতিথি লেখক এর ছবি

সুন্দর লেখা কিন্তু বড্ড মন খারাপের মন খারাপ

দেবদ্যুতি

অতিথি লেখক এর ছবি

সময়টাইতো মন খারাপের।

পাঠ ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

স্বয়ম

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

যা ভাবছিলাম, নাম সই করি নাই।

স্বয়ম

অতিথি লেখক এর ছবি

" হোক সে পাতানো মা তার, কিন্তু মা-তো। মায়ের আসল-নকল বলে কিছু থাকে না।"

এই লাইনটাই মন খারাপ করার লাইন। মন খারাপ হয়েছে সাথে গম্ভীরতাও এসেছে।চলুক এভাবে।

------------
রাধাকান্ত

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক
প্রথম অংশ পড়ে হাড্ডি খিজিরের কথা মনে পড়ছিল।
শেষাংশ পড়ে ধাক্কা খেয়েছি, এমন হতে পারে বুঝি নি।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

ধাক্কা খাওয়ার মতো ঘটনা, চারপাশে ঘটতেছে। কিন্তু আমরা সংবাদ হিসাবে দেখতেছি-- আগে মাথায় ঢুকতো, মনে ঢুকতো না। এখন চোখে কানে ঢুকলেও মাথায় ঢোকে না।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

স্বয়ম

অতিথি লেখক এর ছবি

হাড্ডি খিজির মনে দাগ টানা চরিত্র, প্রভাব থাইকা যাওয়া অস্বাভাবিক না।

স্বয়ম

এক লহমা এর ছবি

চলুক
প্রথম তিনটি অনুচ্ছেদ বেশি সাবলীল লেগেছে।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

পরেরগুলা কি একটু গুলাইয়া গেছে? আমি সব সময় আতঙ্কে থাকি এই নিয়া।

এক পিচ্চিরে পড়াইতাম, ব্যাপক ভালো স্টুেডন্ট। কিন্তু পরীক্ষায় গোল্লা পাইতো। অনুসন্ধানে জানলাম, সে লেখা নিজের ভাষায় লেখে।

যেমন- আমার একটি গাড়ি আছে- ইংরেজি কি?
পিচ্চি- আই হ্যাভ এ কার।
- লেখতো
পিচ্চি লিখলো- আই কার।
-কী লিখছো?
পিচ্চি- আই হ্যাভ এ কার।

আমার এই দশা হয়। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

স্বয়ম

হিমু এর ছবি

সচলায়তনে নিবন্ধন করে ফেলুন।

অতিথি লেখক এর ছবি

হিমুদা, আমিতো নিবন্ধন করছিলাম। যদিও দরকারি তথ্য সব ভুইলা গেছি। কয়েকটা পোস্টও দিছিলাম। নিয়মিত ঢুকি। কিন্তু ভীষণ গতির ইন্টারনেট আর বাকি অনেক কিছু মিলে মন্তব্য বা পোস্টে সচল থাকা হয় না (আসলে আইলসামি)।

অধমের একটা লিরিকে আপনি সুর বসাইয়া গাইছেনও (গনজাগরণ মঞ্চের সময়টায়-‘লাল মাখানো ভোরে’)।

আর জানি, যে সচলই এক সময় হাচল করবো যদি নিজে সচল থাকি। তাই তথ্য ভুলা নিয়া চিন্তা করি না। সচলে অতিথি হিসেবেই ঢুকি। এটাইতো নিয়ম জানি। আর কিছু থাকলে জানি না।

স্বয়ম

গগন শিরীষ  এর ছবি

শেষটা খুব ভাল হয়েছে,যদিও মাঝখানে একটু গতি হারিয়েছিল।

অতিথি লেখক এর ছবি

পাঠ ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

স্বয়ম

মেঘলা মানুষ এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

পাঠ ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

স্বয়ম

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।