চাই প্রযুক্তি ব্যবহারের সমঅধিকার

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ০২/০৮/২০১৫ - ১:৪৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ডিজিটাল বাংলাদেশ করার লক্ষে বর্তমানে প্রযুক্তির নতুন নতুন গবেষণা আর উদভাবন নিয়ে কাজ হচ্ছে। তাদের মধ্যে অনেক গুলোই আবার বাংলা ভাষায় মোবাইল ফোনের উপযোগী প্রযুক্তি। কারণ, এখন মোবাইল ফোন সবার হাতে হাতে। আর এর সাহায্যে করা যায় না এমন কিছুই নেই। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন এই প্রযুক্তি গুলো দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের ব্যবহারের উপযোগী কি না? হয় তো কখনও ভানেন নি! তবে আজ একটা গল্প শুনাই। ঠিক গল্প না একটা কষ্টের অভিঞ্গতা। অভিঞ্গতাটি সেয়ার করার আগে কিছু তথ্য জানানো প্রয়োজন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিরা এ্যান্ড্রোয়েড সিসটেমের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে টকব্যাক নামের একটি স্ক্রীন রিডার এর সাহায্যে। এর সাথে ভয়েজ সিন্থেসাইজার যুক্ত থাকে। এছাড়াও ইংরেজী সহ অন্যান্য ভাষার কিছু ভয়েজ সিন্থেসাইজার গুলোল প্লেস্টোরে পাওয়া যায়। তেমনি একটি ভয়েজ সিন্থেসাইজার হল ই-স্পিক। ই-স্পিক এর সুবিধা হল এর একটি বাংলা ভার্শন আছে। এর সাহায্যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষেরা বাংলা যেকোন ওয়েব সাইট এর কন্টেন্ট পড়তে পারবে। যদিও এই ভয়েজ সিন্থেসাইজারটি দাম খুব বেশি না, মাত্র এক ডলারের কিছু বেশি। কিন্তু বাংলাদেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য এটা খুবই দূসপ্রাপ্য। কারণ, এটি কেনার জন্য ইন্টারন্যাশনাল কেডিট কার্ড প্রয়োজন, যা বাংলাদেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের কাছে নেই। তাই চাইলেও বাংলাদেশের বেশির ভাগ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষ এই এ্যাপসটি ব্যবহার করতে পারছে না। এবার বলি আমার কষ্টের কথা। আমার একটা বাজে স্বভাব হল আমি অন্যান্য সকলের (দৃষ্টিমান মানুষ) মতই টেকনলোজির সব সুবিধা ভোগ করতে চাই। অন্য সবাই যেমন মোবাইলের মাধ্যমে বাংলা অনলাইন নিউজ পড়ে, ব্লগিং করে, ফেস বুকিং করে, বাংলায় কম্যান্ড করে। আমিও চাইলাম সেই সুবিধা গুলি ভোগ করতে। তাই অনেক কষ্টে, কাট-খড় পুঁড়িয়ে বাংলা ই-স্পিক ভয়েজ সিন্থেসাইজার যোগাড় করি। তারপর মহা আনন্দে তা দিয়ে বাংলা বিভিন্ন সাইট দেখতে থাকি। সাথে সাথে চলে ফেস বুকিং। বাংলায় বিভিন্ন সাইট দেখতে দেখতে সকলের মত চাইলাম বাংলায় লিখতে। একটা বিশ্বাস ছিল, গুগোল প্লে স্টোরে এত্ত গুলো বাংলা কিবোর্ড আছে এর মধ্যে একটা না একটা আমার ব্যবহার উপযোগী হবেই। আর আমার ভুলটা ছিল সেখানেই। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আমার দেশের যারা প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করেন , তাঁরা কখনই আমাদের (দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষ) কথা ভাবেন না। আমি গুগোল প্লেস্টোর থেকে সব বাংলা কিবোর্ড যেমন বিজয়, রিদমিক, অভ্র, মায়াবী, বর্নালী আরও কিছু (নাম ভুলে গেছি) বাংলা কিবোর্ড নামিয়ে সেগুলো ইন্সটল করে খুব আগ্রহ নিয়ে বাংলা লিখতে গেলাম। আর খেলাম এক বড় ধাক্কা। একটাও কিবোর্ড আমার উপযোগী অর্থাৎ এক্সেসেবল করে তৈরী করা হয় নি! অথচ আমার মত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের এক্সেসেবল করার জন্য বার্তি তো কোন খরচের ব্যাপার ছিল না। শুধু কিবোর্ডটি তৈরী করার সময় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের এক্সেসিবিলিটির ব্যাপারটা লক্ষ রাখলেই হত। আমারো তো আছে প্রযুক্তি ব্যবহারের অধিকার। আজ আপনারা যখন বাসে কিংবা রিক্সায় বসে ফেস বুকে বন্ধুদের বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা কিংবা বন্ধুদের পোষ্টে কম্যান্ড করছেন বা মোবাইল দিয়ে ব্লগিং করছেন, তখন আমার অপেক্ষা করতে হচ্ছে কখন কম্পিউটারের সামনে বসবো আর কখনই বা তাদের শুভেচ্ছা জানাব। এ এক চরম অসহায়ত্ব! আজ আমার এই পোষ্টটি পড়ে হয় তো অনেকেরই মন খারাপ হবে, কেউ কেউ আবার কষ্টও পাবেন। কিন্তু বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না আমিও কম কষ্ট নিয়ে এই কথা গুলো লিখছি না। আমার হয় তো আপনার বন্ধু হবার কোন যোগ্যতাই নেই, শুধু মানুষ হিসেবে এতটুকু অনুরোধ করব, আপনি কিংবা আপনার পরিচিত জন যখনি প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করবেন কিংবা প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করবেন তখন যেন আমার মত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের এক্সেসিবিলিটির বিষয় গুলো একটু মাথায় রেখে কাজ করেন। আর যদি তাই সম্ভব হয়, তবে আমরাও চলতে পারি আপনাদের পাশে পাশে, রাখতে পারি ভূমিকা জাতীয় উন্নয়নে। সবাইকে বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা।

আশিকুর রহমান অমিত
ফেস বুক: facebook.com/ashiqur.rahmanamit.7


মন্তব্য

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

সত্যিই তো! মোবাইলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য বাংলা ভাষায় কিছু নেই! bangla Braille নিয়ে কিছু কাজ হয়েছে, এখনো চলছে, এর পাশাপাশি আর কিছু চলছে কি?

____________________________

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাদের দেশে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য মোবাইলের কোন উদভাবনই নেই। তবে মোবাইল দিয়ে টাকা চেনার জন্য একটি এপস্ তৈরী হচ্ছে। আশা করা যায় আগামি জানুয়ারী ২০১৬ এর মধ্যে কাজ শেষ হবে। তবে দূঃখের কথা হল মোবাইল দিয়ে বাংলা লেখার জন্য কোন এক্সেসেবল কিবোর্ড এপস্ নেই।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আশা করি অচিরেই হয়ে যাবে, মূল প্ল্যাটফর্ম যেহেতু ইতোমধ্যে আছেই।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

কাজটা যত তাড়াতাড়ি শুরু হবে ততই ভাল। এমনি তে অনেক দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু কাউকে তো উদ্দোগ নিতে দেখছি না।

রানা মেহের এর ছবি

খুব কষ্ট হলো আপনার লেখাটা পড়ে।
আশা করি এই প্রোগ্রামগুলো যারা ডেভ্লপ করেন তারা
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের কথা মাথায় রাখবেন।

একটা প্রশ্ন, আপনি এই ব্লগ কীকরে লিখলেন? কেউ লিখে দিয়েছে কি?

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

কম্পুতে লেখার মতন ব্রেইল কী-বোর্ড আছে, রানাপা।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

না ভাই। ব্রেইল কিবোর্ড দিয়ে নয়। আমি আপনাদের মত ইউনিকোর্ড কিবোর্ড ব্যবহার করি। বাংলাদেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিরা সবাই আমার মত ইউনিকোর্ড কিবোর্ড ব্যবহার করে। বাংলাদেশে ব্রেইল কিবোর্ড আছে কি না তা আমাদের জানা নাই ।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হুমম... ভুল জানতাম। এটিকে আরও উন্নত করার কি সুযোগ আছে?

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি স্ক্রীন রিডারের সাথে বাংলা ভয়েজ সিন্থেসাইজার (যদিও খুবই নিম্ন মানের, তবুও চলে) ব্যবহার করি। আর এই সিন্থেসাইজারটি যেকোন ইউনিকোর্ড লেখা পড়তে পারে। সাথে সাথে কম্পিউটারের অভ্র সহ যে সব ইউনিকোর্ড লিখার কিবোর্ড আছে এটা সেগুলো লেখার সময় রিড করে। তাই আমি নিজে নিজেই বাংলা ব্লগে লিখালেখি করতে পারি।

রানা মেহের এর ছবি

ইংলিশেতো আছে জানি, বাংলাও লেখা যায় জানা ছিলনা। ধন্যবাদ সত্যানন্দ।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ইংরেজি ব্রেইল কী-বোর্ড দিয়ে অভ্র ফোনেটিক ব্যাবহার করা যাবার কথা। তবে, উন্নততর একটা ব্যাবস্থা করা দরকার। লেখকের কথা থেকে মনে হচ্ছে বর্তমানে ব্যাবহৃত কী-বোর্ড/সিন্থেসাইজারটি যথেষ্ট সুবিধাজনক না। ব্যাবহারকারীদের কাছে থেকে তথ্য/ফীডব্যাক পাওয়া গেলে হয়ত যারা এ নিয়ে কাজ করেন তাঁদের কাছে এই পোস্টটাই পাঠিয়ে দেয়া যেত। নিকট অতীতে পাঠ্যবই রূপান্তরের জন্য ভালো একটা ক্রাউড-সোর্সিং হয়েছিল। এবারো সেটা হতে পারে। তবে, এবারের ব্যাপারটা অত সহজ হবে না মনে হচ্ছে, ব্যাপারটা আদতে টেকনিক্যাল। মেহেদী ভাই কিংবা রাগিব ভাইসহ এই ব্যাপারের অভিজ্ঞরা এগিয়ে আসলেই ভাল হয়। তাঁদের দৃষ্টিতে আনা যায় কি, রানাপা?

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সত্যপীর এর ছবি

অনেকদিন পরে লিখলেন।

..................................................................
#Banshibir.

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।