রাজনীতিবিদ 'গুম'- রাজনীতি কেমন আছে?

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: রবি, ২২/০৪/২০১২ - ২:০০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ইলিয়াস আলী 'নিখোঁজ' কিংবা 'গুম' হয়েছেন।
রাষ্ট্রের প্রধান বিরোধী দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী নিখোঁজ কিংবা গুম হওয়া অবশ্যই আলাদা গুরুত্ব বহন করে।
ইনি যদি শুধু এক ইলিয়াস আলী হতেন যার বাড়ি সিলেট জেলার বিশ্বনাথ থানার কোন এক গ্রামে অথবা বড়জোর কোন গুন্ডাপান্ডা, লুটেরা সন্ত্রাসী হতেন তবে এই নিখোঁজ কিংবা গুম হয়ে যাওয়া আমাদের স্নায়ুর উপর এতোটা চাপ ফেলতোনা, কেনোনা এতোদিনে এরকম অনেক কিছুই আমরা সহ্য করতে শিখে গেছি বেশ।

না খুব বেশী পিছনে যাওয়াটা ধৈর্য্যের পরীক্ষা হয়ে যায় আর তাছাড়া এতোটা সময় ও নেই। মাত্র এক দশক পেছনে যদি যাই আমরা,বেগম খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় দফা শাসনের সময় সেনাবাহিনীকে “অপারেশন ক্লিন হার্ট” এর নামে ক্ষমতা দেয়া হয়েছিলো মানুষকে বিনা বিচারে অপরাধী সাব্যস্ত করে শাস্তি দেওয়া,এমনকি পিটিয়ে মেরে ফেলার। সেনাসদস্যরা তুচ্ছ ঘটনায় সাধারন মানুষকে অপমান করেছে, হেলমেট না পড়ার অপরাধে সন্তানের সামনে পিতাকে কান ধরে উঠবস করিয়েছে, আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে কথিত অনেক সন্ত্রাসী পিটিয়ে হত্যা করে নাম দেয়া 'হার্ট এটাক'। সুশীল নাগরিকেরা এসবকে “কোল্যাটারাল ড্যামেজ” ধরে নিয়ে তৃপ্ত হয়েছেন আর আমরা তুচ্ছ নাগরিকেরা হাততালি দিয়েছি আমাদের সেনাবাহিনীর বীরত্বে।
পরে একই শাসনামলে তৈরী করা হয়েছে এলিট ফোর্স র‍্যাব যারা ক্রসফায়ারের গল্পকে পরিনত করেছে বাঙ্গালীর দৈনন্দিন রূপকথায়। ক্রসফায়ারের নামে বিনাবিচারে যেমন হত্যা করা হয়েছে ছিচকে থেকে ভয়ংকর সন্ত্রাসীদের, তেমনি ক্রসফায়ার ব্যবহৃত হয়েছে নিজেদের উপদলীয় কোন্দলে, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী দমনে। আমরা তুচ্ছ নাগরিকেরা তখনো ব্যস্ত মুগ্ধ হাততালিতে।

তখনকার বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে সরব ছিলো এবং তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও ছিলো ক্ষমতায় এলে র‍্যাব বিলুপ্ত করার এবং বিএনপি আমলের বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচারের। যদিও আওয়ামী লীগের প্রথম শাসনামলই বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের কালিমামুক্ত ছিলোনা তবু একুশ বছর পর দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের মাধ্যমে '৭৫ এর হত্যাকান্ডের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করায় এবং সর্বশেষ ২০০৮ এর নির্বাচনের আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সোচ্চার প্রতিশ্রুতি দেয়ায় ভরসা করা গিয়েছিলো আইনের শাসনের প্রতি শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ শ্রদ্ধাশীল থাকবে, অন্ততঃ খালেদা জিয়ার বিএনপির চেয়ে। ২০০৮ এর নির্বাচনী ফলাফল আরো বেশী ভরসা জুগিয়েছিলো কারন এরকম ব্যাপক গনরায়ে নির্বাচিত সরকারের টিকে থাকার জন্য কোন বিশেষ বাহিনীকে আলাদা গুরুত্ব দেয়ার কিংবা বিনা বিচারে হত্যার মতো নিষ্ঠুরতার প্রয়োজন পড়েনা।

কিন্তু সমস্ত আশাবাদকে তুচ্ছ করে র‍্যাব টিকে গেছে, শেখ হাসিনার সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মোতাবেক র‍্যাব বিলুপ্ত করেনি। র‍্যাবের চরিত্রে ও কোন পরিবর্তন আসেনি। বরং যা হবার কথা ছিলো তাই হয়েছে বিনা বিচারে হত্যাকান্ড আরো বিস্তৃত হয়েছে, থানার সামান্য দারোগা ও ঘুষ খাওয়ার জন্য এখন আর হুমকী ধামকির বদলে সোজা একশনে চলে যেতে পারে। অস্ত্র হাতে বাহিনীগুলো গত একদশকের জবাবদিহীতাহীনতার বদৌলতে আরো বেশী বেপরোয়া। হ্যাঁ, ধরনে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে অবশ্য- কিছুটা পরিবর্তন গল্প বলায়। ক্রসফায়ার খুব ক্লিশে হয়ে যাওয়ায় নতুন চিত্রনাট্য তৈরী হয়েছে 'গুম'। ক্রসফায়ারে তাও ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যাচ্ছিলো, নতুন গল্পে এসব ঝুটঝামেলা নেই আর!

আচ্ছা, শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি স্বত্বেও র‍্যাব বিলুপ্ত করলেননা কেনো? আমার একটা ধারনা- ক্ষমতায় আসার দু মাসের মাথায় যদি পিলখানা হত্যাকান্ডের মতো একটা ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে না হতো হাসিনা হয়তো সত্যিই র‍্যাব বিলুপ্ত করতেন। ধারনা করার যথেষ্ট কারন আছে, এই একটা ঘটনা শেখ হাসিনাকে অনেকটুকুই দুর্বল করে ফেলেছে। র‍্যাব বিলুপ্তির মাধ্যমে নতুন করে বাহিনীগুলোর ক্ষোভের কারন হতে চাননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ফিরে আসা যাক ইলিয়াস আলী প্রসংগে। যে ইলিয়াস আলী সাধারন কেউ নন, প্রধান বিরোধী দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। সাধারন কেউ হলে তেমন কিছুই হতোনা- এই একদশকে এরকম সাধারন কতোশত জন বেমালুম হাওয়া হয়ে গেলো!

ইলিয়াস 'গুমের' প্রধান অভিযুক্ত অবশ্যই সরকার। সরকার র‍্যাব বিলুপ্ত করেনি, বিনা বিচারে হত্যা বন্ধ করেনি, বরং সরকারের দায়িত্বশীলরা এর সপক্ষে গলাবাজি করেছেন যেমন করতেন বিএনপির দায়িত্বশীলরা। সুতরাং এই সরকার 'গুম' করতে পারেনা- এমন দাবী করার নৈতিক কিংবা যৌক্তিক কোন ভিত্তি নেই। তবে আলোচনার স্বার্থেই ভাবা যেতে পারে- ইলিয়াস আলীকে 'গুম' করে সরকারের লাভ কী? এক ইলিয়াস আলী কি সরকারের অস্ত্বিত্বের জন্য বিরাট হুমকী হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন কিংবা এমন যে তাকে সরিয়ে দিলেই সরকার নিরাপদ? ইলিয়াস কি ক্ষমতার রাজনীতিতে এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ? নানা ঝুটঝামেলায় সরকার যখন বিপর্যস্ত তখন বিনালাভে বেহুদা ঝুঁকি নেয়ার মতো বোকা হলে আওয়ামী লীগের ছয়দশক ধরে টিকে থাকার কথা না বলেই আমার ব্যক্তিগত অভিমত?

তবে কি অতিবাক প্রধানমন্ত্রীর দাবীমতো ইলিয়াস তার নেত্রী খালেদা জিয়ার নির্দেশে নিজেই আত্নগোপনে আছেন-সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য? যদিও প্রয়াত খন্দকার দেলোয়ারের পুত্র পবন এই নাটক সাজিয়েছিলো সত্যি, তবু ইলিয়াস আলী এরকম কিছু ঘটিয়েছেন সেটা ও ভাবতে ভাল্লাগেনা।

তাহলে?

আমরা কি আমাদের ভাবনায় এমন কোন শক্তিকে রাখতে পারি যারা সরকারী দল ও বিরোধ দলের মধ্যে যোগাযোগের সমস্ত পথ বন্ধ করে দিয়ে একটা ভয়াবহ সংকটময় পরিস্থিতি তৈরী করতে আগ্রহী? পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছর দেড়েক সময় বাকী, আওয়ামী লীগ তত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করলেও দাতাগোষ্ঠির চাপে হয়তো বাধ্য হবে অন্য কোন ফর্মুলার অন্তবর্তী সরকারের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তরের, সে ক্ষেত্রে হয়তো বিএনপি ও নির্বাচনে আসবে। সে ক্ষেত্রে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির ধারাবাহিকতা বজায় থাকার একটা সম্ভাবনা টিকে থাকে।

এমন কোন শক্তি কি আছে যারা নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির এই ধা্রাবাহিক সম্ভাবনাকে খুন করতে চায়? এর ফলে বেনিফিশিয়ারী কারা? উত্তর জটিল কিছু নয়। ২০০৬ এর সংসদের মেয়াদ শেষ হবার পর নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর না হওয়ার ফলে লাভবান হয়েছিলো যারা তারা যে দৃশ্যপট থেকে সরে গেছে অথবা তাদের নতুন উত্তরসূরী তৈরী হয়নি তেমন মনে করার কোন কারন নেই।

সমীকরনটা সরল না হয়ে দ্বিঘাত ও হতে পারে। ২০০৯ এর ফেব্রুয়ারীতে সংঘটিত পিলখানা হত্যাকান্ডের প্রেক্ষিতে যদি সরকার পতন ঘটতো, সামরিক বাহিনী ক্ষমতায় আসতো- তাহলে ২০১২ এর বর্তমানের সাথে আর কিছু না হোক অন্ততঃ একটা বড়সর পার্থক্য থাকতো। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতোনা। ২০১২ এর বর্তমানে ও যদি হঠাৎ করেই সরকার পতনের পরিস্থিতি তৈরী করানো যায় যে কোন মুল্যে তাহলে ও আগামীকালের সাথে আজকের পার্থক্য এটুকুই থাকবে- এই বিচার প্রক্রিয়া থেমে যাবে।
'৭১ এর গনহত্যার দাগ যাদের হাতে, যারা ১৪ ডিসেম্বরের ঠান্ডা মাথার খুনী তাদের পক্ষে যে কোন ধরনের ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা করা সম্ভব।

সরকারের অস্বাভাবিক পতনের মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির ধারাবাহিকতা ব্যহত হলে বেনিফিশিয়ারী হবে যারা, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে এখনো তাদের লোকজন আছে সেটা নিকট অতীতের বেশ কিছু ঘটনায় প্রমানিত। যে কাউকে 'গুম' করে দেয়ার ক্ষমতা তাদেরকে সরকারই দিয়ে রেখেছে, সুতরাং প্রধান বিরোধী দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক 'গুম' হয়ে যাওয়া খুব অসম্ভব কিছু নয়।

অবশ্য আজ সন্ধ্যাবেলাতেই , ইলিয়াস আলীর একসময়ের সহচর আমার এক ব্যক্তিগত বন্ধু এইসব তাত্বিক হিসেব নিকেশকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে বলছিলো- ধুর এইসব মাল্পানির ঝামেলা। বড় অংকের চান্দাবাজি নিয়ে কোন গ্যাং এর সাথে ভাইয়ের ঝামেলা ছিলো হয়তো, চান্সে উড়িয়ে দিয়েছে। রাজনীতি টাজনীতি কিচ্ছু না!

হয়তো আসলেই কিচ্ছু না। হয়তো ইলিয়াস আলী ফিরে আসবেন বীরের বেশে, হয়তো ফিরবেন না আর।

তবে তার প্রত্যাবর্তনের দাবীকে আরো সোচ্চার করতে একেবারে বারবিকিউ করে ফেলা একজন বদর আলী আর ফিরবেননা এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। এটা ও নিশ্চিত হওয়া গেছে বদর আলীর না ফেরার প্রতিবাদে কোন হরতাল ডাকবেনা কেউ, যেমন নিশ্চিত সুরঞ্জিত সেনের এপিএসের গাড়ী চালক আজম 'গুম' হওয়া নিয়ে নেই তেমন কোন নাগরিক উদ্বেগ।

একদশকে সহস্র মানুষ খুন হয়ে গেলো বিনা বিচারে, তেমন কোন প্রতিবাদ পর্যন্ত হলোনা। যতোদিন না এই যথেচ্ছ হত্যার ক্ষমতা রহিত করা হচ্ছে, যতোদিন না রাষ্ট্রীয় সকল শক্তিকে নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে জবাবদিহীতার আওতায়- ততোদিন ভালো থাকার কোন যুক্তি নেই নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির।


মন্তব্য

সাফি এর ছবি

একদশকে সহস্র মানুষ খুন হয়ে গেলো বিনা বিচারে, তেমন কোন প্রতিবাদ পর্যন্ত হলোনা। যতোদিন না এই যথেচ্ছ হত্যার ক্ষমতা রহিত করা হচ্ছে, যতোদিন না রাষ্ট্রীয় সকল শক্তিকে নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে জবাবদিহীতার আওতায়- ততোদিন ভালো থাকার কোন যুক্তি নেই নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির।

চলুক

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

সময়োপযোগী লেখার জন্য ধন্যবাদ। মন্তব্যে আলোচনা শুরু হোক।

কল্যাণ এর ছবি

বিএনপি কে দূর্বল করতে আওয়ামী লীগ যদি গুম পদ্ধতি নিয়ে থাকে, তাহলে ইলিয়াসের থেকে প্রভাবশালী বা উপযুক্ত আর কেউ ছিল না? ঝুঁকি যেখানে সরকার পতনের সেখানে খালেদা জিয়া, ফখ্রুল, খোকা বা এরকম কাউকে গুম করে দিলেই তো হত। আবার বিএনপি যদি ইলিয়াস কে লুকিয়ে রাখবে, তাহলেও একি যুক্তি খাঁটে, তারা ফক্রুল, খোকা এরকম কাউকে লুকিয়ে রাখলেই পারত। ইলিয়াস আলী গুম হলে লাভ আসলে কার? বাংলাদেশে রাজনীতিতে এখন সব থেকে বেকায়দায় আছে কারা? দুঃখজনক যেটা তা হচ্ছে জামাত বিএনপিকে কি দিচ্ছে, কত টাকা দিচ্ছে যে এখনো দেশের স্বাধীনতাবিরোধীদের তারা ছাড়তে পারছে না!!! এখন যেটা হচ্ছে সেটা হল স্রেফ নেপোয় মারে দই।

অফটপিকঃ একটা ব্যাপার জানার খুব ইচ্ছা ছিল। ধরি পিডিবি'র সহকারী প্রকৌশলী হতে নূন্যতম বিএসসি ইঙ্গিনিয়ারিং ডিগ্রী লাগে, তাহলে প্রধানমন্ত্রী পদে গদিয়ান হতে হলে কি ধরণের পড়ালেখা ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন?

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

তারেক অণু এর ছবি

প্রাইমারী পাস !

দুর্দান্ত এর ছবি

ফখ্রুল আর খোকাকে বসুন্ধরায়, রিয়াদে আর এফ বি সি সি এই এ ক' জন লোকে চেনে? বছর ঘুরলেই যে এক কাঁড়ি টাকার দরকার পরবে, সেটা কি ফখ্রুল আর খোকা ঘুংরু পরে নাচলেও যোগাড় হবে?

কল্যাণ এর ছবি

পয়েন্ট

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

হাসান মোরশেদ এর ছবি

অফটপিকঃ একটা ব্যাপার জানার খুব ইচ্ছা ছিল। ধরি পিডিবি'র সহকারী প্রকৌশলী হতে নূন্যতম বিএসসি ইঙ্গিনিয়ারিং ডিগ্রী লাগে, তাহলে প্রধানমন্ত্রী পদে গদিয়ান হতে হলে কি ধরণের পড়ালেখা ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন?

রাষ্ট্রকে আমরা লিমিটেড কোম্পানী না ভাবি, তাহলে ভিন্ন সমস্যা যোগ হবে। বরং একে আমরা যদি বৃহৎ পরিবার হিসেবে চিন্তা করি তাহলে কল্যান হয়। পরিবার প্রধানকে ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনে দক্ষ হতে হয়। আমাদের মা বাবা এমবিএ করা না কিন্তু পরিবার সামলিয়েছেন অন্যভাবে। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে নির্দিষ্ট বিষয়ে গ্রাজুয়েট হতে হবে তা নিশ্চয় নয়, যা দরকার সেটা হলো রাষ্ট্র নামক বৃহৎ পরিবারটির জন্য ভালোবাসা, ব্যবস্থাপনার সহজাত প্রজ্ঞা এবং ঝড়ঝাপ্টা সামলানোর মতো সাহস ও কৌশল।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

চলুক

খুবই সত্যিকথা।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

কল্যাণ এর ছবি

হাসান ভাই পুরোপুরি মানতে পারলাম না। মানছি রাষ্ট্র লিমিটেড কোম্পানী না, হার্ভার্ড গ্রাজুয়েটও দরকার নাই, কিন্তু নিদেন পক্ষে দেশি গ্রাজুয়েশন আর সেই সাথে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও দূর দৃষ্টিটা কি খুব অযৌক্তিক রিকয়ারমেন্ট? দেশের প্রতি ভালবাসার পাশে দায়িত্বের প্রতি সততা আর নিষ্ঠাটার কি হবে? একটা পরিবারের প্রধান বা একজন সহকারী প্রকৌশলী ভুল করলে তাতে যে কয়টা মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা একটা দেশের তুলনায় কিন্তু শূন্য। তাহলে কোন যোগ্যতার ভিত্তিতে আমাদের মন্ত্রীসভা এবং মন্ত্রীদের দায়িত্ব নির্ধারিত হওয়া উচিত? "ব্যবস্থাপনার সহজাত প্রজ্ঞা" না হয় আল্লায় দিল কিন্তু "ঝড়ঝাপ্টা সামলানোর মতো সাহস ও কৌশল" সর্বোপরি বিচক্ষণতা কি এমনে এমনে আসবে? সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেলের কি জানে? আবুল যোগাযোগের কি জানে? শাজাহান নৌপরিবহনের কি জানে? এরা কি আদৌ জানে বা বোঝে কোন পদক্ষেপের ইমপ্লিকেশন কি? (এইখানে সব আম্লীগের নেতাদের নাম নিছি মানে এই না যে বিম্পি জোট মন্তব্যের বাইরে, অন্য দল ক্ষমতায় থাকলে তাগো লুকজনের নামই উদাহরনে ব্যবহার কর্তাম) এই যে কেউ কিছু না জেনেই এক একটা খাত অধিকার করে বসে আছে, এরা সেই খাতের কোন উন্নয়নটা করবে বা কিভাবে করবে? এটার মাপকাঠিটা কি? ৯১ পরবর্তী সরকারগুলারেই যদি সরকার হিসেবে ধরেন (গণতান্ত্রিক বিবেচনায়), তাহলে কি এরি মধ্যে এইসব দেশ পরিচালক গুষ্ঠির বা প্রচলিত মেকানিজমের অসারতা ফুটে উঠেনি?

আপনার পোস্টের মূল্ভাবের থেকে আলোচনাটা মনে হয় অন্য দিকে নিয়ে চলে যাচ্ছি এজন্যে দুঃখিত। তাছাড়া আমার নিজের কতটুকু যোগ্যতা আছে এ ধরনের বিষয়ে আলোচনা করার তাও প্রশ্ন সাপেক্ষ মানি চোখ টিপি । আপনার অসাধারণ মূল পোস্টের সাথে আমি একমত। ইলিয়াস গুম হইলে কার কি লাভ হয় এই হিসাবে আম্লীগ-বিম্পি কোন্দল ছাড়াও বিম্পির ইন্টার্নাল কামড়া কামড়ি থাকতেই পারে। যদিও আমার "গাট ফিলিং" কয় এতে জামাত ছাড়া আর কারো এত বেশি লাভ এই মুহুর্তে নাই।

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এইসব ভাবনা চিন্তা নিয়ে আলাদা পোষ্ট দিতে পারেন

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

রাব্বানী এর ছবি

জায়গামত কেউ থাকলেই হবে

সাবেকা  এর ছবি

এই সময়ে এরকম একটা লেখা ব্লগে আশা করেছিলাম । আপনাকে ধন্যবাদ সময়োপযোগী লেখাটার জন্য ।

দুর্দান্ত এর ছবি

আপনার বন্ধুর কথা ঠিক হলেও হতে পারে।
সেই চাঁদাবাজ পার্টির হেড অফিস কুর্মিটোলা গলফক্লাব হয়ে গেলে কিন্তু আপনার ১/১১ আর পিলখানার হিসাবে মিলে যায়। তবে তার মানে গিয়ে দাঁয়ায় যে ১/১১ এখনো বহাল আছে, কিন্তু ব্যাবস্থাপনার কিছু পরিবর্তন এসেছে। যা আলামত, বসুন্ধরা-জলপাই কনগ্লোমারেটই যে শেখের বেটির সুতো হেলাচ্ছেনা, তা কে জানে?

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ফৌজি বানিজ্য বাংলাদেশে বেশ পোক্ত বিষয় এখন। আর বানিজ্যে ঝুটঝামেলা থাকবেই হাসি । একটা চালু গল্প কিন্তু বাতাসে উড়ছে। ডিওএইচএস এ (?) কোটি টাকায় বাড়ি কেনা সংক্রান্ত একটা ঝামেলা চলছিলো উর্দিপড়া ব্যবসায়ীদের সাথে, এটার বুঝাপড়া/লেনদেন সংক্রান্ত সভা ও চলছিলো রুপসী বাংলায়।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নজমুল আলবাব এর ছবি

কাটাছেড়াটার সাথে মিলছে নিজের হিসাবও

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আহ! গণতন্ত্র!!

তানিম এহসান এর ছবি

আপনার বিশ্লেষণ সবসময়ই ভালো লাগে।

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

শতভাগ সহমত আপনার সাথে। নচিকেতার গানের কথা'র সাহায্য নিয়ে বলছি "গনতন্ত্র, রাষ্ট্রযন্ত্র, দু'চোখ বুজে রয়"

স্যাম এর ছবি

চলুক

পাঠক আতিক রাঢ়ী এর ছবি

ইলিয়াসকে যেহেতু পাওয়া যাচ্ছে না, তাই অনুমান চলবে। কে বা কারা এটা করেছে। কার লাভ কার ক্ষতি।
দেশের প্রসাষন ও বিচার ব্যাবস্থার সার্বিক মানের নীম্নগামিতা নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। এখানে খুন বা গুমের মত অপরাধ প্রায় নিত্য। কলিম বা ছলিম টাইপের লোক হলে ধামাচাপা দিতে কত টাকা লাগবে সেটা মোটামুটি নির্ধারিত। যদি এতে মিডিয়া কাভারেজ থাকে তবে বাজেট কিছুটা বাড়বে। এই ধরনের প্রতিষ্ঠিত ব্যাবস্থায় ঝুঁকিটা নিয়ে ফেলা সহজ। সবশেষ প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাত থাকছেই।

দেখা যায় জন্ম থেকে কেউ যে রোগ নিয়ে আসে তা থেকে পরিত্রান প্রায় অসম্ভব। ৭১ এর ২৫ মার্চের জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। ফলে পরিস্থিতী আমাদেরকে ভারতের সাহায্য নির্ভর করে তোলে। আশ্রয়, অস্ত্র,গোলা-বারুদ সব কিছুর জন্য ভারত নির্ভরতার সুযোগ ভারত নিয়েছে। তাজউদ্দিনের অজ্ঞাতে 'র' এর ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছিল মুজিব বাহিনী। যুদ্ধের গুনগত মানে কোন পরিবর্তনের লক্ষে এই বাহিনীটি গিড়ে উঠেনি বরং যুদ্ধের পরে লিডারশিপ যাতে আওয়ামিলীগের হাতে থেকে সেটা নিশ্চিৎ করাই ছিল লক্ষ।

যুদ্ধে পরাজিতরা আই এস আই এর কাছে খুঁজেছে আশ্রয়। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ছিল মুক্তি বাহিনীর ভিত্তি। বঙ্গবন্ধুর আর্মি বিরাগের ফলে বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর অধিকাংশ আবার আই এস আই এর কোলে চলে যায়। জনৈক মুক্তিযদ্ধা যথার্থই বলেছেন-এটা কোন দেশ নয়, এটা এখন 'র' ও আই এস আই এর রেস্টুরেন্টে পরিনত হয়েছে।

ইলিয়াস আলির আগে থেকেই মোটামুটি ধারাবাহিক ভাবে গুমের ঘটনা গুলো ধটে চলেছে। প্রতিটি ঘটনায় সরকারের প্রতিক্রিয়া এই সন্দেহকে আর ঘনিভূত করেছে যে সরকারের হাত রয়েছে এতে।

মূলত ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সুশীল নজিরের বিনীময়ে খালেদা জিয়ার কাছ থেকে পাওয়া গেছে নিয়মতন্ত্রের প্রতি চুড়ান্ত অনিহা। এবার শেখ হাসিনা যেমন কুকুর তেমন মুগুড় পদ্ধতিতে আগাচ্ছেন। তিনিও একটা চোরা গেট রেখে শেষ পর্যন্ত যেন তেন নির্বাচন দিয়ে হলেও আবার ক্ষমতায় আসতে চাইবেন। তার উপদেস্টা মন্ডলি বুদ্ধিমান তবে জনগনের প্রতি দায়শূন্য। সরকার জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। বিরোধীদলের পারফর্মেন্সের ব্যাপারে অভীজ্ঞ আওয়ামিলীগ জানে লগি-বৈঠা ছাড়া তারা ৪ দলীয় জোট সরকার বিদায় করতে পারত না। তো এই পর্যায়ে জ্বালাও পোড়াও হচ্ছে প্রধান হাতিয়ার। সাধারনত গুন্ডা ইমেজের লোকেদের উপরে আন্দোলনের এই পর্যায়টা নির্ভর করে। সেই হিসাবে ইলিয়াস আলী প্রায়রিটি লিস্টে এসেছে। এতে বাকি গুন্ডারা পালিয়ে যাবে বা নিউট্রল হবে এমন আশা থেকে। আর আছে, গুন্ডদের প্রতি মানুষের সিমীত সহানুভূতি। অনেকেই বলছে ইলিয়াস নিজেও বহু গুম করেছে, ঠিক হয়েছে। মানুষের চিন্তা কাঠামোর এই ধরনকেও বিবেচনায় আনা হয়ে থাকতে পারে।

আর সে যদি লুকিয়ে থাকে স্বেচ্ছায়, তবে সে তার জীবনে সবচেয়ে সিলি মিস্টেক করেছে। ফিরে আসার ব্যপারে তার কোন ইচ্ছাই কাজে আসবে না। তাকে আন্দোলনের অগ্নিতে ঘৃতাহুতি হতে হবে। বিএনপির ইজ্জত ফালুদা হবার হাত থেকে বাঁচাতেই তাকে চিরতরে গুম হয়ে যেতে হবে।

পিলখানা ও তারপরে সেনাকুঞ্জের ঘটনা শেখ হাসিনাকে আর বেশি ‘র’ এর স্মরনাপন্ন করে তুলেছে। আই এস আই আপাতত নিজের ঘর সামলাতেই ব্যাস্ত। সো পুনরায় ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে আওয়ামিলীগ ভোটের উপরে আস্থা রাখার চাইতে এই যাত্রা ‘র’ এর উপরে আস্থা রাখতে চাইবে।

মোসাদের সক্রিয় সহায়তায় ‘র’ এখন অনেক চৌকোষ। তার প্রমান তারা রেখেছে মাওদাবি নেতা কিষেন জির হত্যার মধ্যে দিয়ে।

২১ আগস্টে শেখ হাসিনা হত্যা প্রচেষ্টা হয়েছিল। করেছিল বিএনপি/ তারেক, সেই চেষ্টা তারা আবারও করবে।

আমাদের দেশে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির ভবিষ্য্ত অন্ধকার বা একটা দূর্বল সুতোয় ঝুলে আছে। এই সুতাকে সবল করার মত মেধা বা সদিচ্ছা বর্তমান রাজনীতি বনিকদের নেই।

hridoy  এর ছবি

আজকে সমকাল পত্রিকা প্রধান নিউজ করছে ইলিয়াস আলীর ফিরে আসা নিয়ে। তাতে বলা হয়েছে ইলিয়াসের মুক্তির জন্য দুইটা শর্ত দেয়া হয়েছে যেটা সে এবং তার বউ দুজনেই মানতে অস্বীকার করেছে। রিপোর্টটাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে মনে করতে পারছি না।

ইলিয়াস'কে র্যাব গুম করেছে কিনা জানি না। তবে আমি যেটা নির্ভরযোগ্য সূত্র (সূত্রের নাম উল্লেখ করতে পারছিনা সেজন্য দুঃখিত) থেকে জানি সেটা হল - র্যাব এর মধ্যে একটা স্পেশাল ইউনিট আছে যাদের "ইনডেমনিটি ফর কিলিং" দেয়া হয়েছে। এরা মোখলেছুর রহমানের কথায় চলে না বা র্যাব হাই কমান্ডকে তাদের হিসাব-কিতাব দিয়ে চলতে হয় না। তাদের জবাবদিহিতা সরাসরি পিএম এর কাছে। তাদের স্পেশালিটি হল ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করার মধ্যে তারা নাই, বরং পলিটিক্যাল ব্যাপার দেখাশুনা করা এবং হোমরা-চোমরাদের ডিল করার মত ব্যাপারগুলিতে তাদের এরিয়া অব রেসপনসিবিলিটি সীমাবদ্ধ। এপর্যন্ত তাদের যে ট্র্যাক রেকর্ড, তাতে ইলিয়াস কেসের ভার তাদের কাঁধে চেপেছে ধরে নেয়াটা আমার কাছে সবচেয়ে স্বাভাবিক লেগেছে।

দ্রোহী এর ছবি

গণতন্ত্রের চোখে একজন দুবৃত্ত ইলিয়াস আলীর জীবন কয়েক হাজার খেটে খাওয়া বদর আলীর জীবনের চাইতে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।

ইলিয়াস আলী বেঁচে ফিরে আসুক, পরবর্তি টার্মে মন্ত্রী হোক। বদর আলীরা জ্বলেপুড়ে অঙ্গার হয়ে যাক।

প্রখর-রোদ্দুর এর ছবি

কোর্টের দুই দিকে তাকাই, বামে ডাইনে । তাকাতেই থাকি তাকাতেই থাকি টেনিস কোর্টের থেকে ভালো কিছু তো চলছে না তবে আর করা?

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

গুরুত্বপূর্ণ লেখা।

অনেক কন্সপিরেসি থিওরিই কল্পনা করা যেতে পারে, তবে এখানে সরকারের মোটিভ সবচেয়ে কম। আর সরকার অমুকটা ঘটিয়েছে তমুকটা ঘটিয়েছে, এসব বলতেও আসলে কী বোঝানো হয় পরিষ্কার না। সরকার তো একটা মানুষ না যে এক লক্ষ্যে একটা পরিকল্পনা মাফিক কাজ করে যায়। বিশেষ করে অপকর্মগুলো বেশিরভাগই বিভিন্ন নেতাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঘটে। কোন গোপন মন্ত্রীসভায় 'সরকার' সিদ্ধান্ত নেয় যে অমুক তাণ্ডব ঘটানোর সম‌য় আসছে, এমনটা আমার মনে হয় না। এমনটা বিরোধীদল করবে তেমনটাও মনে হয় না। অধিকাংশ অপকর্ম স্থানীয় পর্যায়তে ঘটে বলেই আমার মনে হ‌য়। এখানে সরকার বিরোধীদলের সম্পর্ক অবনতিতে যাদের লাভ, তাদেরকে জড়িত ভাবা যেতে পারে, তবে সবচেয়ে সম্ভাব্য মনে হচ্ছে ব্যক্তিগত ঘটনা। এমনকি আইনরক্ষাবাহিনীরও কেউ যদি জড়িত থাকে, সেটার সাথে কেন্দ্রীয়ভাবে 'সরকারের' জড়িত থাকার সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়। প্রধানমন্ত্রী যে বলেছেন, গুমের রাজনীতি বিএনপিই চালু করেছেন, কথাটাকে এই আলোকে তর্জমা করা যেতে পারে যে - কোনো কেন্দ্রীয় নির্দেশে এগুলো না ঘটলেও, এগুলো ঘটার কাঠামোটা (র্যাব ও তার ক্ষমতা) বিএনপিই তৈরি করে গেছে। আর র্যাবকে ব্যবহার করতে নিশ্চয়ই কেন্দ্রীয় নেতা হওয়া লাগে না।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

মানুষ মারার 'অস্ত্র' হাতে আছে এইরকম কোনো 'ব্যক্তি' (ক্ষুদ্রাস্ত্রধারী নাগরিক) 'কম্পানি' (জীবনরক্ষাকারী ঔষধ উৎপাদনকারী) 'বাহিনী' (সেনা, পুলিশ, র‌্যাব) রে (সংসদীয়) জবাবদিহি আর (নির্বাহী) নজরদারীর বাইরে রাইখা পৃথিবীর কোত্থাও গণতন্ত্র কায়েম হবে না।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আপনি যে গাণিতিক নিশ্চ‌য়তার সাথে জানেন, কীভাবে না হইলে গণতন্ত্র কায়েম হইবে না, এইটা দেইখা ভালো লাগলো। আপনারই বলা একটা কথা মনে পইড়া গেলো:

যা কিছু তন্ত্র মোতাবেক শুদ্ধ না তা কিছুই অর্থহীন এমন প্রচারে এক দল লোক সকল সমাজেই মজুদ।

নজরদারি একটা বিশেষ তন্ত্রঘেষা শব্দ। এইটার প্রয়োগটা এখানে যতোটা না গণতন্ত্রের জরুরত হিসেবে উপস্থাপিত, তার চাইতে বেশি ঐ বিশেষ তন্ত্রের জরুরত হিসেবেই উপস্থাপিত বইলা বোধ হইতেছে।

সরকার তার 'বাহিনীরে' যতোখুশি নজরদারির মধ্যে রাখতেই পারে। নিজের বাহিনী বইলা কথা। কিন্তু ব্যক্তির উপর প্রযোজ্য গণতন্ত্রের কথা বললে নজরদারির চাইতে বেশি অপরিহার্য হইয়া ধরা দেয় আইনের শাসন তথা বিচার। বাংলাদেশে সংসদীয় জবাবদিহিতা বলেন আর নজরদারি বলেন, এই সবের থেকে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় আছে বিচার। দোষ করার পর ধরা পইড়াও ব্যক্তির, কম্পানির কি বাহিনীর বিচার হইতেছে না। ন্যায় 'বিচার' ছাড়া কি কোত্থাও গণতন্ত্র কায়েম হবে?

নজরদারি বলে যে দোষ করলে বিচার টিচার পরের কথা, দোষ করার পথই আগে আটকাইয়া রাখি। এখন দোষ করার পথ আটকানো বেশি কার্যকর নাকি দোষ করার পর পাই পাই হিসাব কইরা বিচার করা বেশি কার্যকর, এইটা একটা প্রাচীন প্রশ্ন। একেক দেশের মানুষ একেকভাবে ভাবতেছে। কোথাও ভাবতেছে মদ খাইয়া অঘটন ঘটলে পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কোথাও ভাবতেছে মদই খাওয়ার দরকার নাই। কোথাও ভাবতেছে মদ খাইয়া বার থেইকা বাইর হইলে পিছে পিছে নজর রাখা দরকার। সীমাটা কোথায় সেইটা নিয়া প্রশ্ন আছে। আপনি উত্তরটা মনে হয় পাইয়া গেলেন। এতোটাই গেলেন যে যেইটা নিয়া প্রশ্ন নাই, কিন্তু কায়েম হইতেছে না, সেই আইনের শাসন তথা বিচারের কথা বলতে ভুইলা গেলেন। চিন্তিত

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

বিচার প্রসঙ্গে: বিচারের কথা আলাদা কইরা উল্লেখ করা দর্কার ছিল। দ্বিমত নাই। কিন্তু পার্লামেন্টারি সুপ্রিমিসি থাকলে পরে বিচার একটা এক্সটেন্ডেড ফাংশন। তবে, আপনে পার্লামেন্টারি সুপ্রিমিসি চাইলে সেইটা যেমন তন্ত্ররে হাজির করে না চাইলেও ভিন্ন আরেক তন্ত্ররে করে।

মদ প্রসঙ্গে: মারণাস্ত্রধারীর উপ্রে নজরদারী আর সর্বসাধারণের ঘাড়ে মাইক্রোচিপ বসায়া দেয়া এক কথা না, আশা করি সেইটা আমি বুঝাইছি, এমনটা আপনে মনে করেন না।

তন্ত্র প্রসঙ্গে: প্রকৃত তন্ত্র হইল তা যারে তন্ত্র বইলা চিনা যায় না। হয়, আপনে তন্ত্রে আছেন ষোল আনা। অথবা আপনার তন্ত্রের ষোল আনা সাফল্য হইল এই সে নিজেরে আপনার সচেতন বোধের অগম্য কইরা রাখছে।

[তবে আপনি আমার যেই বাক্য স্মরণ করছেন (স্মরণ যে করছেন, এই জন্য কৃতজ্ঞ), তার মূল ভাবনা এইরূপ : ভাষাও যেহেতু তন্ত্র ('structure', 'system' of meaning), অর্থ তৈয়ারীর ভিত্তিও তন্ত্র। শুদ্ধতার মাপকাঠিও সুতরাং তন্ত্র। কিন্তু আমরা সকলে কথায় কথায় পকেট থাইকা মাপকাঠি বাইর করি না। কেউ কেউ করে। তারাই হইতেছে সেই "এক দল লোক"। ]


সাইডটক
কর্লাম মনে হয় খানিকটা।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

সাইডটক কর্লাম মনে হয় খানিকটা।

নাহ্। এইটাই ভালো হইছে।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

কী যে হতে পারে না এই সব সম্ভবের দেশে!

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।