ভোখেনব্লাট - ২

হাসিব এর ছবি
লিখেছেন হাসিব (তারিখ: সোম, ২৯/১০/২০০৭ - ২:৩০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

২২শে অক্টোবর, ২০০৭
জার্মানিতে এবার আগে ভাগে বরফ পড়া শুরু হয়েছে । অক্টোবরটা মূলতঃ পাতা ঝরার মাস । তাপমাত্রা ১০-১২ ডিগ্রির মধ্য থাকার কথা থাকলেও এখনই এটা রাতে শূন্যের আশে পাশে যাওয়া আসা শুরু হয়েছে । আমার কাছে এই শূন্যের আশপাশ দিয়ে ঘোরা তাপমাত্রাগুলো অসহনীয় মনে হয় । মোটামুটি ৪ থেকে মাইনাস ২/৩ তাপমাত্রা খারাপ, তার নিচে মাইনাস ১৫/১৬ ডিগ্রি পর্যন্ত খারাপ লাগে না । তুষারপাতের মধ্যে দিয়া হাটা আমার একটা প্রিয় বিনোদন একারনে ।

আমি কলেজ লাইফের পর থেকে ইউনিভার্সিটির সেকেন্ড ইয়ার পর্যন্ত কঠিন শীতের রাতগুলোতে রাতে শীত খেতে বেরোতাম । কলেজ লাইফের বন্ধু আজগর, ইউনিভার্সিটির মঈন, রাসেল ছিলো এই অভিযানের সাথী । শীত খেতে বেরনো হতো রিকশা করে । শহরের গোপীবাগ, রামপুরা, মাদারটেক এলাকা থেকে গভীর রাতে রিকশা ভাড়া করে শহরের আরেক মাথায় মিরপুর বা মোহাম্মদপুর যাওয়া হতো । রিকশা ভাড়া করতে গিয়ে রিকশাওয়ালারা বেশ অবাক হতো । বড়লোকের বখাটে পোলাপাইন ভাবতো হয়তো । আবার কিছু রিকশাওয়ালা ছিলো বেশ এ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মিশুক টাইপের । তারা খুব উৎসাহের সাথে রওনা হতো । রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে রিকশাওয়ালাসহ সিগারেট টানা, রাস্তায় কোথাও ইটালিয়ান হোটেলে বসে ধোয়া ওঠা ডিমভাজির সাথে তেল ছাড়া পরোটা খাওয়া - সেইরকম দিন ছিলো সেইসব ।

তো এইখানেও আমি প্রবল শীতের রাতে একাই ঘুরতে বেরই । পুরনো স্মৃতির জাবর কাটা যাকে বলে । শীতের রাতে এখানে বেশীক্ষন এই জাবর কাটা সম্ভব না । আধাঘন্টা পরই গাল মুখ সব জমে যেতে চায় । এছাড়াও জার্মান দেশটাতে ইটালিয়ান রেস্তোরা নাই । রাস্তার ধারে ইটালিয়ান হোটেলে ধোয়া ওঠা ডিমভাজী আর তেল ছাড়া পরোটার স্বাদ এদের কাছে অপরিচিতই থেকে গেলো । মাঝে মাঝেই এদের গালি দিয়ে বলি হালারা গাড়ী বানাইতেই শিখলি, খাইতে শিখলি না ।

২৪শে অক্টোবর, ২০০৭
আজকে গুগল নিউজ ঘাটতে ঘাটতে একটা খবরে চোখ আটকালো । খবরে বলছে এখন প্রতি চারজনের একজন জার্মান মনে করেন নাৎসি জার্মান পুরোটাই খারাপ ছিলো না । উদাহরন হিসেবে তারা আউটোবান (ইংরেজীতে অটোবান, জার্মানীর মহাসড়ক), পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে নাৎসি নীতিগুলোর উল্লেখ করেছেন তারা ।

আমি যখন স্কুলে পড়তাম তখন এক স্যারের কাছে পড়তাম । স্যার পাকিস্তান আমলের ইয়াহিয়া খান, মোনায়েম খানদের মহাভক্ত ছিলেন । ওনাদের আমলে কিরকম নিয়মকানুন মেনে দেশ চলতো, ঢাকা শহরের কি কি জিনিসের মাস্টারপ্ল্যান (আসলেই কি এরকম কিছু আছে ?) তাদের আমলে করা, কোন রাস্তাটা তাদের সময়কার ইত্যাদি । তো গুগল নিউজে দেয়া জার্মানীর খবরটা পড়ে আমার মনে হলো বাঙাল একাই শুধু খারাপ না । খারাপ চিন্তার লোক বিদেশে গেলেও পাওয়া যায় ।

২৫শে অক্টোবর. ২০০৭
জার্মান ইকোনমি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ইকোনমি । ইউএসএ, জাপানের পরই এদের অবস্থান । আজকে খবরে দেখলাম এই অবস্থান থেকে তাদের অচিরেই হটাতে যাচ্ছে চাইনিজরা । শুধু তাই না, ২০০৮ নাগাদ জার্মানরা বিশ্বের এক নাম্বার রপ্তানিকারকের স্থান চীনের কাছে খোয়াতে যাচ্ছে । শুনে মন খারাপ হলো একটু । সস্তা প্রডাক্টের কাছে কোয়ালিটি প্রডাক্ট মার খাচ্ছে । ছাতা আর মোবাইল বাদে সবকিছুতেই জার্মান জিনিসের একটা আলাদা মাজেজা আমি খেয়াল করেছি । এরা কাজ করে সিরিয়াসলি, সেই কাজের প্রডাক্টও হয় সেইরম সিরিয়াস । কিন্তু তা সত্ত্বেও চায়নিজ প্রডাক্টের কাছে মার খাচ্ছে এরা । বাজার অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যই এটা ।

২৬শে অক্টোবর, ২০০৭

ক.
আজকে সকাল বেলা এক মজার ঘটনা ঘটলো । একা বাস স্টপেজে বাসের জন্য দাড়িয়ে আছি । এমন সময় এক কাভার্ড ভ্যান এসে থামলো সামনে । কোন সার্ভিস কোম্পানির ভ্যান হবে হয়তো । ভেতরে তাকিয়ে দেখলাম এক ভদ্রলোক হাতের ইশারায় ডাকছেন আমাকে । প্রথমে মনে করলাম রাস্তা খুজে পাচ্ছে না হয়তো । এরকম অনেকেই বাস স্টপেজে থেমে লোকজনের কাছে রাস্তার তত্ত্ব তালাশ করেন । তো কাছে গিয়ে দেখলাম ঘটনা তা না । ভদ্রলোক সম্ভবত আরবীয়, অথবা উত্তর আফ্রিকার কোন দেশের । ভাঙা জার্মান আর আরবী ভাষা মিশিয়ে আমাকে লিফট অফার করলেন তিনি । তিনি আরোও জিজ্ঞেস করলেন আমি মোহামেডান কিনা ! আমি বেশ চমকিত হলাম । তিন বছরের জার্মানবাসে এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা । কাউলা আউসলান্ডাররে কেউ যে যেচে পড়ে লিফট অফার করতে পারে এটা আমার চিন্তায়ও ছিলো না গত বছরগুলোতে । বিষয়টা নিয়ে ভাবতে গিয়ে একটু পরই খেয়াল হলো যিতি লিফট অফার কর‌ছেন তিনিও আমার মতো আউসল্যান্ডার । বুঝলাম ডয়েশে মান হতে পারেনি এখনও এই বেচারা । এখনও প্রাচ্য দেশীয় স্বভাবমতো বন্ধুত্ব খোজেন রাস্তাঘাটে । আলাপ জমান এর ওর সাথে যেখানে যাকে পান ।

জার্মানিতে বাস করা বিভিন্ন দেশগুলার তুলনামূলক সংখ্যা চিত্র ।

খ.
আজকাল শুক্রবারে বাজার সেরে ফেলার চেষ্টা করি । এতে করে পুরো উইকেন্ডটাই আলসেমি করার জন্য ফ্রি পাওয়া যায় । সন্ধ্যায় বেরলাম দেশী বাজার করতে । দেশী বাজার মানে আদা, কাঁচা মরিচ, মুড়ি, চানাচুর, মাছ, মশলা কেনা । সিটি সেন্টারে গিয়েই দেখলাম এলাহী কান্ড । বেশ বড় একটা মিছিল বের হয়েছে । এই শহরে এর থেকে বড় মিছিল শুধু শ্রমিক ইউনিয়নের হয় । দেখলাম মিছিলের সামনে কয়েকজন বাদ্য বাজাচ্ছেন । ইওরোপের রাস্তাঘাটে এরকম বাজিয়েদের দেখা মেলে । শুনতে বেশ লাগে ।একটু এগিয়ে দেখলাম এটা হ্যালোইনের মিছিল । পুরো মিছিলে গুড়ো গুড়ো পিচ্চিরা হ্যালোইনের লন্ঠন হাতে বাবা মার হাত ধরে হাটছে । মিছিল দেখলেই সেটাতে আমার ভিড়ে যেতে ইচ্ছে করে । ইউনিভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ারে দল লীগ ইউনিয়ন ফ্রন্ট ফেডারেশন সবগুলো মিছিলে যেতাম । তখনকার মতোই সুড়সুড় করে আমি ঢুকে পড়লাম মিছিলে । ঢোকার একটু পর টের পেলাম গুড়ি গুগলিগুলো সব তাদের হ্যালোইনের লন্ঠন ছেড়ে আমাকেই দেখছে । তাকিয়েদের দলে কয়েকজোড়া মা বাবাকেও খেয়াল করলাম । আরেকটু ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম পুরো মিছিলে আমি ছাড়া কাউলা বাদামী সাদা কেউই নাই । এটা দেখেই মানে মানে বের হয়ে গেলাম মিছিল থেকে । এই একই ঘটনা আমি গত বিশ্বকাপের সময়ও দেখেছি । বড় বড় স্কৃনের সামনে সব জার্মানরাই উৎসব করছে । তুর্কি/কালোদের উপস্থিতি হাতে গোনা । একই দৃশ্য কনসার্টগুলোতে । সেদিন জার্মান হেভি মেটাল ব্যান্ড রামস্টাইনের কনসার্ট দেখছিলাম । একই দৃশ্য ঘুরে ফিরে বারবার । জার্মান সমাজ আর অভিবাসিদের সমাজের সম্পর্কটা সেই তেলে-জলে সম্পর্কের মতো রয়ে গেছে । সংঘর্ষ নেই । কিন্তু একটা আরেকটা থেকে ভীষণ রকম আলাদা ।

অভিবাসিদের সোসাইটিতে ইন্টেগ্রেশন নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে বেশ অনেক লাফঝাপ হয়েছে এখানে । দোষ দু”ই পক্ষেরই আছে । জার্মান সোসাইটি যেমন বাইরের কাউকে গ্রহন করে না সহজে তেমনি ইমিগ্র্যান্ট সোসাইটিও নিজেদের গুটিয়ে রাখে নিজেদের মধ্যে । আমি একজন তুর্কাই ভদ্রলোককে চিনি যিনি ৭০এর দশকে গায়স্টারআরবাইটার (গেস্ট ওয়ার্কার) প্রগ্রামে এসেছিলেন কিন্তু এখনও জার্মান বলতে পারেন না । ভদ্রলোক সেই তুর্কি সমাজের মধ্যেই পুরো জীবনটা কাটিয়ে দিলেন । উল্টোদিকে জার্মানরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোন বিষয়ের খোজ খবর রাখে না । পালা পর্বনে শুভেচ্ছা জানানো দুরে থাক । এরা জানেই না অন্য সম্প্রদায়ের পালাপর্বনগুলো কি । ঢাবির জগন্নাথ হলের স্বরস্বতী পুজোর পরিবেশ এখানে অকল্পনিয় ।

২৮শে অক্টোবর ২০০৭
আজকে পল্টন-বিবাদ বার্ষিকী । নেতাদের অনুকরনে অনলাইন ব্লগ/ফোরামগুলোতে কিছু নিওরাজাকারের আস্ফালনের বহর দেখে আমার মনে হচ্ছে বাংলার ইতিহাসে ট্রাজেডী ঘটেছে মাত্র দুইটা । প্রথমটা সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় । দ্বিতীয়টা পল্টনে আওয়ামী লীগের কর্মীদের হাতে জামাতের একজন কর্মী হত্যা । মাঝখানের যে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে দেশটা স্বাধীন হলো সে বিষয়ে এদের আশ্চর্যজনক নিরবতা ও কিছু ক্ষেত্রে ডিনায়াল লক্ষ করা যায় ।

আমরা যেমন “৭১এ পাকিস্তানি হানাদারদের এদেশীয় মিত্রদের অস্তিত্বের লজ্জা বয়ে বেড়াই তেমনি জার্মানরাও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গ্লানি বয়ে বেড়ায় । তবে এখানে পার্থক্য হলো জার্মানিতে ওদের বিচার হয়েছে । আমাদের এখানে হয়নি । ন্যুরনব্যর্গ ট্রায়ালসে তখন পর্যন্ত ধরা পড়া নাৎসিদের বিচারের পর শাস্তি হয়েছে । জার্মানরা সেখানেই তাদের প্রায়শ্চিত্ত শেষ করেনি । নাৎসি হান্টিং এখনও চলছে ও সেটা নিয়ে এখনও বেশ ভালোই আলোড়ন হয় এখানে ।

ভোখেনব্লাট -১এ গুন্টার গ্রাসের নাৎসি সংশ্লিষ্টতার কথা বলেছিলাম । সম্প্রতি জার্মানির এক বিখ্যাত পরিবারের নাৎসি সংশ্লিষ্টতার খবর একটি টিভি ডকুমেন্টারিতে প্রকাশ করা হয়েছে । টিভি চ্যানেল নর্ড ডয়েশে রুঙ্কফুঙ্ক (এনডিআর) বিএমডাব্লিউয়ের মালিক কোয়ান্ডট পরিবারের নাৎসি ভূমিকার ওপর নির্মান করা এই ডকুমেন্টারিতে দেখানো হয়েছে কিভাবে বর্তমান মালিকদের প্রপিতামহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জোরপুর্বক দাসশ্রম ব্যবহার করেছে । ডকুমেন্টারি সম্প্রচারের পরপরই পুরো জার্মানিতে এই নিয়ে প্রতিবাদে ঝড় ওঠে । তীব্র সমালোচনার মুখে কোয়ান্ডট পরিবার ডকুমেন্টারি সম্প্রচারের পাঁচদিন পর তারা যথেষ্ট তথ্য প্রকাশ করেননি স্বীকার করে একজন ইতিহাসবিদের কাছে পারিবারিক ও কোম্পানীর ব্যবসায়িক গোপনীয় তথ্য প্রকাশ করেন ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বড় বড় জার্মান কোম্পানি কনসেনট্রেশন ক্যাম্প থেকে কাজ করার লোক যোগাড় করতো । কোম্পানিগুলো এসএস ফান্ডে ২০ সেন্ট করে প্রতি শ্রমিকের শ্রমঘন্টার জন্য দিতো । এভাবে বিএমডাব্লিউ ২৫-৩০ হাজার বন্দি শ্রমদাস এসএস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিয়েছে ।

বিএমডাব্লিউ ছাড়াও শ্রমদাস ব্যবহারকারিদের তালিকায় ফোলক্সভাগেন, ক্রুপ, যিমেন্স, বায়ার, পোরশে ও ডাইমলার বেনৎযের মতো কোম্পানিও রয়েছে । তাদের অপকর্মের একটা লিস্টি দেই পাঠকদের জন্য ।

  • ক্রুপ (Krupp): জার্মান কফি মেশিন, ওয়াশিং মেশিন নির্মাতা । গ্যাস চেম্বারগুলোর নির্মাতাও ক্রুপস ছিলো । ১৯ হাজার বন্দি শ্রমদাস ব্যবহার করেছে তারা । ৪ মিলিয়ন মার্ক চাঁদা দিয়েছে নাৎসি ফান্ডে । অতিরিক্ত শ্রমে মৃত বন্দিদের কারখানার মধ্যেই পুড়িয়ে ফেলতো তারা । কুখ্যাত কনসেনট্রেশন ক্যাম্প আউসভিৎসে যিমেন্স ও বায়ারের সাথে তারা শ্রম খাটাতো ।
  • বায়ার (Bayer), বিএএসএফ (BASF) ও হোয়েখস্ট (Hoechst): এগুলো তখন একত্রে একটি কোম্পানি ইগে ফারবেন (IG Farben) নামে পরিচিত ছিলো । গ্যাস চেম্বারে ব্যবহারের জন্য ৎসিকলোন-বে (Zyklon-B) গ্যাস এদের বানানো ও সরবরাহকৃত । আউসভিৎসে তাদের প্রডাকশনে নিয়োজিত ৩৫ হাজার শ্রমদাসের মধ্যে ৩৫ হাজারের মধ্যে ২৫ হাজারই মৃত্যুবরণ করে । তাদের নিয়ন্ত্রনে থাকা বন্দিদের গড় জীবতকাল ছিলো সাড়ে তিন মাস ।
  • ডাইমলার-বেনৎয (Daimler-Benz) : বিখ্যাত ম্যারসেডেস (Mercedes) গাড়ি নির্মাতা । নাৎসি সেনাদের জন্য যুদ্ধাস্ত্র বানাতো তারা । প্রায় ৩৫ হাজার শ্রমদাস তারা এসব অস্ত্র নির্মানে ব্যবহার করেছে ।
  • ফোল্কসভাগেন (Volkswagen): বিখ্যাত বিটল গাড়ি নির্মাতা । যুদ্ধের সময় তারা অস্ত্র বানানো শুরু করে । আনুমানিক ২০ হাজার শ্রমদাস ব্যবহার করে ।
  • ওপেল (Opel): আমেরিকান কোম্পানী জেনারেল মোটর্সের সাবসিডিয়ারি । যুদ্ধের সময় জার্মান আর্মির প্রায় অর্ধেক ট্রাক তারাই সরবরাহ করেছে অন্যদের মতোই শ্রমদাস ব্যবহার করেই । যুদ্ধের সময় জিএম দাবি করেছিলো তারা ওপেলের কাছ থেকে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেছিলো যুদ্ধের সময় । তা সত্ত্বেও জিএম এই শ্রমদাসদের ঘামরক্তে অর্জিত মুনাফা যুদ্ধের পরে নিতে কোন কার্পন্য দেখায়নি।

কিছু কোম্পানির পরিচালকদের ন্যুরনব্যর্গ ট্রায়ালসে বিচার হয়েছে । এর পরও এসব কোম্পানিকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে । যুদ্ধে শেষ হবার পঞ্চাশ ব্ছর পর হলেও ।

৬০ বছরের বেশী পার হয়েছে যুদ্ধের পরে । তবুও জার্মানিতে আজও নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের খুঁজে বের করে তাদের বিচারের সম্মুখিন করা হয় । যুদ্ধের শেষ মুহূর্তে অনেকেই পালিয়ে গেছে এদিক ওদিক । তাদের ধরা পড়ার খবর মাঝে মাঝে পত্রিকায় দেখা যায় ।

এরনা ভালিশ ও গাই ওয়াল্টারসএরনা ভালিশ ও গাই ওয়াল্টারস

এই সপ্তায় এরকমই একজন নাৎসি যুদ্ধাপরাধিকে খুজে পাওয়া গেছে অস্ট্রিয়াতে । পালিয়ে যাওয়াদের তালিকায় তার নাম ৭ নম্বরে । ভদ্রমহিলার নাম এরনা ভালিশ (Erna Wallisch) । ব্রিটিশ ইতিহাসিক ও লেখক গাই ওয়াল্টারস (Guy Walters) তাকে খুজে বের করেন । এই এরনা ভালিশ করসেনট্রেশন ক্যাম্পে বন্দি নির্যাতন ও হত্যার সাথে জড়িত ছিলেন । এছাড়া তার একটা নিয়মিত কাজ ছিলো নারী ও শিশুদের গ্যাস চেম্বারে নেবার পথে মারধোর করা । অন্তস্বত্তা অবস্থায়ও তার এইসব কাজের বিরতি ছিলো না । ৮৫ বছরের বৃদ্ধা প্রায় অথর্ব এই যুদ্ধাপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি উঠেছে এখানে ।

আমাদের অভাগা বাংলাদেশেই শুধু নরকের কিটগুলো পার পেয়ে যায় । জার্মানিসহ ইওরোপের আরোও কয়েকটি দেশে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গণহত্যা নিয়ে প্রশ্ন করাটাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ । অথচ বাংলাদেশে এগুলো নিয়ে প্রশ্ন তো তোলা যায়ই । উল্টো যথেচ্ছ ইতিহাস বিকৃতিও চলে এখানে । সবকিছুই হয়তো নষ্টদের অধিকারে যাবে এখানে ।

যাই হোক, অনেক বড় হয়ে এবারের ভোখেনব্লাটটা । শোয়েনেস ভোখেনেন্ডে ।

টিকা
১. ডয়েশে মান - জার্মানি বা ডয়েশলান্ডের লোক
২. পাই চিত্রটার সূত্র লিংক
৩. শ্রমদাস ব্যবহারকারি কোম্পানিগুলোর তালিকা এখানে পাওয়া যাবে ।


মন্তব্য

হাসিব এর ছবি

হমম... এইটাতেই ফাইসা গেছি । প্রচুর সময় কিল করে এইটা । মন খারাপ

সৌরভ এর ছবি

হেহে, সিরিয়াস ব্লগিং টাইম খাবেই।
চলুক।


আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

হাসিব এর ছবি

সিরিয়াস কিনা জানিনা । তয় আমি এই সিরিজটারে জার্মানবাসের সময় চিন্তাভাবনাগুলোরে ডকুমেন্টেড করার একটা চেষ্টা হিসেবে দেখতেছি । গড়পড়তা ডকুমেন্টগুলো বেহেশতের আগের স্টেশনের বর্ননা দিয়া ভর্তি থাকে । ওগুলোর কাউন্টার হিসেবে আমি এদের ভালো জিনিসটা প্লাস পাশাপাশি খারাপ জিনিসটাও লেখার চেষ্টা দেব। কারন, সাহিত্যচর্চার থেকে পুরো চিত্রটা তুলে ধরে আনাটা জরুরী মনে হয় আমার কাছে ।

ভাস্কর এর ছবি

আজকে গুগল নিউজ ঘাটতে ঘাটতে একটা খবরে চোখ আটকালো । খবরে বলছে এখন প্রতি চারজনের একজন জার্মান মনে করেন নাৎসি জার্মান পুরোটাই খারাপ ছিলো না । উদাহরন হিসেবে তারা আউটোবান (ইংরেজীতে অটোবান, জার্মানীর মহাসড়ক), পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে নাৎসি নীতিগুলোর উল্লেখ করেছেন তারা ।

ভালো জায়গা ধরছেন...কিন্তু এইটা এই দেশে হয় নেই বনে বাঘ শিয়াল রাজার কাহিনী...কেউ কিছু করে না তাই যোগাযোগ ব্যবস্থার অপরিকল্পিত উন্নয়ন কইরাও এরশাদ উত্তরবঙ্গের নয়নমনি...ঐ দেশে এই বিচারের মাপকাঠি কি হইতে পারে?


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

হাসিব এর ছবি

..ঐ দেশে এই বিচারের মাপকাঠি কি হইতে পারে?

এইটা ঠিক শিওর না । মানুষজন না জাইনা নিজের ধারনা থিকা অনেক কিছু বলে বা লেখে । সোসাইটির বাইরে থাইকা ঐগুলা শুইনা বা পইড়া কিছু বলা কঠিন ।
তবে বেশীরভাগের মত যেটা সেটা হলো অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি গেরহার্ড শ্রোয়েডাররে ক্ষমতা থিকা নামাইছে । আরেকটু বেশি বাম গ্রিন পার্টির সমর্থন প্রত্যাহারও একটা বড় কারন । এই সমর্থন কেন প্রত্যাহার করলো তারা এইটা ঠিক জানি না আমি । সুমন রাজনীতির ছাত্র, সে বোধহয় কৈতে পারবে । গতবারের আগের বার যখন তার অবস্থা নড়বড়ে ছিলো তখন পত্রিকায় দেখছিলাম ইরাক যুদ্ধে বিরোধীতাই নাকি তখন তারে নড়বড়ে ভাবে হইলেও ক্ষমতায় বহাল রাখছিলো । গড়পড়তা জনগন আসলে কি ভাবে সেইটা বলা কঠিন ।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আপনার োদেনফ্লাট থুক্কু ভোখেনব্লা ব্লার বিরাট ফ্যান হয়ে গেলাম আমি!! কঠিন হচ্ছে! আমিও লিখা শুরু করব এইরকমটা ভাবছি।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

হাসিব এর ছবি

শুরু করেন । সাইট দাড়ায় গেছে । আপনি আর অরূপ এখন বিশ্রাম নিয়া লেখালেখি শুরু করেন পুরোদমে ।

অতিথি লেখক এর ছবি

কদিন আগে হোটেল রুয়ান্ডা নামের একটা ছবি দেখলাম। সেই একই গণহত্যা, মাইলের পর মাইল শুধু লাশ আর লাশ, আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে সব। ছবিটা দেখে একটু ঘাটাঘাটি করে জানতে পারলাম, এক যুগ আগের ঐ গণহত্যার বিচার হচ্ছে এখন, রুয়ান্ডাতে চলছে স্থানীয় নেতা, ছোটাখাটো অপরাধীদের বিচার; আর অন্তর্জাতিক বিচার ট্রাইবুনালে চলছে রাঘব-বোয়ালদের বিচার।

আমাদের চাইতে অনেক পিছিয়ে থাকা রুয়ান্ডাতে বিচার চলতে পারে, বাংলাদেশে বিচারের কোন সম্ভাবনা নেই দেখে হতাশ হতে হয়।

তবে একটু আশাবাদী হই এই ভেবে, ৫০/১০০ বছর পরও কিছু দেশে বিচার হয়েছে/হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়াতে এইবছরই বিচার হলো কয়েকজনের। ১০০ বছর পরও ওরা ছেড়ে দেয়নি কোরিয়া-জাপান যুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের। আমি অপেক্ষায় থাকলাম ২০৭১-এর জন্য। দেখা যাক, ততদিনে কিছু হয় কিনা।

--বরফ।

হাসিব এর ছবি

আমি অপেক্ষায় থাকলাম ২০৭১-এর জন্য। দেখা যাক, ততদিনে কিছু হয় কিনা।

ততদিনে মূল অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে । মানে মইরা টইরা যাইবো আরকি । পোনা শাবক বাচ্চা গুলান থাকবো শুধু । যেইভাবে সবকিছু ডিনাই করতেছে ওরা তাতে ২০৭১ পন্ত ওরা ফেরেশতার ছোট ভাই টাইপ ইমেজ তৈরী করে ফেলতে পারবে ।

অতিথি লেখক এর ছবি

হ্যাঁ, তা থাকবে না কেউ। কোরিয়াতে ঐটাই হইছে। পাপীগুলা সব অলরেডী জাহান্নামে চলে গেছে। তবে সম্পত্তি রয়েগেছিল ব্যাটাদের, সেগুলা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ওগুলার বংশধররা/সমর্থকরা লজ্জা শরম কিছুটা হয়তো পেয়েছে।

জার্মানীতে হিটলারের নাগরিকত্ব বাতিল করার কথা হচ্ছিলো। শেষ পর্যন্ত আইনী মারপ্যাঁচে কি হয় কে জানে। তবে এতো বছর পর ওরা এট লিস্ট চেষ্টা করছে।

বাংলাদেশেও অন্যায়ের বিচার হতেই হবে, নইলে পাপীরা আবারও একই পাপ করার সাহস পাবে।

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

পড়তে ভাল লেগেছে।ধন্যবাদ।

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

তারেক এর ছবি

দারুন হচ্ছে সিরিজটা... পোস্টের সূত্রে দু'টো পর্বেই চমৎকার আলোচনা হচ্ছে। এই বিষয়টাও উপভোগ্য হাসি
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

হাসান মোরশেদ এর ছবি

চমৎকার ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

তীরন্দাজ এর ছবি

আপনার ভখেব্লাট নিয়মিত পড়ছি। ভাল লাগছে। আপনার অনেক সময় ব্যায় হচ্ছে, তা বুঝতে পারছি। ভাল কাজের পেছনে যে সময় ব্যায় হবে ওটাই স্বাভাবিক। আর আপনার কাজও ভাল হচ্ছে।

জার্মানীর পুজি নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রতান্ত্রিক কাঠামোয় সোসালিস্ট দলগুলোর ক্ষমতায় থাকা বেশ কঠিন। সমস্ত পুজিবাদীরা স্বাভাবিকভাবেই রক্ষনশীলদের (সিডিইউ, সিএসইউ) ছায়াতলে বেশী স্বস্তি বোধ করে। বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দায় প্রভাবিত জার্মানীতে স্রোডারের পতনের এটাই প্রধান কারণ। তা না হলে হেলমুট কোলের ষোল বছরের ব্যর্থতা ও স্ক্যন্ডাল (পার্টি চাঁদা) এর পর এত দ্রুত রক্ষনশীলরা ফিরে আসতে পারে না।

জার্মানদের ভেতরে ওখনও লুকোনো হলেও এখনও অনেকেরই নাজীদের প্রতি সমর্থন রয়েছে। অনেকেই দ্বিতীয় বিশাবযুদ্ধের পাপকে ধামাচাপা তিতে চায়। তবে তাদের সংখ্যা নিতান্তই কম। এদের অতীত পাপকে নিয়ে ওরা যতোটা শঙ্কিত, অন্য আর কোন দেশ হলো ততটা হতো কি না সন্দেহ। আমাদের বাংলাদেশে তো অতীত পাপ ধুয়ে ফেলতে সামান্যও দেরী হয়না।

**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

এবারেও পাঠে বিলম্ব। পড়ছি আগ্রহ নিয়ে এবং চমৎকৃত হচ্ছি। এবং পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকছি। সময়ে না কুলায়, ছোটো লেখা দেবেন, কিন্তু বন্ধ যেন না হয়।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আপনে মিয়া আদমি সুবিধার না। কোন এক এরাবি ব্যাটা লোক আপনেরে লিফট দিবার চাইলো সেইটা আবার বেবাকরে জানাইতাছেন?
ঐ হালার জায়গায় কোনো ললনা হৈলে না বুঝতাম ডাইল মে খালি ডাইলই আছে। এখনতো মনে হৈতাছে কালার লাইগা ডাইল ই দেহা যাইতাছে না।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।