পাবলিক স্পিকিং ১০১ [ওয়াজ মাহফিল ও রাজনীতি]

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি
লিখেছেন ইশতিয়াক রউফ (তারিখ: বুধ, ০৯/০৯/২০০৯ - ১২:২৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


১. ভূমিকাঃ
নিজের মাপের কিছুর বাইরে যেতে গেলেই নাকি শুরুতে নিজের কিছু গুণগান করতে হয়। প্রচুর উদাহরণ ছড়িয়ে আছে আশে-পাশে। টক শো থেকে বিয়ের বায়োডাটা পর্যন্ত সর্বত্র এই সত্য প্রযোজ্য। কোনো জনগুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে কথা বলতে গেলে নামের আগে-পরে অনেক রকম তকমা লাগাতে হয়। ডক্টর, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, এমএস, এমফিল, পিএইচডি, অ্যাডভোকেট, অধ্যক্ষ, মাস্টার, উপাধ্যক্ষ, কী নেই এই ঝুলিতে!

এই লেখাটি আমার মাপের বাইরে। জনসমক্ষে কীভাবে কথা বলতে হয়, তা বলার মতো ওজনদার বা এলেমদার মানুষ আমি নই। তবুও চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কী? হাজার হোক, সমসাময়িক আর দশ জনের চেয়ে এই দিকে অধমের অভিজ্ঞতা খুব একটা কম না। উঠতি বয়সে বিতর্ক করেছি কিছু, রাজনীতির প্রতি আগ্রহের কারণে বিখ্যাত কিছু ভাষণও শুনেছি মন দিয়ে। অতএব, দেরি না করে ঝাঁপিয়ে পড়া যাক পাবলিক স্পিকিং-এর কিছু মৌলিক উপাদানের উপর। লেখার কলেবর ইচ্ছে করেই সংক্ষিপ্ত করছি না। ব্যস্ত বা অস্থিরমতি পাঠক লাফ দিয়ে শেষটুকু দেখে নিতে পারেন।

২. অংশগ্রহণঃ
আবৃত্তি বা গানের অনুষ্ঠানের সাথে জনসমক্ষে বক্তৃতা/ভাষণ দেওয়ার একটা মৌলিক পার্থক্য আছে। এক্ষেত্রে উপভোগের মাত্রা শুধুই গান বা বক্তৃতার গুরুত্ব ও পরিবেশনার উপর নির্ভর করে না। শ্রোতাকে কতটুকু জড়িত করা যায়, তার উপর পরিবেশনার গ্রহণযোগ্যতা অনেকাংশে নির্ভরশীল। উদাহরণ হিসেবে ব্যান্ডের কনসার্টের দিকে তাকানো যায়। ভেবে দেখুন তো, এক লাইন দর্শক গাইছে, এক গান শিল্পী – এমন মুহূর্তগুলো কতো উপভোগ্য। এমন সময়ে ঠিক-ভুলের বালাই থাকে না, থাকে শুধু ভালো লাগা আর উত্তেজনা।

যেই শিল্পী গানের ফাঁকে ফাঁকে শ্রোতার সাথে গল্প করেন, তিনি অনেক সফল ও শ্রোতাপ্রিয়। উদাহরণ হিসেবে কবীর সুমন, শ্রীকান্ত, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, প্রমুখ গুণী শিল্পীর কথা বলা যায়। এই সমীকরণ রাজনৈতিক ভাষণে অনেক বেশি কার্যকর। সফল রাজনৈতিক ভাষণগুলো অনেক দিনের পরিশ্রম শেষে প্রস্তুত হয়। তাতে কিছুক্ষণ পরপর বিরতি দেওয়া হয় দর্শক-শ্রোতাকে বক্তৃতার সাথে এক হয়ে যাবার জন্য। তুলনায় বাংলাদেশের ভাষণগুলো অনেক বেশি একমাত্রিক। অনেক ঘন্টার অপেক্ষা শেষে নেতা আসেন, কিছুক্ষণ ভাষণ দিয়ে চলে যান। মানুষের সাথে দৃঢ় ও টেকসই সম্পর্ক গড়ে তুলবার জন্য বক্তব্যের মাঝে তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

সাম্প্রতিকতম উদাহরণ হিসেবে বারাক ওবামার দিকে তাকানো যায়। ক’দিন আগেই টি-এ ট্রেনিং-এ ওবামার মতো করে কথা বলতে বলছিলো। প্রতিটি কথা বলার পর তা হজম করতে দিতে হবে। বক্তব্য হবে যেন সমুদ্রের তীরে স্রোতের আসা-যাওয়ার মতো।

৩. অনন্যতাঃ
মানুষমাত্রেই কিছুটা অহংকারী। কাউকে নিজের মতের অনুসারী করতে চাইলে তার মধ্যে গর্ব ঢুকিয়ে দেওয়া খুব জরুরী। শ্রোতা যেন নিজেকে অনন্য মনে করেন। পুরো পৃথিবী ভুল হতে পারে, আমি ঠিক। সবাই এক স্রোতে গা ভাসাতে পারে, আমি ভাসাই না। এই ধরনের অনন্যতার অনুভব মানুষকে অনেক গর্বিত ও বিশ্বস্ত সমর্থক করে তোলে।

দেশে দেশে নির্বাচনের আগে তাই রাজনৈতিক দলগুলো এভাবে নিজেদের ব্র্যান্ডিং করে থাকে। কেউ দেশ রক্ষা করে, কেউ সবার জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করে, কেউ অর্থনীতি চাঙা করে, কেউ দেশজ সম্পদ রক্ষা করে, ইত্যাদি। এই অনন্যতা সবচেয়ে সফল হয় যখন তা ভাষাগত ভাবে করা হয়। সামান্য একটু ‘রেটোরিক’ বদলে দিতে পারে নির্বাচনী মানচিত্র। কোনো কোনো কথা খুব সহজ-সাধারণ হলেও মানুষের মুখে মুখে রটে যায়। উদাহরণ দেওয়া যায় আমেরিকার সাধারণ নির্বাচনের আগে ডেমোক্রেটিক পার্টির একটি শ্লোগানের দিকে। রিপাবলিকান দল নিজেদের ইশ্বরভক্ত দাবি করে থাকে। ধর্মভীরু ভোটারদের মধ্যে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য ঠেকাতে ডেমোক্রেটিক পার্টি পালটা শ্লোগান বের করে একটি। রিপাবলিকানরা বলতো – “গড ইজ অন আওয়ার সাইড”, অর্থাৎ ইশ্বর আমাদের পক্ষে আছেন। একে সামান্য উলটে দিয়ে ডেমোক্রেটরা বললো, “উই আর অন গড’স সাইড”, অর্থাৎ আমরা ইশ্বরের পক্ষে আছি। শব্দবিন্যাসে সামান্য অদল-বদল করে কী সহজে অনন্যতা তৈরি করা!

৪. বিশ্বাসঃ
স্রেফ মুখের কথায় প্রায় অর্ধেক বিশ্ব জয় করে ফেলা সম্ভব, তা দেখিয়ে গেছেন অ্যাডলফ হিটলার। এই সাক্ষাৎ দানবের সুঠাম দেহ ছিলো না, ধুরন্ধর রাজনৈতিক বুদ্ধি ছিলো না, খুঁটির জোর ছিলো না, টাকা-পয়সা ছিলো না। ছিলো শুধু ভাষণ দেওয়ার ক্ষমতা এবং নিজের মনের বুজরুকি চিন্তাগুলোর উপর পরম বিশ্বাস।

এভাবেই চিরকালের গৃহী মানুষও বক্তৃতার মঞ্চে অগ্নিবর্ষণ করতে পারেন, যদি সেই কথাগুলো তাঁর অন্তর থেকে আসে। অগণিত অসম্পূর্ণ বাক্য থাকা সত্বেও বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ মানুষকে ছুঁয়ে যেতে পারার অন্যতম কারণ – এটি সাত কোটি মানুষের অন্তরের আবেগের অকপট প্রকাশ। সফল বক্তৃতার কথায় বক্তার নিজের বিশ্বাস থাকতে হয়। নতুবা তার শক্তি অন্যের মধ্যে সঞ্চারিত হয় না।

৫. সংক্ষিপ্ত শ্লোগানঃ
বারাক ওবামার সফল রাজনৈতিক প্রচারাভিযানের মূলে ছিলো ছোট্ট একটি শ্লোগান – “ইয়েস উই ক্যান”। সারা পৃথিবী ছড়িয়ে গেছে এই কথা, অনেকেই নিজের মতো করে আত্মীকরণ করেছেন এটি। বলা হয়ে থাকে, ওবামার আগে এ-ধরনের কৌশল সবচেয়ে সফল ভাবে কাজে লাগিয়েছেন হিটলার। জার্মানির ক্ষমতার লড়াইয়ের সময় নাৎসি পার্টি ছোট ছোট শ্লোগান ছড়িয়ে দিয়েছিলো মানুষের মুখে মুখে।

৬. মূর্ছনা
রাজনৈতিক পরিবেশনাগুলোর আগে-পিছে প্রচুর গান-বাজনা থাকে। যুদ্ধ-বিগ্রহের সময় রচিত অনেক গণসংগীত আজও মুখে মুখে ফেরে। একেকটা সময়কে ধারণ করে রাখে এই গানগুলো। যেকোন রাজনৈতিক দল তাই নিজেদের সম্মেলনের আগে গানের আয়োজন করে।

এই ধারাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেলেই বক্তৃতার মাঝে গান বা সুর ঢুকিয়ে দেওয়া যায়। সহজ সুরের মধ্যে খুব সন্তর্পণে ঢুকিয়ে দিতে হয় নিজের বক্তব্যটুকু।

৭. রসবোধ
এক সাথে হাজার খানেক মানুষকে হাসানো খুব কঠিন কাজ। তবুও এই অসাধ্য সাধন করতে হয় বড় বক্তাদের। বক্তৃতার মাঝেই জুড়ে দিতে হয় বুদ্ধিদীপ্ত কৌতুক। এই রসবোধ বক্তাকে মানুষের কাছে আনে, তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়, তাকে মানবিক করে। পূর্বে বর্ণিত অংশগ্রহণের সাথে যদি এই রসবোধ জুড়ে দেওয়া যায়, তাহলে সেটার অনুরণন আরও উল্লেখযোগ্য।

৮.পর্যবেক্ষণ
বলতে থাকলে লেখা আরও বড় হবে। যে-কারণে এই লেখার অবতারণা, এবার সেখানেই চলে যাই। বদ্দার ফেসবুক প্রোফাইলে পেলাম একটি ওয়াজ মাহফিলের লিংক। শুনতে থাকলাম। ঘৃণার কী সুচতুর পরিবেশনা, কী দারুণ কৌশলে ভয় আর বিশ্বাসের মাঝে বিদ্বেষের বীজ বুনে দেওয়া! এই ওয়াজের কথাগুলো অপছন্দ করার মতো, প্রতিবাদ করার মতো। তাই বলে এর পরিবেশনাগত দক্ষতাকে খাটো করে দেখার তিলমাত্র সুযোগ নেই। এই অর্ধশিক্ষিত কাঠমোল্লার কাছ থেকে অনেক, অনেক কিছু শেখার আছে পাবলিক স্পিকিং সম্পর্কে।

এখানে সিরিজটির বিভিন্ন পর্বের ইউটিউব লিংক আছে। প্রতিটি পর্ব গড়ে ৯ মিনিট লম্বা। যেকোন একটি পর্ব দেখে নিতে পারেন কয়েক মিনিট। দেখবার সময় খেয়াল রাখবেন নিচে বর্ণিত ব্যাপারগুলো।

|| পর্ব ১ || পর্ব ২ || পর্ব ৩ || পর্ব ৪ || পর্ব ৫ || পর্ব ৬ || পর্ব ৭ ||

  • সুশীল ও উদারপন্থীদের ভারী ভারী কথার একমুখী ভাষণের বিপরীতে এরকম সাবলীল পরিবেশনা অনেক বেশি কার্যকর।
  • ভাষণের গতি খেয়াল করুন। বিষয় থেকে বিষয়ে চলে যাওয়ার দক্ষতা একই সাথে ধর্ম, রাজনীতি, ও সমাজ নিয়ে কথা বলা সম্ভব করে তোলে।
  • উপরে বর্ণিত মৌলিক গুণাবলি খেয়াল করুন।
  • সময়ের দিকেও চোখ রাখুন। খেয়াল করে দেখুন, কত মিনিট পর পর শ্রোতাকে বক্তৃতার ভেতরে টেনে নিয়ে আসা হয়, তাকে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা হয়।
  • খেয়াল করুন ভাষণের অন্তর্নিহিত বক্তব্যগুলোর বুনন। খেয়াল করলে দেখবেন, রাজনৈতিক বা সাম্প্রদায়িক বক্তব্যগুলোর পরেই চলে আসছে কোনো একটি ধর্মীয় বাণী। সেই বাণীতে সম্মতি জ্ঞাপন করতে গিয়ে শ্রোতা সুযোগ পাচ্ছে না ঘৃণার প্রচার উপলব্ধি বা প্রতিবাদ করার।

কয়েক বারে হলেও পুরোটা দেখার অনুরোধ রইলো। অন্তত পক্ষে একটি পর্বের পুরো ভিডিও হলেও দেখুন।

৯. ব্যবহারিক বিশ্লেষণ
বুঝবার সুবিধার্থে একটি পর্ব এমবেড করছি। স্পর্শকাতর ধর্মীয় ব্যাপারে অনিঃশেষ কুৎসাসমৃদ্ধ এই পর্বটি সংযুক্ত করার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আন্তরিক ভাবে। এই দৃশ্য মঞ্চায়িত হচ্ছে গ্রামে-গঞ্জে, তাই অনিচ্ছাসত্বেও এটি একটু খোলামেলা ভাবে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।

পর্ব ৫

প্রথমেই আছে 'V' চিহ্ন দেখি "জয়" এবং "বিজয়"-এর পার্থক্য দেখানো। দেখিয়েই বলা হলো,

"জয় শব্দ আমাদের না, আমাদের হলো বিজয়। মুসলমানদের হলো বিজয়, আর হিন্দু ভাইদের জয়।"

শ্লেষের সাথে "ভাই" ডেকে হিন্দু-মুসলমানে ফারাক এবং বিদ্বেষ বুনে দেওয়ার সূচনা এখানেই। এই ছোট্ট অংশে একই সাথে কয়েকটি ব্যাপার খেয়াল করার আছে।

প্রথমত, ইসলামী চিন্তাধারাকে এখন একটি Ideology-র পরিবর্তে Identity হিসেবে দাঁড় করানো হচ্ছে। মতবাদ হিসেবে ইসলাম বা তার বিশেষ কোনো ব্যাখ্যার সাথে দ্বিমত পোষন করা সহজ, কিন্তু পরিচয়ের অংশ হিসেবে তাকে অস্বীকার করার উপায় নেই।

দ্বিতীয়ত, এই কথাটির অব্যবহিত পরবর্তী মিনিট খানেক বেশ হাস্যরসের মধ্য দিয়ে কথা এগিয়ে চলে খুব দ্রুত। দমদম এয়ারপোর্টের কাল্পনিক "ঠাকুর"-এর নাম নিয়ে বলে দেওয়া হলো,

রাম এবং কৃষ্ণা, দু'টাই এক আল্লাহকে বিশ্বাস করতো। ইতিহাসে আছে এটা।

আগাগোড়া দর্শকদের কাছ থেকে জবাব চেয়ে আসা এই বক্তা এরপর ইতিহাসের উৎস নিয়ে কিছু না বলে দ্রুত ঢুকে পড়েন 'রেটোরিক' গানে। এটা শেষ হতে হতেই সুরে সুরে আল্লাহর কথা।

হৃদয়ের কষ্ট দূর করার জন্য কার জিকির?
আরও জোরে বলেন, কার?
নামাযের ভিতরে জিকির হয় কার?
সবকিছুর আগে নামায আছে না নাই?
ওযুর আগে নামায আছে না নাই?

ধর্মভীরু মানুষের জন্য প্রতিবাদের সুযোগ নেই। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে "আল্লাহ!" এবং "আছে!" বলতে গিয়ে আগের কুৎসাও গলধকরণ হয়ে যায় অজান্তেই।

রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে দু'কথা বলার পর বক্তা আবার চলে যায় ধর্ম এবং আল্লাহর বরকতে। রসিকতা করে উদাহরণ দেন এক ব্যাক্তির, যিনি অ্যালার্জি থাকার পরও বেগুনী খেয়ে চলছে। সেই ব্যাক্তি নাকি বলেছেন,

হুজুর, রমজান মাস। খাইতেও মজা, চুলকাইতেও মজা।

এই সস্তা কৌতুকে লোক হাসিয়েই তাকে আল্লাহর কুদরত হিসেবে বর্ণনা করে দেওয়া হলো। কথায় কথায় আল্লাহর কথা এলো, রোজা এলো, যাকাতের কথা এলো। আবু বকর (র) -এর গল্প বলে উদ্বুদ্ধ ও দুর্বল করার পরই আবার রাজনীতি চলে আসে। বিষোদ্গার শুরু হয় পত্রিকার উপর। হাস্যকর হিসেব দেখিয়ে যোগের ভুলে সাড়ে ছয় লাখকে সাড়ে ছয় কোটি বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। মাদ্রাসার টাকা নিয়ে ইনকিলাব গঠনের কথাও বের হয়ে আসে। একে একে পত্রিকা ও সংবাদ সংস্থার উপর বিষোদ্গার করেই সুরেলা কণ্ঠে তিনি আবার যাকাতে চলে যান।

বক্তার অসামান্য উপস্থাপনার উদাহরণ দেখা যায় ৭:৫৫ মিনিটের দিকে।

এখনও মুসলমানদের কাছে সম্পত্তি বেশি, আছে না নাই?
জোরে বলেন, আছে না নাই?
বাংলাদেশেও সম্পদ আছে না নাই?
তেলের খনি আছে না নাই?
গ্যাসের খনি আছে না নাই?
মাছের খনি আছে না নাই?
কয়লার খনি আছে না নাই?

এই অংশে গলা নিচু করে প্রশ্ন,

চোরের খনি আছে না নাই?

এই প্রশ্নের মধ্য দিয়েই শ্রোতাকে অপ্রস্তুত অবস্থায় ঘায়েল করেন। নিজেও মর্ত্যে নেমে আসেন, শ্রোতাকেও হাসিতে ভুলিয়ে দেন। খেয়াল করবার আছে পরিচয়সূত্র বা আইডেনটিটি হিসেবে ইসলামকে ব্যবহার করার দিকটিও। খেয়াল করুন বক্তা কীভাবে হিসেব করে বিরতি দেন এই কৌতুকের পর।

বাকি ভিডিওগুলো দেখলে এমনি আরও অনেক উপাদান পাবেন।

১০. পরিশিষ্ট
প্রশ্ন হলো, এর শেষ কোথায়, প্রতিকার কী? আমরা কেউ এই উগ্র মোল্লার সাথে একমত নই। আমরা তো এর এর মতো হাতা গুটিয়ে নেমে প্রতিবাদ করার মতো মানুষও নই। আমরা শুধু মোটা দাগে বলি আইন করে "ধর্মভিত্তিক রাজনীতি" নিষিদ্ধ করার কথা। কথার ধরন কিংবা শব্ধবন্ধ হয়তো আইন করে নিষিদ্ধ করা যায়, কিন্তু তাই বলে কি এই প্রচারের মূল সুর বদলানো যাবে?

আমাদের করণীয় কী তাহলে?


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি এই জিনিস পুরোটা দেখে শেষ করেছেন বলে নোবেল এর জনা্নাকনাকে নমিনেশন দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
কেউ পুরোটা দেখে শেষ করতে পারলে আওয়াজ দিবেন এবং আমার স্রদ্ধাসহ সালাম নিয়ে নেবেন।ধন্যবাদ।

আর লেখক ভাই, দুঃখিত। শেষ করতে পারলাম না।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

শেষ করতে না পেরেই খুশি করলেন অধমকে। হাসি

s-s এর ছবি

- আমি আপনার অন্তর্নিহিত বক্তব্যের সাথে পুরোপুরি একমত।
- "অগ্নিবর্ষণ" বানান হাসি
- পাবলিক স্পিকিংয়ের অভিজ্ঞতা থেকেই বলি, এই অর্ধশিক্ষিত কাঠমোল্লাদের ইউটিউব ভিডিওর লিংক দিলেও হয়তো হতো,সরাসরি পেস্ট না করে। সচলায়তনে "যে কোনো" ভাবেই ধর্মীয় প্রচারণা, গান অথবা ওয়াজ দেখতে ভালো লাগেনা। কেন জানিনা। হয়তো এটি আমার "সাম্প্রদায়িক সীমাবদ্ধতা"। কিন্তু নেগেটিভ প্রচার একভাবে হলেও এদের প্রচার বাড়ায়, এটা এখানে চাইনা, ভালো লাগেনা, ব্যাস! অনেকেই দ্বিমত করবেন এবং ঝাঁপিয়ে পড়বেন এ নিয়ে - এখানে এগুলোর ব্যবহার আসলে কতটা "ঠিক" তা বোঝাতে, ভুল তা বলছিনা, খারাপ লাগলো তাই বলছি। পাবলিক স্পিকিংয়ের আরও কার্যকর উদাহরণ দেওয়া যায় ইউটিউব থেকেই, সেটা নিশ্চয়ই মানবেন।
লেখাটা ভালো হয়েছে, তারাবাজি এখন অর্থহীন লাগে তাই প্রায় সময়ই করিনা। করলে অবশ্যই দিতাম। লেখার মূলসুর প্রশংসনীয়। ওয়েল ডান।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

অনুভূতিতে আঘাত করে থাকলে দুঃখিত, আপু। এমবেডেড ভিডিওগুলো সরিয়ে শুধু প্রথম পর্বের লিংক দিলাম। ইচ্ছা ছিলো একে একে প্রতিটা পর্ব ভেঙে দেখানো এদের কৌশল। সময়ের অভাব এবং আলস্যের আধিক্যে হয়ে উঠেনি। অনুমতি পেলে একটা পর্ব এমবেড করে স্পষ্ট ভাবে দেখিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতাম।

"ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ" কথাটা খুব এলোমেলো ভাবে ব্যবহার করা হয়। ধর্মের সাথে রাজনীতি কীভাবে মিশিয়ে দিয়ে প্রচার করা হয়, এবং কীভাবে এটা নিষিদ্ধ করার ধারাগুলো রচনা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনার ইচ্ছা ছিলো। দেখি, সময় পেলে...

বানানের জন্য ধন্যবাদ।

s-s এর ছবি

ভেঙে বিস্তারিত দেখানো একটা ভালো কৌশল। চলুক
অভিজিত যেভাবে করেন, তাঁর অনেক লেখায়, ধর্মীয় উদ্ধৃতি দিয়ে তারপর এটার ব্যাখ্যা, আর তারপর অপব্যাখ্যা কি কি ভাবে করা হলো - তবে সেটাতে সময় ও একাগ্রতার প্রয়োজন চোখ টিপি হাসি
অনেক ধন্যবাদ ই র অভিকে ও ই বদসুরত কটুভাষী চেহারাটা সরানোর জন্য। হাসি
মেয়েরা গামছার চেয়েও ছোট জালের চেয়েও পাতলা ওড়না পরে ঘুরলে কি কি হয় এই জাতীয় ইতর কথা বলার সময় লোকটার মুখভঙ্গী দেখা একটা যন্ত্রণা বই আর কিছু তো নয়। শয়তানী হাসি

সবজান্তা এর ছবি

চলুক

আমার কষ্ট কমালেন দেঁতো হাসি আমিও গতকাল সারাদিনই এই বেটার সব ভিডিও দেখছি বসে বসে।

আপাতত খুবই দৌড়ের উপর, রাতে এসে বিস্তারিত কিছু বলার আশা রাখি।

আরেকটা কথা, যারা কোন ভিডিওই দেখেন নাই, তারা অন্তত ছয় নম্বর ভিডিওটা দেইখেন। ইটস আ মাস্ট ওয়াচ দেঁতো হাসি


অলমিতি বিস্তারেণ

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

চলুক

আমিও গতকাল সারাদিনই এই বেটার সব ভিডিও দেখছি বসে বসে।

সবজান্তার ধৈর্য দেখে তাব্দা হয়ে গেছি ।

কয়েক বারে হলেও পুরোটা দেখার অনুরোধ রইলো।

ছাইড়া দে মা , কাইন্দা বাঁচি ।

আমার বন্ধু উম্মে মুসলিমার "যেখানে নারী ও যৌনতা আলোচনার প্রধান বিষয়" আর আমার মন্তব্য পড়ার আমন্ত্রন রইল ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

পড়লাম দুটোই। ভালো লিখেছেন লেখিকা। বাস্তব তুলে ধরেছেন খুব সহজে। আরও লিখতে বলুন তাঁকে।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

আরবি পড়ানো হুজুরদের লুচ্ছামি নিয়ে লিমার ছোটগল্প অব্যক্ত

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

প্রবাসিনী এর ছবি

লিমা উম্মের লেখাটা খুব ভালো লেগেছে, খুবই ভাল পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আমি শুরু করেছিলাম ৫ নম্বরটা দিয়ে। মন চাচ্ছিলো ফুয়াদকে দিয়ে "কৃষ্ণা কৃষ্ণা কৃষ্ণা"-টা রিমিক্স করাই... দেঁতো হাসি

বিস্তারিত মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম।

মামুন হক এর ছবি

অনেক চেষ্টা করেও পুরাটা দেখতে পারলাম না।
এইসব জামাতী পঙ্গপালে ছেয়ে গেছে দেশ।

বর্ষা [অতিথি] এর ছবি

ইয়ে, ইশতি...লেখাটা বরাবরের মতো ভালো হয়েছে...কিন্তু আলসেমি না করে যদি নিজেই মিল গুলো দেখিয়ে দিতে পাঠকের আত্মস্থ করতে সুবিধা হতো ( আমার মুখে এই কথা সাজে না!!!)। এই লোকের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। পি,এইচ,ডি ধারী, আমেরিকার ডাক্তার থেকে গ্রামের কৃষক পর্যন্ত। কারণগুলো তোমার লেখায় স্পষ্ট ভাবে লিখেছো। আম্র আরেকটা কারণ মনে হয় সহজবোধ্যতা!!! সহজ কথায় আবেগ দিয়ে সব স্তরের মানুষের মনের ভেতর পৌছে যাওয়া।

অতিথি লেখক এর ছবি

মনে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে জনৈক বক্তা মাত্র আড়াই ঘন্টা সময় নিয়েছিলেন। পরে একরকম টেনে হিঁচড়ে তাকে মঞ্চ থেকে নামিয়েছিলাম। আয়োজকের একজন তাই না পারছিলাম সইতে, না পারছিলাম কইতে। আর বক্তৃতা শেষ হবার আগেই গ্যালারি দর্শকশুন্য হয়েছিল। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শিল্পীদের আর কষ্ট করে গান গাইতে হয়নি।

আসলে সেই ভাল বক্তা যে বুঝতে পারে কোথায় থামতে হবে।

রেনেসাঁ

সিরাত এর ছবি

পড়লাম। ভালই লাগলো।

তুই ইশ্বর 'ই' দিয়া লিখস ক্যান? এইটা না 'ঈ'? যাই হোক আমি জানি কম, তবে বেশিরভাগ জায়গায় 'ঈ' দেখি।

কলাম্বিয়া নিয়া ল্যাখ। হাসি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

শিখলাম
কিন্তু এইগুলা কেমনে করতে হয় তা তো বুঝলাম না

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

করতে পারলে কিন্তু মহামতি লীলেনকেই মানাতো সবচেয়ে ভালো। কী সুন্দর নূরানী দাড়ি! অর্ধেক পথ তো এগিয়েই আছেন! হাসি

হরেকৃষ্ন এর ছবি

লেখাটি পড়ে খুব ভাল লাগলো, সফল পাবলিক স্পিকিং এর প্রায় সবগুলো উপাদানকেই সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। আরো দুটো উপাদান এর কথা চিন্তা করে দেখতে পারেনঃ উপযুক্ত পোশাক ও দর্শক-শ্রোতার চোখে তাকানো। এক নির্বাচনে কেনেডির কাছে নিক্সন হেরে গিয়েছিলেন; কারণ হিসেবে বলা হয় কেনেডির হাতে বিতর্কের সময় তাৎক্ষনাৎ উপযুক্ত পোষাক ছিল। আর চোখে না তাকালে দর্শক-শ্রোতার দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায় না, ফলে তাদেরকে দুই নম্বর উপাদান, অংশগ্রহন, করানোতে সফল হওয়া যায় না।

আপনার সাত নম্বর উপাদান, রসবোধ, অতি চমৎকার বিশ্লেষণ! আপনাকে অভিনন্দন। উল্লিখিত মোল্লা/মৌলানার বক্তৃতাটি আমি শুনিনি, তবে অতীতে এধরণের বক্তৃতার রসবোধে আনন্দ যেমন পেয়েছি, আপনার মত ভয়ও পেয়েছি বেশি। ভয় এজন্য যে আমার ক্ষমতা শুধু এর বিশ্লেষনেই সীমাবদ্ধ থাকবে আর ওরা দিনরাত ওদের কাজ করে দল ভারি করে চলবে। আমাদের পেশাজিবী পাবলিক স্পিকাররা এদিকে খেয়াল করলে উপকার হত বেশি।

বানানে ভুল শুধরে দিলে উপকৃত হব।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

তৎক্ষণাৎ, ভারী

পোশাক খুবই জরুরী। সপ্রতিভ ও আত্মবিশ্বাসী দেখানোর বিকল্প নেই।

রণদীপম বসু এর ছবি

ভিডিও'র ওয়াজরত লোকটার নাম ....। বেশ কয়েকমাস আগেই তার একটা ভিডিও দেখেছিলাম সিডিতে। তার ভঙ্গি তার ভাব দেখলে কেন যেনো পিশাচ পিশাচ মনে হয় আমার কাছে।
আমাদের একজন সচলের এই গল্পটা দেখুন তো মেলাতে পারেন কিনা ?

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

মিলে তো গেলো। এমন আরও লেখা আসা উচিত। বিশ্লেষণের চেয়ে গল্পের ক্ষমতা বেশি।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

খুবই প্রয়োজনীয় সন্ধান। ভালো লাগল।
আমার কথা বলি। আমি ছোটবেলায় শিখেছিলাম। যদি অডিটোরিয়াম ভর্তি লোক দেখে নার্ভাস লাগে, তাহলে অডিটোরিয়ামের শেষ মাথায়, সব দর্শকের পিছনের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে কথা বল। কারো সঙ্গে চোখাচোখি হবে না। আর সব দর্শকই ভাববে তুমি তার পিছনের জনের দিকে তাকিয়ে আছো। পাব্লিক স্পিচ দিতে হয় নাই। তাই এই টোটকার অ্যাপ্লাই করাও হয় নাই।
----------------------------------------------------------------------------------
to be or not to be - that was never a question (jean-luc godard)


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

কেউ কেউ বলেন চোখের দিকে তাকাতে নার্ভাস লাগলে কপালের দিকে তাকাতে।

বড় পরিসরে বক্তব্য দিলে নির্দিষ্ট কোনো দর্শকের দিকে তাকাতে বলা হয়। সাধারণ ভাবে কোনো এক দিকে তাকিয়ে থাকার চেয়ে এটা অনেক কার্যকর। খেয়াল করবেন, রাজনৈতিক নেতারা (এমনকি রেসলিং-এর খেলোয়াড়রাও) মঞ্চে উঠার আগে-পরে কিছুক্ষণ এভাবে দর্শকদের সাথে অভিবাদন বিনিময় করে থাকে।

হিলারি ক্লিনটন অনেকটা ফর্মুলার মতো করে কাজটা করেন। সে-নিয়ে নির্বাচনের আগে তাঁকে অনেক ঠাট্টা-ইয়ার্কি সইতে হয়েছিলো।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

ভিডিওটা দেখতে চাই- কই পাই ??
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

লেখাটা উল্লেখযোগ্য পরিমান পরিবর্ধন করে দিলাম। সাথে জুড়ে দিলাম একটা ভিডিও।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

দেখলাম ভিডিও, মন্তব্য আর নতুন কী করবো। বড়রা এই নিয়ে বহু কথা আগেও বলসেন- এরা পাল্টাবে না...
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

নজমুল আলবাব এর ছবি

পড়লাম।
ইশতির লেখা সবসময়ই বিন্যস্ত। পড়তে আরাম। ভাবতেও আরাম।

এইটা পড়া শেষ করে কিছুটা আতংকও হইছে। এই পেইনহুজুরের বয়ান ছেলেটা বসে বসে শুনছে! আমারতো দে পানা দে ইয়া এলাহীর কথা মনে আসতেছে খালি। ইশতির কান মোবারকের বরকত হোক। আমিন।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

এক সময় পড়তাম না, ভাইয়া। এগুলো বয়ান করা শুরু করলেই উঠে আরেক দিকে হাঁটা দিতাম। দুঃখজনক হলো, আমাদের নীরবতা এবং অনুপস্থিতির সুযোগ এরা খুব সফল ভাবে কাজে লাগিয়েছে। সেজন্যই এই কষ্টটুকু করা।

তবে হ্যাঁ, আমি এই হুজুরের বয়ানে মুগ্ধ। লোক পটিয়ে ফেলার গুণাবলি খুব প্রবল এর মধ্যে। "ক্যারিশমা" আছে অনেক। অনেকটাই সাকাচৌ টাইপের। পাবলিক স্পিকিং-এর আর্টটা দারুণ রপ্ত করেছে এরা।

রোজা একটু পোক্ত করলাম ঈমানের কথাবার্তা শুনে। চোখ টিপি

সবজান্তা এর ছবি

আমি একমত। এই ভদ্রলোকের কথায় চমৎকার ক্যারিশমা ! এই লোকের ভক্ত হয়ে যাওয়া বিচিত্র কিছু না।

চমৎকার বক্তা হওয়ার সব গুণই এর মধ্যে দেখলাম। বাচনভঙ্গি, উপস্থাপনা, কনটেন্ট কম্পোজিশন- সবই।

আমি আবারও বলি, যারা একটাও দেখেন নাই, তারা অন্তত ছয় নম্বরটা দেখেন।


অলমিতি বিস্তারেণ

নজমুল আলবাব এর ছবি

আমার এক খালা একদিন বল্লেন, টিভিতে এক মোল্লা নাকি লিপিস্টিক দিয়ে মাজার মজার সব বয়ান করে। শুনে বেশ আগ্রহবোধ করলাম। বল্লাম আমকে দেখিয়েনতো।

এক শুক্রবারে আমার ডাক পড়লো। এটিএন বাঙলায় দেখলাম এই ক্যারিক্যাচাররে... আমার জেবন সাথ্থক হইলো সেইদিন। দেঁতো হাসি

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

সচল জাহিদ এর ছবি

ইশতি চমৎকার লেখা। বিশেষ করে পর্ব ৫ এর ব্যখ্যাটা যথার্থ করেছ। এরা কি চমৎকার ভাবে সহজ সরল মানুষদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে দিচ্ছে তা এই ভিডিও না দেখলে বুঝা যেতনা।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ধন্যবাদ, ভাইয়া। সবজান্তা যেমনটা বলছিলো, পর্ব ৬ সবচেয়ে মজার। সিনেমার পোস্টার, বেগুনী খেয়ে চুলকানিতেও আল্লাহর বরকত, ছোট কাপড় দেখা যাওয়া... কী নেই?!

অতিথি অরূপ এর ছবি

আসুন আমরাও এ জাতীয় আনুষ্ঠান গ্রামে গঞ্জে শুরু করে দিই।

এর সরাসরি বিকল্প গড়ে তুলতে হবে।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

বিকল্প ছিলো কিন্তু। বাউল গানের মধ্য দিয়ে ধর্মের আক্ষরিক অর্থের বাইরে অনেক কিছু প্রচার পেতো। এখন তো ধুন্ধুমার গানের দাপটে সব হারিয়ে গেছে। মরমী, সুফী গান কোথায় আর এখন?

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

ভাষনটা আগেই শোনা ছিল, তাই কষ্ট কম হল। আপনার লেখা নিয়ে খামাখা মন্তব্য করে সময় নষ্ট না করি। আমি পুরোপুরি সহমত বিষয়ের সাথে।
যখন শুনেছিলাম, তখন কয়েকটা বিষয় কাজ করছিল আমার ওপর:

১. প্রচন্ড রাগ, কারণ তো জানেন ই।

২. প্রচন্ড ভয়, কারণ লোকেরা খুবই প্রভাবিত হবে এই রকমের বক্তব্য শুনে। প্রভাবিত না হবার জন্য যতটুকু পড়াশুনা ধর্ম নিয়ে করা দরকার, ততটুকু পড়াশুনা করেছে এমন লোক আমি কম দেখি।

৩. একটা নিরুপায় ভাব, কারণ এদের ঠেকানোর পথটা জানা থাকলেও সেটার কার্যকারীতা যতোটুকু, ঐ লোকটার কথার কার্যকারীতাও তার চেয়ে কম নয়। দুটো ধারার পেছনে মানুষের মিছিলটাও সমান দীর্ঘ।

আর কি! আমাদের ধর্মান্ধতা দূর হোক, এই কামনা করি। ভাল থাকুন হাসি

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ধর্ম মানলেই এর আক্ষরিক অনুবাদ এবং হুজুরের ফতোয়া মানতে হবে, এমন দিন নেই আর। শিক্ষিত সমাজের অনেকেই ধর্মের একটি কোমলতর সংজ্ঞায় বিশ্বাসী। হুজুরের বয়ানের কঠোর ইসলাম এখন অনেক ক্ষেত্রেই অদৃশ্য। এই 'মডারেট ইসলাম' নিয়েও কথা বলা প্রয়োজন। আমি মনে করি না এই ধারায় ধর্মের কোনো অবমাননা হয়েছে, বরং বৈশ্বিক দ্যোতনা পেয়েছে ধর্ম।

বর্ষা [অতিথি] এর ছবি

আবার পড়ে সম্পূর্ণতার অনুভূতি পেলাম। চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছো কোন কোন জায়গায় ভদ্রলোক কি কি চালাকি করেছে।
রণদীপম বসুর সাথে একমত, 'তার ভঙ্গি তার ভাব দেখলে কেন যেনো পিশাচ পিশাচ মনে হয় আমার কাছে।' ---এক বা দুই জায়গায় প্রথম ভিডিওতে এর হিংস্রতা বেড়িয়ে এসেছে।
লুৎফুল আরেফীন এর সাথে সহমত।

ধুসর গোধূলি এর ছবি
ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আবারও আপনার আইডিয়া মেরে দিলাম নাকি গো দাদা? ব'লেন না যে আবারও সেই মুম্বাই নাচের ঘটনা ঘটে গেছে।

লিখতে লিখতে বড় হয়ে গেছে এই পোস্টটা...

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

'তার ভঙ্গি তার ভাব দেখলে কেন যেনো পিশাচ পিশাচ মনে হয় আমার কাছে।'
একমত।

...........................

কেউ আমাকে সরল পেয়ে বানিয়ে গেছে জটিল মানুষ

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

স্বপ্নহারা এর ছবি

এই ব্যাটার আগে একটা দেখছিলাম নজরুল আর রবীন্দ্রনাথের উপর। তোর দেয়া সবগুলাই শুনলাম...এই বারভাতারীর পুতগুলা বড়ই ভয়াবহ! পিশাচও এদের তুলনায় দেবতা...মন খারাপ
-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আমিও দেখলাম সেটা। রবীন্দ্র আর নজরুল নিয়ে যথেচ্ছ উপমা দিয়ে ইসলামের ঝাণ্ডা উড়িয়ে যাচ্ছে। ইচ্ছা আছে ইসলাম নিয়ে নজরুলের দর্শনের উপর একটু আলোকপাত করার।

কনফুসিয়াস এর ছবি

চমৎকার একটা ব্লগ ইশতি, থ্যাংকু।
আমাদের বাংলার শিক্ষক ছিলেন আবু মুহম্মদ রইস। উনি আমাদেরকে বলতেন বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ বক্তা হলো ক্যানভাসাররা। আমাদের ঊনি বুদ্ধি দিয়েছিলেন সুযোগ পেলেই যেন দাঁড়িয়ে গিয়ে আমরা তাদের বক্তৃতা শুনি। কনফিডেন্ট বা ক্যারিশমা কোনটারই অভাব নাই সেসবে।

তোমার বিশ্লেষণ চমৎকার হয়েছে। বদ্দার লিংক থেকে আমিও একটা ভিডিও দেখছিলাম গতকাল, মিষ্টির ভেতরে ট্যাবলেট গুঁজে দেবার মত করে ধর্মের আড়ালে ঘৃণা ছড়ানোয় কি অনায়াস দক্ষতা এদের!

আরেকটা কারণে তোমাকে পাঁচ তারা। খেয়াল করে পড়ে দেখলাম, সুন্দর সব বাংলা শব্দে ভরপুর তোমার এই লেখাটা। বাংলায়, বিশেষ করে আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের লেখা পড়লে টের পাই শব্দভান্ডারে কতই না দরিদ্র আমি। অনেকদিন পরে তোমার এই লেখাটা পড়েও সেরকম একটা অনুভূতি হলো।

-----------------------------------
আমার ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার, মন আমার, মন আমার, মন আমার-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

"মিষ্টির ভেতর ট্যাবলেট"-এর চেয়ে ভালো উপমা হয় না এই ব্যাপারে।

শুধু বক্তা না, ভালো লেখক/কবি/অভিনেতা হতে হলেও প্রথমে লাজ-শরম বিসর্জন দিতে হয়। অনেক মানুষের কাছে কিছু উপস্থাপনা খুব কঠিন কাজ। স্বাভাবিক কারণেই ভুল করার ভয় থাকে। "সংশয়ে সংকল্প সদা টলে" আর কি। তবুও যারা এই খোলস ভেঙে বের হয়, তারাই এই গুণটা অর্জন করতে পারে।

সুন্দর বাংলা শব্দ পেলেন কোথায়? এই উদার বক্তব্য পড়ে আবারও চোখ বুলালাম, তেমন কিছু তো চোখে পড়লো না। খাইছে তবুও ধন্যবাদ। হাসি

হিমু এর ছবি
দ্রোহী এর ছবি

চমৎকার একটা লেখা!

হুজুরের বক্তৃতার লিংক বদ্দার খোমাখাতা থেকে পেয়েছিলাম। হুজুরের কাছ থেকে যা শিখেছি সত্যি করে বললে আমি পাবলিক স্পিকিংয়ের উপর সর্বমোট ৭ ক্রেডিট কোর্সওয়ার্ক করেও তা শিখতে পারিনি।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আমার অবস্থা। খুব সহজেই বারাক ওবামা-র বক্তৃতা থেকে অংশবিশেষ তুলে দিতে পারতাম। সাধারণত কেনেডি-রেগান-ক্লিনটন-ওবামার মতো লোকেদের ভাষণই দেখানো হয় পাবলিক স্পিকিং-এ। সমস্যা হলো, এতে করে অনেকেই নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন বেশি। একজন স্বল্পবুদ্ধির প্রায়-অযোগ্য মানুষও যে চেষ্টা করলে ভালো বক্তা হতে পারেন, তা বোঝানোর জন্যই এই ভিডিও ভাংচুর করা।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

কালকেই পড়েছি। দারুণ লেখা। চলুক

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

পড়বার জন্য ধন্যবাদ বাকিদের।

সুমন চৌধুরী এর ছবি
ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

উলটা হয়ে গেলো তো! আপনি এই রত্ন খুঁজে বের না করলে আমার লেখা হয়ে উঠে না। খাইছে

জি.এম.তানিম এর ছবি

দারুণ পর্যবেক্ষণ(চলুক)
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

মোল্লা এর ছবি

আমি নিজে খুবই কাঠমোল্লা প্রকৃতির
আপনার পোস্ট পড়লাম। ভিডিও ঘৃণায় পরিপূর্ণ এবং ধর্মে ধর্মে ভেদাভেদ / বিদ্বেষ উস্কে দেয় ----- ইত্যাদি যে অভিযোগ এনেছেন তা হয়ত অনেকাংশে সত্য। কিন্তু কিছু Prejudice এর কারণে অনেক key point আপনি ভুল বুঝেছেন। দোষ দেই না। তবে দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যের কারণে একই কথার অনেক ভিন্ন connotation তৈরী হয়।

অর্ধশিক্ষিত মোল্লা শ্রেণীর হয়ে কিছু আত্মপক্ষ সমর্থন করে যাই এ মক্তবে।

১) 'জয়' শব্দ
মোল্লারা যে ব্যাপারটি ভয় পান তা হল নিজের মন-মত ধর্মের পরিমার্জন, পরিবর্ধন। মাজারে গিয়ে পানি-পড়ার খোঁজ করা, পীর মানা, আগরবাতি জ্বালানো কে ধর্মীয় অর্চনার অংশ মনে করা --- ইত্যাদি তারা বরাবরই Discourage করেন এবং প্রত্যক্ষ ইসলাম-চ্যূতি
বলে গণ্য করেন। একটা ঐতিহাসিক account দেই।

ইয়াথ্রিব ( Yathrib বর্তমান মদিনা ) এ ইহুদি ও মুসলমানেরা শান্তিপূর্ণভাবে একসাথে বসবাস করত রাসূলের নেতৃত্বাধীনে। ১০ই মহরম উভয় দলের কাছেই তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। এ দিনে ইহুদি ও মুসলিম উভয়ই রোযা রাখতেন। উভয়ের Scripture এ অনেক মিল, এবং দর্শনগত সাদৃশের কারণে এক ধরণের Seamless-ness তৈরী হয়েছিল। এই Seamless-ness এর হাত ধরে অনেক অনাকাঙ্খিত উপাদান সাধারণ মুসলিমদের উপাসনায় ঢুকে পড়তে পারে ---- এই আশংকা থেকে কতিপয় অনুসারী নবীকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললেন। তখন নবী একটা সহজ সমাধান দিলেন এবং বললেন,

" তোমরা পর পর দুদিন রোযা রাখতে পারো। আর ইহুদিরা তাদের রীতি অনুযায়ী একদিনই রোযা রাখুক... ...এতে করে আর কোন অস্পষ্টতার অবকাশ থাকবেনা।" অনুসারীদের মধ্যে সংশয় দূর করে সুস্পষ্ট পার্থক্য টানার প্রয়াসে দুই রোযার নিয়ম চালু হয়েছিল। ব্যাপারটা এমন নয় যে, ইহুদিদের প্রতি ঘৃণা বা আক্রোশ বশতঃ পার্থক্য তৈরী করা। জয়-বিজয় শব্দের ভেদ তৈরীর পিছনের "Rationale" টা তাই একটু জটিল। এটাকে তাই উগ্র সাম্প্রদায়িকতা বলে নাকচ করে দেবার আগে একটু খতিয়ে দেখা দরকার। আরেকটু বুঝিয়ে বলি।

ইরানে ইসলামিক revolution এর সময় খোমেনীর বড় পোস্টারে জয়-মাল্য ঝুলিয়ে বড় র‌্যালি বের করা হত। ছবি সম্বলিত এই শোভাযাত্রাকে অনেকেই ইসলামের মূল একেশ্বরবাদী দর্শন এর পরিপন্থী বলবেন এবং এটা কিছুটা ব্যক্তিপূজার পর্যায়ে পড়ে বলে মন্তব্য করবেন। কিন্তু সবই চলতো ইসলামের নামে। পোস্টার সহ বিক্ষোভ এর ব্যাপারটা স্বাভাবিক সাংস্কৃতিক প্রসার প্রক্রিয়ায় ইরানে ঢুকে পড়ে। কিন্তু এর দর্শনগত তাৎপর্য্য কেউ খতিয়ে দেখেননি এবং Non-Muslim বিক্ষোভরীতির সাথে যে ইসলামিক বিক্ষোভরীতির একটা স্পষ্ট সীমারেখা টানা দরকার ছিল, এটা ওই হুজুগের সময় কেউ ভেবে দেখেননি।

মোল্লারা এই ব্যাপারে তাই অতি সতর্ক। সাধারণ মানুষ যেন হুজুগে কিছু করে না বসে সেটা খেয়াল রাখা তারা জরুরী মনে করেন। জয়-বিজয় শব্দের সীমারেখাটার ক্ষেত্রেও তারা একই ভাবে দেখেন ব্যাপারটা। "জয়" শব্দটি অনেক কাল ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে ভারতীয় উপমহাদেশে বিভিন্ন অর্চনায়। এইসব ওয়ায মাহফিলে পরিবেশ এমনিই উত্তপ্ত থাকে। বিশাল জন সমাবেশে অনেক উন্মাদনার অবকাশ থাকে। যেহেতু জয় শব্দের একটা অর্চনাগত দ্যোতনা রয়েছে... আবেগের আতিশায্যে তাই অজ্ঞান মুসল্লিরা আরো অনেক কিছু অনুকরণ শুরু করতে পারে যেটা 'শিরক' এর সমতুল্য হবার আশংকা রয়েছে। এই জন্য বাড়তি সতর্কতা।
এটা টের পাবেন মোল্লার কন্ঠস্বরে। বাক্যটি তিনি শুরু করেছেন "খবরদার" শব্দ যোগে।
আরো লক্ষণীয় যে, "জয়" - এর পরিবর্তে তিনি কোন আরবী-ফার্সি শব্দ ফেঁদে বসেননি। ( "জিন্দাবাদ" গোত্রীয় )। বরং বাংলা থেকেই ভিন্ন শব্দ চয়ন করেছেন। অর্থাৎ মূল উদ্দেশ্য ছিল ভিন্নতা সূচিত করা, ( বহু যুগ আগের সেই দুই রোযার নিয়ম এর মত)......সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দেয়া নয়।
এখন ফলাফলে , সাম্প্রদায়িকতা ছড়াতে পারে। কিন্তু "উদ্দেশ্য" আর "ফলাফল" কে ঢালাও ভাবে দেখা বোধ হয় ঠিক হবে না। সজ্ঞানে সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানো গুরু অপরাধ সবাই জানেন। কিন্তু মোল্লাকে মনে হয় না সেই অপরাধে দোষী করা যাবে।

আপনি আবার Video-র ওই অংশটি দেখুন আমার point গুলো মাথায় রেখে ... দেখবেন একই কথা ভিন্নরকম শোনাচ্ছে।

"শ্লেষের সাথে "ভাই" ডেকে হিন্দু-মুসলমানে ফারাক এবং বিদ্বেষ বুনে দেওয়ার সূচনা এখানেই।"

সত্যি, তিনবার ওই অংশ টুকু দেখার পরও আপনার উল্লিখিত "শ্লেষ" টুকু খুঁজে পেলাম না। বাকি পাঠকরা একটু যাচাই করে দেখবেন আরেকবার। যদি কোন হিন্দু ভাই আহত হয়ে থাকেন, তবে মোল্লার পক্ষ থেকে এ মক্তবে ক্ষমা চেয়ে নিলাম।

২) উদ্ধৃতি
রাম এবং কৃষ্ণা, দু'টাই এক আল্লাহকে বিশ্বাস করতো। ইতিহাসে আছে এটা। ইতিহাসের উৎস নিয়ে কিছু না বলে.........

হা হা হাসি মোল্লা এখানে যে ব্যাপারটা বলতে চেয়েছেন তা খুব সম্ভব এরকম.........

রাম ও কৃষ্ণ ভগবানে বিশ্বাসী ছিলেন। সমকালীন মুসলিম চিন্তাবিদ যারা "Comparative Religion" নিয়ে গবেষণা করেন তারা দেখিয়েছেন, একদম শুরুর দিকে হিন্দু ধর্মে 'এক' ভগবান এর দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে... এবং তাঁর বহুরূপ এর কথা বলা হয়েছে। পরবর্তীতে "বহুরূপ" এর মানে টা পাল্টে গিয়েছে সময় এর সাথে সাথে। রাম ও কৃষ্ণ যদি সেই বহুরুপী "এক" ভগবানের পূজারী হন, তাহলে ধর্মপ্রাণ একজন মুসলমানের সাথে তার মৌলিক কোন পার্থক্য নেই---- উভয়ই সেই সর্বময় স্রষ্টার বিশ্বাসী। সেই অর্থে তারা আল্লাহকে বিশ্বাস করতেন। এই প্যারাটা লেখার সময় একটু সতর্ক ছিলাম যেন কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না পড়ে। অজান্তে কোন অসন্মান প্রকাশ হয়ে থাকলে তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিলাম আগে থেকেই।

৩) ধর্মভীরু মানুষের জন্য প্রতিবাদের সুযোগ নেই। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে "আল্লাহ!" এবং "আছে!" বলতে গিয়ে আগের কুৎসাও গলধকরণ হয়ে যায় অজান্তেই।

উহু ! বলতেই হচ্ছে mis-representation. "আছে" "আছে" বলার তোড়ে যেন সবকিছুতে সায় না দিয়ে বসি এই ব্যাপারটা মোল্লা বার কয়েক স্পষ্ট করেছেন। আপনি পূর্ববর্তী পর্ব গুলোর কথা একদম আলোচনা থেকে বাদ দিয়ে ফেলেছেন। একটা উদাহরণ দেই, মোল্লা বলছিলেন,

" আমাদের সবকিছুতে ? --- জনতাঃ আল্লাহু আকবার!!
নামাযের মধ্যে ? ---- জনতাঃ আল্লাহু আকবার
জিকিরের সময় ? --- জনতাঃ আল্লাহু আকবার
দোকানের মাল চুরির সময় ??? "

---- এবার জনতা চুপ ! তারপর হাসির রোল। এখানে হাস্যরসের মাধ্যমে মোল্লা এটাই বলতে চাইলেন যে সব কিছুতে সায় দিতে গিয়ে নিজের বিচার জ্ঞান যেন হারিয়া না ফেলি। "প্রতিবাদের সুযোগ নেই" এটা বলা মনে হয় ভুল। বরং বয়ানের ভিতর নানান রসাত্মক টোপ ফেলে মোল্লা এটাই যাচাই করছিলেন যে সুযোগ দেয়া হলে জনতা প্রতিবাদ করে কি না।

৪) "তোদের কুফরী চ্যানেলে লাথি মারি !"

এই একটা ক্ষেত্রে, ঘৃণার বীভৎস বহিঃপ্রকাশের যে অভিযোগ আপনি এনেছেন তার সত্যতা নিয়ে আমি প্রশ্ন তুলবো না। মানছি আপনার অভিযোগ। Defend করার মত কিছু বলবার নেই, তবে "অর্ধ-শিক্ষিত" বলে Alienate করে দেয়া মোল্লার ঘৃণার শেকড়টা আমি ধরতে পারি। নিচের বিশ্লেষণ টুকু পড়লে বীভৎসতার মাত্রা কিছুটা লঘু বলে মনে হবে হয়ত। অন্তত তাকে আর "পিশাচ" মনে হবে না। হাসি

সমস্যাটা আমাদের অতীব মেরুকৃত সমাজের। এ সমাজের গণমাধ্যমে মোল্লা শ্রেণী ব্যাপক ভাবে UNDER-Represented. সমাজের স্বচ্ছল অংশের কেউ মাদ্রাসা শিক্ষায় যায় না। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার গুলো থেকেই আজকের আলেম, খতিবরা উঠে আসে। বারো তের বছরের আলেমি শিক্ষার পর যখন তারা একটু একটু করে সমাজের বড় চিত্র আবিষ্কার করেন তখন তারা বুঝতে পারেন গণমাধ্যম, শিল্প, অর্থনীতি সবই নিয়ন্ত্রিত সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর একদল মানুষ দ্বারা।
At one point মোল্লা wonders, 'Is it All about "them" ?'
মোল্লা শ্রেণীতে এই insecurity কাজ করে --- বাইরে থেকে ধরা যায় না।
আপনি বয়ানের বিভিন্ন অংশে খেয়াল করবেন মোল্লা বলছেন,
" আমাদের ইসলামে গান আছে না নাই? আরবের বিয়ে অনুষ্ঠানে বাচ্চারা গান করত ... bla bla" অর্থাৎ "We are not totally void of Art"

মানুষ মাত্রই প্রকাশিত হতে ভালোবাসে। গণমাধ্যমে মোল্লার একমাত্র বন্ধু 'ইনকিলাব' - ও যখন তাদের পাতায় মোল্লাকে জায়গা দেয় না তখন নিজের অজান্তেই মোল্লার ক্ষোভ বেরিয়ে আসে,......
" লাথি মারি তোদের কুফরী চ্যানেলের"

অনেক বক বক করলাম ... মন্তব্য প্রকাশিত হলে বাধিত থাকবো।
সচলে UNDER-represented মোল্লার side of the story নিয়ে অন্তত একটা মন্তব্য থাকবে। Video টা আরেক বার দেখে নিবেন ।

ধন্যবাদ

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভিন্নমত খুব ভালো ভাবে তুলে ধরেছেন। ভালো লাগলো।

কথা দিচ্ছি কাল সকালের মধ্যেই বিস্তারিত জবাব দেওয়ার। এই মুহূর্তে ল্যাবে বসে সিমুলেশন করে যাচ্ছি। মন খারাপ

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

বিলম্বের জন্য দুঃখিত। লাইফ হ্যাপেন্স। হাসি

আমার হয়তো কিছু প্রেজুডিস আছে, তবে তা "ধর্মের বিরুদ্ধে" না। আমি নিজে খুবই বিশ্বাসী মানুষ। তবে, আমার বিশ্বাস এতটা ঠুনকো না যে একটা শব্দের ধাক্কায় তা ভেঙে পড়বে। আমি ধর্মকে সংস্কৃতি বা রাজনীতির উপর চাপিয়ে দেওয়ার বিপক্ষে। এটা প্রেজুডিস হয়ে থাকলে আমি খুশি মনেই দোষী। মানুষ যেকোনো কিছু বিশ্বাস করতে পারে। তাই বলে সেটা জগতের নিয়ম হিসেবে আরোপ করা অনুচিত। বিশ্বাসের ব্যাপারে এ-কারণেই কোনো প্রশ্ন নেই। এটার যার যার অভিরুচি।

আপনি "জয়" শব্দটি নিয়ে যা বললেন, তা অনেকাংশেই অপ্রাসঙ্গিক। ধর্মের বিভিন্ন বিধানের পেছনে কী কী চিন্তাভাবনা কাজ করেছে, তা নিয়ে আমি কিছু বলিনি। আমার আপত্তি "জয়" শব্দটাকে হিন্দুর শব্দ বলায়। বলুন দেখি, "জয় বাংলা" কি তাহলে হিন্দুর শ্লোগান? এই মোল্লার ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্সের জন্য আমি সমাজে বিরোধের বিষ ছড়ানো মেনে নেবো কেন? আমি খুব স্পষ্ট এবং উচ্চকিত কণ্ঠেই এই মোল্লাকে সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানোর জন্য দায়ী করবো।

সাম্প্রদায়িক চিন্তা ছড়ায় কীভাবে? "এই কাজটা মুসলমানের, ওই কাজটা হিন্দুর" -- এভাবেই তো? সেটা কি করা হয়নি? সাধারণ, স্বাভাবিক ব্যাপারেও বিরোধ তো এভাবেই ছড়ায় এরা।

দ্বিতীয় প্রসঙ্গে বলি, ৭০+ মিনিটের বয়ানে হুজুর সাহেবের যথেষ্ট সুযোগ ছিলো এই প্রসঙ্গ পরিষ্কার করার। যেই দাবি তিনি করেছেন, তা জোকার নায়েক ঘরানার লোকজনও করে থাকে। যদি প্রবাসী হয়ে থাকেন, তাহলে জানবেন যে বহু কষ্টে আমরা মুসলমানদের মার্জিত, ধৈর্যশীল, এবং পরোপকারী একটা ভাবমূর্তি তৈরির চেষ্টা করি। এই রকম বেমক্কা দাবিগুলো বরং সেটাকেই হালকা করে দেয়। যদি প্রবাসী হয়েও নিজের জীবনকে স্রেফ বাসা ও মসজিদের মধ্যে সংকীর্ণ করে রাখেন, তাহলে হয়তো বুঝতে কষ্ট হবে। ইচ্ছা রইলো এ-নিয়ে বিস্তারিত লিখবার।

তৃতীয় কথাটি মেনে নিলাম। ধরে নিলাম আমার বোঝার ভুল হতে পারে। অসম্ভব না।

চতুর্থ অংশটি তো মূলত পর্যবেক্ষণ। ইনফিরিওরিটি থেকেই অনেক কিছু উৎসারিত, তা তো দু'জনেই মানি। ব্যক্তিগত ব্যাপারে বলতে পারি, ধর্ম-বিরোধী কিছু লেখা আমার উদ্দেশ্য নয়। "ধার্মিক" না হলেও বিশ্বাসী আমি নিজেও, তবে ধর্মের অপব্যবহার নিয়ে আমার তীব্র আপত্তি আছে।

মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। সচলে মন্তব্যটি প্রকাশিত হতে দেখে আমিও খুশি। ধর্ম নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা সব সময়ই স্বাগত, শুধু সচলকে ধর্মের পক্ষে-বিপক্ষে কোনো প্রচারের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেখতেই আপত্তি আমার।

ভেড়া এর ছবি

হাহা , আহত প্রেম ।।।

নীল ভ্রমর [অতিথি] এর ছবি

ইশতি ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ ব্লগটার জন্য। তবে অতিথি মোল্লার মন্তব্যের পর ব্লগটাকে প্রিয়তে যোগ করলাম।

আরেকটা ক্রেডিট দিতে চাই ইশতি ভাইকে। আপনার থান্ডা মাথার গালিবিহীন ব্লগটা সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে লিখা আমার পড়া অন্যতম ব্লগ। কোন সাম্প্রদায়িক লোকও এই ব্লগ পড়তে insecured feel না করে আত্মপক্ষ সমর্থনের ভরসা পাবে। এতে কারো ক্ষতিতো না-ই বরং সবার-ই লাভ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।