‘বানজাই ক্লিফ’, ‘লিটল বয়’ এবং ‘ফ্যাট ম্যান’

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ০৮/০৮/২০১৫ - ৩:৩৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রসঙ্গ কথাঃ

সেবার ক’জন জাপানি বন্ধু সহ গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে ছূটেছিলাম সাইপান । প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে খুব ছোট্ট একটা দ্বীপ। দেখতে অনেকটা দন্ডায়মান ক্যাঙ্গারুর মতো। ওখানে মোট চারটি ছোট ছোট দ্বিপ নিয়ে উত্তর ম্যারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জ । সাইপান, গুয়াম, এবং তিনিয়ান উল্লেখযোগ্য। এই ভ্রমণটি আমার জন্য একটু অন্যরকম ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পারমানবিক বোমা দুটো লোড করা হয়েছিল তিনিয়ান দ্বিপ থেকে। সেসব বৃত্তান্ত এবং দেখার অভিজ্ঞতা শেয়ার করব এই লেখায় । লেখাটি লিখেছিলাম কবি হুমায়ূন কবির সম্পাদিত ‘ঘুংঘুর’ সাহিত্য পত্রের জন্য। লেখাটি সেখানে ছাপা হয়েছিল। সামান্য সম্পাদিত
-----------------------------------------------------------------------------

১৯৯৪। বর্ষাকাল !
একঘেয়ে বর্ষণে প্রায় যখন গৃহবন্দী কালিদাস হয়ে গেছি তখন এক বিকেলে আষাঢ়স্য আকাশের মেঘ কেটে গেল যেন---বিদেশী বন্ধুর ফোন

--মোশি মোশি ! কাজুনোরি দেস !
--হাই ! শাশিবুরি দেস নে !
--হুম ! সো দেস নে ! কী করছো আজকাল?
--আকাশের ধারাপাত দেখছি বন্ধু, এখানে এখন পুরো আকাশটা খুলে গেছে
--তোমার সামার প্ল্যান কী? কোথাও যাচ্ছ ?

মনে মনে বলি সামার কোথায় দেখলে তুমি? এ যে জলবন্দীত্ব। পুরোপুরি গৃহবন্দী অবস্থা ।

---নাহ ! সেরকম কিছু ভাবিনি এখনো।

আমার গলাটা বোধকরি একটু বৃষ্টি ভেজা ছিল। ঐ প্রান্ত থেকে কী বুঝল কে জানে ! এবার ওর কন্ঠে খানিকটা অনুরোধের ঢঙ্গ --

----ক’দিনের জন্য সময় বের করে চলে আসো ইয়োকোহামা । তারপর একসাথে সাইপান যাবো ! ৮ জুলাই থেকে থেকে ৫ দিনের জন্য কন্ডো ভাড়া করা আছে ৪ জনের। তুমি এলে পূর্ণ হয়।

---আচ্ছা দাঁড়াও দেখি। একটু ভেবে নিয়ে কাল পরশু জানাবো তোমাকে।

---কোন দেখাদেখি নাই। তেমন কোন ব্যস্ততা না থাকলে তুমিও আসছ ব্যাস !

এবার আর অনুরোধ নয়—সরাসরি অধিকারের সুর। আমার সময়ের উপর বন্ধুদের এরকম যবরদখল ‘বরফ সর্বদা জলে ভাসে’র মতো ‘হ্যাবিচুয়্যাল ফ্যাক্ট’। বন্ধুরা অধিকার খাটালে কখনোই খুব একটা দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি না। তাছাড়া সাইপান গেলে তিনিয়ান যাবার একটা পথ হয়। মাঝখানে তিন চার মাইলের সাইপান ক্যানেলটাই তো ! একটা আগ্রহ আমার অনেক দিনের। সেটিকে আপাতত গোপন করে বাইরের বর্ষা ভেজা আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মনে হল---আপাতত কালিদাস না হয়ে বরং ক’দিনের কলম্বাস হয়ে যাই না কেন !

---আচ্ছা ঠিক আছে ! আসছি আমিও যদি প্লেন কানেক্টিং পেয়ে যাই ঠিকঠাক। এমনিতে এই সময়ে প্লেনের টিকেট পাওয়াই তো মুশকিল।

এখানে বাদ দেয়া যাক আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি পর্বের কথা, উড়োযানের সংযোগ বাধ্যকতায় একদিন আগে সরাসরি আমাকে সবার আগেই চলে যেতে হলো সাইপান । দীর্ঘ উড়ানের ক্লান্তিতে আচ্ছন্ন হয়ে আছি। যখন সাইপান আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে প্লেনের চাকা ঘষা খেল তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে এই দ্বীপে । প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে দৈর্ঘ্যে এগারো আর প্রস্থে ৬ মাইলের এই দ্বীপ তখন সত্যি খুব শান্ত লাগছিল। বিমান বন্দরের চেহারা দেখে মনে হল কোন একটা গ্রামের ইসকুল মাঠে ইমার্জেন্সি ল্যান্ড করেছি। সেই সময়ে রেঙ্গুন বিমান বন্দরকে যেরকম দেখেছি—অনেকটা সেরকম -- আরোহন অবতরণ একই তলায়—পাশাপাশি। একতলা বিমানবন্দর !!

কে জানত সবুজ পাসপোর্টের বিড়ম্বনা এখানেও পিছু ছাড়বে না? এখানে আমাদের জন্য পনেরো দিনের অন এরাইভাল ভিসা দেবার কথা রয়েছে হোটেল্ বুকিং থাকলে। অনেক প্রতীক্ষা আর প্রশ্নবাণে জর্জরিত হবার পর যখন ইমিগ্রেশন থেকে ছাড়া পেলাম তখন অনেক রাত । হোটেলের সর্বশেষ সাটেলটিও চলে গেছে অনেক আগে। বাইরে একটাও ট্যাক্সিক্যাব নেই , সাইপান এ গণ পরিবহন নেই এটা আগেই জানি। একেবারে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে যখন বাইরে হাঁটছি সেই ইমিগ্রেশন অফিসারটি নিজেই এগিয়ে এলেন--

---এখন কোন কিছুই পাবে না। তুমি চাইলে আমি তোমাকে হোটেল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারি।

এই লোকটার কারনেই আমার এতো দেরী হয়েছে আর এখন তিনিই এলেন ত্রাতা হয়ে। ভালোই তো ! বহু কষ্টে এক গাল হেসে ততোধিক কষ্টে একটা মিষ্টি ধন্যবাদ দিয়ে তাকে পার্কিং লট পর্যন্ত অনুসরণ করলাম।

এক রাতের জন্য নেয়া হলেও বাস্তবে মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্য উঠে এলাম ‘সামার হলিডে’ হোটেল এ। কাউন্টারে নিবন্ধন করার সময় পিছন থেকে খাঁটি বাংলায় কেউ একজন বলে উঠলেন

---ভাইজান ! আপনে কী বাংলাদেশী?

পিছন ঘুরে তাকাতেই দেখি একজন নিরাপত্তা কর্মী। খুব অবাক হলাম। ইনি সম্ভবত হোটেলে নিবন্ধিত হবার সময় আমার পাসপোর্ট দেখে থাকবেন। এতো দূরেও আমাদের দেশের মানুষ কিভাবে যেনো ঠিক এসে হাজির হয়েছেন। এখানেও বাঙালি পেয়ে যাবো এটা সত্যি অপ্রত্যাশিত ছিল, যাহোক ! ভাল লাগল। আবুল কাসেম সাহেব যথাসম্ভব সাহায্য করলেন লাগেজ টেনে উপরে তুলতে। দ্বীপটি সম্পর্কে, ট্যুরিস্ট স্পটগুলো সম্পর্কে কিছু ধারণা এবং উপদেশ দিলেন। বললেন এখানকার রেস্টুরেন্টগুলোর খাবার মুখে দেবার মত নয়। এটাও বলে গেলেন এখানে টেক্সি অথবা রেন্ট এ কার ছাড়া আমি প্রতিবন্ধী।

আসার সময় নারিতা বিমানবন্দরে ৬ ঘন্টার যাত্রা বিরতিতে বাইরে বের হয়েছিলাম সোর পাস নিয়ে। চিবা প্রিফেকচার থেকে দেখা করতে এসেছিল বন্ধু উচিয়ামা সান। যাবার সময় একটা কিছু ধরিয়ে দিয়েছিল হাতে। এতোক্ষণে মনে পড়ল। খুলে দেখি কিছু জাপানি মাউথ ক্র্যাকার আর সাথে একজোড়া সুদৃশ্য কাঁচের বোতল, সান্তোরি লেখা —একটা শাদা, একটা লাল। এই সময়ের জন্য অতি মোক্ষম জিনিশ। প্রায় ছয় হাজার কিলোমিটার পথ এসেছি ভেঙ্গে ভেঙ্গে ২৪ ঘন্টায়। ক্লান্তির অক্টোপাস বাহু মেলতে শুরু করে দিয়েছে। পরিপাটি করে গোছানো ধবধবে শাদা নরম বিছানায় ডুবে যেতে যেতে উচিয়ামাকে খুব করে ধন্যবাদ জানালাম---

ন’টায় ঘুম ভেঙ্গে গেল মর্নিং কলে। জাগিয়ে দিতে বলে রেখেছিলাম রাতেই । দ্রুত উঠে ফ্রেশ হয়ে নাশতা খেতে অনেকটা প্রায় ছুটেই গেলাম। হাতে খুব বেশী সময় নেই। সামনে যা পেলাম দৈত্যগ্রাসে গিলে নিয়ে ছুটলাম রিসিপশনে। ‘রেন্ট এ কার’ এদের নেই। মেয়েটি কোথাও ফোন করল। বলল লবিতেই অপেক্ষা করতে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই একজন এসে আমাকে উঠিয়ে নিয়ে গেল ওদের অফিসে। ড্রাইভার্স লাইসেন্সের কপি আর কিছু প্রয়োজনীয় কাগজে সই, আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষ করে এবার যখন হোটেলে ফিরি তখন ড্রাইভ করছি ৯৪ মডেলের ব্রান্ড নিউ নিশান আল্টিমা। বোকার মত কিছু না ভেবেই চেক আউট করে ফেললাম। দেখি হাতে সময় আছে তিন ঘন্টা। এখন শুধু একটাই কাজ। এয়ারপোর্ট থেকে কাজুনোরি এবং তার বন্ধুদের রিসিভ করে সোজা কন্ডোতে গিয়ে ওঠা তারপর প্ল্যান অনুযায়ী বাকি ৫ দিন। ম্যাপ আর ‘লোনলি প্ল্যানেট’ সাথে থাকলে যে কোন অচেনা ভূমিতেই আমি নির্ভিক । বলে রাখি---রোদের এতো তীব্রতা আমি এর আগে কখনো কোথাও দেখিনি। বেলা বাড়ার সাথে সাথে চোখ খোলা রাখাটা সত্যি কঠিন হয়ে পড়ছিল। গ্রীষ্মপ্রধান দ্বীপ। তাপমাত্রা আমাদের দেশের মতই অনেকটা। তবে বাতাসে আর্দ্রতা খুব বেশী।

হাতে পর্যাপ্ত সময় আছে নষ্ট করবার। শম্ভুক গতিতে গাড়ী চালালেও এয়ারপোর্ট এ পৌঁছাতে তিরিশ মিনিটের বেশী লাগবে না। এবার রোদ চশমার ভিতর দিয়ে ধীরে ধীরে চোখ বড় করে যতই চারদিক দেখছি ততোই মুগ্ধ হবার পালা। আরে আরে ! ভুল দেখছিনা তো ? পথের দু’পাশে কৃষ্ণচূড়ার সারি! এখানে কৃষ্ণচূড়া গাছ এলো কী করে? ধ্যুর না! এগুলো ফ্লেম ট্রি । অবশ্য হ্যাঁ—কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, কনকচূড়া কিম্বা রামচূড়া-(Dolenix rejia, Caesalpinia pulcherrima, Peltophorum pterocarpum ) সবারই ডাকনাম কিন্তু ফ্লেম ট্রি । ভাবছিলাম এতো আগুণরাঙ্গা ফুলের নাম কেনই বা কৃষ্ণচূড়া হল। কে জানে ! হয়তো কৃষ্ণবর্ণের মানুষের দেশ আফ্রিকায় এই ফুল (Dolenix rejia) পাওয়া গিয়েছিল তাই হয়তো এটার বাংলা নাম কেউ কৃষ্ণচূড়া রেখেছিলেন। মানচিত্রে দেখলাম পুরো দ্বীপে কয়েকটা মাত্র সড়ক। কোন ট্রাফিক জ্যাম নেই। যে কোন দিকে দশ মিনিট ড্রাইভ করলেই অতি নীল এবং বেশ প্রশান্ত একটি মহাসাগরের হাতছানি।

কিছুটা এগুতেই চমৎকার একটা বন পড়ল। একেবারে চুপচাপ—নির্জন কিম্বা বিজন বন যাকে বলে। খানিকটা যেতেই দেখি রাস্তা শেষ হয়ে বনের ভিতরে ঢুকে গেছে। পরের টুকু গোরুর গাড়ি চললে যে অবস্থা হয় সেরকম হয়ে আছে—খুব কষ্ট করে গাড়ী ঘুরিয়ে বাম দিকে খানিকটা যেতেই আরেক ভূবন !

এবার সামনে সরাসরি স্বর্গ দেখছি। নীলজল দিগন্ত ! গাঢ় সবুজের বেষ্টনীতে একেবারে প্রাকৃতির গহীন ভিতরে জল নিয়ে ঢুকে আবার বেরিয়ে যাচ্ছে মহা নির্লজ্জ সাগর ! একটু দূরে ছোট পাহাড় দেখা যাচ্ছে। নিচে নেমে দাঁড়ালে সারি সারি ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে পায়ে----আহা ঢেউ ! ঢেউয়ের পরে ঢেউ আসছে ছুটে-- সাথে কী মিষ্টি গর্জন ! সাগরের ফেনা এতো শুভ্রও হয় ! এতো সুন্দর ! এতো মনোরমা ! বোধ করি এই কারণেই ভালবাসার দেবী আফ্রোদিতিকে সাগরের ফেনা থেকে সৃষ্টি করা হয়েছিল। লিখে বলে কোন ভাবেই সেই দৃশ্য বোঝানো সম্ভব নয়। সবচে অবাক লেগেছে প্রশান্ত মহাসাগরের জল ! এতো নীল হয় জলের রঙ ! আমরা বাঙ্গালিরা যে ভিতরে ভিতরে সবাই কবি সেই কথার সত্যতা এবার নিজের ভিতরে অনুভব করলাম । আহা ! কাগজ কলম সাথে থাকলে নির্ঘাত আমিও নজরুলের মত ‘সিন্ধু’ না হলেও কাছাকাছি কিছু একটা লিখেই ফেলতে পারতাম না কে বলবে !

সবাইকে নিয়ে কন্ডোতে পৌঁছাতে দূপুর গড়িয়ে গেল। কেন জানিনা এবার ক্লান্তি আর ঘুম একযোগে আমাকে গ্রাস করে নিতে চাইছে। এই কন্ডোগুলো লোকালয় থেকে বেশ দূরে নিরিবিলিতে নির্মান করা হয়েছে মূলত ট্যুরিস্টদের জন্যই। জেনারেটরে নিজস্ব বিদ্যুৎ আর নিরাপত্তা ব্যাবস্থা। সত্যি বেড়াতে যাবার জন্য চমৎকার থাকার আয়োজন।

ঘুম ভেঙ্গে দেখি কোথাও কেউ নেই। আমি একা। যদিও ভুতের ভয় পাই না তবু ভুতের কথা মনে পড়ে গেল কেন কে জানে ! রাত সাড়ে ন’টা । বেশ ভালই ঘুমিয়েছি। দরজায় ঝুলছে একটা নোট। চাইলে “ওয়াকারে” (যার বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘বিচ্ছেদ’) নামের জাপানি পানশালায় রাত দশটার পরে ওদের সাথে মিলিত হতে পারি। ঠিকানা, ফোন নাম্বার দেয়া আছে। বলা আছে ওদের ফিরতে মাঝরাত পেরিয়ে যাবে। আরো বলা আছে দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তিতে আমার ঘুমানো জরুরী বলেই ডাকা হয় নি আমাকে।

মোবাইল ফোন তখনো এতো সহজ লভ্য হয়ে ওঠেনি। আমাদের কারো কাছে সেটি নেইও। তবে কন্ডোতে ল্যান্ডফোন আছে। যাক ! একেবারে বিচ্ছিন্ন নই তাহলে। এখন এই পুরো আবাসে একজন মাত্র নিরাপত্তা প্রহরী আর আমি। এক মগ কফি হাতে নিয়ে বাইরে বেরিয়েই শুনি একি ! ঝিঁঝিঁ ডাকছে—অবিকল আমাদের দেশের মতো ব্যাপার ---পূর্ণিমা না হলেও বেশ স্নিগ্ধ একটা আলো, আকাশে এরকম তারকার হাটবাজার দেখিনি অনেক দিন। মনে হল না আমি পৃথিবীতে আছি। রাত আমার কাছে বরাবরই অক্ষত রূপসী ! আবার ঘরে ঢুকে পকেট প্লেয়ার এনে তাতে রবীন্দ্রনাথ ঢুকিয়ে দিলাম ! কতক্ষণ ঐ কুঞ্জবনে ওভাবে বসে ছিলাম মনে নেই। গার্ড এসে জানতে চাইল কোন সমস্যা আছে কী না ! কোন কিছু লাগবে কী না ! তারপর টুকটাক করে কিছু গল্প হল। ওর নাম ডানিলো। বয়স ৪৯। ফিলিপাইন থেকে এসেছে তার বাবা। এখানে এসে স্থানীয় আদিবাসী এক চামোরো মেয়েকে বিয়ে করে। সাইপান তখন জাপানের কলোনি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে আমেরিকা-জাপান সংঘর্ষে তার বাবা মারা যায়। স্থানীয়দের অধিকাংশকেই তখন জাপানিদের পক্ষে যুদ্ধ করতে হয়েছিল। সেই যুদ্ধ ছিল------থামিয়ে দিলাম।

যুদ্ধের কাহিনী শুনতে ভাল লাগছিল না। কথা ঘুরিয়ে দিলাম। জানতে চাইলাম দ্বীপের বিশেষত্ব বা আদি ইতিহাস কিছু জানে কী না ! কতদিন আগে এই দ্বীপে মানুষ এসেছিল? কী ভাবে এসেছিল? এখানকার মিউজিয়ামে কী কী আছে? দেখলাম এসব বিষয়ে তার জ্ঞান সীমিত। সে কেবল কয়েকটা নাইটক্লাবের নাম ঠিকানা মুখস্ত বলতে পারে। ওখানে কী কী হয় সেসব মুখস্ত করেছে। যাহোক ! আমি আসার আগে এই দ্বীপের সামান্য ইতিহাস জেনেই এসেছি। প্রায় চার হাজার বছর আগে এই দ্বীপে মানুষ এসেছিল সাউথ-ইস্ট এশিয়া থেকেই, আরো কাছাকাছি বললে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া থেকে। ওরাই এই দ্বিপের আদিবাসী যাদেরকে ‘চামোরো’ (Chamorro) বলা হয়। আমাদের গারো আদিবাসীদের মতোই গাত্রবর্ণ এবং নাক খানিকটা বোঁচা। বলে রাখি এরা আমাদের মতোই পান সুপারী খায়—পথে খাটে কেউ কেউ পিচ করে ছেড়েও দেয় খানিকটা। স্প্যানিশ নাবিক গনজালো গমেজ ডি এস্পিনোসা প্রথম এই দ্বিপটি আবিষ্কার করেন ১৫২১ সালে। তারপর ১৬৬৮ সালের দিকে এক সময় এটি স্পেনের দখলে চলে যায়। প্রথমে স্পেন, তারপর ১৮৮৯ সালে স্পেনিশরা এই দ্বিপটিকে বিক্রি করে দেয় জার্মানির কাছে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান দখল করে নেয় সাইপান। ভাগ্যের খেলা-- দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে জাপানিদের পরাজিত করে সাইপান একইভাবে চলে যায় আমেরিকানদের হাতে। তখন থেকেই সাইপান আমেরিকান ট্রাস্টেড টেরিটরি । এই দ্বিপের বাসিন্দা সবাই এখন আমেরিকান নাগরিক। জনসংখ্যা ২৫ হাজার কিন্তু প্রতিদিন পর্যটক সহ ৬০ থেকে ৬৫ হাজার মানুষ ঘুমায় এই দ্বীপে তখন।

কাজুনোরি, তার বান্ধবী ফুকুহারা, ফুকুহারার বান্ধবী ইউকো আর আমি। উপরের তলা মেয়েদের দিয়ে নিচে আমরা ছেলে দুজন। ভোর ৬ টায় ঘুম ভাঙ্গলো ওদের হৈচৈ এ। নাস্তা সেরে ওচা’র (জাপানি চা) মগ নিয়ে সবাই বাগানে এসে বসলাম। পাহাড় গড়িয়ে গড়িয়ে নেমে আসছে ট্রপিক্যাল আইল্যান্ডের সকাল । আকাশে নীলে শাদায় নির্লজ্জ মাখামাখি । অমায়িক ভদ্র বাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছে চেতনার অলিগলি । ফুকুহারা আগেও একবার এসে বেড়িয়ে গেছে এই দ্বীপ। সে হঠাৎ ডুকরে কেঁদে উঠল। আমরা সবাই হতচকিত। কাজুনোরি গিয়ে ওকে একটু ছুঁতেই লজ্জাবতী লতার মতো ভেঙ্গেচুড়ে জড়িয়ে থাকল ওর গায়ে । এখানে বলে রাখি পৃথিবীতে জাপানি মেয়েদের মত আবেগী এবং আবেগহীনা—এই দুই এর এমন সুষম সমন্বয় আমি আর কোথাও দেখিনি । এরা যেন চাইলেই কাঁদতে পারেন। আবেগ অনুভূতির সাথে এদের শারীরিক প্রতিক্রিয়া অসম্ভব নিবিড় । অবশ্য দ্রুতই নিজেকে সামলে নিয়ে যা বলল তার বাংলা করলে দাঁড়ায় –আজ সেই ঐতিহাসিক দিন। ৯ জুলাই। ঠিক পঞ্চাশ বছর আগে এইদিনে জাপানিদের দখলে থাকা এই দ্বীপটিতে ঘটেছিল এক হৃদয় বিদারক ঘটনা। সম্রাট হিরোহিতোর নির্দেশে সম্মানজনক মৃতুকে আলিঙ্গন করেছিল এক থেকে দেড় হাজার জাপানি নরনারী, শিশু। মরে যাবে তবু শত্রু বাহিনীর হাতে গ্লানীকর বন্দিত্ব নয়। দ্বীপটির একেবারে শেষ উত্তরে দূরারোহ পর্বতের দুটি খাড়া চুড়া এখন পৃথিবীর কাছে এক বেদনা বিধুর ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ‘বানজাই ক্লিফ’ আর তার ঠিক আধা মাইল পিছনেই ‘সুইসাইড ক্লিফ’। এই দুটো শৃঙ্গের উপরে উঠেছিল হাজারেরও বেশী শিশু, কিশোর, অনূঢ়া, মধ্য ও প্রান্তিক বয়সের নরনারী। বয়োক্রম অনুসারে প্রথমে শিশু এবং সবার শেষে বয়স্করা সারিবদ্ধ ভাবে দুই বাহু প্রসারিত করে বানজাই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়েছিল আর পেছন থেকে একজন অপরজনকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে ‘সম্মানের মৃত্যু’ আলিঙ্গন করেছিল।

আমরা সেদিন সোজা চলে গেলাম দ্বীপটির একেবারে উত্তরে। যেখানে দাঁড়িয়ে আছে ‘বানজাই’ আর ‘সুইসাইড’ ক্লিফ। গাড়ী চালাচ্ছিল ইউকো। আমি পাশের সিটে । সবাই একদম চুপচাপ আজ। আমরা গিয়ে পৌঁছালাম যেখানে এখন জাপানি পিস মেমোরিয়াল, আমেরিকান ওয়ার মেমরিয়াল। কিছু পরিত্যাক্ত কামান, যুদ্ধাস্ত্র----মনুমেন্ট। সাগরের তীর ঘেষে একটি বিরাট এলাকা তখন প্রায় জনাকীর্ন। অধিকাংশই জাপানি , বয়সে প্রবীণ ট্যুরিস্ট। এখানে সেখানে বিক্ষিপ্ত ভাবে প্রার্থনা চলছে। হয়তো সেই যুদ্ধে নিহতদের কেউ কেউ এদের আত্মীয় ---পঞ্চাশ বছর পূর্তির দিন ! বেদনাবিধুর উৎসবের মতো।
সামনের সমুদ্রের দিকে তাকাতেই মনে পড়ে গেল নজরুলের সিন্ধু তরঙ্গ –

‘বন্ধু ওগো সিন্ধুরাজ! স্বপ্নে চাঁদ-মুখ
হেরিয়া উঠিলে জাগি’, ব্যথা ক’রে উঠিল ও-বুক।
-----------
দুলিয়া উঠিলে সিন্ধু উৎসুক উন্মুখ!
কোন্‌ প্রিয়-বিরহের সুগভীর ছায়া
তোমাতে পড়িল যেন, নীল হ’ল তব স্বচ্ছ কায়া!’

যা হোক ! বাদ দেই বরং স্কুবা ডাইভিং এ যাবার গল্প, জীবনে প্রথম বারের মত পানির নিচে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে মাছেদের অন্য এক রঙ্গিন জগত দেখার গল্প। আমরা মাঝখানে আর একটা মাত্র দিন আছি। তারপর চলে যাব এই দ্বিপ ছেড়ে যে যার দেশে নিজস্ব কর্মক্ষেত্রে। কাল আমাদের স্নর্কেলিং ( Snorkeling) সহ বিচ স্পোর্টস—প্যারা সেইলিং এইসব রয়েছে। আজ বিকেলে আমরা একটা গ্রিল পার্টি করছি সারা দুপুর সুইমিং পুলে হাঁস হয়ে থাকার পর। ছোট দ্বীপ। তিনদিনে মোটামুটি চষে ফেলা হয়েছে এগারো বাই ছয় মাইল । এবার সবাইকে বললাম---- আর হয়তো সাইপান আসা হবে না আমার কোন দিনই। তিনিয়ান এতো কাছে ওটা না দেখে চলে যাই কী করে যেখান থেকে পৃথিবীর সবচে বড় মারনাস্ত্র লোড করা হয়েছিল হিরোশিমা , নাগাসাকির জন্য। চলো কাল ওসব বিচ স্পোর্টস বাদ দিয়ে তিনিয়ান ঘুরে আসি।

বলে রাখি--সাইপান দখলের পর আমেরিকানরা একই ভাবে মাত্র নয় দিনের যুদ্ধে দখল করে নেয় আয়তনে সাইপানের অর্ধেক তিনিয়ান দ্বীপটি । তিনিয়ান দখলেও প্রায় একই ধরনের ঘটনা ঘটে। প্রচুর প্রাণহানীর পর জাপানিরা সেখানেও দলেবলে আত্মহত্যা করে। -সেই সময়ে মাত্র দুই মাসে তিনিয়ানে তৈরী করা হয় তখনকার পৃথিবীর সবচে বড় এয়ার পোর্ট (এয়ার বেইজ) ।

একে একে সবাই রাজি হয়ে গেল। ইয়োকোর সাথে জাপানে পরিচয় হয়েছিল তিনিয়ানের গেমিং বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে। নামটা ভুলে গেছি। সে তাকে ফোন করল এবং আমাদের জানালো নিয়মিত কোন ফ্লাইট নেই কাল তবে সকালেই এয়ারপোর্টে গিয়ে উপস্থিত হতে। বাকি কাজ সে করবে। আমরা পরদিন ভোরেই ছুটলাম সরাসরি এয়ারপোর্ট এ। ঘন্টা তিন পর একটা প্লেন পাওয়া গেল। সাত আসনের ছোট আকাশযান। বিমান না বলে পাখী বলাই সঙ্গত। বিমানে উঠলাম আর যেনো নামলাম। এতো সংক্ষিপ্ত বিমান ভ্রমন আমি কখনোই করিনি। দশ মিনিটের মধ্যেই তিনিয়ানে এসে পৌঁছে গেলাম আমরা। নেমেই পেয়ে গেলাম ইয়োকোর বন্ধু, তিনিয়ান গেমিং বোর্ডের চেয়ারম্যান, রোগা পাতলা প্রৌঢ় মানুষটি। আমাদের জন্য গাড়ী নিয়ে দাঁড়িয়ে।

এখানে একটা কথা বলা দরকার। তিনিয়ানে অবতরণের পর কোন ভাবেই এটাকে একটা বিমান বন্দর মনে হল না। কোন ইমিগ্রেশন নেই, কোন পেসেঞ্জার ফ্যাসিলিটিস কিম্বা টার্মিনাল নেই। একটা চায়ের দোকান আছে---কেউ নেই।

যাহোক ! আমরা থাকব মাত্র কয়েক ঘন্টা তারপর ফিরে যাবো সাইপান।

বেশ রৌদ্রজ্জ্বল দিন। শহর বন্দর কিছু নয়—কেবল গাছপালা আর দূরে দু একটা স্থাপনা পার হয়ে ছুটে গেলাম লাটে স্টোন (Latte stone) দিয়ে বানানো তিনিয়ানের প্রথম চামোরো রাজা টাগার অস্তিত্বহীন রাজ প্রাসাদ দেখতে। এখানে কিছু লাটে স্টোনের স্তম্ভ পড়ে আছে---কেবল একটা স্তম্ভই দাঁড়ানো। খানিকটা ঘুরে একটা বিচ হয়ে এবার চলে গেলাম ৫০ বছর আগে নির্মিত পৃথিবীর বৃহত্তম এয়ার পোর্টের ভিতরে। এখান থেকেই প্রতিদিন হাজার হাজার (শত শত নয়) বার ওঠা নামা করত বি-২৯ ইউএস বোমারু বিমান। নয় দিনের যুদ্ধে তিনিয়ান দখলের পর মাত্র দুই মাসেই সম্পন্ন হয় এই বিশাল বিমান বন্দর তৈরীর মূল কাজ। এই বিমান বন্দর থেকেই লোড করা হয়েছিল সেই ঐতিহাসিক ‘লিটল বয়’ আর ‘ফ্যাট ম্যান’ নামের দুটো পারমানবিক বোমা। আমরা যখন ইতিহাসে ভিতরে প্রবেশ করেছি তখন আর এটাকে বিমান বন্দরের রানওয়ে মনে হবার কারন দেখিনা। গাছ পালা জন্মে সে এক জঙ্গল বটে ! ফাঁকে ফাঁকে রানওয়ে রয়েছে যেখানে এক সময় বোমারু বিমান চলত সেখানে এখন আমাদের গাড়ি চলছে। যতদূর সম্ভব ঘুরিয়ে আমাদেরকে দুটো বোমপিট দেখানো হলো যা অযত্নে অবহেলায় প্রায় ভরাট হয়ে গেছে কিম্বা ভরাট করে রাখা হয়েছিল তখন।

আমরা সবাই গাড়ি থেকে নেমে বোমপিটের চারদিকে দাঁড়িয়ে গেলাম। ওরা নত মুখে চোখ বন্ধ করে ব সম্ভবত প্রার্থনা করছিল। আমার চোখের সামনে তখন ইতিহাসের সেই ভয়ঙ্কর অধ্যায়----পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা যেনো ভেসে উঠতে থাকল। মনে পড়ে গেল ৬ এবং ৯ আগস্ট, ১৯৪৫ সালের কথা। জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে যেন জ্বলে উঠেছিল একসাথে লক্ষ সূর্য। যার তেজস্ক্রিয়তা এতো বছর পরেও শেষ হয় নি। এখনো মানুষ আক্রান্ত হয়। লেঃ কর্নেল পল টিবেট বোমপিট-১ থেকে লোড করেছিলেন ‘লিটল বয়’ যে বিমানে সেটির নাম দিয়েছিলেন তিনি তার মায়ের নামে ‘এনোলা গে’। জানিনা কেন লক্ষ মানুষের মৃত্যুদূতের নাম তিনি মায়ের নামে করেছিলেন। জাপানের সবচে বেশী প্রচারিত দৈনিক আশা হি শিমবুন-এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী বোমার তেজস্ক্রিয়তায় পরবর্তিতে সৃষ্ট রোগে হাসপাতাল সমূহ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী হিরোশিমায় সর্বমোট ২৩৭,০০০ এবং নাগাসাকিতে ১৩৫,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়। মৃতদের প্রায় সবাই ছিলেন সাধারণ নাগরিক। এতো অল্প সময়ে এতো বড় ধ্বংসযজ্ঞের আর কোন নজির নেই এই গ্রহে।

আমাদের আর কিছু দেখার আগ্রহ রইল না কারোই। কিছুক্ষণ নীরবে বসে থেকে রানওয়ে ধরে আরেক প্রান্তে এসে সেই ঐতিহাসিক রানওয়ে থেকেই ফিরতি ফ্লাইটে উঠলাম----ফিরে যাচ্ছি সাইপান। বিমানের যাত্রী আমরা চার জনই। নিচে সীমাহীন প্রশান্ত মহা সাগরের থৈ থৈ জলরাশি দেখতে পাচ্ছি—
মনে পড়ল আবারও কাজী নজরুল ইসলামের সেই সিন্ধু----

তুমি শূন্য, আমি শূন্য, শূন্য চারিধার,
মধ্যে কাঁদে বারিধার, সীমাহীন রিক্ত হাহাকার

------------------
[ আমার তোলা ছবিগুলো বোধ হয় হারিয়ে গেছে। এতোদিন পর আর খুঁজে পেলাম না। নেট থেকে খুঁজে একটা দিলাম।
-- মুনীব রেজওয়ান ]

ছবি: 
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন

মন্তব্য

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সচলে স্বাগতম মুনীব রেজওয়ান! আপনার ভাষা ঝরঝরে, প্রকাশভঙ্গী সহজ, বর্ণনা সাবলীল। আশা করি আপনি সচলে নিয়মিত লিখবেন।

আপনার সৌভাগ্যকে হিংসা না করে উপায় নেই। ১৯৯৪ সালে বেড়াতে যাবার জন্য কোন বাংলাদেশী সাইপানে গিয়েছিলেন বলে শুনিনি। সত্যি বলতে কি বেড়াতে যাবার জন্য আজতক কতজন বাংলাদেশী সাইপানে গেছেন সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।

নব্বইয়ের দশকে দালালেরা আমেরিকা যাবার, উচ্চ বেতনে কাজ দেবার লোভ দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষকে সাইপানে চালান করেছিল। এক এক জনের কাছ থেকে ঐ আমলেই ৫/৭ লাখ টাকা করে নেয়া হয়েছিল। আপনি দেখছি সাইপানে অন্তত একজন হলেও বাংলাদেশী শ্রমিকের সাক্ষাত পেয়েছেন। ঐ সময়ে সাইপানে তাঁদের জীবন সম্পর্কে কি কিছু জানতে পেরেছিলেন?

সম্রাট হিরোহিতোর নির্দেশে সম্মানজনক মৃতুকে আলিঙ্গন করেছিল এক থেকে দেড় হাজার জাপানি নরনারী, শিশু।

- সম্রাট নিজে কেন এই সম্মানটা অর্জনের চেষ্টা করেনি? কখনো সুযোগ পেলে আপনার জাপানী বন্ধুদের এই প্রশ্নটা করে দেখবেন তো। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, ত্রিশ আর চল্লিশের দশকে পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া আর প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় কোটি হিসেবে মানুষ হত্যা করা ব্যাপক গণহত্যা, ধর্ষণ, অত্যাচার, ধ্বংসযজ্ঞ চালানো জাপানীদের রাজপরিবারের একটা সদস্যকেও যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি।

লেখাটা পড়তে পড়তে মনে মনে খুব আশা করেছিলাম আপনার তোলা একটা ছবিও যেন থাকে। দেখা যাচ্ছে এইখানেও ভাগ্য সহায় হয়নি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মুনীব রেজওয়ান এর ছবি

অশেষ ধন্যবাদ ষষ্ঠ পাণ্ডব দীর্ঘ লেখাটি পড়ে চমৎকার মন্তব্যের জন্য। প্রেরণা পাচ্ছি। ১৯৯৪ এর আগেও আমার জানা বেশ ক'জন বাংলাদেশী বেড়াতে গেছেন উত্তর ম্যারিয়ানা দ্বীপপূঞ্জ ঘুরে দেখার জন্য। আর হ্যাঁ দালালদের ব্যাপারে যে কথাটি বলেছেন সেটি আরো বছর কিম্বা দুবছর পরের ঘটনা। আমিও শুনেছি সেসবের কিছু কিছু। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানি সৈনিকদের নির্মমতার কথা আমরা জানি, জানি যুদ্ধের ভয়াবহ নৃশংসতার কথা। কমবেশী সকলেই সেসব জানেন বিধায় ওই প্রসঙ্গে আর লিখিনি। তবে হ্যাঁ আপনার মতো আমারও প্রশ্ন ছিল জাপানের সম্রাট নিজে আত্মহত্যার হুকুম দিয়ে নিজে কেন আত্মহত্যা করলেন না। এটা নিয়ে বহু ধরণের কথা আছে। সেসব নিয়ে সম্ভব হলে অন্য কোনদিন লিখবার ইচ্ছে রইল। সচলে সচল হতে পারলে আমারও ভাল লাগবে। ভাল থাকুন।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সচল হওয়া খুব সোজা ব্যাপার। নিয়মিত লিখে যাবেন, পোস্ট করবেন। কখনো কখনো দুয়েকটা লেখা মডারেশনের কবলে পড়ে কাটা পড়তে পারে, তবে সেটা নিয়ে মন খারাপ না করে পরের লেখাটা শুরু করে দিন। নিজের পোস্টে পাঠকদের করা মন্তব্যের জবাব দিন, আর অন্যদের লেখা পড়ে সেখানে কমেন্ট করুন। দেখবেন সচল হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।

শাহীন ভাইয়ের মন্তব্যে দেখলাম আপনি কবি। আপনার কবিতা পড়তে পাবার আশা রাখি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

চমৎকার, মুগ্ধকর লেখা! এমন লেখা প্রায়শঃই পড়তে চাই!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

মুনীব রেজওয়ান এর ছবি

অশেষ ধন্যবাদ রোমেল চৌধুরী আপনাকে। প্রেরণা পেলাম। ইচ্ছে রইল আরো লিখবার। ভাল থাকুন।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

অতি সাবলীল বর্ণনা; ভ্রমণের সাথে সাথে তথ্য। দারুণ

০২
সচলে আপনার আর কোনো লেখা পড়েছি বলে মনে হচ্ছে না। তবে পরের লেখার অপেক্ষা থাকল

মুনীব রেজওয়ান এর ছবি

অশেষ ধন্যবাদ মাহবুব লীলেন আপনাকে। ঠিকই ধরেছেন। সচলে এই প্রথম লিখলাম। নিশ্চয় আরো লিখবার ইচ্ছে আছে। ভাল থাকুন।

শাহীন হাসান এর ছবি

সচলে তোমাকে দেখতে পেয়ে ভাল লাগছে বেশ। তোমার গদ্য লেখা আমি এই প্রথমবারের মতো পড়লাম। কবিতা পড়েছি অনেক। সরল এক গতিময়ছন্দ যেন হাত ছাড়তে চায় না। হাঁটলাম তোমার হাত ধরে। অনেক কিছু আলোচনার আছে। পরবর্তী সময়ে দেখা হলে জেনে নেবো। গল্পের মতো করে টুকরো ইতিহাস তুলে ধরা, তোমার হাতের জাদুই জানান দিয়ে যায়। সচলে তোমার আরও লেখা আমরা পড়তে পারব, এটাই প্রত্যাশা ...

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

মুনীব রেজওয়ান এর ছবি

অশেষ ধন্যবাদ প্রিয় কবি শাহীন হাসান। তোমার মন্তব্য পেয়ে ভাল লাগছে। এতো বড় লেখা আজকাল আর কেউ পড়তে চায় না। অন্তত কয়েকজন পড়েছেন, পড়ে মন্তব্যও রেখেছে্ন এটা আমার কাছে অনেক। সত্যি আরো লেখার আগ্রহ তৈরী হয়েছে। ভাল থাকো, সাথেই থাকো।

এক লহমা এর ছবি

সচলে স্বাগতম মুনীব রেজওয়ান! লেখা ভালো লেগেছে। পরের লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

মুনীব রেজওয়ান এর ছবি

অশেষ ধন্যবাদ এক লহমা। নিশ্চয় লিখব। ভাল থাকুন।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

বাহ আরও লিখুন...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মুনীব রেজওয়ান এর ছবি

ধন্যবাদ সাক্ষী সত্যানন্দ। নিশ্চয় লিখব। ভাল থাকুন।

শাব্দিক এর ছবি

আপনার লেখা অসাধারণ লাগল।
লেখনীর গুণে ছবি ছাড়াই মনে হল সব চিত্রপটে আঁকা।
সচলে নিয়মিত লিখবেন আশা করি।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

মুনীব রেজওয়ান এর ছবি

ব্যাস্ততার ফাঁক ফোকরে অল্প স্বল্প লিখি। নিশ্চয় লিখবার চেষ্টা করব। ভাল থাকুন। মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।