কবি বলেছেন -

কনফুসিয়াস এর ছবি
লিখেছেন কনফুসিয়াস (তারিখ: রবি, ২৫/১০/২০০৯ - ১২:৫৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কবি বলেছেন, জ্ঞানের কোন শর্টকাট নাই।
কিন্তু আমরা বুদ্ধিমান মানুষ, বোকা কবির কথায় ভুলবো কেন? আমরা তাই জ্ঞানার্জনের জন্যে অসংখ্য শর্টকাট খুঁজে বের করে ফেলি। উচ্চ নম্বরের সিঁড়ি বানাই, পাঞ্জেরী হই, ফোকাস করে করে পড়ি।
ছোটবেলায় কোন এক গল্পে পড়েছিলাম, বালিশের নিচে ভূগোল বই রেখে ঘুমিয়েছে এক ছেলে, রাতের বেলা স্বপ্নের ভেতর তাই সে সারা দুনিয়ার ভূগোল দেখে ফেলেছে।

এই গল্প পড়ে ব্যাপক উৎসাহিত হয়েছিলাম। পরীক্ষার আগের রাতে বালিশের নিচে বই নিয়ে ঘুমানোটা প্রায় অভ্যেসে দাঁড়িয়ে গেছিলো। স্বপ্ন-মামার যেন কোন স্বপ্ন দেখাবে এসব ভেবে কষ্ট না হয়, এ জন্যে যে চ্যাপ্টার পড়া হয়নি, ঠিক ঐ চ্যাপ্টারটাই খুলে রেখে ঘুমাতাম। অবশ্য দুঃখের বিষয়, তেমন কাজে আসেনি এই বুদ্ধি।

আরেকটু বড় হয়ে যখন প্রোফেসর শঙ্কুর সাথে দেখা হলো, খুবই মজা পেলাম। দেখি এই ভদ্রলোক নানান রকম বটিকা নিয়ে ঘোরাফেরা করেন। মৎস্যবটিকা নামের এক জিনিস খাওয়ান তার বিড়ালকে, বিড়াল নাকি আসল মাছের সাথে তার তফাৎ করতে পারে না। নিজের জন্যে আছে ক্ষুধানিবারণ বটিকা। এটাও জব্বর জিনিস, একবার খেলে দুতিনদিন আর খাওয়া লাগে না।

আমি ভাবলাম, এই ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা হওয়া ভীষণ দরকার। অনুরোধ করে একটা লেখাপড়া বটিকা বানিয়ে নিবো, খেলেই যেন লেখাপড়া সব পেটে ঢুকে বসে থাকে। এটা বানাতে বেশি কষ্ট হলে আলাদা আলাদা করেই না হয় বানাতে বলবো- বাংলা বটিকা, কেমিস্ট্রি বটিকা, ফিজিক্স বটিকা।

বড় হতে হতে বুঝে গেলাম, বটিকায় কাজ হবে না আসলে। জ্ঞানের আসলেই কোন শর্টকাট নেই।

সম্প্রতি ইউটিউব ঘুরতে ঘুরতে আমার মনে হলো, নাহ, একটা শর্টকাট হয়তো সত্যিই এখনো আছে, লোকেদের অগোচরে যদিও!

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ফরম নিয়ে কিছু দুই নম্বুরি করেছে কয়েকটা কোচিং সেন্টার। সেখান থেকে ফরম কিনেছিলো প্রায় কুড়ি হাজার শিক্ষার্থী, তারা কেউই নাকি এডমিট কার্ড পায়নি, পরীক্ষায় বসাও অনিশ্চিত। ভুক্তভোগী সেসব শিক্ষার্থীরা ফার্মগেটে মিছিল করেছে, নিজেদের দাবী জানিয়েছে। আমাদের সর্ব-কর্ম-পটীয়সী পুলিশ যথারীতি সেখানে গিয়ে লাঠি চার্জ করে বসেছে। বিশৃঙ্খলা তাদের সহ্য হয় না কি না!

ইউটিউবের একটা ভিডিওতে এটিএন বাংলার সংবাদের একটা ছোট্ট অংশ দেখলাম। সেখানে শিক্ষার্থীদের বক্তব্য এসেছে কিছু, দেখছিলাম, তারপরে দেখি পুলিশদেরও দেখাচ্ছে, তাও দেখছিলাম, এবং সবশেষে দেখলাম, এই ছাত্রদের লাঠিপেটা করা ছাড়াও সাথে ফাও হিসেবে জনৈক পুলিশ অফিসার জ্ঞান অর্জনের সহজ উপায়ও তাদের বাতলে দিচ্ছেন। তিনি সুন্দর ভাবে ক্যামেরার সামনেই শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন, লেখাপড়া পুটকির মধ্যে ভইরা দিবো একদম!

আমি বিস্মিত, হতবাক। এই সাংঘাতিক শর্টকাট দুনিয়ায় আর কারও মাথায় কেন আসলো না?
তাইতো রে ভাই, দিন নেই রাত নেই বই খুলে বসে বসে পড়ালেখা শেখা, তারচেয়ে এটা কতই না কাজের। আমি বারবার রিওয়াইন্ড করে সেই পুলিশ অফিসারের মুখমন্ডল দেখলাম। ইস, বুঝতে পারছি যে এভাবে পেছন দিয়ে লেখাপড়া ভরে ভরে, ইয়ে, আই মিন, করে করে ভদ্রলোকের খুব কষ্ট হয়েছে এতদিন। কিন্তু দেখুন, সেটা কত কাজে এলো! লাঠি সোটা হাতে একেবারে পুলিশ বনে গিয়েছেন। বুঝুন তাহলে!

একটু দুঃখও হলো। এবারের নোবেল ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়ে ফেলেছে বেকুবগুলা, তা না হলে এই পুলিশ ভদ্রলোকের নাম সেই কমিটিতে পাঠিয়ে দেয়া যেতো। ইদানিং কত কিছু করে লোকে নোবেল পায়, ওবামার মত ভাগ্যবান হলে কিছু না করেও পায়। আর, আমাদের পুলিশ অফিসার, এরম চমৎকার একটা আবিষ্কারের যথাযোগ্য মূল্য পাবে না?
তা হয় না।
কবি বলেছেন, নামে নয়, কর্মেই পরিচয়। তাই উক্ত পুলিশ অফিসারকে তার কর্মের উপযুক্ত পুরস্কারে ভূষিত করার দাবি জানাই।

পরিশিষ্টঃ
---------
১।পুলিশের কথাটা একটুও সেন্সর না করেই লিখে দিলাম। ইচ্ছে করেই। আমি দুঃখিত যে, এরকম অশালীন কাজ করেছি বলে আমি একটুও দুঃখিত নই।
২। এটিএন বাংলার সেই সাংবাদিককে ধন্যবাদ, সংবাদ সম্পাদনার টেবলে বসেন যারা, তাদেরকেও অনেক ধন্যবাদ এ অংশটুকু না কেটে এটা টিভিতে সম্প্রচার করেছেন বলে। এই নিউজটা সবার দেখার দরকার ছিলো।


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

এই পুলিশ প্রশাসনের আসলে একটা ওভারহল দরকার। এই ধরনের আচরন আমরা কিন্তু দেখেও এসেছি এতকাল। সংবাদে প্রচার হয়েছে বলে আমাদের টনক নেড়েছে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

ওডিন এর ছবি

আমি বুঝলাম না- একজন ' বাংলাদেশি পুলিশ' এর কাছে আপনারা কিভাবে সভ্য আচরন প্রত্যাশা করেন? আমি কখনোই করি না। এটা হয়ত আমার সীমাবদ্ধতা।

আর জনগনের সেবকদের ব্যপারে আমার এইরকম দৃষ্টিভঙ্গিতে আমিও একটুও দুঃখিত নই।

--------------------------------
I touched her thigh
(And death smiled)

টিটো রহমান এর ছবি

ফুলিশ ব্যাটা তার নিজের ফড়ালেখার িসক্রেট ফাস করি দিল! আশচর্য!
ক্যামেরাম্যানের উচিৎ ছিলো সেই বিশেষ জ্ঞানি অংশটার সবার জন্য উন্মুক্ত প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা।

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

কিসে নোবেল প্রাইজ দেয়া যায় তারে? ফিজিক্সে, কেমিস্ট্রিতে না শান্তিতে? আমার হিসাবে তো হে ইকোনমিক্সেও পাইতারে --ফিজিওলজি বা মেডিসিনেও!!!

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

দুঃখজনক ঘটনা! মন খারাপ
....................................................................................

আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।

সাফি এর ছবি

এই সচিত্র প্রতিবেদনখানাই সচলের মারফতে দেখেছিলাম, কিন্তু তখন বুঝিনি আসলে পুলিশ ভাইজান কাকে কথাটা বলছিলেন, ভুক্তভোগী ছাত্রদের নাকি কোচিং এর কাউকে বা সাংবাদিককে (লেখাপড়া বিষয়ে তার কোন উৎসুক প্রশ্নের জবাবে।

এবার কি হয়েছে সঠিকভাবে জানা নেই, কিন্তু ২০০১ এ আমি যখন বুয়েটে ভর্তির চেষ্টা করছিলাম, তখন অনেকেই কোচিং থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফর্ম কিনেছিলো শুধুমাত্র সিরিয়াল মিলিয়ে বন্ধুরা মিলে পাশাপাশি বসে পরীক্ষা দেবার জন্য। আমি ও আমার বন্ধুরা যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে লাইন দিয়ে ফর্ম কিনেছিলাম। এই প্রায় কুড়ি হাজার ছাত্র কি লাইন বিড়ম্বনা এড়ানোর জন্য কোচিং থেকে ফর্ম কিনেছে কিনা জানা নেই, তবে যাদেরকে কর্তৃপক্ষ ফর্ম বিক্রি করার কোন অনুমতি দেয়নি, তাদের প্রতিহত করা যেমন প্রশাসনের দায়িত্ব তেমনি তাদের থেকে না কিনে এই ব্যবসাকে নিরুৎসাহিত করাও মনে হয় সাধারন নাগরিকের দায়িত্ববোধের মধ্যে কিছু হলেও পরে।

এই মান্ধাতা পদ্ধতি পরিবর্তন করে কবে যে অনলাইনে ফর্ম বিক্রীর ব্যবস্থা হবে !!

আর পুলিশের ব্যপারে কিছু বল্লামনা, এটা নতুন কিছু না বলে। সনি হত্যার সময়েই যথেষ্ঠ ঞ্জান লাভ হয়েছিল এ ব্যপারে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

তবে যাদেরকে কর্তৃপক্ষ ফর্ম বিক্রি করার কোন অনুমতি দেয়নি, তাদের প্রতিহত করা যেমন প্রশাসনের দায়িত্ব তেমনি তাদের থেকে না কিনে এই ব্যবসাকে নিরুৎসাহিত করাও মনে হয় সাধারন নাগরিকের দায়িত্ববোধের মধ্যে কিছু হলেও পরে।
সবাই তো শর্টকাট খুঁজি।

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় তো এবার থেকে শুরু করেছে মোবাইল ব্যবহার করে পরীক্ষার ফরম কেনার সিস্টেম। এখন আগামীবার থেকে অন্য সব ভার্সিটি এরকম কিছু শুরু করলেই তো আর এই সমস্ত ঝামেলার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় না।

হিমু এর ছবি

পুলিশ সম্পর্কে একটা কৌতুক মনে পড়ে গেলো।

নতুন পুলিশ নেয়া হবে। তাদের বুদ্ধিমত্তা যাচাইয়ের জন্যে একটা কাঠের বোর্ডে কতগুলি গর্ত করা হয়েছে। কোনো গর্ত গোল, কোনোটা ছাগু-আকৃতির, কোনোটা চতুর্ভূজাকৃতির। গর্তের মাপে কাটা কতগুলি গোল, তিনকোণা, চারকোণা কাঠের খণ্ড তাদের হাতে দিয়ে বলা হলো, ঠিক গর্তে সেগুলি লাগাতে।

পরীক্ষা শেষ হবার পর পরীক্ষার্থীদের দুই ভাগে ভাগ করা হলো।

১. প্রচণ্ড শক্তিশালী
২. অকাট গাধা

আমাদের এই পুলুশাঙ্কেল কোন ভাগে পড়ে, ভাবছি।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আগের পোস্ট ভিডিওটি দেখিনি। আপনার লেখা পড়ে চালিয়ে দেখলাম। কী অবলীলায় অভিভাবকের মত তিনি একখান বাণী দিলেন। আশ্চর্য!

রণদীপম বসু এর ছবি

কনফু ভাই, আপনার পুলিশ বিষয়ক জ্ঞানের ভয়ানক সীমাবদ্ধতা দেখিয়া আমি অতিশয় ব্যথিত হইলাম ! টিভি ক্যামেরার সম্মুখে বলিয়াই ওই বাহিনীর অতি ভদ্র একজন অফিসারের নম্রতম বাক্যভাষাটি শুনিয়াছেন। ইহাতেই আপনি এত ব্যাকুল হইয়া গেলেন !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

কনফুসিয়াস এর ছবি

রণদীপম ভায়া,
অভিজ্ঞতা সীমাবদ্ধ না আসলে। ঠিক এইরকম একটা কথা অনেক আগে শুনেছিলাম একবার, ভিসি আনোয়ার খেদাও আন্দোলনের সময়, আমরা তখন টিএসসির পাশে জায়গা নিছি, হলে যাওয়া নিষেধ। সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজি, সেই জামা আবার গায়ে থেকেই রোদে শুকাই। আবেগী পোলাপান ঐ জায়গাটার নাম দিলো মুক্তাঞ্চল। এইটা শুনে একজন পুলিশ অফিসার আমার কাছ থেকে ঠিক তিনফুট দূরে দাড়াইয়া বলছিলো, মুক্তাঞ্চল তিনি আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের ...... দিয়ে ভরে দিবেন।
তো, এতদিন বাদে আবার একই ডায়লগ শুনতে পেয়ে, মানে, মন ভাল হয়ে গেল আর কি! বুঝেনই তো, স্মৃতি তুমি বেদনা। হাসি

-----------------------------------
আমার জানলা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায়-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

মূলত পাঠক এর ছবি

রণদীপম বসু যা লিখেছেন সেটা আমারও মত: আমরা সকলেই জানি কী ভাষা ব্যবহার করেন সমাজরক্ষকেরা, তবে এইটা চোখে দেখার পর খানিকটা ধাক্কা লেগেছে। আমাদের আলাপ-আলোচনায় বিশেষ কোনো ফল হবে আশা রাখি না, তবে সেজন্য চুপ করে থাকতে হবে এটাও ঠিক নয়। হয়তো এক দিন অল্প কিছু উন্নতি হবে এই সামান্য আশাটুকু বাঁচিয়ে রাখা যায়।

আলমগীর এর ছবি

ব্যাপার না!

সুমন চৌধুরী এর ছবি

একটা পারিবারিক রসিকতা মনে পড়লো। আমার মামাতো ভাই খুব ছোট থাকতে জিজ্ঞাসা করতো, এটা কে বানাইছে, ঐটা কে বানাইছে ইত্যাদি। তাকে বলা হতো চার পাশে যা দেখ সবই আল্লায় বানাইছে। একবার সে অনেক্ষণ চিন্তা করে প্রশ্ন করলো আচ্ছা পুলিশ? পুলিশও কি আল্লায় বানাইছে..?



অজ্ঞাতবাস

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি মাঝে মাঝে চিন্তা করতাম, পিসি তে পেন ড্রাইভ ঢুকানোর মত যদি মানব শরীরে কোন ব্যাবস্থা থাকত!!

স্পার্টাকাস

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।