বরিশাল ২০০১

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ২২/০৭/২০১৫ - ৫:১০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

চন্দ্রদ্বীপ বা প্রাচ্যের ভেনিস কিংবা বাংলার শস্যভাণ্ডার যে নামেই অবিহিত করুন জায়গাটা বরিশাল। উইকিপিডিয়া বলে বরিশালের নাম কেন বরিশাল হল এই নিয়ে মতবিরোধ আছে। পূর্বে এখানে খুব বড় বড় শাল গাছ জন্মাতো। আর এই বড় বড় শাল গাছের কারণে (বড় + শাল) বরিশাল নামের উৎপত্তি। কেউ কেউ দাবি করেন, পর্তুগীজ বেরি ও শেলির প্রেমকাহিনীর জন্য বরিশাল নামকরণ করা হয়েছে। অন্য এক কিংবদন্তি থেকে জানা যায়, গিরদে বন্দরে (গ্রেট বন্দর) ঢাকার নবাবদের বড় বড় লবণের গোলা ও চৌকি ছিল। ইংরেজ ও পর্তুগীজ বণিকরা বড় বড় লবণের চৌকিকে 'বরিসল্ট' বলতো। অর্থাৎ বরি (বড়) + সল্ট (লবণ) = বরিসল্ট। আবার অনেকের ধারণা এখানকার লবণের দানাগুলো বড় বড় ছিল বলে 'বরিসল্ট' বলা হতো। পরবর্তিতে এ শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে বরিশাল নামের উৎপত্তি হয়েছে।

এই ভূমির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা হলেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, সাইয়েদ মুহাম্মদ ইসহাক রহ., মাওঃ সৈয়দ মুহাম্মদ ফজলুল করীম রহ., আরজ আলী মাতুব্বর, আবদুর রহমান বিশ্বাস, অশ্বিনী কুমার দত্ত, ডঃ সুরেন্দ্র নাথ, ডঃ কামাল হোসেন, বেগম সুফিয়া কামাল, জীবনানন্দ দাশ, রাশেদ খান মেনন, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, আব্দুল গাফফার চৌধুরী, অভিনেতা গোলাম মোস্তফা , সুরকার আলতাফ মাহমুদ, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ্, সরদার ফজলুল করিম।

এই বরিশাল অঞ্চলকে নিয়েই কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন,

“আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয়- হয়তো বা শংখচিল শালিখের বেশে,
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল ছায়ায়।
হয়তো বা হাঁস হব- কিশোরীর- ঘুঙুর রহিবে লাল পায়
সারাদিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধভরা জলে ভেসে ভেসে।
আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে
জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এই সবুজ করুণ ডাঙ্গায়।”

১৯৫০ সালে এই বরিশালে হয়েছিল কুখ্যাত এক সাম্প্রদায়িক গণহত্যা। লেখক কুলদা রায়ের ভাষায়, “ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে খবর রটেছিল কোলকাতায় একে ফজলুল হকের এক আত্মীয়কে হিন্দুরা মেরে ফেলেছে। ফলে তীব্রভাবে দাঙ্গা-হাঙ্গামায় আক্রান্ত হয় হিন্দুরা। এটা ছিল পাকিস্তান সরকারের একটা পরিকল্পনা। সরকার সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দেয়।

সে সময় ঢাকাসহ পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় মেরে ফেলা হয় ৯ দিনে দশ হাজার হিন্দুকে। শুরু হয়েছিল ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বরিশালের মাধবপাশার জমিদার বাড়ির ২০০ জন মানুষকে হত্যা করা হয়। এ এলাকার তীব্র আক্রান্ত গ্রাম হল লাকুটিয়া এবং কাশিপুর। তবে সে সময়ে মুলাদীর নদী লাল হয়ে গিয়েছিল মানুষের রক্তে। বরিশালে মেরে ফেলা হয়েছিল ২৫০০ হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষকে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল বাড়িঘর। লুটপাট করা হয়েছিল সহায়-সম্পদ। ধর্ষণের শিকার হয়েছিল অসংখ্য নারী। দখল করা হয়েছিল অনেকের জমিজমা। এরা সবাই নমশুদ্র।”

বরিশালের নমশুদ্র নেতা, পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অস্থায়ী স্পিকার এবং পাকিস্তানের প্রথম আইন ও শ্রমমন্ত্রী যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল সেইসময় ভয়াবহ দাঙ্গায় সংখ্যালঘুদের পক্ষে সরকারের নীরবতার প্রতিবাদে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন এবং ভারতে পালিয়ে যান।

এরপর বহুদিন কিছু হয় নাই। বরিশাল ছিল শান্ত। ১৯৮৯ সালে ভারতের অযোধ্যায় বাবরী মসজিদের জায়গায় রামমন্দিরের শিলান্যাস ঘটনাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে ইসলামিক প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি ২৯ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশ জুড়ে তাণ্ডবলীলা শুরু করে।

সে ধাক্কা লেগেছিল বরিশালেও।

১। নভেম্বরের ১৫ তারিখ বরিশাল শহরের চন্দন নগর পাড়ার মন্দিরটিতে হামলা ও ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

২। নভেম্বরের ২ তারিখ উজিরপুর উপজেলার ধামুরা গ্রামের একটি কালী মন্দিরে হাজী মোবাশ্বের উদ্দীনের নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র লোক হামলা চালায়। দেবীর প্রতিমা ভেঙে ছুড়ে ফেলে দেয়া হয় এবং মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

৩। নভেম্বর ১৭ তে বি. এম. কলেজের হিন্দু হোস্টেল আক্রান্ত হয়। কোনোরূপ বাছ-বিচার ছাড়াই শিক্ষার্থীদের মারধর করে হোস্টেল ছাড়তে বাধ্য করা হয়।

৪। নভেম্বরের ১৩ তারিখ সদর বেতাগী উপজেলায় মন্দির ভাংচুর এবং হিন্দু দোকান লুটের ঘটনা ঘটে। আগৈলঝরায় কালী মন্দির ধ্বংস করে দেবীর প্রতিমা সরিয়ে ফেলা হয়।

২০০১ সালের নির্বাচনের পর বরিশালের লোকজন দেখেছিল সেই অন্ধকার যুগের ফিরে আসা।

২০০১ সালে সারা দেশে নির্বাচন পরর্বতী সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের লোকজনসহ আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা অমানবিক নির্যাতনের স্বীকার হয়। যার মধ্যে বরিশাল-১ আসনের গৌরনদী-আগৈলঝাড়া উপজেলার আওয়ামী সমর্থিত নেতাকর্মীসহ সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের লোকজনের নির্যাতনের নির্মম কাহিনী ছিল অন্যতম।

খবরের কাগজে জানা যায়, অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোট সরকারের ক্যাডার বাহিনীর হাতে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ধানডোবা গ্রামের ৩০টি, বিল্বগ্রাম এলাকার ২৫টি, চাঁদশী গ্রামের ২০টি, খাঞ্জাপুর গ্রামের ১৫টি, ইলা গ্রামের ৫টি, গেরাকুল গ্রামের ৫টি ও আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার গ্রামের ৫০টি, রামানন্দের আঁক গ্রামের ২৫টি, বাহাদুরপুর গ্রামের ৩০টি, বাকাল গ্রামের ২৫টি, পতিহার গ্রামের ৩০টিসহ অসংখ্য পরিবার নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। এছাড়াও জোট ক্যাডারদের হিংস্র থাবা থেকে এসব এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিবারের মেয়েদের রক্ষা করতে অধিকাংশ মেয়েকে গোপণে ভারতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। ওই সময় গৌরনদীর বিভিন্ন গ্রামের দু’শতাধিক পরিবার নির্যাতনের শিকার হয়ে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছিল।

ওই সময় চারদলীয় জোট সরকারের হাতে নির্যাতিত হয়ে সংখ্যালঘু ও আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী র্বতমান প্রধানমন্ত্রীর নিজ নির্বাচনী এলাকা পার্শ্বর্বতী গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার দুর্গম রামশীল গ্রামে প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল। ওই সময় দেশ-বিদেশের ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় রামশীলে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ধারাবাহিক প্রচারে জোট সরকার শুরুতেই বড় ধরনের হোঁচট খায়। হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের অসংখ্য ঘটনা ঘটলেও থানায় কোনো মামলা করতে পারেনি নির্যাতিতরা।

তৎকালীন আগৈলঝাড়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান মোল্লা ছিলেন সাবেক এমপি স্বপনের খুলনা বিএল কলেজে অধ্যয়নরত সহপাঠী। মিডিয়ায় নির্যাতনের কাহিনী প্রচারের ফলে সদ্য শপথ নেওয়া তৎকালীন জোটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে শপথ নিয়েই প্রথম আগৈলঝাড়ায় সফর করতে হয়েছিল। আগৈলঝাড়া ডাকবাংলোয় বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে এক সভা করে স্থানীয় বিএইচপি একাডেমী মাঠে এক সভায় আলোচিত নির্যাতিত রাজিহার ইউপি তৎকালীন সদস্যা কমলা রানীকে জোর করে মঞ্চে বক্তব্য দেওয়ার জন্য ধরে আনা হলেও মঞ্চে কমলা গণেশ বক্তব্য উল্টে দেয়। বাধ্য হয়ে তার হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। পরে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা ফিরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ চেনধুরী এলাকায় কোনো সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়নি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন।

কি নির্লজ্জ মিথ্যাচার। সেই ঘটনা অবশ্য এখনও অস্বীকার করে বিএনপি। অবশ্য বহু আগে থেকেই হিন্দু বিরোধী কার্ড খেলে বিএনপি। ১৯৯২ সালে বাবরী মসজিদের ঘটনার পর বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ঘটানো হয়। তখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের পক্ষ থেকে ভোলায় এক হিন্দু মেয়ে ধর্ষণের ফলে গর্ভবতী হওয়ার ঘটনাটি উপস্থাপন করা হয়, তখন সংসদে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতেই বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব সালাম তালুকদার ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন ‘ময়েটার মনে হয় ফারটিলিটি খুব বেশি।’


তদন্ত কমিশনের কাছে নির্যাতনের চিহ্ন দেখাচ্ছেন একজন। ছবিঃ ইন্টারনেট

২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার সে সময়ের নির্যাতনের বিচারের জন্য কমিশন গঠন করে। ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান মোশাহাবুদ্দিন, সদস্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মনোইয়ার হোসেন, সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি মীর শহীদুল ইসলাম সরেজমিনে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়াসহ দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পরিদর্শন করে নির্যাতিতদের কাছ থেকে ঘটনার বর্ণনা ও লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করেছিলেন।

হিজলার চরকুশরিয়ার ৭০ বছরের বৃদ্ধ আবুল খায়ের। নির্যাতনের শিকার হয়ে পঙ্গু হয়েছেন তিনি। দুটি ক্র্যাচে ভর করে সার্কিট হাউসে যান। একই গ্রামের শাহজাহান মোল্লা এসেছিলেন তার ভাই কালাম মোল্লার হত্যাকারীদের বিচার চাইতে।

কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ থাকা স্বত্বেও মামলা রুজু করাতো হয়নি বরং থানা পুলিশ তদন্তে গিয়ে ২০০১ সালের নির্যাতনকারীদের কাছেই হামলার কাহিনী শুনতে চাওয়ায় ওই সময় এলাকায় ফের উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। পরবর্তীতে নানা ঘটনার পর এক প্রকার ধামাচাপা পড়ে যায় তদন্ত কমিশনের সকল কর্মকান্ড।

একটু আগে যার কথা বললাম সেই রাজিহার গ্রামের কমলা রানী রায় আক্ষেপ করে বলেন, তদন্ত কমিশন গঠনের তিন বছর পরেও যখন নির্যাতিতদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে, তখন কমিশন গঠনেরই বা কি দরকার ছিল। যা হওয়ার তা তো ২০০১ সালেই হয়ে গিয়েছিল। তদন্ত কমিশন আমাদের কাছ থেকে অভিযোগ নিয়ে প্রতিপক্ষের কাছে পুর্ণরায় আমাদের কেনইবা শত্রু করেছে।

গৌরনদীর বিল্বগ্রামের নির্যাতনের শিকার এক নারী জানান, তিনি গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি কালীয়া দমন গুহর চালকলে কাজ করতেন। ২০০১ সালে নির্বাচনের পর যুবদলের সন্ত্রাসীরা চাঁদার দাবিতে মিলটি বন্ধ করে দেয়। পরে তিনি মিলটি চালু করতে গেলে ২০০২ সালের ১১ মে সকালে যুবদলের কর্মীরা চালকলে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে। এ সময় সন্ত্রাসীরা তাঁকে ধর্ষণ করে। স্থানীয় লোকজন পরে তাঁকে উদ্ধার করে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। ওই সময় পুলিশ তাঁর জবানবন্দি রেকর্ডসহ ধর্ষণের আলামত উদ্ধার করে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তিনি বিচার পাননি।
আগৈলঝাড়া উপজেলার সুতারবাড়ি গ্রামের সঞ্জীব নির্যাতনে পঙ্গু হয়ে যান। কমিশনের কাছে তিনি বলেছিলেন ২০০১ সালে নির্বাচনের পর তাঁর বাড়িতে বিএনপির কর্মীরা হামলা চালিয়ে ব্যাপক লুটপাট চালায়। পরিবারের নারী ও শিশুসহ তাঁকে গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে। তিনি এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর বিএনপি জামায়াতের সন্ত্রাসীরা তার ১০ লাখ টাকার মাছ লুট করে।

বরিশাল বিভাগের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত আগৈলঝাড়া উপজেলা মহিলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদিকা শেফালী রানী সরকার, পাশবিক নির্যাতনের শিকার রেনুকা অধিকারী ওরফে কালা বউ, গৌরনদীর বিল্বগ্রামের কালিয়া দমন গুহ, ইল্লা গ্রামের প্রণব রঞ্জন বাবু দত্ত, গেরাকুলের গোলাম হেলাল মিয়া, নিহত ছাত্রলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম বুলেটের পিতা রহমত উল্লাহ খলিফাসহ অনেক নির্যাতিতরা জানান, ২০০১ সালের নির্মম নির্যাতন, হত্যা, হামলা, মামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও লুটের ঘটনায় ওইসময় তারাসহ অন্য নির্যাতিতরা জোট ক্যাডারদের বিচারের আশায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ব্যর্থ হয়েছেন।

অভিযোগকারীরা একই আশংকা প্রকাশ করে জানান যে, হামলাকারীরা এখনও এলাকায় রয়েছে। কেউ কেউ আবার প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে। অভিযোগের যদি বিচার না হয় তাহলে আবার বিএনপি ক্ষমতায় এলে নালিশ দেওয়ার অপরাধে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হবে। এমন আকুতি জানিয়ে গৌরনদীর কমলাপুর গ্রামের শাহনুর মৃধা তদন্ত কমিশনের সামনে চিৎকার করে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে তাণ্ডব চালানো হয়। দোষী আবার সেই বিএনপি জামায়াতের সন্ত্রাসীরা। তখনও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে জানায়। কিন্তু আদৌ ঐসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানা যায় নাই।

এই সিরিজের আমার আগের লেখা ‘ভোলা ২০০১’ পড়ুন এই লিংকে ক্লিক করেঃ

http://www.sachalayatan.com/guest_writer/53592

তথ্যসূত্রঃ
১। ১৯৮৯ বাংলাদেশ পোগ্রোম, নিঃসঙ্গ গ্রহচারী, মুক্তমনা ব্লগ, ১ আগস্ট ২০১৪।
২। উইকিপিডিয়া।
৩। নির্যাতিতরা এখনও বিচারের অপেক্ষায়- দৈনিক প্রথম আলো, ২৬ এপ্রিল ২০১১।
৪। ২০০১ এর নির্বাচন পরবর্তী চারদলীয় জোটের সহিংসতা, নিউজডেস্ক, বাংলাদেশনিউজ২৪x৭.কম।
৫। আবার আসিব ফিরে, রূপসী বাংলা, জীবনানন্দ দাশ।
৬। ২০০১ নির্বাচনোত্তর সংখ্যালঘু নির্যাতনআগৈলঝাড়ায় ৮৩০ ক্যাডার অভিযুক্ত, দৈনিক ডেস্টিনি, ১১ ডিসেম্বর ২০১১।
৭। ফিরে দেখা-২০০১ : বরিশালের সংখ্যালঘুদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে ফের আতংক, নিউজ সেভেন বিডি ডট কম, ৮ অক্টোবর, ২০১৩।
৮। অষ্টম সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংস ঘটনায় বরিশালে প্রথম মামলা, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ, ২১ জুলাই, ২০১৩।

একাকী মানব

ছবি: 
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন

মন্তব্য

রানা মেহের এর ছবি

এই লেখাটার জন্য অনেক ধন্যবাদ জানবেন। এই বিষয় নিয়ে লক্ষ লক্ষ লেখা আসা দরকার।

১) শুরুতে বরিশাল নামকরনের ইতিহাস, বরিশালের কৃতি লোকের তালিকা জরুরী না। এই লেখার বিষয় সংখ্যালঘু নির্যাতন। নামকরন জাতীয় জিনিসপত্র এখানে অপ্রাসংগিক।

২) রেফারেন্স অংশে একটু নজর দিতে পারেন। তথ্যের সাথে লিংক কিংবা ফুটনোট হিসেবে রেফারেন্স দিলে ক্রসচেক করা আর আরো পড়ার সুযোগ থাকে।

৩) এই ঘটনাগুলোর মামলার শেষ অবস্থা যোগ করে দিলে খুব ভালো হয়।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকে ধন্যবাদ।

১। প্রথমে নামকরণের ইতিহাস এটা আমার নিজস্ব স্টাইল।

২। বিষয়টা মাথায় রইল।

একাকী মানব

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।