কর্মক্ষেত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নারী পুরুষ বৈষম্য

হাসিব এর ছবি
লিখেছেন হাসিব (তারিখ: মঙ্গল, ১৯/০৫/২০১৫ - ১:৩৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গতকাল জবসাইট বিডিজবসে একটা চাকুরির বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞাপনটি প্রকাশ করেছে মোহাম্মদী গ্রুপ। পদের নাম এক্সিকিউটিভ প্রডিউসার। চাকুরির বিজ্ঞাপনটিতে অন্য সব বিজ্ঞাপনের মতোই বলা আছে চাকুরি পেতে গেলে কী কী যোগ্যতা থাকতে হবে। এগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে চাকুরির যোগ্যতা হিসেবে “Only males are allowed'' উল্লেখ করা হয়েছে। ডানদিকে জব সামারি অংশেও জেন্ডার হিসেবে পুরুষ উল্লেখ করা হয়েছে।

চাকুরিতে কী কর্তব্য সেটা দেখে মনে হবার কারণ নেই যে এটা এরকম কোন কাজ যেটা শুধু পুরুষেরাই পারবে। পাঠকদের স্মরণ থাকতে পারে যে এই মোহাম্মদি গ্রুপের কর্ণধার আনিসুল হক সম্প্রতি ঢাকা শহরের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানেই যদি এরকম বৈষম্যমূলক নিয়োগনীতি চালু থাকে তাহলে ঢাকা সিটি করপোরেশন নারী ইস্যুতে কতোটুকু সফল হবে বা সফল হবার সদিচ্ছা রাখে সেটাতে প্রশ্ন ওঠে। একদিন পরে নিয়োগকারি প্রতিষ্ঠানটি “Only males are allowed'' মুছে ফেলেছে। তবে জব সামারিতে চাকুরিটা যে পুরুষের সেটার উল্লেখ এখনো আছে।

বিডিজবসের এই বিজ্ঞাপনটি চোখে পড়ার পর চাকুরি ক্ষেত্রে নারী পুরুষের নিয়োগে যে বৈষম্য চলে তার কোন ড্যাটা পাওয়া যায় কিনা খোঁজ করলাম। যথারীতি কোন আনুষ্ঠানিক সূত্র থেকে এই বিষয়ে কোন ড্যাটা পাওয়া যায়নি। বিডিজবসে যে চাকুরির বিজ্ঞাপনগুলো পোস্ট হয় প্রতিদিন সেগুলোকে স্যাম্পল হিসেবে নিয়ে পুরো চিত্রটার একটা আন্দাজ পাওয়া যায় কিনা সেটা দেখা যায়। তবে এখানে একটা ছোট্ট সমস্যা আছে। বিডিজবসে একদম নিচের দিকের চাকুরি অর্থাৎ শ্রমিকদের চাকুরি হাতে গোনা। এই সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও শিক্ষিত, চাকুরির অভিজ্ঞতা আছে কি নেই, বয়সে তরুণ এরকম চাকুরির বিজ্ঞাপনের জন্য বিডিজবসকে একটি ভালো তথ্যের সূত্র হিসেবে ধরা যেতে পারে।

২.

বিশ্বেষণের জন্য স্যাম্পল হিসেবে বিডিজবস সাইটে ১৮ই মে, ২০১৫ তারিখে পাবলিকলি এ্যাক্সেসিবল চাকুরির বিজ্ঞাপনগুলো হিসেবে আনা হয়েছে। ঢাকা সময় মধ্যরাত থেকে ভোররাত পর্যন্ত ড্যাটাগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। স্যাম্পল সংগ্রহ করার সময়ে বিডিজবসে চাকুরি পোস্ট করার সময়ে প্রথমে কীভাবে চাকুরদাতারা পুরুষ বা নারী সিলেক্ট করে দেন সেটা বিবেচনা করা হয়েছে।

বিডিজবসে চাকুরি প্রার্থীরা চাকুরির যোগ্যতা পোস্ট করার সময়ে শুধুমাত্র পুরুষ বা শুধুমাত্র নারী সিলেক্ট করতে পারেন। এখানে ডিফল্ট হিসেবে Any সিলেক্ট করা থাকে। অতএব কোন চাকুরিদাতা ভুলে শুধু পুরুষ বা শুধু নারী সিলেক্ট করেছেন এরকম হবার সম্ভাবনা একেবারেই নেই।

বিডিজবস সাইটে ১৮ই মে তারিখে যে চাকুরিগুলো ছিলো সেগুলোর সংখ্যা এরকম,

উপরের সারণী অনুসারে শিল্পভেদে শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য ২০.৫% চাকুরি সংরক্ষিত রাখা হয়। কাজের ধরণভেদে এটা ১৮.২%। বিপরীতে শুধুমাত্র নারীদের জন্য এই সংখ্যাদুটো যথাক্রমে ৪% ও ৩.৮%। চাকুরিক্ষেত্রে নারীরা কীরকম বৈষম্যের স্বীকার হয় এটা এই অংকগুলো দেখলেই বোঝা যায়। বিভিন্ন শিল্পভেদে এবং কাজের ধরণভেদে এই সংখ্যাগুলো ভাগ করে দেখলে নারীপুরুষের এই বৈষম্য কোথায় কম বা বেশি হয় সেটা পরিস্কার হবে।

উপরের ছবিটাতে ডানদিকের বারপ্লটটিতে বিভিন্ন শিল্পে নারী, পুরুষ ও নারী পুরুষ দুপক্ষই আবেদন করতে পারবে সেরকম চাকুরির শতাংশের হিসেবে দেয়া হয়েছে। এখানে এনার্জি, পাওয়ার, ফুয়েল শিল্পকে প্রথমেই বাদ দেয়া যেতে পারে আউটলায়ার হিসেবে। এ শিল্পে মোট ১৩টি চাকুরির বিজ্ঞাপন রয়েছে। এর মধ্যে একটি চাকুরিতে শুধুমাত্র নারী নিয়োগ দেয়া হবে বলা হয়েছে। একইভাবে সিকিউরিটি সার্ভিসেস এবং ফায়ার, সেইফটি ও প্রটেকশনকেও আউটলায়ার হিসেবে বাদ দেয়া যেতে পারে। সিকিউরিটি সার্ভিসেস শিল্পে ৭টি বিজ্ঞাপন এসেছে এবং এতে ৪টিই পুরুষদের জন্য বরাদ্দ। এই শিল্পকে বাদ দেবার আরেকটা কারণ হতে পারে নিরাপত্তার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে হয়তো নিয়োগদাতারা নারীদের নিয়োগ চান না এবং তাদের এই যুক্তিকে কেউ কেউ যথার্থ মনে করতে পারেন। ফায়ার, সেইফটি ও প্রটেকশন শিল্পে মাত্র ১টি চাকুরির বিজ্ঞাপন এসেছে ও সেটা পুরুষের জন্য বরাদ্দকৃত।

আউটলায়ারগুলো বাদ দিলে দেখা যায় রিয়েল স্টেট ডেভেলপমেন্ট, ভারী ম্যানুফ্যাকচারিং, গার্মেন্টস, ইলেকট্রনিক্স ও কনজিউমার ডিউরেবলস শিল্পে দৃষ্টিকটুভাবে পুরুষদের জন্য বরাদ্দ চাকুরি বেশি। প্রথম দুটির ক্ষেত্রে হয়তো কেউ ভাবতে পারেন হয়তো কাজগুলো খুব বেশি কায়িক পরিশ্রম দাবি করে বলে এগুলোতে পুরুষদের চাকুরি বেশি। এখানে খেয়াল রাখা প্রয়োজন, একদম নিচের দিকের শ্রমিকরা যারা রাজমিস্ত্রী, ইট বহনকারি, দিনমজুর - অর্থাৎ যারা কায়িক পরিশ্রমের কাজটা করেন তাদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সাধারণত বিডিজবসে পোস্ট করা হয় না। বিডিজবসে প্রধানত অফিস জব অর্থাৎ অফিসে বসে কাজ এরকম কাজই সিংহভাগ। অফিসের এসব কাজ পুরুষেররা ভালো পারবেন এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য কথা হতে পারে না। গার্মেন্টসের ক্ষেত্রেও যেসব মেয়েরা মেশিনে বসে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন তাদের চাকুরির বিজ্ঞাপন বিডিজবসে নেই। সেখানে আছে তাদের থেকে পদমর্যাদায় উচু পোস্টের বিজ্ঞাপন। সেখানে পুরুষদের আধিপত্য। গার্মেন্টসে মোট চাকুরির বিজ্ঞাপনে (৪৫২টি চাকুরি) ২৮.৫% পুরুষদের জন্য বরাদ্দ। বিপরীতে নারীদের জন্য বরাদ্দ মাত্র ৩%। এই শিল্পে একজন নারী শ্রমিক অভিজ্ঞতা ও নিজের দক্ষতা বাড়িয়ে নিচু পর্যায় থেকে উচু পর্যায়ে উঠবেন সেই সুযোগও পুরুষদের কোটা তৈরি করে সীমিত করে ফেলা হচ্ছে।

তুলনামূলকভাবে শিক্ষা, মিডিয়া, পাইকারি/খুচরা/আমদানী/রপ্তানী - এই তিনটি শিল্পে অবস্থা অপেক্ষাকৃত ভালো। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রচুর চাকুরি থাকলেও সেখানে পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা করে চাকুরি বিজ্ঞাপন দেবার প্রবনতা কম।

গার্মেন্টসের চাকুরির উদাহরণ থেকে বুঝতে পারা যায় কী ধরণের কাজের বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। কাজের ধরণের শতাংশগুলো প্লট করলে এরকম একটা চেহারা পাওয়া যায়,

কাজের ধরণভিত্তিক শতাংশ তালিকাতে প্রথমেই বিউটি কেয়ার/ হেলথ/ ফিটনেস বাদ দেয়া যায়। এধরণের কাজে বিজ্ঞাপন মাত্র একটি।

এরপর এখানে লক্ষ্যনীয় ব্যাংক ও ননব্যাংকিং ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনের চাকুরিগুলোতে বিজ্ঞাপন দেয়া হয় পুরুষ ও নারীরা উভয়েই আবেদন করতে পারবে এরকম করে। এই মুহুর্তে এই ধরণের কাজের বিজ্ঞাপনের সংখ্যা ৪৫। এই সংখ্যার কারণে এটাতে আউটলায়ার বলে উড়িয়ে দেবার সুযোগ নেই। এই ধরণের প্রাকটিসের জন্য ব্যাংকিং শিল্প সাধুবাদের যোগ্য।

ব্যাংকের কাজগুলোর পরে তালিকায় আসে কাস্টোমার সাপোর্ট/কল সেন্টার ও সেক্রেটারিয়াল কাজে নারীদের প্রাধান্য। এখানে কেন প্রাধান্য এই প্রশ্নটা আমি নিয়োগদাতাদের করতে চাই। এই দুই কাজের বাইরে এনজিও সেক্টরে নারীদের তুলনামূলক ভালো অবস্থান রয়েছে।

৩.

সারণী ১এই দেখানো হয়েছে যে পুরুষদের জন্য চাকুরিতে ২০%এর মতো পদ বরাদ্দ থাকে। নারীদের থাকে ৩-৪%। অর্থাৎ, কার্যত পুরুষদের জন্য দেশে ২০% কোটা সংরক্ষিত ও নারীদের জন্য এটা ৩/৪%। সরকারি চাকুরিতে পুরুষদের জন্য কোটা নেই। সেখানে নারীদের জন্য কোটা রয়েছে ১০%। এটাকে স্টান্ডার্ড ধরে বিডিজবসে প্রকাশিত বেসরকারি খাতের চাকুরিগুলো তুলনা করলে কী দাঁড়ায় সেটা এবার দেখা যাক। শিল্পভিত্তিক চেহারাটা এরকম

শিল্পভিত্তিক শুধুমাত্র পাইকারী/খুচরা/আমদানী/রপ্তানী খাতে মেয়েদের জন্য বরাদ্দ সরকারি ১০% থেকে বেশি। কাজভিত্তিক বিন্যাসের চেহারাটা এরকম,

আগেই বলা হয়েছে কাস্টোমার সাপোর্ট ও সেক্রেটারিয়াল কাজে নারীদের জন্য চাকুরি বরাদ্দ থাকে। এছাড়া এনজিও সেক্টরে নারী ও পুরুষের বরাদ্দ কাজের ব্যবধান সবচাইতে কম।

৪.

বাংলাদেশের অর্থনীতি রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক। ঢাকা ছাড়া বাকি বিভাগীয় শহরগুলোতে উপরের আলোচনায় উঠে আসা বৈষম্যের চেহারাটা কেমন? ড্যাটা না দেখেই বলা যায় অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোতে চাকুরির সংখ্যা ঢাকার তুলনায় অনেক কম হবে। নারী পুরুষের বৈষম্যে বিভাগওয়ারী চিত্রটা এরকম,

এখানে দেখা যাচ্ছে ঢাকা বিভাগে মেয়েদের জন্য বরাদ্দ চাকুরি শতাংশ হিসেবে সবচাইতে বেশি। এরপর চট্টগ্রাম ও সিলেট। বরিশাল ও সিলেট বিভাবে শুধুমাত্র নারীদের জন্য কোন চাকুরির বিজ্ঞাপন নেই।

৫.

গার্মেন্টসের কাজের বিজ্ঞাপন প্রসঙ্গে এটা উঠে এসেছে যে একদম নিচের তলার মেশিনে কাজ করা শ্রমিক হিসেবে মেয়েদের সংখ্যাধিপত্য থাকলেও একটু উপরের দিকে কাজগুলো পুরুষদের জন্য রেখে দেয়া হচ্ছে। এভাবে ধারণা করা যায় যে যতো উচ্চপদের জন্য বিজ্ঞাপন ততোই নারীদের জন্য কম বরাদ্দ।

এখানে দেখা যাচ্ছে শুরুর দিকে নারীদের কিছুটা জায়গা হলেও পুরুষ কোটা সেটা উচ্চপর্যায়ে দখল করে ফেলে। অর্থাৎ উচুপদে নিয়োগের সময় নারীদের জন্য কোটা খুবই সীমিত।

৬.

সরকারের শ্রম মন্ত্রনালয় ও সেখানে পুরোদস্তুর মন্ত্রী দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন। ঐ অফিসের কাজ কি সেটা কখনো বোঝা যায় না। তাদের নারী পুরুষের এই বৈষম্য কমিয়ে আনতে সক্রিয় ভাবে কাজ করা দরকার। কাজটা আইন করেও করা যেতে পারে। এরকম একটা আইন হতে পারে যে নারীরা আবেদন করতে পারবে না এরকম চাকুরির বিজ্ঞাপন দেয়া যাবে না। সেই সাথে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশ পুরুষের সমান করতে দেশব্যাপি বাধ্যতামূলক কোটা হতে পারে এই বৈষম্য কমানোর প্রথম ধাপ।


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

এখানে দেখা যাচ্ছে শুরুর দিকে নারীদের কিছুটা জায়গা হলেও পুরুষ কোটা সেটা উচ্চপর্যায়ে দখল করে ফেলে। অর্থাৎ উচুপদে নিয়োগের সময় নারীদের জন্য কোটা খুবই সীমিত।

ডিট্টো! চমৎকার এনালাইসিস হাসিব ভাই!!

হাসিব এর ছবি

আইএলওর একটা ড়্যাঙ্কিং দেখলাম। বাংলাদেশ একদম তলানিতে

এইটাতে রেগুলেটরি কন্ট্রোল না বসাতে পারলে কপালে শনি আছে।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ওহহ। এই ডকুমেন্টটা তো চোখে পড়েনি! ধন্যবাদ!!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

রিপোর্টের এই অংশটা ঠিক বিশ্বাস্য বলে মনে হচ্ছে না। সৌদী আরব/কাতার/ওমান/কুয়েতের অবস্থান বাংলাদেশের উপরে হয় কী করে!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

পৃথ্বী এর ছবি

স্টিল মিলগুলোর নিয়োগবিজ্ঞপ্তিতে পরিস্কার বলে দেওয়া হয় নারী প্রার্থীদের আবেদনের দরকার নেই, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাসট্রির মেটালারজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগবিজ্ঞপ্তিতেও একই কথা বলা হয়। এর পেছনের লজিকটা এরকম যে নারী প্রকৌশলীরা নাকি ফারনেসের উচ্চতাপমাত্রার পরিবেশে কাজ করতে পারবে না। উন্নত বিশ্বে নারী মেটালার্জিস্টরা স্টিল মিলের পাশাপাশি হেভি ইন্ডাসট্রিতে ওয়েল্ডিং এর কাজও করে। আর বাংলাদেশের বস্ত্রবালিকা ও নারী মজুরদের জীবন ও কর্মপরিবেশ স্টিল কারখানার চেয়ে নিশ্চয়ই আরামদায়ক না।

ভীষণরকম অসুস্থকর একটা ব্যাপার।


Big Brother is watching you.

Goodreads shelf

হাসিব এর ছবি

অজুহাত মোটামুটি সবজায়গাতেই এক - মেয়েরা ঐ কাজ এই কাজ করতে পারবে না। পুরুষেরা ঐসব কাজ নারীদের তুলনায় ভালো করছে সেটার প্রমান আবার তারা দিতে পারবে না।

শেহাব এর ছবি

ভাল লেখা!

এক লহমা এর ছবি

চলুক
বৈষম্যের ছবিটা ভালভাবেই ফুটে উঠেছে।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

হাসিব এর ছবি
হাসিব এর ছবি
আয়নামতি এর ছবি

চমৎকার পোস্ট!

কাস্টোমার সাপোর্ট/কল সেন্টার ও সেক্রেটারিয়াল কাজে নারীদের প্রাধান্য।

এর উত্তরটা কমবেশি তো জানা আছে আমাদের। এভাবে গণ্ডী কেটে রাখলে কোনো দিনও বৈষম্য ঘুচবে না।
বেতন বৈষম্য নিয়ে কিছু লিখুন ভাইয়া। পরিশ্রমসাধ্য এই পোস্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

হাসিব এর ছবি

বেতন বৈষম্য নিয়ে কোন ড্যাটা পাইনি। পেলে লিখবো অবশ্যই।

গৌতম হালদার এর ছবি

নিরেট বাস্তবতা, সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই।

হাসিব এর ছবি

নিরেট বাস্তবতা হলেও আপনি আশপাশে জিজ্ঞেস করে দেখেন জনমনে একটা ধারণা প্রচলিত আছে যে মেয়েরাই কাজে সুবিধা পায়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বাংলাদেশের সংবিধানের ২৯ নং অনুচ্ছেদে সরকারী চাকুরি পাবার ক্ষেত্রে বলা হয়েছেঃ
(১) প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদলাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে।
(২) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না।

এর আগে ২৮ নং অনুচ্ছেদের ২ নং ধারায় বলা হয়েছেঃ
(২) রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী পুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন।
---------------------------------------------------------------------------------

আইন না থাকলে আইন করা যেতে পারে তবে আইনের প্রয়োগ না থাকলে 'সকলি গরল ভেল'। শ্রম বিষয়ক, কারখানা বিষয়ক, চাকুরী বিষয়ক প্রচুর ভালো ভালো আইন বাংলাদেশে আছে, কিন্তু সেগুলোর প্রয়োগ নাই। আইন না মানার প্রবণতা আমাদের মজ্জাগত।
---------------------------------------------------------------------------------

নিয়োগকর্তাদের মানসিকতা না পাল্টালে কোন লাভ হবে না। বিভিন্ন সময়ে ছোটবড় নানা রকম নিয়োগ প্রক্রিয়াতে জড়িত ছিলাম। সেখানে দেখেছি বেশিরভাগ নিয়োগকর্তারা (ক) মাঠপর্যায়ের কাজে (খ) শারিরীক শ্রম দিতে হয় এমন কাজে (গ) অনেকজন কর্মীর টিম চালাতে হয় এমন কাজে (ঘ) নগদ টাকাপয়সা লেনদেন করতে হয় এমন কাজে (ঙ) ম্যানেজমেন্টের উচ্চতর পদে নারীদের নিয়োগ দিতে চান না। আজকাল মাঠপর্যায়ের বিপণন, বিক্রয়, গবেষণা ইত্যাদি কাজে নারীদের নিয়োগ দেয়া হয় বটে তবে সেখানেও 'কিন্তু' আছে। প্রচুর পণ্য/ইন্ডাস্ট্রি আছে যেগুলোর মাঠপর্যায়ের বিপণন, বিক্রয়, গবেষণা কাজে নারীদের নিয়োগ দেয়া হয় না। এই বিষয়গুলো আইন করে পালটানো যাবে না।
---------------------------------------------------------------------------------

কর্মক্ষেত্রে নারীর জন্য নিরাপদ ও মানবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা না গেলে অনেক কাজে নারীরা আবেদন করতে আগ্রহী হবেন না। যাতায়ত ব্যবস্থা, থাকার ব্যবস্থা উপযুক্ত না হলে নারীরা চাইলেও অনেক চাকুরীতে আবেদন করতে পারবেন না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হাসিব এর ছবি

আমাদের অবস্থা ছোট কম্বল নিয়ে মাঘ মাসের শীত কাটাতে যাওয়া গরীব লোকটার মতো। একদিকে ঢাকার পর মনে হয় অন্যদিকেও ঢাকা হয় নাই।

প্রয়োগের সমস্যা তো আছেই, আমাদের আইনি অবস্থার এমনি অবস্থা যে একটা বিচ্ছিন্ন আইন করে কোন কিছু সামাল দেয়া যাবে না। ধরা যাক সরকার আইন করলো যে সরকারি চাকুরির মতো বেসরকারি সেক্টরে ১০ ভাগ কোটা সংরক্ষণ করতে হবে। শুধু এই আইনটা করলে সেটা প্রয়োগ করা যাবে না। কারণ সরকারের কাছে কোন কম্পিউটারাইজড তথ্য নাই নাগরিকদের। সাথে বাংলাদেশে ওয়ার্ক পারমিট নামে কোন বস্তু নাই যে যেটা টান দিলে কে কোথায় কাজ করে সেটা জানা যাবে। সাধারণ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোথাও তাদের কর্মকর্তা কর্মচারিদের তথ্য জমা দেয় না যেটা দেখে সরকার বুঝতে পারবে সেখানে জেন্ডার রেশিং কিরকম। এই সমস্ত সিস্টেম ডেভেলপ না করা গেলে বেসরকারি খাতকে কোন আইন দিয়ে নিয়ন্ত্রন করা যাবে না।

যাতায়াত, নিপীড়নের বিরুদ্ধে আইনী কাঠামো এগুলো একটা বড় বাধা অবশ্যই। সাথে আরেকটা বাধা হলো ম্যাটারনিটি লিভ ও ক্যারিয়ারের সাথে সেটার কনপেনসেশন। এগুলো ঠিকঠাক না করতে পারলে নারী পুরুষের একই পর্যায়ে তোলা যাবে না।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

টেকনিকাল কাজের উদাহরণ দিতে পারি ভুরি ভুরি। আমাদের সাথে যে মেয়েগুলো ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে বেরিয়েছিলো তারা প্রায় প্রত্যেকে আমেরিকা, ব্রিটেন কিংবা অস্ট্রেলিয়ায় এসে ঠিক ছেলেদের সম পরিমান কাজ করছে। কেউ কেউ সরাসরি ইঞ্জিন টেস্টিং, অ্যারোনটিকাল কোম্পানীর কোয়ালিটি কন্ট্রোল, কিংবা বিভিন্ন ডিজাইন সিমুলেশন কোম্পানীতে চাকরী করছে। বেতন পাচ্ছে ছেলেদের সমান বা তার বেশী। অথচ এই মেয়েরাই যখন দেশে চাকরী খুঁজেছে পদে পদে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কোন কোম্পানী ইন্টারভিউয়ের নাম করে ডেকে নিয়ে মেয়ে দেখেছে, কোন কোম্পানী টেকনিকাল পদবী দিলেও কাজ করতে বসিয়েছে রিসেপশনে, কোন কোন কোম্পানী মেয়ে দেখে কাজই দেয়নি।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মাসুদ সজীব এর ছবি

পান্ডব দা যে পয়েন্টগুলো উল্লেখ করেছেন সেগুলো সবচেয়ে বড় বাঁধা নারীদের জন্যে।

দুটো ভিন্নধারার (একটি হাসপাতাল এবং তিনটি ফার্মাসিউটিক্যালসে) চাকরি করে দেখেছি প্রধান সমস্যা বড় কর্তাদের মজ্জাগত। তারা প্রথমেই ধরে নেয় নারীদের দিয়ে পরিশ্রমের কাজ, নেতৃত্বের কাজ হবে না। বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে তিনশো ফার্মাসিউটিক্যালসে যদি পাঁচ হাজার অফিস কর্মকর্তা থাকে তার মাঝে পাঁচশও হবে না নারী। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্যি সবচেয়ে পরিশ্রমের কাজ প্যাকেজিং এ ৮০% ভাগের উপরে নারী থাকে। সবচেয়ে কম বেতন দিয়ে তাদের রাখা যায় বলেই এই ব্যবস্থা। অর্থাৎ বিষয়টা দাঁড়ায় বেতন যেখানে কম হবে সেখানে নারীকে রাখতে হবে আর বেতন বেশি হলে পুরুষ থাকবে। আমি দেশর সবচেয়ে বড় এবং একেবারে নতুন দুটো কোম্পানিতে চাকরি করে দেখেছি কোনো জায়গাতেই ল্যাবে পঞ্চাশজন পুরুষের বিপরীতে পাঁচজন মেয়ে নেই, অথচ ফার্মাসী-কেমিষ্ট্রি-বায়োকেমিষ্ট্রি-মাইক্রোবায়োলজি-বায়োটেকনলোজি প্রভৃতি সাবজেক্টে মেয়েদের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক এখন। শুধু একটা তথ্য দেই আমার সাথে মাইক্রোবায়োলজি পড়েছে ১৭ জন মেয়ে তাদের কারোই চাকরি হয়নি ফার্মাসিউটিক্যালসের ল্যাবে। কেউ ব্যাংক, কেউ বিদেশ গমন, কেউ ফার্মাসিউটিক্যালস মার্কেটিং, কেউ বেসরকারী কোন মাছ রপ্তানীকারক কিংবা কোমলপানীয় প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে।

প্রতিটি বড় ফার্মাসিউটিক্যালস থাকার জন্যে ডমেটরি করে কিন্তু সেখানে নারীদের স্থান নেই কিংবা নারীদের জন্যে আলাদা কোন ডমেটরি নেই, থাকেনা। ফলে শহরের বাহিরের প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারীদের নেওয়ার সুযোগ প্রথমেই রহিত করা হয়।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

রানা মেহের এর ছবি

ভালো এবং জরুরী লেখা।

আচ্ছা বাংলাদেশে বেশকিছু এনজিও যে নারী, সমতা, সমঅধিকার নিয়ে কাজ করে, তারা কি এরকম চাকুরী পাবার ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য ধরণের কোন জরিপ করেনা? করা উচিত তো।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

হাসিব এর ছবি

কোথাও এঞ্জিও গন্ধ থাকলে আমি ধরে নেই তারা সেইসব কাজই করবে যেটাতে তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যত টেকাটুকা নিশ্চিত হবে। বর্তমানটা তারা করে ভবিষ্যতটা ঠিক রাখার জন্য। ভবিষ্যতে টেকাটুকা আসবে না এরকম কোন রিসার্চ তারা করবে না।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

প্রবলভাবে সহমত। এঞ্জিওদের যারা টেকাটুকা দেয় তারা তাদের লাভের হিসেব করেই টেকাটুকা দেয়। লোকালি যারা টেকাটুকা খরচ করে তারা সেই গাইডলাইন ধরেই সেটা করে। এঞ্জিওদের রিপোর্টগুলোতে যা সব অর্জনের কথা লেখা থাকে সেগুলো সত্যি হলে আরো দশ-পনের বছর আগেই বাংলাদেশের 'উন্নয়ন' গোলা উপচে বিদেশে রফতানী করতে হতো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

খুবই চমৎকার একটা সারাংশ পাওয়া গেল। মোহাম্মদী গ্রুপের বিজ্ঞাপনটা অদ্ভুত লাগলো। সেই গ্রুপের চেয়ারম্যান আনিসুল হকের বউ। তাদের যদি এই মানসিকতা হয়।

তবে এটা পড়ার পর আরেকটা ভাবনা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। বৈষম্য সত্ত্বেও গত দুই দশকে কর্মজীবি নারীর সংখ্যা কয়েকগুন বেড়ে গেছে। কিন্তু শহরের যানবাহনের নারীর জন্য সেই ড্রাইভারের পাশের তক্তা সিটগুলোই এখনো বরাদ্দ। এই ব্যাপারে কখনো কোন সরকারের মাথাব্যথা দেখিনি। কর্মজীবি নারীরা যাতায়াত সমস্যার কারণেও অনেক লাঞ্ছনার শিকার হয় প্রতিদিন। ভুক্তভোগীদের কেউ এটা নিয়ে একটা লেখা দিলে ভালো হতো।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

হাসিব এর ছবি

ঢাকা শহরে সকাল বেলা আমার ধারণা রাস্তায় নারী ও পুরুষের সংখ্যার প্যারিটি থাকে। এখানে নারীরা প্রায় সবাইই কম বেতনে কাজ করা শ্রমিক। উচুপদে তাদের কেউ নাই।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

গুরু গুরু

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখাটি যথেষ্ট প্রশংসার দাবি রাখে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।