প্রবাসের কথোপকথন - ১৬

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি
লিখেছেন ইশতিয়াক রউফ (তারিখ: সোম, ০৪/০৫/২০০৯ - ১:০৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

– কালকে কোরবানির মাংস নিয়ে যেও।
: হু, আমাকে না দিলে কিন্তু গরীবের হক আদায় হবে না।

– থাপ্পড় খাবি। আত্মীয়ের ভাগ হতে পারে না? ফালতু কথা শুধু।
: ঐ হল। এবার কোথায় দিলেন কোরবানি?

– ঘন্টা দুয়েকের পথ হবে এখান থেকে। যাওয়া-আসা একটা ঝক্কি। একবার গরু বাছাই করতে যাও, একবার টাকা দিতে যাও, একবার মাংস আনতে যাও। কোরবানির মাংস, তাই প্রত্যেকেরই যেতে হল।
: কেষ্ট পেতে একটু তো কষ্ট করতেই হবে, কিন্তু তাই বলে সবার যেতে হবে কেন?

– মাস্লা আছে কী যেন একটা। কোরবানির মাংস নাকি যারটা তার আনতে হবে। নাহলে তো একজন গিয়েই সব নিয়ে আসতে পারতো।
: ব্যাপার না। আমার কাছে সব সমান। খাওয়া পেলেই হল। কারো মাফ নেই, সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে খেয়ে আসবো নে।

– এবারে বলেছি কিছু মাংস আলাদা করে রাখতে। সবার ভাগ থেকে একটু একটু করে। সেই মাংস দিয়েই বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা যাবে।
: বুদ্ধি খারাপ না। আপনাদের ভাগেই তো রান্না পড়বে। আফসোস অন্য জায়গায়। শুধু তরতাজা রান্না খাচ্ছি। দেশের মত শুকনো, ঝুরঝুরা মাংস খাওয়া হয় না আজকে ঠিক ছয় বছর হয়।

– হ্যাঁ, এই ছোট ছোট ব্যাপারগুলোই প্রবাস জীবনকে কষ্টকর করে দেয়। পত্রিকায় দেখলাম, এই দুর্মূল্যের বাজারেও লোকে অনেকগুলো করে গরু কোরবানি দিচ্ছে। কারও কারও গরু তো উটের সমান বড়। অথচ গ্রামে গিয়ে দেখেছিলাম, গরু নেই দেখে মানুষে হাল টানছে।
: এটাই তো সমস্যা। ল’ আর স্পিরিট অফ ল’-এর মধ্যে পার্থক্যটুকু আমরা বুঝি না। আমরা ধর্মকে একেবারে আক্ষরিক ভাবে নেই, কেউ ধর্মের নির্যাসটুকু বুঝতে চাই না। ওহির মর্ম ঠিক মত বুঝলে কোরবানির গরু কিনে মানুষ গ্রামের গরীব কৃষকদের দিতো। বদলি হজ্জ হয়, বদলি কোরবানি কেন হতে পারবে না?

– সবার মনে শুধু আক্ষরিক চিন্তা, বুঝলে? সীমিত কিছু অক্ষর লেখা আছে, সেগুলো মুখস্ত করে বসে আছে অর্ধশিক্ষিত কিছু মোল্লা। আমরা শিক্ষিত লোকেরাও তাদেরই কাছে যাই উপদেশ নিতে।
: এখানেই সমস্যা। ইসলাম ধর্ম নিয়ে আমরা গর্ব করে বলি যে এটা সবচেয়ে আধুনিক ধর্ম। সেই ৫ম শতাব্দিতে যেই ইসলাম নাজিল হয়েছিল, সেটা শিক্ষা আর অনুশাসনের দিক থেকে ১৫শ সালের জন্যও আধুনিক ছিল। দাসত্বের যুগে মেয়েদের সম্পত্তির অধিকার দেওয়া হয়েছিল, সব রকম ধর্মমতের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল। সময়ের সাথে সাথে আমাদের উচিত ছিল এই আধুনিকতা, এই অধিকারবোধকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

– বলা হয় ইসলাম একটা পরিপূর্ণ জীবনবিধি। এখানেই ঝামেলাটা। এই সুবিধা নিয়ে নিজের মত করে সবাই ধর্মের ব্যাখ্যা করে, নিজের জীবনধারা চাপিয়ে দেয় অন্যের উপর। শুধু তাই না, খুব তীব্র এক ধরণের চরমপন্থা ঢুকে যায় মনের মধ্যে। আমিই ঠিক, আমার মত অনুসরণ করলেই স্বর্গে যাওয়া যাবে, অন্যথায় নরকবাস – এমন একটা চিন্তা মানুষের মনে স্থান করে নেয়।
: পরিপূর্ণ জীবনচরিত বলে প্রচার করাটাই সমস্যা। ধর্মে তো ধর্মের শিক্ষা অনুযায়ী কালের আলোকে নতুন বিধি তৈরির সুযোগও আছে। এই দিকটায় ফতোয়াবাজদের একচ্ছত্র আধিপত্য হয়ে গেছে। কেউ বলে না যে ধর্মের অনুসারী হিসেবে, সমাজের অংশ হিসেবে আমাদেরও অধিকার আছে ধর্মের আধুনিকায়নে।

– আরেকটা ঝামেলা হল রাজনীতি ঢুকে যাওয়া। নিজের ধর্মকে ভালবাসা মানেই অন্য ধর্মকে ঘৃণা করা নয়। এটা ভুলে যাই আমরা। রাজনীতির স্বার্থে এটা অনেক ভাবে অপব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে হিন্দু ধর্মের বেলায় এই আবেগ কাজ করে বেশি। আমরা যতই ভুলে থাকার চেষ্টা করি না কেন, বাস্তব এটাই যে আমাদের সংস্কৃতিতে মিল আছে। ধর্মের অজুহাতে আমরা সংস্কৃতিকে আঘাত করি।
: কথাটা প্রায়ই বলি, বাঙালি স্বর্গে যাওয়ার জন্য আরবি ভাষায় নাম রাখে। অন্য দেশের মুসলমানেরাও ইসলামিক নাম রাখে, কিন্তু অন্তত নিজের ভাষা-সংস্কৃতির সাথে মিলিয়ে নেয় কোন ভাবে। আমাদের তো ওসবের বালাই নেই।

– একেবারে ওভাবেও দেখার কিছু নেই। ধর্ম অনেকের কাছে একটা সংস্কৃতি, সেটাও মনে রাখতে হবে।
: ধর্ম হল ধর্ম। বিশ্বাস, পরকাল, পাপ-পুণ্য, এগুলোর ভেতর সংস্কৃতি ঢোকানো ঠিক না।

– সংস্কৃতি কী তাহলে? আমরা যেভাবে খাই, ঘুমাই, চিন্তা করি, কথা বলি, সেগুলোই তো? সেখানে কি ধর্মের প্রভাব নেই? ধর্মকে কেউ সংস্কৃতি হিসেবে নিতেই তো পারে, কারণ ধর্মেও নির্দিষ্ট কিছু ধরন-ধারণ আছে এগুলো নিয়ে।
: চাইলেই করতে পারে, কিন্তু করতে হবে কেন? নিজের শেকড়ের সাথে সম্পর্ক নেই, এমন কিছু কখনও স্থিতিশীল, কার্যকর হতে পারে না।

– সোশাল ডারউইনিজম হয়ে গেল না? একই রকম তো চিন্তা হিটলার করেছিল। তাকে দোষ দেওয়া যায় কীভাবে তাহলে? সব সংস্কৃতির সমান অধিকার দেওয়া হলে, এবং মানুষকে স্বাধীন ভাবে নির্বাচন ও অনুসরণের অধিকার দিলে কিন্তু ধর্মের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কেউ স্বাধীন ভাবে ধর্মের পথে যেতে চাইলে, তাকে সংস্কৃতি হিসেবে নিতে চাইলে দিতে হবে।
: ডারউইনিজম আসে অস্তিত্বের সংকটের প্রশ্ন এলে। নিজের দেশ, নিজের ভাষাকে সবাই শ্রেষ্ঠ ভাবে। নিজের মতাদর্শ সবাই প্রচার করতে চায়। এতে দোষের কিছুই নেই। এতে হারাবার বা হারিয়ে যাবারও কিছু নেই। কিন্তু ধর্মকে এর ভেতর ঢুকিয়ে ফেললে এলিমেন্ট অফ ফিয়ার ঢুকে যায়। শাস্তির ভয় চলে আসে। সংস্কৃতি তো ভালবাসার অভ্যস্ততা, ভয়ে ত্রস্ততা না।

– তুমি কি অস্তিত্ব হারানোর ভয়েই সংস্কৃতির কথা বলছো না? বাংলাকে ছড়িয়ে দেওয়ার আর্জির পেছনে কি হারানোর ভয় নেই?
: আছে, তবে সেটা অস্তিত্ব হারানোর ভয় না। আমিত্ব হারানোর ভয়ে আমি সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরার কথা বলছি। স্বাধীন ভাবে নির্বাচন করার সুযোগ নিশ্চিত না করলে কোন সংস্কৃতি কালোত্তীর্ণ হয় না। সেজন্যই সীমানা রুদ্ধ করে ভিন্ভাষা দূরে রাখার চেয়ে নিজের ভাষাকে শক্তিশালী করা জরুরী। ধর্ম তো এই সুযোগ দেয় না। এখানে মানলে বেহেশত, না মানলে দোযখ।

– তবে কি ধর্ম অচল?
: মোটেই না। আমার ভাবতে ভাল লাগে যে আমাকে তৈরি করা হয়েছে কোন একটি মহৎ উদ্দেশ্য সামনে রেখে। দুর্বল মুহূর্তে আমার ভাবতে ভাল লাগে যে আমার একটি আশ্রয় আছে। ভাবতে ভাল লাগে যে আমার অনুচ্চারিত আর্তিগুলো কেউ শুনছে অন্তরাল থেকে। ধর্ম না থাকলে এই শান্তিটুকু পেতাম না। তবে এটা আমার বিশ্বাস, আমার সংস্কৃতি না। আমার সংস্কৃতি ধর্ম দিয়ে প্রভাবিত হতে পারে, কিন্তু নিয়ন্ত্রিত হতে পারে না। এর পেছনে বড় কারণ হল, ধর্ম নিজেই তো আজকে আর স্রষ্টার নিয়ন্ত্রণে নেই!

– একটা ব্যাপার জানো, আমরা মুসলমানেরাও কিন্তু পৌত্তলিক। এই দিক থেকে ভণ্ডামিটা খুব কষ্ট দেয় আমাকে।
: হাজারে আসওয়াদে চুমু খাওয়া কি পৌত্তলিকতার পর্যায়ে পড়ে? অবশ্য, চাইলে সেভাবে দেখা যেতেও পারে।

– না, আমি সেই অর্থে বলছি না। আমরা বলি যে খোদা নিরাকার, সর্বময়। তাঁর কোন অঙ্গ নেই, চাহিদা নেই। আমরা বলি যে আমাদের খোদা কোন মূর্তির গণ্ডিতে আবদ্ধ না। অথচ তাঁকে আমরা ঠিকই আটকে ফেলি বিশেষণের গণ্ডিতে।
: বিশেষণ তো বর্ণনার জন্য, এর ভেতর বন্দিত্ব আসবে কেন?

– ভেবে দেখো, আমরা বলি যে খোদা দয়ালু, ন্যায়বান, সর্বদ্রষ্টা, ইত্যাদি। এভাবে কিন্তু মানবসৃষ্ট বিশেষণের মধ্যেই তাঁকে বন্দী করে ফেলছি আমরা। গণেশের মত শুড় নেই হয়তো, কিন্তু তাই বলে আমাদের খোদাও খুব একটা মুক্ত না। একটি শিশু কি তার চেনা বিশেষণের বাইরে খোদাকে কল্পনা করতে পারবে? খোদার সর্বময়তা কি সে কোনদিন উপলব্ধি করতে পারবে?
: ভেবে দেখার মত। অবয়ব না দিয়েও উপাসনা হয়ে যাচ্ছে ঠিকই। হয়তো একারণেই ধর্মের বক্তব্যটুকু হারিয়ে যায় এত সহজে।

– এই সীমিত সংজ্ঞায়নের পাকে পড়েই কিন্তু আমরা ভয় থেকে স্রষ্টার আরাধনা করি। অথচ উচিত ছিল হিতাহিত জ্ঞান থেকে আরাধনা করা। এটা মনকে অনেক মুক্ত করতো, সহনশীল করতো।
: ঝামেলাটা অন্য জায়গায়। আমরা খোদাকে অনেক কিছুই বলি। লিঙ্গ নেই বলেও তাঁকে পুরুষ হিসেবেই সম্বোধন করি, আবার ম্যারাডোনার গোলকে আলঙ্করিক ভাবে ঈশ্বরের হাত বললে এর মধ্যে বিধর্মিতা খুঁজি। মোনাফেকির ভয়ে বলি খোদার নামের সাথে জড়িয়ে কোন প্রকার ভৌত কথা বলতে না। সবকিছুই করি আমরা, শুধু খোদাকে বুদ্ধিমান বলি না। এত জটিল পৃথিবী যিনি বানালেন, তিনি যেখানেই থাকুন না কেন, হি মাস্ট বি ড্যাম স্মার্ট। আমরা শিক্ষিত লোকেরা ভুলে যাই যে স্রষ্টা আমাদের চেয়েও বুদ্ধিমান। তাঁকে তাই ডাকা উচিত বুদ্ধি ব্যবহার করেই। উলটো আমরা বিশ্বাসের গতি-জড়তায় ভেসে গিয়ে নির্বোধের মত কিছু মুখস্ত ইবাদত করি।

– কাইনেটিক ইনারশিয়া অফ ফেইথ… নিউটন, ব্রুনো, ডারউইনরা কিন্তু স্রষ্টায় বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁরা নিজের ক্ষুদ্রতা দিয়ে ঈশ্বরের মহত্ব প্রকাশ করতেন। দেয়ার ইজ আ রিজন হোয়াই দে আর গ্রেট, অ্যান্ড আই জাস্ট ড্রাইভ আ কার।


মন্তব্য

পুরুজিত এর ছবি

ধর্মের নির্যাসের ব্যাপারে আমার পর্যবেক্ষণ হল - ইসলাম বা ক্রিশ্চিয়ানিটির মত বৈশ্বিক ধর্মের ইউনিফায়িং ফ্যাক্টর হল একটা সর্বজনগ্রাহ্য ইন্টারপ্রেটেশন। যেই মুহূর্তে তুমি ইশতিয়াক রউফ বা আমি পুরুজিত সাহা নিজের মত করে নির্যাস বুঝব, সেই মুহুর্তে এটা সার্বজনীন আবেদন হারাবে। আরও অনেক যুক্তিগত সমস্যা চলে আসে। বটম লাইন হল, নিজের মত করে ব্যাখ্যা দিলে ঐটা আর ইসলাম থাকে না। (তুমি হয়ত বলতে পার, নাইবা থাকল ইসলাম, কিন্তু রোজার মাসে তো রোজা ঠিকই রাখ, তখন তো স্পিরিট নিয়ে মাথা ঘামাও না...)

আর ধর্মের ব্যাপারে নিউটন বা আইনস্টাইনের উদাহরণ দেয়া হল ফিজিক্স নিয়ে শেক্সপিয়র কোট করার মত।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

সর্বজনগ্রাহ্য ইন্টারপ্রেটেশন

এই দুই ধর্মের ইতিহাস রাজনৈতিক ক্ষমতায় আরোহনের ইতিহাসের সাথে অনেক ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। রোম থেকে অটোমান হয়ে মুঘল পর্যন্ত কম-বেশি বড় সাম্রাজ্যগুলোর উত্থান-পতনের সাথে এই দুই ধর্ম জড়িত। সর্বজনের জীবনে রাজনীতিকে উপেক্ষা করার মত অবস্থা ছিল না কখনই। ধর্মগুলোও তাই মিলে গেছে সেখানে।

বটম লাইন হল, নিজের মত করে ব্যাখ্যা দিলে ঐটা আর ইসলাম থাকে না

আমার দ্বিমত কিন্তু ঠিক এই জায়গায়ই। আইনের ধারা অসংখ্য হতে পারে, তার পেছনের নীতি কিন্তু একটাই। ইসলামের ক্ষেত্রে যেমন "শান্তি", "ভ্রাতৃত্ববোধ", "ন্যায়পরায়নতা", ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটাই তো ধর্মের নির্যাস। কোন ধর্মেই নৃশংসতার কথা বলে না, হিংসা-বিদ্বেষের কথা বলে না। আমার-তোমার ধর্ম যা-ই হোক না কেন, আমরা কেউ মানুষ খুন করলে সেটা যার যার ধর্ম থেকে পাপ হিসেবে গণ্য হবে। তুমি আয়াত জানো না, আমিও স্লোক জানি না, কিন্তু দু'জনেই বুঝি যে এই কাজটা খারাপ, এই কাজটা ধর্মের সাথে সংগতিপূর্ণ না।

নিউটন বা আইনস্টাইনের উদাহরণ দেয়া হল ফিজিক্স নিয়ে শেক্সপিয়র কোট করার মত

এটা ভাল বলসো খুব। আমার পর্যবেক্ষণ হল, মানুষ নিজের ক্ষেত্রে বড় হলে অন্যকে মর্যাদা দেয় বেশি। অযোগ্যরাই অযথা প্যাঁচায়। আমি এটা বলছি না যে নিউটন ধর্ম মানতেন, তাই আমাদেরও মানা উচিত। আমি বলছি, নিউটন বড় ছিলেন দেখেই তিনি বিশ্বাসকে (তা ঠিক-ভুল যেমনটাই হোক না কেন) মর্যাদা দিতেন। এই যে নিজের মত নির্যাস ব্যাখ্যা, তা খুব সহজেই এক রকম গোঁয়ার্তুমি বা জাত্যভিমানে রূপ নেয়। এর পেছনে আমাদের অযোগ্যতাও দায়ী।

পুরুজিত এর ছবি

ইন্টারেস্টিং টপিক, বাই দ্য ওয়ে।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

থ্যাংকু, থ্যাংকু... দেঁতো হাসি

মূলত পাঠক এর ছবি

আমি সাধারণত অন্য ধর্ম বা অন্য দেশের মানুষজন তাঁদের ধর্ম-ভাষা-সমস্যা নিয়ে কথা বললে নীরব শ্রোতা থাকি, কারণ আমার মত ভুল ব্যাখ্যাত হয়ে কাউকে আঘাত করতে পারে। কিন্তু এই লেখাটা পড়ে মন্তব্য করতে বাধ্য হলাম এতোটাই ভালো লাগলো। জানি না এ কথোপকথন কাদের মধ্যে, এবং এটি কাল্পনিকও হতে পারে। কিন্তু এমন যুক্তিযুক্ত, স্ট্রাকচার্ড, সুললিত এবং অর্থপূর্ণ লেখা বেশি পড়ার সুযোগ হয় না।

এই এপিসোডিক কাঠামোটা খারাপ নয়, কিন্তু আমার মনে হয় আপনার উচিত এই বিষয় নিয়ে ভালো করে লেখা, বইয়ের মাপে। মৌলবাদীরা কী বলবেন জানি না, কিন্তু এ নিয়ে বই বের করা সম্ভব হলে সিরিয়াস পাঠকের অভাব হবে না। এবং তাতে ব্যবসার বাইরেও কাজের কাজ একটা হবে। আমাকে ধন্যবাদ দিলে দিন, কিন্তু ভেবে দেখবেন কথাটা সময় নিয়ে।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

জানি না এ কথোপকথন কাদের মধ্যে, এবং এটি কাল্পনিকও হতে পারে।

সচলে শুরুর দিকে এই সিরিজটা লিখতাম। আজকে ঠিক ১১ মাস পর আবার লিখলাম। এই সিরিজের কথোপকথনগুলোর ৯৯% সত্য। টুকটাক আলংকরিক ব্যাপার হয়তো যোগ-বিয়োগ করা হয়, এই যা।

সরাসরি উক্তির বাইরে বর্ণনাসূচক কিছু লিখি না দেখে অনেক সময় চাইলেও রেফারেন্স দেওয়া হয়ে উঠে না। এদিক থেকে কাঠামোটি ঠিক পাঠক-বান্ধব না, কিন্তু তবু এভাবেই লিখি। বিজোড় স্থানের উক্তিগুলো অন্য কারও, জোড় স্থানের গুলো স্বয়ং অধমের।

এই এপিসোডিক কাঠামোটা খারাপ নয়, কিন্তু আমার মনে হয় আপনার উচিত এই বিষয় নিয়ে ভালো করে লেখা, বইয়ের মাপে।

বই তো জ্ঞানীজনের ব্যাপার। আমি শুধু আমার প্রাত্যহিক জীবনের সাধারণ বোধগুলো নিয়ে লিখি। এ-নিয়ে বই অনেক আছে, হয়তো খোঁজ জানি না। মনে হয় না ধর্মের খুঁটিনাটি নিয়ে কোন বই লেখায় হাত দেবো কোনদিন। আর ধর্মের সামাজিক প্রভাব নিয়ে লিখবার, বলবার জন্য ব্লগে এই এপিসোডিক কাঠামো তো আছেই। পাঠকের কথা জানি না, আমার জন্য অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ এই ধারাটাই। সবার জন্য সব কিছু না। খাইছে

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আমি ১০০ ভাগ বিশ্বাসি, তবে আপনার লেখা আমাকে কনফিউজড করেনি, কিংবা সৃষ্টি করেনি কন্ট্রাডিকশন। স্টাইলটা চমৎকার।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও আমি ধর্মে বিশ্বাসী। নিয়মিত নামায-কালাম করি না দেখে মনে একটু ভয় ছিল দৃঢ় ভাবে অনুসারীদের কেমন লাগে, তা নিয়ে। আপনার মন্তব্যে ভরসা পেলাম। হাসি

তানবীরা এর ছবি

ধর্ম হলো সুড়সুড়ি দেয়ার স্পর্শকাতর এলিমেন্ট। যেকোন ব্যাপারে ইহাকে ব্যবহার করিয়া ম্যাঙ্গো জনতাকে ব্যাপক সুড়সুড়ি দিয়া যেকোন ধরনের হিংসাত্বক - ধ্বংসাত্বক কাজ করাইয়া লওয়া যায়।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

তা ঠিক। এটাই সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি। সব ধর্ম শান্তির কথা বলে, কিন্তু ধর্মের নামে যত মানুষ মারা গেছে, তত মানুষ আজ পর্যন্ত কোন যুদ্ধে মরেনি।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

ধর্ম জিনিসটা নিয়ে বেশী মাথা ঘামিয়ে ফেলেছি একটা সময়ে। এখন খুব পরিশীলিত একটা উপসংহার তৈরি করে নিয়েছি।
আপনার লেখা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। ডারউইন খোদায় বিশ্বাস করতেন এই তথ্য প্রথম শুনলাম, আসলে ঘটনা কি?

খোদায় আমি বিশ্বাস করি, কারণ এর বিকল্প পাই না। খোদা না থাকলে এতো এতো জিনিসকে Random বলে দাবী করতে হবে যে সেটা খুবই হাস্যকর হয়ে যাবে! দুনিয়াতে তখন Regular বলে কিছুই থাকে না! হাহাহাহাহাহা.....

ভালো থাকুন।
___________________________
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আপনার উপসংহারটির সাথে আমার অবস্থাও মিলে যায়। ডারউইন একটা বয়স পর্যন্ত ধর্মীয় স্কুলে পড়েছিলেন, এটুকু জানি। বিভিন্ন সময়ে তাঁর ধর্মবিশ্বাসের কথাও শুনেছিলাম। ভুলও হয়ে থাকতে পারে।

স্বাধীন এর ছবি

বাল্যবিবাহ শব্দটি কেবল ঘুরছে আমার মাথায়। আমার মতে ধর্মের সাথে যে বাল্যবিবাহ সেটার বন্ধ হওয়া উচিত। একজন মানুষ যেন কেবল প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়ার পরই যে কোন ধর্মকে বেছে নেওয়ার অধিকার রাখে, যেমন সে তার জীবনসংগী বেছে নেওয়ার অধিকার রাখে। ধর্মটাতো আমার সারা জীবনেরই অংশ হবে তাই নয় কি? কিন্তু খুব ছোটবেলায় আমাকে যদি কেউ আমার জ্ঞান হবার আগেই তার সাথে ঘাটবেঁধে দেয় সেটা কি ঠিক?

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আপনার কথাটা ভেবে দেখার মত কিন্তু... যদিও কোনদিনই এটা বাস্তবে দেখা যাবে না মনে হয়...

অনিকেত এর ছবি

এই কথাটা আমার খুব মনে ধরেছে--চমৎকার একটা উপলব্ধি!

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- লেখাটা ইন্টারেস্টিং লাগলো। লেখকের গুণেও হতে পারে, ভেতরের বক্তব্যের কারণেও হতে পারে, আবার দু'য়ের কারণেই হতে পারে। সেদিকে আর যাচ্ছি না।

ঝুনা মাংস নিয়ে বলি? একবার বেশ অনেকখানি গরুর গোশত রেঁধে (এটা কিন্তু আমি মাঝে মাঝেই খারাপ রাঁধি না একেবারে!) ফ্রীজে রেখে দিয়েছিলাম। আলসেমী করে খাওয়া হয়নি রেগুলার। তো কিছুদিন পরে বের করে চুলায় গরম করে খাওয়ার সময় মনে হচ্ছিলো দেশের কুরবানীর ঝুনা গরুর গোশতই খাচ্ছি। কেমন শুকিয়ে গিয়েছিলো, তারওপর একটু একটু খুলেও গিয়েছিলো। আপনি ট্রাই করে দেখতে পারেন এই রেসিপি! তবে আপনি নিশ্চই আমার মতো অতো 'খারাপ না' করে গরু রাঁধতে পারেন না। হাসি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

গরু মনে হয় রাঁধতে পারি এখন। অনেক দিন ধরে চেষ্টা করি না যদিও। আপনার মত করে ঝুনা করে দেখতে হবে একবার। ঠিক ছয় বছর পর খেলাম সেদিন এক বাসায়। আহ, সুখই সুখ!পুরো এক বাটি চোখের নিমিষে শেষ।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

মন্তব্যগুলোয় নজর রাখি...

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আমিও প্রতিমন্তব্যে বেগুনী রঙের জন্য নজর রাখছি কিন্তু! চোখ টিপি

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

হা হা। আপনার প্রতিমন্তব্যে লাল বিপ্লব!

শংখচীল এর ছবি

আচ্ছা, সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করলে কি প্রচলিত ধর্মের যেকোন একটাকে সত্য মানতে হবে? আমার সৃষ্টিকর্তা আছেন বলে মনে হয়, কিন্তু সব ধর্মের গল্প-কাহিণী গুলো খুব রূপকথা বলে মনে হয়, যেমন জিসাসের জন্ম-বৃত্তান্ত, বা মোসেসের নীল দরীয়া ফাক করে ফেলা বা আমাদের নবীজির সাত আসমান সফর কিম্বা হনুমানের লঙ্কা বিজয়? বয়স হলে এককালে বিশ্বাস করা সান্টাক্রস নিয়ে সবার যেরকম সন্দেহ হয় সেরকম একটা ব্যপার!এটা কি আমার একান্ত নিজস্ব ব্যারাম?

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আচ্ছা, সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করলে কি প্রচলিত ধর্মের যেকোন একটাকে সত্য মানতে হবে?

আমি তো ভাই ধর্মবেত্তা নই, তবে মনে হচ্ছে না এমনটা করবার কোন জাগতিক বিধি-নিষেধ আছে। শান্তি পেলেই হল।

ভুতুম [অতিথি] এর ছবি

কথোপকথনটা বেশ ভালো লাগলো। পরের লেখার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ধন্যবাদ... অপেক্ষা দীর্ঘায়িত না করার পূর্ণ প্রচেষ্টা থাকবে। হাসি

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

ধর্মের ত্যানা প্যাঁচানি থেকে এখন ১০০ গজ দূরে থাকতে চেষ্টা করি। তারপরও কেমন কেমন করে ঢুকে যাই, নানা বেহুদা প্যাঁচালে। আর অকারণে লোকের চক্ষুশুল হই। দোযখের আগুনে জর্জরিত হবার হুমকি পাই।
লেখা নিয়ে চলুক
লেখার এই কথোপকথন ভঙ্গিটা বেশ ইন্টারঅ্যাকটিভ। আমার কাছে আপন মনে হয়।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আর অকারণে লোকের চক্ষুশুল হই।

আপনার কপাল দেখি আমারই মত! ভাল-মন্দ নির্বিশেষে চক্ষুশুল হয়ে যাই মুহূর্তেই আমি। হাসি

লেখার এই কথোপকথন ভঙ্গিটা বেশ ইন্টারঅ্যাকটিভ। আমার কাছে আপন মনে হয়।

শুনেই খুশি খুশি লাগছে! যাক, এই নিরীক্ষাটুকু তাহলে পুরোপুরি ব্যর্থ না।

অনিকেত এর ছবি

আমার মতে---ধর্ম এখন পর্যন্ত একটা ছোঁয়াচে ব্যারামের মত। বিশেষ করে বাংলা ব্লগোস্ফিয়ারে ধর্ম নিয়ে এক সময় প্রচুর বাক-বিতন্ডা হয়েছে।এখনো হচ্ছে।আর সেটা এতই তিক্ততা ছড়িয়েছে যে, ধর্ম নিয়ে আলাপ শুরু হলেই ছোঁয়াচে রোগের সংক্রমনের ভয়ের মত একটা সাবধানতার তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে সবার মাঝে। ঠিক যে কারনে আমার কাছে এই ধরনের প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপ-আলোচনা একেবারেই অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়।

আমি দুঃখিত--'অপ্রয়োজনীয়' এর মত একটি কঠিন শব্দ ব্যবহার করতে হল বলে।
আমার নিজস্ব অভিমত হল---ধর্ম নিয়ে আলাপ করার প্রাথমিক যে শর্ত সেইটাই আমরা পুরণে অক্ষম। সে শর্তটি হলঃ ধর্ম নিয়ে আলাপ শুরু করার আগে 'মানসিক পরিপক্বতা'র প্রয়োজন। মানসিক পরিপক্বতার সংজ্ঞা একেক জনের কাছে একেক রকম। আমার কাছে মানসিক পরিপক্বতার লক্ষন দুইটিঃ

১। পরমত সহিষ্ণুতা
২। যুক্তির কাছে আত্মসমর্পন।

এই শর্ত বিচারে আমাদের অনেকেই রীতিমত বয়স্ক (মায় মরনোন্মুখ) হলেও মানসিক ভাবে অপরিপক্ব হয়েই দিনাতিপাত করি।

ধর্ম আমাদের উপর আমাদের পিতৃ-পরিচয়ের মতই শৈশব হতে জুড়ে দেয়া। যে কারনে আমাদের জন্যে ধর্মের একটা নিরপেক্ষ বিচার করা সম্ভব হয় না। এইটা অনেকটা Godel's theorem এর মতঃ কোন একটা বিশেষ ক্ষেত্রের সম্যক বিশ্লেষন কখনোই ঐ ক্ষেত্রের মধ্যে থেকে করা সম্ভব নয়। যে কারনে আমি মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েই শুনে আসি---আমাদের ধর্ম শান্তির ধর্ম, আধুনিক ধর্ম ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমার যে বন্ধু হিন্দু ঘরে জন্মায় তার কাছে তার ধর্ম আমারটার চেয়ে কোন অংশে কম আদরনীয় নয়। শিশুকালে ধর্ম-পালন অনেকটা ঐসময় কালে ফুটবল দল সাপোর্ট করার মত----যুক্তিহীন অন্ধ আবেগ সম্বল করে তর্ক করে যাওয়া---কে শ্রেষ্ঠ---আবাহনী? না মোহামেডান? আর্জেন্টিনা?? না ব্রাজিল??? এক পক্ষের লোক অন্য পক্ষকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ ঠাট্টা রসিকতা চালিয়ে যাওয়া---সময় সময় নিয়ন্ত্রনের বাইরে আবেগে ভেসে মূর্খের মত বন্ধুর মুখে ঘুসি মেরে চোখ কালো করে দেয়া। কিছু কিছু লোক এই মুর্খামি সারা জীবনেও শোধরাতে পারে না।

ধর্ম আমাদের সাথে লেগে থাকে সেই রকম ভাবে। পরবর্ত্তী জীবনে আমরা যতই সফল হই না কেন--যতই প্রাজ্ঞ হইনা কেন---ধর্মের নিগড় থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারি খুব কম। সেই জন্য আমরা খুঁজে বেড়াই বড় বড় মানুষদের মাঝে ধার্মিক লোকের অস্তিত্ব----যেন মহামতি মহাজন যে পথে করে গমন----

আমার মনে হয়---এইসব মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসার সময় হয়েছে। নিউটন ধর্ম মানতেন কি না বা ডারুইন ধার্মিক ছিলেন কিনা---এ প্রশ্ন অবান্তর ও অধিকাংশ ক্ষেত্রে বালখিল্য। এসব জিনিস নিয়ে কথা বলার আগে আমাদের মন তৈরী করতে হবে সবার আগে। আমরা যতদিন ধরে নেব--আমার ধর্ম ভাল---আধুনিক, প্রগতিশীল, নারীমুক্তি এনে দিয়েছে এবং ইত্যাকার হাস্যকর সব দাবী করে যাব--ততদিন আমাদের ধর্ম নিয়ে কথা বলার কোন মানে হয় না।

কারন আমরা চোখে ঠুলি পরে আছি, কানে তুলো গুঁজে আছি---শুধু তাই নয়, পিঠে ঝামা বেঁধে আছি।

সবার আগে আমাদেরকে ধর্ম থেকে নিজেদের পৃথক করতে হবে---এর মানে এই নয় যে আমি সবাইকে 'নাস্তিক' হতে বলছি---কারো কারো কাছে সেইটাও একটা ধর্ম (রিচার্ড ডকিন্সের সাম্প্রতিক লেখা স্মর্তব্য)। আমাদের কে ধর্ম নামের এই প্রাচীন প্রতিষ্ঠানটিকে প্রশ্ন করার মত সৎসাহস অর্জন করতে হবে---তারচেয়ে জরুরী জিনিস হল--সে প্রশ্নের যে উত্তর আসবে--সেটা মেনে নেবার মত মনের জোর থাকতে হবে।

দুঃখজনক হলেও সত্যি---আমাদের অধিকাংশেরই সে জোর নেই--

যদি আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়---আমি বলব--সময় হয়েছে--এই দাস্যের নির্মোক ছেড়ে বেরিয়ে আসার। সেটা একেবারেই আমার নিজস্ব মত!!

দীর্ঘ এবং কিঞ্চিত কটুস্বরে মন্তব্যের জন্যে ইশতি এবং বাকী সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

শুভেচ্ছা----

সিরাত এর ছবি

মন্ত্যবের প্রতিটা বাক্যের সাথে না হলেও থিমটার সাথে আমি সম্পূর্ন সহমত! নিজেকে একটা বক্সের মধ্যে আটকে রাখার দরকার বোধ করলে করেন, কিন্তু এটাকে গ্লোরিফাই করা, বা আরো খারাপ, চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে তো মুশকিল। ইশতি করে না, কিন্তু ধার্মিক বেশিরভাগ মানুষই এটা করে।

তবে এটাও বুঝি যে অনেকেরই জীবনে কিছু প্রেমিস লাগে না। সবাই নিজে চিন্তা করে বের করতে পারে না বা প্রয়োজন বোধ করে না। ইশতি বহু বার বলছে ধর্ম ওর কাছে লাইফ সিমপ্লিফায়ার। ফাইন! নো ইস্যুস। কিন্তু এটা মানে এ-ও যে ও ধর্মকে সিরিয়াসলি নিচ্ছে না।

ধর্ম মানুষ মাত্রেরই আছে, নিজের হোক বা অ্যাডাপ্টেড। কিন্তু যারা সিরিয়াসলি নেবে, তারা সাধারনত হয় নিজে বানায় বা পুরোনগুলো রি-একজামিন করে। এটায় দোষের তো কিছু নেই।

সমস্যা একটাই, মানুষ মাত্রই কনফর্মিটির জন্য হার্ডওয়্যারড। গোত্র থেকে একঘরে করে দেয়া ইত্যাদি অতি ন্যাচারাল ছিল। সুতরাং নিজেদের লিজার্ড ব্রেন কে ট্র্যানসেন্ড না করা পর্যন্ত এটা হতেই থাকবে। তবে লিমিটেশন আছে বলে ধর্মচিন্তা করা যাবে না তা ঠিক নয়। আমার তো মনে হয় ধর্ম-দর্শনের চিন্তা খুউবই গুরুত্বপূর্ন আমাদের প্রত্যেকের জীবনে। জীবনে কি করতে আসছি জানি না, ফাউ জীবন পালন করে যাচ্ছি, এটা কেমন জানি স্ববিরোধী লাগে। সব ধর্মই ওই ফান্ডামেন্টাল প্রশ্নের উত্তরের চেষ্টা।

সেদিক দিয়ে এ প্রশ্ন এবং উত্তরের চেষ্টার জন্য ইশতিকে অজস্র ধন্যবাদ! একমত হই বা না হই, ও চেষ্টা তো করছে। খুব ভাল লক্ষন!

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

নিজেকে একটা বক্সের মধ্যে আটকে রাখার দরকার বোধ করলে করেন, কিন্তু এটাকে গ্লোরিফাই করা, বা আরো খারাপ, চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে তো মুশকিল।

ভাল লাগলো এই কথাটা।

কিন্তু এটা মানে এ-ও যে ও ধর্মকে সিরিয়াসলি নিচ্ছে না।

কথাটা প্রায় ঠিক। আমি ধর্মের অনুশাসনগত দিক খুব একটা সিরিয়াসলি নেই না, তবে তার মূল সুরকে আমি আন্তরিক ভাবে মেনে চলতে চেষ্টা করি। রইলো বাকি পরকালের চিন্তা। আমি খোদাকে দয়ালু'র চেয়ে বুদ্ধিমান মনে করি বেশি। আমার মনে কালি থাকলে তা বুঝবার মত শক্তি তাঁর আছে। আপাতত কালিগুলো দূর করার সাধনায় আছি। বাকিটা পরে দেখা যাবে।

মানুষ মাত্রই কনফর্মিটির জন্য হার্ডওয়্যারড।

এই কথাটাও খুব ভাল লাগলো। এই ঠুনকো কনফর্মিটির লোভে যে আমরা কত কিছু করে ফেলি!

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ঠিক যে কারনে আমার কাছে এই ধরনের প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপ-আলোচনা একেবারেই অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়।

এটা তো কোন ব্লগীয় আলাপ-আলোচনা না, ভাইয়া! এটা ঈদের অনুষ্ঠান সেরে বাড়ি ফেরার সময় সামান্য একটা কথোপকথন। ব্লগের কথা মাথায় রাখলে কি আর ধর্ম নিয়ে কিছু লিখি? খাইছে

২। যুক্তির কাছে আত্মসমর্পন।

এখানে এসে ধর্ম নিয়ে আর কথা চলে না, কারণ কোন ধর্মই যুক্তি দিয়ে ধর্মের অস্তিত্ব ও সততা প্রমাণ করতে পারে না। বরং উলটো যুক্তিই বেশি। ধর্ম তো একেবারেই মানুষের নিজস্ব বিশ্বাস। আমি বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও ধর্মে বিশ্বাস করি। ধর্মের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারবো না জেনেও করি। এই বিশ্বাস যতক্ষণ না আমার কাজে বা আচরণে কোন ঋণাত্মক প্রভাব ফেলছে, ততক্ষণ তো এতে দোষেরও কিছু নেই।

ধর্ম আমাদের উপর আমাদের পিতৃ-পরিচয়ের মতই শৈশব হতে জুড়ে দেয়া।

পূর্ণ সহমত। এটা খুব নির্মম বাস্তবতা। মন খারাপ

আমরা যতদিন ধরে নেব--আমার ধর্ম ভাল---আধুনিক, প্রগতিশীল, নারীমুক্তি এনে দিয়েছে এবং ইত্যাকার হাস্যকর সব দাবী করে যাব--ততদিন আমাদের ধর্ম নিয়ে কথা বলার কোন মানে হয় না।

এখানে এসে কিছুটা দ্বিমত পোষন করি। ৫ম শতাব্দির আরব সমাজের নিরিখে বিচার করলে ইসলাম ধর্ম/জীবনবিধান হিসেবে অনেক 'আধুনিক' ছিল। আধুনিকতা বলতে আমি এখানে অধিকারের সংজ্ঞা সম্প্রসারণ, ন্যায়নিষ্ঠা, সহনশীলতা, ইত্যাদিকে বোঝাচ্ছি। একেবারে বর্বর একটি সমাজের আপেক্ষিকে এগুলো অনেক আধুনিক রীতি-নীতি। খেয়াল করবেন, আমি কিন্তু সমাজের আপেক্ষিকে বলছি, ধর্মের আপেক্ষিকে না। ইসলাম ধর্মের অনুসারী হিসেবে আমি আমার ধর্মের কাছ থেকে এই আধুনিকতা বজায় রাখা আশা করি, এটাই বলতে চেয়েছিলাম।

তারচেয়ে জরুরী জিনিস হল--সে প্রশ্নের যে উত্তর আসবে--সেটা মেনে নেবার মত মনের জোর থাকতে হবে।

এটা খুব বড় সত্যি। এই শক্তি আমাদের নেই। নেই বলেই আমরা এত বেশি হুজুর-মুখাপেক্ষী হয়ে যাচ্ছি দিন দিন। এই মুখাপেক্ষিতার কুফল হল, আমরা এখন মানবধর্মকেও আলাদা একটি ধর্ম হিসেবে দেখি। যেন মানবতা অন্য এক ঈশ্বর যার উপাসনা করলে আমার খোদার প্রতি কুফরি হয়ে যাবে। এই কুচিন্তাটুকু মনের দিক থেকে দুর্বল হওয়ার প্রত্যক্ষ ফল।

আমি বলব--সময় হয়েছে--এই দাস্যের নির্মোক ছেড়ে বেরিয়ে আসার। সেটা একেবারেই আমার নিজস্ব মত!!

তা হয়েছে হয়তো, কিন্তু ব্যাক্তি তৈরি হলেও সমাজ এখনও ধর্মকে ছাড়তে তৈরি নয়। যতদিন না তা হচ্ছে, ততদিন তো নিদেনপক্ষে ধর্মের অপব্যবহারটুকু রুখতে হবে। একে একে প্রতিটা ধর্মই চরমপন্থীদের হাতে ছিনতাই হয়ে যাচ্ছে। এটা ঠেকানোর কাজটা বিশ্বাসীদেরই করতে হবে।

দীর্ঘ এবং কিঞ্চিত কটুস্বরে মন্তব্যের জন্যে ইশতি এবং বাকী সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

ধুরো মিয়া! এই কথাটাই ফেরত নিয়ে একটা পালটা বিবৃতি দেন। দেঁতো হাসি

সিরাত এর ছবি

হ, তর লেখা নিয়ে মাত্র পুরুজিতের লগে আধাঘন্টা চ্যাট করলাম। তোর পার্সপেক্টিভ আমার ভালই লাগে, তবে আমার মনে হয় না এটা অর্থোডক্স ইসলামের মধ্যে যায়। তুই কাউন্টার-লজিক দিতেই পারোস, কিন্তু অর্গানাইজড রিলিজিয়নগুলির মূল শক্তি হল এগুলি অর্গানাইজড। এগুলোকে লিবারালাইজ, মাস-আপীল করানোর চেষ্টা সাধারনত করুনভাবে ব্যর্থ হয় (জাস্ট প্রটেস্ট্যান্ট রিফরমেশনের অবস্থাই দেখ)। তাছাড়া হাদীস-কুরানের সনদ ছাড়া তোর কাউন্টার লজিক মনে হয় না ইসলামিক স্কলারলি সার্কেলে গ্রহনযোগ্য হবে। আমার মতে তোরটা একটা মেক-বিলিভ সিউডো-ইসলামিক ধর্ম,

সমস্যা হল, তুই আমার শত্রু না। আমার শত্রু বায়তুল্লাহ মেহসুদ, বা ধরা জাওয়াহরি। আমার হাতে ক্ষমতা থাকলে আমি ওগো শত্রু হইতেই দিতাম না। গাধা আমেরিকা আফগান যুদ্ধের পর পালায় গিয়া ওগো শত্রু বানাইছে। এখন না পারে গিলতে, না পারে উগরাইতে। আর 'মডারেট মুসলিমরা' নাস্তিক-অজ্ঞাতবাদীদের গাইল্লায়। আরে বেটা আগে মেহসুদরে সামলা, আমরা তো দুনিয়ে ধ্বংস করতাছি না! তারপরে আমরা লাগুমনে! চোখ টিপি

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আধা ঘন্টার সেই চ্যাট লগ পেলে (এবং পড়ার সময় পেলে) মন্দ হত না। ওটাই তোদের কোন একজনের ঘষে-মেজে তুলে দেওয়া উচিত। চোখ টিপি

না, এটা অর্থোডক্সির সাথে খাপ খায় না। আমি ধর্মকে মানবধর্মেরই একটা অংশ হিসেবে দেখি। ধর্মের মাথারা একে কখনই সমর্থন করবে না। দীন-এ-এলাহী জাতীয় কিছু করার ধান্ধায় নেই বলে এই অসমর্থন আমার কাছে তেমন সমস্যারও না। সনদের অপেক্ষায় থাকলে মানবতা আজও অধরাই থেকে যেত।

আমার কথা হল, ধর্ম খুব ব্যাক্তিগত একটা ব্যাপার যাকে তার নিজের জায়গায় থাকতে দেওয়া উচিত। আর সব কিছুর মত ধর্ম নিয়েও অনেক প্রশ্ন জাগতে পারে মনে। এর সমাধান খুঁজতে যে হুজুর-আউলিয়ার কাছেই যেতে হবে, এমন কথা নেই। যা অমানবিক, তা ধর্মেও অমানবিক।

ধর্মীয় ব্যাপারে 'মডারেট' হওয়ার সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হল দুই দিক থেকেই গালি খাওয়া। খাইছে

সিরাত এর ছবি

আহা, আমি তো গালি দেই নাই, প্রশংসা করলাম! চোখ টিপি আমার দ্বিতীয় বাক্যটা দেখ!

তবে মডারেট মুসলিমরা সুবিধাবাদীও হবে, আবার গালিও খাবে না, তাও তো হয় না! কমিট না করা পর্যন্ত কিছুই করার নাই, দোস্ত! তাও ভাল আমরা অল্প গালি দেই, লাদেন সাহেবরা তো তগো বিহেড করবো!!

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আমি কি বলসি যে তুই গালি দিছিস? বুদ্ধুমান কোথাকার! কইলাম একটা সাধারণ সমস্যার কথা। মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে গেলে দুই চরমপন্থার হাতেই নিগৃহীত হতে হয়, এটাই বললাম শুধু। তবে হ্যাঁ, বিহেডেড হওয়ার ভয়টা খুব প্রত্যক্ষ। থাক, আকথা-কুকথা কইস না। বিয়া-শাদি করি নাই এখনও, বুঝিসই তো... মন খারাপ

জি.এম.তানিম এর ছবি

ধর্মীয় ব্যাপারে 'মডারেট' হওয়ার সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হল দুই দিক থেকেই গালি খাওয়া। খাইছে

সহমত!
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

সচল জাহিদ এর ছবি

ধর্ম নিয়ে আলোচনা, বিতর্ক করতে ভাল লাগেনা। ধর্ম আমার বিশ্বাষ তাই এটিকে যেকোন যুক্তি তর্কের উর্দ্ধে রাখতে পছন্দ করি। তার থেকে বরং কোরবানীর মাংস নিয়ে মন্তব্য করি।

এখানে আসার পরে আসলেই কোরবানীর মাংসের ভাগ পেয়ে ইশতির মত "আমাকে না দিলে কিন্তু গরীবের হক আদায় হবে না" এইটাই প্রথমে মনে হয়েছে। তবে অসাধারন আনন্দ পেয়েছিলাম একটি কাজ করে, সবার (ব্যচেলর বা আমার মত স্যুডো ব্যচেলর) ভাগে যা মাংস পরেছিল সব একত্র করে যারা পায়নি বা যারা পেয়েছে সবাই মিলে একসাথে খেয়েছিলাম। অনুভূতি প্রকাশে যদিও সেই আনন্দের পরিপূর্ন প্রকাশ হয়না তারপরেও জানাতে পেরে ভাল লাগছে।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ভাগের ঈদ, কিংবা ঈদ এলে পরিবারের গণ্ডির লোকজন ছাত্রদের ভুলে যাওয়ার সাথে পরিচিত খুব সম্যক ভাবেই। এরকম অবস্থায় নিজেরা একসাথে কিছু করার আনন্দটা অপরিমেয়। এই দুঃখ-মেশানো আনন্দের সাথে পরিচয় হয়েছিল একটা পর্যায়ে। মন খারাপ

কল্পনা আক্তার এর ছবি

ওহির মর্ম ঠিক মত বুঝলে কোরবানির গরু কিনে মানুষ গ্রামের গরীব কৃষকদের দিতো। বদলি হজ্জ হয়, বদলি কোরবানি কেন হতে পারবে না?

এই কথাগুলো আমার কাছে অনেক শক্তিশালী এবং শিক্ষনীয় মনে হলো। যদি পরিবারের অন্য সদস্যদের এই কথাগুলোর মর্মার্থ বোঝাতে পারি তবে সামনের কোরবানী ঈদ ভিন্ন রকমের হলেও হতে পারে।:)

লেখা খুবই ভালো হয়েছে।
........................................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা


........................................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

যদি পরিবারের অন্য সদস্যদের এই কথাগুলোর মর্মার্থ বোঝাতে পারি তবে সামনের কোরবানী ঈদ ভিন্ন রকমের হলেও হতে পারে।

আন্তরিক ভাবে এই সুখবরটির অপেক্ষায় থাকলাম। গত বছরই বোধহয় পত্রিকায় দেখেছিলাম গরু নেই দেখে পরিবারের সব সদস্য (মা-বাবা-সন্তান) মিলে হাল টানছে। দুঃখ আর অপরাধবোধের মাত্রাটা বলে বুঝাবার না। এর মাত্র ক'মাস পরই দেখলাম ঈদে পাল্লা দিয়ে গরু কিনবার ধুম। অথচ ঘরে হালাকা আর বাইরে ওয়াজে আমরা ইহকাল-পরকাল ফানা ফানা করে ফেলি নিয়মিত। যতজন মানুষ প্লেন-গাড়িতে নামায পড়ে, তার শতকরা ১০ ভাগও যদি কোরবানির গরু দুস্থ চাষীদের দিতো... ভেজাল হল, আমি নিজে ধর্মবেত্তা নই বলে এসব কথা বললে কেউ পাত্তা দিবে না।

সিরাত এর ছবি

আমি নিজে ধর্মবেত্তা নই বলে এসব কথা বললে কেউ পাত্তা দিবে না।

হুম। তুই ভাল, না, গ্রেট পলিটিশিয়ান হতে চাইলে এই কায়দাটা আয়ত্ত করে ফেল। মানে, স্কলারদের সাথে কথা বলে কনভিন্স করা। তোর আইডিয়া সমাজের ৭০% মেনে নেবে, সুতরাং ওদের বুঝানোর চেষ্টা করে দেখতে পারিস। তোর সেই ক্যাপাসিটি আছে বোঝানোর। দ্যাখ চেষ্টা করে। নিজেকে ধর্মবেত্তা হতে হবে কেন? আর তারা না মানলে সেকুলারভাবেই আহবান করে দেখিস।

আই মীন, উপরের সবকিছু এ্যাপ্লিকেবল তুই যখন পলিটিক্সে ঢুকবি তখন।

শঙ্খচীল এর ছবি

"কথাটা প্রায় ঠিক। আমি ধর্মের অনুশাসনগত দিক খুব একটা সিরিয়াসলি নেই না, তবে তার মূল সুরকে আমি আন্তরিক ভাবে মেনে চলতে চেষ্টা করি। রইলো বাকি পরকালের চিন্তা। আমি খোদাকে দয়ালু'র চেয়ে বুদ্ধিমান মনে করি বেশি। আমার মনে কালি থাকলে তা বুঝবার মত শক্তি তাঁর আছে। আপাতত কালিগুলো দূর করার সাধনায় আছি। বাকিটা পরে দেখা যাবে।"

খুব ভাল লাগল। আহা! সবাই যদি এমন হত।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

সবাই যদি এমন হত।

তাহলে তো হাতের পাঁচ আঙুল সমান হয়ে যেত। থাকুক না যেমন আছে তেমনটাই। শুধু বাড়াবাড়ি থেকে দূরে থাকলেই হল। এই সরল কাজটাই সবচেয়ে কঠিন। এর তুলনায় অনুশাসন মেনে চলা অনেক সহজ। নিজের দলে আরেকজন পেয়ে ভাল লাগলো। হাসি

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

এই ধরণের আলোচনাগুলো সাধারণত জটিল হয়। আর সেগুলো এই অধমের মাথার ওপর দিয়ে যায়। জটিল কথা আমার বুঝতেও ইচ্ছা করে না। তবে আপনার লেখাগুলো মাথার ভেতরে কেমন তরতর করে ঢুকে যায়। আগেও এই ব্যাপার ঘটেছে বহুবার। বলেছি কি না মনে নেই।
লেখা ভালো লাগলো। এবং আমি একমত।
তিনি যেখানেই থাকুন না কেন, হি মাস্ট বি ড্যাম স্মার্ট।... দারুণ লাগলো।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

এবার তো আমি ভড়কে গেলাম। আমি চিরকাল গালি খেয়ে আসছি বেশি জটিল করে, পেঁচিয়ে কথা বলি দেখে। পড়বার জন্য অনেক ধন্যবাদ। এমন মন্তব্য পড়লে আরও লিখবার সাহস পাই।

জুম্ম এর ছবি

সচল খুলে পরথমে আপনার লেখাটা দেখে, পড়ে নিলাম (কারণ আপনি যে একজন দুর্দান্ত লেখক)। শেষে, গালে হাত দিয়ে চিন্তা করলাম.......কিন্তু কমেন্তাইতে পারলাম না। যখন ভাল বাংলা লিখতে পারব তখন ধর্ম নিয়ে নিজের মতামত জানাব। তবে সেটা এখনো বহুদূর............।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

নিজের ভাষার কি কোন ভাল-মন্দ আছে রে ভাই? মন যা চায়, লিখে দেবেন। মনে-মুখে এই সরাসরি সম্পর্কটাই তো মাতৃভাষার শ্রেষ্ঠ সৌন্দর্য! হাসি

শংখচীল এর ছবি

ইশতিয়াক রউফ লিখেছেন:
যদি পরিবারের অন্য সদস্যদের এই কথাগুলোর মর্মার্থ বোঝাতে পারি তবে সামনের কোরবানী ঈদ ভিন্ন রকমের হলেও হতে পারে।

আন্তরিক ভাবে এই সুখবরটির অপেক্ষায় থাকলাম। .. যতজন মানুষ প্লেন-গাড়িতে নামায পড়ে, তার শতকরা ১০ ভাগও যদি কোরবানির গরু দুস্থ চাষীদের দিতো... ভেজাল হল, আমি নিজে ধর্মবেত্তা নই বলে এসব কথা বললে কেউ পাত্তা দিবে না।

আমি নামাজ কালাম (এমনকি ঈদের নামাজেও আমার গাফেলতি) একবারেই করিনা। কিন্তু রিলিজিয়াসলি হিসাব করে "জাকাত" আর ফিতরা দেশে পাঠিয়ে দেই সময়মত। প্রতিবছর ঈদে দেশে থাকা বাবামাকে আমার কোরবানীর "ভাগের" টাকা পাঠিয়ে দেই। উনাদের সাথে আমাকেও গরু কোরবানি ভাগিদার করেন। আমেরিকায় আলাদা করে কোন কোরবানি দেইনি আজ পর্যন্ত। বিদেশে থাকি বলে দেশের সমাজের কোন কাজে না আসার গিলটি ফিলিংস্টাআই এ ব্যাপারে মুখ্য কিনা জানিনা। এই লেখাগুলো পড়ে নিজেকে বড় আহাম্মক মনে হচ্ছে। আর প্রচলিত কোরবানি দেবনা। আমি আগামি ঈদে আমাদের দুজনের কোরবানির ভাগের টাকা দিয়ে একটা গাই-বাছুর হলেও কিনে, কাউকে দিয়ে দিতে বলব। এভাবেই শুরু হোক। খোদা নিশ্চয় "স্মারটার" দেন অল। আমার "কোরবানি" গ্রহণ করতেও ত পারেন।
ইশতিয়াক ধন্যবাদ।

জি.এম.তানিম এর ছবি

চলুক
খুব ভাল লাগল!
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।