দুঃখিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি যথেষ্ট করছেন না

হাসিব এর ছবি
লিখেছেন হাসিব (তারিখ: রবি, ০৯/০৮/২০১৫ - ৫:০৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

চাপাতির আঘাতে ব্লগার হত‍্যা এখন প্রায় মাসকাবারি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাত্র চব্বিশ ঘন্টা আগে নিলয় নীল নামে একজন ব্লগার চাপাতির আঘাতে প্রাণ দিয়েছেন। ব্লগাররা বইমেলার মতো হেভিলি গার্ডেড জায়গা থেকে শুরু করে নিজ ঘরে পর্যন্ত খুন হয়েছেন। ব্লগার হত‍্যাকারিদের আইনের আওতায় আনায় সরকারের সাফল‍্য সীমিত। রাজীব হত‍্যাকারিদের ধরা গেছে। ব্লগার ওয়াশিকুরের হত‍্যাকারি দুজনকে সাধারণ‍্যের কর্মতৎপরতায় পুলিশ নাগাল পেয়েছে। হত‍্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেফতার না করতে পারলেও মাঝে মাঝে জঙ্গি সন্দেহে কিছু আটকের খবর পত্রিকায় এসেছে। এরা কি আটকই আছে নাকি ছাড়া পেয়েছে সেসবের খবর মিডিয়া বা পুলিশের তরফ থেকে জানা যায় না।

ব্লগার অভিজিৎ রায়ের হত‍্যাকান্ডের পর গণমাধ‍্যমকে এড়িয়ে অভিজিৎ রায়ের বাবা অধ‍্যাপক অজয় রায়ের সাথে প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। গতকাল নিলয় নীলকে হত‍্যার পর তাদের পরিবারের সাথে কেউ যোগাযোগ করেছে এরকম খবর মিডিয়াতে আসেনি। তবে প্রধানমন্ত্রী ও কয়েকজন মন্ত্রী নিলয়সহ ব্লগারদের হত‍্যার নিন্দা জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী আজ বলেছেন, [১]

ধর্মের নামে রক্তপাত চলতে দেয়া হবে না। সারা বিশ্বেই জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড চলছে । এর ধাক্কা আমাদের এখানেও মাঝে মাঝে লাগে। সৌদি আরবে মসজিদে ন‌‌‌ামাজ পড়ার সময় বোমা হামলা করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। আমাদের এখানে ধর্মের নামে ব্লগারদের হত্যা করা হচ্ছে। এটা কোন ধর্মে আছে? যারা মানুষ হত্যা করে ইসলামকে কলুষিত করে তারা মুসলমান হতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে তারা কোনও ধর্মে বিশ্বাস করে না। বাংলাদেশে ধর্মের নামে রক্তপাত চলতে দেওয়া হবে না।

আর্গুমেন্ট হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব‍্য দুর্বল। হত‍্যাকারিরা প্রকৃত মুসলিম নহে এটা হলো উপরের উদ্ধৃতির সহজ অনুবাদ। যারা কুপিয়ে ব্লগার হত‍্যা করছে তাদের কাছেও তাদের মতো করে প্রকৃত মুসলিমের সংজ্ঞা আছে এবং তারা সেই মতেই কাজ করছে। এক পক্ষ যেহেতু আরেক পক্ষের কাছে কোন হার স্বীকার করবে না সেহেতু কোনটা প্রকৃত ও কোনটা কোনটা অপ্রকৃত এই তর্কের সমাধান হবার কোন সম্ভাবনা নেই। অতএব প্রকৃত মুসলিম তত্ত্ব আলোচনায় নতুন কোন কিছু যোগ করে না।প্রধানমন্ত্রী একই বক্তব‍্যে আরও বলেছেন, [২] ধর্মীয় অনুভুতি নিয়ে কাউকে রাজনীতি করতে দেয়া হবে না। তিনি বলেছেন,

‘অন্তত বাংলাদেশে এটা [ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে রাজনীতি] চলতে দেওয়া হবে না।...আমরা এ দেশে এটা কোনোভাবেই হতে দিতে পারি না।’

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব‍্য নিঃসন্দেহে ব্লগারদের রক্ষায় সরকারের একের পর এক ব‍্যর্থতায় মিইয়ে যাওয়া সরকার সমর্থকদের মনে আশার আলো জালাবে। আমি এতোটা আশাবাদি হতে পারি না।

ব্লগারদের সাথে বা আরও বিস্তারিতভাবে ব্লগারদের লেখালেখির স্বাধীনতা বড় আকারে সর্বপ্রথম বাধার সম্মুখিন হয় ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের কাছ থেকে। হেফাজতে ইসলাম ব্লগারদের তাদের ১৩ দফা সামনে নিয়ে আন্দোলনে নামে। [৩]

৫ই মে ২০১৩ তারিখে হেফাজতে ইসলাম তাদের দাবিনামা নিয়ে এসে ঢাকা শহর অচল করে দেয়। শহরের কেন্দ্রস্থলে জ্বালাও পোড়াও করে অসহনীয় অবস্থার সৃষ্টি করে। গভীর রাতে আইন শৃংখলা বাহিনী তাদের শহর ছাড়া করে। হেফাজতে ইসলাম রাজধানীতে এর পর বড় কোন সমাবেশ না করলেও রাজনীতিতে তাদের অস্তিত্ব এখনও বহাল তবিয়তে বিদ‍্যমান।

ব্লগারদের ওপর খড়গহস্ত হয়ে থাকা হেফাজতের এই রাজধানী থেকে হঠানো আমার কাছে একটা চমক হিসেবে ছিল। চমক এই কারণে যে রাজনীতির মাঠে হেফাজতের উত্থানের পর থেকেই সরকারের মন্ত্রী পর্যায় থেকে শুরু করে আইন শৃংখলা বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে হেফাজতের সাথে বৈঠকের খবর পত্রিকায় এসেছে। আজকে ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে রাজনীতি করতে না দেবার ঘোষণা দেয়া প্রধানমন্ত্রী সেসময়ে বলেছিলেন, [৪]



"হেফাজতে ইসলামের নেতারা বেশ কিছু দাবি-দাওয়া পেশ করেছেন। এ ব্যাপারে আমি কিছু কথা বলতে চাই। যে দাবিগুলো তারা করেছেন তার অনেকগুলোই কিন্তু ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আমরা কিছু কিছু করেছি। কিছু দাবি বাস্তবায়নের পথে যেগুলোর যৌক্তিকতা রয়েছে। যদি কিছু থাকে, তা আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা যেতে পারে।"

ধৈর্য‍্যশীল পাঠকেরা বিডিনিউজের এই লিংক থেকে হেফাজতের দাবির সাথে সরকার কতোটা ও কীভাবে কমপ্লায়ান্ট সেই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ ও বিস্তারিত ব‍্যাখ‍্যা পড়ে নিতে পারেন। নিজেদের ধার্মিক প্রমানের চেষ্টা তথ‍্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু [৫] থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী [৬] কেউই বাদ যাননি। এছাড়া সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে স্বাধীন মতামত প্রকাশের জন‍্য যেভাবে টেনে হিচড়ে বরখাস্ত করে হেনস্থা করা হয়েছে সেটা সরকারের জন‍্য একটি কলংকতিলক হয়ে থাকবে।

হেফাজতের দাবিনামার সাথে সরকারের বিরোধ নেই এটা পরিস্কার হবার পরেও সরকারের পক্ষ থেকে অতিতৎপরতার সাক্ষর পাওয়া গেছে বিভিন্ন সময়ে।[৭] হেফাজতে ইসলামের পীঠস্থান হাঁটহাজারি মাদ্রাসাকে প্রায় ৩২ কোটি টাকা সমমূল‍্যের রেলওয়ের জমি উপহার দেয়া হয়েছে। [৮] এছাড়া ব্লগের উপর খড়গহস্ত মোল্লারা যখন নাস্তিক ব্লগারদের তালিকাসহ অসভ‍্য দাবিমালা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ে দিয়ে এসেছে তখনও তাদের সেখানে সাদর সম্ভাষণ জানানো হয়েছে। পাঠক এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন জনদাবি নিয়ে স্মারকলিপি পেশ করতে যাওয়া বিভিন্ন মিছিলের উপর সরকারের আইন শৃংখলাবাহিনীর আচরণকে স্মরণে নিতে পারেন। সবচাইতে হাস‍্যকর বিষয় হলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কর্তৃক গঠিত এক কমিটি [৯] নাস্তিক ব্লগারদের তওবার হাস‍্যকর দাবিতে পর্যন্ত সায় জানিয়েছিল। [১০] নিচে ৪ নাম্বার সূত্রটি যদি পাঠক মন দিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে দেখতে পাবেন প্রধানমন্ত্রী সেখানে তিন তিনটি আইনের প্রসঙ্গ তুলে বলেছেন ধর্মীয় অবমাননার বিরুদ্ধে শাস্তির ব‍্যবস্থা ইতিমধ‍্যে আইনি কাঠামোর মধ‍্যে রয়েছে। এখন আইনে যদি শাস্তির কথা থাকে তাহলে সেই অনুযায়ী শাস্তির সুপারিশ কমিটি প্রধান সচিব বলতে পারতেন। তা না করে তিনি তওবা যেটার কোন অস্তিত্ব বাংলাদেশের আইনে রয়েছে বলে জানা যায় না তার আশ্রয় নেয়াকে প্রশ্রয় দিলেন!

উপরের দীর্ঘ আলোচনা থেকে এটা পরিস্কার যে সরকার ব্লগারদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ে যতোটা না চিন্তিত, তার থেকে চিন্তিত তাদের ধার্মিক ইমেজ যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেটা নিয়ে। সরকার ধর্মীয় রাজনীতি তো বটেই, সেই ধর্মীয় রাজনীতি যারা করে তাদের আদর আপ‍্যায়নেই আন্তরিকতা দেখিয়েছে। আর ব্লগারদের মুখ বন্ধ করতে চালু করেছে ৫৭ধারার মতো কালো আইন।

অনেকে বলতে পারেন যে পরিস্থিতির প্রয়োজনে হেফাজতে ইসলামের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রেহাই পেতে সরকার একটু নমনীয় ভাব দেখিয়েছিল তখন। এখন হয়তো তারা ওরকমটা করে ভাবে না। এই ভাবনাটা পানি পায় না আজকে ৮ই অগাস্ট ২০১৫ সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আওয়ামী ওলামা লীগের মানববন্ধন ও মানববন্ধন শেষে প্রেস রিলিজটা পড়ে। সচলায়তনের নিয়িত পাঠকেরা হয়তো আওয়ামী ওলামা লীগের পরিচয় আগের একটি লেখা থেকে পেয়ে থাকবেন। [১১]

মানববন্ধনে আওয়ামী ওলামা লীগ যে প্রেস রিলিজটি [১২] প্রকাশ করেছে তার মতো নোংরা ও সাম্প্রদায়িক টেক্সট বাংলায় বেশি লেখা হয়নি। পাঠকের সুবিধার্থে আওয়ামী ওলামা লীগের দাবিনামার চুম্বক অংশগুলো এখানে উল্লেখ করছি।


১. “সরকারের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা হিন্দুত্ববাদী মহলের গভীর চক্রান্ত”এ কান না দিয়ে অবিলম্বে “কুরবানীর পশুর হাট রাজধানীর বাইরে নেয়া বন্ধ করতে হবে এবং প্রত্যেক ওয়ার্ডের মাঠে ১টি করে কমপক্ষে ১০০টি পশুর হাট বসানোর ব্যবস্থা করতে হবে।”

২. “অবিলম্বে কুরবানীর বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদী চক্রান্ত বন্ধ করে কুরবানীর স্থান নির্দিষ্ট করার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে”

৩. “নাস্তিক ব্লগার কর্তৃক বিভিন্ন ব্লগ, ওয়েবসাইট, স্যোসাল মিডিয়ায় কুরুচিপূর্ণ নাস্তিক্যবাদী লেখা বন্ধে ধর্ম অবমাননার জন্য মৃত্যুদন্ডের আইন প্রণয়ন করা : বক্তারা বলেন, এদেশে প্রগতিশীল, বুদ্ধিজীবী ও মুক্তমনার লেবেলে নাস্তিক্যবাদকে ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে। নাস্তিক্যবাদীরা পেপার-পত্রিকা, বইপত্র, সোস্যাল মিডিয়া, অনলাইন সর্বত্রই প্রকাশ্যে পবিত্র ইসলাম ধর্মের কুৎসা রটনা করছে। আখেরী রসূল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত আহলূ বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান-মানের বিরুদ্ধে বলে যাচ্ছে। যা তসলিমা নাসরিন, সালমান রুশদী, দাউদ হায়দারদেরকেও হার মানিয়েছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা। (নাউযুবিল্লাহ)
বক্তারা আরো বলেন, স্বঘোষিত ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক অভিজিতের মতো ব্লগাররা ধর্মব্যবসায়ীদের হাতে ইস্যু তুলে দিচ্ছে। তাই নাস্তিক হত্যাকারীদের যেমন খুঁজে বের করতে হবে তেমনি ইসলাম অবমাননাকারী নাস্তিকদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। নাস্তিক হত্যাকারীদের যেমন শাস্তি দিতে হবে তেমনি ইসলাম অবমাননাকারী নাস্তিক্যবাদী লেখা ও লেখকের শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। নাস্তিক হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া মানে এই নয় যে, মিডিয়া ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিকদের হাইলাইট করবে। সুতরাং এসব নাস্তিক ব্লগার কর্তৃক বিভিন্ন ব্লগ, ওয়েবসাইট, স্যোসাল মিডিয়ায় কুরুচিপূর্ণ নাস্তিক্যবাদী লেখা বন্ধে ধর্ম অবমাননার জন্য মৃত্যুদন্ডের আইন প্রণয়ন করতে হবে।”

৪. “ [ইসকনী হিন্দুরা] ইচ্ছাকৃতভাবে [রথযাত্রা] ফেলেছে শ্রাবন মাসে মুসলমানদের ঈদের দিনে। …. ভবিষ্যতে ঈদের দিনসহ মুসলমানদের বিভিন্ন ধর্মীয় দিবসে রথযাত্রার নামে মুসলমানদের ঈদের দিন ম্লান করার ইসকনী হিন্দুদের ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।”

৫. “ইসলাম বিরোধী রচনা পাঠ্যক্রম থেকে বাদ ও বিতর্কিত শিক্ষানীতি বাতিল করতে হবে : বক্তারা বলেন, ইসলাম ধর্মের প্রতি যাদের কোন আস্থা বা বিশ্বাস নেই বরং ইসলাম ধর্ম বিদ্বেষী এমন সব বামপন্থী ব্যক্তি; জাতীয় শিক্ষানীতি কমিটির চেয়ারম্যান কবীর চৌধুরী, কো-চেয়ারম্যান ড.কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ, সদস্য ড. জাফর ইকবাল, অধ্যাপক নিতাই চন্দ্র সূত্র ধরদের দিয়ে বর্তমান শিক্ষানীতি প্রণয়ণ করা হয়েছে। অথচ এসব কট্টর ইসলাম বিদ্বেষী ব্যক্তিদের প্রণীত শিক্ষানীতি মুসলমানদের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। তারা মূলত এদেশের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের মন-মগজ থেকে দ্বীন ইসলাম উঠিয়ে দিয়ে নাস্তিক্যবাদী মন-মনন গড়তে এ শিক্ষানীতি প্রণয়ণ করেছে। এদেশকে নাস্তিক্যবাদী দেশ বানাতে এই ইসলাম বিরোধী শিক্ষনীতি তৈরী করা হয়েছে।

বর্তমান পাঠ্যপুস্তকে কট্টর ইসলাম বিরোধী হিন্দু ও নাস্তিক লেখকদের লেখাকে নিরঙ্কুশ প্রাধান্য প্রদান করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ ১ম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা বইয়ে অন্তর্ভূক্ত গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধসমূহের মধ্যে মুসলমান লেখকদের তুলনায় বিধর্মী হিন্দু লেখকদের লিখাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। যেমন ১ম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত গল্প ও কবিতার সংখ্যা ১৯৩টি। এর মধ্যে হিন্দু ও নাস্তিকদের লেখার সংখ্যা হলো ১৩৭টি। যা সর্বনিন্ম শতকরা ৫৭ ভাগ থেকে সর্বোচ্চ ৮২ ভাগ প্রাধান্য পেয়েছে।

বক্তারা বলেন, দ্বীন ইসলামকে কটাক্ষ করে লেখালেখি করে এদেশের জাতীয় পর্যায়ে যেসব চিহ্নিত ইসলাম বিদ্বেষী লেখক রীতিমতো কুখ্যাতি অর্জন করেছে, তাদের লেখা পাঠ্যবইয়ের প্রত্যেক শ্রেণীতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। যেমন কুখ্যাত ইসলামবিদ্বেষী ও নাস্তিক হুমায়ূন আজাদ, তসলিমা নাসরিনের স্বামী রুদ্র শহীদুল্লাহ, সেলিনা হোসেন, সনজীদা খাতুন, কবীর চৌধুরী এবং এরকম আরো অনেকে। যা এদেশের মুসলমানদের কাছে কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।

বক্তারা বলেন, আশ্চর্যের বিষয় হলো, বাংলাদেশে বহু ইসলামী ঐতিহ্যবাহী পুরাকীর্তি ও স্থাপত্য নিদর্শন থাকলেও তা নিয়ে কোন অধ্যায় বা প্রবন্ধ সংযোজন করাতো দূরের কথা, তা নিয়ে কোনপ্রকার বর্ণনা দিতেও চরম কার্পণ্য করা হয়েছে। এসব বই দেখলে বোঝার উপায় নেই যে, এদেশে মুসলমানরা বসবাস করে।

বক্তারা বলেন, কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী বক্তব্য যুক্ত ও ষড়যন্ত্রমূলক এসব পাঠ্যপুস্তক অবিলম্বে বাজেয়াপ্ত করতে হবে। সাথে সাথে ইসলাম বিরোধী প্রচলিত শিক্ষানীতি বাতিল করতে হবে। ৯৮ ভাগ মুসলমানের এদেশের শিক্ষানীতি সম্পূর্ণ ইসলামিক করতে হবে।”

৬. “মেয়েদের বিয়ের কোনো বয়স নির্ধারণ করা যাবেনা, সুন্নতি বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে কুফরী আইন বাতিল করতে হবে : বক্তারা বলেন, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী বলেছে, ‘মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ বছরের নীচে কমানো হবে না।’ (নাউযুবিল্লাহ) অথচ আখেরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মীনীন হযরত আয়শা সিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনাকে ৬ বছর বয়স মুবারকে সাদী মুবারক করেছেন এবং ৯ বছর বয়স মুবারকে ঘরে তুলেছেন। ইসলামী শরীয়তে বিয়ের বয়স নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। তাই মেয়েদের বিয়ের বয়সের ক্ষেত্রে নারীবাদী, প্রগতিবাদীদের চাপে কোন বয়স নির্দিষ্ট করা যাবেনা।”

তালিকা আরো লম্বা করা যেত। শালীনতার খাতিরে এখানেই থামা হল। আগ্রহীরা লিংক থেকে পুরো প্রেস রিলিজটি পড়ে নিতে পারেন।

তো, যে মুহুর্তে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগি একটি দল এই সমস্ত অশ্লীল দাবিনামা ঢাকা শহরের রাস্তায় মাইকে উগরাচ্ছে তখন শেখ হাসিনা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কনফারেন্স রুমে দাবি করছেন ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করতে দেয়া হবে না। দুঃখিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এভাবে হবে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের এধরণের অবস্থান সাংঘর্ষিক। ব্লগারদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে সরকারের কোন উল্লেখ করার মতো তৎপরতা নেই। এই অনুপস্থিত তৎপরতা, ধর্মানুভূতির রাজনীতি তোষণ, ব্লগারদের মুখ বন্ধ করতে কালো আইন প্রনয়ন, ব্লগারদের নিরাপত্তায় আইন শৃংখলা বাহিনীর ব‍্যর্থতা, হত‍্যাকান্ডের পর তদন্তকার্যে কোন দৃশ‍্যমান অগ্রগতি না করতে পারা এরকম একটা সন্দেহ তৈরি করে যে সরকার আসলেই দেশের জনগণের জন‍্য একটি মতপ্রকাশের প্লাটফর্ম টিকিয়ে রাখতে চায় কিনা।

সূত্রঃ

১. ধর্মের নামে রক্তপাত চলতে দেওয়া হবে নাঃ প্রধানমন্ত্রী [বাংলাট্রিবিউন]
২. ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে রাজনীতি করতে দেব না: প্রধানমন্ত্রী
 [প্রথম আলো]
৩. হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি [নীড়পাতা]
৪. হেফাজতের দাবি মানা হয়েছে, হচ্ছেঃ প্রধানমন্ত্রী [বিডিনিউজ]
৫. তথ‍্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর বক্তৃতা [নীড়পাতা]
৬. ব্লগার হত‍্যার বিচারে সরকার কতোটা আন্তরিক [বিবিসি]
৭. হেফাজত ইস‍্যুতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব‍্যক্তিদের কিছু বক্তব‍্যঃ [নীড়পাতা.কম]
৮. শফীকে ৩২ কোটি টাকার জমি উপহার দিচ্ছে রেলওয়ে! [মানবজমিন]
৯. ব্লগ-ফেইসবুকে ইসলাম অবমাননা সনাক্তে কমিটি [বিডিনিউজ]
১০. নাস্তিকদের তওবায় সায় কমিটির [বিডিনিউজ]
১১. দানবের থাকা থেকে মুক্ত হোক একুশে বইমেলাঃ [সচলায়তন]
১২. আওয়ামী ওলামা লীগের প্রেসরিলিজ ৮ই অগাস্ট ২০১৫ [নীড়পাতা]


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

সহমত।

অতিথি লেখক এর ছবি

এই ওলামা লীগ বস্তুটা আসলে কি? এখানে কারা খুঁটি গাড়সে। যদিও ওলামা লীগ ব্যাপার টাই আমার কাছে তামাশা মনে হয়, তবে একটা জিনিস মনে পড়ছে, দশ বা বারো বছর আগেও ওলামা লীগ এর কিছু নেতার কথা শুনে ছিলাম টিভির টক শো তে, এত জঘন্য মনে হয় নি, বেশ ভালই ছিল, তারা সম্ভবত আর জড়িত না এই গ্রুপ এর সাথে।

অনন্যা

হাসিব এর ছবি

ওলামা লীগের সেই ভালমানুষদের জিজ্ঞেস করেন যে ওলামা লীগের বর্তমান দাবির সাথে তাদের কোন কোনটাতে দ্বিমত আছে। আমার ধারণা তাদের কোন দ্বিমত নেই।

সুবোধ অবোধ এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

http://bdnews24.com/bn/detail/politics/950916

ওলামা লীগ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই অনেকের মাঝেই দ্বিধাদ্বন্দ কাজ করছে। আওয়ামিলীগ ইচ্ছা করেই বিষয়টা পরিষ্কার করছে না। প্রয়োজন মত ব্যবহার করার সুযোগটা হাত ছাড়া করতে না চাওয়াই তার মুল কারন। উপরের সংবাদটা সেদিকেই ইংগিত করে

মামুনুর রশীদ
===========
হাজারো মানুষের ভিড়ে আমি মানুষেরেই খুজে ফিরি

স্যাম এর ছবি

চলুক
আওয়ামী ওলামা লীগের লোকজন কারা? নেতা কারা?
আওয়ামীলীগের গঠনতন্ত্রে ওলামা লীগ নামে কোন সহযোগী সংগঠন নাই। কিন্তু ওলামা লীগ সভা ডাকে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্য্যালয়ে!!!
নামের সাথে আওয়ামী জুড়ে দিয়ে যে কোন গোষ্ঠী যদি সভা ডাকে মূল দলের কার্যালয়ে, অঙ্গসংগঠন হিসেবেই পরিচিতি পাবে সেই গ্রুপ - যদি না তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়। গঠনতন্ত্রের গুরুত্ব রক্ষা করা আওয়ামীলীগেরই দায়িত্ব।

হাসিব এর ছবি

আওয়ামী লীগের সাইটে তাদের সহযোগি সংগঠনগুলোর তালিকা পেলাম।

সহযোগী সংগঠন:

বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ
বাংলাদেশ কৃষক লীগ
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ
বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ
আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ
বাংলাদেশ তাঁতী লীগ
বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ

এখানে খেয়াল করে দেখেন ছাত্রলীগের নামও নাই। এছাড়া একটা দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় কার্যালয়ের ঠিকানা সম্বলিত প‍্যাড ব‍্যবহার করে যত্রতত্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এটা কেন্দ্রের সম্মতি ছাড়া অসম্ভব ঘটনা। পুলিশ তাদের রাস্তায়ই নামবার অনুমতি দেবে না।

স্যাম এর ছবি

হ্যা ঐ পেইজে ছাত্রলীগের নাম নাই , অবশ্য বাংলা ইংরেজি দুই গঠণতন্ত্রেই ছাত্রলীগের নাম আছে

হাসিব এর ছবি

আওয়ামী ওলামা লীগ প্রকৃত আওয়ামী নহে এরকম মন্তব‍্য আসলো বলে! শয়তানী হাসি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হানিফ অনেক আগেই একথা বলে রেখেছেন (লিংক খুজে পাচ্ছিনা)

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ড়াষেল  এর ছবি

স্থানীয় পর্যায়ে শিবির বা জামাতের সাবেক লোকজনই বর্তমান ওলামালীগ। জাতীয় পর্যায়ে জানিনা।

নজমুল আলবাব এর ছবি

তীব্র মন খারাপ নিয়ে এই লেখার প্রতি সমর্থন জানালাম।

অদিতি কবির খেয়া এর ছবি

সহমত। আর কিছু বলতে পারছি না। এত অসহায় লাগছে।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

হতাশায় সহমত

সুবোধ অবোধ এর ছবি

মন খারাপ
স‌হ‌ম‌ত।

স্পর্শ এর ছবি

স্পষ্ট পরিশ্রমী লেখনীর জন্য সাধুবাদ। চলুক


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতিথি লেখক এর ছবি

সহমত।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

নিটোল এর ছবি

একমত। চলুক

_________________
[খোমাখাতা]

ফরহাদ হোসেন মাসুম এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, ভাই। সবকিছুর আপডেট পাওয়ার সময় হয় না, উপায় হয় না। এতো জায়গা থেকে খুঁজে খুঁজে মানুষকে এতো কিছুর লিংকও দেয়া হয়ে উঠে না। এই একটা লেখা অনেক সাহায্য করবে।

লিখতে থাকুন। সাবধানে থাকুন, প্লিজ।

এক লহমা এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

শব্দ পথিক এর ছবি

বিএনপি-জামাত আমলে ব্লগার-লেখকদের এমন সিরিয়াল কিলিং হলে আওয়ামী লীগ রাজপথ কাঁপিয়ে সরকারের পতন ঘটিয়ে দিতো প্রায় আর আমরাও যারা অনলাইনে সক্রিয় তারা বিএনপিকে ধুয়ে দিতাম।

সত্যি বলতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ব্যতিরেকে অন্য সকল ইস্যুতে আওয়ামী লীগ বিএনপি'র সাথে আদর্শিক ব্যবধান কমাতে সফল হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের নামটাই টিকে আছে কেবল, আদর্শ এবং বঙ্গবন্ধুর দৃঢ়তা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে থাকা আওয়ামী লীগে একেবারেই অনুপস্থিত।

----------------------------------------------------------------
''বিদ্রোহ দেখ নি তুমি? রক্তে কিছু পাও নি শেখার?
কত না শতাব্দী, যুগ থেকে তুমি আজো আছ দাস,
প্রত্যেক লেখায় শুনি কেবল তোমার দীর্ঘশ্বাস!''-সুকান্ত ভট্টাচার্য

ড়াষেল  এর ছবি

বরিশালের এক সময়ের জাঁদরেল শিবির নেতা এখন ওলামালিগের বড় নেতা। তাহলেই বুঝেন কেমনে কি হচ্ছে?

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

আইন তো পাশ হয়েই গেলো বলে! কোন লেখাকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বলেবেন সেটা কে নির্ধারণ করে দেবে?

____________________________

নীড় সন্ধানী এর ছবি

বিরক্ত আছি!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

রানা মেহের এর ছবি

মুক্তিবুদ্ধির চর্চার পথ কখনোই রাষ্ট্র আর সমাজের কাছে অভিলাষের বস্তু ছিলনা, হবেও না। সরকারকে দোষ দেই, গালি দেই; গালি তাদের প্রাপ্যও। আমরা কি একবারও ভেবে দেখেছি সরকার আসলে আমাদেরই অংশ। হালাল-হারাম হিজাবের তোড়ে ভেসে গিয়ে আমরাই কি ধর্মকে প্রাত্যাহিক আনুষঙ্গ বানিয়ে দেইনি? আওয়ামীলীগ কিংবা সরকারের এই নতজানু হওয়াতে আমাদের এই বাঙ্গালি থেকে মুসলিম হিসেবে পূনর্জন্ম নেয়ার ভূমিকা কি নেই একটুও?

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

কাক্কেশ্বর কুচকুচে এর ছবি

দুঃখজনক হলেও সত্যি, প্রধানমন্ত্রী আমাকে ভয়াবহ রকমের হতাশ করে চলেছেন মন খারাপ

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।