মূমূর্ষূ রোগীটিকে চারদিকে পরিবেষ্টন করে আছে তার স্বজনেরা । কবিরাজ বলিলেন, লক্ষণ ভাল নহে । তাহাকে বাঁচানোর পথ একটাই । এমন এক লোকের একটা স্মার্ট ফোন এনে রোগীর কপালে ঘষা দিতে হবে- যে লোকটির চোখ ও কানে কোন সমস্যা নাই, ঘাড় বা মাথায় কোন ব্যাথা বেদনা নাই এবং মনমেজাজে কোন তিরিক্ষি ভাব নাই । রোগীর লোকেরা বলিল, এইটা কোন ব্যাপার ? আপনাকে গন্ডায় গন্ডায় সেই রকম ফোন আনিয়া দিতেছি ।
স্বজনেরা দেখিতে শুনিতে সুস্হ সবল এমন একজনের কাছে গিয়া বলিল, ভাই আমাদের রোগীটার জন্য এমন এক মানুষের একটা স্মার্ট ফোন দরকার যার চোখ ও কানে কোন সমস্যা নাই, ঘাড় বা মাথায় কোন ব্যাথা বেদনা নাই, মনমেজাজে কোন তিরিক্ষি ভাব নাই । আপনারটা কয়েক মিনিটের জন্য দিবেন?
লোকটি কান হতে ear phone এর বাটন খুলিতে খুলিতে বলিল, একটু জোরে বলেনতো ভাই। তাহারা সজোরে একই কথার পুনরাবৃত্তি করিল । লোকটি হাতের তালুটি কানের কাছে চোঙ্গার মত করে ধরিয়া, ঘাড়টি তাহাদের দিকে বাকা করিয়া আবার বলিল, আরেকটু জোরে বলেনতো ভাই । এভাবে কয়েকবার 'আরেকটু জোরে বলেনতো ভাই' আবদার শুনিয়া স্বজনেরা বুঝিতে পারিলো এই লোকের কানে ব্যাধি আছে । এর স্মার্ট ফোনে রোগী আরোগ্য হইবেনা । তাহারা রাস্তা মাপিলো ।
স্বজনেরা ঠিক করিল, বয়সে তরুন কিশোর কারো কাছে যেতে হবে যাহাকে এখনো রোগব্যাধি ধরে নাই । লোচনের কথা তাহাদের মনে পড়িল । কাছে গিয়া বিস্তারিত ব্যখ্যা করে তাহারা বলিল, বাবা লোচন তোমার আংকেল অসুস্হ, ফোনটা একটু দিবা?
তীব্র আলো বিচ্ছুরন করা স্ক্রীন হতে চোখ ফিরাইয়া সে বলিতে লাগিল, আপনারা আরেকটু কাছে আসুন, দেখিয়া চিনিয়া লই । স্বজনেরা খেদোক্তি করিয়া বলিলো, আর কাছে আসিতে হইবেনা । তোমার চোখে বিমার আছে । তোমার ফোনে কাজ হইবেনা ।
সহজ একটা ব্যাপার এমন কঠিন হয়ে যাচ্ছে দেখে তাহারা ক্রমশ: হতাশ হইতে লাগিলো । ভাবিলো বুড়ারাতো বটেই দেশের তরুনেরাও ব্যাধিগ্রস্ত হইয়া পড়িয়াছে। এইবার কোন তরুনীর কাছে যাইতে হবে। তাহারা সৌম্যশান্ত সাবিনার কাছে গেল । গিয়া ঘটনা খুলিয়া বলিল, বোন গো তোমার ফোনটা একটু দিবা? সাবিনা ওনাদের দিকে না তাকাইয়াই তিরিক্ষি মেজাজে বলিল, দেখেন না আমি ভাইবারে চ্যাট করতেছি? একজন কাতর কন্ঠে বলিল, তোমার আংকেল খুব অসুস্হ। সে মেসেজ লেখায় মগ্ন থাকিয়াই বলিল, আমার বাড়ীতে কি হাসপাতাল খুইলা বসছি নাকি? সেইদিনের কোমলমতি সাবিনা কিভাবে এমন দয়াহীন মায়াহীন মনোযোগহীন রুক্ষ তরুনী হইয়া উঠলো- তা ভাবিয়াই তারা আতঁকে উঠলো।
রোগীর জীবনের আশা তাহারা প্রায় ছাড়িয়াই দিয়াছে। কিভাবে এমন সহজ স্বাভাবিক কিছু সুস্হ্যতা সমাজে এমন দুর্লভ হইয়া উঠিলো তা অবাক বিস্ময়ে ভাবিতে ভাবিতে তারা উদ্দেশ্যহীন হাটাহাটি করিতে লাগিল।
এমন সময় তারা ইউরেকা ইউরেকা বলিয়া লাফাইয়া উঠিল। তাহারা দেখিতে পাইলো এক যুবক অদূরের তালগাছ তলায় গুনগুন করে রবীন্দ্রগীতি গাইতেছে আর পূর্নিমার চাঁদ উপভোগ করিতেছে। এই ইদুর দৌড়ের শহরে তাহাকে কেন জানি একটু বেশী-ই সুখী মনে হইতে লাগিলো। তবুও কাছে গিয়া আশংকা নিয়া জিজ্ঞাস করিল, ভাইয়ের কি মন মেজাজে কোন ঝামেলা আছে? মনোযোগে কোন সমস্যা? চোখের দৃষ্টিতে, কর্নকুহরের শ্রবনে কোন বিমার ব্যাধি? অহেতুক কোন বিষন্নতায় মন বেজার? হুদাই অস্হিরতা?
সব প্রশ্নের উত্তরই ''না'' আসিল।
তাহারা আনন্দে চেচাইয়া উঠিল। ভাইবার, স্ক।ইপে, হ্যাং আউট সচল হইয়া উঠিল। দিকে দিকে তুফান বেগে খবর ছড়াইতে লাগিল, পাইয়াছি পাইয়াছি- সুস্হ মানুষ পাইয়াছি। তালগাছ তলার উদ্দ্যেশে পাজেরো, প্রিমিও, মার্সিডিজ গাড়ী ছুটিতে লাগিলো। যত দ্রুত সম্ভব তার স্মার্ট ফোনটি আনিতে হইবে। রোগীটি শেষমেষ বাঁচিয়া যাবে।
তারপর তাহারা তাকে বিস্তারিত বুঝাইয়া বলিল, ভাই আপনার স্মার্ট ফোনটি কিছুক্ষনের জন্য দিবেন? রোগীর কপালে ঘষা দিতে হবে।
যুবকটি পকেট থেকে চিকন পিনের চার্জারের একটা নকিয়া ফোন বের করতে করতে বলে, আমারতো কোন স্মার্ট ফোন নাই!
===============
আমিনুল ইসলাম
মন্তব্য
গুরুচণ্ডালী দোষে প্রবলভাবে দুষ্ট , বেশ কিছু টাইপোও আছে। বিষয়বস্তু ভালো ছিল।
লিখতে থাকুন।
কিছুটা ইচ্ছা করেই। রম্য বলেই একটু অনধিকার চর্চা। খাটি সাধু কেমন যেন পানসে লাগছিল।
===========
''আঁধারের সিধ কেটে বাইরে আসো''
হা হা হা হা, দারুন ছিলো টপিক টা। পড়ে বেশ ভালো লাগলো।
সাদা মেঘদল
অনেক ধন্যবাদ
=============
''আঁধারের সিধ কেটে বাইরে আসো''
সুকুমার রায়ের একখানা গল্প ছিলো, 'সুখী মানুষের জামা' নিয়ে। আপনার লেখাটি একালের প্রেক্ষিতে সেই লেখাটির প্যারডি এটা উল্লেখ প্রয়োজনীয় ছিলো বলে মনে করি।
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
লেখা ভালো, কিন্তু বিষয়টা ভাল লাগেনি। 'টেকন্ল্জি খারাপ', বা 'আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম' টাইপ গল্প কেন জানি ভাল লাগে না।
লিখ্তে থাকুন।
মন্তব্যে যা বলব, সেসব আগেই বলা হয়ে গিয়েছে:
১। টপিকটা ভালো বের করেছেন। (আপনার সৃজনশীলতা প্রশংসার দাবীদার)
২। এটা যে মূল গল্পের প্যারোডি, সেটা উল্লেখ করা দরকার ছিল। (তা না হলে অনেক নবীন পাঠক এটাকে একটি স্বতন্ত্র গল্প বলে ভুল করতে পারেন)
৩। আয়নাদি গুরুচন্ডালি দোষের কথা বলেছেন। (লেখাটাতে কয়েকবার 'চিরুনি' চালিয়ে চলিত ভাষার ' করে', 'যেতে', 'তারা' এগুলো বের করে ফেলতে পারতেন। অন্যকাউকে পড়তে দিলেও কাজটা সহজ হয়ে যায়)
শুভেচ্ছা
অনেক ধন্যবাদ। 'গুরুচন্ডালী' কিছুটা ইচ্ছা করেই। রম্য বলেই একটু অনধিকার চর্চা। খাটি সাধু কেমন যেন পানসে লাগছিল।
===========
''আঁধারের সিধ কেটে বাইরে আসো''
গল্পটা পড়ে অনেক মজা পেয়েছি তাই অন্যান্য ত্রুটিগুলো চোখে পড়েনি।
তবে আব্দুর রহমান [অতিথি] - এর মন্তব্যে সাথে একমত
Jaraahzabin
Verification code জটিল ও কুটিল। কোনভাবেই জবাব দিতে পারছিনা। এব্যাপারে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
আপনি নীড়পাতার ডানদিকে ‘সদস্য পরিচয়’ অংশে, অথবা লগ-ইন পাতায় গিয়ে, “সদস্য পরিচয়” অংশে guest_writer এবং “পাসওয়ার্ড” অংশে guest লিখে প্রবেশ করুন। তাহলেই জটিল ও কুটিল ক্যাপচার সম্মুখীন হবেন না।
আমি তোমাদের কেউ নই -> আতোকেন
সুকুমার রায় নয়- মমতাজউদ্দিন আহমদের লেখা 'সুখী মানুষের জামা' । এতো পরিচিত গল্প যে 'প্যারোডী' উল্লেখ করাটাই বাহুল্য মনে হয়েছে। একেবারে মুল গল্পটা অবশ্য টলষ্টয়ের।
============
''আঁধারের সিধ কেটে বাইরে আসো''
http://sukumarray.freehostia.com/view.php?cat_id=2&article_id=164
আমি এই গল্পটার কথা বলেছি।
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
দেবদ্যুতি
সেই ছোটবেলায় পড়া সুখি মানুষ গল্পের আধুনিক রুপ পড়ে মজা পেলুম।
গল্পটা সেই সুখী মানুষের প্যারোডি হলেও যারা স্মার্টফোনে এডিকটেড তাদের ক্ষেত্রে গল্পের পর্যবেক্ষণটা সঠিক।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
হুমম...
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আরো লিখুন....
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
পুরাতন গল্প নতুন আবহে। পড়ে ভালই লাগলো। বাংলাটা সাবলীল হলে রসে ঠাসা বলাই যেত।
=======
শুভ্র ভাই
ভালো লেগেছে, বিশেষ করে বিষয় বস্তু নির্বাচন।
হাসান রাশেদুজ্জামান
নতুন মন্তব্য করুন