ভাইরাসের সাথে ঘরবসতি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
লিখেছেন এস এম মাহবুব মুর্শেদ (তারিখ: বুধ, ২০/০২/২০০৮ - ২:২৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto
১৯৯৯ এর দিকে যখন বিটিটিবি ইন্টারনেট সংযোগ দিল তখন খুব আগ্রহের সাথে সেটার একটা সংযোগ নিলাম। তখন ২০০ মেগাহার্জের একটা পেন্টিয়াম কম্পিটার ব্যবহার করি। অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ১৯৯৫ কিংবা উইন্ডোজ ১৯৯৮।

ইন্টারনেট পেয়েই তো লারেলাপ্পা! এই সাইটে যাই, ওই সাইটে যাই। এই নামাই, সেই নামাই। অফুরন্ত আনন্দ!

এর মাঝে এক বন্ধু একটা ইমেইল পাঠাল। মেইল খুলতেই ঠাস করে ম্যাকাফি এন্টি ভাইরাস একটা উইন্ডো দেখাল যে ইমেইলটিতে ভাইরাস আছে। আমার তো আত্মা প্রায় উড়ে গেল! কিছুক্ষণ পর যখন দেখলাম কোন সমস্যা হচ্ছে না, তখন জানে পানি আসল।

ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখলাম, একটা ভাল এন্টিভাইরাস থাকলে ভাইরাস কিছু করতে পারে না। ভাইরাসের আবার বিভিন্ন রকমভেদ আছে। ট্রোজান হর্স, ওয়ার্ম, ভাইরাস কত কত নাম!

জানলাম ভাইরাস হইল যেইটা যেকোন প্রোগ্রামের ভিতরে ঢুকে পড়তে পারে। সেই প্রোগ্রাম নিজেই তখন একটা ভাইরাসের মতো আচরন করে। ওয়ার্ম হইল নিজে একটা ভাইরাসের মত কিন্তু অন্য কোনো প্রোগ্রামের ভিতর ঢুকে না। আর ট্রোজান হর্স আপনার গোপন তথ্য, সিস্টেমের রিসোর্স ব্যবহার করে বড় কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করে।

তখন নাইট ফ্লাইয়ার নামে একটা ওয়েবসাইটে সোর্স কোড সহ ভাইরাস বিতরন করত। সেখানে গিয়ে দুহাত মেলে সব ভাইরাস ডাউনলোড করলাম। তারপর আমার সেই বন্ধুটাকে একটা ভাইরাস উপহার দিয়ে দিলাম। সেই থেকে আমার ক্লাসে পোলাপাইন আমাকে আর ইমেইল এড্রেস দিত না।

যাইহোক, ভাইরাসের সেই তথ্য আমার বেশ উপকারে আসল। সেই আগ্রহ থেকে সিস্টেম সংক্রান্ত বেশ কিছু শিখে ফেললাম। লিনাক্সের ব্যাপারে জানতে পারলাম। আর যতরকম ক্ষতিকর ব্যাপর ঘটতে পারে সেগুলো থেকে সাবধান হয়ে গেলাম।

এরপর থেকে নিজেকে খুব স্মার্ট মনে করতাম আমি এ ব্যাপারে। ভাইরাস কিভাবে ইনফেক্ট করে, কিভাবে তার প্রতিকার মেলে, কিভাবে সিস্টেমের কোথায় গুঁতিয়ে ঠিক করা যায়, কোন ইমেইল সন্দেহজনক - আমার ধারনা ছিল সবই আমার জানা।

কিন্তু প্রথম ধাক্কা খেলাম, যখন আমার ইয়াহুর পাসওয়ার্ড হ্যাক হয়ে গেল। জানলাম ফিসিং বলে একটা পদ্ধতি ব্যবহার করে এখন মানুষ জনের গোপন তথ্য জেনে নেয়া হয়। ইয়াহুতে অনেক ফোন আর প্রমান সাপেক্ষে একাউন্ট ফেরত পেলাম বটে তবে দুঃখ পেলাম আরো বেশী। সর্তক হয়ে গেলাম খানিকটা।

আরো বিস্ময় বাকি ছিল আমার জন্য। সেদিন কোথা থেকে একটা টোটকা সফটওয়্যার ব্যবহার করতে গিয়ে দেখি সিস্টেমে কিছু আজব ব্যপার ঘটছে। ইন্টারনেটে ঢুকতে পারছি না, এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারগুলো কাজ করছে না, বেছে বেছে এমন কতগুলো প্রোগ্রাম কাজ বন্ধ করে দিয়েছে যেগুলো ব্যবহার করে সমস্যা সমাধান করা যায় (সার্চ, উইন্ডোজ রেসটোর)। পাঁচ বছর আগে হলে ঠাস করে উইন্ডোজ রিইনস্টল করে ফেলতাম। সেই চিন্তাও এখন করি না, এতো ফাইলস, সেটিংস সব গ্যাঞ্জাম হয়ে যাবে।

ইন্টারনেট ঘেঁটে জানলাম এটি এক প্রকারের ম্যালওয়ার। আরো জানলাম এখনকার দুনিয়ায় প্রচুর আজাইরা প্রোগ্রামের উৎপত্তি হয়েছে। আমার জন্য একেবারে নতুন দুনিয়া খুলে গেল। কত ধরনের ম্যালওয়্যার, কত ধরনের টেকনিক বেরিয়েছে এই কয় বছরে দেখে অবাক হয়ে গেলাম।

দুইদিন নষ্ট করে যখন সমস্যাটা খানিকটা সারিয়েছি, তখন ভাবলাম সচলদের একটু সাবধান করি। পৃথিবীতে যত পদের ম্যালওয়্যার আছে তাদের চেনেন কি?

ভাল থাকুক আপনার কম্পিউটার, ভাল থাকুক আপনার তথ্য।


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আজাইরা বকবক মার্কা একটা লিখা হইছে।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

কনফুসিয়াস এর ছবি

ঠিকাছে।
ম্যালওয়ার নিয়াও বিস্তারিত নামান একটা।
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আমি নিশ্চিত, আপনার নিজস্ব কিছু উপায় জানা আছে, তাও একটা উপায় বাতলাই।

কম্পিউটারে সমস্যা হলেই চট করে উইনডোজ রি-ইন্সটল না করার কারণটা সবারই এক। সমস্ত সেটিংস, কাস্টমাইজেশন ইত্যাদি হারানোর শঙ্কা।

আমি ব্যক্তিগতভাবে ড্রাইভ ইমেজ এক্স এল ব্যবহার করি। সর্বশেষ এটা ব্যবহার করেছি গত শুক্রবার। কিছু বোঝার আগেই পুরো উইন্ডোজ রি-ইন্সটল হয়েছে -- অবশ্যই সমস্ত সেটিংস আর কাস্টমাইজেশন সহ।

নিজে পরখ করে দেখতে পারেন। দুঃসময়ের বন্ধু বলি আমি এটাকে। মজার বিষয় হচ্ছে পুরো প্রক্রিয়াটি একেবারে বিনামূল্যে করা সম্ভব!

শুভকামনা রইলো।

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

নিয়মিত ইমেজ করা, আবার সেটার ব্যাকআপ করা - পুরো সিস্টেম রিইনস্টল করার মতই ঝক্কির। সেটিংস+ফাইলস হারানোর ভয় ছাড়াও এই ঝক্কি এড়াতেই বেশী প্রানপন চেষ্টা। আর ওঝা হয়ে সাপের বিষ নামানোতেই আমার বেশী মজা লাগে - রিওয়াইন্ড বাটন চেপে আগের কোন স্টেটে যেতে ইচ্ছে করে না। চোখ টিপি

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

পরিবর্তনশীল এর ছবি

norton ghost' ইউজ করছেন???
তিন মিনিট লাগে। উইন্ডোজ রি-ইন্সটল করতে।
পিসি একেবারে ফ্রেশ
---------------------------------
চোখের পাতায় হাত রেখে ওরা আমাকে স্বপ্ন দেখার যন্ত্রণা দেয়।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

যখন শুধু এক্সপি ইউজ করতাম তখন, এসপি টু ব্যবহারের পরে অবশ্য ট্রাই করিনি। আর আমি নরটন এভি ইউজ করি না, এটাও একটা কারণ।

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

বিপ্লব রহমান এর ছবি

তখন নাইট ফ্লাইয়ার নামে একটা ওয়েবসাইটে সোর্স কোড সহ ভাইরাস বিতরন করত। সেখানে গিয়ে দুহাত মেলে সব ভাইরাস ডাউনলোড করলাম। তারপর আমার সেই বন্ধুটাকে একটা ভাইরাস উপহার দিয়ে দিলাম।

হায় ব্রুটাস! তুমিও! চোখ টিপি


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

হিমু এর ছবি
ইফতেখার নূর এর ছবি

গত ৩ বছরে ২ টা কম্পু ব্যবহার করেছি, কোনো সমস্যা ছাড়া- সবসময়েই ইন্টারনেটে কানেক্টেড। সবসময়ই একটা এন্টিভাইরাস ছিল ভরসা আর নিজের সামান্য সচেনতা (যতটুকু শিখেছি ব্লগগুলিতে ঘুরাঘুরি করে)। হালে অবশ্য উইন্ডোজ ডিফেন্ডার ইন্সটল করেছি।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

দিনের বেশিরভাগ সময় যদিও কমপিউটারের সামনে কাটে, আমি নিজেকে কম্পুকানা হিসেবেই দেখি। আমার জানা ঠিক ততোটুকুই যা হলে আমার কাজ চলে যায়। এই ধরনের দরকারি খবর আমার মতো মানুষজনের নিশ্চয়ই কাজে লাগে।

ইহা মোটেই "আজাইরা" পোস্ট নহে।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অতিথি লেখক এর ছবি

আমিও কম্পুকানা টাইপের। সবসময় ভাইরাসের ভয়ে থাকি। উপকারী পোস্ট।
- শামীম হক

হাসিব এর ছবি

আমি কখনো মারাত্মক কোন ভাইরাসের কবলে পড়িনি । বাঁচোয়া ।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

একবার সিআইএইচ এর কবলে পড়েছিলাম। সেটাও সিআইএইচ ভ্যারিয়েন্ট সি - যেটা ইমিডিয়েটলী হার্ডড্রাইভ মুছে দেয়। আমার ডাউনলোড করা ভাইরাসগুলো একটু চেখে দেখতে গিয়ে বিপদটা হয়েছিল। হাসি

এবার পড়েছিলাম wintems নামে একটা ম্যালওয়্যারের খপ্পরে। তাও একটা কিবোর্ড লগার নিয়ে টেস্ট করতে গিয়ে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

দ্রোহী এর ছবি

Exteel নামের একটা অনলাইন গেম খেলার জন্য আমি আমার এন্টিভাইরাস সফটঅয়্যার আনইন্সটল করতে বাধ্য হয়েছি। গেমটা খেলতে প্রচুর রিসোর্স লাগে। হাসি

আমি গত ৬ মাস ধরে কোন এন্টিভাইরাস সফটঅয়্যার ব্যবহার করি না। মাঝে মাঝে খালি HijackThis, Spybot S&D, RegMechanic ইন্সটল করে একবার চেক করেই আনইন্সটল করে ফেলি। হাসি

তাছাড়া আমার ফায়ারফক্সে ২০/৩০ টা এক্সটেনশন যোগ করা। এত কিছু ঝক্কি পার হয়ে ভাইরাস ভাইয়া ডাউনলোড হতে চাইবে না।


কি মাঝি? ডরাইলা?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।