গ্রেডিং পদ্ধতি এবং কিছু অগোছালো চিন্তাভাবনা

শামীম এর ছবি
লিখেছেন শামীম (তারিখ: সোম, ০৭/০৬/২০১০ - ৮:১৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


এটি একটি গবেষণাবিহীন লেখা; সম্ভবত একটু বেশি লম্বা হয়ে গেছে অনিচ্ছাকৃতভাবে। অনেকের কাছেই পুরান প্যাচাল মনে হতে পারে।

পরীক্ষার ফলাফল কী কাজে লাগে?

যে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করার আগে এটার প্রয়োজনীয়তা বা objective জানা থাকলে প্রাসঙ্গিক আলোচনায় সুবিধা হয়। তাই প্রথমেই পরীক্ষার ফলাফল কী কাজে লাগে সে বিষয়ে আমার সামান্য ধারণাটুকু তুলে ধরি। জ্ঞানার্জনের জন্য লেখাপড়া, তাই পরীক্ষার মূল লক্ষ্য হল সেই জ্ঞান কতটুকু অর্জিত হল সেটা যাচাই করে নেয়া। তবে প্রায়োগিক দিক চিন্তা করলে দেখা যায়, এই পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে আমরা নির্দিষ্ট বিষয় বা বিষয়সমূহে একজন শিক্ষার্থীর অর্জিত জ্ঞানের পাশাপাশি তার মেধাশক্তি পরিমাপ করার চেষ্টা করি। সেই মেধার ভিত্তিতে তাঁর উচ্চতর শিক্ষার উপযুক্ততা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া এই ফলাফলের ভিত্তিতেই বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্মী বাছাই করা হয়।

তাই পরীক্ষার ফলাফলকে বলা যায়, উচ্চশিক্ষার উপযুক্ত শিক্ষার্থী এবং কর্মক্ষেত্রে কর্মী বাছাইয়ের একটা হাতিয়ার। নিয়োগকর্তা যদি পরীক্ষার ফলাফল দেখে কর্মীর যোগ্যতা বুঝতে না পারেন, তবে সেই ফলাফল এর মূল একটা উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ এবং নিয়োগকর্তার কাছে এটা একটা প্রহসন ছাড়া আর কিছু মনে হতে পারে না।

এজন্য শিক্ষকদের দুই ধরণের দায়িত্ব পালন করতে হয়। একদিকে শিক্ষক হলো কোচ ... অর্থাৎ, তিনি শিক্ষার্থীকে উপযুক্তি কোচিং বা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মযজ্ঞের জন্য প্রস্তুত করেন। অপরদিকে শিক্ষক হলো গেট-কিপার বা দাড়োয়ান, অথবা বলা যেতে পারে "কোয়ালিটি কন্ট্রোল অফিসার"। অর্থাৎ, তার প্রদত্ত ফলাফলের ভিত্তিতে ইন্ডাস্ট্রি উপযুক্ত কর্মী বেছে নিতে পারবে। এটা সমাজ তথা কর্মক্ষেত্রের কাছে শিক্ষকদের দায়বদ্ধতা।

আমরা শিক্ষকদের দায়িত্বে অবহেলা বলতে শুধুমাত্র পাঠদানে অবহেলা করার বিষয়টা বুঝে থাকি। কিন্তু যদি শিক্ষক কোয়ালিটি কন্ট্রোল ঠিকমত না করেন, এবং সমাজ এবং নিয়োগকারী/উচ্চতরা শিক্ষাব্যবস্থাকে উপযুক্ত কর্মী/শিক্ষার্থী বেছে নিতে সাহায্য করার মত ফলাফল না দেন, তবে সেটাও সমাজের প্রতি চরম দায়িত্বে অবহেলা হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত বলে মনে করি। এই প্রসঙ্গে গণহারে এস.এস.সি.তে A গ্রেড পাওয়ার ব্যাপারটা উল্লেখযোগ্য মাত্রার দৃষ্টিকটু লাগে ... মনে হয় কোনো কারখানায় প্রোডাক্ট উৎপন্ন হওয়া মাত্র সর্বোচ্চ মানের বলে নিশ্চয়তা দেয়া হচ্ছে।

প্রচলিত গ্রেডিং পদ্ধতি

গ্রেডিং নিয়ে মোটাদাগে কিছু বলার আগে এই সিস্টেমে নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাটুকু শেয়ার করি। এই সিস্টেমের সাথে প্রথম পরিচয় হয় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে। গ্রেডিং সিস্টেমের সাথে পরিচয় আরেকটু গাঢ় হয় পরবর্তীতে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়েই মাস্টার্স করতে গিয়ে। আর এখন একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সুবাদে প্রতিনিয়ত এই বিষয়ে ছাত্র/শিক্ষকদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এ বিষয়ে আরো কিছু বলার আগে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং আরও কিছু প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেই পদ্ধতিতে গ্রেড দেয়া হয় সেটা দেখি:

তালিকা-১

প্রাপ্ত নম্বর লেটার গ্রেড গ্রেড পয়েন্ট
৮০+ A + ৪.০০
৭৫+ A ৩.৭৫
৭০+ A - ৩.৫০
৬৫+ B + ৩.২৫
৬০+ B ৩.০০
৫৫+ B - ২.৭৫
৫০+ C + ২.৫০
৪৫+ C ২.২৫
৪০+ D ২.০০
০-৩৯ F ০.০০

ভাবছেন এগুলোতো জানা কথা, এ আর এমন কি ... ... । তবে দেখুন, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়েই মাস্টার্স লেভেলে যেভাবে গ্রেড দেয়া হয় সেটার পদ্ধতি:

তালিকা-২

প্রাপ্ত নম্বর লেটার গ্রেড গ্রেড পয়েন্ট
৯০+ A + ৪.০
৮০+ A ৩.৫
৭০+ B + ৩.০
৬০+ B ২.৫
৫০+ C ২.০
০-৪৯ F ০.০

গ্রেডিং পদ্ধতি নিয়ে যাঁরা খুব বেশি নাড়াচাড়া করেননি, তাঁরা নিশ্চয়ই একটু ধাক্কা খেয়েছেন এই পর্যায়ে এসে। আন্ডারগ্রাজুয়েট লেভেলে যেখানে ১০ রকম গ্রেড (ফেল সহ) সেখানে মাস্টার্সে ৬ রকম গ্রেড হতে পারে। আর প্রাপ্ত নম্বরের পার্থক্যটাও চোখে পড়ার মত: আন্ডারগ্র্যাডে প্রতি ৫ নম্বরের জন্য গ্রেড পয়েন্ট পরিবর্তন হয় যেখানে মাস্টার্সে এই পার্থক্য ১০। সাথে সাথে পর্যায়ক্রমিক গ্রেড পয়েন্টের পার্থক্যগুলোও দেখা যেতে পারে: আন্ডারগ্র্যাডে ধারাবাহিকভাবে ০.২৫ পার্থক্যতে গ্রেডগুলো অবস্থিত, যেখানে মাস্টার্সে এটা ০.৫০। পাস্‌মার্কও আলাদা: মাস্টার্সে ৫০, আন্ডারগ্র্যাডে ৪০।

একটা বিষয় নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন যে, দুই লেভেলে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের দক্ষতাকে আলাদা পাল্লায় মাপা হয়। আর, একজন ছাত্র বুয়েটে যত সহজে আন্ডারগ্রাজুয়েটের গ্রেড তুলতে পারবে, মাস্টার্সে ব্যাপারটা ততটা সহজ হবে না। এমনকি যেই ছাত্র প্রতিটা বিষয়ে আগে সর্বোচ্চ গ্রেড পেয়ে এসেছে, মাস্টার্সে সেই মানের পরীক্ষা দিয়ে একই গ্রেড পাবে না: আগে ৮০ পেলেই যেখানে A+ = ৪.০ পাওয়া যেত, সেখানে মাস্টার্সে ৮০ = A = ৩.৫। আর পাশের ব্যাপারটাও খেয়াল করুন: আন্ডারগ্রাডে ৪৬ = C = ২.২৫, কিন্তু মাস্টার্সে সেটাই ফেল।

কাজেই এ থেকে অনুমান করা সহজ হয় যে সর্বক্ষেত্রে একই প্রাপ্ত নম্বরের জন্য একই গ্রেড পেতে হবে -- এমন কোন নিয়ম নেই। আর গ্রেডিং পদ্ধতি যে সব জায়গায় একই হতে হবে, বা হবে এমনটি আশা করাও উচিত নয়।

আমি একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরি করি। এটাতে যে গ্রেডিং পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়, তা দেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় অপেক্ষা ভিন্ন। এই ভিন্নতার পেছনের কারণগুলো প্রবন্ধের শেষে জানানোর চেষ্টা করবো। নিচে এখানকার গ্রেডিং পদ্ধতি দেয়া হল:

তালিকা-৩

প্রাপ্ত নম্বর লেটার গ্রেড গ্রেড পয়েন্ট
৯০+ A ৪.০
৮৫+ A - ৩.৭
৮০+ B + ৩.৩
৭৫+ B ৩.০
৭০+ B - ২.৭
৬৫+ C + ২.৩
৬০+ C ২.০
৫৫+ C - ১.৭
৫২+ D + ১.৩
৫০+ D ১.০
০-৪৯ F ০.০

গ্রেডিং পদ্ধতি নিয়ে একটু ত্যানা প্যাচানি: (কী, কেন)

বাস্তব জীবন থেকে একটা সহজ উদাহরণ দেই। ধরুন চারজন পরীক্ষার্থী একটি পরীক্ষায় যা লিখেছে তা মূল্যায়ন করার পরে নিচের মত করে নম্বর দেয়া হল। আগের প্রচলিত পদ্ধতিতে এই নম্বরের উপর ভিত্তি করেই তাদের মেধাক্রম দেয়া হত। এখনকার পদ্ধতিতে এই নম্বরের উপর ভিত্তি করে গ্রেড দেয়া হয়।

তালিকা-৪

ছাত্রের নাম প্রাপ্ত নম্বর মেধাক্রম গ্রেড
ছাত্র-১ ৯৩ A অথবা ৪.০
ছাত্র-২ ৭৭ B অথবা ৩.০
ছাত্র-৩ ৭৭ B অথবা ৩.০
ছাত্র-৪ ৭৬ ৩ বা ৪ B অথবা ৩.০

একটু লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন যে সাধারণ মেধাক্রম পদ্ধতিতে একটা বড় দূর্বলতা রয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে শুধু ১ম, ২য়, ৩য় অবস্থান দেখে তাদেরকে সম-ব্যবধানে অবস্থিত মনে হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এখানে ১ম স্থান অধিকারী ২য় বা ৩য়'র চেয়ে অনেক বেশি ভালো। অন্য কোন ক্ষেত্রে (ধরুন যথাক্রমে ৯১, ৯০, ৬৬ নম্বর) ১ম ও ২য় হয়তো প্রায় একই নম্বর পেয়েছে কিন্তু ৩য় বা এর পরের ক্রমগুলোতে থাকা পরীক্ষার্থী এই দুইজনের চেয়ে অনেক পেছনে, যা শুধুমাত্র এই মেধাক্রম পদ্ধতিতে বোঝা সম্ভব নয়। অর্থাৎ আগের এই পদ্ধতিতে মেধার তূলনা করা যাচ্ছে না।

শোনা যায় একটি বাংলা উত্তরপত্র ফটোকপি করে অনেকজন শিক্ষকে দেয়াতে তাঁদের মূল্যায়নে বিরাট ব্যবধান দেখা গিয়েছিলো। এছাড়া একই লেখা সম্পন্ন খাতা পর পর দুইবার দেখলেও একই শিক্ষকের প্রদেয় নম্বরের সামান্য হেরফের হতে পারে। তাই এই সামান্য নম্বরের হেরফেরের কারণে দুইজন ছাত্রর মেধা আলাদা সেটা জোর গলায় দাবী করা যায় না (উপরের উদাহরণে ছাত্র-২, ছাত্র-৩ এবং ছাত্র-৪ একই মেধাসম্পন্ন)। এমনকি MCQ পদ্ধতিতেও কোনো কোনো ছাত্র আন্দাজে টিক দিয়ে সম মেধার আরেকজনের চেয়ে ২/১ নম্বর বেশি পেয়ে যেতে পারে। তাই সম মেধার ছাত্রদেরকে একই কাতারে রাখার জন্য গ্রেড পদ্ধতির প্রয়োজন হয়ে পড়েছিলো।

বাস্তব জীবনেও কিন্তু আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে গ্রেডিং তূল্য পদ্ধতি ব্যবহার করি। ১নম্বর মাল, দুই নম্বর কোয়ালিটি, ইত্যাদি কথাগুলো এজন্যই বহুল প্রচলিত। বিলাসবহুল বাসের টিকিট সবগুলোর একই মূল্য হলেও সবগুলো বাসে/সিটে কিন্তু আরাম/সুবিধা সমান নয়। আবার ইটের ভারবহন ক্ষমতা ৫০৪০ পাউন্ড/বর্গইঞ্চি (psi) হউক আর ৫১০০ psi হউক সেটাকে আমরা ১ নং মানের ইট বলি। আবার বিভিন্ন ক্ষেত্রেও সবসময় নম্বর প্রদানের মত নিঁখুত (!) পরিমাপ দেয়া সম্ভব নয় - সেসব ক্ষেত্রে আগে থেকে নির্ধারিত একটা মাত্রা/তালিকা অনুযায়ী গ্রেডিং এর মত করে শ্রেণীবিভাগ করা হয় (যেমন ধরুন: ৫ তারকা হোটেল, ৩ তারকা হোটেল; বৈদ্যূতিক যন্ত্রের শক্তি সাশ্রয়ী রেটিং; ২নং বিপদ সংকেত, ৭নং বিপদ সংকেত; প্রথম/দ্বিতীয়/তৃতীয় শ্রেণীর ঠিকাদার ইত্যাদি)।

প্রায় একই ভাবে গ্রেডিং পদ্ধতিতে প্রতিটা গ্রেডের একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করা আছে। যেমন:

A গ্রেড (A+, A, A-)= Excellent বা অসাধারণ
B গ্রেড (B+, B, B-)= Very good বা খুব ভাল
C গ্রেড (C+, C, C-)= Average বা গড়পড়তা
D গ্রেড (D+, D, D-)= Passable বা পাশযোগ্য

কাজেই একটা নির্দিষ্ট উত্তরপত্রে ঠিক কত নম্বর পেলে সেটা অসাধারণ মেধার স্বাক্ষর রাখবে সেটা আপেক্ষিক এবং প্রশ্নপত্রের ধরণের উপর নির্ভর করে। অসাধারণ মেধার অধিকারীকে আলাদা করে চেনার মত প্রশ্নই যদি না থাকে এবং সবগুলো প্রশ্নই যদি গড়পড়তা মেধার ছাত্র সঠিক উত্তর দিতে পারে, তবে সেই পরীক্ষা পদ্ধতি ছেঁকে ছেঁকে মেধাবীদের আলাদা করতে সম্পুর্নরূপে ব্যর্থ হবে। ইদানিংকার SSC'র ফলাফল দেখে এই ব্যর্থতার কথাটাই বার বার মনে পড়ে যায়।

লক্ষনীয় হল যে এখনও গ্রেড প্রদানের আগে ছাত্রকে নম্বর প্রদান করা হচ্ছে। কারণ একাধিক উত্তর থেকে সবগুলোতে প্রদত্ত উত্তরের সমষ্টিগত ফলাফল পেতে নম্বরের বিকল্প নাই। এই একই কারণে লেটার গ্রেডের সমতূল্য গ্রেড পয়েন্টও দেয়া হয়ে থাকে যা সিজিপিএ (কম্বাইন্ড গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ) নির্ণয়ে কাজে লাগে। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষার উত্তরপত্রে নম্বরপ্রদান পদ্ধতির বিকল্প এখনও বের হয়নি।

রিলেটিভ গ্রেডিং; অ্যাবসলিউট গ্রেডিং

নম্বর পদ্ধতি খুব সুবিধাজনক হলেও এটার একটা বড় দূর্বলতা আছে, যা শিক্ষার্থীদেরকে ভোগাচ্ছে বহুভাবে; এই সমস্যারও সমাধান করা সম্ভব হয়েছে গ্রেডিং পদ্ধতিতে। প্রথমে সমস্যাটা উল্লেখ করি: ভিন্ন ভিন্ন সময়ের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ভিন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভিন্ন প্রশ্নপত্রের ক্ষেত্রে কোনো বছরে সহজ এবং কখনো অত্যন্ত কঠিন প্রশ্ন হতে পারে। স্বাভাবিক ভাবেই কঠিন প্রশ্নের সময়ে একই রকম মেধা সম্পন্ন পরীক্ষার্থীও বেশি নম্বর উঠাতে পারবে না। ফলশ্রুতিতে অন্য ব্যাচের ছাত্রদের সাথে তার মেধার তূলনীয় মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে না।

এই সমস্যা সমাধানকল্পে উপরের তালিকাগুলোতে দেয়া অ্যাবসলিউট গ্রেডিং (=নির্দিষ্ট নম্বর পেলে নির্দিষ্ট গ্রেড) পদ্ধতির পরিবর্তে রিলেটিভ গ্রেডিং পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। কয়েকভাবেই এই রিলেটিভ গ্রেডিং প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রথম পদ্ধতিতে ক্লাসের সমস্ত ছাত্রদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত ৫ জনকে বা ৫%কে সর্বোচ্চ গ্রেড দেয়া হবে, তারপর সেই নম্বর অনুযায়ী বাকীদেরকে একটা নির্দিষ্ট নম্বর পরপর পরবর্তী গ্রেড দেয়া হবে। কাজেই নম্বরের উপর নির্ভরশীল থাকলেও সহজ বা কঠিন প্রশ্নের সীমাবদ্ধতা এখানে কাটিয়ে ওঠা যাচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে এই পদ্ধতিটা আমার খুব বেশি পছন্দ নয়, কারণ প্রতি ব্যাচেই যে সম-মেধার ছাত্র ভর্তি হবে এটা সদাসত্য নয়। এমনও হতে পারে সঠিকভাবে পড়ানো এবং প্রশ্ন সহজ হওয়া সত্বেও বেশিরভাগ ছাত্র খারাপ করলো, কারণ তাঁরা আসলে তেমন মেধাবী নয় - তাই তাদের সর্বোচ্চ গ্রেড পাওয়া উচিত নয়। আবার অন্য আরেক পরীক্ষায় স্ট্যান্ডার্ড কঠিন প্রশ্ন হওয়া সত্বেও ৫%-এর বেশি ছাত্র খুব ভালো নম্বর পেল ... অর্থাৎ নির্দিষ্ট ৫% এর চেয়ে বেশি ছাত্র সমান মাত্রার মেধার অধিকারী হওয়া সত্বেও কেউ কেউ সামান্য ১ নম্বরের জন্য সর্বোচ্চ গ্রেড পাবে না ... যেটা সঠিক মেধার মূল্যায়নের মূলনীতির সাথে সাংঘর্ষিক বলে মনে করি।

আরেকটি পদ্ধতি হতে পারে গ্রেস নম্বর প্রদান। গণহারে সকলকে গ্রেস প্রদান নয়, বরং এই পদ্ধতিতে শিক্ষক ছাত্রদের সাথে তার মিথষ্ক্রিয়া বা পড়ানোর অভিজ্ঞতায় ঠিক করবেন যে এই ক্লাসের ছাত্রদের গড় মেধা আসলে কোন গ্রেডের অধিকারী। সেই গ্রেডের জন্য গড়ে যত নম্বর পাওয়া দরকার, সেটার সাথে ছাত্রদের প্রাপ্ত নম্বরের গড় তুলনা করে গড় গ্রেস নম্বরের পরিমান নির্ণয় করবেন। তারপর একটা অনুপাতের সূত্র ব্যবহার করে প্রতিটি ছাত্রের জন্য গ্রেস নম্বরের পরিমাণ বের করবেন। এতে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত ছাত্র যত নম্বর গ্রেস পাবে, সবচেয়ে কম নম্বর প্রাপ্ত ছাত্র গ্রেস পাবে তার চেয়ে অনেক বেশি।

উল্লেখিত এই দুইটি পদ্ধতিই কাজ করবে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে, কারণ এখানে সরাসরি শিক্ষকগণই ছাত্রদেরকে মূল্যায়ন করে থাকেন। কিন্তু SSC/HSC অথবা নতুন শিক্ষানীতি অনুসারে কেন্দ্রীয়ভাবে যেই পরীক্ষাগুলো নেয়া হবে সেখানে যেহেতু মূল্যায়নকারী শিক্ষক সরাসরি সেই ছাত্রকে চিনবেন না, তাই রিলেটিভ গ্রেডিং-এর জন্য প্রয়োজনীয় স্বাধীনতাটুকু ওনার থাকবে না। এজন্য ফিক্সড গ্রেডিং পদ্ধতির উপযোগী এমন প্রশ্ন প্রণয়ন করতে হবে যেন অসাধারণ মেধার ছাত্রকে সাধারণ মেধার ছাত্র থেকে আলাদা করার জন্য নির্দিষ্ট নম্বরের প্রশ্ন থাকে। সাধারণ মেধার ছাত্র ঐ প্রশ্নের গভীরে গিয়ে বিশ্লেষন বা উত্তর দিতে পারবে না, তাই অসাধারণ গ্রেডের উপযুক্ত নম্বরও পাবে না। যে কোন পরীক্ষাতেই এই রকম চিন্তাধারা থেকেই সঠিক প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়।

গ্রেডিং পদ্ধতির ভিন্নতা কেন

পাঠক যদি এতদুর পর্যন্ত পড়ে থাকেন, তবে ইতিমধ্যেই এই ভিন্নতার বিষয়ে কিছুটা পরিস্কার ধারণা হয়েছে। এককথায় যদি এর কারণ ব্যাখ্যা করতে হয় তবে বলা যায়: বিভিন্ন স্তরের মেধার ছাত্রদেরকে আলাদা ভাবে চেনানোর জন্য যতটুকু নম্বর নির্ধারণ করা দরকার, পরিস্থিতির ভিন্নতা অনুযায়ী ততটুকুই নির্ধারণ করা হয়। আমার সীমিত অভিজ্ঞতা শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়া এবং পড়ানো সংক্রান্ত, তাই উদাহরণে ওগুলোই চলে এসেছে। আশা করছি, এগুলো অন্য বিষয়গুলোর (বাণিজ্য বা অন্যান্য বিভাগের) গ্রেডিং পদ্ধতির সাথে খুব একটা আলাদা হবে না। উপরের তালিকা-১ এবং তালিকা-৩ এ ভিন্নতার কারণ এভাবেই ব্যাখ্যা করা যাবে।

বুয়েটের আন্ডারগ্রাজুয়েটে যেই স্তরের চ্যালেঞ্জ সহ প্রশ্ন করা হয়, সেখানে অসাধারণ মেধা না হলে ৮০%+ নম্বর পাবে না। কিন্তু আমার প্রতিষ্ঠানে একই স্তরের চ্যালেঞ্জ সহ প্রশ্ন করা হলেও অসাধারণ মেধা প্রমাণের জন্য ৯০%+ নম্বর পেতে হবে; কারণ পরীক্ষা গ্রহণ পদ্ধতির ভিন্নতা। বুয়েটে পুরা পাঠ্যক্রম/সিলেবাসের উপরে ৩ ঘন্টার একটা ফাইনাল পরীক্ষা হয়, যাতে মোট নম্বরের ৭০% ওজন বরাদ্দ থাকে (বাকী ৩০% ক্লাস পার্ফর্মেন্স + কুইজ থেকে আসে)। কিন্তু আমার প্রতিষ্ঠানে ২ ঘন্টার ফাইনাল পরীক্ষাতে এক তৃতীয়াংশ পাঠ্যক্রম/সিলেবাস অন্তর্ভুক্ত থাকে। বাকী দুই তৃতীয়াংশ দুইটি ১ ঘন্টার মিড টার্ম পরীক্ষাতে সম্পন্ন করা হয়। (ফাইনাল = ৩৫%; মিডটার্মদ্বয় = ২০%+২০%; কুইজ+এসাইনমেন্ট+ক্লাস পার্ফর্মেন্স=২৫%)। ছোট ছোট সিলেবাসে পরীক্ষার কারণে এখানে বেশি নম্বর তোলা অপেক্ষাকৃত সহজ। এই প্রতিষ্ঠানে যদি বুয়েটের মতই ৮০% এ অসাধারণ মেধার গ্রেড দিতে হয়, তবে পরীক্ষার সময়ের স্ট্রেস/চাপ-ও একই পর্যায়ের করতে হবে, অর্থাৎ মিড টার্ম বাদ দিয়ে সম্পুর্ন সিলেবাসের উপরে ফাইনাল পরীক্ষা নিতে হবে। মজার ব্যাপার হল, ৯০%-এ সর্বোচ্চ গ্রেড অনেকের কাছে কঠিন মনে হলেও এখান থেকেও প্রায় ব্যাচেই দুই/একজন এই গ্রেড তুলতে সক্ষম হয় -- সেটা পার্ট-টাইম শিক্ষক হিসেবে বুয়েট/ডুয়েটের সিনিয়র শিক্ষকদের কোর্সেও ঘটে।

সমস্যা

কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও বুয়েটের মত গ্রেডিং পদ্ধতি অনুসরণ করে (ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্ট কমিশনও এমনই গাইডলাইন দিয়েছেন); অথচ সেসব জায়গায় ফাইনাল পরীক্ষায় কিন্তু বুয়েট/ডুয়েট/চুয়েট/কুয়েট-এর মত সম্পুর্ন সিলেবাসের চাপ নিতে হয় না, কারণ মিড টার্ম পরীক্ষায় কিছু সিলেবাস সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। ফলশ্রুতিতে দেখা যায়, কম মেধার ছাত্র হওয়া সত্বেও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা ছাত্রর গ্রেড পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের গ্রেডের চেয়ে বেশি হয় (অনেকটা SSC পরীক্ষার ফলাফলের মত)।

আর একই কারণে আমার প্রতিষ্ঠানে কম গ্রেড পাওয়া ছাত্রও ক্রেডিট ট্রান্সফার করে অন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে গ্রেডের বন্যায় ভাসতে থাকে। আর এই রকম কোয়ালিটি কন্ট্রোলজনিত সমস্যার কারণে কিছু চাকুরীদাতা প্রতিষ্ঠানও একটা নির্দিষ্ট গ্রেডের চেয়ে কম পেলে আবেদন করার দরকার নাই বলে দেয় -- অর্থাৎ এর চেয়ে কম গ্রেড পাওয়া যাকে আমরা উপযুক্ত প্রকৌশলী হিসেবে সার্টিফিকেট দিচ্ছি সেটা তার প্রাপ্ত সম্মান পায় না। মজার ব্যাপার হল, আমাদের এখান থেকে সার্টিফিকেট পাওয়ার যোগ্যতার (CGPA>2.25) চেয়ে কম গড় গ্রেডের ছাত্র অন্য কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে চলে গেলে শুধু যে বেশি গ্রেড পাচ্ছে (খুব ভালো B থেকে অসাধারণ A) তা-ই নয়, ওখানে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে নিয়ে যাওয়া আমাদের দেয়া গ্রেডকে ওদের নম্বর পদ্ধতিতে ফেলে নতুন গ্রেডও দেয়া হচ্ছে!!

শিক্ষকতার আদর্শ থেকে সরে গিয়ে শুধুমাত্র শিক্ষা-বাণিজ্য কেন্দ্রিক এই কোয়ালিটি কন্ট্রোল দীর্ঘমেয়াদে দেশকে কী পরিস্থিতিতে ঠেলে দেবে ভাবতেই মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। কোয়ালিটি সম্পন্ন শিক্ষক ছাড়া, কোনোরকম ল্যাবরেটরি ছাড়া (কোচিং-এ খারাপ মান + কোয়ালিটি কন্ট্রোলেও খারাপ মান) শুধুমাত্র সার্টিফিকেট বাণিজ্য করে যাদের ডিগ্রী দেয়া হবে, সেই তথাকথিত ইঞ্জিনিয়ারের নকশা করা ভবন ফেটে যাবে, হেলে যাবে, ভেঙ্গে পড়বে; তথাকথিত ডাক্তারের রোগী আর সুস্থ হবে না। এখনই এই দেশে গুণীর কদর নাই ... ... ... আর এ অবস্থা চলতে দিলে শিক্ষিত লোকের শিক্ষাকে সমাজ আর মূল্য দেবে না। উল্লেখ্য যে বিদেশের বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এরকম অবস্থা বিরাজ করে।

চাকুরীর বাজারে, নিয়োগকর্তার গ্রেডিং পদ্ধতির মূলনীতি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকাটাও একটা বিরাট সমস্যা সৃষ্টি করছে। সকলেই লেটার গ্রেডের বদলে নিউমেরিকাল গ্রেড দেখতে চায় এবং একটির সাথে অপরটির তুলনা করে। অথচ এই গ্রেডিং পদ্ধতি সব জায়গায় এক নয়, এক হতে পারে না। বরং লেটার গ্রেডটিই ছাত্রটির আসল মেধা সম্পর্কে বলে দেয় -- সে কি অসাধারণ, নাকি খুব ভালো, নাকি গড়পড়তা ইত্যাদি। কিন্তু যখন সিজিপিএ ৩.০ এর নিচে আবেদন করতে নিষেধ করা হয়, তখন বাণিজ্য-মূখী কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম মেধার অথচ বেশি গ্রেডের ছাত্র সেখানে আবেদন করতে পারে, অথচ বুয়েটের অপেক্ষাকৃত মেধাবী ছাত্র আবেদনের যোগ্য বিবেচিত হয় না! সেলুকাস!

কিছুটা অফটপিক, কিছুটা ভিন্নমত

প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় আমরা কি সত্যই মেধা যাচাই করতে পারছি? আমার সহপাঠিগণ বিদেশী নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে গ্রেড পেয়েছে, বুয়েটে তার চেয়ে অনেক কম গ্রেড পেয়েছিলো। এছাড়া কিছু কিছু বিষয়ের পরীক্ষায় ঠিক কোন ধরণের মেধা যাচাইয়ের লক্ষ্যে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয় সেটাই ভেবে পাই না। ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাথ ডিপার্টমেন্টের পরীক্ষাগুলোতে দেখেছি, মুখস্থ বিদ্যা ছাড়া ভাল গ্রেড পাওয়া অসম্ভব। মুখস্থ করার ক্ষমতা নিঃসন্দেহে এক প্রকার মেধা, এবং কর্মক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তাও অস্বীকার করা যায় না, কিন্তু তাই বলে ম্যাথ পরীক্ষায় মুখস্থ! ম্যাথের উদ্দেশ্য কি মুখস্থ? সেখানে সমাধানের দাড়ি, কমার জন্য নম্বর কাটতো!

শুধুমাত্র ভাল অংক করতে পারলেই মেধাবী -- এমন একটা ভুল ধারণার প্রচলন আছে এদেশে। ভিন্ন ভিন্ন কর্মক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন দক্ষতা ও মেধার প্রয়োজন হয়। ভাল ডিজাইনার হওয়ার জন্য মার্কেটিং করার মত মেধা না থাকলেও চলবে, আবার যে ম্যানেজমেন্টে দক্ষ তার মেকানিকসে জ্ঞান/মেধার প্রয়োজন নাই। পরীক্ষার খাতায় লেখে ফাটিয়ে ফেললো, গ্রেডের বন্যায় ভেসে গেল অথচ কর্মক্ষেত্রে একটা সিদ্ধান্ত নিতে কাঁপাকাঁপি লেগে যায় ... এ ধরণের মেধার আদৌ কি খুব প্রয়োজন আছে?

আমার ধারণা, মেধা হল ক্ষমতার পরিমাপ; আর জ্ঞান হল সেই ক্ষমতা কতটুকু ব্যবহার করা হল তার একটা পরিমাপ। পরীক্ষার গ্রেডকে মেধার পরিচায়ক রূপে ব্যবহার করলেও আসলে এটা তার জ্ঞানের প্রতিফলন, মেধার প্রতিফলন নয়। অন্যভাবে বললে, একটা নির্দিষ্ট রাস্তায়, রাস্তার বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে দুইটি গাড়ি যদি ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে চলে ... তা থেকে দুইটি গাড়িই সমান ক্ষমতার বলে সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না, কারণ একটি গাড়ি হয়তো এর ইঞ্জিনের সমস্ত ক্ষমতা ব্যবহার করেছে, অন্যটি এর অর্ধেক ক্ষমতা ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছে। একজন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র যদি পরীক্ষার সময় অসুস্থ হয়ে থাকে কিংবা তার কোন বিপদ ঘটে থাকে তবে বিদ্যমান পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরীক্ষার ফলাফলে তাকে নিম্ন মেধার মনে হবে। আবার দেখুন স্কুলে কিছু সহপাঠি সবসময় পেছনের সারির ফলাফল করলেও কর্মক্ষেত্রে তাদের অধীনে তথাকথিত মেধাবী ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদিরা চাকুরী করছে। মেধা না থাকলে শুধুমাত্র চাচা/মামার জোরে কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব বলে আমার মনে হয় না। বিদ্যালয়ের গৎ বাধা লেখাপড়া তাকে ঐ বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে পারেনি, তাই তার মেধা সে সেখানে প্রয়োগ করেনি। আবার, লেখাপড়ায় অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র কর্মক্ষেত্রে লবডংকা -- এমন উল্টা ঘটনাও দেখা যায় অহরহ!

এরকম হওয়ার কারণ হতে পারে - আমাদের লেখাপড়া পুরোপুরিভাবে কর্মমূখী শিক্ষা নয়। ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারী, আইন ইত্যাদি পেশাদার লেখাপড়া থাকা সত্বেও এই ধরণের (কর্মমূখী নয় অথবা কার্যক্ষেত্রের চাহিদা পূরণ করে না) অভিযোগ আসতে থাকলে, লেখাপড়া এবং এই মেধা যাচাই পদ্ধতির সার্থকতা সম্পর্কে আরেকটু চিন্তাভাবনা করার ইন্ধন যোগায়।


মন্তব্য

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

পুরোটা পড়লাম। অতি প্রাঞ্জল এবং টু দ্য পয়েন্ট। এরকম গুছিয়ে লিখতে পারলে গবেষণার প্রয়োজন নেই। হাসি

সর্বোৎকৃষ্ট গ্রেডিং সিস্টেম নিয়ে আমি নিজে ১০০% নিশ্চিত নই। তবে এখন পর্যন্ত প্রশ্নের মান এবং গ্রেডবিন্যাসে বুয়েটের ব্যাচেলরেরটাই সেরা মনে হয়েছে। রিলেটিভ গ্রেডিং শিক্ষকের অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধিমত্তার ওপর নির্ভর করে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও এরকম শিক্ষক বিরল। মার্ক্স সিস্টেম একটু ফাইন লেভেলের গ্রেডিং সিস্টেমই। ওখানে হয়তো প্রতি নম্বরকে একটা আলাদা গ্রেড ধরা যায়, গ্রেডিং সিস্টেমে সেরকম ৫টি নম্বরকে একটি গ্রেডে রূপান্তর করা হয়। মার্ক্স সিস্টেমের যে সমস্যা তুলে ধরেছেন, সেটা নমুনার সাইজ বড়ো হলে অনেক সময়ই কাটিয়ে ওঠা যায়। যেমন, একজন ছাত্র ১ বিষয়ে তার ন্যায্য নম্বরের চেয়ে ৫ নম্বর বেশি বা কম পেতে পারে; কিন্তু এরকম ১০টি বিষয় একত্র করা হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুলচুক ইভেন আউট হয়ে যায়।

সর্বোচ্চ গ্রেড পাওয়া বেশি সহজ হয়ে গেলে সমস্যা হলো শিক্ষার্থীর সামর্থ্যের সেরাটা বের করে আনা সম্ভব হয় না। এতে মুড়িমুড়কির একদর হয়ে যায়, মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয় না, কোনো বিষয়ে টপ লেভেল মেধাবীদেরকেও আইডেন্টিফাই করা যায় না। এতে শিক্ষার্থী তার প্রকৃত মেধা এবং শক্তিশালী দিক সম্পর্কেও ধারণা পেতে ব্যর্থ হয়। এবং ব্যর্থতা একটা চেইন রি-অ্যাকশন ...

এবার আপনার পোস্টের সুপ্ত একটা লিংক হাইলাইট করি। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলো সৃষ্টি হয়েছে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে।* আমাদের পর্যাপ্ত উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অপ্রতুলতাও একটা কারণ; কিন্তু এই ব্যবসায় সেই কারণটাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করেছে মাত্র। এই ব্যবসায়িক প্রয়োজনের সাথে তাল মিলিয়েই চলছে বর্তমান এসএসসি এইচএসসির গ্রেডিং পদ্ধতি। (একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার মূলেও একই মোটিভেশন, আমাদের রাজনীতিবিদ বা শিক্ষাবোর্ডের কর্তারা গাধা নন, তারা তাদের লেভেলে যথেষ্ট ধূর্ত)। একজন ছাত্র যখন জিপিএ ৫ পায়, তখন তার মধ্যে তথাকথিত উচ্চাকাঙ্ক্ষা** সৃষ্টি হয়। স্বভাবতই সবার জন্য পাবলিক ইউনিগুলোতে এই উচ্চাকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। ভর্তি পরীক্ষায় নানা কারণে ব্যর্থ উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছাত্রের জন্য তখন বিকল্প প্রাইভেট ইউনি। এছাড়া 'ভালো' বিষয়ে চান্স পাওয়া-না পাওয়া, স্বল্প সময়ে ডিগ্রিপ্রাপ্তি এসব ফ্যাক্টরও প্রাইভেটে পড়তে প্রভাবিত করে। আগের সিস্টেমে সেকেন্ড ডিভিশন পাওয়া একজন ছাত্রের উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর এখনকার জিপিএ ৪.৫ পাওয়া ছাত্রের প্ল্যানিং পুরা ভিন্ন।

[* প্রাইভেট ইউনিতে পড়া ছাত্রদের মেধা বনাম পাবলিকে পড়া ছাত্রদের মেধা জাতীয় আলোচনায় জড়াতে চাই না। আর প্রাইভেট ইউটি হওয়ায় ভালো, না মন্দ হয়েছে, সেটাও আলোচনার বাইরে।
** এখানে উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকাকে খারাপ বলছি না; কিন্তু মেধা ও যোগ্যতার সাথে আকাঙ্ক্ষা মানানসই না হলে শেষাবধি হতাশায় পড়তে হয়।]

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

শামীম এর ছবি

হুমম .... সুচিন্তিত মন্তব্যে কিছু বিষয় জানলাম যা পোস্ট করার সময়ে মাথায় ছিল না।
চলুক
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

সাইদ এর ছবি

সম্ভবতঃ আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি বুয়েটকে অনুসরণ করে। পরীক্ষা পদ্ধতি ও নম্বর পদ্ধতিতে।
আমার ব্যক্তিগত মতামত হ্ল- মুখস্থ নির্ভর শিক্ষা পদ্ধতি না পালটানো পর্যন্ত , যতই নম্বর পদ্ধতি পরির্বতন করুক আদতে তেমন লাভ নাই।

শামীম এর ছবি

আহসানউল্লাহ সম্পর্কে আরো একটু তথ্য যোগ করি।

এখানে বছরে দুইটি সেমিস্টার যেখানে অন্য সব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে বছরে ৩টি সেমিস্টার (ট্রাইমিস্টার?)। ফলে আহসানউল্লাহ-এ পড়া ছাত্রদের পঠিত বিষয় আত্মস্থ করার জন্য রেসিডেন্ট সময় বেশি এবং আমার কাছে অন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর মনে হয়।

তবে, দেড় যুগ আগে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মত করে অন্য প্রাইভেটগুলোও যদি দুই সেমিস্টারে বছর করে তবে তাদের কোর্স ফী দেড়গুন করে দিতে হবে ... কারণ একই আয় দিয়ে ৪ মাসের জায়গায় ৬ মাসের খরচ (কর্মচারী/কর্মকর্তা/শিক্ষকদের বেতন, অবকাঠামোর ভাড়া/বিল ইত্যাদি) উঠাতে হবে।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

স্বপ্নহারা এর ছবি

মারাত্মক একটা লেখা, অনেক কিছু তুলে এনেছেন। আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে হাইস্কুল পর্যায়ে এখনকার পদ্ধতির বিরোধী... আমাদের দরকার মাঝামাঝি কিছু একটা। সমস্যা একটাই, কোন সিস্টেমই সত্যিকারের মেধাবীদের সবসময় সঠিকভাবে তুলে আনতে পারেনা!

গত পরশু কানাডার স্কুল শিক্ষকদের নিয়ে একটা ওয়ার্কশপে অনেক কিছু উঠে এসেছে... এখানে অনেকেই আবার পুরনো পদ্ধতিতে ফিরে যেতে চাচ্ছে; কারণ, এই গ্রেড পদ্ধতি সত্যিকার অর্থে একজন ছাত্রের অবস্থান কোথায় তা বুঝাতে সাহায্য করে না...সামান্যতম প্রতিযোগিতা না থাকায় ছাত্র-ছাত্রীরা মোটিভেটেড ও হয়না...এদের সামনে কোন 'ভিশন' না থাকায় এরা কোথায় যাচ্ছে তাও বোঝেনা!

-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

শামীম এর ছবি

টোফেল/জি.আর.ই. স্টাইলে কম্পিউটারে ক্লিক করে করে পরীক্ষা নেওয়ার ঝিঝিটাল বুদ্ধি নাকি? চোখ টিপি
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

আমার নিজেরো মনে হয় মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক স্তরে গ্রেডিং এর পরিবর্তে নাম্বারের পদ্ধতিটাই চালু করা উচিত। ...

আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আমি আসলেই ঈর্ষা করি। [ এখানে বলাই'দার মত করে বলি - " প্রাইভেট ইউনিতে পড়া ছাত্রদের মেধা বনাম পাবলিকে পড়া ছাত্রদের মেধা জাতীয় আলোচনায় জড়াতে চাই না। "] কেন্দ্রীয় কোন কর্তৃপক্ষের এদের গ্রেডিং এবং সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা পদ্ধতিটা পুনর্বিবেচনা করা দরকার। পরিচিত অনেকেই যখন অকাতরে ৯০+ নাম্বার পেয়ে এপ্লাস পেয়েছে বলে, তখন বুকে ধাক্কা লাগে। কারণ পাবলিকে পড়া, ব্যক্তিগত পরিচিত অধিকতর বহু মেধাবীকেই নিজের গ্রেড নিয়ে হতাশ হতে দেখেছি-দেখছি।

_________________________________________

সেরিওজা

সাইদ এর ছবি

@সুহান রিজওয়ান
আপনার সাথে সামান্য কিছুটা দিমত (অভ্রতে দ -এর নিচে ব কিভাবে দিতে হয় ঠিক জানি না) পোষণ করব। যদিও ব্যতিক্রম কখনও উদাহরণ হয় না।
আহসানউল্লাহ-তে গ্রেড তোলা এত সহজ নয়। কারণটা হ্ল সবগুলি ফ্যাকাল্টি বেশিরভাগই বুয়েট -এর শিক্ষক দারাই পরিচালিত। অন্তত এটুকু বলা যেতে পারে এখান থেকে পাশ করতে কিছু না কিছু শিখতেই হয়। তাই আমার মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি আন্তরিক হয় তাহলে ভাল মানের শিক্ষা দান করা সম্ভব। এটা প্রাইভেট অথবা পাবলিক সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ়্য।
[আবার ভাববেন না বুয়েট-এর সাথে তুলনা করছি। বুয়েট-এ বাংলাদেশের সেরা ছাত্র ছাত্রীরাই পড়ে ]

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

পাশ করতে গেলে কিছু না কিছু তো শিখতেই হবে, তাই না ?? ...

আমার মন্তব্যটা অনেকটাই জেনারালাইজড, কাজেই এতে আঠারো-বিশ হতে পারে, বারো-বিশ হবে না কিন্তু...

[অভ্রতে কেবল দ নয়, যে কোনো বর্ণের নীচে ব আনতে W চাপুন। দ্বিমত হবে dwimot.]

_________________________________________

সেরিওজা

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

পড়লাম। এর বেশি লেখার সময় নাই। খাইছে

গৌতম এর ছবি

১. আমাদের অনার্স লেভেলের প্রথম দুই বছরে রিলেটিভ গ্রেডিং সিস্টেম ছিল। অনেক শিক্ষার্থী এবং বেশ কিছু শিক্ষকের প্রতিবাদের কারণে এটা পরে বাদ দিয়ে অ্যাবসিলিউট গ্রেডিং সিস্টেম চালু করা হয়। এই প্রতিবাদকারীদের মধ্যে অবশ্য আমিও ছিলাম। কারণ যে শিক্ষকগণ এটা চালু করেছিলেন এবং বহাল রাখার পক্ষে ছিলেন, তাঁরা এটার গুরুত্ব আমাদের শিক্ষার্থীদের বুঝাতে পারেন নি। অপরপক্ষে বেশ কিছু শিক্ষক এই গ্রেডিং করতে না পেরে নিজেদের ঝামেলা এড়ানোর জন্য এটার বিপক্ষে ছিলেন। আমি যেমন একটা কোর্সে ৮২ পেয়ে বি+ এবং আরেকটা কোর্সে ৫২ পেয়ে এ পেয়েছি। কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব- সেটা তখন শিক্ষকরা আমাদেরকে ভালো করে বুঝাতে পারেন নি।

২. সমস্তরের শিক্ষায় অভিন্ন গ্রেডিং থাকা জরুরি বলে মনে করি। কারণ শেষ বিচারে এক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে আরেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সাথেই তুলনা করা হয়- বিশেষত চাকুরিতে। সেখানে অভিন্ন গ্রেডিং না থাকলে বৈষম্যের সুযোগ চলে আসে। তবে ভিন্ন স্তরে, যেটা আপনি বললেন, মাস্টার্সে গিয়ে ভিন্ন হতেই পারে। সব স্তরেই যে সমভাবে শিক্ষার্থীরা মূল্যায়িত হবে, সেটা বোধহয় কোনো শিক্ষাব্যবস্থায় কাঙ্ক্ষিত নয়।

৩. এসএসসি কিংবা এইচএসসিতে নম্বরের বদলে গ্রেডিং-ই দেখতে চাই। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের খাতা দেখার পদ্ধতি ও মনোভাব বদলানো জরুরি। আজকে গ্রেডিং পদ্ধতির যে সমালোচনা হচ্ছে, তার একটা বড় কারণ হচ্ছে এই খাতা দেখার পদ্ধতি। শিক্ষকর যদি যথাযথভাবে খাতা দেখতে পারেন, তাহলে এই পদ্ধতিতেও শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে মূল্যায়ন করা সম্ভব।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শামীম এর ছবি

১. এখন নিশ্চয়ই আগের চেয়ে ধারণা একটু পরিস্কার হয়েছে? সঠিক ভাবে প্রয়োগ করা হলে রিলেটিভ গ্রেডিং বেশ ভাল একটা পদ্ধতি।

২. অভিন্ন গ্রেডিং করার জন্য অভিন্ন শিক্ষাপদ্ধতি এবং পরীক্ষা পদ্ধতি থাকা দরকার। একই ছাত্র বুয়েটে ৬মাসের সেমিস্টারে যত গ্রেড তুলবে; বুয়েটের ঐ শিক্ষকই যদি আমার প্রতিষ্ঠানের নিয়মে পরীক্ষা নেয়, তবে এখানে একই গ্রেড পাওয়া উচিত। কিন্তু ছোট ছোট সিলেবাসে পরীক্ষা দেয়ায় ছাত্র এখানে সুবিধা পাবে বেশি।

পরীক্ষার খাতা দেখতে দেখতে ব্যক্তিগত ভাবে আমি হয়রান ও বিরক্ত। অনেক শিক্ষকই মিড টার্ম পদ্ধতি তুলে দেয়া বা অন্ততপক্ষে ২টার বদলে ১টা করার কথা বলেন প্রায়ই। কিন্তু ছাত্রদের সুবিধার কথা ভেবে কর্তৃপক্ষ সেপথে যায়নি এখনও।

৩. গ্রেডিং পদ্ধতির পক্ষে একমত। তবে আমার ধারণা খাতা দেখার পাশাপাশি প্রশ্নপত্র প্রণয়নে মুন্সিয়ানার পরিচয় দিতে হবে, যেন বিভিন্ন মেধাস্তরের পরীক্ষার্থীদের আলাদাভাবে চেনা যায়।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

গৌতম এর ছবি

১. এসএসসি ও এইচএসসিতেও রিলেটিভ গ্রেডিং প্রয়োগ করা যেতে পারে এবং এটা করা খুব একটা কঠিন হবে বলে মনে হয় না। তবে এক্ষেত্রে শিক্ষকদের দ্বারা সঠিকভাবে খাতা দেখাটা নিশ্চিত করতে হবে। যে নম্বর আসবে, সেটাকে কেন্দ্রীয় ডেটাবেজে রেখে খুব সহজেই স্ট্যাটিসটিক্যালি রিলেটিভ গ্রেডিং করা সম্ভব। সুতরাং কর্তৃপক্ষ চাইলে রিলেটিভ গ্রেডিং করা খুবই সম্ভব। সমস্যা হবে অন্যখানে। এই জিনিসটা অভিভাবক, শিক্ষক ও অন্যদের বুঝাতে জান বেরিয়ে যাবে। মানুষদের না বুঝিয়ে এটা চালু করলে এ থেকে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হয় কিনা কে জানে! চোখ টিপি সৃজনশীল প্রশ্ন চালু করাতে সরকার যে বাধার সম্মুখীন হয়েছিল, এর চেয়ে তীব্রতর বাধা পোহাতে হবে এই সিস্টেম চালু করতে চাইলে।

২. বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এই বিষয়গুলো দেখার দায়িত্ব আসলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের। তাঁরা কী করেন কে জানে!

৩. প্রশ্নপত্র প্রণয়নে মুন্সিয়ানার পরিচয় তো দিতেই হবে। এসএসসির প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এক গণিত ছাড়া অন্য সব বিষয়ে জ্ঞানমূলক (knowledge level) প্রশ্নের সংখ্যা ৯০%-এর বেশি। বিষয়ের বৈশিষ্ট্যের কারণেই গণিতে এ হার ২০-২৫%। অথচ নিয়মানুযায়ী জ্ঞান (knowledge), উপলব্ধি (understanding), প্রয়োগ (application), বিশ্লেষণ (analysis), সংশ্লেষণ (synthesis), মূল্যায়ন (evaluation), অনুভূতি (affective) ও মনোপেশীজ (psychomotor)- এই আট ধরনের প্রশ্ন থাকার কথা প্রশ্নপত্রে। শিক্ষার্থী যতো উপরের শ্রেণীতে যাবে, নিচের স্তরের বদলে উচ্চদক্ষতার প্রশ্ন ততো বেশি থাকার কথা।

এই পদ্ধতির কিছুটা প্রয়োগ করা হয়েছে এবারের এসএসসির বাংলা প্রথম পত্র ও ধর্ম পরীক্ষায়। আগামীতে আস্তে আস্তে সব বিষয়েই এটা প্রয়োগ করা হবে। আশা করা যায়, তখন প্রশ্নপত্রে মুন্সিয়ানার ছাপ থাকবে।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শামীম এর ছবি

৩.
বেশ কিছু জিনিষ জানলাম যা আগে জানা ছিল না। ধন্যবাদ।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

মূল্যায়ন (evaluation) এবং পরিমাপ (measurement) Education এ দুটি আলাদা term.. মূল্যায়নের উপরই বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত, কিন্তু আমাদের এখানে দুঃখজনক ভাবে পরিমাপের উপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। পাঠ্যবিষয় বাস্তবে ভালভাবে কিভাবে apply করা যায় তার বদলে নাম্বার বেশি পাওয়ার দিকেই থাকে সবার নজর... প্রাইভেট ভার্সিটি গুলো ''পরিমাপ'' অর্থাৎ নাম্বার বাড়ানোর দিকেই নজর দেয়... মনে হয় না এরা এধারা থেকে কখনো বেরিয়ে আসবে... অনেক কেই বলতে শুনি ''এত টাকায়'' অমোক ভার্সিটিতে MBA তে ভর্তি হবো, 3.9 নিশ্চিত... প্রাইভেট ভার্সিটি গুলো কিছুতেই চাইবে না ''এইসব'' student হারাতে। তাই এদের মানও কখনো খুব একটা ভাল হবে না...

@ সাঈদ- সরকারী ভার্সিটির শিক্ষকরা এক স্টাইলে প্রাইভেট এ পড়ান, অন্য স্টাইলে সরকারী টায় পড়ান... প্রাইভেটে পড়ান অনেকটা কোচিং স্টাইলে, ''এটা পড়বা-এটা আসবে'' কিন্তু অন্য জায়গায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বলেন ''পুরোটা'' পড়বা...
এই লেভেলে (বিশ্ববিদ্যালয়) ''কিছু না কিছু'' জানার জন্য পড়া না, ভালভাবে জানার জন্য পড়া উচিত। কারণ পরবর্তী সময়ে অনেকের জীবন হয়ত ''কিছু না কিছু'' জানার কারণে হুমকির মুখে পড়তে পারে।

রিলেটিভ গ্রেডিং ভাল আবার কেমন যেনো... এটা চাকরির বাজারে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে হয়...
''সমস্তরের শিক্ষায় অভিন্ন গ্রেডিং থাকা জরুরি বলে মনে করি''- একমত...

''চৈত্রী''

তার-ছেড়া-কাউয়া এর ছবি

২০০৩ সালে এইচ,এস,সি পাশ করেছি। টোটাল গ্রেড পয়েন্ট ২৯। বাংলায় ৪। ইলেক্টিভ সাবজেক্টে ৫। অ্যাভারেজ ৪,৮০। সেই সময় চতুর্থ বিষয়ের পয়েন্ট যোগ হয় নাই। ভালো সিদ্ধান্ত। কারণ ৮০ এর বেশি পেলেই A+। অনেকেই পায়। কাজেই মেধার সঠিক যাচাই হয় না। ৮০ যে পায় সেও A+, ৯৯ যে পায় সেও A+। দুইজনের মেধা যে এক না বলাই বাহুল্য। এজন্য চতুর্থ বিষয়ের পয়েন্ট যোগ না হওয়াটা একদিক দিয়ে ভালো হয়েছিলো। কিছুটা হলেও A+ এর আধিক্য কমিয়েছিলো। (মনেহয় সারা বাংলাদেশে মাত্র ১৪জন জিপিএ-৫ পেয়েছিলো)।
কিন্তু পরবর্তী বছর থেকে চতুর্থ বিষয়ের পয়েন্ট যোগ হওয়া শুরু হলো। যার টোটাল পয়েন্ট ২৭। কিন্তু চতুর্থ বিষয়ে ৫ পেয়েছে সেও জিপিএ-৫। আবার যার টোটাল পয়েন্ট ৩০ সেও জিপিএ-৫। দুইজনের মেধা কি এক হলো? তাহলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক পদ্ধতির বিকৃত রুপ যোগ করার সুফল কি?
যে বিষয়টা বললাম সেটা এখানকার সবাই বুঝবেন। এরপরও বললাম। আর কোন কাঠামো ফলো করলে সুফল পাওয়া যাবে তা ভাইয়ার লেখা কেউ মনযোগ দিয়ে পড়লেই বুঝতে পারবেন।

ধূমকেতু [অতিথি] এর ছবি

সুচিন্তিত এবং সন্দর একটা লেখা। তবে বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে জানি এই সুন্দর ভাবনাগুলোর কোনই আশু ফলাফল নেই। আমি ডাক্তারির ছাত্র। বর্তমানে মেডিকেল শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে কিছু না বলাই ভাল। স্রেফ খোলসটা পালটে মান্ধাতার আমলের শিক্ষা দেয়া হচ্ছে ছাত্রদের পশুর মত খাটিয়ে। পশুর মত বলছি এই কারণে যে আমাদের থার্ড ইয়ারে ক্লাসঘণ্টাই ছিল ন'ঘণ্টা!

একেকটা বিষয়ের সাথে অন্য বিষয়গুলো কো-রিলেট না করে পড়ালে এগুলো কোন কাজে লাগে না। দাঁড়ি-কমা মুখস্থ করে ডাক্তারি করা যায় না। আমি মেডিসিন ক্লাবের একাডেমিক কার্যক্রমের মাধ্যমে সিলেবাসে কিছু কোরিলেশন আনার চেষ্টা করেছিলাম। ডীন আমার দিকে কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলেন এবং পরে বললেন সম্ভব নয়। এ ধরণের লোক চেয়ারে থাকলে কোন কিছুই সম্ভব নয়। আর চেয়ারগুলোতে খুব ভালো লোকেরা নেই!

আর কর্মক্ষেত্রে মেধা ছাড়া কেউ উন্নতি করতে পারে না , এর প্রচুর ব্যতিক্রম আমি দেখেছি। শুধু মামা-চাচার জোরেই অনেকেই কাঁপিয়ে দিচ্ছেন।

শামীম এর ছবি

সাইলেন্ট কিলার লিখেছেন:
শামীম ভাই (স্যার),
আপনার ইতিহাস খুজতে খুজতে সচলায়তনে আপনার একটি লেখা দেখে (গ্রেডিং পদ্ধতি এবং কিছু অগোছালো চিন্তাভাবনা) কিছু বলার ইচ্ছে হলো। যেহেতু আমি সচলায়তনের সদস্য নই এবং সদস্য হলেও রাতারাতি আমাকে লিখতে দিবেনা তাই গোপন বার্তায় পাঠালাম।
আপনি লিখেছিলেন,
বুয়েটের আন্ডারগ্রাজুয়েটে যেই স্তরের চ্যালেঞ্জ সহ প্রশ্ন করা হয়, সেখানে অসাধারণ মেধা না হলে ৮০%+ নম্বর পাবে না। কিন্তু আমার প্রতিষ্ঠানে একই স্তরের চ্যালেঞ্জ সহ প্রশ্ন করা হলেও অসাধারণ মেধা প্রমাণের জন্য ৯০%+ নম্বর পেতে হবে; কারণ পরীক্ষা গ্রহণ পদ্ধতির ভিন্নতা। বুয়েটে পুরা পাঠ্যক্রম/সিলেবাসের উপরে ৩ ঘন্টার একটা ফাইনাল পরীক্ষা হয়, যাতে মোট নম্বরের ৭০% ওজন বরাদ্দ থাকে (বাকী ৩০% ক্লাস পার্ফর্মেন্স + কুইজ থেকে আসে)। কিন্তু আমার প্রতিষ্ঠানে ২ ঘন্টার ফাইনাল পরীক্ষাতে এক তৃতীয়াংশ পাঠ্যক্রম/সিলেবাস অন্তর্ভুক্ত থাকে। বাকী দুই তৃতীয়াংশ দুইটি ১ ঘন্টার মিড টার্ম পরীক্ষাতে সম্পন্ন করা হয়। (ফাইনাল = ৩৫%; মিডটার্মদ্বয় = ২০%+২০%; কুইজ+এসাইনমেন্ট+ক্লাস পার্ফর্মেন্স=২৫%)। ছোট ছোট সিলেবাসে পরীক্ষার কারণে এখানে বেশি নম্বর তোলা অপেক্ষাকৃত সহজ। এই প্রতিষ্ঠানে যদি বুয়েটের মতই ৮০% এ অসাধারণ মেধার গ্রেড দিতে হয়, তবে পরীক্ষার সময়ের স্ট্রেস/চাপ-ও একই পর্যায়ের করতে হবে, অর্থাৎ মিড টার্ম বাদ দিয়ে সম্পুর্ন সিলেবাসের উপরে ফাইনাল পরীক্ষা নিতে হবে। মজার ব্যাপার হল, ৯০%-এ সর্বোচ্চ গ্রেড অনেকের কাছে কঠিন মনে হলেও এখান থেকেও প্রায় ব্যাচেই দুই/একজন এই গ্রেড তুলতে সক্ষম হয় -- সেটা পার্ট-টাইম শিক্ষক হিসেবে বুয়েট/ডুয়েটের সিনিয়র শিক্ষকদের কোর্সেও ঘটে।

আমি যতদুর জানি বুয়েটে ৪ মাসে ১টি করে সেমিষ্টার হয়না। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে একজন ছাত্রকে প্রতি সেমেষ্টারে ৪/৫ টি সাবজেক্ট নিতে হয়। এখন চিন্তা করুন। প্রতি ৩ - ৩.৫ মাস পর পর একজন ছাত্রকে যদি ৪/৫ টা সাবজেক্টের উপর পূর্ন সিলেবাসে পরীক্ষা দিতে হয়, ব্যাপারটা কি একজন ছাত্রের জন্য এতই সোজা হবে?
আপনি অবশ্য স্ট্রেসের কথাও বলেছিলেন। সেক্ষেত্রে আপনি আহসানুল্লাহর উধাহরন দিলেন। কিন্ত আহসানুল্লাহ এর মান কি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ভেতরে টপ লেভেলের? বাংলাদেশের ভেতরে ৪ মাসে সেমিষ্টারের কনসেপ্টটি এনেছিল এনএসইউ। যা এখন মোটামুটি সব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ফলো করে। আর এনএসইউ পুরোপুরি ফলো করে নর্থ আমেরিকান (যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা) সিষ্টেম। এখন শুধু পাবলিক ইউনিভার্সিটির সাথে মিল রেখে মিডটার্ম সিষ্টেম বাদ দেয়া, সেমিস্টারের ভলিয়ম বাড়ানো কি আদৌ যৌক্তিক হবে? বাংলাদেশের পাবলিক ইউনিভার্সিটির সিষ্টেম যদি এতই ভালো হত, সাইন্টিফিক হতো তাহলে সারা দুনিয়াই এটা ফলো করতো। কিন্তু উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা হলো সবচেয়ে এডভান্সড। সেখানে যদি মিডটার্ম সিষ্টেম থাকতে পারে, ৪ মাসে সেমিষ্টার হতে পারে তাহলে এখানে কেন নয়?

আপনি লিখেছিলেন,

দেড় যুগ আগে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মত করে অন্য প্রাইভেটগুলোও যদি দুই সেমিস্টারে বছর করে তবে তাদের কোর্স ফী দেড়গুন করে দিতে হবে ... কারণ একই আয় দিয়ে ৪ মাসের জায়গায় ৬ মাসের খরচ (কর্মচারী/কর্মকর্তা/শিক্ষকদের বেতন, অবকাঠামোর ভাড়া/বিল ইত্যাদি) উঠাতে হবে।

আপনার এই ধারনাটা ভুল। বছরে ২ টা সেমিষ্টার হলেও টিউশন ফি বাড়বেনা। কারন টিউশন ফি হিসেব করা হয় পার ক্রেডিট হিসেবে। (টপ লেভেল প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোতে )
এখানে আপনি লিখেছেন,
কম মেধার ছাত্র হওয়া সত্বেও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা ছাত্রর গ্রেড পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের গ্রেডের চেয়ে বেশি হয়

এখানে একটু জেনারেলাইজড করে ফেললেন না? আমার অনেক ফ্রেন্ড আছে যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পড়ছে, আবার এমন ও ফ্রেন্ড আছে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়েছে কিন্তু এনএসইউতে চান্স পায়নি। সব বিশ্ববিদ্যালয়কে একভাবে মাপা ঠিক নয়। বাংলাদেশে এনএসইউ এর মান নিঃসন্দেহে ওয়ার্ল্ড ক্লাস। (এ ব্যাপারে আমি আপনার যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত)
এটা স্বাভাবিক যে যেখান থেকে পড়াশুনা করে সে সেখানেরই পক্ষ নেয়। এখন আমাকে যদি এখন জিজ্গেস করেন কোনটা ভালো বাংলা মিডিয়াম না ইংলিশ মিডিয়াম? আমি হয়তো লাফ দিয়ে উঠে বলবো বাংলা মিডিয়াম। কিন্তু নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখলে দুটোরই কোন না কোন পজিটিভ দিক আছে।

(লেখাটি উপযুক্ত জায়গায় দিতে পারলে ভালো লাগতো, কিন্ত সেখনে নিবন্ধন করিনি বিধায় দিতে পারলাম না।)

সময়জনিত স্ট্রেসের ব্যাপারটা যদি উল্লেখ না করে থাকি তবে সেটা ঐ লেখার দূর্বলতা। বুয়েটের প্রফেসরগণ যে সিলেবাস বানিয়ে দিয়েছে আমার বিষয়ে, সেটা বুয়েটের ৬ মাস সেমিস্টার ধরে করলে উপযুক্ত কিন্তু ৪ মাসের ট্রাইমিস্টারে একটু বেশি চাপ দেয়। এছাড়া যতদুর জানি, স্ট্যনফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ৩মাসে সেমিস্টার (কোয়ার্টার)। বাইরে নিয়মটা হল মোট শিক্ষাঘন্টা সব সিস্টেমেই এক থাকবে। অর্থাৎ বছরে দুই সেমিস্টার হলে হয়তো সিভিল ডিগ্রী পেতে ১৬১ ক্রেডিট আওয়ার লাগে, সেক্ষেত্রে বছরে ৩টা সেমিস্টার (ট্রাইমিস্টার) হলে সেটা বেড়ে ১৮০ ক্রেডিট আওয়ারের মত হয়। আর বছরে চারটা সেমিস্টার হলে (কোয়ার্টার; যেমন স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে) ১৯৫ ক্রেডিট আওয়ারের মত সম্পন্ন করা লাগবে। উল্লেখ্য যে, ক্রেডিট আওয়ার হিসাব হয়, সপ্তাহে কয় ঘন্টা ক্লাস হচ্ছে সেটার উপর ভিত্তি করে, তাই কয় মাসের কোর্স সেটা এটা থেকে সরাসরি বোঝা যায় না।

বুয়েটে প্রতি সেমিস্টারে প্রায় ২০ ক্রেডিট আওয়ার নিতে হয়। (৮ সেমিস্টারে ১৬১ ক্রেডিট আওয়ার সম্পন্ন হয়)

সিস্টেম ভাল মন্দ যাই হউক, সেটা কিভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে তার উপর এটার সফলতা নির্ভর করে। কাজেই পুরাতন সিস্টেম নিয়েও আধুনিক সিস্টেমের চেয়ে ভাল আউটপুট দেয়া অসম্ভব নয়। যদি অসম্ভবই হত তবে বাংলাদেশের পাবলিক থেকে পাশ করা ছাত্ররা বিদেশের আধুনিক সিস্টেমে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলতো। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে, এদেশের সিস্টেম থেকে গিয়ে বরং ওখানে আরও ভাল করে। আমার বন্ধুর সিজিপিএ ছিল ৩.৫৫। সে ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স করতে গিয়ে সিভিলে রিসার্চ ফান্ড না পেয়ে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়েছিল .... ... তারপরেও সে পারফেক্ট ৪.০ স্কোর করেছিলো প্রথম সেমিস্টারে। পরবর্তী সেমিস্টারে সিভিলে ফান্ড পাওয়াতে সে আবার সিভিলে ব্যাক করেছিলো এবং যথারীতি দূর্দান্ত সিজিপিএ নিয়ে পাশ করেছিলো।

৪ মাস বনাম ৬ মাসের কোর্স ফী নিয়ে আপনার যুক্তি আমার বোধগম্য হয়নি। আপনার কি কোর্স ফী নির্ধারণ করার বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা আছে? থাকলে শেয়ার করতে পারেন।

বাংলাদেশে পাবলিকে মিডটার্ম না নেয়ার পেছনে শিক্ষকদের অনাগ্রহ প্রধান কারণ। মিডটার্ম মানেই অধিক খাতা দেখার কাজ, যাতে আগ্রহ না থাকাই স্বাভাবিক!!

এন.এস.ইউ এর ওয়াল্ড ক্লাস মান কি না সেটা তো সারা পৃথিবীতে এন.এস.ইউ.এর গ্রাজুয়েটদের বিনা সমস্যায় উচ্চ শিক্ষার্থে ভর্তি হওয়ার সুবিধা দেখেই বোঝা যায়। আর সেটা কতটুকু ভাল সেটা তাদের অ্যালামনাইদের পেশাগত অবস্থান দেখেই সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। কিছু এ্যালামনাই আছে যারা পরিচিত লোকের মাধ্যমে উপরে উঠেছে .... সেগুলো উভয়পক্ষের হিসাব থেকে বাদ দিতে হবে। এন.এস.ইউ. এর গ্রাজুয়েটগণ কোথায় কোথায় শিক্ষকতা করে বনাম একই বিষয়ে পড়া পাবলিক ইউনিভার্সিটির গ্রাজুয়েটগণ কোথায় কোথায় শিক্ষকতা করে সেটাও তুলনা করে দেখা যেতে পারে।

বেশিরভাগ পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে রাজনৈতীক কলুষতার কারণে এবং শিক্ষা উপকরণের বেহাল দশার কারণে অনেকেই ওতে আগ্রহী হবে না --- এটা খুবই সত্য কথা। তবে এখনও যেসব বিষয়ে দামী দামী যন্ত্রপাতি সহ ল্যাবরেটরীর দরকার হয়, সেসব বিষয়ের সেরা ল্যাবরেটরীগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই আছে। কিছু বিষয়ে এমন ল্যাব দরকার হয় না ... যেমন কলা অনুষদ ও বাণিজ্য অনুষদের বিষয়সমূহ - সেসব ক্ষেত্রে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি পাবলিক ইউনিভার্সিটিকে সহজেই ছাড়িয়ে যেতে পারে।

আর শেষ কথা হল, সচলায়তনে অতিথি হিসেবেও মন্তব্য করা যায়। যেগুলো নীতিমালার মধ্যে থাকলে (গালিগালাজবিহীন, ব্যক্তি আক্রমনবিহীন, স্বাধীনতাবিরোধীতাবিহীন, যুক্তিযুক্ত ইত্যাদি) মডারেশনের হাত ঘুরে প্রকাশিত হয়। আপনার এই মন্তব্যসহ জবাবটিও আমি সেখানে মন্তব্য আকারে পোস্ট করে দিচ্ছি। ধন্যবাদ।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

সাইলেন্ট কিলার এর ছবি

৪ মাস বনাম ৬ মাসের কোর্স ফী নিয়ে আপনার যুক্তি আমার বোধগম্য হয়নি। আপনার কি কোর্স ফী নির্ধারণ করার বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা আছে? থাকলে শেয়ার করতে পারেন।

এখানে না বোঝার তো কিছু দেখছিনা। এনএসইউ এর টিউসন ফি নির্ধারন হয় পার ক্রেডিট হিসেবে। এখানে সেমিষ্টার কমলেও টিউসন ফি একই থাকছে।
যেমন ধরুন, কেউ CSE পড়তে চাইলে তাকে কমপ্লিট করতে হবে ১৬০ ক্রেডিট।
টিউসন ফি দাড়াচ্ছে (সেমিষ্টার ফী ছাড়া)
১৬০ * ৪৫০০ = ৭,২০,০০০.০০ টাকা
এটাই প্রধান খরচ।
এখন বছরে যদি ৩ টি সেমিষ্টার থেকে কমিয়ে ২ টি করে সেমিষ্টার করা হয় তাহলে একই সময়ে পাশ করে বের হতে হলে তাকে ক্রেডিট বাড়িয়ে নিতে হবে।
যেমন,
আগে যদি সে নিতো ১২ ক্রেডিট:
১২ ক্রেডিট * ৪৫০০ টাকা * ৩ টি সেমিষ্টার = ১,৬২,০০০.০০/ বছর
এখন সে নিবে:
১৮ ক্রেডিট * ৪৫০০ টাকা * ২ টি সেমিষ্টার = ১,৬২,০০০.০০/ বছর
এখানে খরচের কোনো হেরফের হচ্ছে না। তাই আপনি যে বললেন,
"দেড় যুগ আগে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মত করে অন্য প্রাইভেটগুলোও যদি দুই সেমিস্টারে বছর করে তবে তাদের কোর্স ফী দেড়গুন করে দিতে হবে ... কারণ একই আয় দিয়ে ৪ মাসের জায়গায় ৬ মাসের খরচ (কর্মচারী/কর্মকর্তা/শিক্ষকদের বেতন, অবকাঠামোর ভাড়া/বিল ইত্যাদি) উঠাতে হবে।"
এটা নিতান্তই ভুল ধারনা।

শামীম এর ছবি

.....এটা নিতান্তই ভুল ধারনা।

হতে পারে। তবে এখনও বোধগম্য হয়নি।

৪ মাসের জায়গায় ৬ মাসে সেমিস্টার করলে আপনার কথামত, ছাত্র ১২ ক্রেডিটের জায়গায় ১৮ ক্রেডিট রেজিস্টার করবে (বছরে তাহলে ৩৬ ক্রেডিটই থাকলো)। খেয়াল করুন: এর অর্থ হল আগে ৩ সেমিস্টার সিস্টেমে সপ্তাহে ১২ ঘন্টা ক্লাস করতো, আর দুই সেমিস্টার সিস্টেমে সপ্তাহে ১৮ ঘন্টা ক্লাস করবে।

অর্থাৎ আগে যে কয়জন শিক্ষক দরকার হত, এখন তার চেয়ে বেশি শিক্ষক দরকার হবে। বিভিন্ন ক্লাসে ঐ পরিমান শিক্ষা দেয়ার জন্য আগে ১০ জন শিক্ষক লাগলে এখন লাগবে ১৫ জন। অর্থাৎ আগে ১০ জন শিক্ষকের ৪ মাসের বেতন আসতো ১২ ক্রেডিটের ফী থেকে।

১০ জনের ৪ মাসের বেতন = ১২ ক্রেডিটের ফী × ছাত্র সংখ্যা।
বা, ১০ জনের ১ মাসের বেতন = ৩ ক্রেডিটের ফী × ছাত্র সংখ্যা।
বা, ১ জনের ১ মাসের বেতন = ০.৩ ক্রেডিটের ফী × ছাত্রসংখ্যা।

আবার, ছয় মাসের সেমিস্টারের ক্ষেত্রে যেহেতু ছাত্ররা সপ্তাহে বেশি ঘন্টা ক্লাস করবে তাই শিক্ষক বেশি লাগবে। আমি যতটুকু বুঝি তাতে হিসাবটা এমন:

১৫ জনের ৬ মাসের বেতন = ১৮ ক্রেডিটের ফী × ছাত্র সংখ্যা।
বা, ১৫ জনের ১ মাসের বেতন = ৩ ক্রেডিটের ফী × ছাত্র সংখ্যা।
বা, ১ জনের ১ মাসের বেতন = ০.২ ক্রেডিটের ফী × ছাত্রসংখ্যা।

অর্থাৎ আমি যা বুঝি (এটা নিতান্তই ভুল ধারণা হতে পারে) তাতে এভাবে ক্রেডিট ফী না বাড়ালে শিক্ষকের বেতন কমাতে হবে।

হিসাবটা খুবই সরলীকরণ করা হয়েছে। সেমিস্টার ফী এর ব্যাপার আসেনি, অতিরিক্ত শিক্ষক ছাড়াও এর সাথে অতিরিক্ত ক্লাসরূম দরকার হতে পারে। ওভারহেড খাতটা হয়তো শিক্ষকের অনুপাতে বাড়বে না। কিন্তু আমার বোঝার লিমিটেশনে যা বুঝি সেটা হল, ফী বাড়াতে হবে।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

রাজু এর ছবি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রেডিং পদ্ধতি ইংরেজি সাবজেক্টে কত পেলে পাস (অনার্স ২য় বর্ষ ২০১৫)?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।