অলস মায়া

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৯/০৫/২০১৬ - ৬:২৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অফিস থেকে হুট করেই তিন দিনের ছুটি নিয়েছি।এমনি কোন কারন ছাড়াই, বিশেষ কোন হাতি-ঘোড়া মারার উদ্দেশ্য নিয়ে নয়।মানুষ ছুটি নিয়ে বেড়াতে যায় কিংবা জরুরী কাজ সারে, আর আমি ছুটি নিয়ে ঘরে শুয়ে বসে কাটাই।এ ধরনের ছুটির অবশ্য অন্যরকম একটা মজা আছে। বাকি পৃথিবী যখন কাজে মশগুল, আমি তখন সোফায় আধশোয়া হয়ে বই পড়ি, দু চারটা গান শুনি,টিভিতে পুরনো কোন ফ্লপ সিনেমা দেখি,ইচ্ছে হলে ফ্রিজ খুলে দুই ঢোক কোক খাই কিংবা ছুরি দিয়ে নিজে নিজে আম কেটে খাই। পুরো বাড়িতে আমি একা, নিজেকে কেমন যেন রাজার মত মনে হয়!দুপুরে বিছানায় শুয়ে জানালায় তাকিয়ে আকাশ দেখি,দখিনা জানালায় হঠাৎ হঠাৎ দমকা বাতাস এসে পর্দা নাড়িয়ে দেয়।কিছুক্ষন আগে আবার ঝমঝমিয়ে এক পশলা বৃষ্টিও হয়ে গেল।জানালায় দাঁড়িয়ে সেধে সেধে বৃষ্টির ছাঁট গায়ে লাগাতে লাগাতে মনে হল, জীবনটা তো মন্দ নয়!সুখ বেশি হলে বোধহয় মানুষের দুঃখবিলাসী হতে ইচ্ছে করে,তাই স্মৃতিকাতরতা ভর করে।আমার বন্ধু তারেক একবার দার্শনিকের মত বলেছিল-"স্মৃতি জিনিসটা সবসময় দুঃখ নিয়ে আসে, এমনকি সেটা সুখস্মৃতি হলেও"!কথাটা মিথ্যে নয়, অন্তত আমার ক্ষেত্রে। জানি কোন মানে নেই তবু তাই নস্টালজিক হই, রবীন্দ্রনাথ যেমন বলেছিলেন-

" এ শুধু অলস মায়া, এ শুধু মেঘের খেলা
এ শুধু আপনমনে মালা গেঁথে, ছিঁড়ে ফেলা"

মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসা মানুষ বা যাদের Near Death Experience আছে, তারা নাকি তাদের সামনে পুরো জীবনটা সিনেমার মত দেখতে পান। এত অল্প সময়ে নিশ্চয়ই সবকিছু দেখা যায়না,বিশেষ জিনিসগুলোই তারা দেখেন। আমার সেরকম হলে মনে হয় আপাত অর্থহীণ জিনিসগুলোই বেশি দেখব।যেমন ঢাকা কলেজে দুই বছরে কি পড়েছি তার প্রায় কিছুই মনে নেই।আবছা ভাবে মনে আছে শকুন্তলা আর দুই সখীর কথা,প্রাচীন নাবিক আর অ্যালবাট্রস,আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা,ফেনলকে দস্তাচূর্ণ দিয়ে পাতন করে বেনজিন উৎপন্ন করার কথা।এর চেয়ে বেশি মনে আছে বিশাল গ্যালারি-২ এর পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে একদিন "কোন পুরাতন প্রাণের টানে" গেয়েছিলাম, অবশ্যই গ্যালারি পুরো ফাঁকা ছিল!প্রায়ই ক্লাস হত না, দু-চারটে চড়ুই-শালিককে শ্রোতা রেখে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়াটা মাঝেমাঝেই হত অবশ্য,মনে থাকার সেটাও কারন হতে পারে।

অথবা বুয়েটের পাঁচ বছরই ধরা যাক,তড়িৎ কৌশলের কি পড়েছি কিছুই মনে পড়েনা।বন্ধুরা কেউ ঠিকঠাক পড়াশোনা করত,কেউ প্রোগ্রামিং করত,কেউ ভাল খেলত,কেউ চুটিয়ে প্রেম করত,কেউবা টিউশনি করত, কেউ আর কিছু না পারলেও অন্তত বাঁদরামি করত।আমি এর কিছুই ঠিকমত পারিনি,তাই মনে রাখার মত এ জাতীয় স্মৃতিও সেভাবে নেই। আমার স্মৃতিতে বরং আছে ওল্ড অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং এর কোনাখামচিতে অহেতুক ঘোরাঘুরি।পুরনো দিনের বিল্ডিং, কোন কোন অংশ তেমন একটা ব্যবহার হয়না বলে কেমন যেন অন্ধকার হয়ে থাকত।বিরান দুপুরে সে জায়গাগুলো দিয়ে হেঁটে যেতে বেশ গা ছমছমে রোমাঞ্চ হত।তিন গোয়েন্দার বইয়ে পড়া কোন প্রাচীন দূর্গের ডানজনে চলে এসেছি বলে মনে হত।মাঝে মাঝে ফাঁকা কোন ক্লাসরুমে ঢুকে যেতাম।দেয়ালের এক কোনায় একটা বাতি টিমটিম করে জ্বলছে,মাথার উপর আদ্যিকালের এক ফ্যান ঘটাং ঘটাং করে চলছে, আর আমি একা বসে আছি- সব মিলিয়ে এক অপার্থিব পরিবেশ!মাঝে মাঝে ব্ল্যাকবোর্ডের একপাশ মুছে সেখানে ছবি আঁকতাম।আমি মোটেও উঁচুদরের চিত্রকর নই, ড্রইং এ চারবার ফেলও করেছি স্কুলে থাকতে।কলাগাছ,কুয়া,কুঁড়েঘর এই জাতীয় দশ-বারোটা জিনিসের ছবি আঁকতে পারি,ঘুরে ফিরে সেগুলোই আঁকতাম।মাঝে মাঝে আবার ভাল লাগা কবিতা কিংবা গানের লাইন লিখে আসতাম। বুয়েট ছেড়ে আসার নয় বছর পরে সেই দুপুরগুলোকে এখন অমূল্য মনে হয়!

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর "ভয়ংকর সুন্দর" বইয়ে বলেছিলেন আকাশ নাকি কখনো পুরনো হয়না।আমি তার সাথে মেঘকেও যোগ করব।এই আকাশ আর মেঘ মিলে কতরকম নকশাই না বোনে,সবই কাছাকাছি দেখতে তবুতো অনন্য,অন্যরকম।বেশিরভাগই অর্থহীণ কম্বিনেশন,কোন ছবি তৈরী করেনা।তবু তো আমরা মনে মনে ছবি সাজানোর চেষ্টা করি, তবু তো অর্থ খোঁজার চেষ্টা করি।কখনো পাই, কখনো বা না!

গগনে গগনে, আপনার মনে
কি খেলা তব?
তুমি কত বেশে, নিমেষে নিমেষে
নিতুই নব।
জটার গভীরে,লুকালে রবিরে
ছায়াপটে আঁক, এ কোন ছবিরে?
মেঘমল্লারে,কি বল আমারে
কেমনে কব?

-গগন শিরীষ


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়া শেষে মনে হইল আরেকটু চলতো, এখনি কেন ইতি টানা। আরো কথা হয়তো মেঘে মেঘে ভাসছিল ।
এ্যানি মাসুদ

গগন শিরীষ এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ।আর কথা পাচ্ছিলাম না,বৃষ্টি হয়ে ঝরে গিয়েছিল মনে হয় হাসি

জীবনযুদ্ধ এর ছবি
গগন শিরীষ এর ছবি

ধন্যবাদ জীবনযুদ্ধ!

সত্যপীর এর ছবি

চমৎকার।

..................................................................
#Banshibir.

গগন শিরীষ এর ছবি

ধন্যবাদ ভাই,আপনি ইদানীং এত কম লেখেন কেন?

সোহেল ইমাম এর ছবি

পীরসাহেবের কাছে নালিশ আছে, ভাই মুরিদদের দিকে একটু তাকান, অনেক দিন আপনার লেখা পাইনা।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

সোহেল ইমাম এর ছবি

গগন শিরীষ - এই নামের মধ্যেই একটা যাদু আছে। এই নাম দেখা মাত্রই লেখাটা পড়তে ইচ্ছে করবেই। আপনার অলস স্বগতঃ উক্তির ধারাটা মায়ময় মুগ্ধতা নিয়ে পড়লাম। পীরসাহেবের লেখা কম পাওয়া যাচ্ছে এই অভিযোগের পাশাপাশি বলবো আপনিও কম লিখছেন। আরো লিখেন।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

গগন শিরীষ  এর ছবি

ধন্যবাদ সোহেল ভাই।বেশি বেশি লিখতে হলে সহজাত লেখক হতে।আর আমি অনেক কষ্টে ঠেলে ধাক্কা দেয়া লেখক!

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

অন্তরে অতৃপ্তি র'ল, সাঙ্গ করি মনে হল- শেষ হইয়াও হইল না শেষ মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

গগন শিরীষ  এর ছবি

খাইসে,ব্লগর ব্লগরের বদলে ভুলে ছোটগল্প হয়ে গেল নাকি?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।