ছদ্মবেশী বর্ণচোরা এম এ লতিফ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ১৯/১২/২০১৫ - ৭:০২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

"আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার" নামের সংগঠন ২৬ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯৫ পাকিস্তানি সেনা সদস্যের 'প্রতীকী বিচার' করার ঘোষণা দিয়েছে। শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর ২০১৫) সংবাদ সম্মেলনে করে খবরটা জানানো হয়েছে। এজন্য বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৫০১ জনকে নিয়ে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংবাদপত্রে লেখা হয়েছে কমিটির আহ্বায়ক হচ্ছেন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, যুগ্ম আহ্বায়ক সাংবাদিক আবেদ খানসহ নয়জন, সদস্যসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমান আলী, সাংবাদিক অঞ্জন রায় ও কামাল পাশা চৌধুরী এবং সহকারী সদস্যসচিব হচ্ছেন শমী কায়সার ও কামরুল আলম।

বিডিনিউজে সংবাদ সম্মেলনের ছবি দেখে চমকে উঠলাম। সাংবাদিক আবেদ খানের পাশে বসে থাকা ব্যক্তিটির নাম এম এ লতিফ (প্রথম ছবিতে লাল বৃত্ত দেখুন)। তিনি চট্টগ্রাম-১১ আসনের সাংসদ এবং বিদ্যুৎ-জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ, নৌ-পরিবহন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য। অনেকের হয়ত নামটা মনে নাই। দুটো ঘটনার কথা বলি। এম এ লতিফ ২০০৯ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের একজন কর্মকর্তাকে ধমকে "ইউ শাট আপ, আই এম এ মেম্বার অব দ্য পার্লামেন্ট" বলে খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন। এরকম ঘটনা আরও ঘটেছে। একই বছর বেসরকারি বিমান সংস্থার এক ফ্লাইটে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শককে বলেন "আপনি জানেন, আমি সাংসদ, আমাকে সালাম দেননি কেন? আপনারা জনগণের সারভেন্ট, এটা মনে রাখবেন"। ২০০৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির সবাদপত্রে খবরটা পাবেন। তবে এসব বিষয় নিয়ে এখন লিখছি কেন?

এম এ লতিফ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র ১৯ দিন আগে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নির্বাচন করেন। ঐ নির্বাচনে ২৩০ আসনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে এম এ লতিফ ছিলেন। তবে নির্বাচনের আগে তিনি জামায়াতের লোক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ২০০৯ সালের ৩১ জানুয়ারি বিডিনিউজে সংবাদ ছিল "জামায়াতের অনুষ্ঠানে 'যুদ্ধাপরাধীর' সঙ্গে আওয়ামী সাংসদ লতিফ"। খবরে লেখা আছে সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত জামায়াত নেতা ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মাওলানা শামসুদ্দিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম শহরের বিএলএফ কমান্ডার কাজী ইনামুল হক দানু এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা গ্রন্থের প্রণেতা ডা. মাহফুজুর রহমান জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় মাওলানা শামসুদ্দিন পাকিস্তানি বাহিনীর কুখ্যাত নির্যাতন কেন্দ্র (টর্চার সেল) শহরের ডালিম হোটেলের অন্যতম নিয়ন্ত্রক ছিলেন।

২০১১ সালের ৯ অক্টোবর চট্টগ্রামে ছাত্রশিবিরের নগর কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে একটি এলজি ও এক রাউন্ড তাজা কার্তুজ ছাড়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ ডায়েরি উদ্ধার করে। ডায়েরিতে ছাত্রশিবিরের ৭৫ জন শুভাকাঙ্ক্ষীর নামের তালিকায় এম এ লতিফের নাম ছিল। এম এ লতিফের নাম ছাত্রশিবিরের ওই তালিকায় থাকাকে স্বাভাবিক বলেছিলেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের তখনকার যুগ্ম সম্পাদক খোরশেদ আলম। তার বক্তব্যটা আমি সংবাদপত্র থেকে কোট করছি। খোরশেদ আলম বলেন, "এম এ লতিফ ২০০৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই জামায়াতের সংগঠন চাষিকল্যাণ সংস্থার সমাবেশে যান। সেখানে নিজের বিবাহিত ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান করেন দ্বিতীয়বারের মতো। ইতিপূর্বে আমি দাবি করেছিলাম লতিফ একজন জামায়াত, আওয়ামী লীগে তিনি ছদ্মবেশী বর্ণচোরা। এবার তা আরেকবার প্রমাণিত হলো"।

এম এ লতিফ নামের এই লোকটা এখন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার কমিটির সদস্য! সে এখন ১৯৫ পাকিস্তানি সেনা সদস্যের বিচারে অংশ নিচ্ছে...!!!

সৌমিত্র পালিত


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

একটা ছবি দেখা যাচ্ছে না।

শেহাব এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অতিথি লেখক এর ছবি

শেহাব, ধইন্যাপাতার জন্য ধন্যবাদ। গতকাল বিভিন্ন স্টোর তন্নতন্ন করে খুঁজে ধইন্যাপাতা পায় নাই। খুব দুষ্প্রাপ্য।
________
সৌমিত্র

নীড় সন্ধানী এর ছবি

এম এ লতিফ চট্টগ্রামের ত্রিমুখী আওয়ামী কোন্দলের সবচেয়ে সুযোগ্য বেনিফিশিয়ারী। নির্বাচনের আগে গজিয়ে ওঠা হঠাৎ আওয়ামী লীগদের একজন। নির্বাচিত হবার পর তার নামটা পেটোয়া এমপি হিসেবে বেশ কয়েকবার হেডলাইন হয়েছিল একে তাকে ধরে পেটানোর কারণে। জামাতের সাথে তাঁর ঘনিষ্টতা অনেক পুরোনো। তার বাড়িতে জামাতের বৈঠক হবার কথাও শোনা গেছে নির্বাচনের আগে। নির্বাচনের সময় এসব নিয়ে লেখালেখি হয়েছিল বিস্তর। যদ্দুর জানি নির্বাচনের সময় তাকে নমিনেশান দেয়া হয়েছিল নিশ্চিত হেরে যাবে ধরে নিয়ে। কেননা চট্টগ্রামের ওই আসনটা বরাবর বিএনপির দখলে থাকে। আমির খসরুর সাথে নির্বাচনে হারার দায়টা অপরিচিত কাউকে দেবার জন্যই তাকে নমিনেশান দেয়া হয়। জেতার পর তিনি নিজেই হতবাক হয়ে যান এবং আচমকা অপ্রত্যাশিত বিজয়ের তেজে সরকারী বেসরকারী অফিসের কর্মকর্তাদের সমানে চড় চাপড় দিয়ে নিজের অস্তিত্ব জাহির করে পত্রিকার হেডলাইন হতে থাকেন। বর্তমান আওয়ামী লীগে বর্নচোরা খন্দকার মোশতাকের সংখ্যা নেহাত কম নয়।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি ১০০% ঠিক। আমার অভিজ্ঞতার কথা বলি। ২০০৮ সালে ইলেকশনের সময় ভোট দিতে গিয়েছিলাম। ভোটকেন্দ্রে ঢোকার সময় কয়েকজন পুলিশকে দেখলাম ৩/৪ জনের একটা গ্রুপকে জেরা করছে। এদের মধ্যে একজন ছিল এম এ লতিফ। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠিত যে কোন নেতাকে পুলিশের না চেনার কোন কারণ নাই। এম এ লতিফ এত আনকোরা তাকে কেউ চিনতোই না। পুলিশের এই "অভদ্রতাকে" সে হজম করতে পারে নাই মনে হয়!! অনলাইনে সার্চ করলে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে তার অহেতুক হাতাহাতির ঘটনার একাধিক তথ্য পাওয়া যায়। একবার তাকে এ কারণে "উন্নত চিকিৎসার" জন্য সিঙ্গাপুর যেতে হয়।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

যে দেশে শিবিরও স্লোগান দেয় 'স্বাধীনতা এনেছি, স্বাধীনতা রাখব' সেই দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের স্লোগান ধরার আগে যুদ্ধাপরাধী কে, এদের বন্ধু-স্বজন কে এসব আসলে চেনা দরকার।
জামায়াতের খাতায় যাদের নাম শুভাকাংখী হিসেবে আছে তাদেরকে বগলের চিপায় নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করলে শুরুতেই মাথা চুলকানো শুরু করবে পাবলিকে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আরিফ জেবতিক ভাই, ছবির ব্যানারটাতে একটা ভুল দেখতে পাবেন। "যুদ্ধাপরাধী" বানানটা একবার ই-কার, আরেকবার ঈ-কার দিয়ে লেখা হয়েছে। শুরুতেই এত ছোটখাটো বানানে ভুল করলে হবে!

অনুসন্ধিৎসু এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি ঐ আসনের বাসিন্দা ।আমার শুরুতেই মনে হয়েছিল এইটা ধান্দাবাজ। তারপর নির্বাচনের চাপা শুনে বুঝলাম ঠিকই ধরেছি। মুখস্থ ঝেড়ে দিয়েছিলেন ওবামার "চেন্জ উই নিড"।আমার বাসার সবচেয়ে কাছেই ছিল আমলীগের অফিস। সুতরাং বাসায় বসেই শোনা যায়।
উনি চেম্বার অফ কমার্সের নেতৃত্বে ছিলেন।প্রচুর টাকার মালিক -সেটাই বোধহয় মুখ্য ভুমিকা রেখেছিল।
তখন চট্টগ্রামে ঐসময়ে এরকম দলবদলের ঘটনা আরও ছিল, যা স্বাভাবিক হিসেবে সবাই ভেবেছিল।

তনজল এর ছবি

চট্টগ্রামের নির্বাচন কেন্দ্রীক রাজনীতিতে আসার শুরুটা যদ্দুর সম্ভব চেম্বার অব কমার্স অফিস থেকে শুরু হয়। অনেকেই আছেন চেম্বার অব কমার্সের কেউকেটা হবার পর বা কেউকেটাদের সংস্পর্শে আসার পর রাজনীতিতে ঢোকেন।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হুয়াই "প্রতীকী বিচার"? চিন্তিত

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

সিমলা চুক্তিতে ছিল বাংলাদেশ আর পাকিস্তান নিজ নিজ দেশে একাত্তরের চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে। ১৯৭৩ সালে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ১৯৫ জন পাকিস্তানি সৈন্যেকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এজ এক্সপেক্টেড, পাকিস্তান এখনো তাদের বিচার করেনি। বর্তমান ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা বলছেন বিদ্যমান আইনে যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য পাকিস্তানের ১৯৫ জন সেনা সদস্যেরও বিচার করতে পারে ট্রাইব্যুনাল৷এ কথা মেনে নিলে আসল বিচারের সিদ্ধান্ত সরকারকে নিতে হবে৷

অতিথি লেখক এর ছবি

হুম

অতিথি লেখক এর ছবি

নাহ! এম এ লতিফের কিছুই হয় নাই। জামাত শিবিরের ঘনিষ্ঠজন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে বক্তৃতা দেয়। হাস্যকর হলেও এটাই বাস্তবতা। http://www.banglanews24.com/fullnews/bn/457551.html

________
সৌমিত্র

অতিথি লেখক এর ছবি

বাংলানিউজের এই লিংকে অনুষ্ঠানের ব্যানারে পাঁচটা ভুল বানান।
১। গনহত্যাকারী
২। যুদ্ধাপরাধিদের
৩। প্রস্তুতী
৪। প্রধান অতিথী
৫। উদ্দ্যোগে

হিমু এর ছবি

ভেতরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জ্যাকবকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

মন্ত্রী, এম পি, মেয়র এসব ঠিকঠাক হলে চলবে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাকি লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসবে কি এসে যায়!
________
সৌমিত্র

অতিথি লেখক এর ছবি

"গতকাল সোমবার রাঙামাটিতে ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরিজম সামিটের প্রথম অধিবেশন চলাকালে সাংবাদিকরা যখন ঘাসে বসে ছবি নিচ্ছিলেন তখন চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য ও চেম্বারের সাবেক সভাপতি এম এ লতিফ কোনো কারণ ছাড়াই সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে যান এবং দুর্ব্যবহার শুরু করেন"।

http://suprobhat.com/%E0%A6%8F%E0%A6%AE%E0%A6%AA%E0%A6%BF-%E0%A6%B2%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AB%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%86%E0%A6%9A%E0%A6%B0%E0%A6%A3%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A7%81%E0%A6%AC%E0%A7%8D/

আবার তিনি মারপিট শুরু করে দিয়েছেন!
___________________
সৌমিত্র পালিত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।