শিক্ষা নিয়ে চিন্তাপোকার কচকচানি

নীড় সন্ধানী এর ছবি
লিখেছেন নীড় সন্ধানী (তারিখ: মঙ্গল, ২৬/০৫/২০০৯ - ৪:৫৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার মেয়ের বয়স পৌনে তিন বছর। এর মধ্যেই ওকে কোন স্কুলে পড়ানো হবে, কিরকম শিক্ষা দেয়া হবে এ নিয়ে ওর মা-দাদী-ফুফু-খালারা চিন্তিত। সবাই নাকি এখন আড়াই বছর থেকে বাচ্চাকে স্কুলে দেয়া শুরু করে। আমি স্পষ্ট বলে দিয়েছি, আমি যেরকম স্কুলে পড়েছি আমার মেয়েকেও সেরকম পড়াবো। আর এত তাড়াতাড়ি স্কুলে দেবার কোন ইচ্ছে নেই এবং ওকে এখনি সর্ববিদ্যায় পারদর্শী করে তোলার কোন দরকার নেই।

আমি এমন স্কুল চাই যেখানে বইপত্র সবচেয়ে কম এবং ফাঁকি দেয়ার সুযোগ সবচেয়ে বেশী। ফেল করলেও তুলে দেবে পরের ক্লাসে এরকম। সরকারী প্রাইমারী স্কুল এক্ষেত্রে আমার সবচেয়ে বেশী পছন্দ। আমার কথা শুনে সবাই তেড়ে আসে আমার দিকে। ওসব স্কুলে পরিবেশ নেই। বুয়ার ছেলেমেয়েরাও ওসব স্কুলে পড়ে না এখন।

কিন্তু মেয়েকে আমি এই বয়স থেকে বিদ্যার জাহাজ বানাতে চাই না। আমি চাই ওর শৈশবটা কৈশোরটা আনন্দময় হোক। বড় হবার পর সে নিজেই বেছে নিক তার পছন্দের রাস্তা।

ভাবি সরকারী স্কুলগুলোতে যদি পড়াতে না চায়, তাহলে সরকার এত টাকা-পয়সা বাজেটে খরচ করে ওই স্কুলগুলো কাদের জন্য রেখেছে? আমি কেন আমার সন্তানকে একটা সহজ শিক্ষাব্যবস্থায় বড় করতে পারবো না?

৩৫ বছর আগে আমি যখন একটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেনীতে ভর্তি হতে যাই, স্কুলের দুটি জিনিসের স্মৃতি এখনো জেগে আছে। একটি বেত হাতে মাষ্টার, অন্যটা বিশাল খেলার মাঠ। একটা দেখে ভয়, অন্যটা দেখে আনন্দ পেয়েছিলাম। আমাদের বই ছিল সামান্য। পড়াশোনা সামান্য, মাঠটা বিশাল এবং খেলার সময় অফুরন্ত হওয়াতে স্কুল খুব আনন্দময় ছিল।

দৈনিক সর্বোচ্চ আট ঘন্টা পড়াশোনার জন্য ব্যয় করেছি শুধু মেট্রিক পরীক্ষার সময়। আমাদের শৈশব, কৈশোর, কী আনন্দময় ছিল ভাবলে এখনকার ছেলেমেয়েদের জন্য কষ্ট লাগে।

এখনকার ছেলেমেয়েরা কী করে? শরীরের অর্ধেক ওজনের একগাদা বই নিয়ে স্কুলে যায়। দমবন্ধকরা গাদাগাদি ক্লাসরুম। হোমওয়ার্ক, স্কুলওয়ার্ক, প্রাইভেট টিউটর, মওলানা হুজুর। জ্ঞানার্জনের নানা ক্যাচাল। সন্ধ্যে হলে টেবিলে বসা, ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে পড়তে পড়তে নটা-দশটা বাজানো। তারপর হয়তো টিভি দেখা নয়তো খেয়েদেয়ে ঘুম। এখানে খেলার মাঠ কোথায়, খেলাধুলা কোথায়, আনন্দ করার অবকাশ কই?

স্কুলের মাঠ নেই, খেলাধুলার ব্যবস্থা নেই, জনসংখ্যার চাপে জায়গা সংকুচিত হতে হতে স্কুল এখন সিড়িঘরে পর্যন্ত আশ্রয় নিয়েছে। ঘিঞ্জি বাড়ীর দুটি কক্ষ হলেই একটা স্কুল খুলে ফেলা যায় এখন। কি পড়াবে, কে পড়াবে এসব বিবেচনার কোন বালাই নেই। দরকারি-বেদরকারি ইংরেজী বইয়ের ছড়াছড়ি। বাচ্চা ছেলেদের আয়ারল্যান্ডের রাইমগুলো পিটিয়ে মুখস্ত করানো হয়। কেউ বলার নেই। কোন বয়সে কতটুকু শিক্ষা প্রয়োজন, তার কোন নিয়মনীতি নেই। বাচ্চাদেরকে খুব তাড়াতাড়ি বিদ্যার জাহাজ বানিয়ে ফেলতে হবে। ক্লাস টু থেকে নিউটন পড়াতে হবে, ইকুয়েশান শেখাতে হবে, তুমুল স্মার্ট করে তুলতে হবে, এজন্যই হুড়োহুড়ি সব।

জাতির মেরুদন্ড মজবুত করার জন্য রীতিমত জাঁতাকলে পিষ্ট করে হলেও শিক্ষার নামে অপ্রয়োজনীয় বিদ্যা গিলিয়ে ছাড়বে আমাদের সেই ইংরেজী বিদ্যালয়গুলো। অভিভাবকদের তাড়াহুড়োও দেখার মতো। এমনিতে খেলাধুলার জায়গা নেই, তাদের যে অবসরটুকু থাকার কথা এই বয়সে, কিছু অতি সচেতন অভিভাবক তাও গ্রাস করে ফেলেছে।

একটা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা বলি। আমার এক কাজিন তার দুই ছেলেকে বাংলা ইংরেজী আরবী সর্ববিষয়ে বিশেষজ্ঞ করে তোলার স্বপ্ন দেখছেন। ভোর থেকে শুরু হয় তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন প্রকল্প। ঘুম থেকে উঠে কোনমতে নাস্তা গিলিয়ে স্কুলে চলে যায় দুই ভাই। একজনের বয়স ৬ বছর আরেকজন ৮ বছর। কিণ্ডারগার্টেনে ইংরেজী বাংলার পড়াশোনা শেষ করে দুপুরের আগে আগে চলে যায় ক্যাডেট মাদ্রাসায়। সেখানে আরবী অধ্যয়ন চলে। ফিরতে ফিরতে ৩ টা বাজে। খেয়ে উঠতে না উঠতে হুজুর আসবে প্রাইভেট পড়াতে। হুজুর যেতে যেতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, তারপর আসবে ইংরেজী অংকের মাষ্টারমশাই। মাষ্টারমশাই যেতে যেতে নটা বাজে। তারপর স্কুলের হোমওয়ার্ক তৈরী চলে রাত দশটা অবধি। এরপর খাওয়া সেরে ঘুমোতে ঘুমোতে রাত সাড়ে এগারটা পেরিয়ে যায়। পরদিন ভোরে উঠে আবার সেই একই রুটিন।

বাচ্চাদের এই ব্যস্ততার গল্প আমার সেই ভাই ও ভাবী তৃপ্তির সাথে খুব গর্বের সাথে বলে বেড়ায়-'পড়াশোনার এত চাপ, একদম সময় পায় না ওরা'। হায়, পড়াশোনাটাও ফ্যাশানের পর্যায়ে পৌছে গেছে।

আমি কাজিনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এভাবে চললে ওদের খেলাধুলা করার সময় কোথায়? উনি বলেন - 'খেলাধুলা করলে তো দুষ্টু হয়ে যাবে, এখন সারাদিন পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত আছে ভালো আছে। আর ওরা তো সময় পেলে ভিডিও গেম খেলে কম্পিউটারে। আরো বড় হলে খেলাধুলা করতে পারবে' আমার মাথাটা গরম হয়ে যায় শুনে। এই হলো আমাদের অভিভাবক সমাজের একাংশের মানসিকতা। যার সাথে তাল মিলিয়ে চলছে স্কুলগুলো এবং দেশের জগাখিচুড়ি শিক্ষাব্যবস্থা।

শিক্ষার মধ্যে কোন আনন্দ নেই। যে বইগুলো পড়ানো হয় আদৌ সেগুলোর দরকার আছে কি না কেউ ভাবে না। যদি দরকার না থাকে তাহলে কেন সেই অপ্রয়োজনীয় বইগুলো পড়িয়ে বাচ্চাদের মাথা খারাপ করে দেয়া হবে? অর্থ, সময়, মেধার অপচয় বন্ধ করার পদক্ষেপ কে নেবে? শিক্ষাকে বানিজ্যের লোলুপ গ্রাস থেকে রক্ষার দায়িত্ব কার?

আমার মাথা চলে না।

[সহব্লগার গৌতম আর দিগন্তের শিক্ষাবিষয়ক লেখাগুলোর কাছে আমার অনেক কৃতজ্ঞতা। বাংলাদেশের অপশিক্ষা নিয়ে একটা চিন্তাপোকা বহুদিন যন্ত্রনা দিচ্ছিল বলে যাচ্ছেতাই একটা তাৎক্ষনিকভাবে লিখে ফেললাম। এই বিষয়ে পরে আরো লেখার ইচ্ছে আছে।]


মন্তব্য

বিপ্লব রহমান এর ছবি

অতি জরুরী একটি বিষয় নিয়ে লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আরো লিখুন প্লিজ। চলুক


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

আলাভোলা এর ছবি

আড়াই বছর বয়সে স্কুলে গিয়া করবেটা কী? আজিব!

খেয়ে উঠতে না উঠতে হুজুর আসবে প্রাইভেট পড়াতে। হুজুর যেতে যেতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, তারপর আসবে ইংরেজী অংকের মাষ্টারমশাই। মাষ্টারমশাই যেতে যেতে নটা বাজে। তারপর স্কুলের হোমওয়ার্ক তৈরী চলে রাত দশটা অবধি। এরপর খাওয়া সেরে ঘুমোতে ঘুমোতে রাত সাড়ে এগারটা পেরিয়ে যায়। পরদিন ভোরে উঠে আবার সেই একই রুটিন।

পিচ্চিগুলোর জন্য মায়া লাগতেছে।

ভুতুম এর ছবি

আপনার বক্তব্যের সাথে সম্পূর্ণ একমত।

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

ভীষণ ভালো লাগলো আপনার লেখাটা। মেয়ের ব্যাপারে যেমনটা ভাবছেন, আশা করি শেষ পর্যন্ত তা-ই করতে পারবেন। এখনকার স্টুডেন্টরা তো আউটডোর গেমস-এর কোনো সুযোগ পায় না। গল্পের বইয়ের সাথেও দূরত্ব বাড়ছে। আরো বাজে ব্যাপার হলো, এরা কোনো লম্বা ছুটিও উপভোগ করতে পারে না। পড়া, পড়া আর অর্থহীন সব পড়া নিয়ে সময় কাটে এদের। মন খারাপ

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

পলাশ দত্ত এর ছবি

চলুক
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

অতিথি লেখক এর ছবি

খুবই ভাল একটি লেখা। আসলেই এখনকার ছোট বাচ্চাদের অনেক বেশী গেলানো হচ্ছে। ধন্যবাদ

সিরাত এর ছবি

ভাইয়া, আপনার কাজিনের কাজ কারবার দেখে একেবারে উল্টো রিয়্যাক্ট করে বসেন না আবার। হাসি

সবকিছুই সুষম হতে হবে, এই নীতিতে আমিও বিশ্বাসী। সরকারি স্কুলে কিছু ক্ষেত্রে হয়তো কিছু জিনিস বেশি অসম হয়ে যায় বলেই অসুবিধা। নিজে সেন্ট জোসেফে পড়ে সরকারি স্কুলের ছাত্রদের সাথে এভারেজের যে তারতম্যটা দেখি তা তো ফেলে দিতে পারছি না (কেউউ চেতবেন না কইয়া দিলাম!)। চোখ টিপি তবে সেন্ট জোসেফ পিষে মেরে ফেলতো না, বিশাল মাঠও ছিল, খেইলা ফাটায় ফালাইছি। আর ভাল সরকারি স্কুলও তো আছে। এটা মনে হয় একটু দেখেশুনে ঠিক করাই ভাল হবে।

চেষ্টার দাম আছে। তবে আমাদের ক্ষেত্রে চেষ্টা মাঝে-মধ্যে ওভার-অ্যাম্বিশন হয়ে যায় আর কি, ফলে বাচ্চাদের ওপর রোলার চলে। এতে যে লং রানে বাচ্চারই ক্ষতি হচ্ছে, আনব্যালান্সড হয়ে যাচ্ছে, সেটা বুঝলে তো হতোই। সে পার্সপেক্টিভ অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। তাই বলে ভাল শিক্ষার কোন গতি নেই, আর ভাল শিক্ষার জন্য মনে হয় গড়ের চেয়ে বেশিই খাটতে হবে। হাসি

লেখা ভাল লেগেছে!

নীড় সন্ধানী এর ছবি

‍‌ধন্যবাদ সিরাত। আমি বুঝতে পেরেছি আপনি কি বলতে চেয়েছেন। সরকারী স্কুল আর সেন্ট জোসেফের পার্থক্য অবশ্যই স্পষ্ট। সব স্কুল যদি সেন্ট জোসেফ হতে পারতো খুব ভালো হতো! সরকারী স্কুলের কথা বাদ দিলাম। তথাকথিত কিণ্ডারগার্টেন স্কুলগুলোও যদি তেমন হতে পারতো!

সরকারী স্কুলের প্রথম সমস্যা অর্থ, দ্বিতীয় সমস্যা ব্যবস্থাপনা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে ব্যবস্থাপনা সংকটের কারনে যেটুকু অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় সেটাও যত্নের সাথে ব্যবহার করা হয় না।

স্থানের অভাবে যেখানে সেখানে স্কুল গড়ে উঠছে ঠিক। কিন্তু সেই স্কুলগুলোতে শিক্ষার নামে গাদা গাদা বই বাচ্চাদের জন্য বরাদ্দ করা হয় কেন? সক্রেটিস আইনষ্টাইন তৈরী করার জন্য? মোটেও না। আসলে ওটা একটা বানিজ্য। মুশকিল হলো সেই বানিজ্যকে উন্নত শিক্ষা বলে মেনে নিয়েছে সাধারন মানুষ। ইংরেজী স্কুলে পড়ানোকে ফ্যাশান হিসেবে নিয়েছে কিছু মানুষ। সেটাই সমস্যা। এতে শিক্ষার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে অথচ মান বাড়ছে না। আনন্দহীন শৈশব নিয়ে বেড়ে উঠছে রোবট প্রজন্ম। যাদের সামনে একটি ভিডিও গেম বা কার্টুন ছবি ছেড়ে দিলেই শেষ। শিক্ষার নামে কেন শৈশব কৈশোরের আনন্দময় সময় থেকে বঞ্চিত করা হবে? দেশে কি সরকার নেই? এক দেশে কত রকম শিক্ষাব্যবস্থা? এগুলো কি আদৌ কোন শিক্ষানীতির আওতায় আছে?

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

গৌতম এর ছবি

আপনার লেখার স্পিরিট এবং উদ্দেশ্য পছন্দ হয়েছে যদিও লেখায় কিছু জেনারেলাইজেশন আছে। এই যেমন ফাঁকি মারার বিষয়টা বললেন। ছোটখাটো ফাঁকি মারার বিষয়টা মানুষের মধ্যে আছে সহজাতভাবেই। কিন্তু ফেল করলে পরের ক্লাসে তুলে দেওয়ার ফাঁকিগুলো কিন্তু মারাত্মক হতে পারে। আর বড়দের ফাঁকি এবং শিশুদের ফাঁকি- দুটোর মধ্যে বেশ ফারাকও আছে। শিশুদের ফাঁকি মারার প্রবণতা সহজাত বিশ্বাসের মধ্য ঢুকে যায় বলে সেটা অভ্যাসে পরিণত হলে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে।

তাছাড়া ফেল করা কিন্তু এটাও নির্দেশ করে যে, শিশু ভালোভাবে পড়ে নি। এটা কি হওয়া উচিত? বরং প্রথম, দ্বিতীয় বা দশের মধ্যে থাকার দরকার নেই; কারিকুলামে যা আছে, সেগুলো পুরোপুরি মুখস্থ করারও দরকার নেই, কিন্তু শিশুর জন্য যে বিষয়বস্তুগুলো দেওয়া আছে বইতে, শিশু যেন সেগুলো বুঝতে পারে, নিজের মতো করে লিখতে বা বলতে পারে এবং অন্যকে বলতে পারে সেটা নিশ্চিত করাটা টিকে থাকার জন্য জরুরি।

লেখার বাদবাকি অংশের সাথে প্রায় একমত। আপনার কাছ থেকে লেখা চাই আরও।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

নীড় সন্ধানী এর ছবি

‍‌ফাঁকি দেয়া যায় এরকম স্কুলের কথা বলেছি এই কারনে। আমার আরেক আত্মীয়ের ৫ বছরের মেয়েটার একবার জ্বর হলো। সেদিন ওর সাপ্তাহিক পরীক্ষা ছিল। ওদিকে বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি। স্কুলে ফোন করে জানানো হলো অসুবিধার কথা। স্কুল থেকে বলা হলো কোলে করে হলেও নিয়ে আসতে হবে নইলে মাসিক পরীক্ষায় ফেল। মেয়ের বাবা অফিস কামাই দিয়ে কোলে করে ৫ বছরের বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে প্রায়ভেজা হয়ে স্কুলে পৌঁছালো। ভেজা শরীরে পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফিরে এক মাস নিউমোনিয়ায় ভুগলো। ভদ্রলোক রাগ করে স্কুল থেকেই ছাড়িয়ে নিলেন মেয়েকে। সেবছর আর ভর্তি হওয়া গেল না। তথাকথিত কড়াকড়ি করতে গিয়ে মানবতাকে বিসর্জন দেয়ার এরকম নজীর ভুঁড়ি ভুঁড়ি।

প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া দরকার আছে, কিন্তু মাঝে মাঝে স্কুলে না গেলে যেন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে না যায়। সেটাই ফাঁকিবাজির সুযোগ বলেছি।

কেউ যখন উন্নত শিক্ষার অজুহাতে ইংরেজী স্কুলে পড়ানোর কথা বলে তখন আমি আমার কথা বলি। আমি সাধারন সরকারী প্রাইমারী স্কুলে পড়েছি আগ্রাবাদে। তারপর হাইস্কুল একই জায়গায়, তারপর সরকারী সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সবগুলো লেভেলে পড়াশোনায় মোটামুটি চলনসই ফাঁকিবাজ ছিলাম। তবু স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় তারপর চাকরী কোথাও কোন অসুবিধা হয়নি।

কেন অসুবিধে হয়নি পেছনের দিকে তাকিয়ে এখন বুঝি। আমার ভিত্তিটা গড়ে দিয়েছিলেন বাবা।
বইঘর নামে চট্টগ্রাম নিউমার্কেটে একটা বড় দোকান ছিল। ক্লাস ওয়ানে থাকতেই বাবা আমাকে ওই দোকানে নিয়ে ছেড়ে দিতেন। আমি ঘুরে ঘুরে বইয়ের গন্ধ নিতাম, বই পছন্দ করতাম, কখনো বাবাও পছন্দ করে দিতেন। সেই যে বইয়ের দোকানে যাওয়া শিখিয়েছিলেন সেটা পরে নেশায় পরিনত হয়ে গিয়েছিল। পাঠ্যবইয়ের চেয়ে ওই বাইরের বইগুলোর প্রতি আমার মোহ বরাবর বেশী ছিল। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও লাইব্রেরীতে গিয়ে বেশীরভাগ সময় পার করেছি অন্যান্য বই পড়ে। সেই পড়াশোনাগুলো পাঠ্যবইয়ের চেয়ে বেশী কাজে এসেছে, এখনো আসছে। পাঠ্যবই আমাকে শুধু সার্টিফিকেট দিয়েছে। আমি যদি শুধু সার্টিফিকেটের জন্য পড়তাম, আজকে এই ব্লগে কমেন্ট লেখার যোগ্যতাও আমার থাকতো না।

অনেক বাবা মা মনে করে বাইরের বই পড়লে ছেলেমেয়ে নষ্ট হয়ে যাবে। আহা তারা যদি বইয়ের স্বাদ জিনিসটা বুঝতো। পড়াশোনা জিনিসটা সাইকেল চালানোর মতো। সাইকেল একবার চালানো শিখলে তারপর অসুবিধা হয় না। বাবা-মা ও স্কুলের প্রাথমিক দায়িত্ব হচ্ছে সাইকেল চালানো শিখিয়ে দেয়া এবং কোন পথে গেলে কি সুবিধা সেটা বলে দেয়া। তারপর সে নিজের পছন্দমতো রাস্তা বেছে নেবে।

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

তানভীর এর ছবি

ভাতিঝিকে সেন্ট মেরি'সে দেন। এখন কী অবস্থা জানি না। তবে আমি এখনো পঁচিশ বছর আগের সেই সেন্ট মেরি'সে পড়তে চাই।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

সেন্ট মেরিস খুব ভালো স্কুল। বাসা থেকেও মোটামুটি কাছে। দিতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু ভীষন প্রতিযোগিতা। কেবল ভর্তি পরীক্ষার ফরম নেয়ার জন্য ভোর চারটা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এই প্রতিযোগিতা আমি ভয় পাই বলেই সহজ স্কুল খুঁজছি। হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

হিমু এর ছবি

পেডাগোগি নিয়ে আমার জ্ঞান শূন্যের কোঠায়, কিন্তু পড়ার আর পড়ানোর অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আমার মনে হয় বাচ্চাদের শেখার মনটা তৈরি করাই জরুরি। আর এজন্যে বাচ্চাদের সাথে বেশি সময় কাটানো উচিত বাবা আর মা-র। গৃহশিক্ষকদের হাতে সেই শেখার মনটা তৈরি হয় না সবসময়। ছোট একটা বাচ্চা খেলতে খেলতে একটু একটু করে পড়তে আর লিখতে শিখবে, তাকে একগাদা হাবিজাবি শেখানোর কোন দরকারই নাই।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

নীড় সন্ধানী এর ছবি

১০০% স‍‌ঠিক, শেখার মনটা তৈরী করাটাই জরুরী।

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ss এর ছবি

শব্দটি পেডাগজি বা পেডাগোজি

হিমু এর ছবি

ধন্যবাদ। আসলে এখানে পেডাগোগি ডিপার্টমেন্টে কয়েকজন বন্ধু থাকায় শব্দটা মুখে চলে এসেছে, সেখান থেকে হাতে। ইংরেজি শব্দটা ব্যবহার প্রায় করাই হয় না বলেই এই ভুল।

তবে আমার ধারণা ছিলো বৃটিশ উচ্চারণটি পেডাগোগি। আপনি কি একটু দেখবেন এখানে?



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

দ্রোহী এর ছবি

আম্রিকায় পেডাগজি।

s-s এর ছবি

আপনি বরং এখানে দেখুন, এতে অ্যামেরিকান ব্রিটিশ দু'টোই পাবেন

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

লিংক দিতে পারুম না, তয় আমি একটা উচ্চারণ প্রস্তাব করি: পেডাজোগি, অথবা পেডাজোজি? অথবা পেডাজোশি? উচ্চারণের দিক দিয়া জার্মান বেস্ট। এরা যা লেখে, তাই উচ্চারণ করে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

নীড় সন্ধানী এর ছবি

‍‌মনে হয় পেডাগোজি শুদ্ধ হবে। এটাই বেশী প্রচলিত।

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

s-s এর ছবি

এটা ঠিক কি হিসেবে বললেন বুঝলাম না, রসিকতা হলেও কাষ্ঠ রসিকতার মতো লাগলো ব্যাপারটা হাসি আর জার্মানরা উচ্চারণের দিক দিয়ে বেস্ট এইটাও রসিকতা মনে হচ্ছে, নির্মম রসিকতা শুধু লিখটেনস্টাইন ই দেখুন। হাসি

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

কিছুটা রসিকতাই। কারণ, g এর উচ্চারণ একবার জ একবার গ, তাও আবার জ আর গ উলটে গেলে ভুল - এটা তো মহাসমস্যা।

আমার বহুভাষায় দক্ষতা জিনিসটা নাই, তবে ইংরেজির তুলনায় জার্মান হাজারগুণে ভালো নিঃসন্দেহে। যেমন, জার্মানে a দিয়ে সবসময় আ উচ্চারণ হয়, u দিয়ে সবসময় উ, এখন পর্যন্ত ব্যতিক্রম পাইনি। লিখটেনস্টাইনে সমস্যা কোথায় বুঝলাম না। ei থাকলে জার্মানে সবসময় আই উচ্চারণ হয়, দীর্ঘ ঈ এর জন্য ie; ch এর উচ্চারণ একটু শক্ত ক, যা অনেকটা খ এর কাছাকাছি, অনেকে এটাকে শ এর কাছাকাছি একটা উচ্চারণও করে। একই ব্যাপার g এর ক্ষেত্রেও; যেমন, dreizig এর উচ্চারণ দ্রাইজিশ বা দ্রাইজিগ দুইটাই কারেক্ট, d এর উচ্চারণ ড আর দ যাই করা হোক না কেন, কেউ নাক উঁচু করে বা ভুরু কুঁচকে থাকবে না। ইংরেজির মত g কে জ বললে কারেক্ট আর গ বললে ভুল - এইটা নিয়া মারামারি নাই।

* আমার জার্মান জ্ঞান সীমিত। এই মন্তব্যের 'সবসময়' কথাটার ব্যতিক্রম থাকতে পারে, কেউ ব্যতিক্রমগুলো ধরিয়ে দিলে খুশি হবো।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

হিমু এর ছবি

কলিন্স আর মেরিয়াম-ওয়েবস্টারের মধ্যে মতপার্থক্য দেখতে পাচ্ছি। মেরিয়াম-ওয়েবস্টার বলছে দু'টোই চলে। কলিন্স বলছে পেডাগোজি। কোনটাকে প্রামাণ্য ধরে নেবো?



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

তানভীর এর ছবি
অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

pidəɡɒdʒi এর উচ্চারণ পিড্যগোজি হবে না? 'বেইবি' ম্যাডাম বুয়েটে কি শিখাইছিলেন, এখন আর পুরা মনে নাই।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

তানভীর এর ছবি

হ্যাঁ, 'সহিহ' উচ্চারণ তা-ই হবে চোখ টিপি 'বেইবি' ম্যাডাম এমনই শিখাইছিলেন, যদিও আংরেজিতে 'B' পাইছিলাম মন খারাপ

হিমু এর ছবি

মেরিয়াম-ওয়েবস্টারের ভাষা গবেষণা কেন্দ্র বরাবর মেইল করে জানতে চেয়েছিলাম। জশুয়া এস. গুয়ন্টার নামে এক ভদ্রলোকের জবাব পেলাম আজ মেইল চেক করতে গিয়ে। পেস্ট করে দিলাম।

The pronunciation variant of "pedagogy" with a hard G in the final syllable
is primarily a British variant, as indicated in the entry. It is not
commonly used in the United States.

**********************

Joshua S. Guenter, Ph.D.

Editor of Pronunciation

Merriam-Webster, Inc.

Springfield, MA



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

রাগিব এর ছবি

ইদানিং প্রতিবার দেশে গিয়েই একটা নতুন প্রবণতা দেখে অবাক হচ্ছি। আমার মামাতো-খালাতো-চাচাতো পর্যায়ের ভাইবোনেরা সবাই-ই পড়েছে সরকারী-বেসরকারী স্কু্লে, সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়েই। কিন্তু আমার যতগুলো ভাগ্নে, ভাগ্নী, ভাতিজা, ইত্যাদি আছে, সবগুলাকে ভর্তি করানো হয়েছে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে, যেখানে সরকারী পাঠক্রমের কিছুই পড়ানো হয় না। এক আত্মীয়ের বাবা সরকারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন, সেই আত্মীয়টি নিজে নোয়াখালীর জেলা স্কুলে পড়ে পরে হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কিন্তু নিজের মেয়েকে দিয়েছেন ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে।

রাতারাতি, মাত্র ১০ বছরে নিশ্চয়ই সরকারী/বেসরকারী স্কুলগুলো নষ্ট হয়ে যায়নি।

---

বাড়িতে পড়ানোর যে কথাটি হিমু বলেছে, একেবারেই ঠিক। আমার প্রথম প্রাইভেট পড়া বা কোনো শিক্ষকের কাছে পড়া সেই ক্লাস নাইনে উঠে। এর আগে পর্যন্ত বাসায় বাবা-মার কাছেই সব পড়া পড়তে হয়েছে। বাবা-মা ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার ব্যাপারে উৎসাহী থাকলে অনেক সুবিধা হয়।
---
আপনি কি আগ্রাবাদে থাকেন? সিলভার বেলস স্কুলটিতো এখন বেশ ভালো ফল করে চলছে। কিন্ডারগার্টেন ধাঁচের হলেও ওটাতে পুরানো সিস্টেমেই পড়ানো হয় বলে জানতাম। চট্টগ্রামের অন্য প্রাথমিক স্কুল সম্পর্কে ধারণা একেবারেই কম। আমি পড়েছিলাম হাতে খড়ি স্কুলে, আমার মা সেখানে শিক্ষকতা করতেন। এখন অবশ্য হাতে খড়ির মান পড়ে গেছে বলে শুনি।

--

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | কুহুকুহু

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

নীড় সন্ধানী এর ছবি

"‍‌রাতারাতি, মাত্র ১০ বছরে নিশ্চয়ই সরকারী/বেসরকারী স্কুলগুলো নষ্ট হয়ে যায়নি।"

নষ্ট হয়ে যায়নি, কিন্তু পড়াশোনাটা জ্ঞানচর্চার চেয়ে বেশী হয়ে গেছে ফ্যাশানচর্চার বিষয়।

নাহ রাগিব আমি এখন আগ্রাবাদ থাকি না। কাজীর দেউরী থাকি। আগ্রাবাদ থাকলে সিলভার বেলস, হাতে খড়ি, আগ্রাবাদ কলোনী স্কুল আমার পছন্দ। আমার নিজের সব ভাইবোন-মামাতো-চাচাতো-ভাই-বোন-ভাগ্নী এই তিন স্কুলে পড়েছে। যে প্রাইমারী স্কুলে আমি পড়েছি, যেখানে পড়ে বন্ধু কাম মামাতো ভাই দাউদ বৃত্তি পেয়েছে, এসএসসি-এইচএসসিতে ষ্ট্যান্ড করেছে, বিসিএস পাশ করে রাজস্ব বিভাগের বড় কর্তা হয়েছে, সেই স্কুলে ভদ্রলোকেরা তাদের ছেলেমেয়েদের পাঠায় না যুগ পরিবর্তন হয়ে গেছে বলে। হায় শিক্ষা!

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ভালো একটা সমস্যা তুলে ধরেছেন। আমার স্কুলজীবনের ক্লাস ওয়ানটা কাটে স্কুলে না গিয়ে, মায়ের কাছে পড়তাম, শুধু পরীক্ষা দিয়ে আসতাম। ক্লাস ফাইভের শুরু থেকে হোস্টেলে। সেখানে ফাইভ থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত রুটিন: সকালে ঘুম থেমে উঠে ১ ঘন্টা ফুটবল খেলা, স্কুলের বিরাট একটা দীঘি আছে, ফুটবল শেষে সেই দীঘিতে গোসল করে স্যারের কাছে এক/দেড় ঘন্টা অঙ্ক করা। এরপর সকালের নাস্তা করে ক্লাসে যাওয়া। টিফিন বিরতিতে অনেক পোলাপাইনই আবার খেলতো, আমি রৌদ্রে খুব একটা নামতাম না। স্কুল শেষে খেয়ে কিছুটা রেস্ট নিয়ে বিকেলে আবার খেলা - তখন ফুটবলটা বেশি চলতো, মাঝে মাঝে ক্রিকেট আর ব্যাডমিন্টন। খেলা শেষে আবার গোসল করে সন্ধ্যায় পড়তে বসা। আমি ৯ টার মধ্যে ঘুমাতাম, তবে অনেক পোলাপাইন রাত জেগে ফাইট দিতো। নর্ম ছিলো মিনিমাম ১০ টা পর্যন্ত পড়া, এর আগে কেউ ঘুমালে বিছানায় পানি ঢেলে উঠানোরও নজির ছিলো, তবে 'ভালো ছাত্র' হওয়ায় আমাকে কোনো স্যার খুব একটা জ্বালাতন করতেন না। ওভারঅল স্কুলজীবনটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ, বেসিক ব্যক্তিত্ব ও জীবনকে ফেস করার শিক্ষাটা প্রধানত ওখান থেকেই আসে। আমার স্কুলের সেই পরিস্থিতি আর নেই, দেশে থাকতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় যখন গ্রামে যেতাম, তখনো দেখা যেতো বিরাট খেলার মাঠ ফাঁকা পড়ে আছে, পোলাপাইন টিভিতে বাংলা সিনেমা দেখে বা বাজি ধরে তাস খেলে।

সমস্যার কারণ:

প্রধান কারণ অবশ্যই পরিকল্পকদের অদূরদর্শীতা অথবা জেনেবুঝেই নিজের আখের গোছানোর জন্য দেশের হাতে হ্যারিকেন ধরিয়ে দেয়ার প্রবণতা। তত্ত্ব সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইয়াজউদ্দীনের সাক্ষাৎকার থেকে:

প্রশ্ন: বলা হচ্ছে, দেশে নতুন নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে এবং এখানে পড়াশোনা হচ্ছে না, আপনিতো ওখানে চেয়ারম্যান ছিলেন, আপনার সময় এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কতটুকু পরিবর্তন আনতে পেরেছিলেন?

ইয়াজউদ্দিন: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আমার জীবনের অন্যতম পথপ্রদর্শক। এখানে অনেক সুন্দর শিক্ষা দেয়া যায়। আমি মনে করি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমেই শিক্ষাব্যবস্থাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

বাংলাদেশের সরকার প্রধানদের অ্যাটিটিউড যদি এরকম হয়, তাহলে বুঝতেই পারছেন জনসাধারণের শিক্ষা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা কেমন। স্বল্প পর্যায়ে প্রাইভেট স্কুল/বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা হয়তো আছে; কিন্তু সেটা যখন মাস লেভেলে চলে যায়, তখন শিক্ষার মধ্যে শিক্ষা বলে কিছু থাকে না, থাকে শুধুমাত্র ব্যবসায়। সরকারের কি দেশে মানসম্পন্ন শিক্ষা দেয়ার মত টাকা নেই? অবশ্যই আছে। কিন্তু প্রাইভেট খাতে ছেড়ে দিলে ব্যবসায়ের ভাগটা পাওয়া যায় বা নিজেই প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসায় করা যায়। এই ব্যবসায়ের জন্য এমন কোনো খাত নেই, যে খাতে শিক্ষাকে বাঁশ দেয়া হয় নি। জিপিএ সিস্টেম করে মণ দরে এ+ দেয়াও একই পরিকল্পনার অংশ। এখানেও অর্থনীতি কাজ করে। মানুষের ভোগের অভ্যাস যেমন আর্থিক অবস্থার সাথে সম্পর্কিত, টাকা ধার দিয়ে যেমন ভোগের অভ্যাস সৃষ্টি করা হয় ব্যবসায়ের প্রয়োজনে, এখানেও তেমন। এখন মেধাবীদের সাথে মিডিওকাররা মিশে গেছে। দেশের জন্য প্রত্যেকেরই দরকার আছে, তবে প্রত্যেকের যোগ্যতা অনুযায়ী ক্ষেত্র নির্বাচনের ব্যাপারটা খুব জরুরী। একটা তুলনামূলকভাবে কম মেধাবী ছেলে যখন জিপিএ ৫ পায়, তখন তার এক্সপেক্টেশন লেভেলটা অনেক হাই হয়। ভর্তি পরীক্ষার প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে তখন বিকল্প অপশন হিসেবে প্রাইভেটে টাকা ইনভেস্ট করতে বাধ্য হয়।

শিক্ষক নিয়োগেও অনিয়ম প্রচুর। প্রাইমারি স্কুলে গত বেশ কয়েক বছর ধরেই সিংহভাগ শিক্ষকই নিয়োগ পাচ্ছেন ঘুষ দিয়ে এবং রাজনৈতিক দলীয়করনের বদান্যতায়। অযোগ্য শিক্ষকরা যোগ্য মানুষ গড়ার কারিগর হবেন - এটা দুরাশা।

শিশুদের অভিভাবকদের অসচেতনতাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়; কিন্তু নীতিনির্ধারকরাই পরিস্থিতি এমন করে ফেলেছেন যে, অনেকে বুঝেও ইঁদুর দৌঁড়ে শামিল হতে বাধ্য হন।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

নীড় সন্ধানী এর ছবি

চমৎকার বলেছেন।
ইয়াজউদ্দিনের অসংলগ্ন সাক্ষাৎকারটা শুনে অস্বাভাবিক মনে হয়নি। এই জিনিস থেকে এরচেয়ে ভালোকিছু বের হওয়ার কথা না। বাংলাভিশন বিষয়বৈচিত্র আনতে গিয়ে হয়তো জনগনকে বিনোদিত করতে চেয়েছিল। সবকিছুইতো আল্লার ওয়াস্তে চলছে, এতে সরকারের কী করার আছে। হাহ।

আমরা যে সমস্যার কথা আলোচনা করছি এসব তো লুকায়িত কোন বিষয় না, সবাই জানে। কিন্তু কেউ গা করে না। কারন জনগনের তো এভাবেই পড়াচ্ছে ছেলেমেয়েদের। সরকার কেয়া করেগা। দুর্নীতি কেন কমেনা এটাও একটা কারন। জনগনের একাংশই তো দুর্নীতি করে, সুতরাং জনগনের অমতে দুর্নীতি কমানোর দরকারটা কী? মিলেমিশেই সবকিছু চলছে।

আরেকটা ব্যাপার খুব পীড়াদায়ক। গ্রামের স্কুল আর শহরের স্কুলের মধ্যে বিরাট ফারাক। গ্রামের সরকারী স্কুলগুলো শহরের সরকারী স্কুলের সমমানের বা কাছাকাছি মানের হওয়া থাকলেও তা হয় না। কেন হয় না? এটা কেন সমন্বয় করা হয় না? শ্লোগানে গ্রামের নাম সবার আগে, কিন্তু বাস্তবে গ্রাম হলো সৎপুত্র।

হরেক রকম তালেবুল এলেম তৈরীর মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আজ আর বললাম না।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

দ্রোহী এর ছবি

যায় দিন ভালো আসে দিন খারাপ।

বাংলাদেশে পড়াশোনাটা আস্তে আস্তে উচ্চবিত্তদের দখলে চলে যাচ্ছে। তথাকথিত স্মার্ট একটা ভবিষ্যত গড়ে তোলাই সবার লক্ষ্য। সৃজনশীলতা হোগা মারা খেলেও কিচ্ছু আসে যায় না।

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

তথাকথিত স্মার্ট একটা ভবিষ্যত গড়ে তোলাই সবার লক্ষ্য। সৃজনশীলতা হোগা মারা খেলেও কিচ্ছু আসে যায় না।

উত্তম জাঝা!

মাহবুবুল হক এর ছবি

নীড় সন্ধানীর প্রায় সব মতামতের সাথে আমার ১০০ ভাগ মিলে যায়। তবু আমি আমার সন্তানকে ইংরেজি মাধ্যমের হাল ফ্যাশানের স্কুলে দিয়েছি এবং প্রতিমুহূর্তে আত্মযন্ত্রণায় ভুগছি। আমি পারি নি আমার মুরুব্বী বা আত্মীয়স্বজনের সাথে। নিজের মতটাকেই চূড়ান্তভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি নি শুধু একটা কারণে, অনেকেই বলেছে, তার বয়সী বাচ্চাদের সাথে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে সে। আমি জানি না এর উত্তর কি হতে পারে। এ বিষয়ে পরে আরো লেখার ইচ্ছে রইল। আমার মনে হয় ব্লগের মাধ্যমে আমরা একটা জনমত সৃষ্টি করতে পারি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও আনন্দ ফিরিয়ে আনতে।
.................................................................................................................

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।