'পৃথিবীর শেষ গ্রাম' পরিভ্রমন হেতু...

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: শুক্র, ০৪/০৭/২০০৮ - ৭:০৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

..


'আমরা ও চেয়েছিলাম পাহাড়ে পৌঁছে যাই সমান্তরাল
যদি পথ হারাতে পারি তবেই হয়তো অমরত্বের পথে
মৃত্যু আমাদের ঠাঁই করে দিতে পারে গ্রামে তবু কেনো সাবধানে
বিজ্ঞানীর ঘর থেকে তুলে আনি টর্চ? কেনো কোমড়ে বাঁধা
আরো একদিন বেঁচে ক্ষীন দড়ি? কেনো মনে হয়
ভোরের আগে যেতে পারলে পেয়ে যাবো গ্রাম?'



এ যেন কোন জাতকের বলে যাওয়া গল্প । পুনর্জন্মের পর এক জাতিস্মরের স্মৃতিচারন যে শোনিতে বয়ে এনেছে তার হারিয়ে যাওয়া গ্রামের ঘ্রান । মনে পড়ে তারঃ



'আমরা আগে গ্রামে থাকতাম । নদীর খুব কাছে না অবশ্য । পাহাড় ছিলো পাশে । দূরে শিলঙের রাস্তায় খাবি খাওয়া মেঘ । আমাদের অনেক বন্ধুরা সেইখানে বেড়াতে যেতো পয়সা দিয়ে । আমার পয়সা ছিলো না, ছিলো ঘরে ঢোকার এক কিলোমিটার রাস্তা
গেট দিয়ে ঢুকতেই পয়সায় নাগাল না-পাওয়া শিলঙ আমদের ডাকতো,
নাকি ডাকতো শিলঙের খাবি খাওয়া'

তারপর? কি হল সেই গ্রামের? সবুজ চিনতে ভুলে যাওয়া মানুষেরা ফসিল গ্রামের গল্প শুনতে আগ্রহী হলে সেই গ্রামীন জাতক বলে যায় আরোঃ


এখন গ্রামে দুটো রাস্তা । একদিন থেকে আসে আর একদিক দিয়ে যায়
যে যার রিকশায়,কেউ দ্যাখে না কারো পরিচিত মুখ । আগে এই রাস্তায় একটাই রাস্তা ছিলো । যে যায় সে যায় যে আসে সে ও আসে । তখন
দূর থেকেই বোঝা যেতো কে আসে । চেনাচেনা । ভাই কিংবা বোন
প্রেম কিংবা অপ্রেম-সব নিজের দখলে । চেনা মানুষ দেখা যাবেই-ভরসায় সবাই দিয়েছে কিলোকিলো পথ পাড়ি


কিন্তু দুই রাস্তার সুবিধা ও আছে । এক রাস্তায় যখন গ্রামের এক ছেলেকে মারতে মারতে লাশ অন্য ছেলেরা । তখন অন্য রাস্তায় গাড়ি চলতে পারে
গ্রামের বাকি সবাই ওই রাস্তায় গাড়িতে পালিয়ে যেতে পারে । তরুন
মার খেতে খেতে লাশ সহানুভূতির চাদরে । অন্য রাস্তায় খেলা দ্যাখার মতো নিরাপদে দূরে দাঁড়িয়ে আর সবাই দ্যাখে । গ্লাডিয়েটর গ্ল্যাডিয়েটর ।
গ্রামের হন্তারক ছেলেরা আরামে বিনাশাস্তিতে ঘোরে । ডাবল রাস্তার এই সুবিধা
যে যে পারে সুযোগ নেবে বুঝে । তাতে তো আমাদের কোন অপরাধ হবেনা । জীবন ও যাবেনা আমাদের কারো । আমরা এখন
ওই গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বাঁচা স্টার সঞ্চালক । মনে মনে দুঃখ করি
মনে মনে তোমাকে স্মরন করি ।
পুরনো একটি মাত্র রাস্তা,তোমাকে


তুমি ভূমি ধ'সে পুনরুজ্জীবিত হও


আমরা চেনা মুখ খুঁজতে খুঁজতে এক রাস্তায়
দুই বিপরীত দিক থেকে ফিরি আবার । আমরা জাদুমন্ত্রে লাশটাকে
মায়ের কোলে পিছিয়ে দিয়ে আসি । ব'লে আসি মা,
দুই রাস্তার গ্রামে সন্তানকে পাঠাবেননা ।




এইবার মৃদু গুঞ্জন উঠে আসরে -এ তুমি কোন গল্প শুনাও হে বাপু । আমরা তো গ্রাম হত্যা করেছি গত শতকে রোশনাই এর লোভে,তবু নিহত গ্রামের অভিশাপ কেনো আমাদের যাপিত জীবনে ?

আসরে বিস্ময় রেখে কবি ফিরে যায়- পৃথিবীর শেষ গ্রাম এ ।
যেতে পারে কি?


মন্তব্য

ফকির ইলিয়াস এর ছবি

পলাশ দত্তের অনেক কবিতা পড়েছি
বিভিন্ন লিটল ম্যাগে। বইটি পড়ার
আগ্রহ বাড়লো ।

শেখ জলিল এর ছবি

সভ্যতা, নগরায়নের নামে এইভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে গ্রামের কৃষ্টি। আমরা সরে যাচ্ছি আমাদের ভালোবাসা থেকে, মানবতা থেকে। এটা সত্যিই আশংকার বিষয়। পলাশ দত্তের কবিতায় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন এই নিষ্ঠুর বাস্তবতা।
ধন্যবাদ হাসান মোরশেদ-কে এই সুন্দর কবিতা উপস্থাপনের জন্য। পাঁচ তারা।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

পড়তে হবে তো...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

হাসান মোরশেদ এর ছবি

পড়ে ফেলেন ।
এই কবি এইখানে দুইটা কবিতা দিছেন অতিথি নামে ।
ভরসা করছি, তার ও দ্রুত 'সচলপ্রাপ্তি 'ঘটবে ।
-------------------------------------
বালক জেনেছে কতোটা পথ গেলে ফেরার পথ নেই,
-ছিলো না কোন কালে;

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

পরিবর্তনশীল এর ছবি

চলুক
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

মুজিব মেহদী এর ছবি

পলাশ দত্তের এই বইটা আমার পড়া।
ওর গ্রামপুরাণ আমাকে স্পর্শ করেছে।
এখানে গ্রামের মহিমাসকলের একে একে মরে যাবার আর্তি যেন ধ্বনিত-রণিত।

................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

তীরন্দাজ এর ছবি

ভাল লাগলো। আমি ক'দিন আগে গ্রামে ঘুরে এসেছে। অনেক অনেক পরিবর্তিত।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

সৌরভ এর ছবি

পলাশ দত্ত আমাদের মাঝে এসে গেছেন। সচল হয়ে।


আহ ঈশ্বর, আমাদের ক্ষোভ কি তোমাকে স্পর্শ করে?


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।