জ্যোতিবাবুর হোঁচট ও বামেদের রাম নাম

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: রবি, ১৭/০৫/২০০৯ - ৬:২৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto

জ্যোতিবসু এবারের নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি।
অসুস্থ ছিলেন এমনিতেই। ভোটের দিন ভোরে বাথরুমে হোঁচট খেয়ে অবস্থা আরো গুরুতর। স্বাধীনতার পর এই প্রথম নাকি জ্যোতিবাবু ভোট দিতে পারলেননা।
জ্যোতিবাবুর হোঁচটে বামেদের অন্ততঃ একটা ভোট কম পড়েছিলো। কিন্তু জ্যোতিবাবু'র সাথে কি পশ্চিমবংগের ভোটারদের একটা বড় অংশ ও হোঁচট খেলেন যারা বছরের পর বছর বাম সমর্থক ছিলেন, সেই ১৯৭৭ সাল থেকে যারা রাজ্যের শাসনক্ষমতায় বারবার বামেদের নির্বাচিত করেছেন।
বার্লিনের দেয়াল ভাঙ্গলো, কমিউনিষ্টদের মক্কা সোভিয়েতের ও পতন ঘটলো কিন্তু ভারতের মতো একটা প্রবল ধর্মাক্রান্ত রাষ্ট্রের ভেতরের গুরুত্বপূর্ন এই রাজ্যটিতে লাল পতাকার পতন হলোনা কখনো।

কি ঘটলো তাহলে এবার?
২০০৪ এর লোকসভা নির্বাচনে ৪২টি আসনের মধ্যে বামফ্রন্টের দখলে ছিলো ৩৫টি,বাকী ৭টির মধ্যে ৬টি কংগ্রেস আর মাত্র ১টি তৃনমুল কংগ্রেসের। এবার ৪২ এর মধ্যে তৃনমুল একাই ২০টি, আর রাম নাম জপে জপে বামেদের মাত্র ১৫টি!

কি এমন বিশাল গনেশ উল্টালো গত পাঁচ বছরে?

ভেতরের বিষয় পশ্চিমবংগের বন্ধুরা ভালো বলতে পারবেন- আমরা যারা দূর থেকে কেবল খবর শুনি তাদের মনে পড়ে নন্দীগ্রাম ও সিংগুরের ঘটনা।
২০০৭ এর মার্চ মাসে শিল্পায়নের নামে কৃষকদের চাষের জমি কেড়ে নেয়াকে কেন্দ্র করে যে ক্ষোভ, আন্দোলন পরিনামে হত্যা,ধর্ষন ও লাশ পুড়ানোর ঘটনা ঘটে তা ক্ষমতাসীন বামফ্রন্টকে ঠেলে দেয় ব্যাকফুটে । বাম রাজনীতির সমস্ত প্রথা অস্বীকার করে বুদ্ধবাবুর রাজ্যসরকার নির্লজ্জ গনবিরোধী ভূমিকায় নামে।

অপরদিকে একদা কংগ্রেসী ও পরে তৃনমুল কংগ্রেসপ্রধান মমতা ব্যানার্জি যিনি বিজেপির সাথে জোট বেঁধে মন্ত্রী হয়েছিলেন নন্দীগ্রাম তাকে আবার তুলে আনে গনমুখী রাজনীতির শীর্ষে।
কলকাতার শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ ও বুদ্ধিজীবিরা যারা চেতনাগত ভাবে মুলতঃ বামপন্থী নন্দীগ্রাম ইস্যুতে তাদের আর ন্যুনতম জায়গা থাকেনা বামফ্রন্টের পাশে থাকার।
আগের টার্মে বিজেপির সাথে আঁতাতের বিষয়টি মমতাকে অস্বস্তিতে ফেলেছিলো কিনা সেটা জানা না গেলে ও দেখা যায় কলকাতার বুদ্ধিজীবিরা নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় মমতার রাজনৈতিক নেতৃত্বকে মেনে নেন। মহাশ্বেতা দেবী, জয়গোস্বামী, কবির সুমনেরা মমতার প্রতিবাদী মঞ্চে গিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন।

এই সংহতি পরবর্তী সময়ে ও দীর্ঘায়িত হয়েছে, ফলতঃ গায়ক কবির সুমন লোকসভায় নির্বাচিত হয়েছেন প্রতিদ্ধন্ধী প্রার্থীর চেয়ে ৫০,০০০ বেশী ভোট পেয়ে এবং মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেবের বিধানসভার আসন থেকেই।

চরম পুঁজিবাদী লুম্পেনদের মতো শিল্পায়নের পক্ষে এমন রক্তক্ষয়ী একগুঁয়েমীর ফল যে এতো তীব্র হবে বামেরা বোধ করি টের পাননি।
না, পশ্চিমবংগ রাজ্য স রকার এখন হাতছাড়া হয়নি বামেদের। বিধানসভা নির্বাচন ২০১১। মমতা জানিয়েছেন- আগেই নির্বাচনের দাবী তুলবেন তিনি। লোকসভার জয়ের ঘ্রান থাকতে থাকতেই বিধানসভা দখলের পরিকল্পনা হয়তো তার।

জ্যোতিবাবু বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত টিকে থাকবেন কিনা কে জানে। পলিটব্যুরোর কমরেডদের অঁসুয়াজনিত একগুঁয়েমীর কারনে সুযোগ পাওয়া স্বত্বেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়া সম্ভব হয়নি তার, ১৯৭৭ এ যে লালদূর্গ গড়েছিলেন শেষপর্যন্ত তার পতন ও কি দেখে যেতে হবে বয়োবৃদ্ধ কমরেড'কে?

সময় আসলেই সেই বৃদ্ধ যাদুকর যে কেবল ক্ষত রেখে যায়।
কিন্তু ক্ষত কতোটুকু গভীর হবে- সে প্রশ্নের উত্তরের জন্য ও বোধ করি সময়ের কাছেই হাত পাততে হবে। বামেদের এই পতনের কালে - ধর্মনিরপেক্ষতার আইকন হয়ে উঠা পশ্চিমবংগ যারা গুজরাট দাংগায় ক্ষতিগ্রস্ত মুসলমানদের আতেথিয়তা দানের গৌরব গ্রহন করতে পেরেছিল- সেই পশ্চিম বাংলায় ও রামভূমির জপনামকারী বিজেপি একটা আসন পেয়ে গেলো। সম্ভবতঃ এই প্রথম।

হোক একটা ,তবু তো পেলো। আর ইতিহাস বলে, কর্কট তার ডালপালা বিস্তার করে দ্রুত।


মন্তব্য

অনিকেত এর ছবি

হুমমম-----

দিগন্ত এর ছবি

বিজেপির সিটের ব্যাখ্যাটা অন্যরকম। ওরা জিতেছে দার্জিলিং-এ - যেখানে পাহাড়ি ভোটারদের মধ্যে এখন বাঙালী-বিরোধী হাওয়া প্রবল। আপনি ১৯৭০ এর বাংলাদেশ নির্বাচনে পার্বত্য চট্টগ্রামে আওয়ামী লিগের পরাজয়কে যেভাবে দেখেন এটা সেভাবেই দেখতে পারেন।

বাকি ব্যাখ্যা একদম সঠিক। বামপন্থীদের বুর্জোয়াগিরি অনেকেই মেনে নেয়নি। তবে আরো ব্যাখ্যা আছে। আপনি এক নজরে ম্যাপটা দেখতে পারেন - কোথায় বাম জিতেছে আর কোথায় কংগ্রেস-তৃণমূল। স্পষ্টত আঞ্চলিক একটা ভেদ তৈরী হয়েছে। কারণটা আমার সঠিক জানা নেই।

নিচের ছবিতে লাল - বাম, নীল - তৃণমূল + কংগ্রেস, গোলাপী - এস-ইউ-সি-আই (তৃণমূল সমর্থিত বামপন্থী দল) আর গেরুয়া - বিজেপি।

auto


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

পশ্চিমবংগে বিজেপির আসন পাওয়াকে একটা বাজেব্যতিক্রম হিসেবেই দেখতে চাচ্ছি।
আচ্ছা এই স্থানিক বিভাজনের কারন কি? দেখা যাচ্ছে রাজ্যের একটা অংশজুড়ে বাম'রা গুচ্ছ হয়ে আছে অপর অংশে বামবিরোধীরা। এই দু অংশের মধ্যে আর্থসামাজিক সাংস্কৃতিক কোন চড়া বিরোধ আছে কি?
সম্ভব হলে একটা বিস্তারিত পোষ্ট দেন দিগন্ত।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নদী এর ছবি

সালটা ২০০২। ভারতে বেড়াতে গেছি। দিল্লী থাকাকালেই গুজরাটে দাংগা শুরু হয়ে গেল। যে হোটেলে থাকি তাতে পুলিশ এসে পাসপোর্ট নিয়ে গেল। ভাবলাম এ আবার কোন বিপদ!
এক দিনের মাথায় দিল্লী ত্যাগ করলাম কোলকাতার দিকে। কোলকাতায় এসে দেখি, কিসের দাংগা কিসের কী ! একেবারেই শান্ত জায়গা। তাই পরিকল্পিত দিল্লীর সময়টুকু
কোলকাতায়ই পার করে দিলাম।
সেই শান্তির দিন কী শেষ হতে চলেছে? মানুষ পরিবর্তন চায়; সেটার দরকারও আছে। তবে ঠেংগানি কতটুকু সে সহ্য করতে পারে সেটাও ভাবতে হয় বৈকি!

মানুষ না খেয়ে থাকলেও শিক্ষিত শ্রেণীটি তার শহরের উন্নয়ন দেখতে চায়; এতে তার স্বার্থ জড়িত। গাঁয়ের গেঁয়ো চাষাভূষাদের ভাবনা ভেবে দেশের উন্নয়ন তো থামানো যাবে না ! দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যত ভারতীয় বন্ধু দেখেছি তারা পশ্চিম বাংলার বামদের দেখতে পারেনা এ কারণে যে, তারা মনে করে ওদের পশ্চাতপদতার কারণ ঐ বামেরা।

দেখা যাক কী হয়। আর ভারতের বামদের পতন দেখে বাংলাদেশে যারা আনন্দিত; তারা ভাবীকালে অনেক আনন্দহীনতার খবরও পাবে বলেই মনে হয়, যদিও তা কাম্য নয়।

নদী

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আপনার মতো আমারো আশংকা,পশ্চিম বাংলা তার ধর্মসহিষ্ণু চরিত্র হারায় কিনা? ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ঐতিহ্যগতভাবে যেখানে অপাংক্তেয় সেখানে নতুন করে শেকড় গজায় কিনা?
কেনোনা নতুন নেত্রী মমতা অতীতে বিজেপি'র সাথে গাঁটছাড়া বেঁধেছেন- বামদের একেবারে শুইয়ে দিতে তিনি বিজেপি'কে আরো ছাড় দেবেন হয়তো।
এসব তো আমাদের দিকে ও হয়েছে।পরস্পর বিরোধীতায় দলভারী করার জন্য ধর্মজীবিদের প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে পরে দেখা গেলো তারাই হয়ে উঠছে নিয়ামক।
আরেকটা ভয়ংকর প্রবনতা হলো ভারতে- বিজেপিকে শিল্প ও উন্নয়ন বান্ধব বলে মনে করা হয়। তাই ভারতীয় ব্যবসায়ী শক্তিশালী পুঁজির বড় অংশ এদের সমর্থনে।
নরেন্দ্রমোদী গনহত্যার পর ও নির্বাচিত হয়ে আসে।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

উজানগাঁ এর ছবি

২০০৭ এর মার্চ মাসে শিল্পায়নের নামে কৃষকদের চাষের জমি কেড়ে নেয়াকে কেন্দ্র করে যে ক্ষোভ, আন্দোলন পরিনামে হত্যা,ধর্ষন ও লাশ পুড়ানোর ঘটনা ঘটে তা ক্ষমতাসীন বামফ্রন্টকে ঠেলে দেয় ব্যাকফুটে ।
আপনার সাথে একমত।

দময়ন্তী এর ছবি

এই ফলে আমি খুব খুশী৷ সিপিএমের অসহ্য ঔদ্ধত্য ও দম্ভের একটা এরকম জবাব খুব দরকার ছিল৷

"আমরা ২৩৫+ , ওরা ৩০, ওরা আমাদের কি করবে' কিম্বা "লাইফ হেল করে দেব' জাতীয় উক্তি বহু কমিটেড সিপিএম ভোটারকেও ক্রুদ্ধ করে তুলেছে৷ ভোটের আগেই কংগ্রেস আর তৃণমূলের জোট তৈরী হয়ে যাওয়ায় বিরোধী ভোট ভাগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় অনেক৷ কৃষিভিত্তিক অঞ্চলে নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুরের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে বলে মনে হয়৷ আবার অজস্র বন্ধ কলকারখানা--- এদিকে শ্রমিকদের পি এফ মেরে পালিয়ে যাওয়া শিল্পপতি আর অন্যদিকে ইউনিয়ন নেতাদের ফুলেফেঁপে ওঠা --- ফলে সিপিএমের শিল্পায়নের ঢপটাও খায় নি শহর ও শিল্পাঞ্চলের লোক৷ ঠিক এই কারণেই টাটার ন্যানো চলে যাওয়ায় সিপিএমের কান্নাকাটিও শহুরে মধ্যবিত্তের মন জয় করেনি৷ অথচ সিপিএম ভেবেছিল টাটার কুমিরছানা দেখিয়ে শহুরে মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তের ভোটগুলো পাবে৷ কিন্তু তা হয় নি৷ ইলেকট্রনিক মিডিয়ার রমরমার ফলে এখন আর শুধুই মেনস্ট্রীম মিডিয়ার খবরের ওপরে নির্ভর করে থাকতে হয় না৷ ফাঁকেফোকরে অল্টারনেট মিডিয়ার খবরগুলোও সচেতন লোকের চোখ এড়ায় না৷

সিপিএমের পশ্চিমবঙ্গে একরকম নীতি আর বাকী ভারতে অন্যরকম নীতি পুরানো সিপিএম কর্মীদেরই বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে৷ আমার জানা বেশ কটি ক্ষেত্রে সিপিএম কর্মীরা ভোট চাইতে এসে শিল্পায়নের জয়গান গাইলে, যখন তাদের পস্কো নিয়ে তারা কেন বিরোধিতা করছে, জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, তারা কোন সন্ত্রোষজনক উত্তর দিতে পারেনি৷ পারার কথাও নয়৷ এছাড়া ধরুন, মায়াবতী ও জয়ললিতার সাথে জোট বাঁধাটাও চরম সুবিধাবাদীর লক্ষণ৷ তো, মানুষ তো আর সত্যিই বোকা নয়৷

শাঁওলি মিত্র, বিভাস চক্রবর্ত্তী, জয় গোস্বামীরা আর কোন অল্টারনেটিভ না পেয়েই মমতাকে কিছুটা সমর্থন করেছেন৷ এটাই পশ্চিমবঙ্গের মস্ত দূর্ভাগ্য যে বামফ্রণ্টের আল্টারনেটিভ হিসাবে মমতা ও তার দল ছাড়া আর কাউকে চোখে দেখা যায় না৷ স্রেফ এই উপযুক্ত বিরোধীর অভাবেই বহুলোক সিপিএমকে ভোট দিয়ে এসেছে৷

-------------------------------------------------
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

মূলত পাঠক এর ছবি

খাঁটি কথা। তবে এই হার থেকে এরা যদি কিছু শিখতো তাহলেও আশা ছিলো। কিন্তু চূড়ান্ত স্থিতিশীলতার মধ্যে বসেও যারা তিরিশ বছরে ঔদ্ধত্য আর মাস্তানি ছাড়া আর কিছুর চাষ করে নি তারা ঠেকায় পড়ে শিখবে সে দুরাশা করি না। এ এমন এক পরিস্থিতি যার সমাধান কারোরই জানা নেই বোধ হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে এদের কোনো দিন ভোট দিইনি, একবার বিকল্প হিসেবে বিজেপিকেও দিয়েছি (এবং বিজেপি প্রার্থীই জিতেছিলো সেবার সেই আসনে)। মমতা ভরসার অযোগ্য হতেই পারেন, কিন্তু এর চেয়ে খারাপ কি? অন্যান্য রাজ্যের যে সব নেতাকে হেয় চোখে দেখা হয়, তারাও এতো সুনিশ্চিত লম্বা মেয়াদ হাতে পেলে কিছু হলেও কাজ করতো, কাট মানীর লোভে হলেও করতো। এরা এক নন্দন প্রেক্ষাগৃহ বানিয়েই তৃপ্তির ঢঁেকুর তুলে ভাতঘুম দিয়েছে। সিলেবাস ও শিক্ষাবর্ষ নিয়ে নিয়ত পরীক্ষানিরীক্ষা এবং ইংরেজি শিক্ষা নিয়ে চূড়ান্ত মূর্খামির পরিচয় দিয়ে চলেছে আজও। ইউনিয়নবাজির জেরে একে একে কলকারখানা বন্ধ হয়ে চলেছে, আর বোধ হয় বন্ধ করার মতো কিছু অবশিষ্ট নেই। দ্বিতীয় হুগলি সেতু বানাতে এতো দেরি করলো যে বাজেট একদিকে আকাশছোঁয়া অন্যদিকে নদীর নাব্যতা কমে গিয়ে সেতুর ঐ উচ্চতারই প্রয়োজন ফুরোলো। কলকাতার বাসের চেহারা আর ভিড়ের অবস্থা দেখেছেন? দুর্গাপুর ক্রমশ মৃতপ্রায় হয়ে আসছে। হলদিয়ায় ঢাকের বাদ্যি শুনলাম কেবল। শিলিগুড়ি যে পথে চলেছে তাতে গোটা শহরটাই একটা প্রকান্ড বস্তিতে পরিণত হবে। বিধান রায়ের দয়ায় কল্যাণী হয়েছিলো, কিন্তু তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনো অভিপ্রায় দেখা গেলো না। বছর বছর ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশনের টাকা ফেরৎ যায়, গবেষণামূলক কাজ আর হয় না। কত আর বলবো, তবু যদি তিলমাত্র অনুশোচনা দেখা যেতো কারোর মধ্যে। উল্টে বিনয় কোঙার জনসভায় খেউড় শোনায়, এমন ভাষায় যার কথা এ ফোরামে লেখা আমার অসাধ্য। কেকের উপর চেরীফল নন্দীগ্রামে গণহত্যা। জনদরদী সরকারই বটে!

সুমনকে নিয়ে কথা হচ্ছিলো সেদিন, কিছু বলা হয় নি। আজ যখন কথাটা উঠলো তো বলি। এদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য শত্রুর সাথে হাত মেলালেও দোষ হয় না। মমতা তো অন্তত সৎ ও হৃদয়বান, বুদ্ধির অভাব থাকতে পারে তাঁর, কিন্তু তিন দশক ধরে যারা মৌরসিপাট্টা চালালো এক জমিবন্টনের কুমীরছানা দেখিয়ে, তাদের চাইতে খারাপ তিনি কিছুতেই নন। বিজেপি সাম্প্রদায়িক বলে যাঁদের উদ্বেগ, তাঁদের জানাই, বাংলার সংখ্যালঘুদের জন্যে এরাও কুটোটি নাড়ে নি। পশ্চিমবঙ্গে যদি মুসলমানের অবস্থা অন্য রাজ্যের চেয়ে ভালো বা নিরাপদ হয় তো তার কারণ বাঙালি জাতির স্বাভাবিক নরমস্বভাব। এর কৃতিত্ব সরকারকে দেওয়ার কোনো কারণ দেখি না। উন্নয়ন কিছু না হলে শান্তি একদিন শেষ হবে, মানুষের পেটের ভাতে টান পড়লে ধর্মের ভেদাভেদ জাগিয়ে তোলার জন্য বদলোকের অভাব হবে না। সে দিন আসার আগে সিংহাসন টললে হয়তো যৎসামান্য আশার আলো জাগতে পারে।

নজমুল আলবাব এর ছবি
হাসান মোরশেদ এর ছবি

@মুলতঃ পাঠক

আমি ব্যক্তিগতভাবে এদের কোনো দিন ভোট দিইনি, একবার বিকল্প হিসেবে বিজেপিকেও দিয়েছি (এবং বিজেপি প্রার্থীই জিতেছিলো সেবার সেই আসনে)।

তো বিকল্প হিসেবে আপনি বিজেপি'কে ও ভোট দিয়েছেন? বাহ

আমাদের এদিকে কিন্তু এখনো কেউ বিকল্প হিসেবে জামাতে ইসলামকে ভোট দেয়ার কথা বলেনা। জামাতকে ভোট দেয় কেবল জামাতের কর্মীরাই।

বাংলাদেশের কোন সচল যদি এই যদি ফোরামে বলতো ' আমি বিকল্প হিসেবে জামাতকে ভোট দিয়েছি' তাহলে সচলায়তনে হয় সে থাকতো নয় আমি থাকতাম হাসি

একদিন আমাদের গল্প শুনান না ঠিক কোন কোন যুক্তিতে বিজেপিকে আপনার কাছে ভোট দেয়ার উপযুক্ত মনে হলো।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

মূলত পাঠক এর ছবি

এই কথাটাই দিগন্তও বলেছেন আগে, বিজেপিকে যেইভাবে আপনারা দেখেন ভারতে তার ছবি ঠিক সেই রকম নয়। ধর্মীয় দাঙ্গায় কংগ্রেসের ভূমিকা কিছু আলাদা নয়, কিন্তু কংগ্রেসকে সেই ভাবে দেখা হয় না, তাই না? প্রশ্নটা মৌলবাদ ও ফ্যানাটিকেদের রাজনীতি নিয়ে হলে তাকে সমর্থনের প্রশ্নই নেই। আমি জামাতের সম্বন্ধে খুব বেশি জানি না বলে তুলনাটা করতে পারছি না। তবে ধরুন আর এস এস জাতীয় হিন্দুত্ববাদীদের আমি কোনোভাবেই সমর্থন করবো না। বিজেপি ঠিক হুবহু সেই গোত্রের নয়, যদিও এদের আঁচলেও কলঙ্কের দাগ আছে। কিন্তু ধর্মের ভিত্তিতে মানুষ খুনের ইতিহাস কংগ্রেসেরও আছে, আর বামফ্রন্টের আছে নির্বিচারে খুনের অভ্যেস।

আর আমি যেই বার বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলাম, সেবার তৃণমূলের সাথে এদের গাঁটছড়া ছিলো, আসন ভাগাভাগি করে প্রার্থী দেয়া হয়। আমাদের এলাকায় তৃণমূলের বদলে ওদের প্রার্থী ছিলো।

দিগন্ত এর ছবি

লর্ড দেশাই এন-ডি-টিভিতে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিয়ে কথা বলাই শুরু করলেন এই একই কথা বলে। ভারতে সব পার্টিরই রেকর্ড এতটাই খারাপ যে ভদ্রতার খাতিরে ছাড়া তাদের মধ্যে তফাত করা যায় না।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

নো হার্ডফিলিংস @ মুলত পাঠক
এরকম সমীকরন আমাদের এদিকে ও আছে। ডাইহার্ট আওয়ামীলীগার আছে যারা ইসলামী জোটের সাথে দল চুক্তি করলে ইসলামী জোটকে জাস্টিফাই করে, ডাইহার্ট বিএনপিওয়ালা ও আছে যারা বিএনপি জামাতের অশ্লীল ম্যারেজকে সমর্থন করতে গিয়ে জামাতকে গ্লোরিফাই করে বসে।

আপনার অবস্থাটা সেরকমই দাদা। আপনি অবশ্যই বিজেপি সমর্থক নন। কিন্তু আপনি তীব্র বামবিরোধী এবং ডাইহার্ট মমতাপন্থী। যেহেতু মমতা সেবার বামঠেকাতে বিজেপির সাথে জোট বেঁধেছিল সেহেতু বিজেপির নরেন মোদীর গুজরাট গনহত্যার প্যারালাল উদাহরন হিসাবে কংগ্রেসের শিখ হত্যা কিংবা বামদের নন্দীগ্রাম গনহত্যাকে উল্লেখ করছেন।
এগুলো তো সত্য অবশ্যই সত্য। ধর্ম,দর্শন,জাতিগত সব হত্যাই হত্যা। কিন্তু কথা হলো ৮৪তে কংগ্রেস ঐ গনহত্যা ঘটালো, যদি আমার ভুল না হয় মমতাজী তখনো কংগ্রেসী তারপরো আরো দীর্ঘ বছর ধরে তিনি কংগ্রেসীই । ক্ষমতার দ্বন্দে যদি তিনি কংগ্রেস থেকে বের হয়ে তৃনমুল গঠন না করতেন তাহলে আপনারা মমতাপন্থীরা কি কস্মিনকালে ও গুজরাটকে জাস্টিফাই করতে দিল্লীকে টানতেন?

আমাকে কি দয়া করে একটু বুঝিয়ে বলবেন( দরকার হলে আলাদা পোষ্ট দিন) বিজেপি কি করে ভালো হলো রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘ কিংবা বজরং দএল্র চেয়ে? এরা কি সব এক রসুনের গোঁড়া নয়?

এই যুগে যে রাজনৈতিক দলের প্রধান মেনিফেস্টো থাকে রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠা- সেই দলকে কোন শুভভাবনাসম্পন্ন মানুষ সমর্থন জোগায় কোন যুক্তিতে?
------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

দিগন্ত এর ছবি

এরা কি সব এক রসুনের গোঁড়া নয়?

সঠিক উপমা হয়েছে। হাসি

এই যুগে যে রাজনৈতিক দলের প্রধান মেনিফেস্টো থাকে রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠা

ম্যানিফেস্টোতে তো কিছু পেলাম না। বিজেপি যে মোড়কে দলকে প্রতিষ্ঠা করেছে সেই মোড়ক কিন্তু পালটে ফেলছে। আর ভারতে অসংখ্য ইস্যু হওয়ায় সবাই যার যার লোকাল ইস্যু নিয়েই মাথা ঘামায়। সেজন্য বিজেপির মূল্যায়ন হয় রাজ্যে বিজেপির কি কি ভূমিকা তা নিয়ে, দিল্লীতে (বা গুজরাটে, কর্নাটকে বা ওড়িশাতে) কে কি করল তা নিয়ে নয়। এটা একধরণের উদাসিনতা যা ভারতীয় ভোটারদের মধ্যে প্রবল। বাংলাদেশ এক জাতি-এক দেশ হওয়ায় বাংলাদেশে এটা নেই।

কিছু উদাহরণ দিই - ছত্তিশগড় রাজ্যে বিজেপি পরপর জিতছে। ওই রাজ্যের আগের কংগ্রেসের সরকারের তুলনায় বিজেপি আমলে রাস্তাঘাট সহ বিদ্যুত-ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। সুতরাং লোকজনে ওই কারণেই ভোট দিচ্ছে। এর মধ্যে রাম-রাজ্য কোনো ফ্যাক্টর নয়। আবার আশেপাশের গুজরাটে, কর্ণাটকে চিত্রটা উলটো - সেখানে রাম-রাজ্যের কথা বলেই বিজেপি সরকার বানিয়েছে। সেই সরকার রাম-রাজ্যের নামে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারও চালাচ্ছে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

মূলত পাঠক এর ছবি

হাসান ভাই,
হার্ড ফিলিংসের প্রশ্ন ওঠে তখন, যখন আপনার আমার নীতিগত পার্থক্য থাকে। সেটা এখানে নেই, দৃষ্টিভঙ্গীতে কিছু ফারাক আছে। তবে তার আগে আরেকটা সংশোধন করে দিই, আমি মমতাপন্থীও নই। ওঁকে দিয়ে রাজ্য চালাতে গেলে সেও আরেক জাতের সার্কাস হবে বলেই মনে হয়। তবে এখনো তা দেখিনি যখন, নিশ্চিত হতে পারছি না, তাই সামান্য বেনিফিট অফ ডাউট দিচ্ছি। ওঁকে ওঁর শত্রুরাও অসৎ বলতে পারে না, এইটুকু কৃতিত্ব স্বীকার করে নিচ্ছি সেই সাথে।

রামরাজত্ব দিয়ে ব্যাপারটা বোঝাতে গেলে কঠিন হবে কারণ সে বস্তুর নানা সংজ্ঞা, ওর মানে হিন্দুরাজ্যও হয় আবার আদর্শ রাজত্ব, যে ভাবে ব্যাখ্যা করেন যেহেতু বস্তুটাই কাঁঠালের আমসত্ত্ব। তার চেয়ে একটা সোজা উপায় নিই। ধরুন ধর্ম বা অন্য স্বার্থে গণহারে মানুষ খুন করেছে যারা তাদের ভোট দেবো না। এতে করে বিজেপি গোষ্ঠী বাদ গেলো মুসলিম খুনের দায়ে, কংগ্রেস গেলো শিখ মারার দায়ে। বামফ্রন্ট কিন্তু নন্দীগ্রামে কিছু কম পাশবিকতা দেখায় নি। এদেরই বা ধরি কি করে। আর যদি আঁতাতের কথা বলেন তো তৃণমূল বিজেপির সাথে গিয়েছে বলে বাদ গেলে বামমোর্চা কংগ্রেসের সাথে গিয়ে একই অপরাধে অপরাধী। তা হলে একমাত্র অপশন পড়ে থাকে কাউকে ভোট না দেওয়া।

এবার চলুন বামেদের সাথে বিজেপির তুলনা করি। গুজরাত দাঙ্গায় বিজেপির ভূমিকার কথা বাঙালি (এই আলোচনায় এই শব্দটা পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গেই প্রয়োগ করছি) বুদ্ধিজীবিরা বহু নিন্দা করেছেন, এবং সঙ্গত কাজই করেছেন। এই লেখক শিল্পীরাই যখন নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গে এতোদিনের সুখের আশ্রয় ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন পথে, তখন একই ভাবে বামমোর্চাকে দোষী ভাবতে সমস্যা কোথায়। তোরা আমার ধর্মের না, চল তোদের পুড়িয়ে মারি। তোরা আমার শিল্পের জন্য নিজের জমি ছাড়বি না, চল তোদের মেরে খালে ভাসাই। ফারাকটা কোথায়? বিজেপিকে পরোক্ষ সমর্থন করা আর বামেদের ওপর ভরসা রাখা, কোনটা বেশি অন্যায়?

অন্য একটা ক্ষেত্রে বামেরা বিজেপির চেয়েও খারাপ। বিজেপি যদি দু আনারও উন্নতি করে থাকে (তার অনেক বেশীই করেছে, গুজরাত এখন ভারতের উন্নততর রাজ্যের মধ্যে পড়ে), এরা তিরিশ বছরের স্থিতিশীলতার আশ্বাস পেয়েও তার কানাকড়ি করে উঠতে পারে নি। অথচ পশ্চিমবঙ্গ তো শুরু থেকেই খারাপ দশায় ছিলো না। কেন অন্য রাজ্যে শিল্প যায় আর এখানে আসে না? নয়ডা অঞ্চলে অধিকাংশ চাষি শিল্পের জন্য জমি বেচে দেয় সানন্দে, আর এখানে কৃষক ভরসা পায় না জমি দিতে তাদের সরকারকে, এর কারণ কী? তিরিশ বছরেও মানুষের আস্থা অর্জন করা যায় না? এই পরিস্থিতিতে এদের ইনভিন্সিবল আত্মতৃপ্তি ভেঙে দেওয়ার জন্য তৃণমূল এলেও আমার আপত্তি নেই, তাদের রাজ্য চালাবার ক্ষমতা না থাকলেও। বামেরা যখন এসেছিলো তখন তাদেরও কিছু ক্রেডেনসিয়াল ছিলো না। আর এরা যা করেছে তার চেয়ে খারাপ আর কত হবে তৃণমূলের হাতে! পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি আসার সম্ভাবনা নিকট ভবিষ্যতে নেই। এখানে তাদের সংগঠন সদস্য নেতা কোনোটাই যথেষ্ট নেই। কাজেই এদের ভোট দিলেই সব শেষ হয়ে যাবে আমার সে আশঙ্কা নেই।

সংখ্যালঘুদের জন্য প্রকৃত দরদ যদি বামেদের থাকতো তাহলে তাদের উন্নতির জন্য কিছু করতো এরা, শুধু বিজেপির জুজু দেখিয়ে ভোট কাড়তো না। প্রাকনির্বাচন এক প্রতিবেদন থেকে উদ্ধৃতি দিই, একটু সংক্ষিপ্ত আকারে:
উত্তর কলকাতার সংখ্যালঘুপ্রধান এলাকার নোংরা ও যত্নহীন গলিঘুঁচিতে সিপিএমএর হাত থেকে মুসলিম ফ্যাক্টর পিছলে বেরিয়ে যেতে পারে। নোংরা ও আবর্জনার সাথে কলকাতার এতো দীর্ঘদিনের সহাবস্থান যে পরিচ্ছন্নতা, টানা রিকশা আর ভাঙাচোরা ট্যাক্সি নিয়ে অনুযোগ করলে তা এমনকি ইতিহাসের আস্তাকুড়েও ঠাঁই পাবে না, শুনে মনে হবে বুর্জোয়া উচ্চবিত্তের অভিযোগমাত্র যারা অন্য কোনো গ্রহের বাসিন্দা। কিন্তু ঘটনা হলো রাজাবাজারের মতো এলাকাতেও লোকে অভিযোগ করতে শুরু করেছে, এবং অভিযোগের আঙ্গুল উঠছে মহম্মদ সেলিমের দিকে, যিনি এই কেন্দ্র থেকে জিতে গত পাঁচ বছর লোকসভায় ছিলেন। অনেকের মতেই, রাজ্যজুড়ে পরিবর্তনের এই হাওয়ার পিছনে মূল কারণ বামফ্রন্ট বত্রিশ বছর টানা ক্ষমতায় থেকেও উন্নয়নের কাজ কিছু করে নি। তাই যখন সেলিমের ভাষণে সাম্রাজ্যবাদী মার্কিনী শক্তির হাত থেকে দেশকে বাঁচানোর জন্য বামফ্রন্টের সিদ্ধান্তের কথা শোনা যায় তখন পাশের গুমটিদোকানে মহম্মদ সুলেইমান ব্যঙ্গ করে বলেন, তো এনারা চললেন ইরাক, আমেরিকার সাথে লড়তে!

সংখ্যালঘু খুব লঘু না হলে তার দরকার নেতাদের থাকে, ভোটের খাতিরে। সেইজন্যই মুসলমান ভোট টানতে বামেরা দু বেলা বিজেপিকে গাল পাড়ে। কিন্তু যদি সংখ্যালঘু আরো লঘুতর হয়ে যায়? তখন তাদের ডোন্ট কেয়ার করার সময় নীতির কথা এদের আর মনে থাকে না। শিখ সম্প্রদায় যেহেতু নেহাৎই লঘু এ রাজ্যে, তাই কংগ্রেসের সাথে হাত মেলাতে এদের দ্বিধা হয় না। ভারতে আমেরিকার মতো প্রদেশভিত্তিক স্বাধীন সত্ত্বা না থাকলেও রাজ্যের উন্নতি অনেকাংশেই রাজ্য সরকারের উপর নির্ভর করে। পশ্চিমবঙ্গের উন্নতিতে আমার নিজের অবদান কিছু না থাকলেও আমি চাই এর উন্নয়ণ হোক। তার জন্যই এতো কথা। শুভভাবনাসম্পন্ন হয়েও আমরা বামেদের সমর্থন করেছি, সে কথাই বা ভুলি কী করে। বিজেপি সে মুদ্রারই অপর পিঠ।

দময়ন্তী এর ছবি

@ পাঠক,

না আমাকে মাথায় এ কে ৪৭ ঠ্যাকালেও আমি বিজেপিকে ভোট দিতে পারব না৷ বরং বিজেপিকে উত্খাত্ করার জন্য নিজের সাধ্যমত কিছু করব৷

সিপিএম একেবারে কিছু করেনি এটাও ঠিক নয়৷ আসলে আপনাদের বয়েস এত কম যে আপনারা জরুরী অবস্থার সময়টা চোখে দেখেন নি৷ হাসি আমি সেইসময়টা দেখেছি, যদিও বেশ ছোট ছিলাম, কিন্তু মনে আছে অনেককিছুই৷ আমি ৭৭ সালে ইন্দিরাকে ভাসিয়ে দিয়ে পালাবদল হতে দেখেছি ---- তখনকার টলমলে বামফ্রন্টকে দেখেছি ---- বামপন্থীদের বিনয়ী ও পরিশ্রমী চেহারা দেখেছি৷ ভূমি সংস্কার হতে দেখেছি --- শিক্ষাক্ষেত্রে অরাজকতা বন্ধ হতে দেখেছি ---- পরীক্ষাগুলো নিয়মিত হতে দেখেছি ----- সবচেয়ে বড় কথা, সমাজের প্রান্তবাসী ও নিম্নবর্গীয় অনেক লোককে আত্মসম্মান ফিরে পেতে দেখেছি, মাথা উঁচু করে সোজা হয়ে দাঁড়াতে শিখতে দেখেছি৷ বিশ্বাস করুন, আমার এই একজোড়া চোখ দিয়েই দেখেছি৷ আমাদের ছোট্ট মফস্বলে বামঘেঁষা লোকজনই বেশী ছিল৷

সেইসাথেই দেখেছি সিপিএমের সর্বগ্রাসী প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা৷ স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি থেকে পাড়ার ক্লাবকমিটি পর্যন্ত সর্বত্র "আমাদের লোক' বসানোর মরীয়া চেষ্টা৷ আসলে প্রথম টার্মে এদের ভয় ছিল কেন্দ্রীয় সরকার এদের যে কোন সময় ফেলে দেবে৷ ফলে ঐ সর্বত্র "আমাদের লোক' বসানোর চেষ্টা৷
আমার ভাই ঐ বার্নিঙ ইংলিশের প্রথম ব্যাচ, অর্থাত্ ইংরিজি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষার প্রথম সেট অফ গিনিপিগ৷ তাও বলব পদ্ধতিটা ভাল ছিল, কিন্তু ইমপ্যাক্ট অ্যানালিসিস না করে, ইন্ফ্রাস্ট্রাকচারের দিকে নজর না দিয়ে ওটা চালানোয় একটা গোটা প্রজন্মের একুল ওকুল দুকুল গেছে৷

আমি এদের ভাল মন্দ দুইই দেখেছি, দেখছি৷ আমার ধারণা এবারে ক্ষমতার লোভে কাছে আসা অনেক বেনোজল বেরিয়ে যাবে, তাতে এদের উপকারই হবে৷

আপনি তপন বসুর খাকী শর্টস অ্যান্ড স্যাফ্রন ফ্ল্যাগস পড়ে দেখতে পারেন৷ অনুরোধ রইলো৷

-----------------------------------------------
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

মূলত পাঠক এর ছবি

হা হা, তাহলে বয়েসটা ভালোই লুকোনো গেছে বলেন? আমিও ওই লার্নিং ইংলিশের বউনি ব্যাচ, কাজেই এদের কম সময় দেখি নি। ৭৭-এর কথা মনে নেই যদিও।

বামফ্রন্ট একেবারে শুরুতে কিছু করেনি তা তো নয়। ভূমিসংস্কার করে এরা প্রচুর পপুলার হয়েছিলো। কিন্তু সে ভালোকাজের কৃতিত্ব দিয়ে বত্রিশ বছর কাটে না। সমস্যাটা সেখানেই।

মূলত পাঠক এর ছবি

তপন বসুর বইটার কথা আরেকটু বিশদে লিখবেন? নেটে কিছু তেমন পেলাম না মুখবন্ধ, অ্যামাজন বেচে দেখলাম।

যদি আরএসএসের কেউ হন ইনি তো পড়ার ইচ্ছে নেই, ওপাশের ছবিটা দেখার জন্যেও নয়। তবে আপনি যখন বলেছেন তখন মনে হয় ইনি মৌলবাদ-বিরোধী। পড়ার চেষ্টা করবো, নিশ্চয়ই।

মোদ্দা কথাটা আরেকবার খোলসা করি। আমি বামেদের হাতে খোদ কলকাতায় মানুষকে রাতারাতি ঘরছাড়া হতে দেখেছি। অপরাধ কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচনী কাজে অংশ নেওয়া। আমার পাশের বাড়ির ভদ্রলোককে হুমকি দিয়ে তার বাড়িতে পার্টি অফিস বানানো হলো, নির্বাচনের পর তিনি অনেক টাকা গুনাগার দিয়ে তাদের তাড়ালেন। কলকাতায় এই হলে অন্যত্র কী হয়! পরিচিত একজনকে বলতে শুনেছি নন্দীগ্রামের নৃশংসতার কথা, তিনি কাজের জন্য সেখানে যেতেন। সে ছবির সাথে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিশেষ ফারাক নেই পাশবিকতার হিসেবে। এ সবই হয়তো বেনোজলের ফল, কিন্তু উপরতলা থেকে নীচ অবধি এতেই তো ভরে গেছে। আমার এলাকায় অমিতাভ নন্দী হেরেছে আমি এতে আনন্দিত। আমি বিজেপিকে সমর্থন করি না, এবং পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বে আসার কোনো সম্ভাবনাও দেখছি না, কিন্তু বাম তাড়ানোটা আশু প্রয়োজন এইটা নিয়ে সন্দেহ রাখি না। আর তৃণমূল একটা খুব এলোমেলো সংগঠন, এরা কদ্দূর কী করতে পারবে ক্ষমতায় এলেও তাই নিয়েও সন্দিহান। কিন্তু বত্রিশ বছরের অকর্মণ্যতার দায়ভারও কি আমার নয়? এরা যে আদর্শ বেচেছে শিক্ষিত বাঙালি সেটা বিশ্বাস করে কিনেছে দু চোখ বুজে, সে কথা তো মিথ্যে নয়। এদের তাড়াবেন কী অস্ত্রে?

দময়ন্তী এর ছবি

ওরে বাবা এই বইটা তো ছোটবেলায় পড়েছিলাম৷ মন খারাপ
বরং সৈয়দ মির্জার "আম্মি' নিয়ে লেখার ইচ্ছা আছে৷
------------------------------------------------------
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

স্নিগ্ধা এর ছবি

আমি ব্যক্তিগতভাবে এদের কোনো দিন ভোট দিইনি, একবার বিকল্প হিসেবে বিজেপিকেও দিয়েছি (এবং বিজেপি প্রার্থীই জিতেছিলো সেবার সেই আসনে)।

সিরিয়াসলি?!

হাসান মোরশেদ এর ছবি

সহমত@ দময়ন্তী
দলীয় আদর্শ বিসর্জন দিয়ে সস্তা শ্লোগানে সবসময় কাজ হয়না।আর রাজনৈতিক দলগুলো যখন নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের পাত্তা নিয়ে অন্যদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে তখন পরিনতি শুভ নয়।
যার যেমন তার তেমন থাকাটাই ফলদায়ক।
বিজেপি হঠাৎ করে মৌলবাদ বিরোধী শ্লোগান দিলে তো সমস্যা হাসি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

দময়ন্তী এর ছবি

@ হাসান মোরশেদ,

জানেন কি গুজরাট দাঙ্গায় সবহারানো যে লোকটিকে প্রচারের চড়া আলোর নীচ দিয়ে সিপিএম এনে পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় দিয়েছিল, তিনি আবার গুজরাটেই ফিরে গেছেন৷ তসলিমাকে যেভাবে চুপিচুপি বিমান বোসের ঘনিষ্ঠ লোক এসে রাজ্যছাড়া করে, যেভাবে পার্কসার্কাস এলাকায় কিছু লুচ্চা লুম্পেনের দাবী মেনে নিয়ে তসলিমাকে প্রকারান্তরে ভারতছাড়া করে --- তারপর (এবং এরকম আরো অনেক কিছুর পর) সিপিএমকে আমি ধর্মনিরপেক্ষ বলে মেনে নিতে বা বিশ্বাস করতে পারি না৷

আর হ্যাঁ সুমন জেতায় আমি একটুও খুশী হই নি৷ আদ্যন্ত ধান্দাবাজ আর ভন্ড লোক একটা৷ ও হারলেই বেশী খুশী হতাম৷ হাসি
------------------------------------------------------
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

দিগন্ত এর ছবি

এই ভোটের পরে যদি তসলিমাকে পাকাপাকিভাবে কোলকাতা থেকে ব্যান করা হয় তাহলেও আমি অবাক হব না। আমার তো মনে হয় ভোটের মাধ্যমে কোলকাতা তসলিমাকে বিদায় জানিয়ে দিল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

দময়ন্তী এর ছবি

হুঁ৷
সাধারণ মানুষের মধ্যে পোলারাইজেশান খুব ভয়াবহ জায়গায় চলে যাচ্ছে৷ দেখে বেশ ভয় লাগে৷
---------------------------------------
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

মূলত পাঠক এর ছবি

এটাই আসল ভয়। আগে ক্যাডাররা গলা ফাটিয়ে েচঁচাতো, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ রাজনৈতিক মতামত নিয়ে তেমন সরব হতো না। আজকাল সবাই ক্রমশ মারমুখী হয়ে উঠছে, আর এ বিষয়ে চরমপন্থার সমর্থকরা বেশী সরব। নির্বাচনের পরেই আবার মারামারি বঁেধে গেছে, হাওড়ায় ঘরবাড়ি পোড়ানো হচ্ছে।

দ্রোহী এর ছবি

কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়!

সিরাত এর ছবি

ধন্যবাদ সময়োপযোগী পোস্টটির জন্য! চলুক

আরিফ জেবতিক এর ছবি

দিগন্ত , দময়ন্তী আর মূলত পাঠক এর বিশ্লেষন ভালো লেগেছে ।
আসলেই বিকল্প মিডিয়া থাকায় অনেক কিছুই জানা যায় ।

বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে আগেও আসন পেয়েছে , তবে গত দুই নির্বাচনে পেয়েছে বলে মনে হয় না ।

--
দীর্ঘস্থায়ী ক্ষমতার অবসান হওয়া এমনিতেই জরুরী । কারন তিরিশ বছর অনেক দীর্ঘ সময় ,পাথর না নড়লে তাতে শ্যাওলা জমবেই ।

যদিও আমি যতোটুকু দূর থেকে বুঝি , মমতার উপর ঠিক ভরসা করি না কারন মমতা আসলে একটা ব্র্যান্ড নেম , তার দলে সরকার চালানোর মতো লোক কতোজন আছে সেটা নিশ্চয়ই দেখার বিষয় হবে ।

দিগন্ত এর ছবি

বিজেপি দমদমে আসন পেয়েছে। বিজেপির কিছু প্রভাব আছে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী এলাকায়।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

বামদের যা পাওনা ছিলো তারা তাই পেয়েছে। কিন্তু এই আশংকা করছি-এই নির্বাচনের মাধ্যমে কি পশ্চিমবাংলায় ধর্মভিত্তিক রাজনীতির যাত্রা শুরু হলো?

জ্যোতিবাবু যেমন দীর্ঘযুগ বাংলার ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন, মমতা যদি সেরকম হয়ে উঠেন তাহলে আশংকা অমুলক নয়, একে আমার কাছে এসব বিষয়ে তেমন কমিটেড মনে হয়না।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

দিগন্ত এর ছবি

সংক্ষেপে উত্তর না।

ভারতে জোটের পলিটিক্স খুবই জটিল। বিজেপির সাথে জোট করা আরও কয়েকটি পার্টি তীব্র বামপন্থী - যেমন এ-আই-এ-ডি-এম-কে (তামিলনাডু), তৃণমূল কংগ্রেস, জনতা দল ইউনাইটেড (বিহার)। এর আগে সমাজবাদী পার্টিও বিজেপির সাথে জোটে ছিল। ভারতে জোট একরকমের গিভ এন্ড টেক।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

রণদীপম বসু এর ছবি

খুব ভালো পোস্ট। বেশ কয়েকটা বিশ্লেষণ পড়লাম। আরেকটু বেশি করে জানতে ইচ্ছে করছে।

তবে রাজর্ষি দা' মানে মূলত পাঠক-এর আগেরবারে বিজেপি-কে ভোট দেবার বিষয়টি আমাকেও কৌতুহলী করেছে খুব !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

গৌতম এর ছবি

সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামে যা ঘটছিলো সেই খবরগুলো মোটামুটি নিবিষ্ট চিত্তে ফলো করছিলাম। বামদের বিরুদ্ধে গালিগালাজ, ঔদ্ধত্য আচরণ আর জেদ ছাড়া মমতার মধ্যে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু পাওয়া যায় নি। অথচ এই ইস্যু নিয়ে মমতার সুযোগ ছিলো গঠনমূলক বক্তব্য রাখার, নিজেকে চিন্তাশীল নেত্রী হিসেবে প্রমাণ করার। সেটা যে তিনি নন, ওই ঘটনায় তা প্রমাণ হয়েছে। বামদের বদলে তিনি ক্ষমতায় থাকলে কী করতেন, সেটাও স্পষ্ট করতে পারেন নি। মমতার আরেকটি বড় গুণ হচ্ছে- প্রতিপক্ষের দুর্বলতাগুলোকে জনসমক্ষে বেশ ভালোভাবে, আর্টিস্টিক উপায়ে তুলে আনতে পারা। এই দিকে বামরা এখনো খ্যাতই রয়ে গেছে।

তবে তাঁর প্রতিবাদে একটি বড় লাভ হয়েছে। মানুষ খুন এবং লুটপাটের ঘটনাগুলো কম হয়েছে। না হলে বামরা সেখানে কী করতো সেটা কল্পনাসাপেক্ষ।

ওই সময়ে বামদের বক্তব্যও শুনে পুরোপুরি হতাশ হয়েছি। যার প্রতিফলন আছে আমার একটি লেখায়

যাই হোক, বামদের এই পরাজয়টা দরকার ছিলো। মানুষের কথা বলতে গিয়ে মুখে যাদের ফেনা উঠে, মানুষকে তারা বুঝতে অপারগ। এই ঠেলাধাক্কায় যদি এখন যদি মানুষের কাছে যায়, মানুষের কিছু কথা শুনে।

উপমহাদেশে বামরা এরকম সমস্যায় পড়েছিলো রণদীভের আমলেও। আর পড়লো প্রকাশ কারাতের সময়ে। রণদীভের আমলে বামরা মোটামুটি চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে যাচ্ছিলো, পরবর্তী নেতৃত্ব কোনোমতে সেটি সামাল দেয়। প্রকাশ কারাতের আমলেও বোধহয় তাই ঘটতে যাচ্ছে। রণদীভ ছিলেন তরুণ নেতা, প্রকাশ কারাতও তাই। ভারত কি তাহলে তরুণ বামনেতৃত্ব সহ্য করতে পারে না?
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

তানবীরা এর ছবি

ইতিহাস বলে, কর্কট তার ডালপালা বিস্তার করে দ্রুত।

ঠিক

এই ফলে আমি খুব খুশী৷ সিপিএমের অসহ্য ঔদ্ধত্য ও দম্ভের একটা এরকম জবাব খুব দরকার ছিল৷

ঠিক

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

একুশ তাপাদার [অতিথি] এর ছবি

প্রসঙ্গিল লেখা। পশ্চিমবঙ্গের ফলাফলে আমি কিছুটা বিচলিত। সিপিআই(এম) এর নেতাদের ভুল সিদ্ধান্ত, ফাঁপা আত্নবিশ্বাস, অতিরঞ্জিত দাম্ভিকতা এই বিপর্যয়ের কারন বলে মনে হয়। নন্দিগ্রাম, সিঙ্গুর নিয়ে বাড়াবাড়ি করার সময় তারা কিছুটা হলেও আদর্শচুত্য ছিলেন। কিন্তু গনহত্যা ইত্যাদি বিষয়ে মন্তব্য করতে পারছি না, কারন সিপিআই(এম), সিপিআই এদেরও অনেক কর্মী খুন হয়েছিলো বলেখবর শুনেছি। তাই গনহত্যা বলেপ্রচার করলে ব্যাপারটা এক পেশে লাগে।

আর মমতা কে কখনই প্রাজ্ঞ মনে হয় নি, উনি তো মন্ত্রী হওয়ার জন্য বিজেপির সাথেও জোট করেছিলেন। তার কথাবার্তায় তাকে কখনই নেতৃস্থানীয় মনে হয় না, মনে হুলস্থুল বাধাঁনোর জন্য উনি সর্বদা প্রস্তুত। বামফ্রন্টের পরাজয় শুভ লক্ষন নয়, কারন বিকল্প হিসেবে তৃনমূলের ফাঁপা আদর্শ শূন্যতাই দিবে। মাঝখান দিয়ে বিজেপি সুবিধা আদায় করতে পারে।

কবির সুমনের একটা গান দেখলাম ইউটিউবে। উনি সেই গানে বলছিলেন- শুত্রুর শত্রুর সাথে গলা মেলালেন শুধু মাত্র এই বাম সরকারের বিরোধীতা করার জন্য। তার মানে আদর্শিক অবস্থান থেকে উনি তৃনমূল কংগ্রেসের রাজনীতিতে জড়িত নন। তাই এই রাজনীতির ভিত্তিমূলও শক্ত নয় বলেই আমার ধারনা। সময় গেলে দেখা যাতে পারে গানের মেধা রাজনীতির ময়দানে কাজে আসছে না সুমনদের। তৈরি হবে নতুন শূন্যতা, নতুন সংকট। আর এই জন্য বাম নেতারাই দায়ী থাকবেন বলে মনে করি। যদিও শুনতে পেয়েছি তারা নাকি আত্নশুন্ধি করতে নেমেছেন। দেখা যাক

অতিথি লেখক এর ছবি

"দীর্ঘস্থায়ী ক্ষমতার অবসান হওয়া এমনিতেই জরুরী । কারন তিরিশ বছর অনেক দীর্ঘ সময় ,পাথর না নড়লে তাতে শ্যাওলা জমবেই।"
..............ঠিক বলেছেন। বহু দলীয় গনতন্ত্রে এ বড়ো জরুরী।
খুব ভালো চমৎকার পোস্ট হয়েছে। বেশ কয়েকটা তথ্য বহুল বিশ্লেষণ পড়লাম। আরেকটু বেশি জানতে ইচ্ছে হয়, সর্বভারতীয় পর্যায়ে কেউ লিখুন না। কিংবা ভারত বাংলাদেশ issue টা .......................

Ekhono Balok,

ফকির লালন এর ছবি

আমার ধারনা ছিলো যে বামেরা সোশাল মোবিলিটির জন্য যা যা করা দরকার তার অনেক কিছুই করেছে, এবং সেটাই তাদের জনপ্রিয়তার মূল শক্তি। ভুমি সংস্কার, ইউনিয়ন ইত্যাদি সবকিছুই একজন নিম্নবর্গীয় বা দরিদ্রকে তার নিজের চেষ্টায় সমাজের উপরে ওঠার বিশাল সুযোগ করে দিয়েছে বলে আমার ধারনা ছিলো।

কিন্তু আপনাদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে অতটা বিশ্বাস বোধহয় সঠিক ছিলোনা। তবে যেমনটি লিখেছেন, শুধুই বামেদের ঔদ্ধত্য, মাফিয়া সংস্কৃতিই কি এরকম একটা টেকসই অবদান - তা যতোই সামান্য হোকনা কেন - তাকে নাকচ করতে পারে?

সামগ্রিক বাম আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এই পরাজয়ের মূ্ল্যায়ন কি? এটা কি বিগিনিং অফ দি এন্ড? নেপালে একটা গেরিলা বামদল নির্বাচনে জিতে এলো আর পশ্চিম বংগে বামদূর্গ ভেঙ্গে পড়লো - বেশ অবাক লাগছে। পরিস্থিতিটা তাই আরো সবিস্তারে জানার বিশেষ আগ্রহ আছে।

পাঠক, দিগন্ত, দময়ন্তী আপনাদের লেখা থেকে যা জানা গেলো তা কিন্তু পত্র পত্রিকার বিশ্লেষন থেকে অনেক উপকারী। তাই আলাদা করে লিখতে অনুরোধ রইলো।

ফকির লালন এর ছবি

আমার ধারনা ছিলো যে বামেরা সোশাল মোবিলিটির জন্য যা যা করা দরকার তার অনেক কিছুই করেছে, এবং সেটাই তাদের জনপ্রিয়তার মূল শক্তি। ভুমি সংস্কার, ইউনিয়ন ইত্যাদি সবকিছুই একজন নিম্নবর্গীয় বা দরিদ্রকে তার নিজের চেষ্টায় সমাজের উপরে ওঠার বিশাল সুযোগ করে দিয়েছে বলে আমার ধারনা ছিলো।

কিন্তু আপনাদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে অতটা বিশ্বাস বোধহয় সঠিক ছিলোনা। তবে যেমনটি লিখেছেন, শুধুই বামেদের ঔদ্ধত্য, মাফিয়া সংস্কৃতিই কি এরকম একটা টেকসই অবদান - তা যতোই সামান্য হোকনা কেন - তাকে নাকচ করতে পারে?

সামগ্রিক বাম আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এই পরাজয়ের মূ্ল্যায়ন কি? এটা কি বিগিনিং অফ দি এন্ড? নেপালে একটা গেরিলা বামদল নির্বাচনে জিতে এলো আর পশ্চিম বংগে বামদূর্গ ভেঙ্গে পড়লো - বেশ অবাক লাগছে। পরিস্থিতিটা তাই আরো সবিস্তারে জানার বিশেষ আগ্রহ আছে।

পাঠক, দিগন্ত, দময়ন্তী আপনাদের লেখা থেকে যা জানা গেলো তা কিন্তু পত্র পত্রিকার বিশ্লেষন থেকে অনেক উপকারী। তাই আলাদা করে লিখতে অনুরোধ রইলো।

মূলত পাঠক এর ছবি

আপনার বিশ্বাসটা ভুল ছিলো না, বামেরা কিছু করে নি এ কথা সত্যি নয়। কিন্তু সে সবই গোড়ার দিকের কথা। আত্মতৃপ্তির কথাটা এই জন্য আসে যে বত্রিশ বছর অনেকটা সময়, আর সাম্প্রতিক পৃথিবীতে পরিবর্তন অনেক বেশি হয়, জীবন অনেক দ্রুত বদলায়। সেইখানে দাঁড়িয়ে বিকল্পের অভাবকে হাতিয়ার করে অলস জীবন কাটানোকে ভালো প্রশাসন বলা যায় না। সেজন্যই জনতার মধ্যে এতো ক্ষোভ।

সিরাত এর ছবি

আলোচনাটা খুব ভাল লাগলো, আবারও পড়লাম তাই। সব মন্তব্যকারীকে ধন্যবাদ!!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।