স্মৃতি ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে

হাসিব এর ছবি
লিখেছেন হাসিব (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৬/০৩/২০১৪ - ৩:১৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলাদেশের প্রধান দৈনিক প্রথম আলো (বা পড়ুন পেহলী রোশনী) বদলে যাও, বদলে যাও বদলে দাও শ্লোগান দেশের অন্যান্য কর্পোরেট মিডিয়া হাউসের ঘোষিত শ্লোগানগুলোর মতো না। এরা রীতিমতো হাতেকলমে এসবের নজির আমাদের সাথে হাজির করে। এদের বেতনভুকেরা রিকনসিলিয়েশন তত্ত্ব খাড়া করে মেহেরজান সিনেমার পক্ষে জান লড়ে দেয়, জামাত বান্ধব বুদ্ধিজীবি পুল দিয়ে জামাতি এ্যাজেন্ডা পুশ করে, পেট্রোল বোমার জন্য দুই দলের ঘাড়ে সমান দোষ চাপিয়ে দেয়, বা বিনোদন পাতায় বিদ্যা বালানের পর্দাপুষিদার ব্যবস্থা করে দেয়া - এই সবই এই বদলে যাও, বদলে দাও শ্লোগানটা যে নিছক শ্লোগানই নয় সেটার প্রমান রাখে। সম্প্রতি খারাপ কাজে ছাত্রলীগ/আওয়ামী লীগ বাদে বাকি সবাইকে দুর্বৃত্ত নাম দেয়া এদের আরেকটা প্রাক্টিস।

গতকাল এই বদলে যাবার নতুন প্রমান রেখেছে প্রথম আলো। প্রথম পাতায় ঢাউস বিজ্ঞাপন ছাপানো হয়েছে একটি। বিজ্ঞাপনটি দেখি একবার চলুন।

BBS Cables-এর এই বিজ্ঞাপনে আমরা জানছি তারা একটি সেলস সেন্টার খুলছে নোয়াখালিতে। নোয়াখালি জায়গাটাকে তারা পরিচিত করিয়ে দিচ্ছে বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিনের জন্মস্থান হিসেবে। কেবলের বিজ্ঞাপনে তারের ছবির বদলে বড় করে বীরশ্রেষ্ঠের ছবি ব্যবহার করায় জনসাধারণের সংবেদনশীল অংশ বীরশ্রেষ্ঠদের বিজ্ঞাপনের হাতিয়ার বানিয়ে বিবিএস ব্যবসা করছে এরকম আপত্তি তুলতে পারেন। এধরণের আপত্তি প্রায়ই উঠতে দেখা যায়। আমি তাদের সাথে পুরোপুরি একমত না। এরকম সবকিছুতে কড়াকড়ি করতে গেলে বাংলাদেশের পতাকাও বিজ্ঞাপনে নিষিদ্ধ করতে হয়।

আমার আপত্তির জায়গাটা বিজ্ঞাপনে যে ছবিটা ব্যবহার করেছে সেটা নিয়ে। বিবিএসের বিজ্ঞাপনে বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিনের ছবির জায়গায় বসানো হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের ছবি।

ঘটনা এখানেই শেষ না। বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিনের নামটাও পুর্নাঙ্গ করে লিখতে পারেনি বিবিএসের কর্তাব্যক্তিরা। মোহাম্মদ কাটা পড়েছে সেখান থেকে। আমরা বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান লিখি না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লিখি। শ্রদ্ধাভাজনদের পদবী নাম ঠিকঠাক করে লেখাটা খুব বেসিক আচরণ যেটা আমরা প্রত্যাশা করতে পারি সকলের কাছ থেকে।


ছবিঃ বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন স্মরণে সরকারি স্ট্যাম্প। সূত্রঃ স্ট্যামপেডিয়া


ছবিঃ বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্মরণে সরকারি স্ট্যাম্প। সূত্রঃ স্ট্যামপেডিয়া

এহেন বিজ্ঞাপন ছাপানোর দায় বিবিএসের সাথে প্রথম আলোর ওপরও বর্তায়। কেউ হয়তো ভাবতে পারে অসাবধানবশত এই বিজ্ঞাপন তাড়াহুড়োর মধ্যে ছাপাখানায় চলে গিয়েছে। এখানে স্মরণ রাখা যেতে পারে প্রথম আলোতে প্রকাশের অন্তত তিনদিন আগে বিজ্ঞাপন জমা দিতে হয়। তিনদিনে প্রথম পাতার জন্য জমা হওয়া এই ঢাউস বিজ্ঞাপনের এতো বড় ভুল চোখে পড়লো না?

বিজ্ঞাপনের ভুলটা যে আসলেই ভুল সেটা ক্রসচেক করতে গুগল করলাম। সেখানে আরেক বিড়ম্বনা। ইংরেজি উইকিতে নামের মোহাম্মদ অংশটা বাদ গেছে। আর গুগল সার্চের সার্চ রেজাল্টের ডানদিকেই দেখাচ্ছে বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফের ছবি! গুগলের একটা অফিস ঢাকাতে আছে বটে। তারা কী কাজ করে আমার কাছে পরিস্কার না। তাদের নিউজে Dhakaর বানান Dacca লেখা হয়। তাদের প্রধান কর্তাব্যক্তিকে অবহিত করা হলেও সেটা সংশোধন হয়নি।

রাষ্ট্রিয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর এরকম দায়সারা উপস্থাপন কেন হতে পারে সেগুলোর আসলে অনেকগুলো সম্ভাব্য কারণ খুঁজে বের করা যায়। এর মধ্যে একটা কারণ হতে পারে যেকোন দায়সারা কাজ করে পার পেয়ে যাবার একটা সংস্কৃতির মধ্যে আমরা বাস করি। কোন সমালোচনা গায়ে না লাগানোর মতো দুর্বিনীত সংস্কৃতির অবসান হোক এটাই কাম্য।


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

যতদিন মতির হাতে আলু, ততদিন ফুপুর বর খালু।

সবজান্তা এর ছবি
হাসিব এর ছবি

মতিভাইয়ের উত্তরসূরি আনিসুল হক হবার কথা। নামটা চিন্তা করেই একটু শিউরে উঠলাম।

হিমু এর ছবি

পুটুন আলো হয়ে যাবে তখন।

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

হ্যাঁ, আর মহানন্দে দেশ ও জাতির ন বাদ দেয়া অংশের বারোটা বাজাতে চাইবে।

____________________________

সাফি এর ছবি

মালো।

অতিথি লেখক এর ছবি

হিমু ভাই এবয়সে বানান ভুল মানা যায় না। "ন" এর বদলে "র" হবে ।

----ইমরান ওয়াহিদ

অতিথি লেখক এর ছবি

হা হা হা হা

সুবোধ অবোধ

অতিথি লেখক এর ছবি

সব কিছুই বদলায় দিচ্ছে মতি চোরা।

সুবোধ অবোধ

অতিথি লেখক এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

সুবোধ অবোধ

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

যতদিন মতির হাতে আলু, ততদিন ফুপুর বর খালু।

হো হো হো

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

আয়নামতি এর ছবি

যতদিন মতির হাতে আলু, ততদিন ফুপুর বর খালু।

হো হো হো

এ জাতীয় কাজে দায়সারা ভাব অবশ্যই নিন্দা যোগ্য অপরাধ।

যেকোন দায়সারা কাজ করে পার পেয়ে যাবার একটা সংস্কৃতির মধ্যে আমরা বাস করি। কোন সমালোচনা গায়ে না লাগানোর মতো দুর্বিনীত সংস্কৃতির অবসান হোক এটাই কাম্য।

এমন মনোভাব যত দ্রুত সারানো যায় ততই মঙ্গল।

বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন স্মরণে সরকারি স্ট্যাম্পে তাঁর জন্ম সাল দেখানো হয়েছে ১৯৩৪, আর উইকি দেখাচ্ছে ১৯৩৫ কেম্নে কী!

উইকি'র লিংক
উইকিতে বীর শ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেঃ মতিউর রহমান, লেন্স নায়েক আব্দুর রউফ, লেন্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ এ তিনজন ছাড়া বাকি চারজন বীর শ্রেষ্ঠের ছবি নেই ! মন খারাপ

Tanvir এর ছবি

বিজ্ঞাপনটি নিশ্চয়ই কোন একটি বিজ্ঞাপনী সংস্হার তৈরি করা, কোন সংস্হা এটা করেছে জানতে আগ্রহী

মেঘলা মানুষ এর ছবি

বিজ্ঞাপনটার দায় বর্তায় প্রথমে বিজ্ঞাপনী সংস্থার ওপরে, যারা এমন একটা বড় ভুল করেছে, বিবিএসও দায় এড়াতে পারে না।
আর, পত্রিকারও দায় আছে, যে কেউ যেকোন কিছু দিয়ে ছাপার জন্য টাকা দিলেই যাচাই না করে তো ছেপে দেয়া উচিত না। কেউ যদি পত্রিকায় নিজের ছবি দিয়ে নিচে নিজেকে 'সংসদ ভবনের মালিক' লিখে বিজ্ঞাপন ছাপাতে চায়, পত্রিকা ওয়ালারা সেটা ছাপাবে কি? নিশ্চয়ই না। এটা গুরুতর অবহেলা।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

তিন পক্ষকেই দায় নিতে হবে।
প্রথম আলোর দায়টা বেশি।

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

এটা জাতিস্মত্তার উপরে কুঠারাঘাত।

____________________________

এক লহমা এর ছবি

যাচ্ছেতাই ব্যাপার!

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

তথ্য মন্ত্রনালয়কেও এসব ব্যাপারে নজর দিতে চাপ দেওয়া উচিত। এই পত্রিকাগুলো নিজেদের ইনভিনসিবল ভাবা শুরু করছে, যা ইচ্ছা তাই ছাপে, কোন জবাবদিহি নাই। কোন রকম যাচাই-বাছাই না করেই এরা মাঝে মাঝে যেসব নিউজ ছাপে, আমার মনে হয় না এসব নিছক অনিচ্ছাকৃত ভুল, আর এই ভুলটা তো রীতিমত শাস্তিযোগ্য অপরাধ হওয়া উচিত।

শাহবাগ আন্দোলনেরও এই ব্যাপারে দায়িত্ব নেওয়া উচিত মনে করি নিদেনপক্ষে আমাদের মত সাধারণ মানুষের প্রতিবাদকে চ্যানেলাইজ করার জন্য। কিছু না, এই রকম ক্ষেত্রে আমরা যদি এক জায়গায় জড়ো হয়ে এই সংখ্যাগুলো পোড়ানো শুরু করি, কিছুটা হলেও জনসচেতনতা বাড়বে, আমজনতার মাঝে এই সচেতনতাটা অন্ততঃ বাড়বে যে, এরা যা বলে তা সবসময় বিশ্বাস করা উচিত না।

মফিজ

হাসিব এর ছবি

কারো ঘাড়ে দায়িত্ব না ঠেলে নিজেই দায়িত্বটা নেই না কেন? ব্লগের যুগে মতামত প্রকাশের জায়গা তো অনেক বিস্তৃত।

অতিথি লেখক এর ছবি

সব ব্যাপারে শাহবাগ টানা কেন ভাই? জোর করে সরকারের প্যারালাল কিছু তৈরী করা ঠিক না। আমরা নিজেরা ৫০ জন প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়েই কাজটা করতে পারি, তাইনা? আমাদের সব প্রতিবাদ যদি অন্য কেউ করে দেয় তাহলে আমরা করবোটা কি?

----ইমরান ওয়াহিদ

অতিথি লেখক এর ছবি

গণজাগরণ মন্ঞ এখন একটা প্রতিষ্ঠিত প্লাটফর্ম। এ ধরণের প্রতিবাদে তাদের এগিয়ে আসাটায় লাভ বই ক্ষতি নাই, স্বাধীনতার পক্ষে এমন একটা প্লাটফর্মের সরব উপস্থিতি লং টার্মে অনেক বড় প্রয়োজন, সেই সুবাদেই তাদের কথা বলা, আর আনঅর্গানাইজড প্রতিবাদে পত্রিকার পাতায় একদিন নিউজ আসতে পারে, এর বেশী কিছু না।

মফিজ

অতিথি লেখক এর ছবি

তাছাড়া তারা তো এখন প্রতিষ্ঠিত প্লাটফর্ম। এত ছোটখাট ব্যাপারে তাদের সাড়া আদৌ পাওয়া যাবে কিনা আমার সন্দেহ আছে। আর কিছু বলতে চাই না।

----ইমরান ওয়াহিদ

অতিথি লেখক এর ছবি

এভাবে চলতে থাকলে "প্রথম আলো" নতুন প্রজন্মের কাছে একটি ঘৃণিত পত্রিকা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যাবে। আর উইকির কথা তো বলাই বাহুল্য। আমাদের দেশের ঐতিহাসিক তথ্যের জন্য উইকির রেফারেন্স খুঁজতে গেলে ভুল তথ্য আর তথ্য বিভ্রাটের ধাক্কা খেতে হবে। আপনি রাতে হয়তো উইকির ভুল তথ্য সংশোধন করে ঘুমাতে গেলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে চেক করে দেখবেন, অন্য কেউ সেই তথ্য এডিট করে আবারও ভুল তথ্য ঢুকিয়ে দিয়েছে।

হাসিব এর ছবি

আপনি একটা সিরিয়াস অভিযোগ করলেন। এরকমটা প্রমান করতে পারলে সেটা নিয়ে পোস্ট দিন।

অতিথি লেখক এর ছবি

"সুবহে সাদিক" কি নতুন প্রজন্মের কাছে অলরেডি ঘৃণিত পত্রিকা হিসেবে চিহ্নিত হয় নি?

----ইমরান ওয়াহিদ

শাফায়েত এর ছবি

গুগলের একটা অফিস ঢাকাতে আছে বটে। তারা কী কাজ করে আমার কাছে পরিস্কার না। তাদের নিউজে Dhakaর বানান Dacca লেখা হয়।

বুঝলাম না ব্যাপারটা, ঠিক কোন জায়গায় Dacca দেখায়? গুগলতো অন্য ওয়েবসাইটের কনটেন্ট সার্চ করে দেখানোর কথা তাই আপনার কথায় কনফিউজড। ঢাকার গুগলে আর যাই হোক টেকনিক্যাল কোন কাজ হয়না।

হাসিব এর ছবি

গুগল নিউজের পরশুদিন পর্যন্ত স্কৃনশট এটা
আজকে তারা বানানপ্রমাদটা সংশোধন করেছেন।
গুগলকে ধন্যবাদ এজন্য।

অতিথি লেখক এর ছবি

সুবহে সাদিকের নায়েবে আইন মিজান মিয়া আদালত অবমাননার দায়ে পুটু মারা খেলো বলে http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article753752.bdnews

----ইমরান ওয়াহিদ

তারেক অণু এর ছবি
সাফিনাজ আরজু এর ছবি

মিজান, পিষে ফ্যালো
আর কত এসব সংবাদ দেখতে হবে???
অনেক আগেই তো রাষ্ট্র পক্ষের আলু পত্রিকার বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত ছিল।
প্রথম আলু যে তলে তলে পেহলি রোশনি অনেকেই এখনও বিশ্বাস করেনা, এই লেখাটা তাদের জন্য অন্যতম প্রমান।
হাসিব ভাই, দারুন কাজ করেছেন ........................ চলুক চলুক

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

আলু ইজ মরটাল

অতিথি লেখক এর ছবি

অফ টপিক>
গণজাগরণ মঞ্চের লাকী আজ ঘৃণিত প্রথম আলো তে লেখা দিয়েছে ।
কেন জানি না , ব্যাপারটা ভাল লাগে নি ।

রাজর্ষি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।