পাঠ প্রতিক্রিয়া: সংবাদমাধ্যমকে কেন লোক বিশ্বাস করে না

হাসিব এর ছবি
লিখেছেন হাসিব (তারিখ: সোম, ২৮/১০/২০১৩ - ৪:০৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

২৮শে অক্টোবর, ২০১৩ তারিখে কালের কণ্ঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ সংবাদপত্রকে কেন মানুষে বিশ্বাস করে না শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। এই লেখাটি সেটার প্রতিক্রিয়া।

আবু আহমেদের শিরোনামে যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা সত্য। তবে বিশ্বাস না করলেও মানুষ সংবাদপত্র মিডিয়া ইত্যাদির বানানো সোশ্যাল কনস্ট্রাক্ট অনুযায়ী চিন্তা ভাবনা করে। এই কারণে মানুষ মুখে সংবাদপত্রের কথা বিশ্বাস করে না বললেও সেটাতে কিছু যায় আসে না।

আবু আহমেদ মানুষ সংবাদপত্র কেন বিশ্বাস করে না সেটার কারণ হিসেবে বলেছেন,

সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলগুলো তাদের নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। এসব সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলে যেসব সংবাদ ছাপা ও প্রচারিত হয়, সেগুলোয় যারা ওই সব সংবাদমাধ্যমে কাজ করে, তাদের মতামতই অনেকটা প্রতিফলিত হয়। পেশাদার সাংবাদিকতা বলতে যা বোঝায় বাংলাদেশ থেকে এই মুহূর্তে তা বিদায় নিয়েছে। পেশাদার সাংবাদিকতা বলতে কী বোঝায়? ১০০ পার্সেন্ট সততা ও নিরপেক্ষতা। কিন্তু আজকে দৈনিক কাগজগুলো যেসব সংবাদ দিচ্ছে, সেগুলো পক্ষপাতিত্বে ভর্তি।

আবু আহমেদ একজন অধ্যাপক। অর্থাৎ উনার প্রতিষ্ঠিত গবেষণা অভিজ্ঞতা আছে। উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি পড়ান ও সেটার ওপরে গবেষণা করেন। অর্থনীতি সামাজিক বিজ্ঞানের একটা অংশ এবং এই বিষয়ে গবেষণা করা একজনের জানা থাকা উচিৎ যে নিরপেক্ষতা বা ইংরেজিতে objectivityর কোন স্থান সামাজিক বিজ্ঞানে এখন নেই। এটা বহু আগে ছিলো। সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণার মূলনীতিতে যারা এই নিরপেক্ষ বা নৈর্ব্যক্তিকতা বিশ্বাস করতো তারা পজিটিভিস্ট নামে পরিচিত ছিলো। পজিটিভিস্টদের দর্শন বহু আগেই পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। কোন বিষয়ে নৈর্ব্যক্তিক অবস্থান নেয়া সম্ভব না এটা এখন সবাই মানে। কোন বিষয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান আসলে ভ্রান্ত ধারণার নাম। সেটা পত্রিকাই হোক বা অন্য কোন মিডিয়াই হোক।

আর পেশাদার শব্দটা আবু আহমেদের মতো অনেককে প্রায়ই বলতে শোনা যায়। পেশাদার মানে কী? আবু আহমেদ এখানেও বলছেন একটা ১০০% সততা ও নিরপেক্ষতার কথা যেটা আসলে কখনোই সম্ভব না।

আবু আহমেদ "দেশের অধিকাংশ লোকের" রেফারেন্স (এই রেফারেন্সের কোথাকার?) অনুযোগ করছেন,

এখন দেশের অধিকাংশ লোক মনে করে যেহেতু বর্তমান সরকার এসব চ্যানেলকে তাদের রাজনৈতিক নেতাদের সুবিধা পাইয়ে দিতে অনুমোদন দিয়েছে, সে জন্য এসব চ্যানেলে সংবাদ ও টক শোর নামে যা কিছু প্রচার হয়, তার অর্ধেকই মিথ্যা। এবং এসব চ্যানেল গণমানুষের অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে না দাঁড়িয়ে বিভিন্ন কৌশলে সরকারের পক্ষে নিউজ-ভিউজ দিতে বেশি ব্যস্ত।

অভিযোগ গুরুতর। আবু আহমেদ নিশ্চয়ই এই খবর ও টকশোয়ের কন্টেন্ট এ্যানালাইসিস করেছেন বলে এসব কথা বলছেন। আবু আহমেদের উচিৎ এইসব গবেষণা জরিপ ও ফলাফল জনসমক্ষে প্রকাশ করা। প্রকাশিত খবরগুলোর আদ্ধেকটাই যদি মিথ্যা হয় তাহলে সেটা দুশ্চিন্তার কথা বটে!

আবু আহমেদ আসলে কী বলতে চাইছেন এবং কেন তার কাছে প্রকাশিত খবরের আদ্ধেকটাই মিথ্যা মনে হয় সেটা পরিস্কার হয় তার প্রবন্ধটিতে আদিলুর প্রসঙ্গটা পড়ে। তিনি লিখেছেন,

মানবাধিকার নেতা আদিলুর রহমানকে সরকার জেলে নিয়ে গেল। তিনি নাকি পুলিশ-র‌্যাব কর্তৃক হেফাজতের সমাবেশে মানুষ হত্যার ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আগের কথা স্মরণ করুন। আগে কোনো তথ্য মিথ্যা পেলে সরকার প্রেসনোট দিয়ে সে তথ্যের ভুল ধরিয়ে দিত। কোনো মানবাধিকারকর্মীকে গ্রেপ্তার করে জেলে নিত না। সে ক্ষেত্রে জনগণও বুঝত সরকারের অবস্থা। এবং অন্য যারা কল্পিত মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে, তাদের কথাও বুঝত। কিন্তু এবার হলো তার উল্টো। মানবাধিকারকর্মী, যে অন্যের মানবাধিকারের জন্য কাজ করে, তাঁকেই জেলে নেওয়া হলো। আর আমাদের সংবাদমাধ্যমগুলো এ ক্ষেত্রেও সরকার যা বলেছে, সেই সঙ্গেই পক্ষপাতিত্ব করছে। তাই প্রতিবাদের ক্ষেত্রটাই যদি কেড়ে নেওয়া হয়, তাহলে সেই দেশের কথিত গণতন্ত্রকে উৎসব করে স্মারক বক্তৃতা দিয়ে বিদায় করে দিলেই ভালো।

মিডিয়ার মিথ্যা কথা নিয়ে উচ্চকিত আবু আহমেদ সাহেব হেফাজত খেদানো অভিযান নিয়ে মানবাধিকারবারি আদিলুর রহমানের মিথ্যাচারের বিষয়টা এড়িয়ে গেলেন। উপরন্তু আদিলুরের কাজকে "অন্যের মানবাধিকারের জন্য কাজ" হিসেবে উল্লেখ করলেন। এটা অনুমান করা কঠিন না যে উনি আসলে আদিলুরকেই সত্যবাদি ভাবেন এবং নিহতের সংখ্যা নিয়ে মিডিয়া যা বলছে সেগুলোই মিথ্যা।

আবু আহমেদ লেখা শেষ করেছেন মিডিয়ায় হিডেন বা লুক্কায়িত বাণিজ্যের কথা বলে।

দৃশ্যত এসব সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেল ব্যবসায়িক মুনাফা বলতে যা বোঝায়, তা না করলেও তাদের অনেক হিডেন বা লুক্কায়িত বা অপ্রকাশিত বাণিজ্য আছে। শুনেছি স্কুলের শিক্ষক হতে প্রার্থীকে উল্টো স্কুলকে টাকা দিতে হয়। জানি না এসব সংবাদমাধ্যমের কর্মী হওয়ার ক্ষেত্রে এদের টক শোগুলোতে ঘুষ নিতে কিংবা এদের প্রচারিত নাটক বা শোগুলোতে অংশ নিতে গেলে, উপস্থাপক-উপস্থাপিকা হতে গেলে উল্টো টিভি চ্যানেলগুলোকে অর্থ দিতে হয় কি না। কারণ যারা টিভি চ্যানেলে সাফল্য দেখাতে পারে, তাদের নাকি অন্যত্র বাজারমূল্য বেড়ে যায়।

আবু আহমেদ এখানে যেটা বলেননি সেটা হলো মিডিয়া নিয়ে তার এতো বিস্তর ঘ্যানর ঘ্যানরের (সাথে মানবাধিকারবারি আদিলুর বোনাস) পিছনে তার নিজের হিডেন বা লুক্কায়িত বাণিজ্যটা কী? সাংবাদিক ও টকশোয়ের লোকেরা নাহয় খারাপ বুঝলাম। কিন্তু কলামলেখকেরা কী ১০০% সৎ ও নিরপেক্ষ?

সূত্র:
মূল লেখার লিংক
ইমেজ লিংক


মন্তব্য

ধুসর গোধূলি এর ছবি

ভদ্রলোকের পরামর্শমতো 'আগের কথা স্মরণ' করতে গিয়ে তো আমি বেশ ঝামেলায় পড়ে গেলাম! আগে এক দেশের রাজা আরেকদেশের রাজাকে পায়রার ঠ্যাঙে বেঁধে পত্র পাঠাতো। এটাই ছিলো দস্তুর, হান্ড্রেড পার্সেন্ট হালাল পদ্ধতি। এখন কেনো বাংলাদেশের রাজা-উজিররা সেটা করেন না! আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম?

হাসিব এর ছবি

আমাদের রাজমাতা খালেদা জিয়ার কথাই আসলে সত্যি - দেশে পাগল আর শিশু বাদে আর কেউ নিরপেক্ষ না। উনি এখন উনার পুরনো বক্তব্য আপডেট করে ১০০% হালাল শব্দটা যোগ করে দিতে পারেন।

হিমু এর ছবি

আবু আহমেদের চিন্তার পথটা এরকম। পাবলিক সংবাদপত্রে বিশ্বাস করে না, কিন্তু আদুল শুভ্রে বিশ্বাস করে। সংবাদপত্রের সততা ও নিরপেক্ষতা প্রশ্নের সম্মুখীন, কিন্তু আদুল শুভ্রের সততা ও নিরপেক্ষতা (আলবদর সরকারের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হওয়ার পরও) নিয়ে ওনার কোনো প্রশ্ন নাই। সংবাদপত্র নানা হিডেন বাণিজ্যে লিপ্ত, কিন্তু আদুল শুভ্র হিডেন বাণিজ্য থেকে একেবারেই মুক্ত।

খালেদা জিয়া যেসব বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন, ইফতার খান, তাদের তালিকায় সব সময় আবু আহমেদের নামটা দেখি। উনি সততা ও নিরপেক্ষতায় ১০০তে কত পারসেন্ট?

হাসিব এর ছবি

উনি এইসব কলাম লিখে, কনসালটেন্সি করে কতো হিডেন বাণিজ্য করেন সেটার হিসেব নেয়া দরকার। সম্ভবত উনি নেক্সট টার্মে সাইফুর রহমানের স্থলাভিষিক্ত হবার স্বপ্ন দেখতেছেন।

Emran  এর ছবি

ঢাবি-র শিক্ষক রাজনীতিতে আবু আহমেদ (বিএনপি-জামাতপন্থী) সাদা দল করতেন বলেই জানতাম। সুতরাং তাঁর এই লেখা পরে অবাক হইনি। ল্যাঞ্জা লুকানো বড়ই কঠিন কাজ কিনা....

হাসিব এর ছবি

উনি ল্যাঞ্জা লুকানোর চেষ্টাই করেন নাই। সৎ নিরপেক্ষ এইসব ভাঁড়ামোপূর্ণ সিজনাল কথার ফাক দিয়ে মানবাধিকারবারি আদিলুরের মিথ্যার সাফাই গেয়েছেন রাখঢাক না করেই।

অতিথি লেখক এর ছবি

রাজাকারকে রাজাকার বলে গালি দিলে কি ১০০% সততা থাকেনা? ১০০% সৎ আর আর নিরপেক্ষ হওয়ার জন্যে রাজাকারকে গালাগালি করার পাশাপাশি বলতে হবে এই দেশে সবাই খারাপ? গুজব ছড়ানো কাউকে যদি গ্রেফতার করা হয় তাহলে কি ১০০% সততা থাকে না? সেই মহান টকমারনিদের মতোই তিনিও অনেকগুলো জ্ঞান কপচালেন। বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল সমান এই মহান নিরপেক্ষ বাণী প্রচার করে যারা নিজেকে প্রগতিশীল, দেশপ্রেমিকের মুখোশ পড়ে, তারা হলো সেই সুকৌশলি যারা আপতকালীন সত্যকে আর অজস্র মিথ্যের সাথে একপাত্রে মিশিয়ে গুবলেট বানিয়ে জনগনকে ধোঁকা দেয়। সব দলকে সমান খারাপ বলে যারা বাহবা কুড়ায়, তারা আসলে প্রকা্শ্য কিংবা গোঁপনে জামাতের দালালি করে। তাদের উদ্দেশ্য হলো সবাইকে খারাপ বলে জামাতের খারাপকে বৈধতা দেওয়া। ভাবখানা এমন যে সবাইতো খারাপ সেখানে জামাত খারাপ হলে আর দোষ কি?

মাসুদ সজীব

হাসিব এর ছবি

হ, এই কারণে মতিঝিলে "গণহত্যা" হয়। যাতে করে বলা যায় এরাও গণহত্যা করে ওরাও গণহত্যা করে, অতএব দুই পক্ষ আসলে একই।

অতিথি লেখক এর ছবি

হুম সেটাই। এখন হরতালে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে দুই-চারজন মারা গেলেও নাকি সেটা ৭১ এর বর্বতাকে হার মানায়। কি অসাধারন দৃষ্টিভংঙ্গি আর কি তাদের ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান। শুধু তাদেরকে বলতে দেখলেই বিষয়টা অতোটা খারাপ লাগতো না। চুশিলের লেবাসধারীরা যখন টকশো গুলোতে ও এই একই বাণী ভিন্ন সুরে আওড়ায় তখন বুঝতে পারি ওদের শিকড় কত গভীর পর্যন্ত পৌছে গেছে। নৈতিকতা আদর্শ সবকিছুকে বিএমপি জামাত অর্থে নিচে পিষ্ট করে ফেলেছে, এটাই তাদের সবচেয়ে বড় সফলতা। সেই সফলতার পথ ধরেই আবু আহমেদ পুরোনো কৌশলে আদিলুর রহমানের গুনগান গাইলেন (চোর কে চোর না বলাই গুনগান গাওয়া আমার কাছে)।

মাসুদ সজীব

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

হাস্যকর। সাংবাদিক সংবাদের ফাঁকে ফাঁকে মিথ্যা গুঁজে দেয় এই ধুয়া তুললেন ঠিকই, আবার "মানবাধিকার নেতা" আদিলুর রহমানের কুকর্মের কথা বেমালুম চেপে গিয়ে নিজের লেখার মাঝে তার প্রসঙ্গ ঢুকিয়ে দিতেও দ্বিধা করলেন না প্রফেসর সাহেব। একই বলে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড!

হাসিব এর ছবি

কথা হলো উনার পয়েন্ট অর্থাৎ সাংবাদিকেরা আসলেই হিডেন বাণিজ্যের সুবিধাভোগী কিনা সেটা অবশ্যই আলোচনার জন্য একটা ভ্যালিড পয়েন্ট। কিন্তু সাথে আদিলুর, সৎ, নিরপেক্ষতা ইত্যাদি দেখলে বিষয়টা আর সৎ নিরপেক্ষ থাকে না। মিথ্যার সাথে নিরপেক্ষতার সুযোগ নাই। এইটা আবু আহমেদ বুঝতে পারেন নাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

সাংবাদিকেরা আসলেই হিডেন বাণিজ্যের সুবিধাভোগী কিনা সেটা অবশ্যই আলোচনার জন্য একটা ভ্যালিড পয়েন্ট। কিন্তু সাথে আদিলুর, সৎ, নিরপেক্ষতা ইত্যাদি দেখলে বিষয়টা আর সৎ নিরপেক্ষ থাকে না। মিথ্যার সাথে নিরপেক্ষতার সুযোগ নাই।

সহমত চলুক

মাসুদ সজীব

রাহী এর ছবি

মিথ্যার সাথে নিরপেক্ষতার সুযোগ নাই

চলুক

এক লহমা এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

নিরপেক্ষতা কী? কেউ কোন অপরাধ করেছে বলে জানলেও সেটা বলা যাবে না নিরপেক্ষতার ধুয়ো তুলে? কারণ এতে দোষীর বিরুদ্ধপক্ষ নেয়া হলো? আজব!!

____________________________

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আফসোসের ব্যাপারটা হচ্ছে এই প্রতিক্রিয়াটি সম্ভবত অধ্যাপক আবু আহমেদের কাছ পর্যন্ত পৌঁছাবে না। আবু আহমেদদের কথায় যারা নাচেন তাদের কাছেও পৌঁছাবে না। অনলাইন মিডিয়ায় নাঙ্গা করে দেয়া অনেক হোমরা-চোমরা এখনো টক শো, কলাম চালিয়ে যেতে পারছে কারণ, সাধারণ মানুষের কাছে তাদের আসল চেহারাটা এখনো প্রকাশিত হয়নি। আমি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের অনেক তরুণ রাজনৈতিক কর্মীদেরকে দেখেছি আসিফ নজরুল, পিয়াস করিম, আবুল মকসুদ, ফরহাদ মাজহার সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করেন। এটা সম্ভব হয়েছে অনলাইন মিডিয়ার প্রসার না ঘটায়, এবং রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মীদেরকে যথাযথ প্রশিক্ষণ না দেয়ায়।

তবে হতাশ হবার কিছু নেই। অনলাইনের অব্যাহত সংগ্রাম টেকনোলজি'র বিকাশের স্বাভাবিক নিয়মে একদিন প্রধান ভূমিকায় চলে আসবে। যুদ্ধ জারী থাকুক।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হাসিব এর ছবি

প্রতিক্রিয়া পৌঁছালেও উনি গুরুত্ব দেবেন বলে মনে হয় না। উনার আর্গুমেন্টে ১০০% নিরপেক্ষতার কথা আছে যেটা এ্যাকাডেমিকালি উনি ডিফেন্ড করতে পারবেন না। এইসব ক্ষেত্রে সমালোচক কে, ব্লগে লেখার দাম কী ইত্যাদির ধুয়ো তুলে উনি পুরো ব্যাপারটা ইগনোর করবেন বলেই আমরা ধারণা।

আর ব্লগের লেখার আউটরিচ নিয়ে হতাশ হবার কিছু নেই। আমরা যখন ২০০৬-০৭ সালে ব্লগ লেখা শুরু করি তখন মানুষ জানতোই না ব্লগ কী বস্তু। এখন এটা এরকম অবস্থায় নেই। ইয়াঙ জেনারেশন ব্লগ পড়ে। নিজে খুঁজে না হলেও ফেইসবুক, মেইললিস্ট ইত্যাদির মাধ্যমে লেখা পৌঁছায়। এটা আরো বাড়বে। আমাদের শুধু দেখতে হবে ব্লগিংটা যেন কর্পোরেট পুঁজির স্ট্যাটাস কো না হয়ে দাঁড়ায়।

মন মাঝি এর ছবি

অনেক ক্ষেত্রে পৌঁছায় বইকি। তবে ঐ যে - অনলাইন মিডিয়ার প্রতিযোগিতামূলক প্রসার না ঘটায় টকমারানি বুদ্ধিজীবীরা ব্লগোস্ফেয়ারের সমালোচনা নীরবে উপেক্ষা করে পার পেয়ে যান। কোন কোন সময় টকশোগুলিতে একতরফা কটুকাটব্যও করেন কেউ কেউ, সাথে সাথে বা আদৌ পালটা জবাব এমনকি ডিফেন্স শোনারও ভয় নেই। উপরন্তু এইসব টকশোগুলি আসলেই চ্যানেলমালিক বা প্রযোজকদের পছন্দমত বা নিজস্ব পলিসিমাফিক লোক দিয়ে সাজানো হয় বলে মনে হয় এবং দর্শকের পার্টিসিপেশনের বা সরাসরি ফিডব্যাকের / ইন্টারেকশনের কোন সুযোগ থাকে না। এমনকি লাইভ ফোন-ইন শো হলেও একেবারে ম্যান্দামারা 'প্রশ্ন' ছাড়া কোন সমালোচনা বা ভিগোরাস দ্বিমত বিন্দুমাত্র এন্টারটেইন করতে আমি দেখিনি। সেই সৎসাহস এদের নেই। অনেক সময় দেখেছি অত্যন্ত রূঢ়ভাবে ঝাড়ি মেরে লাইন কেটে দিতে। এদের হাবভাব দেখে মনে হয় দেশের লোক সব গরুছাগল, তারা আর কি বলবে - উনারা একেকজন দেবতা-ভগবান-টাইটান, স্বর্গ - তুর পর্বত বা মাউন্ট অলিম্পাসের উপর থেকে উনারা একতরফা বাণী ঝাড়বেন আর বাকি সব গরুছাগলরূপী জনগনের সেটাই নির্বিবাদে বিনাবাক্যব্যায়ে গলধকরণ করা একমাত্র নিয়তি। এধরণের ইম্পিউনিটির কারনেই আসিফ নজ্রুলের মত লোক একটা জাতীয় গণমাধ্যমে টিভি-টকশোতে বসে বর্তমানে দেশের একটা বড় জনগোষ্ঠী অর্থাৎ ব্লগ-লেখকদের সম্পর্কে উত্তেজিত ভাষায় চিৎকার করে বলতে পারে - এরা লেখাপড়া করে না, মূর্খ, বেকুবের বেকুব গাছ-বেকুব! কেন? কিভাবে বুঝলেন উনি এটা? না, কোন এক ব্যক্তি বা মন্তব্যকারী নাকি উনার কয়েকটা লেখা নাকি পড়ে নাই। এজন্য! এজন্য বেশির ভাগ ব্লগারই "বেকুবের বেকুব গাছ-বেকুব" । যেন আসিফ নজ্রুলের দুয়েকটা লেখা না পড়লেই আপনি একজন গাছ-বেকুব হওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তি।

সুতরাং নিজের বিষয়ে হলে অন্তত ব্লগের লেখা মনে হয় ঘুরে-ফিরে হলেও কমবেশি এদের কাছে পৌঁছায়। কিন্তু আসল আফসোসের বিষয় হচ্ছে, এদের যেমন নিজেদের যে কোন বক্তব্য, মন্তব্য, প্রতিক্রিয়া, এমনকি গালাগাল পর্যন্ত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রশ্রয়ে সারাদেশের মানুষের কাছে একতরফাভাবে পৌঁছিয়ে দেয়ার সুযোগ বা মনোপলি আছে, প্রোপাগাণ্ডা বা ক্যাম্পেইন চালানোর সুযোগ আছে, মিথ্যা বা ভুল তথ্য-অপব্যাখ্যা দিয়ে বা অপপ্রচার করে বিশাল দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ আছে, শুধুমাত্র অনলাইন মিডিয়াতে এক্টিভ কারও এর ধারেকাছেও সেরকম কোন সুযোগ / আউটরিচ নেই, এমনকি কোন অভিযোগ কাউন্টার করারও কোন সুযোগ নেই ঐ একই বা সমগোত্রীয় কোন ফোরামে। এই সুযোগ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এইসব টকমারানিদের একতরফা ঠকাঠকি চলতেই থাকবে!

****************************************

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আপনার প্রতিক্রিয়ার শেষ বাক্যটাই মূলকথা। কাগুজে কলামিস্টদের 'বেশিরভাগ' এরকমই। রুটি রোজগারের জন্য কতকিছু করতে হয়, এর মধ্যে একটা হলো কলাম লেখা - সময় কই যে সূত্র প্রমাণ দিয়ে কথা বলবে?
আর কাগুজে লেখার সুবিধাতো ওটাই, কোনো জবাবদিহিতা নেই।

হাসিব এর ছবি

কাগুজেরা সমালোচনা নিলেও সেটা উনাদের পদ্ধতিতেই নিতে ভালোবাসেন। উনারা ঠিক করে দেন কী বলা যাবে কী বলা যাবে না।

কড়িকাঠুরে এর ছবি

চলুক

আবু আহমেদ যে ১০০% নিরপেক্ষ তার সার্টিফিকেট নিশ্চয়ই মাহ্মুদুরের কাছে আছে।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

টিভি টক শো তে এই বুদ্ধিজীবির বক্তৃতা দুএকবার শুনেছি, তখনই বুঝে গিয়েছি এটা কি মাল। পত্রিকায় তার নিবন্ধ পড়ে নষ্ট করার মতো হাতে অঢেল সময় নাই।

হাসিব এর ছবি

বিষয় হইলো এইগুলো নিয়ে প্রশ্ন জোর গলায় না তুললে এরাই দিনের পর দিন রাজত্ব করে যাবে।

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

মূল লেখাটা পড়লাম। কোন রেফারেন্স নেই, কেবল গোলগোল কথায় ভর্তি

এখন সংবাদমাধ্যম যেসব নিউজ অ্যান্ড ভিউজ দিচ্ছে, এগুলোকে মানুষ সামান্যই বিশ্বাস করে

নিরপেক্ষভাবে এবং সবাইকে নিয়ে দেশ শাসন না করার ফল যে কী হতে পারে, সেটা বর্তমান সরকার ভালো করে বুঝত, যদি একটা নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থানটা যাচাই করে নিত।

আমি অর্থনীতির লোক। সেই হিসেবে বলতে পারি, এতগুলো সংবাদমাধ্যম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চলার কথা নয়।

আর সস্তা ব্যবসা কোনটা আছে, সেটা অনেকেই এখন খুঁজে বের করছে। সামনে যে সরকার আসবে, তারাও ব্যাংক ও টিভি চ্যানেলের ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে অনেক উদারভাবে অনুমোদন দেবে।

হাসিব এর ছবি

উনি ঠারেঠুরে অনেক কিছুই বলতে চান। কিন্তু বলার সময় "অনেকে", "মানুষ" ইত্যাদির ঘাড়ে চাপান।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আলু আর কালু দুই খানে কলাম লেখাকে যদি নিরপেক্ষতার মানদণ্ড ধরা হয় আবু আহমেদ একজন নিরপেক্ষ(!) ব্যক্তি। তবে জনাব আবু আহমেদ নিরপেক্ষ কলাম লিখতে গিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে ডানদিকে হেলে পড়লেন আদিলুরকে নিয়ে।

সংবাদ মাধ্যমের দৈন্যতা নিয়ে প্রচুর লেখা যায়। তিনি সেদিকে না গিয়ে শুধু নিরপেক্ষতার দিকে গেলেন সেটাই সবচেয়ে সন্দেহজনক। নিরপেক্ষতার চেয়েও যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়ে গেছে সেটা তাঁর নজরে পড়েনি বোধহয়।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

দুঃখের বিষয় হইল ফরহাদ মাজাহার এর মত 'খাপো' রা টক শো তে আসে এবং এসে গণমাধ্যমের উপর বোমা হামলা কে জায়েজ ঘোষণা করে!!! কারণ হিসেবে দেখায় সংবাদ মাধ্যম নিরপেক্ষ না এবং দেশের এই পরিস্থিতির জন্য সংবাদ মাধ্যম দায়ী। তার কারণ হচ্ছে সংবাদ মাধ্যম কেন মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবী করে না,দীগন্ত,ইসলামী টিভির বন্ধের প্রতিবাদ করে না!!!?? কিন্তু উনারা কখনো বলেন না এমনকি উপস্থাপকরাও প্রতিবাদ করেন না যে মাহমুদুর রহমান এর মত 'খাপো',ইসলামী টিভি,দীগন্ত টিভি মিথ্যা ও ফালতু খবর প্রচার করেই যে আসলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
তবুও ঘুরে ফিরে এইসব 'মাচো' দেরই টক শো তে কেন নিয়ে আসেন দাওয়াত করে তাও তো বুঝি না!!!
উনাদের কাছে দেশের নিরপেক্ষ গণমাধ্যম বলতে শুধু দীগন্ত,ইসলামী টিভি,আমার দেশ আর আলু পত্রিকা!!!!!!
তাদের মতে আদুল মিয়া বানোয়াট ৬১ লাশের গল্প ছেপে হাজার টা সত্যি লাশ পড়ার ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়ার অপরাধে তাকে সরকার গ্রেপতার করলে সেটা মানবাধিকার লংঘন কিন্তু হাজারটা সত্যি লাশের ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েও আদুল মিয়া সুফী ,নিষ্পাপ,মাছুম এবং নিরপেক্ষ!!!!
ভাঁড়ামির একটা সীমা থাকা উচিৎ!!!

*************
সুবোধ অবোধ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাদের সুশীল বুদ্ধিজীবী সমাজের কথা শুনলে হাসব না কাঁদবো তাই চিন্তার বিষয় চিন্তিত । ফরহাদ, আসিফ, আবু কতিপয় ১০০% হালাল, নিরপেক্ষ ও সৎ বুদ্ধিজীবী এদের নিয়ে কিছু বলা জায়েজ না

ইসরাত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।