'সামাজিক শুভবোধ' ও আমাদের ঘৃনাচর্চার প্রথম পাঠ

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: শনি, ০৬/১০/২০১২ - ১২:৫৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গত সপ্তাহে কক্সবাজার জেলার রামু’তে বৌদ্ধ সম্প্রদায় যে ন্যাক্কারজনক সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার হয়, তাদের বাড়ীঘর উপাসনালয় জ্বালিয়ে দেয়া হয় এবং এর ধারাবাহিকতায় উখিয়া এবং পটিয়াতে ও একই ঘটনা ঘটে- অনেকেই তাকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলতে চাইলে ও বাস্তবতা কিন্তু তা নয়।
অনেক গনমাধ্যমে এটি ‘সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা’ বলা হলে ও এটি কোন দাঙ্গা ছিলোনা- এটা স্পষ্টতঃ ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের একতরফা সন্ত্রাস। আমি একই সাথে আরেকটা শব্দ ব্যবহার করতে চাই ‘ সামাজিক শুভবোধ’।

স্বীকার করতেই হবে বাঙ্গালী সমাজে এই সামাজিক শুভবোধের ঘাটতি কখনোই ছিলোনা। পারিবারিক মুল্যবোধ, উদার সংস্কৃতি, সূফী-বৈষ্ণবদের দ্বারা ধর্মের প্রচার ও প্রসারের কল্যানে বহু যুগে এই ‘সামাজিক শুভবোধ’ এর জন্ম হয়েছে। যার প্রভাবে এই অঞ্চলে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা মাঝে মধ্যেই মাথাছাড়া দিয়ে উঠলে ও সেটা ভয়ংকর হয়ে উঠেনি তেমন। হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান পাশাপাশি থেকেছে শত শতবছর ধরে, নিজেদের রাগ-ক্ষোভ- আনন্দ-বেদনা ভাগাভাগি করে নিয়েছি।

কিন্তু বৈশ্বিক রাজনীতির প্রভাবে বাংলাদেশ এখন আর কোন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয় , আমাদের সমাজ ও আগের সেই অন্তর্মুখী, আত্বমগ্ন অবস্থায় নেই। এর যেমন ভালো দিক আছে, আছে খারাপ দিক ও। তাই ৯/১১ এ টুইন টাওয়ার গনহত্যা হলে, লন্ডন টিউব ট্রেনে বোমা হামলা হলে কিংবা তিউনিসিয়া-মিশর-লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হলে তা এখন আর ঐসব দেশের নিজস্ব সমস্যা থাকেনা, ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। সূদূর আমেরিকার কোন এক অখ্যাত চিত্র নির্মাতা মোহাম্মদ (সাঃ) কে নিয়ে নিম্নমানের, নিম্ন রুচির চলচ্চিত্র নির্মান করলে পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ক্ষোভ- সহিংসতা-ঘৃণার ঢেউ বাংলাদেশে এসে ও আঘাত করে।

এই বৈশ্বিক অশুভের শক্তি দানবীয় যার মোকাবেলার জন্য আমাদের প্রচলিত ‘সামাজিক শুভবোধ’ যথেষ্ট নয়।
সেই রাতে রামু’র বৌদ্ধজনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ী, উপাসনালয় যখন আক্রান্ত হয়- আক্রমনের প্রথম প্রহরে এর প্রতিরোধে এসে দাঁড়িয়েছিলেন প্রতিবেশী মুসলমান তরুনেরা। আক্রমনাকারীরা যতোক্ষন পরিচিত ছিলো, আশেপাশের চেনা লোকজন ছিলো ততোক্ষন তারা ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছিলেন। কিন্তু যখন আক্রমনের মাত্রা বেড়ে যায়, যখন হাজার হাজার অচেনা আক্রমনকারী এসে হাজির হয় রামু’র বাইরে থেকে যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা ছিলো তখন আর সামাজিক শুভবোধ এই আক্রমন ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি।

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রন ও নির্মুলের জন্য রাষ্ট্রের সর্ব্বোচ্চ পর্যায় থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন জরুরী। পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রই এই জরুরী কাজটা শুরু করলে ও বাংলাদেশ রাষ্ট্র এখনো অন্ধের ভূমিকায়। রামুর সেই ভয়াবহ রাতে আইন-শৃংখলা বাহিনী নিশ্চুপ ছিলো। এটা অস্বাভাবিক নয় কারন আমদের নীতিনির্ধারকরা এই বিষয়ে নিশ্চুপ। সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়েছে, আমাদের ‘সামাজিক শুভবোধ’ দিয়ে এই এই সন্ত্রাস মোকাবেলা করা যাচ্ছেনা- এই সত্য স্বীকার করে কার্যকর কিছু করার সাহসঃ তাদের নেই।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর সামরিক শাসকেরা সংবিধান কাঁটাছেড়া করে এই রাষ্ট্রকে সাম্প্রদায়িক বানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় মুলনীতিতে সাম্প্রদায়িক বোধ অন্তর্ভুক্ত করেছে, সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তিগুলোকে তারা লালন পালন করেছে এবং এই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার শুভ সম্ভাবনার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকেছে বিএনপি-জামাতের জোট সরকার। ২০০১ এর নির্বাচনের পর দক্ষিন বাংলা জুড়ে যে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, ধর্ষনের বিভীষিকা তৈরী করেছিলো এই জোট- বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দেশের প্রতি টানের
কিন্তু এই রাজনৈতিক শক্তিকে প্রতিহত করে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিশ্বাস ও ভরসা ফিরিয়ে আনার জন্য যা দরকার ছিলো, ধর্ম নিরপেক্ষতার শ্লোগানধারী আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতাসীন হয়ে তার কিছুই করেনি। আওয়ামী লীগের ভিতরে তৃনমুল থেকে নীতিনির্ধারনী পর্যায় পর্যন্ত মৌলবাদী শক্তির অনুপ্রবেশ ঘটেছে, রামুর ঘটনায় ও প্রথম দিকে আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের লোকজন জড়িত ছিলো- বিএনপি এবং জামাতের সাথে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সর্ব্বোচ পর্যায় থেকে এই সত্যগুলো স্বীকার করে এর প্রতিকারের ব্যবস্থা না করে বরং ধামাচাপা দেয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীর তার পুলিশ বাহিনীর নীরবতাকে পাশ কাটিয়ে দোষ চাপিয়েছেন উত্তম বড়ুয়া নামের সেই তরুনের উপর যাকে কেউ একটা ইসলাম বিরোধী ছবিতে ট্যাগ করেছিলো এবং এই ছবিকে বাহানা বানিয়ে পরিকল্পিত ভাবে এই ভয়াবহ সন্ত্রাসের সূচনা।

শুধু নিন্দা আর প্রতিবাদ জানিয়ে এসবের কোন সমাধান হবেনা। বিশ্বজুড়ে যে ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো তারই ধারাবাহিকতা। সত্য স্বীকার করে সমস্যাগুলোর মুলে গিয়ে কার্যকর প্রতিবিধান করতে হবে না হলে এই অন্ধকার থেকে আমাদের কারোরই রক্ষা হবেনা। রামুর ঘটনায় শুধু বৌদ্ধ সম্প্রদায় নয়- বাংলাদেশের প্রতিটি শুভবোধ সম্পন্ন মানুষ, আমাদের ‘সামাজিক শুভবোধ’ আক্রান্ত হয়েছে।

আমাদেরকে স্বীকার করে নিতে হবে সামাজিক জীবনে ‘হেইট ক্রাইম’ এর চর্চা করি আমরা তুমুল। বাঙ্গালী মুসলমানরা ‘হেইট ক্রাইম’ এর প্রাথমিক পাঠ নেয় তার পরিবারের কাছ থেকে প্রতিবেশী ধর্মীয় সংখ্যালঘুকে ‘মালাউন’ গালি দিয়ে। সম্ভবতঃ এমন বাঙ্গালী মুসলমান খুঁজে পাওয়া বিরল যিনি জীবনে কখনো এই গালি ব্যবহার করেন নি। আমি বাংলাদেশের আইন কানুন ভালো জানিনা। হয়তো নেই, না থাকলে এইসব ‘হেইট ক্রাইম’ এর বিরুদ্ধে আইন হওয়া উচিত। প্রতিনিয়ত ওয়াজে, মাহফিলে অন্য ধর্মকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ কটাক্ষ করে ঘৃনা ছড়ানো হয়। একজন বাঙ্গালী মুসলমান শিশু থেকে বয়স্প্রাপ্ত হয় অপরকে ঘৃনা করা শিখতে শিখতে।

আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে ধর্মশিক্ষা শেখানো হয় কিন্তু মানবাধিকারের শিক্ষা শেখানো হয়না। অথচ এটি তেমন কঠিন কিচ্ছু না। স্কুলের বাচ্চাদেরকে খুব সহজেই মানবাধিকারের সহজ বিষয়গুলো এমনকি জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার সনদ বোঝানো যায়। তোমার বাড়ীর কাজের মানুষ কে তুমি গালি দিতে পারোনা এটা সহজ পাঠ। একজন আয়েশাকে শেখানো তোমার ক্লাসের অর্চণা তোমার থেকে আলাদা নয়।
ইংল্যন্ডে থাকতে এমনেস্টী ইন্টারন্যাশনাল একটা ভলান্টিয়ার গ্রুপের হয়ে আমরা এই স্কুল প্রোগ্রামটা করতাম।

শেষ কথা এই- 'সামাজিক শুভবোধ' ফ্যাক্টর টা আসলেই মারা যাচ্ছে। রাষ্ট্রকে উদ্যোগ নিয়ে কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মানুষের মুল্যবোধের পুনঃজাগরন না ঘটাতে পারলে ভবিষ্যতে আরো ভয়ানক ঘটনা ঘটতেই থাকবে। এই ভবিষ্যত তেমন সুদূর না, বেশ সন্নিকট।


মন্তব্য

তাপস শর্মা এর ছবি

দুর্দান্ত পর্যবেক্ষণ। বরাবরের মতো একটা নির্মেদ বাস্তবতার বহিঃপ্রকাশ চলুক

তাসনীম এর ছবি

দরকারি লেখা।

শুভবোধের পাশাপাশি দলীয় দৃষ্টিভঙ্গীর উর্ধ্বে উঠে দুষ্টের দমন করাটা প্রয়োজন। নিজের দলের লোকের যেকোনো অপরাধ ধামাচাপা দিলে এবং অন্যায়ের বিচার না করলে সেই সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না।

দুটো অভিয়াস বানান চোখে পড়ল - আত্বমগ্ন >আত্মমগ্ন। এমনেস্টী >অ্যামনেস্টি

ধন্যবাদ।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

সাইফ শহীদ এর ছবি

এমিল,

নিজের দলের লোকের যেকোনো অপরাধ ধামাচাপা দিলে এবং অন্যায়ের বিচার না করলে সেই সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না।

খুবই ন্যায্য কথা।

সাইফ শহীদ

অরফিয়াস এর ছবি

সঠিক পর্যবেক্ষণ। সহমত।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

অতিথি লেখক এর ছবি

অতি বাস্তবসম্মত একটি লেখা। আমাদের শুভবোধ জাগ্রত হোক। লেখার জন্য অজস্র তারকা। ভালো থাকবেন।

অমি_বন্যা

শিশিরকণা এর ছবি

ভবিষ্যত সন্নিকটে না, সেই ভবিষ্যত এই মূহুর্তে উপস্থিত।

@তাস্নীম ভাই- আমাদের মাঝে দ্বিমুখিতা প্রবল, দল তো অনেক বড় কথা। পরিবারের মাঝে আমরা সবখানে দূর্নীতি বলে অভিযোগ করি, আবার সরকারি চাকুরে পাত্রের বাবার গাড়ি বাড়ি কেমন আছে সে খবরে খুশি হই। সিস্টেম করে নিজের সুবিধাটুকু বের করে নেয়াকে আমরা অসততা মনে করি না। নিজেদেরকে সবাই সাধু ভাবছি, কিন্তু আসলে সবাই নিজের আখের গোছাতে ব্যাস্ত, তাহলে আর নেতা নেত্রীদের দোষ ধরে লাভ কি? তারাও একি ধান্দায় আছেন এবং এই দৌড়ে ছল বল কৌশল ইত্যাদি প্রয়োগ করে আমাদের থেকে অনেক এগিয়েই আছেন, এইটা আসলে হিংসা, পিছে পড়ে যাওয়ার রাগ যে আমরা তাদের মত করে দুই নম্বরি করতে পারলাম না। কিন্তু দুই নম্বরি করাই এখন সারভাইভ্যাল স্কিল, যেমন জোম্বি এপোক্যালিপ্সে খুন খারাবি করাই বেচে থাকার উপায়।

এইখানে শুভবোধের কথা বললে আমাদের অবস্থা এখন হকি খেলার মাঠে টেবিল টেনিস ব্যাট নিয়ে খেলতে নামার মত।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

অরফিয়াস এর ছবি

চলুক

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

রাষ্ট্রকে উদ্যোগ নিয়ে কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মানুষের মুল্যবোধের পুনঃজাগরন না ঘটাতে পারলে ভবিষ্যতে আরো ভয়ানক ঘটনা ঘটতেই থাকবে

রাষ্ট্র করবে মানুষের মূল্যবোধের জাগরণ? যে রাষ্ট্রের প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা/নিস্ক্রিয়তা থাকে প্রায় প্রতিটি পাহাড়ি নিপীড়ণে? অবশ্যই মানুষের মাঝে ঘৃণার বীজ আছে। কিন্তু রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক দলগুলো হলো প্রায় বিনে পয়সায় সংখ্যাগুরুর সংগঠিত হবার সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম। আর রাষ্ট্র ও বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তির রয়েছে এই ঘৃণাকে অন্যান্য খাতে ব্যবহারের অজস্র মোটিভেশন। রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে যেখানে জঙ্গিদের লালন পালন ট্রেইনিং চলেছে। সেই রাষ্ট্র কীভাবে মানুষের শুভবোধ জাগাবে বোধগম্য নয়।

হয়তো এর জন্যে

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রন ও নির্মুলের জন্য রাষ্ট্রের সর্ব্বোচ্চ পর্যায় থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন জরুরী

এই অংশে একটু আলোকপাত করতে পারেন।

তবে ধারণা করতে পারি ষোলকোটি মানুষকে মূল্যবোধের আলোয় আলোকিত করা সেই রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধের প্রোগ্রাম কতোটা ব্যাপক আকারের হবে, যার বাস্তবায়ন ও সফলতার সম্ভাবনা প্রশ্নের মুখে।

কিন্তু তার চেয়ে সহজ ও সফল ব্যবস্থাটা কি বলেন তো? এটা নিশ্চিত করা যে প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা ও সেনাবাহিনী যাতে সংখ্যালঘুর উপর আক্রমণে "সহায়ক" ভূমিকা পালন না করে। সারা দেশের মানুষের সামাজিক মূল্যবোধ যদি জাগানোর আশা করা যায়, তার অতি ক্ষুদ্রাংশ - তাদের প্রতিনিধি ও অস্ত্রধারীদের মূল্যবোধ জাগানোর আশা নিশ্চয়ই তাহলে আরো বেশিই করা যায়! আশা করা যায় যে মানুষের ঘৃণাকে বিভিন্ন "লাভজনক" খাতে প্রবাহিত করা হবে না। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে ভিক্টিমকেই দায়ী করবে না রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা। তাদের সামাজিক মূল্যবোধ আগে জাগরিত হোক। সেটা করতে ব্যর্থ রাষ্ট্রকে আরেকটা প্রকাণ্ড আলোকিতকরণ প্রোগ্রাম করতে দিলে সেটা আবার কোনো লাভজনক খাতে প্রপাগাণ্ডা হিসেবে ব্যবহৃত হবে না, সেই দুরাশা আমার নেই।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

জি, রাষ্ট্রই করবে, রাষ্ট্রকে দিয়েই করাতে হবে। কারন আধুনিক কোন মানুষ, মানুষের সমাজের রাষ্ট্রবহির্ভূত হবার সুযোগ আপাততঃ নেই।
মার্টিন লুথার কিং থেকে শুরু করে যে কোন সামাজিক আন্দোলনকেই শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রের মাধ্যমে প্রায়োগিক হতে হয়েছে।

কিন্তু তার চেয়ে সহজ ও সফল ব্যবস্থাটা কি বলেন তো? এটা নিশ্চিত করা যে প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা ও সেনাবাহিনী যাতে সংখ্যালঘুর উপর আক্রমণে "সহায়ক" ভূমিকা পালন না করে।

এটার জন্যই রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের প্রয়োজন।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

কড়িকাঠুরে এর ছবি

সহমত ।

বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকগণ খুব সহজেই এ বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের শেখাতে পারেন । এর জন্য আলাদা ভাবে পাঠ্যবইয়েরও প্রয়োজন হবে না । প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে শিক্ষকগণকে প্রশিক্ষণও দেয়া যেতে পারে । আর

বাড়ির কাজের মানুষ কে তুমি গালি দিতে পারোনা এটা সহজ পাঠ চলুক

তারেক অণু এর ছবি

শুধু নিন্দা আর প্রতিবাদ জানিয়ে এসবের কোন সমাধান হবেনা। সত্য স্বীকার করে সমস্যাগুলোর মুলে গিয়ে কার্যকর প্রতিবিধান করতে হবে না হলে এই অন্ধকার থেকে আমাদের কারোরই রক্ষা হবেনা। চলুক

সাইফ শহীদ এর ছবি

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বাংলাদেশে সৌদি সালাফিদের প্রভাব দিন দিন বেড়ে চলেছে। বর্তমান বিশ্বে শান্তিপূর্ন ইসলামের সব চাইতে বড় শত্রু এরাই। বাংলাদেশের অনেকে কেউ বুঝে, কেউ না বুঝে এবং বাকীরা সৌদি টাকার জন্যে এদের সাথে হাত মেলাচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে।

সাইফ শহীদ

উচ্ছলা এর ছবি

"প্রতিনিয়ত ওয়াজে, মাহফিলে অন্য ধর্মকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ কটাক্ষ করে ঘৃনা ছড়ানো হয়। একজন বাঙ্গালী মুসলমান শিশু থেকে বয়স্প্রাপ্ত হয় অপরকে ঘৃনা করা শিখতে শিখতে।" - একমত ।

চলুক

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

রাষ্ট্রকে উদ্যোগ নিয়ে কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মানুষের মুল্যবোধের পুনঃজাগরন না ঘটাতে পারলে ভবিষ্যতে আরো ভয়ানক ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

হিমু এর ছবি

ফেসবুক দেখলাম ছাগু এবং কাঠবলদেরা একটা নতুন ধোঁয়াশা তৈরির চেষ্টা করছে, সেটা হচ্ছে রামুর ঘটনা সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস নয়, রাজনৈতিক সন্ত্রাস। কিছু সংখ্যক কাষ্ঠুভুদাই এতে হ্যাঁ-হ্যাঁ করে মাথা ঝাঁকাচ্ছে। সাম্প্রদায়িকতাকে রাজনীতিবহির্ভূত কোনো একটা দ্রিঘাংচু হিসেবে প্রমাণের জন্য ব্যস্ত হয়ে গেছে কিছু লোক।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এই কারনেই তারা ছাগু এবং কাঠবলদ। তবে সেই সাথে হাড়হারামাজাদা সেয়ানা সারমেয়। ইচ্ছে করেই এটাকে আড়াল করতে চায়।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

স্যাম এর ছবি

চলুক চলুক

পথিক পরাণ এর ছবি

মহামতি বুদ্ধের অহিংস মুর্তির সামনে স্তূপীকৃত পোড়া টিন আর কাঠের স্তুপ দেখে আমরা শত মানুষ হয়ত হাহাকার করেছি। আমাদের সম্মিলিত দীর্ঘশ্বাস রামুর সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পকে এতটুকু নিস্তেজ করতে পারেনি। বৌদ্ধমন্দিরের ভগ্নাবশেষ দেখে পৃথিবীবাসী জেনেছে- বাংলাদেশে আজ সাম্প্রদায়িকতার শিকড় কতটা গভীর।

আসলে ভেতরে ভেতরে আমাদের এই ক্ষতটি বিকশিত হয়েছে দীর্ঘকাল ধরে। যেদিন খুসবন্ত সিং ট্রেন টু পাকিস্তান লিখেছিলেন, অথবা তারও আগের কোন সময় থেকে। কেবল ধর্মীয় নয়, অন্য অনেক ঘটনা দুর্ঘটনা থেকে অনুমান করা যায় সামাজিক শুভবোধটি নির্বাসিত হতে চলেছে আমাদের বিপুল স্বার্থপরতা আর কূপমণ্ডূকতার যূপকাষ্ঠে বলি হয়ে।

নোয়াখালীতে পুলিশ যেদিন একজন কিশোরকে ডাকাত পরিচয়ে মেরে ফেলার জন্য জনতার
হাতে তুলে দিয়েছিল, কিংবা সাভারে যেদিন ছয়জন যুবককে আমাদের সচেতন নাগরিকগণ গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলে নিজেদের বীর পুঙ্গব ভেবেছিল, এইসব কিছুতেই আমি এক ভয়ংকর অসহিষ্ণু আর অবিবেচক জনগোষ্ঠীর পরিচয় পেয়ে আঁতকে উঠি। নিজেদের বিবেক বুদ্ধি দিয়ে পরিস্থিতি যাচাই করার ক্ষমতা আমাদের লোপ পাচ্ছে দিনদিন। এক লুটেরা অর্থনীতির অদৃশ্য হাতছানিতে আমরা সকল শুভবুদ্ধিকে জলাঞ্জলি দিচ্ছি নির্দ্বিধায়।

রু এর ছবি

সহমত।

মালাউন বলে গালি দেয়নি, এরকম বাঙালি মনে হয় বিরল না। এরকম অনেককেই পাওয়া যাবে।

সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি

আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে ধর্মশিক্ষা শেখানো হয় কিন্তু মানবাধিকারের শিক্ষা শেখানো হয়না। অথচ এটি তেমন কঠিন কিচ্ছু না। স্কুলের বাচ্চাদেরকে খুব সহজেই মানবাধিকারের সহজ বিষয়গুলো এমনকি জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার সনদ বোঝানো যায়। তোমার বাড়ীর কাজের মানুষ কে তুমি গালি দিতে পারোনা এটা সহজ পাঠ। একজন আয়েশাকে শেখানো তোমার ক্লাসের অর্চণা তোমার থেকে আলাদা নয়।

চলুক

সাবেকা  এর ছবি

চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।