ফিনিক্স পাখির গান

নীল রোদ্দুর এর ছবি
লিখেছেন নীল রোদ্দুর [অতিথি] (তারিখ: সোম, ২১/০৬/২০১০ - ২:৩৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

লেখিকা হওয়ার কোন যোগ্যতাই আমার নেই। কারন, আমি হলাম বাদশাহী আলসেখানার আলসেদের মত, লিখতে আমার মহা আলিস্যে। আর যদিও বা কিছু ছোট ছোট লেখা লিখে ফেলি মাঝে মাঝে, সেগুলো জনসাধারণের পাঠের উপযুক্ত মনে হয় না আমার। তাতে থাকে আমার একান্ত ব্যক্তিগত কিছু অনুভূতির ছোঁয়া। পানিতে নেমে এখনও কাপড় ভেজার ভয় আমার কাটেনি। কেন যেন, ব্যক্তিগত অনুভূতিগুলোকে আমার মনের কুঠুরিতে সযত্নে লালিত মুহূর্ত করেই রাখতে ভালো লাগে। তাতে যদি আনন্দ থাকে, আমি মনে মনে হাসব, চেহারার আয়নাতে তার ভাসা ভাসা ছাপ পড়ে রইবে। তাতে যদি বেদনা থাকে, তবে আমার কপোল বেয়ে নিঃশব্দে জল গড়িয়ে পড়বে। কিংবা যদি খুব সাদামাটা কোন ব্যাপার হয়ে থাকে, তবে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে নির্লিপ্ত হয়ে বসে রইব। এই স্বাধীনতাটুকু কখনই হারাতে চাই না। তাই বিখ্যাতদের এড়িয়ে যেতেও ভালো লাগে, বিখ্যাত হতেও ভয় লাগে। আমার সহজ সরল নিটোল জীবনে কখনও বার্জার কিংবা এলিটের ইলাস্টিক পেইন্ট পড়ে যাক, সে আমি চাই নে। চেহারায় এখনও আমার খানিকটা কিশোরী সুলভ লালিত্য রয়ে গেছে। আর মায়ের কাছে, ভালোবাসার জনগুলোর কাছে আদুরে গলায় করি শিশুর মত আবদার। ওইটুকু হারালে আমি একেবারে খাঁটি মানব যন্ত্র হয়ে যাব।তাইতো আমার এতো আড়াল আবদার। অফিস, বিশ্ববিদ্যালয় আর বাসার বাইরে কাউকে চিনি না। চিনে ফেলার সম্ভাবনা থাকলে আগে ভাগে পালিয়ে বাঁচি। যোগাযোগের এই যুগে বসেও নেট বন্ধুতা আর টেলিফোনে সখ্যতা দারুন ভিতীকর আমার কাছে। এগুলো আমার কাছে প্রয়োজনে যোগাযোগের মাধ্যম, এর চেয়ে বেশী মূল্য পায়নি। সেই যে একবার, কলেজের বন্ধুরা মিলে গিয়েছিলাম পিকনিকে, সেখানে গিয়ে পুকুরের জলে পা ডুবিয়ে জলকে মুকুর বানিয়ে নিজের রূপে মুগ্ধ হয়েছিলাম, ভুলিনি তা।

আরেকবার জাহাংগীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতকালীন পাখি দেখতে গিয়ে গাছে চড়ে বানরী খ্যাতি পেয়েছিলাম, আফসোস আমার বানর সখাকে খুঁজে মরি। শৈশবে গাছে চড়তে পারিনি বলে কি জীবনেও সে সাধ মেটাবোনা? বরং ভালোই হয়েছে, কিছু শিশুসুলভ সাধ অপূর্ণ রয়ে গেছে বলে আমার শৈশবও এখনো কাটেনি। আমার ছোট বোন আমাকে ডাকে বাবুনী, ইলেকট্রিসিটি চলে গেলে চার্জার নিয়ে যখন পড়তে বসি, আমার মুখখানির দিকে আমার ছোট্ট বুবুনীটা অপলক তাকিয়ে থাকে, মাঝে হঠাৎ বলে ওঠে, তুমি আসলেই বাবু।আমি দেই কষে একটা বকা। ইঁচড়ে পাকা মেয়ে কোথাকার!

বুয়েটে যখন তরতাজা বছর, তখন এক স্ট্রাইকের দিনে দেয়াল টপকে ক্যাম্পাসে ঢুকে অ্যাডভাইজার স্যারের কাছে রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে দিয়েছিলাম তাকে মহা চমকে! সে রিতীমত আমাকে জেরা করেছিল, ঢুকলে কিভাবে? আমি তো লাজুক লতাটির মত মাথা নীচু করে আছি দাড়িঁয়ে। বলিনা বলিনা। শেষে যখন বলে দিলাম, স্যার দেয়াল টপকে, স্যার যে বিখ্যাত হাসি খানা দিলো, সে আমি মরার আগেও ভুলব না।

ডিকেডি স্যারকে ভয় পায় না, এমন ছাত্রছাত্রী এখনো বুয়েটের মেক্যানিকাল ডিপার্টমেন্টে আসেনি। সেই স্যার কে দেখেছি মায়া গোপন করতে, অন্য স্যারকে দিয়ে খোঁজ নেয়াতে, তিনটি বালিকা কেন চুপসে আছে উৎসবের এক কোণে! স্যারের পড়ানোর ধরনে আমি স্যারকে শিক্ষক হিসেবে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছিলাম। সেইদিন দেখেছি তার পিতৃরূপ। আমরা আবার আজকালকাল ছেলেমেয়ে তো। শিক্ষকদের নামের শেষে যে স্যার উচ্চারন করতে হয়, তা মনে রাখা বাহু্ল্য মনে করি। কিন্তু আমি বড়ই গুরুভক্ত। দীপক কান্তি দাশ স্যারকে আমার সামনে কেউ ডিকেডি বললে বেহায়ার মত শুধরে দিয়ে বলি, ডিকেডি না, ডিকেডি স্যার।

ফুটবল গ্যঞ্জাম আমরাও পেয়েছি। ব্রাজিল, আর্জেনটিনা, ফ্রান্সের গোল বন্যায় চিৎকার দিয়ে উল্লাসে মাতব বলে টার্ম জ়টে পড়তেও কখনো আমরা দ্বিধা করিনা। এইবার হল ভ্যাকান্টের পরের দিন ভালবাসার ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখি, ক্যাম্পাস এখন স্কুল ছাত্রদের দখলে। ভীষন হাসি পেয়ে গেল। মনে পড়ে গেলো প্রথম বর্ষের প্রথম দিনের কথা। ওএবির গোলক ধাঁধায় পথ হারিয়ে ক্লাস খুঁজে না পাই। এক অচেনা ছেলেকে তার অজান্তে অনুসরণ করে দেখি, সে আধাঁরে হারালো। আমি দাড়ালাম থমকে! এই অন্ধকারে ঢুকবো? এইখানে কি কোন ক্লাস থাকতে পারে? ছেলেটা এর মধ্যে ঢুকে আর বেরোচ্ছে না কেন? দুরু দুরু বুকে আমিও পা বাড়ালাম সেই অন্ধকারে। আধাঁর পেরিয়ে দেখি, সেই্খানে এক আদ্যিকালের ক্লাসরুম এবং সেটাই বিখ্যাত, ওএবি ২২২! জানালা দিয়ে দেখা যায়, স্কুলের বাচ্চাগুলো ক্লাসে মনোযোগ না দিয়ে খাতার পাতা ছিড়ে চিড়িয়াখানার বাঁদরকে কলা ছোড়ার মত করে আমাদের ক্লাসের দিকে ছুড়ে মারছে।

তৃতীয় বর্ষে পা দিয়েই উড়তে শিখেছিলাম। ক্লাস বাং মারা, ক্যাফেটরিয়া নিজেদের দখলে নেয়া, মেক্যানিকালের ছেলেবন্ধুদের সাথে ক্যাম্পাসে নতুন নতুন পাখি দেখা এবং দেখানো, অটো, সেশনালের রিপোর্ট কপি করা, ক্লাস টেস্ট না দেয়া, নবাগত বালক স্যারকে রিতীমত উপেক্ষা করে পিছনের বেঞ্চের বন্ধুর সাথে আড্ডা মারা এহেন কাজ নেই যা করিনি। সেইসাথে শুরু হল আমার বাঁধনে পদচারনা। আড্ডাবাজিতে রাতারাতি খ্যাতি পেয়ে গাদাখানেক জুনিয়র সাথে নিয়ে রাত সাড়ে নয়টা দশটা পর্যন্ত শহীদ মিনারে হৈ-হুলোড় কিছুই বাদ দেইনি।ক্লাশের বন্ধুরা ডাকে ভ্যাম্পায়ার! ক্যাম্পাসের দেয়ালে দেয়ালে দলবল নিয়ে পোষ্টার সাঁটি আর জায়গায় জায়গায় প্রোগাম বুঝে ব্যানার ঝুলাই। নিজেকে বেশ বড় বড় লাগে তখন। এসব করে টরে মনে হয়েছে, জীবনের রংগুলো সবই দেখে নিয়েছি। কিন্তু রঙ দেখা যে এখনো বাকি, সে আমি জানি।

সুইডেনে স্বপ্নসাধের বায়োমেডিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্সে চান্স পেয়ে খুশির রেশ না কাটতেই দেখি, ফাঁকা ফাঁকা লাগে! মনে হয়, পায়ের নিচ থেকে ঝুর ঝুর করে সরে যাচ্ছে মাটি। মামনির আদর করে সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গানো হাত কেমন যেন ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। ছোট দুটো ভাই বোন যেন জোড়া চড়ুই পাখির মত উড়ে চলে যাচ্ছে। আমাকে ঘরে না দেখলে বাবা অস্থির হয়ে যায়, বাবা আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, না আমারই ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে! শেষবার যখন আমি আর আব্বু ট্রেনে চড়ে ঢাকায় ফিরছিলাম, সেদিনের গল্পগুলো, গাছগুলো, সবুজ মাঠ গুলো সব যেন হারিয়ে যাচ্ছে। অফিসের ট্যুরে নীলফামারীর নীলসাগরে গিয়ে হাতে মিউজিক বক্স নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়েছিলাম পানিতে পা চুবিয়ে।কয়েকটা জলফড়িং ঘুরছিল আশেপাশে।দেশময় সোনালী ধান আর সোনালু ফুলের ঝুলের গায়ে শেষবিকেলের যে রোদের ছোঁয়া দেখেছি, সব আমাকে পিছনে ফেলে যেতে হবে।সুইডিশ এম্বাসীর ডাকের অপেক্ষায় আছি কেবল।

মাথায় এখন নতুন চিন্তা। ভিসা, বাসা আর বেঁচে থাকার খোরাক যোগাতে হবে নিজের জন্য। সেই সাথে স্বপ্ন গড়া। একটা একটা করে বইয়ের পাতা উল্টাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে দারুন কিছু গবেষনায় যুক্ত হব, সেই আশা মনে। দেশের মাটি ছেড়ে যাবো, একটা মিশন নিয়ে। সেই মিশনে হেরে যাবার কোন পথ খোলা নেই আমার জন্য। তাই এখনি, মনোযোগ বিচ্যুত হতে পারে, এমন সব কিছু থেকে সরিয়েছি নিজেকে। কিন্তু নিজের আত্মাটাই তো এখানে। বাসে চড়ে ঘরে ফেরার মুহূর্তে মনে হয়, যে পথে পা বাড়ালাম, সে পথকে টেনে আমার দেশের দিকে আনতে পারবো তো। বিজয়ীনির বেশে আমার শাড়ির আঁচল উড়বে তো দিন শেষের পাগলা হাওয়ায়? নিশ্চিত স্থবির জীবনের প্রতি আমার মোহ নেই, মোহ আছে এই লড়াইয়ের প্রতিই। তাই এই অনিশ্চয়তা আমার কাছে স্বাগত। পাহাড়ী মেয়ের মত এইবার পাহাড় ডিঙ্গাবো, জলকন্যার মত এইবার জলে দেব ডুব, ফিনিক্সের মত এইবার উড়বো আকাশে। কিন্তু পুড়ে কি ছাই হব? দেশের মাটির বুকে সমাধিটুকু পাবো তো শেষটাই? জানিনা। জানার সময় হলে জেনে যাবো।শুধু প্রান আর স্মৃতি, আমার নিঃশ্বাসকে যেয়ো না নিঃস্ব করে।


মন্তব্য

ওডিন এর ছবি

নিশ্চিত স্থবির জীবনের প্রতি আমার মোহ নেই, মোহ আছে এই লড়াইয়ের প্রতিই।

আর এই মোহের জন্যেই আপনি পারবেন! জীবনটা এইরকমের অনেক ছোট ছোট লড়াই দিয়ে ভরা। সবমিলিয়ে একটা এন্ডলেস, এটারনাল ওয়ার। হারজিত ব্যপার না। লড়ে যেতে হবে- এইটাই একমাত্র সত্য। লড়াই না থাকলে কি আর থাকলো জীবনে?

শুভকামনা রইলো। হাসি

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

নীল রোদ্দুর এর ছবি

ধন্যবাদ ওডিন। আসলেই, লড়াই না থাকলে কি আর থাকলো জীবনে?
.
--------------------------------------------------------
যখন প্রাণের সব ঢেউ
জেগে ওঠে, কথা বলে, রক্তের আশ্চর্য কলরবে
বৃষ্টির দুপুরে মনে পড়ে
বর্ষার মতন গাঢ় চোখ মেলে তুমি আছ দু'দিনের ঘরে।।
[শামসুর রাহমান]

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

স্পর্শ এর ছবি

দেশ ছাড়ার আগে, তা যতই সাময়িক হোক, সবার মনেই অনেক সুখ স্মৃতি অনেক বিষাদ ভর করে। সময়ে কেটেও যায়। কারো বেশি কারো কম। ও পথে যারা হেঁটে এসেছে তাদের সবারই এমন হয়েছে। শুভকামনা রইলো।

'দেখা হবে বিজয়ে' চলুক


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

নীল রোদ্দুর এর ছবি

দেখা হবেই বিজয়ে চলুক.
--------------------------------------------------------
যখন প্রাণের সব ঢেউ
জেগে ওঠে, কথা বলে, রক্তের আশ্চর্য কলরবে
বৃষ্টির দুপুরে মনে পড়ে
বর্ষার মতন গাঢ় চোখ মেলে তুমি আছ দু'দিনের ঘরে।।
[শামসুর রাহমান]

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১. সবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হবার দরকার নেই, সেটা সম্ভব নয়। দু'হাত খুলে লিখে যান, পোস্ট করে যান - বিষয়বস্তু, আকার ইত্যাদি কোন ব্যাপার না। মডারেটরদের বিবেচনায় পার হলে পাঠকরাও কিন্তু দু'হাত ভরে ফেরত দেবে। তখন দেখবেন আলসেমী, জড়তা সব পালাবার পথ পাবেনা।

২. ডিকেডি স্যারের ব্যাপারে আপনি যেমনটা বললেন, গত বিশ বছরে আমি কারো কাছ থেকে অমনটা শুনতে পাইনি। আমার নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলাই বাহুল্য। হয় আপনি অত্যন্ত দুর্লভ ভাগ্যের অধিকারিণী, অথবা আমরা সবাই অন্ধ।

৩. এখনই পথের শেষ নিয়ে ভাবার দরকার নেই। যদি মনে করেন পথের শুরুটা খুঁজে পেয়েছেন তাহলে নির্দ্বিধায় পথ চলা শুরু করে দিন। যুদ্ধটা পথ চলার অংশ, মধ্যবর্তী সাফল্যগুলোও তাই।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নীল রোদ্দুর এর ছবি

আমি দূর্লভ সৌভাগ্যের অধিকারিণী। সেই সাথে ঝিনুকে মুক্তো খোঁজা মানুষ। যা সবার চোখ এড়িয়ে যায়, তাই আমি নীরবে খুঁজে বেড়াই। মাঝে মাঝে পেয়েও যাই। হাসি.
--------------------------------------------------------
যখন প্রাণের সব ঢেউ
জেগে ওঠে, কথা বলে, রক্তের আশ্চর্য কলরবে
বৃষ্টির দুপুরে মনে পড়ে
বর্ষার মতন গাঢ় চোখ মেলে তুমি আছ দু'দিনের ঘরে।।
[শামসুর রাহমান]

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- বেশ! শেষের প্যারাটা না থাকলে আমার কাছে আরও ভালো লাগতো! কী হবে না হবে সেটা এখনই ভাবার দরকার কী, 'এখন' নিয়েই এখন ভাবা উচিৎ, যেমনটা পাণ্ডব'দা বললেন!

দেশ ছাড়ার আগে ঘরের খাবার কম খান। মোড়ের দোকানে, রাস্তার পাশের টং দোকানে, এখানে সেখানে, যা খুশি তা খেয়ে নেন প্রাণভরে। সুইডেন গিয়ে ঘরের খাবারের জন্য না, মন কাঁদবে ঐ জিনিসগুলোর জন্যই।

আর ঘরের মানুষের ব্যাপারে বললেন তো! ঐটা নিয়ে কাজ করছি, কোনো সমাধান পাই নি এখনো। ছেড়ে আসার সময়ের 'শূন্য অনুভূতি'টা হবেই, সবারই হয়। একটা ছোট্ট উপদেশ হলো, এখন থেকেই নিজেকে কাজে-অকাজে ব্যস্ত রাখার অনুশীলন শুরু করে দিন। এই অনুশীলন দেশ ছাড়ার পরেও ধরে রাখতে পারলে দারুণ ফল পাবেন।

আর হ্যাঁ, সুইডেন থেকে জর্মনদেশ খুব বেশি দূরের না। বিশ তিরিশ ইউরো হলেই বিমানের টিকেট পেয়ে যাবেন নিঃসন্দেহে। দেশে পরিবার ফেলে আসলেও ভার্চুয়াল এই পরিবারে আপনি সবসময় স্বাগতম। পরিবারের সাথে বন্ধুতা করতে হয় না, অটোমেটিক হয়ে যায়।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

নীল রোদ্দুর এর ছবি

ধুগো দাঃ এখনি মিস করি তো! পলাশীর ভাজাপোড়া, মানিকের চা, শীতকালের ভাপাপিঠা আর কড়া ঝাল দেয়া আম মাখা, চোখের জল না লুকানো যায় না। মন খারাপ

আমন্ত্রন নিলাম সাদরে। যেখানে একটা আস্ত পরিবার আছে, তাও আবার বাঙ্গালী পরিবার, সাথে আছে ভাস্তি, সেখানে সময় পেলে সুযোগ পেলে যাবো অবশ্যই। আমি এমন জমিয়ে ফেলি, দেখবেন। হাসি.
--------------------------------------------------------
যখন প্রাণের সব ঢেউ
জেগে ওঠে, কথা বলে, রক্তের আশ্চর্য কলরবে
বৃষ্টির দুপুরে মনে পড়ে
বর্ষার মতন গাঢ় চোখ মেলে তুমি আছ দু'দিনের ঘরে।।
[শামসুর রাহমান]

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

রণদীপম বসু এর ছবি

কথার সাথে কাজের কোন মিল নেই !

বললেন কিনা লিখতে জানিনা। অথচ ঈর্ষা করার মতো চমৎকার একটা লেখা দিব্যি ঝেড়ে দিলেন !

বললেন ব্যক্তিগত অনুভূতিগুলোকে আমার মনের কুঠুরিতে সযত্নে লালিত মুহূর্ত করেই রাখতে ভালো লাগে। অথচ গরগর করে সব বলে দিলেন ! এমনভাবেই বললেন যে আমি চোখ বন্ধ করে একটা মায়া-জমানো মানব-বানরিকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ! হা হা হা !

প্রিয়জন প্রিয়ভূমিকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে হলে ছোঁয়ার দূরত্ব ছেড়ে অনেক দূরে যেতে হয়। এ সৌভাগ্য কিন্তু সবার হয় না। আপনার হয়েছে। জীবনে এবং লেখালেখিতে অনেক কাজে লাগবে তা।
লিখে যাবেন নিয়মিত। তাতে সুখগুলো আরো সুখময় হবে, কষ্টগুলো গলে গলে ঝরে যাবে।

ভালো থাকবেন। অভিনন্দন রইলো।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নীল রোদ্দুর এর ছবি

রণদীপম দাঃ খুব ভালো লাগলো আপনার কথা শুনে। আসলে আমার অনেক কবিতা আটকে আছে মেইল বক্সে। কবিতাগুলো হলাম আমি। সেই আমি কে মাঝে মাঝেই বড় অচেনা লাগে। আমার কেমন যেন ভয় লাগে, সেই আমি কি আদৌ এই পৃথিবীতে থাকার যোগ্য। বড় আদরের কাব্য তো, যাতে ব্যথা না পাই, তাই লুকিয়ে রাখি বুকের মধ্যে।.
--------------------------------------------------------
যখন প্রাণের সব ঢেউ
জেগে ওঠে, কথা বলে, রক্তের আশ্চর্য কলরবে
বৃষ্টির দুপুরে মনে পড়ে
বর্ষার মতন গাঢ় চোখ মেলে তুমি আছ দু'দিনের ঘরে।।
[শামসুর রাহমান]

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

ওয়াও, আপনি মেকানিক্যালের ?? কোন ব্যাচ আপু ?? ...

লেখা পড়ে ভাল্লাগ্লো। ...

আর শুভ কামনা থাকলো তো বটেই। ... আমি আবার ঘরকুনো, তবুও স্ব-ডিপার্টমেন্টালদের ভালো কিছু করতে দেখলে বেশ ভালো লাগে...

_________________________________________

সেরিওজা

নীল রোদ্দুর এর ছবি

ভাইয়া, আমি শুন্য তিন! আপনি? আপনি ঘরের জুড়ে থাকেন, আমি থাকি পৃথিবীর এক কোণে। হাসি.
--------------------------------------------------------
যখন প্রাণের সব ঢেউ
জেগে ওঠে, কথা বলে, রক্তের আশ্চর্য কলরবে
বৃষ্টির দুপুরে মনে পড়ে
বর্ষার মতন গাঢ় চোখ মেলে তুমি আছ দু'দিনের ঘরে।।
[শামসুর রাহমান]

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

শুণ্য তিন ?? আহা- আমি শুন্য ছয় ব্যাচ...

শুভকামনা রৈলো আপনার জন্যে, আবারো।

_________________________________________

সেরিওজা

জুয়েইরিযাহ মউ এর ছবি

শুভকামনা... শুভকামনা আর শুভকামনা রোদ্দুরাপু..... হাসি

-----------------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো,
গৃহী হয়ে কে কবে কী পেয়েছে বলো....


-----------------------------------------------------------------------------------------------------

" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি

নীল রোদ্দুর এর ছবি

আজকের যে বিকেলটা উপহার দিলে আমায়, তার চেয়ে বেশী কি কখনো কিছু দিতে পারতে আমায় নির্জলা নীরবতা?.
--------------------------------------------------------
যখন প্রাণের সব ঢেউ
জেগে ওঠে, কথা বলে, রক্তের আশ্চর্য কলরবে
বৃষ্টির দুপুরে মনে পড়ে
বর্ষার মতন গাঢ় চোখ মেলে তুমি আছ দু'দিনের ঘরে।।
[শামসুর রাহমান]

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

জুয়েইরিযাহ মউ এর ছবি

আজ বিকেলে নীল রোদ্দুরের স্নিগ্ধতা দেখা হল...
বেশ লাগলো... হাসি

------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো,
গৃহী হয়ে কে কবে কী পেয়েছে বলো....


-----------------------------------------------------------------------------------------------------

" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি

শরতশিশির এর ছবি

শুভেচ্ছা রইলো। হোম সিকনেস-কে পাত্তা দিতে হয় না। আমি হোমসিক হই না, তবে নিজের ফ্যামিলিকে মিস করি, বিয়ে-দাওয়াত-আড্ডা দেখলে খারাপ লাগে। সব ঠিক হয়ে যায়। আজকাল এই বিশ্বায়তনের যুগে সবাই কিন্তু সবার ফ্যামিলি - খেয়াল করে দেখলে দেখা যায় আমরা সবাই আসলে একইরকম, যতই দেশ-জাতি-বর্ণ-ধর্ম-কৃষ্টি আলাদা হোক না কেন!

যাত্রা শুভ হোক! হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

নীল রোদ্দুর এর ছবি

এই বিশ্ব আমার। কিন্তু আর একটিও দেশ কি আছে, যার মাটিতে দাঁড়িয়ে ভাবতে পারবো, এই দেশটি আমার? আর কোথাও কি একমুঠো মাটি হাতে নিলে তাতে আমার দেশের মাটির গন্ধ পাবো? আর কোথাও কি আমি পরিপূর্ণ আমিত্বের অনুভূতিকে অনুভব করতে পারবো?

ধন্যবাদ শুভকামনাকে। হাসি.
--------------------------------------------------------
যখন প্রাণের সব ঢেউ
জেগে ওঠে, কথা বলে, রক্তের আশ্চর্য কলরবে
বৃষ্টির দুপুরে মনে পড়ে
বর্ষার মতন গাঢ় চোখ মেলে তুমি আছ দু'দিনের ঘরে।।
[শামসুর রাহমান]

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আরে ভাই আগে যানতো! ওডিন, ধুগোদা, শিশিরাপুসহ সবাই ঠিক কথা বলছেন। কাজে ঝাঁপায় পড়েন। আর কাজে অকাজে ব্যস্ত থাকাটাই আসল কথা। সবচেয়ে বড় কথা হল নিজের পছন্দের কাজটা করতে পারার সুযোগ পাওয়া, এই সুযোগ সবাই পায় না! আপনি বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং এ হায়ার স্টাডিস-এ সুযোগ পেয়েছেন জেনে আমার নিজেরইত ধেই ধেই করে এক পাক নেচে নিতে ইচ্ছে হচ্ছে। দেঁতো হাসি আর খুব বেশি একাকীত্বের দিনেতো আমরা সবাই আছিই, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত হতে, মিলে মিশে এক হয়ে যেতে! হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

নীল রোদ্দুর এর ছবি

ওই মিলে মিশে এক হবার মিছিলে আমি যোগ দিলাম ভাইয়া। হাসি.
--------------------------------------------------------
যখন প্রাণের সব ঢেউ
জেগে ওঠে, কথা বলে, রক্তের আশ্চর্য কলরবে
বৃষ্টির দুপুরে মনে পড়ে
বর্ষার মতন গাঢ় চোখ মেলে তুমি আছ দু'দিনের ঘরে।।
[শামসুর রাহমান]

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

তিথীডোর এর ছবি

অনেক অনেক শুভকামনা রইলো আপুনি।
যাওয়ার আগে হয়তো আবার দেখা হয়েও যেতে পারে.. হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

নীল রোদ্দুর এর ছবি

অপেক্ষায় আছি, দেখা হবে। হাসি.
--------------------------------------------------------
যখন প্রাণের সব ঢেউ
জেগে ওঠে, কথা বলে, রক্তের আশ্চর্য কলরবে
বৃষ্টির দুপুরে মনে পড়ে
বর্ষার মতন গাঢ় চোখ মেলে তুমি আছ দু'দিনের ঘরে।।
[শামসুর রাহমান]

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

অতিথি লেখক এর ছবি

বেশ ভাল্লাগলো লেখাটা, শুণ্য তিন বলেই কিনা জানি না, দেশ ছেড়ে যাবার আগের নিজের অনুভূতিগুলোকে তোমার (শুণ্য তিন তাই তুমিই বললাম) লেখায় দেখে খুবই ভাল লাগল। ফিনিক্স পাখির গান যেন না থামে।
____________
ত্রিমাত্রিক কবি
E-mail:

নীল রোদ্দুর এর ছবি

আমি তো থামাতে চাই না। আর তুমি ডাক তো আমার খুব প্রিয়। ছোটরাও তুমি ডাকলে আমার ভালো লাগে। মনে হয় কাছের মানুষ, কাছের মানুষ। ধন্যবাদ, ভালোলাগার অনুভূতির বহিঃপ্রকাশে। হাসি.
--------------------------------------------------------
যখন প্রাণের সব ঢেউ
জেগে ওঠে, কথা বলে, রক্তের আশ্চর্য কলরবে
বৃষ্টির দুপুরে মনে পড়ে
বর্ষার মতন গাঢ় চোখ মেলে তুমি আছ দু'দিনের ঘরে।।
[শামসুর রাহমান]

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।