অরূন্ধতী পাঠ-০৪।।'আমাদের বেছে নেয়া অস্ত্র'(প্রথম পর্ব)

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: রবি, ২১/০৯/২০০৮ - ৯:২৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

.


অরুন্ধতী রায়ের এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহন করেন সোমা চৌধুরী-তেহেলকার অন্যতম সম্পাদক, মার্চ ২০০৭ এ ।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মাওবাদীদের সশস্ত্র আন্দোলনে তার সমর্থনের যৌক্তিকতা তুলে ধরতে গিয়ে স্বভাবসিদ্ধ ভংগিতে অরুন্ধতী তুলে আনেন নানা প্রসংগ । মাওবাদীদের সশস্ত্র প্রতিরোধকে অকুন্ঠ সমর্থন জানিয়ে ও স্পষ্ট করে মনে করিয়ে দেন মাও, স্ট্যালিন, পলপটদের সমাজতান্ত্রিক গনহত্যার ইতিহাস ।

সারা দেশজুড়ে সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ার মতো আতংকজনক পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে । এটাকে তুমি কিসের ইংগিত বলে মনে করো? বিষয়টাকে কিভাবে দেখছো?

এই ইংগিত বুঝার জন্য তো বিশেষজ্ঞ হতে হয়না ।

আমাদের একটা ক্রমশঃ বাড়তে থাকা মধ্যবিত্ত শ্রেনী আছে যারা সর্বগ্রাসী ক্ষিধে নিয়ে ডুবে আছে চরম ভোগবাদে । শিল্পবিপ্লবের সময় পাশ্চাত্যের দেশগুলোর তবু ক্ষিধে মেটানোর জন্য অধিকৃত উপনিবেশ ছিলো -যেখান থেকে তারা সম্পদ ছিনিয়ে নিয়েছে, দাস বানাবার অফুরান যোগান পেয়েছে । কিন্তু আমাদের জন্য তো নিজেদের সম্পদ ছিনিয়ে নেয়া আর নিজেদের মানুষকেই দাস বানানো ছাড়া এই ক্ষিধে মেটানোর কোন সুযোগ নেই । তাই আমরা এবার নিজেদেরকেই ছিড়েখুড়ে খাওয়া শুরু করেছি । ভোগবাদের ক্ষিধে ক্রমশঃ বাড়ছে,ক্ষিধে মেটানোর জন্য কেড়ে নেয়া হচ্ছে ক্ষমতাহীনদের চাষের জমি,পানি,প্রাকৃতিক সম্পদ ।

আমার মতে স্বাধীন ভারতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল বিচ্ছিন্নতাবাদ হলো- উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের দেশের বাকী অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ।
তারা তাদের ক্ষিধে মেটানোর জন্য স্বেচ্ছায় শেকড়চ্যুত হয়ে গেছে, বিশ্বের আর সব অভিজাতদের কাতারে নিজেদের পৌঁছে দেয়ার জন্য তাদের সকল চেষ্টা । দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এই শ্রেনীই আবার নিয়ন্ত্রন করছে দেশের সকল সম্পদ- কয়লা, বক্সাইট, পানি, বিদ্যুৎ । এখন তাদের আরো বেশী গাড়ী বানানোর কারখানার জন্য কৃষকের জমি কেড়ে নেয়া চাই, আরো বেশী বোমা,আরো বেশী মাইন- সুপারপাওয়ারের সুপারসিটিজেনদের জন্য আরো বেশী বেশী সুপারটয়!

সুতরাং এটা একটা সম্মুখ যুদ্ধের প্রস্তুতি । দুপক্ষই নিজেদের জন্য অস্ত্র বেছে নিচ্ছে । সরকার ও কর্পোরেটের অস্ত্রভান্ডারে মজুদ আছে - বিশ্বব্যাংক, এডিবি,এফডিআই, আদালতের রায়,নীতিনির্ধারক, মিডিয়া এবং পুলিশ, যাদের ক্ষমতা আছে ক্ষমতাহীন সাধারন মানুষের কন্ঠস্তব্দ করে দেয়ার ।
অপরপক্ষ অনেকদিন ধরেই ধর্ণা, অনশন, সত্যাগ্রহ, আইনের আশ্রয় নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন । কিন্তু তাদের অনেকেই এখন আবার অস্ত্র তুলে নিচ্ছেন হাতে ।এই সংখ্যাটা ক্রমশঃ বাড়ছে । তাহলে কি আগামী দিনে সহিংসতা আরো বাড়বে?

সরকার যদি সাধারন মানুষের জীবন যাত্রার মানোয়ন্নের জন্য কেবল ‘প্রবৃদ্ধি হার’ আর ‘শেয়ারবাজারের সুচক’ কেই একমাত্র পরিমাপক হিসেবে বেছে নেয় তাহলে এই সহিংসতা আগামী দিনে আরো বাড়বে ।
বিষয়টাকে আমি কিভাবে দেখছি? দেয়ালের লেখা পড়তে পারা খুব কঠিন নয় । স্পষ্ট করেই লেখা আছে- 'কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে '


তুমি একবার বলেছিলে- নিজে সহিংসতায় না জড়ালেও দেশীয় প্রেক্ষাপটে সহিংস প্রতিরোধের বিরোধীতা করার নৈতিক অধিকার কারো নেই । একটু বিস্তারিত বলবে?

গেরিলা হলে আমি বরং অন্যদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবো ।
ঠিক মনে পড়ছেনা এ ক্ষেত্রে ‘নৈতিক’ শব্দটা ব্যবহার করেছিলাম কিনা? ‘নৈতিকতা’ একটি অস্পষ্ট ধারনা মাত্র যা আবহাওয়ার মতো দ্রুত বদলে যায় ।

দেখো- এদেশে বহুযুগ ধরেই অহিংস আন্দোলনগুলো দরজায় দরজায় ঘুরেছে ন্যায় বিচারের জন্য । কটা ক্ষেত্রে অহিংস আন্দোলন সফল হয়েছে কেবল উপেক্ষা ও উপহাস ছাড়া ? ভূপালের ঘটনা দেখো,নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের কথা ভাবো । এনবিএ’র তো সবকিছু ছিলো- হাই প্রোফাইল নেতৃত্ব, মিডিয়া কাভারেজ, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ । লাভ কি হলো?
মানুষ তো বাধ্য হচ্ছে প্রতিরোধের কৌশল বদলাতে ।
সোনিয়া গান্ধী যখন বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনে সত্যাগ্রহকে পৃষ্ঠপোষকতা করেন তখন তো আমাদের নতুন করে ভাবতে হয় ।

গনমাধ্যম ও তথ্যপ্রবাহ যখন কর্পোরেটরা নিয়ন্ত্রন করছে, তখন একটি গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামোর মধ্যে থেকে সত্যিকারের প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব কিনা? অনশন কর্মসুচী কেবল সেলিব্রেটি রাজনীতিকদের রাজনীতির হাতিয়ার হয়ে উঠছেনা কিনা? নাংলা মাচ্ছি কিংবা ভাট্টির মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষেরা অনশন করলে কারো কিছু আসে যায় কিনা? শর্মিলা ইরম তো অনশন করছেন গত ছয় বছর থেকে । কি হলো ফলাফল?
এটা আমাদের অনেকের জন্য একটা শিক্ষা হতে পারে ।

যে দেশে বেশীরভাগ মানুষ এমনিতেই অনাহারে থাকে সেদেশে অনশন কর্মসুচীকে দাবী আদায়ের হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেয়া-একটা নির্মম পরিহাস ছাড়া আর কি ?
বুঝতে হবে যে, সময় এবং পরিস্থিতি অনেক বদলে গেছে ।

মানবজাতি এখন এনজিও যুগে প্রবেশ করেছে যখন প্রতিরোধ আন্দোলন ও এনজিওদের পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত হয় । আমরা স্পন্সরড সত্যাগ্রহ,ধর্ণা দেখেছি, সামাজিক ফোরাম পেয়েছি যারা সহিংস প্রতিরোধের পোষ্টার ছাপায় কিন্তু নিজেরা কখনো জড়ায়না ।এখন আমাদের সব প্রতিরোধগুলো ‘ভার্চুয়াল’ ।
SEZ এর বিরুদ্ধে সভা আয়োজন হচ্ছে SEZ এর সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষকের চাঁদায়, পরিবেশবাদী আন্দোলনগুলো বড় অনুদান পাচ্ছে সেই সকল কর্পোরেটদের কাছ থেকে যারা দায়ী পরিবেশ ধ্বংসের জন্য । উড়িষ্যার বনাঞ্চলের বক্সাইট তুলে নিচ্ছে যে কোম্পানী তারাই আবার বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করছে । টাটার টাকায় দুটো চ্যারিটি চলে যারা আবার প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ ভাবে দেশের প্রায় সকল প্রতিরোধ আন্দোলনকে আর্থিক সহযোগীতা দান করে । এ কারনেই কি নন্দীগ্রামের চেয়ে সিঙ্গুরের প্রতিরোধ কম আলোচিত?
অবশ্য ভুলে যাওয়া ভুল হবে, টাটা বিড়লা গান্ধীজিকে ও অনুদান দিতো । হয়তো তিনিই আমদের প্রথম এনজিও ছিলেন । কিন্তু এখন তো অনেক অনেক এনজিও, তারা অনেক কথা বলে, অনেক রিপোর্ট তৈরী করে কিন্তু সবই শেষপর্যন্ত সরকারের সুবিধামতো ।

এই পরিবর্তনগুলো আমাদের বুঝতে হবে । প্রকৃত রাজনীতির জায়গা দখল করে নিচ্ছে পেশাদার বাক্যবাগীশরা ।
একটা সময় পর্যন্ত ন্যায়বিচারের জন্য আদালতের কাছে যাওয়া হতো । কিন্তু আদালত একের পর এক এমন সব রায় দিচ্ছে যা অন্যায্য,অবিবেচনাপ্রসুত এবং অপমানজনক । সম্প্রতি সুপ্রীম কোর্ট এক রায়ে বসন্ত কুঞ্জ শপিং মলের নির্মান কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে অথচ এদের নির্মান কাজ শুরু করারই অনুমতি ছিলোনা । এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের সর্ব্বোচ্চ আদর্শিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে মাত্র ।
কর্পোরেট গ্লোবালাইজেশন,কর্পোরেট ভূমি লুটের এ সময়ে- এনরন,মনসান্টো, হালিবার্টন আর বেকটেল এর যুগে, গনমাধ্যম ও বিচার ব্যাবস্থা উভয়েই নিওলিবারেল প্রজেক্টের সহযোগী ভূমিকা পালন করছে মাত্র ।

এরকম একটা পরিস্থিতিতে ,মানুষ যখন বুঝতে পারছে যে- তাদেরকে টুকরো করে ফেলা হচ্ছে, ‘গনতন্ত্র’ এর নামে রাষ্ট্রকাঠামো কেবল নিপীড়নই করে যাবে , এই কাঠামোর মধ্যে থেকে নিস্পেষনের কোন সমাপ্তি ঘটবেনা-তখন তাদের আর কি করার আছে?

আমি বলছিনা যে, এটা কোন বাইনারি অপশন-হয় সহিংস নয় অহিংস । অনেক রাজনৈতিক দলই সশস্ত্র আন্দোলনে বিশ্বাস করে কিন্তু এটা তাদের সামগ্রিক রাজনৈতিক কৌশলের একটি অংশ মাত্র । কিন্তু এই রাজনৈতিক কর্মীদের হত্যা, নির্যাতন,নিপীড়িন,গুম এবং মিথ্যা অভিযোগে কারাবন্দী করা হচ্ছে । মানুষ জানে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়ার পরিনাম , সশস্ত্র প্রতিরোধে জড়িয়ে পড়া মাত্র পৃথিবীটা পুরোপুরি বদলে যায়, হয় মারো নয় মরো ।

এসব জেনে ও নির্যাতিত মানুষের অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছে কারন তাদের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের আর সকল পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে । তাহলে কোন যুক্তিতে আমরা এই মানুষগুলোর সমালোচনা করবো?
কেউ কি বিশ্বাস করেন ,নন্দীগ্রামের মানুষ ধর্ণা আর প্রতিবাদের গান গেয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে আটকাতে পারতেন ?
আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি যখন নিস্পৃহ হয়ে থাকাটাই নিরাপদ( কারো কারো জন্য লাভজনক ও বটে) । সক্রিয় হওয়া মানে পরিণামে চড়ামুল্য পরিশোধ করা । যারা এই মুল্য পরিশোধ করতে প্রস্তুত, তাদেরকে আমি বাধা দেবো কোন অধিকারে?

..
সন্ত্রাস কবলিত জনপদের অনেকগুলোতেই তুমি সশরীরে গিয়েছো । আমাদেরকে কি বলবে কি দেখলে তুমি? এইসব জনপদে সশস্ত্র সংঘাতের রূপরেখা কেমন?

জটিল প্রশ্ন । কি বলবো আসলে ?

কাশ্মীরে সেনাশাসন, গুজরাটে নিওফ্যাসিবাদ, ছত্তিশগড়ে গৃহযুদ্ধ, ওড়িষ্যায় খনিজ সম্পদ লুট, নর্মদায় শতশত গ্রাম তলিয়ে যাওয়া, অসংখ্য মানুষের নিরন্ন অবস্থা, বনভূমি লোপাট, ভূপাল দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া মানুষেরা দেখলো ইউনিয়ন কার্বাইড আবার ব্যবসা শুরু করছে নন্দীগ্রামে ডৌ-কেমিকেল নামে ।
সাম্প্রতিক সময়ে আমি অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক,মহারাষ্ট্রে যাইনি কিন্তু জানি শতশত কৃষক আত্নহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ।আক্রমন-প্রতিআক্রমনের মিথ্যে গল্প সাজিয়ে বহু তরুনকে হত্যা করছে সশস্ত্র বাহিনীর লোকেরা ।

এই জায়গাগুলোর প্রতিটির নিজস্ব ইতিহাস,অর্থনীতি, সংস্কৃতি আছে । তাই এক কাতারে সব পরিস্থিতি বিশ্লেষন সম্ভব নয় । তবে, সবকিছুর মধ্যে কিছু যোগসুত্র তো আছেই । আমি কি করে ভুলে যাই ‘হিন্দুত্ব’ প্রকল্পের কথা? এই বিষ তো সবখানেই ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে , এই ইস্যুকে নতুন করে জাগিয়ে তোলা হচ্ছে ।

আমি বলবো, এসব কিছু আসলে একটা সত্যকেই নির্দেশ করে- আমরা যে রাষ্ট্র,সংস্কৃতি কিংবা সমাজের মধ্যে আছি তা স্পষ্টভাবেই তার নাগরিকদের মধ্যকার ঘৃনা, বৈষম্য, অস্পৃশ্যতাকে পৃষ্ঠপোষকতা করে,বাঁচিয়ে রাখে ।

আমাদের অর্থনীতিবিদরা যখন প্রবৃদ্ধি আর সমৃদ্ধির উর্ধ্বগামী রেখা আঁকতে ব্যস্ত তখনো এদেশের লক্ষ মানুষকে বেঁচে থাকার প্রয়োজনে অন্য মানুষের মল-মুত্র মাথায় বহন করে নিতে হচ্ছে প্রতিদিন । এটাই তাদের পেশা, আর কোন বিকল্প নেই । এই কাজটা না করলে না খেয়ে মরতে হবে তাদের ।
এই হলো আমাদের ‘ফাকিং’ সুপারপাওয়ারের আসল চেহারা ।

সাম্প্রতিক সময়ে,পশ্চিমবঙ্গে পুলিশী সন্ত্রাস বিষয়ে কি ভাবছো?

আলাদা কিছু তো নয় ।
অন্যসব জায়গার মতোই এটি ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসমাত্র । অন্যসব ঘটনার মতোই রাজনীতিবিদের ভন্ডামী ও প্রতারনা- এ ক্ষেত্রে মুলধারার বামপন্থীদের । সমাজতান্ত্রিক বুলেট আর পুঁজিবাদী বুলেট -দুটোই সমান আঘাত করে ।

চারদিকে সব অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে চলছে । সৌদি আরবে তুষারপাত হলো,দিনের আলোয় পেঁচা বেরিয়ে আসছে । চীন সরকার ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পত্তি বিষয়ে আইন পাশ করলো ।

আমি জানিনা এর সবকিছু বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত কিনা । সমাজতান্ত্রিক চীন একুশ শতকের সবচেয়ে শক্তিশালী পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে পরিনত হতে যাচ্ছে ।
তাহলে আমাদের সংসদীয় সমাজতান্ত্রিকেরা আর বসে থাকবেন কেনো? নন্দীগ্রাম,সিংগুর কিন্তু স্পষ্ট ইংগিত দিচ্ছে ।

প্রশ্ন জাগতেই পারে, তাহলে কি সকল সফল বিপ্লবেরই চুড়ান্ত পরিনতি পুঁজিবাদ । ভেবে দেখো- ফরাসী বিপ্লব, রাশিয়া ও চীনের বিপ্লব,ভিয়েতনাম যুদ্ধ,বর্ণবাদ বিরোধী সংগ্রাম, গান্ধীবাদী ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন- সবকিছুর শেষ গন্তব্য কোথায়?
সকল মহৎ স্বপ্নের অপমৃত্যু !


মন্তব্য

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

মোরশেদ ভাই, এই লেখাগুলো সোজা বুকে আঘাত হানে।
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ঝাড়বাতির নিচে অন্ধকার । অশ্লীল, কিন্তু অনস্বীকার্য যে?
-------------------------------------
"শিয়রের কাছে কেনো এতো নীল জল? "

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

দিগন্ত এর ছবি

আমার মতে স্বাধীন ভারতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল বিচ্ছিন্নতাবাদ হলো- উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের দেশের বাকী অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ।

এটা একটা বড় একটা সত্যি কথা। আমার মনে হয় কোনো না কোনো দিন এই মধ্যবিত্তদের তাসের ঘর ভাঙবেই। তা সেটা নিম্নবিত্তরা সংগ্রাম করে ভেঙে দেবে না মধ্যবিত্তরা নিজেরাই এগিয়ে আসবে সেটাই দেখার ...


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

একটা সময় আমার মনে হতো- আমাদের দেশে সম্পদের বিভাজন থাকলে ও মানুষের মুল্যবোধ,ভাবনায় খুব একটা বড় ব্যাবধান নেই ।

এখন দেখছি ভুল । সম্পদের ব্যাবধান যতো বাড়ছে, আর সব বিচ্ছিন্নতা ও বাড়ছে ততো ।
-------------------------------------
"শিয়রের কাছে কেনো এতো নীল জল? "

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

শামীম আরেফিন এর ছবি

হাসান মোরশেদ ভাই,
আপনার মনে কি আছে জানিনা । তবে পাঠক হিসেবে আমার দাবী থাকল এটি বই হিসেবে প্রকাশ করুন । আমাদের দেশে ভালো অনুবাদের বড় আকাল । আপনার অনুবাদটি সহজপাঠ্য । পড়তে গিয়ে দাঁত কপাটি লাগেনি একবার ও ।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

শামীম আরেফিন,
মনোযোগী পাঠের জন্য কৃতজ্ঞতা ।
আমার মনে বিশেষ কিছু নেই আসলে । অনুবাদ ঠিক আমার কর্ম ও নয় । যে সময়, শ্রম ও মনোযোগ দিতে হয়-আমার পোষায়না । বিখ্যাত আলসেমীর কারনে নিজের অনেক লেখাই ঘুমিয়ে থাকে ।

তবু অরুন্ধতী বলেই- এই বইটা পড়তে পড়তে এক অদ্ভূত তাড়নায় বাংলা করতে শুরু করেছি । এই আর কি।
-------------------------------------
"শিয়রের কাছে কেনো এতো নীল জল? "

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

আনিস মাহমুদ এর ছবি

আবার প্রেমে পড়লাম অরুন্ধতীর। কী তীক্ষ্ম সর্বভেদী তার দৃষ্টি, কী বিশ্লেষণ আর কী ধারালো তার প্রকাশ!

.......................................................................................
Simply joking around...

হাসান মোরশেদ এর ছবি

তীব্র সহমত হাসি
-------------------------------------
"শিয়রের কাছে কেনো এতো নীল জল? "

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

হাসান মোরশেদকে ধণ্যবাদ অনুবাদটির জন্য। দিগন্তের উল্লেখিত উদ্ধৃতি ছাড়াও ভালো লেগেছে "গান্ধী-টাটা-বিড়লা-এনজিও" বিষয়ক মন্তব্য ও "প্রবৃদ্ধির হার" এবং "শেয়ার বাজারের সূচকের" সাথে প্রকৃত জীবনযাত্রার মান-উন্নয়নের সূচককে গুলিয়ে ফেলার মন্তব্য। তবে শেষটা বড্ড যান্ত্রিক সরলীকরণ হয়ে গেছে। সকল মহৎ স্বপ্নের অপমৃত্যুর কথা বলে অরূন্ধতী কি আমাদের স্বপ্ন দেখা বা চেষ্টা করা বন্ধ করতে বলেন? তিনি নিজেই তো একজন বিশুদ্ধ সাহিত্যিক হয়েও পথে নেমেছেন, সরকারের জুলুম সহ্য করছেন!

আর লেখার ভূমিকাতে উল্লেখ করা "মাওবাদীদের সশস্ত্র প্রতিরোধকে অকুন্ঠ সমর্থন জানিয়ে ও স্পষ্ট করে মনে করিয়ে দেন মাও, স্ট্যালিন, পলপটদের সমাজতান্ত্রিক গনহত্যার ইতিহাস ।" তো মূল লেখায় দেখতে পেলাম না। নাকি আমারই ভুল?

===============================
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

দাদা , এটা প্রথম পর্ব । পরের অংশে বাকী কথাবার্তা আছে ।
-------------------------------------
"শিয়রের কাছে কেনো এতো নীল জল? "

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

পলাশ দত্ত এর ছবি

আচ্ছা, এই সাক্ষাত্কারগুলো নিশ্চয়ই শেষ পর্যন্ত বই আকারে বেরোবে?

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

হাসান মোরশেদ এর ছবি

বই আকারে বের হইছে তো । তবে বাংলায় না ইংরেজীতে হাসি
সেখান থেকেই টুকলি মারি
-------------------------------------
"শিয়রের কাছে কেনো এতো নীল জল? "

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সুমন সুপান্থ এর ছবি

না , মোরশেদ ,এই অনুবাদটা নিয়ে তোর সত্যি সত্যি সিরিয়াস হওয়া প্রয়োজন । বলছি না, নন-সিরিয়াস কাজ হয়েছে । বলছি , বই প্রকাশের বিষয়ে । কেন ?

শামীম আরেফিনের মন্তব্য ধার করে বলি-
আপনার অনুবাদটি সহজপাঠ্য । পড়তে গিয়ে দাঁত কপাটি লাগেনি একবার ও ।

---------------------------------------------------------

'...এইসব লিখি আর নাই লিখি অধিক
পাতার তবু তো প্রবাহেরই প্রতিক...'

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

জনতার দাবীর সাথে আমি একমত।

---------------------------------------------------------

আমরা যারা শিখিনি চাষবাস,ফসলের গীত
গুলালিতে পাখি হত্যা

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

পরবর্তী কিস্তির অপেক্ষায়।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।