প্রতিদিনের গল্প- দ্বিতীয় পর্ব

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ২৩/০২/২০১৫ - ৪:৩৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

( প্রথম পর্ব এখানে )

আমি প্রথম ঢাকায় আসি ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পরীক্ষার পর।

বিন্তী তখন খুবই ছোট, আব্বা কি একটা কাজে ঢাকা আসায় আমরা সবাই এসেছিলাম। আব্বা আমাদের নিয়ে চিড়িয়াখানায় এসেছিলেন। ওখানে একটা রাস্তার পাশের দোকানে খেলনা পিস্তল দেখেছিলাম, গুলি করলে সাদা ছোট ছোট পুঁথির মত বল বের হয়। ওটা দেখে আব্বাকে নিয়ে এসেছিলাম কেনার জন্য, দেখি ততক্ষণে বিক্রি হয়ে গেছে। ওটা নাকি একটাই ছিল! আমার এত খারাপ লেগেছিল! আমার প্রথম ঢাকা স্মৃতি ছিল খেলনা পিস্তল না পাওয়ার আক্ষেপটাই।

এরপর এসেছিলাম মনে হয় নাইনের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে, আমার বড়মামাদের সাথে। সেবার খুব মজা হয়েছিল। সেবার তৃতীয়বারের মত আমার ঢাকা আসা হল, আসলাম গ্রামের বন্ধু ফরহাদকে নিয়ে, আমার থেকে বয়সে দু’বছরের বড়। সে এখানেই কোথায় যেন কাজ করে, আমার থাকার বন্দোবস্ত সেই করে দিয়েছে। গ্রামে এসেছিল অফিসের ছুটিতে, আমার কথা জানতে পেরে ওই আগ্রহ দেখালো। আব্বাকে বলল, “চাচা আপনি টেনশন নিয়েন না তো, তানিম আমার দায়িত্ব। আমাদের অফিসেই নতুন লোক রিক্রুট হতে পারে, আমি ঢুকিয়ে দেবো। আর যদি আমাদের ওখানে নাও পারি চাকরি একটা জোগাড় হয়েই যাবি। কোয়ালিফিকেশন তো ভালই আছে, আর আমারও চেনা জানা লোক আছে উপরে, হে হে।”

আব্বা যেন আশার আলো পেয়েছিলেন। আম্মা যাওয়ার পর আব্বা কেমন যেন চুপ হয়ে গিয়েছেন। অফিস করে এসে বারান্দায় চুপ করে বসে থাকেন। আমার ছোট ফুপু আপাতত বাসায় আছে, উনি বিধবা। ছোট একটা মেয়ে আছে, আব্বা ওর সাথেই সময় কাটান। আমার আব্বার জন্য খারাপ লাগে, বুঝতে পারি আব্বা কতটা একা হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু তবুও আব্বা আমাকে জোর করেই যেন ঢাকায় পাঠিয়ে দিলেন। বললেন, “আমাকে নিয়ে ভাবিস না। মনো তো আছেই। শরীরটার খেয়াল নিস। দেখি সময় পেলে একবার যাবো।”

আমার আসার সময় অনেকক্ষণ আব্বার জন্য খারাপ লেগেছিল। আমি কখনই আব্বাকে এরকম দেখবো ভাবি নি। জানালা দিয়ে যখন আব্বাকে দেখছিলাম, প্রচন্ড নিঃস্ব লাগছিল তাঁকে।

আমি উঠেছিলাম ফরহাদের এক ভাইয়ের বাসায়, নিতান্ত অপরিচিত একজনের বাসায় কিভাবে থাকবো ভেবে অস্বস্তি লাগছিল। সত্যি বলতে, আমি ভেবেছিলাম হয়তো মেস-টেস টাইপের কোথাও থাকবো। ছেলেদের ওদিকে হলেই আমার ভালো হত, একটা বাসায় অপরিচিত লোক ঘোরাঘুরি করছে ভাবলেও তো কেমন লাগে। ফরহাদকে বলতেই ও হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলেছিল, “আরে দূর, ঘরের ভিতর থাকবি নাকি? রেজাউল ভাইয়ের ছাদের ওখানে একটা ঘর আছে, ওটায় থাকবি। বেশ জায়গাটা। আরেজমেন্ট ভালই করছি, তোর খারাপ লাগবে না। আমি তো আছিই, দেখি এর মধ্যে গিয়ে একটা কিছু করব। আগে সেটেল হ।”

তবে রেজাউল লোকটাকে আমার মোটেও ভাল লাগে নি। লোকটার মাথার চুল হালকা। সাইজে আমার অর্ধেক। মুখে বেমানান একটা গোঁফ নিয়ে বোকার মত তাকিয়ে আছেন। কথাই বলেন না একদম। খালি হ্যাঁ-হু করে। পরিচয় হওয়ার পর হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলাম, “ভাইজান ভাল আছেন?”

রেজাউল কথা বলে নি। অদ্ভুত ভঙ্গিতে মাথা নেড়েছিল। এর মানে যে কি ছিল কে জানে। এরকম একটা লোককে প্রতিদিন দেখতে হবে ভেবেই মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। ভদ্রলোক বৃদ্ধা মা, স্ত্রী আর কোলের বয়সি বাচ্চা নিয়ে থাকতেন। উনার স্ত্রীকে বেশ চটপটে লাগল তখন। নাম পারুল। আমি পারুল ভাবী বলেই ডাকতাম। আমার থেকে মনে হয় একটু বড় হবে। গায়ের রগ শ্যামলা, চেহারা লম্বাটে। আশ্চর্য এই যে ভাবী রেজাউল ভাইয়ের থেকে বেশ লম্বা! খুব করিৎকর্মা মনে হল, সে একাই সব ঠিকঠাক করেছে। বাথরুমটা ঝকঝক করছিল। আমি মুগ্ধ চোখে তাকাতেই লজ্জা পেয়ে বলল, “আমার কাজ-টাজ না করলে ভাল লাগে না। সারাক্ষণ তো বাসাতেই থাকি।”

আমি হেসেছিলাম। ঘরটা বেশ পছন্দ হয়েছিল। তার থেকে বড় কথা, ছাদের ওদিকটা বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা ছিল। বাতাস আসছিল বেশ। আমি বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিলাম, অদ্ভুত একটা অনুভূতি আমায় গ্রাস করে নিয়েছিল সেদিন।

তখন আমার পুরো ভাবনাটাই ছিল লেখালেখি নিয়ে। আসার সময় অনেকেই বলেছিল, ঢাকা একটা বিরাট প্লাটফর্ম আমার জন্য। এখানে থিতু হতে পারলে জীবনে আর কিছু নিয়ে ভাবতে হবে না। টাউন হলের দু-তিনজন সিনিয়র লোক বেশ কিছু ঠিকানা লিখে দিয়েছিল। বলেছিল যোগাযোগ করতে। পত্রিকা-টত্রিকার ঠিকানাও দিয়ে কাঁধে হাত রেখে বলেছিল, “তানিম, ওখানে লিখতে থাকো। ঠিকই একটা পথ বের হবে।”

আমি হেসেছিলাম। আমার চোখে তখন ছিল কিসের জানি স্বপ্ন, যে স্বপ্নগুলো ভেঙ্গে যেতে আমার বেশি সময় লাগে নি।

আস্তে আস্তে মানিয়ে নিলাম সব। সকালে নাস্তা খেতাম মজনু মিয়ার হোটেলে। তারপর যেতাম সুফিয়ানের বাড়ি। ঢাকায় আমার প্রথম বন্ধু। আমারই মত বেকার। খালাম্মা আর ছোটবোনকে নিয়ে থাকে। খালাম্মা চাকরি করতেন একটা স্কুলে। সুফিয়ান সারাটা দিন বিছানায় পড়ে পড়ে ঘুমোতো। আমাকে দেখলে বিরস মুখে উঠে চা খেয়ে বেড়িয়ে পড়ত। সারাদিন আমাদের কোন সত্যিকার অর্থে কাজ না থাকলেও বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতে হত। সুফিয়ান রিসাদ কমলদের নিয়ে শাহবাগের ওদিকটায় যেতাম। ওখানে বেশ লেখক-টেখকদের আড্ডা হত। নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করতাম খুব। অপরিচিতজনের আড্ডাতেও গিয়ে তর্ক জুড়ে দিতাম। এভাবে আস্তে আস্তে পাঠক-লেখক অনেকেদের সাথেই ভাল সম্পর্ক হয়ে গেল। কারো কথা শুনি, কারো কাছে বলি। সুফিয়ান না লিখলেও রিসাদ কমলরা টুকটাক লিখত। ওরাই পরিচয় করে দিল অনেকের সাথে, সাহিত্যালোচনা জমে উঠত। মনে হত স্বপ্নে ভাসছি।

চাকরি ছাড়াও আমি পত্রিকার বেশ কিছু লোকের সাথে যোগাযোগ করলাম। বললাম যে অমুক পাঠিয়েছে। লোকগুলো হ্যাঁ হু করল। আমার লেখাগুলো রেখে যেতে বলল। আমি আমার লেখাগুলো কম্পোজ করে বেশ কিছু ফটোকপি করেছিলাম। সেগুলো দিলাম। আমি শিওর ছিলাম কয়েকদিনের মাঝেই ডাক আসবে। লোকগুলো প্রশংসায় ভাসিয়ে দেবে।

আমি অপেক্ষা করতে থাকলাম। কিছুই হল না। পরেরবার যোগাযোগ করে দেখি চিনতেই পাচ্ছে না। প্রচন্ড রাগ হয়েছিলাম তখন। রাগের থেকে অভিমানটাই বেশি ছিল। আস্তে আস্তে এই শহর আর শহরের মানুষগুলোর প্রতি বিতৃষ্ণা আসতে শুরু করল। প্রায়ই সারারাত জেগে জেগে নতুন কিছু লেখার চেষ্টা করতাম। কিছুই আসত না। সিগারেট খেতে খেতে ছাদে হাটতাম।

বাসা থেকে বের হতাম সকাল সকাল। ফিরতে ফিরতে ন’টা দশটা বেজে যেত। পারুল ভাবী আমার খাবার গরম করে নিয়ে আসতো। যদিও আজে-বাজে খেয়ে খেয়ে ক্ষিধাটা নষ্ট করা স্বভাব হয়ে গিয়েছিল। রেজাউল ভাইয়ের একটা দোকান ছিল, আসতে আসতে প্রায়ই ওনার বারটা পার হত। পারুল ভাবী তাই আমার সাথে গল্প করতে আসতেন। আমি অস্বস্তিতে পড়তাম। সারাদিন ঘুরে ঘুরে এসে প্রচন্ড টায়ার্ড লাগত আমার। তাছাড়া লেখারও একটা ব্যাপার ছিল। বিছানায় যে গা এলিয়ে দিবো তারও কোন উপায় থাকত না তখন। দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসে ওনার বকবক শুনতাম। বেশিরভাগ গল্প ওনার গ্রামের বড়ির। রাজশাহীতে বাসা ওনার, সেখানে কি পাওয়া যায়, কি হয় না হয় শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে যেত। কোনভাবেই রক্ষা পাওয়া যেত না। অবশ্য মায়াও লাগত বেশ। ভাবীর শাশুড়ি সারাদিন বিছানাতেই পড়ে থাকে, ছোট্ট ছেলেটা সারাদিন জ্বালাতন করে যখন ঘুমিয়ে পড়ে পারুল ভাবীর সত্যিকার অর্থেই কোন কাজ থাকে না। বাসার টেলিভিশন নাকি অনেক দিন ধরে নষ্ট। রেজাউল ভাই ঠিক করব করব করেও নাকি করে না। মনে মনে এ জন্য রেজাউল ভাইকে গালি দিতাম। সারাটা দিন চমৎকার কাটিয়ে দিনশেষে একটা আতংক নিয়ে বাসা ফিরতে হত। পারুল ভাবী বলত, “খেয়েছো তানিম?”

ক্ষিধায় পেট টনটন করলেও বলতে হত, “হ্যাঁ, আজ এক জায়গায় দাওয়াত ছিল। হেবি খাওয়াদাওয়া। এখন যে ঘুম লাগছে, গিয়েই শুয়ে পড়বো।”

“আচ্ছা ঘুমোও তাহলে তুমি, আজ আর না যাই। ও হ্যাঁ, একটা চিঠি আসছে। একটা মেয়ের- নাইমা নাম।” চিঠি দিয়ে ইতস্তত করে বলেছিল, “মেয়েটা কে?”

অবলীলায় বলতাম, “আমার মামাতো বোন। গ্রামে প্রায় পাশাপাশি বাসা।”

“ও,” ভাবী একটু আশাভঙ্গ হইয়েছিল। ভেবেছিল প্রেম-ট্রেমের কাহিনী শুনে আরেকটু নাক গলাবে।

আমি উপরে চলে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিতাম। নাইমার চিঠিটা হাতে নিয়ে দেখতাম,

তানিম,
তুমি দিন দিন এমন হয়ে যাচ্ছো কেন বল তো? নিয়মিত চিঠি দাও না,একটা বারের জন্য ফোন করার চেষ্টা কর না। সেদিন কতক্ষণ রিমির বাসায় ফোনের জন্য বসেছিলাম, বলেও ছিয়াম আমি ও সময় ওখানে থাকবো- একটা ফোন দিও। কেন দিলে না? একটুও সময় পাও না? কি কর তুমি? নাকি ঢাকায় একটা টেলিফোন সেটও নেই?? তুমি একটা বারের জন্যও আমার খোঁজ নাও না, স্কুলের চাকরির কিছুই জিজ্ঞেস করলে না? আচ্ছা তুমি কি লিখো? আমার তো মনে হয় তুমি লেখালেখিও করো না তেমন...

ওর চিঠিগুলো বড্ড একঘেয়ে লাগত আমার। ঢাকায় এসে ওর কথা তেমন মনে পড়ত না আমার। এমনকি বাসার কারো কথাও না। আব্বা চিঠি পাঠাতো খুলতেও ভুলে যেতাম। আব্বা লিখতেন,


স্নেহের তানজিউর,
আশা করি পরম করুণাময়ের দোয়ায় ভালই আছো। আজকাল তুমি একেবারেই পত্র পাঠাও না। স্বাস্থ্যের কি অবনতি ঘটেছে? চাকরির কি খবর? মন খারাপ কর না। রাব্বুল আলামীন আমাদের সবারই রিযিকদাতা। তিনি যা স্থির করেছেন তাই হবে। আমি আমার বড় সাহেবের সাথেও কথা বলেছি। তিনি তোমার ব্যাপারে ভেবে দেখবেন বলেছেন।

বাসার খবর ভালো। মনোয়ারাকে স্থায়ীভাবেই থাকতে বলেছি। ওর মেয়েটাকে আমার খুব ভাল লাগে। ওকে দেখলেই বিন্তীর কথা মনে পড়ে। রোজ ওকে স্কুলে নিয়ে যাই। ও তোর কথা জিজ্ঞেস করে। আজকাল এদের সাথে সময় কাটাতে ভালই লাগে। মাঝে মাঝে মনটা খারাপও হয়। চেয়ার-টেবিল ঘরগুলো দেখলে তোদের কথা মনে পড়ে খুব।

চিঠির সাথে কিছু টাকা পাঠায় দিলাম। তোমার আশ্রয়দাতা রেজাউল সাহেবকেও একটা চিঠি লিখেছি। ফরহাদের কি কিছু হয়েছে? পরপর দুটা চিঠি পাঠালাম কোন উত্তরই দিলো না। ওর জন্য কিছুটা ভাবনা হচ্ছে।

আমি ভালো আছি।

তোমার আব্বা

পুনশ্চঃ একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছি, তুমি কি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়ো? চাকরির ক্ষেত্রে এটা খুব প্রয়োজন।

আব্বার চিঠি পড়ে কিছুটা হাসতাম। উনি কি সবাইকে চিঠি লিখে বেড়াচ্ছেন? রেজাউলকে লিখেছেন আমার আশ্রয়দাতা। যেন মাসে মাসে কোন টাকাই নিত না উনি। জায়গাটা বেশ ছিল। কিন্তু পারুল ভাবীর অতিরিক্ত যত্নে অতিষ্ট হয়ে পড়লাম। ঘরে থাকা মানেই পারুল ভাবীর বিরক্ত করা। আমি সুফিয়ানদের মেস দেখতে বললাম। আমি আমার মত থাকতেই পছন্দ করতাম কিন্তু ভাবী প্রচুর ঘাটানো শুরু করল আমায়। এমনকি আমায় না বলে আমার লেখা পর্যন্ত পড়তে লাগল ! মধ্যবিত্ত পরিবারের নিঃসঙ্গ গৃহবধুর জন্য প্রথমে কিছুটা মায়া অনুভব করলেও তা তিক্ততার রূপ নিল।

এরপর একটা ঘটনা ঘটল।

উনি যে রাতে মাঝে মাঝে আসতেন গল্প করতে টিভি নষ্টের ছলে সেটা জানতাম না। উনাদের টিভি ঠিকই ছিল। সেটা টের পেলাম রেজাউল ভাইয়ের সাথে একদিন একটা ইলেকট্রনিক্সের দোকানে। আমি কমলসহ আড্ডা দিচ্ছিলাম সেখানে। দেখি রেজাউল ভাই আসছেন। আমি ডাকতেই চমকে উঠল। তার অল্প কথায় যা জানলাম বাসায় টিভির রিমোট নষ্ট হয়েছে। আমি নষ্ট টিভির কথা বলতেই মাথা নাড়লেন। বোঝা গেল টিভি নাকি ঠিকই ছিল সবসময়। আমি পারুল ভাবীর কথা তুলতে গিয়েও তুললাম না আর। কারণ তাতে বদনামটা আমারই হবে।

আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম পারুল ভাবী আমার প্রেমে পড়েছে। তার আমার প্রতি আদর-যত্ন পুরোটাই সেই জন্য। আর আমি গাধা ভেবে বসেছিলাম যে ভাবী আমায় ছোটভাই ভাবে! ভাবী একদিন আমাকে তো সরাসরি বলেই বসল, “তানিম তোমাকে আমি সত্যি ভালবেসে ফেলেছি! তোমার জন্য রোজ আমি কাঁদি। এই দেখো তোমার জন্য হাত কেটেছি।" দেখি সত্যি সত্যি হাতের অনেকগুলো জায়গা ব্লেড দিয়ে কাটা। আমার রক্ত হিম হয়ে গেল। পারুল ভাবী সব ছেড়ে আমার সাথে পালিয়ে যেতেও নাকি রাজি। আমার ওখানে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ল। আমার কাপড় ধোয়া থেকে শুরু করে সব কাজ উনি করে দিতে লাগলেন। আধা-মরা শাশুড়ি আর গবেট হাসব্যান্ড এগুলোর কিছুই জানল না।

তবে মুক্তি পেলাম খুব দ্রুত। একদিন দুপুরে ঘরে ফিরে দেখি আমার বাথরুমে ভাবী গোসল করছেন। সেই অবস্থাতেই দরজার অনেকটা খুলে দিয়ে হেসে বলল, “বাসায় ইলেক্ট্রিকের মিস্ত্রি কাজ করছে, খুব গরম লাগছিল তাই এখানে এলাম গোসল করতে।”

পারুল ভাবী সেই অবস্থায় এগিয়ে এসে আমার হাত ধরল। ঝটকায় হাত সরিয়ে নিলাম। কষে একটা চড় মারলাম তাকে। আমি রীতিমত রাগে কাঁপছিলাম। নাইমার কথা আজকাল একদমই মনে হয় না ঠিকই, কিন্তু তাই বলে অন্য কোন নারীর প্রতি কোন টানই আমার ছিল না। উনি আমায় ভালবাসতেন ঠিক আছে। কিন্তু তাই বলে সেদিন যা করেছিলেন তা আমার পক্ষে সহ্য করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

সেদিনই রেজাউল ভাইকে জানিয়ে দিলাম তার বাসায় আমি থাকছি না আর। যাওয়ার সময় ভাবীর চোখ দেখলাম ভেজা। সেই চোখের পানি দেখেও প্রচণ্ড ঘেন্না লাগল আমার।

চলে আসলাম সুফিয়ানের বাসায়। খালাম্মাকে বললাম, “আমি দুদিন এখানে থাকলে কোন সমস্যা হবে?”

“না তো বাবা, সমস্যা আর কি? তোমার ওখানে কিছু হয়েছে?” খালাম্মা অবাক হলেন।

“না খালাম্মা, কিছু হয় নি।” আমি মাথা নাড়লাম।

লেখক হওয়ার জন্য নাকি প্রচুর অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। সেরকম একটা অভিজ্ঞতাই কি আমার হয়ে গেল?

রাসিক রেজা নাহিয়েন


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

অফিসের লাস্ট আওয়ারে এমন একটা গল্প পড়লাম ।মনের প্রতিক্রিয়াটা না হয় একটু পর বলি? দারুন!

--------------
রাধাকান্ত

তিথীডোর এর ছবি

ইলোরা গওহর একবার এ রকম একটা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, মানে পারুল ভাবী টাইপ। বোধহয় ফারুকী গঙের বানানো।

সিরিজ চালিয়ে যান, সঙ্গে আছি। হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

মাসুদ সজীব এর ছবি

প্রথম পর্বের তুলনায় দ্বিতীয় পর্ব দুর্বল মনে হলো অনেক জায়গায়। পারুল ভাবির বর্ণনা যখন এসেছে তখনি একটা পরোকীয়ার আভাস পেয়েছি। শাশুড়ি বাসা থাকা অবস্থায় রাতের পর রাত একজন ব্যাচেলরের ঘরে এসে গল্প করে বিষয়টা কেমন খটকা দেয় মনে। কেন পারুল ভাবি লেখকের প্রেমে পড়লো সেটাও স্পষ্ট না।

আরেকটা বিষয় আমি ব্যাক্তিগত ভাবে উপলব্ধি করি সেটা হলো আমাদের এখানে বেশিভাগ লেখক গল্পের নায়ক কে খুব চরিত্রবান (যে কোন আদর্শ গত বিষয়ে বিশেষ করে নারী ঘটিত বিষয়ে) রূপে দেখাতে পছন্দ করে। আপনার গল্পেও সেটা পেলাম। সমাজে যেমন সব ধরনের চরিত্র আছে গল্পকারের লেখায়ও সে সব চরিত্র উঠে আসা উচিত বলে মনে করি। অনেকগুলো কথা বলে ফেললাম, আশা করি সহজ চোখে দেখবেন। আরো লিখুন, শুভেচ্ছা হাসি

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ছি

স্বয়ম

অতিথি লেখক এর ছবি

সাবলীল লেখা,চালিয়ে যান।

একটা টাইপো চোখে পড়ল,

সেদিন কতক্ষণ রিমির বাসায় ফোনের জন্য বসেছিলাম, বলেও ছিয়াম আমি ও সময় ওখানে থাকবো

ছিলাম হবে নিশ্চয়। পরের বার শুধরে নিবেন আশা করি/ হাসি

বাবার লেখা চিঠিতে এক জায়গায় লেখা

আজকাল তুমি একেবারেই পত্র পাঠাও না।

আবার আরেক জায়গায় আছে

তোর কথা জিজ্ঞেস করে।

তুই-তুমি টা একটু খেয়াল করবেন আশা করি।

ব্যাপুক গিয়ান দান করলাম চোখ টিপি

নির্ঝরা শ্রাবণ

মুক্তমন এর ছবি

গল্প এগোনোর ভঙ্গিটা পছন্দ হল৷

অতিথি লেখক এর ছবি

গল্পটা দু বার পড়েছি। প্রথম পর্ব দারুন লেগেছে ২য় পর্বের ১/২ টা ভাল লেগেছে তারপর মনে হয় শেষের অংশটাতে কি একটা জিনিসের প্রচন্ড অভাব ছিল। আপনি যা ফুটিয়ে তুলতে চাচ্ছেন , তা ফুটে উঠবেই শুধু আর একটু গভীরতার দরকার। শুভকামনা রইলো।এগিয়ে যান।

------------
রাধাকান্ত

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

নাহিয়ান,
এই গল্পের মধ্য দিয়ে আপনি আসলে কি ছুঁতে চাইছেন? কিছু তো ছুঁতে হবে? না হলে 'ঘটনা' কি করে 'গল্প' হবে?

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

এক লহমা এর ছবি

জীবন অনেক সময়ই আমাদের নিজের নিজের অভিজ্ঞতা আর কল্পনাকে ছাড়িয়ে যায়। তাই এই পর্বের সাথে নিজের আবেগকে জুড়তে না পারলেও হাল না ছেড়ে পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।